লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শবে বরাত) – ফযীলত ও আমল সম্পর্কে সহজ-সরল কিছু কথা।

প্রথমত ফযীলতঃ এখানে আমরা কিছু হাদীস উল্লেখ করছিঃ . ১. আয়িশাহ (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেছেন, এক রাতে আমি রাসূল (ﷺ) কে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন: ‘তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেনঃ ‘মহান আল্লাহ তা’লা শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীসঃ ২৬০৬০ ; সুনানে তিরমিযী, হাদীসঃ ৭৩৯। ইমাম তিরমিযী বলেছেনঃ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী দুর্বল বলেছেন। হাদীসটির সনদ দুর্বল বলে সকল মুহাদ্দিসগণ একমত।] . ২. আবু মূসা আল আশ’আরী (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানের মধ্য রাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্তব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমাকরে দেন। [সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীসঃ ১৩৯০ ; ইমাম তাবারানী, মু’জামুল কাবীর, ২০/১০৭, ১০৮। আল্লামা বূছীরি বলেন: ইবনে মাজাহ বর্ণিত হাদীসটির সনদ দুর্বল। তাবরানী বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে আল্লামা হাইসামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ (৮/৬৫) গ্রন্থে বলেনঃ ত্বাবরানী বর্ণিত হাদীসটির সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী শক্তিশালী। হাদীসটি ইবনে হিব্বানও তার সহীহ’তে বর্ণনা করেছেন। শাইখ শু’আইব আরনাউত বলেছেনঃ সনদ দুর্বল, তবে শাওয়াহেদের কারনে হাদীসটি হাসান।] . ৩. আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনু আস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা মধ্য শাবানের রাত্রিতে তার সৃষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত করেন, অতঃপর বিদ্বেষী ও অহংকারী ব্যতীত সকলেই ক্ষমা করে দেন। [মুসনাদে আহমাদ, ২/১৭৬ ; ইমাম হাইছামী, মাজমাউয যাওয়াইদ, ৮/৬৫। রাবী ইবনু লাহীয়ার কারণে সনদটি দুর্বল।] . এরূপ আরও কয়েকটি হাদীস বর্নিত হয়েছে, তবে প্রতিটিই সনদের দিক থেকে এককভাবে দুর্বল। সবগুলোকে একত্রিত করলে ‘হাসান’ বা ‘সহীহ’ পর্যায়ে উত্তীর্ন হতে পারে। . শাইখ আলবানী বলেছেনঃ মোট কথা হলো, মধ্য শাবানের রাতের ফযীলত সম্পর্কিত হাদীসটি এই সনদগুলোর সমন্বয়ে সহীহ এতে কোনো সন্দেহ নেই, বরং এর চেয়ে কম সংখ্যক সনদের মাধ্যমেই সহীহ সাব্যস্ত হয়। উপরন্তু সনদগুলো কঠিন দুর্বলতা হতে মুক্ত থাকায় আরো বেশী সহীহ হওয়ার রাবী রাখে। [৪] . শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেছেনঃ মধ্য শাবানের রাত্রির ফযীলতের উপর বেশ কিছু মারফূ ও সাহাবগনের আছার বর্নিত হয়েছে, যার দাবী এটাই যে, রাতটি ফযীলতপূর্ন রাত। [৫] . অর্থাৎ, আমাদের মতে এই রাতটি ফযীলতপূর্ন রাত। . তবে এই রাতে ইবাদাত করার কোনো দলীল আছে কী? . রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বা সাহাবীগনের কেউ এই রাত উপলক্ষে কোনো ইবাদাতে লিপ্ত হয়েছেন বলে কোনো প্রমান পাওয়া যায় না। আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করলো যার পক্ষে আমার কোনো নির্দেষ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। [১] . সুতরাং, আমরা এই রাত উপলক্ষে কোনো ইবাদাত করবো না, বরং আল্লাহ তা’আলা এমনিতেই আমাদের সেই ফযীলত দান করবেন, যদি আমরা শিরক, অহংকার, হিংসা ও ঝগড়া হতে মুক্ত থাকি। . এই রাত উপলক্ষে যারা ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করার পক্ষে মত দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেনঃ . ১. তাবিয়ী ইমাম মাকহুল ২. ইমাম আওযাঈ ৩. ইমাম আশ-শাফিয়ী ৪. ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহাওয়াইহী ৫. ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ ৬. ইমাম ইবন রজব রহিমাহুমুল্লাহু তা’আলা আজমাঈন . এই রাত উপলক্ষে ইবাদত করা’কে যারা বিদ’আত বলেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতমঃ . ১. তাবিয়ী ইমাম আত্বা ইবন আবী রাবাহ ২. ইমাম ইবন আবী মুলাইকা ৩. ইমাম আব্দুর রহমান ইবন যাইদ ইবন আসলাম ৪. ইমাম মালিক ইবন আনাস ৫. মক্কা ও মদীনার ফক্বীহগন ৬. শাইখ ইবন বায ৭. শাইখ ইবন উছাইমীন রহিমাহুমুল্লাহু তা’আলা আজমাঈন . আমরা দেখতে পাচ্ছি, উভয় পক্ষেই আহলুস সুন্নাহ বড় বড় ইমামগন রয়েছেন। সুতরাং আমাদের নিজেদের অবস্থান যেটাই হোক না কেনো, আমরা এ বিষয়ে বিপরীত মতের উপর আমলকারী ব্যক্তিকে বিদ’আতী বলবো না অথবা আমল পরিত্যাগকারীও বলবো না। . আমাদের সালাফদের মাঝে এ বিষয়ে ইখতিলাফ ছিল, কিন্তু বিদ্বেষ ছিল না, ছিল না বিদ’আতী বলার অভ্যাস অথবা আমল চোর বলার অভ্যাস। তাই, এসব গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে আমরা উম্মতের মাঝে বিদ্বেষ বাড়াবো না। আমরা মনে রাখবো, উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগের উলামাদের মাঝে যে বিষয়ে মতানৈক্য ছিল, সে বিষয়ে মতানৈক্য আমরা দূর করতে পারবো না। . আরেকটি বিষয়, এই রাকতে কেন্দ্র করে ১০০ রাক’আহ সালাত, পরের দিন সাওম, হালুয়া-রুটি তৈরি – ইত্যাদির কোনো ভিত্তি নেই। তাই এসকল আমল পরিত্যাজ্য। . ১. সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ১৭১৮ #উস্তাজ_মাইনউদ্দিন

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *