‘আমার মনে হয়, আমি একটা কুফা। অভিশপ্ত।

‘আমার মনে হয়, আমি একটা কুফা। অভিশপ্ত। একদিন ফ্রেন্ড দের সাথে কথা বলতে বলতে বলছিলাম, “আমার মত কুফার সাথে কথা বলতে হবে না।” আপু, এমন কেন হয়?’ গল্পের ফাঁকে ওর এই কথাটাই আমার মস্তিষ্কে জমে গেলো। অবাক হয়ে খেয়াল করেছিলাম বিভিন্ন সময় এমন অনেকের সাথেই কথা হয়েছে যারা ঘুরে ফিরে এমন কথা বলেন। ভাবেন। এমন কি মনে মনে বিশ্বাস ও করেন। দ্বীনের পথে অনেকদিন থেকে কাজ করছে এমন মানুষকেও এমন কথার পর নিশ্চুপ থাকতে দেখেছি। এমন মানুষদের নিজেকে অভিশপ্ত মনে হতে থাকে। মনে হয় তার মত খারাপ মানুষ আর কেউ নেই। পৃথিবীর সবাই ভালো শুধু সে ছাড়া। এমন মানুষদের কোনো ভালো কথা বললেই ‘আমার দ্বারা হবে না।’ ‘আমি এমন মানুষ না।’ ‘আমার মত অভিশপ্ত মানুষের জন্য ভালো কিছুই নেই’ এসব বলে উড়িয়ে দেয়। এর কারণ কি হতে পারে ভেবে পাচ্ছিলাম না। বয়ঃসন্ধির মাঝামাঝি থাকা একজন তার উচ্ছ্বাসিত গল্পের ফাঁকে হঠাৎ সেই একই কথাটা বলে থমকে গেলো। তারপর অনিশ্চিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা আপু, এমন কেন হয়?’ আমার মনে হচ্ছিলো ওর কথার উত্তরে এখনই কিছু বলাটা খুব দরকার। এখন কিছু না বললে হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবে। এতোদিনের আমার ভাবনাগুলোর একটা সংক্ষিপ্ত রূপ দাঁড় করিয়ে নিলাম মস্তিষ্কে। তারপর বলা শুরু করলাম, ‘জানো, এই ভাবনাটা শুধু তোমার একার হয় তা না। অনেকেরই হয়। অনেকেই এই পর্যন্ত আমাকে এমন কথা বলেছে। কেউ কেউ তো এমনও বলেছে যে তাদের মনে হয় তারা দুনিয়ার সবচে’ ফালতু মানুষ।’ তাল মিলিয়ে ও বললো, ‘হ্যাঁ, আমারও এটা মনে হয়।’ ‘এই সময়টায় কিছুতেই মন বসে না। মনে হয়, “আমার দ্বারা তো কিছু হবেই না। আমি তো অভিশপ্তই। এটা করে আর কি হবে।” এমন আরো অনেক কিছুই।’ ‘আপু, সত্যিই এমন মনে হয়। মনে হয় যেন এমন অভিশপ্ত জীবনটা আমাকে আল্লাহ কেন দিলো।’ ‘জানো এমন কেন হয়?’ ‘কেন?’ ‘আমাদেরকে হতাশ করে দেয়াটাই শয়তানের প্রথম কাজ। কিন্তু অন্য সব ব্যাপারেই হতাশ করলেই তো আমরা তা থেকে কাটিয়ে উঠি। কাটিয়ে উঠতে পারিনা শুধু নিজেদের নিয়ে হীনমন্যতা তৈরি করলে। আমরা কেন অভিশপ্ত হতে যাবো! আমাদের তো পূর্ব দিকে সূর্যি উঠা পর্যন্ত তাওবা করার পথ খোলা আছে। মৃত্যুর গড়গড়া উঠা পর্যন্ত তাওবা করার সুযোগ আছে। তাহলে আমরা কিভাবে অভিশপ্ত হলাম। প্রকৃত অভিশপ্ত তো শায়তান নিজে। সে চাইলেও এখন আর তাওবা করতে পারবে না। হাদীসে এসেছে আমরা যতবার সিজদাহ করি শায়তান ততবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।’ ‘কেন?’ ‘ওই যে সে একবার সিজদাহ না করে যে অভিশপ্ত হয়েছে তাই। অনুশোচনা থেকে কাঁদে। একটা লেকচারে শুনেছিলাম যে শয়তানেরও অনুশোচনা হয় কিন্তু তার ফিরে আসার সুযোগ নেই। তো আমরা কোনো গুনাহ্ করার পর আমাদের guilty feeling হবে এটা স্বাভাবিক। শুধু guilty feeling টা যথেষ্ট না। এই feeling থেকে যেন আমরা তাওবার দিকে এগিয়ে যেতে পারি সেটাও জরুরী। তো সে নিজেই যে অভিশপ্ত তাই তার হতাশাটা সে আমাদের মধ্যে ইনপুট করার চেষ্টা করে। আর অনেকেই একে absorb করে নেয় আর এক জীবন অবহেলায় খোয়ায়।’ ‘ঠিকই তো আপু, আমরা কেন অভিশপ্ত হবো। অভিশপ্ত তো শায়তান নিজে।’ মেয়েটার মুখ থেকে কালো মেঘ কেটে গেলো। আলহামদুলিল্লাহ্‌। কি ভুজংভাজং বুঝিয়েছি, আমি জানি না। রাব্বুল ‘আলামিন আমার ভুলগুলো তুমিই একমাত্র ক্ষমা করতে পারো। #চন্দ্রকথন © মুন আপু

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *