১)ইসলাম কি কুফর প্রচারের অনুমতি দেয়?
ইসলাম তার অধীনে কাউকে কুফর প্রচারের অনুমতি দেয় না। কোন মুসলিম এই বিশ্বাস রাখতে পারে না। হয়ত মুসলমানদের দূর্বলতার কারণে কুফুর প্রচারে বাঁধা দেয়া বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই দুর্বলতা তাদের জন্য কুফুর প্রচারের শর’য়ী অনুমোদন সাব্যস্ত করে না। কেউ যদি মনে করে ইসলাম ইমান ও কুফুর প্রচারে সমান অধিকার রাখে, তাহলে সে কুফুরী করল। ইমান আর কুফুর কখনো সমান নয়। একটি সত্য আরেকটি মিথ্যা। একটি আলো আরেকটি অন্ধকার। একটি হক আরেকটি বাতিল।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন দেয় না? আমাদের একটি সূক্ষ্ম বিষয় বুঝতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে কুফুরী আক্বীদা পোষণ করা এক বিষয় আর উক্ত আক্বীদা মোতাবেক দলবদ্ধ জীবন প্রতিষ্ঠার দাওয়াত দেয়া এবং সেই অনুযায়ী জীবন ব্যবস্থা তৈরি করে আল্লাহর বান্দাদের উপর প্রতিষ্ঠা করা ভিন্ন বিষয়। দুটো সমান অপরাধ না। উচিৎ তো এটাই ছিল যে, যেই ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধাচারী হবে, আল্লাহর জমিনে তার বসবাসেরই অধিকার থাকবে না। আল্লাহ তা’য়ালার সীমাহীন অনুগ্রহ, তিনি এমন লোকদের শুধু বেঁচে থাকারই সুযোগ দেননি; বরং তাদেরকে ব্যক্তিগত জীবনে কুফরের উপর থাকার অবকাশ ও দিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের জন্য কোনভাবে ফিৎনার কারণ না হয়। যেখানে মহান আল্লাহ মুসলিমদের মাঝে ফিসক এবং ফাহেশাত প্রচারকারী যে কাউকে দুনিয়া এবং আখেরাতে শাস্তির সম্মুখীন করার কথা বলছেন,[১]সেখানে কুফুর আরো মারাত্মক বিষয়। আল্লাহর কাছে কুফুরের মত বড় আর কোন অপরাধ নেই।
মানব জাতির মাঝে এমন কিছুর প্রচারণা চলুক যেটা তাদেরকে চির ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়- মৌলিকভাবে ইসলাম এটা কোনভাবেই পছন্দ করে না, অনুমোদন দেয় না। যেই আগুনের দিকে নিজেরা ধাবিত হচ্ছে অন্যকেও সেটার দিকে টেনে নেওয়ার কোন প্রকার সুযোগ সেসব বাতিল দায়ীদের নেই। সর্বোচ্চ এতটুকু মেনে নেয়া যেতে পারে যে,যেই ব্যক্তি কল্যাণের পথ ছেড়ে অকল্যাণের রাস্তা বেছে নিয়েছে, সে তা মোতাবেক চলুক। কিন্তু অন্যকেও সে দিকে টেনে নেওয়ার কোন অধিকার তার নেই।
মানব জাতির কল্যাণকামীতা এবং সততার দাবি এটাই ছিল যে, যদি জোরপূর্বক মানুষকে কুফরের বিষ থেকে বাঁচানো যেত তাহলে ইসলাম তাদের হাতবন্দি করে সেই বিষ পান থেকে বিরত রাখত। কিন্তু ঈমান বলপ্রয়োগ করে চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। এখন ঈমানের প্রশ্নে ক্ষমতা প্রয়োগের নিষেধাজ্ঞার কারণ এটা নয় যে, ইসলাম কুফর এবং জাহান্নামের দিকে গমনকে মানবাধিকার মনে করে এবং তা প্রতিহত করাকে বেঠিক বলে। এর মূল কারণ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি কুফরের অসারতা সম্পর্কে অন্তর থেকে না জেনে এবং না বুঝে ইসলাম গ্রহণ করলে কুফরের ধ্বংসাত্মক শাস্তি থেকে সে মুক্তি পাবে না।
