কোয়ারান্টাইন ও সাহাবায়ে কেরাম

Quarantine (কোয়ারান্টাইন) অর্থ সংক্রামক রোগ বন্ধ করবার জন্য জাহাজ বা ব্যক্তিকে পৃথককরণ; নিরোধন, রোগসংক্রমণ ভয়ে মেশামেশি নিষিদ্ধ করা। (সূত্র: দ্যা অক্সফোর্ড এ্যাডভান্স লার্নার’স ডিকশনারী পৃ.৬৫৮) করোনা থেকে সতর্কতা অবলম্বনকে কিছু আবেগী মুসলিম ভাইরা ঈমান ও তাওয়াক্কুলের বিপরীত মনে করছেন। কিছু ভাই আরেকটু বেশি জযবা নিয়ে বলছেন, এটাতো তাকদির থেকে পলায়ন, ইসলাম থেকে সরানোর জন্য ইহুদি-খৃস্টানদের চক্রান্ত, এসব করলে ঈমান থাকবে না ইত্যাদি ইত্যাদি কথাবার্তা। সেসব ভাই নিচের হাদিসগুলো পড়ুন প্লিজ: . ১. হযরত হুসাইন রাযি. তাঁর পিতা হযরত আলী রাযি. হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সা. বলেন- لا تديموا النظر إلى المجذمين، وإذا كلمتموهم فليكن بينكم وبينهم قيد رمح অর্থাৎ তোমরা কুষ্ঠরোগীদের প্রতি দীর্ঘসময় তাকিয়ে থেকো না। আর যখন তাদের সাথে কথা বলবে তখন তোমাদের ও তাদের মাঝে যেন এক শলাকা পরিমাণ দূরত্ব থাকে। (সূত্র: মুসনাদে আহমদ: ৫৮১, তাবারানী কাবীর: ২৮৯৭, মুসনাদে আবু ইয়া’লা: ৬৭৭৪, মাজমাউয যাওয়াইদ: ৮৪৫২) . ২. ‘মুখতাসারু তারীখি দিমাশ্ক’ গ্রন্থকার ইবনে মানজূর রহ. লিখেন- . فلما مات يعنى معاذا استخلف على الناس عمرو بن العاص، فقام فينا خطيباً، فقال: أيها الناس، إن هذا الوجع إذا وقع فإنما يشتعل اشتعال النار، فتجبلوا منه في الجبال……. ثم خرج وخرج الناس، وتفرقوا عنه، ورفعه الله عز وجل عنهم، فبلغ ذلك عمر بن الخطاب من رأي عمرو، فوالله ما كرهه . এ ঘটনাটি ইবনুল আছীর রহ. লিখেছেন এ শব্দে- حين أصاب المسلمين طاعون عمواس، خرج بهم عمرو بن العاص رضي الله عنه إلى الجبال، وقسمهم إلى مجموعات، ومنع اختلاطها ببعض وظلت المجموعات في الجبال فترة من الزمن، حتى استشهد المصابون جميعاً، وعاد بالباقي إلى المدن. উপরিউক্ত ভাষ্যদ্বয়ে যা বলা হয়েছে- উমর রাযি.-এর যুগে ফিলিস্তিনে আমাওয়াস নামক মহামারীর দেখা দেয়। তখন আমর ইবনুল আস রাযি. জনগণের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, হে লোকসকল! যখন এ ধরনের মহামারী দেখা দেয়, তখন তা আগুনের মতো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তিনি সবাইকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভাগ করে নির্দেশ করেন, পরস্পরে বিচ্ছন্ন হয়ে পাহাড়ে চলে যাও। তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যে, কেউ কারো সঙ্গে মিলিত হতে পারবে না। যারা আক্রান্ত হয়েছিল তারা তো মারাই গিয়েছিল এবং শাহাদত লাভ করেছিল। আর বাকি সুস্থদের নিয়ে তিনি শহরে ফিরে এসেছিলেন। উমর রাযি.-এর কাছে হযরত আমর ইবনুল আস রাযি.- এর এই কর্মকৌশলের সংবাদ পৌঁছলে তিনি কোন আপত্তি করেননি। (সূত্র: আলকামিল ফিত তারীখ ৪/৭৬ তাঊনে আমাওয়াসের বর্ণনায়, মুখতাসারু তারীখি দিমাশ্ক ২৯/১৭৪ যিকরু মান সুম্মিয়া বি কুনইয়াতিহি, হরফুল ওয়াও, শামেলা) . ৩. হযরত আয়েশা রাযি.-হতে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন- ليس من رجل يقع الطاعون، فيمكث فى بيته صابرا محتسبا، يعلم أنه لا يصيبه إلا ما كتب الله له، إلا كان له مثل أجر الشهيد. অর্থাৎ কেউ যদি মহামারীকালে পতিত হয়। আর এ কারণে ঘরে অবস্থান করে ধৈর্য ও সওয়াবের তামান্না নিয়ে এবং এ কথার বিশ্বাস নিয়ে যে আল্লাহ তার তাকদিরে যা লিখে রেখেছেন তা-ই হবে, তাহলে সে শহীদের প্রতিদানের মত বড় প্রতিদান লাভ করবে। (সূত্র: মুসনাদে আহমদ: ২৪৩৫৮/২৬১৩৯) হাফিযুদ দুনিয়া ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. লিখেন- اقتضى منطوقه أن من اتصف بالصفات المذكورة يحصل له أجر الشهيد وإن لم يمت অর্থাৎ এ ভাষ্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, হাদিসটিতে যে সব অবস্থার কথার বলা হয়েছে তথা ধৈর্য, তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস ও সওয়াবের অাশা নিয়ে ঘরে অবস্থান, এগুলো যেই করবে সে মহামারীতে না মরলেও শহীদের প্রতিদান লাভ করবে। (দ্র. ফাতহুল বারী ১০/১৯৪) . ৪. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন- لا يُورِدَنّ ممرض على مصح অর্থাৎ অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের সামনে আনবে না। (সূত্র: সহীহ মুসলিম: ৫৩৭৪) ৫. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত নবীজী সা. বলেন- غطوا الإناء وأوكئوا السقاء, فإن في السنة ليلة ينزل فيها وباء, لا يمر بإناء ليس عليه غطاء, أو سقاء ليس عليه وكاء, إلا نزل فيه من ذلك الوباء অর্থাৎ তোমরা সবাই পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, পানির থলিগুলোর মুখ লাগিয়ে রাখবে। কেননা এ বছরের কোন এক রাতে মহামারী অাসবে এবং মুখ খোলা যে সব পাত্র ও পানির থলের ওপর দিয়ে এই মহামারী প্রবাহিত হবে সেগুলোতে তা মিশ্রিত হবে। (সূত্র: সহীহ মুসলিম: ২২২১) এবার বলুনতো, বর্ণনাগুলো কী মেসেজ দিচ্ছে? #Abdul Kadir Masum

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *