সেকুলারিজমেরই একটা রূপ হল ইন্টারফেইথ। বর্তমানে মুসলিমদের ভিতর ইন্টারফেইথের অবস্থান দু ধরণের। একটা হল, সকল ধর্মকে সমান সত্য মনে করা। “সকল ধর্মের মর্মবাণী এক এবং যেকোন ধর্মের অনুসরণ করেই মানুষ মুক্তি পেতে পারে” এই ধরণের বিশ্বাস রাখা। আর স্পষ্টতই এই ধরণের বিশ্বাস রেখে কেউ মুসলিম থাকতে পারে না। নিশ্চিতভাবে সে দ্বীন থেকে বেরিয়ে মুরতাদ হয়ে যাবে। কারণ মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর কাছে কেবল ইসলামই গ্রহণযোগ্য হবে অন্য কোন ধর্ম তিনি মেনে নিবেন না।[১] মুসলিম সমাজে তুলনামূলকভাবে প্রথম অবস্থানটা কম। আর সাধারণত যারা প্রথম অবস্থানকে গ্রহণ করেছে তারা আপনাআপনি দ্বিতীয় অবস্থানকেও মেনে নিচ্ছে।দ্বিতীয় অবস্থান হল, ইসলামকে একমাত্র সত্য দ্বীন হিসেবে বিশ্বাস করলেও অন্য সব ধর্মের উপর ইসলামের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা এবং সকল ধর্মের অধিকার সমান বলে বিশ্বাস করা। পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম ছাড়াও বাকি সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। মুসলিম সমাজে এই অবস্থানটাই বেশি। এজন্য দেখা যায়, যখন কেউ মুসলিমদের মাঝে অন্য বাতিল ধর্মগুলো প্রচারের বিরুদ্ধে কথা বলে, খ্রিষ্টান মিশনারীর অধিকারকে নাকোচ করে তখন সাকিব বিন রশিদ ও তার অনুসারী মুসলিমরাই উলটো প্রশ্ন তুলে যে, “মুসলিমরা ইসলাম প্রচার করতে পারলে খ্রিষ্টানদের ধর্ম প্রচার কেন অবৈধ হবে?” আবার কেউ যখন রিদ্দা তথা ইসলাম ধর্ম ত্যাগের শাস্তি নিয়ে কথা বলবে তখন মুসলিমদেরই কেউ কেউ এই যুক্তি দেখায় যে, “ইসলাম ত্যাগের কারণে হত্যা করলে অন্য ধর্মের কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তারাও তো নব মুসলিম লোকটিকে হত্যা করতে পারে!” এখানে তাদের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হচ্ছে ( যেটা আসলে কুফুর) অন্যান্য ধর্মকেও ইসলামের মত মনে করা। ইসলাম একমাত্র সত্য দ্বীন। বাকি সব ধর্ম বাতিল। সত্যের যেই অধিকার ও বিধান ক্ষমতা থাকবে বাতিলের সেটা থাকবে না। এটাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত।মহান আল্লাহ তা’য়ালা সমস্ত নবী রাসূল পাঠিয়েছেন সত্য দ্বীন সহ, যেন তাঁরা এই দ্বীনকে অন্য সব বাতিল ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠা করেন।[২] সকল বাতিলের উপর ইসলামের কর্তৃত্ব থাকার ব্যাপারটি ইসলামের অকাট্য বিষয়। ইসলাম সকল ধর্মকে সমান অধিকার দেয় না। একটি ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিমরা যেই অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করে কাফেররা সেটা পারবে না। তাদের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট বিধিবদ্ধতা ও সীমাবদ্ধতা প্রদান করে। ফিকহের কিতাবগুলোতে এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।[৩] কারণ হক বাতিল কখনো সমান নয়। বিশ্বাস, স্বাধীনতা, অধিকার, ভালবাসা, শ্রদ্ধা কোন ক্ষেত্রেই নয়। ইমানকে গ্রহণ করা হবে এবং ভালবাসা হবে। আর কুফুরকে প্রত্যাখ্যান করা হবে এবং ঘৃণা করা হবে। কোন মুসলিম কুফুরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারে না।[৪] বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে যেসব ইন্টারফেইথ ডায়ালগ কনফারেন্স হচ্ছে সেগুলোর উদ্দেশ্য হল দ্বিতীয় অবস্থান। আমাদের দেশে জাতীয় পর্যায়ে কিংবা স্থানীয় পর্যায়ে যেসব ইন্টারফেইথ সভা-সেমিনার হচ্ছে সেগুলোরও টার্গেট হল দ্বিতীয় অবস্থানকে প্রচার-প্রসার করা। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এসব কনফারেন্স ও আয়োজনের উদ্দেশ্য এটাই পাবেন। কারণ প্রথম অবস্থান দিয়ে মুসলিমদের কাবু করা কঠিন। এক চান্সেই মুসলিমরা বাকি ধর্মগুলোকে সত্য হিসেবে মেনে নিবে না। এজন্য তারা কৌশল হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ ফলাফলগতভাবে প্রথম আর দ্বিতীয় অবস্থানে কোন পার্থক্য নেই। ফলাফল একই। আর তা হল রিদ্দাহ, ইসলাম ত্যাগ করা। ১) সূরা আলে ইমরান-১৯, ৮৫২)সূরা তাওবা-৩৩, সূরা ফাতহ-২৮, সূরা সফ-৯৩) বিস্তারিত জানতে পড়ুন: আহকামুয যিম্মাহ, আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ।৪)সূরা হুজুরাত-৭