এজন্য ইসলাম বলে, কাফেরদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য বাধ্য তো করা যাবে না; তবে কুফরের শক্তি এবং ফিৎনা চিরতরে মিটিয়ে দিতে হবে এবং যে আমাকে মেনে নিবে না, সে ছোট হয়ে জীবন যাপন করবে। কেউ ব্যক্তি জীবনে কুফরী অবলম্বন করলে করতে পারে। যদিও এটা কাম্য নয় এবং অনুমতিও নয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ প্রদান মাত্র। কিন্তু আল্লাহর বান্দাদের উপর বাতিল নেজাম প্রতিষ্টা করে তাদেরকে জাহান্নামে টেনে নেয়ার কোন অধিকার তার নেই। এর চেয়ে উত্তম হল, মুসলমানরা তার উপর শক্তি প্রয়োগ করবে এবং তাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসবে যেন সে সহজেই জান্নাতের রাস্তা খুঁজে নিতে পারে।
২)আপনি কি ভিন্ন ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে পারেন? ইসলাম ভিন্ন ধর্মগুলোকে ঘৃণা না করে থাকতে পারেন?
প্রশ্নটা তাদের কাছে উদ্ভট কিংবা উগ্র মনে হতে পারে, যারা পরিপূর্ণ সেকুলার না হলেও অজান্তেই সেকুলার ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে আছেন। প্রশ্নটার উত্তর পেতে হলে আমাদের একটা সহজ সমীকরণে পৌঁছতে হবে। বেশি ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে না। কেউ ইন্টারফেইথ এ আক্রান্ত না হলে নিশ্চিতভাবেই এটা বিশ্বাস করবে যে, ইসলামই একমাত্র সত্য ও গ্রহণযোগ্য ধর্ম। [২]বাকি সমস্ত ধর্ম বাতিল,কুফর,শিরক। কেউ এই বিশ্বাস না রাখলে মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না। ইন্টারফেইথের সহজ কথা হল, সকল ধর্ম বিশ্বাসকে এক মনে করে সেটাকে মুক্তির সূত্র মানা। এখন কোন মুসলমানের কাছে খুলে খুলে বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই যে, বাকি ধর্মগুলো কেন বাতিল। পবিত্র কুরআনে বাকি ধর্মগুলোর অসারতা খুব স্পষ্ট করেই বর্ণিত হয়েছে।
এখন ইমানের দাবি হল, সত্যকে অনুসরণ ও পছন্দ করা আর মিথ্যাকে ঘৃণা করা। বাতিলকে অশ্রদ্ধা করা। অনুসরণ তো না’ই’। এমনকি এটা স্বভাবত বিবেকবোধের ও দাবি। আর মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা হল, ইসলাম ভিন্ন বাকি সমস্ত ধর্ম যেমন, খ্রিষ্টান, ইহুদি,হিন্দু,বৌদ্ধ সবগুলোই বাতিল। অতএব এগুলো অবশ্যই ঘৃণার পাত্র। শ্রদ্ধার যোগ্য নয় এসব মতবাদ। ইমানের দাবি হল, এগুলো কে ঘৃণা করা। পক্ষান্তরে মতবাদগুলোকে সম্মান – শ্রদ্ধা করা, ঘৃণা না রাখা ইমানের পরিপন্থী। কুফর। আল্লাহ হেফাজত করুন।
হেদায়েতপ্রাপ্ত তো তাঁরাই যাঁদের কাছে ইমান হল প্রিয় ও হৃদয়ে সুসজ্জিত। আর কুফর আর বাতিল তাঁদের কাছে ঘৃণিত, অপছন্দনীয়। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের কাছে পছন্দনীয় করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে ঘৃনিত করে দিয়েছেন।”[৩]
১)সূরা নুর-১৯
২)সূরা আলে ইমরান-১৯
৩)সূরা হুজুরাত-৭
লিখেছেন শাইখ ইফতিখার সিফাৎ