আমার ধর্ম আমার কাছে।

‘ ‘পর্দার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রয়োজন মনে করি না।’ ‘ছেলেরা যদি পর্দা না করে মেয়েরা করবে কেন?’ ‘আজকালকার যুগে পর্দা করা সম্ভব নাকি? পড়ালেখা, চাকরি করব কিভাবে? এতো বাড়াবাড়ি ভাল না।’ ‘অসম্ভব গরম লাগে হিজাব পরলে, আমার পক্ষে সম্ভব না!’ ‘ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মাঝে তো হিজাবের কথা লেখা নেই। এটা যদি এতই প্রয়োজনীয় হতো তবে অবশ্যই থাকতো!’ ‘নামাজ পরা আর যথেষ্ট ভদ্রভাবে চলাফেরা করাটাই গুরুত্বপূর্ণ, হিজাব অবশ্যই ইসলাম ধর্মের আনুশাঙ্গিক অংশ নয়।’ নানারকমের বক্তব্য, প্রশ্ন, মতামত এবং তার মাঝে হিজাব ধারন করা আমি… আসলেই তো, হিজাব পরার প্রয়োজন কি? অনেকেই তো পরে না…কিন্তু তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, এটা কি যথেষ্ট নয়? আমি কি তাদের চেয়ে বেশি জানি, বেশি বুঝি? নাকি তাদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে ধৃষ্টতা প্রকাশ করতে চাই? আমরা কি কখনো জানার চেষ্টা করে দেখেছি হিজাবের প্রয়োজনীয়তা কি? শুধুমাত্র কি সল্পশিক্ষিত নারীরাই কি ঘরের কোনের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকার জন্য হিজাব পরিধান করে? তারা কি জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে চায়? কেন তাদের এই অজ্ঞতা (!) ? আমারও কিছু প্রশ্ন আছে। যার জন্য এই লেখা। আমার প্রথম প্রশ্ন,-আমরা কেন ভুলে যাই ইসলাম ধর্মের প্রথম শর্ত ঈমান? একজন মুসলিম পুরুষ এবং নারীর সর্বপ্রধান কর্তব্য মহান আল্লাহতালা এবং তার নবীর বানি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। কিছু পালন করব, আর কিছু করব না, তা কিভাবে হয়? যতটুকু পালন করা সম্ভব ততটুকু তো অবশ্যই চেষ্টা করা যেতে পারে। আমার ব্যাক্তিগত ধারনা, হিজাব পালন করা মোটেও কঠিন কিছু না। অবশ্য সেই তর্ক নিয়ে আজ বসতে চাই না। আজ শুধু আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো জানা প্রয়োজন। ‘নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। ‘ [ সুরা আল-আহযাব, ৩৫,৩৬] উক্ত দুটি আয়াতের বিশদ ব্যাখায় না গিয়ে পাঠকের উপর ছেড়ে দিচ্ছি তাদের নিজস্ব অনুবাদ এবং অনুধাবন দুটাই। অনেকেরই প্রশ্ন হিজাব সম্পর্কে পবিত্র কুরআন এ সরাসরি কোন উল্লেখ করা হয়েছে কিনা। তাদের জন্য তুলে দিচ্ছি সুরা আন-নুরের এই আয়াতটি। ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারাযেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ নাকরে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।‘ [সুরা আন-নুর, ৩১) আমার বিবেক বলে এর পর হিজাব সম্পর্কে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। কিন্তু তারপরেও কিছু প্রশ্ন চলে আসে। আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন,- কেন আমাদের সমাজের শিক্ষিত কিশোরী ও যুবতি মেয়েরা খোলামেলা, আঁটসাঁট, কখনো উগ্র পোশাক পরে অথচ মধ্যবয়স পার হয়ে যাবার পরে তাদের মাথায় কাপড় উঠে, সাজ-সজ্জা হয়ে আসে পরিমিত, পোশাকআশাকে দেখা যায় রক্ষনশিলতার ছাপ? এটা কি কোন সূত্র অনুসরন করে- যখন একজনের সৌন্দর্যের দর্শক কমে যায়, তার সাথে সাথে তার নিজেকে প্রস্ফুটিত করে দেখানোর ইচ্ছাটাও কমতে থাকে? আমার তৃতীয় প্রশ্ন, – হিজাববিহীন একটি তরুণী কার জন্য নিজেকে সৌন্দর্যময় করে তোলে? আমি জানি অনেকেই বলবে,নিজের জন্য। তাহলে আমি কেন কখনও কাউকে দেখি না বাসায় সেজেগুজে ভালো পোশাক পরে থাকতে? সমস্ত জিন্‌স ফতুয়া, আঁটসাঁট পাতলা কামিজ, মেক-আপ কেন বাহিরের মানুষের চোখের তৃপ্তির জন্য? তবে আমি কি ধরে নেব যে, যখন পাড়ার ছেলেরা খোলামেলা পোশাক পড়া একটি তরুণীকে দেখে শিষ দিয়ে উঠে, বা যখন বাবার বয়সী কোন পুরুষ লোলুপ দৃষ্টিতে তার শরীরের দিকে তাকায়, বা বাচ্চা কোন ছেলে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তার দিকে অপলক চেয়ে থাকে, এসব সেই তরুণীটির সফলতা প্রাপ্তির খাতায় লেখা থাকে? এমতাবস্থায় তার কারনে এক বা একাধিক পুরুষের যদি চিত্ত চাঞ্চল্য ঘটে তাতে বিস্ময়ের অবকাশ আছে কি? অতঃপর, একাধিক বিছিন্ন ঘটনা, নানান অপরাধের শুত্রপাত। আমরা অনেক কিছুই জানি, আবার অনেক কিছু না জানার কারনে অনিচ্ছাবশত অনেক ভুল করে ফেলি। কিন্তু যেখানে জানার এত সুযোগ, ধর্মীয় বই, হাদিস,ওয়েবসাইট-এর ছড়াছড়ি, তবে আমাদের এইসব ভুলের পাশে কি আর অবহেলার সাক্ষর দেয়া যায়? ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ [ সুরা আন-নিসা, ১৭, ১৮) অনেকদিন যাবত এই চিন্তাগুলো মনের ভেতর অনেকটা খোঁচা দিচ্ছিল। সবার আচার ব্যাবহার, পোশাক পরিধান দেখে এখন কেন যেন মনের ভেতর প্রচণ্ড ভীতি অনুভব হয়। আমরা কোথায় চলে যাচ্ছি? আইইয়ামে জাহিলিয়াত- এ? মেয়েরা অবশ্যই কোমলতা, সৌন্দর্য এবং স্রদ্ধার যোগ্য, যা আমাদের ধর্মে বারবার উল্লেখিত হয়েছে। তাহলে নিজেদেরকে কেন এভাবে সহজলভ্য বস্তু করে তোলা? থাকুক না সমস্ত সৌন্দর্য, সমস্ত রহস্য শুধু একজনের জন্য অবিমিশ্র রূপে, নিজ গরিমাকে পবিত্র রেখে। সব বক্তব্য, সমস্ত যুক্তি সামনে রেখে আমার শেষ প্রশ্ন, ‘অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?’ [সুরা আর- রাহমান]’ লিখেছেন -নাবিলা নোশীন

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *