শেষের দিকে এসে উসমানি খিলাফত দুর্বল হয়ে পড়ে। শকুনের মতো অপেক্ষমাণ পশ্চিমা ক্রুসেডার দেশগুলো একের পর এক হামলে পড়তে থাকে উসমানি সাম্রাজ্যভুক্ত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর ওপর! ১৮৩০ সালে ফ্রান্স হামলে পড়ে আলজেরিয়ায়। কায়েম করে ঔপনিবেশিকতা। আফ্রিকার এই সম্পদশালী দেশকে চুষে খেতে থাকে। আলজেরীয় মুসলমানদের ওপর ইতিহাসের নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালাতে থাকে। এ তাণ্ডব চলতে থাকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। প্রায় ১৩০ বছরের ‘সভ্যতার মিশনে’ তারা ২০ লাখেরও বেশি আলজেরীয়কে হত্যা করে। এভাবেই তারা কথিত ‘সভ্যতা’র খাতায় নাম লেখায়। ইমানি বলে বলিয়ান আলজেরীয় মুসলমানরা ফুঁসে উঠে। কারণ, তারা যে কুরআন শরিফ রোজ পাঁচবার নামাজে তিলাওয়াত করে, সে কুরআনেরই পাঁচশর কাছাকাছি আয়াতে ‘জিহাদ’র নির্দেশনা এসেছে। আলজেরীয়দের ঠেকাতে ফরাসি বাহিনী তাৎক্ষণিক যে গণহত্যা চালায়, তাতে প্রাণবিসর্জন দেয় প্রায় ৪৫ হাজার লোক। এই হত্যাকাণ্ড কতটা নৃশংস ছিল, তা ফুটে উঠে এক ফরাসি সেনা কর্মকর্তার মন্তব্যে। আলজেরীয়দের লাশ গুম করার দায়িত্বে নিয়োজিত ওই সেনা কর্মকর্তা তার সঙ্গী অফিসারকে বলে, ‘তুমি এত দ্রুতগতিতে তাদেরকে কচুকাটা করে চলেছ যে, আমি মাটিচাপা দিয়ে শেষ করতে পারছি না!’ ফরাসিরা কোনো গ্রামে সাঁড়াশি অভিযান লাগানোর সময় আলজেরীয় নারীদের ওপর বুনো হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ত। ছিঁড়েফেঁড়ে, খাবলে খাবলে খেয়ে নিত তাদের লালিত সম্ভ্রম! তাদের গগনবিদারী আর্তচিৎকার আর গোঙানি শুনে আকাশ-বাতাশ কেঁদে উঠত। কিন্তু দলবদ্ধ হায়েনাদের পৈশাচিক উল্লাসে এসব চিৎকার আর গোঙানি চাপা পড়ে যেত! এজন্য ফরাসি হায়েনাদের ব্যাপারে আলজেরীয় নারী ও যুবতীরা খুবই সতর্ক থাকত। যখনই বুঝত, এলাকায় ফরাসি হায়েনারা হানা দিয়েছে, সাথে সাথে খুব দ্রুত তারা ছুটত ঘোড়ার আস্তাবল, গাধা ও গবাদি পশুশালার দিকে। সেখান থেকে পশুর মলমূত্রাদি গায়ে লেপে নিত! মানবরূপী ফরাসি পশুরা যখন এই ঘৃণাকর অবস্থা প্রত্যক্ষ করত, তখন নাক টিপে ধরে কোনরকম সেখান থেকে পলায়ন করত! এভাবেই আলজেরীয় নারীরা তাদের সতীত্বের হিফাজত করার চেষ্টা করত। তবুও ফরাসি পশুদের নাপাক আঁচড়ে তাদের সতিত্বকে এঁটো হতে দিত না। এতদসত্বেও দুর্ভাগ্য যাদের কপালের লিখন থাকত, তারা ওইসব হায়েনাদের শিকার হয়ে যেত। এসব নারীদের সাথে ফরাসি হায়েনারা কীরূপ আচরণ করত, তা তাদেরই এক জাতভাই ব্রিটিশ ঐতিহাসিক অ্যালিস্টার হর্ন এর কলম থেকে পড়ুন। আ্যালিস্টার হর্ণ তার বিখ্যাত ‘অ্য সেভেজ ওয়্যার অব পিস’ বইতে লিখেছেন- অভিযান চলাকালে পৈশাচিক কায়দায় আলজেরীয় নারীদের ধর্ষণ করে ফরাসি সেনারা। ধর্ষণ শেষে তারা অনেক নারীর স্তুন কেটে নেয়! কর্তিত স্তন নিয়ে খেলা করে! হত্যার পর অনেকের মৃতদেহ বিকৃত করতেও ছাড়েনি এইসব নরপশুগুলো! আজকের দুনিয়ায় সভ্যতার মুখোশ পরা এসব বুনো হায়েনারা যদিও তাদের ওইসব কালো অধ্যায় চেপে রাখতে চায়, তথাপি আল্লাহ তা’আলা তাদেরই কওমের কোনো না কোনো সত্যবাদীর কলম থেকে তা প্রকাশ করে দেন। সেই হিসেবে বিখ্যাত ফরাসি ঐতিহাসিক ও রাজনীতিজ্ঞ অ্যালেক্সিস দ্য তকিউভিলে ১৮৩৫ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘ডেমোক্রেসি ইন আমেরিকা’ গ্রন্থে বলেছেন- ‘আমরা যদি আমাদের চিন্তাধারার প্রতি লক্ষ্য করি, আমাদেরকে প্রায় এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, ইউরোপীয়রা মানবজাতির এক ভিন্ন গোত্রভুক্ত সম্প্রদায়। যেমন ইতর প্রাণীর বিপরীতে মানব সম্প্রদায়।’ পুনশ্চ : ফরাসিরা ইসলামের নতুন কোনো দুশমন নয়; এরা পুরনো দুশমন। এদের ইসলাম ও মুসলমান-বিদ্বেষের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। এদের হাতে আফ্রিকার মুসলমানরা যে লোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তা জানলে কোনো রক্তেমাসংসের মানুষ সইতে পারবে না; তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যাবে। —— সূত্র: কিসসাতুল ইসলাম (ড. রাগিব সারজানি পরিচালিত সাইট) উইকিপিডিয়া, টুইটার ও অন্যান্য। আউনুল ইসলাম কাসেমী