আপনি কী ভাবছেন বলুন তো!
.
অমুসলিম বা কাফিরদের সামনে ইসলামকে নরম-কোমলভাবে উপস্থাপন করলে, তারা ইসলামের প্রতি সুধারনা পোষণ করবে?
একটু খেয়াল করুণ, আপনি কী ইসলাম-কে সেভাবে উপস্থাপন করতে চান, যেমনটা আসলেই ইসলাম? নাকি আপনি ইসলামের কিছু অংশ কাটছাঁট করে উপস্থাপন করতে চান, যেমনটা কাফির’রা দেখতে পছন্দ করে?
.
আপনি ভাবছেন, আপনার-আমার সুন্দর আচরণ দেখলেই কাফির’রা ইসলামের প্রতি সুধারনা পোষণ করবে? তাহলে কেনো তারা আমাদের নয়নের মনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গালি দেয়?! তার চরিত্রের উপর আঙ্গুল তুলে?
আপনি কী তাঁর থেকেও সুন্দর আখলাক ও আচরণের অধিকারী হবেন বলে ভাবছেন?! আপনি কী কাফিরদের এমন সুন্দর আচরণ দেখাতে সক্ষম যেই আচরণ হাবীব ওয়া খলীলুল্লাহ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখাতে সক্ষম হোননি?!
- না কখনোই না! ওয়াল্লাহি! আপনি কখনোই কাফির’দের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবেন না, যতক্ষন না আপনিও তাদের মতো কুফরীতে লিপ্ত হবেন! যতক্ষন না আপনি আমার রবের দ্বীনকে বিকৃত করবেন, ততক্ষন পর্যন্ত কাফির’রা আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না।
.
আল্লাহ তা’আলার দ্বীনকে যথাযথভাবে যিনি উপস্থাপন করেছেন, বাস্তবায়ন করেছেন, তিনি তাঁর হাবীব রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। কুর’আন উপস্থিত, হাদীস উপস্থিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনী বা সীরাত উপস্থিত; আল্লাহ তা’আলার শত্রু কাফির’রা তা সত্ত্বেও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে!
তারা কুর’আন, হাদীস ও সীরাত থেকে খুজে খুজে বিভিন্ন বিষয় বের করে আপত্তির পর আপত্তি তুলছে! আমাদের নয়নের মনিকে গালি দিচ্ছে, তাঁর সমালোচনা করছে; আর আপনি ভাবছেন আপনি যথাযথভাবে ইসলাম উপস্থাপন করে তাদের মন জয় করবেন?!
.
নাহ, বরং আপনি কেবল ইসলাম বিকৃত করলেই তাদের মন জয় করতে সক্ষম হবেন!
রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন :
فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
‘তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাহ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাগণের সুন্নাহ অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।’[সুনানু আবি দাউদ : ৪৬০৭; সুনানুত তিরমিজি : ২৬৭৬]
আলিমগণ এই হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তোমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকবে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত হলো উম্মাহর সেই ‘মাসলাক’ (আদর্শ) ও ‘তবকা’ (স্তর), যাদের অধীনে অনেক ‘মাশারিব’ ও ‘মাকাতিবে ফিকর’ (বিভিন্ন চিন্তা-চেতনা, ধারা-উপধারা ও পথ-পদ্ধতি)-এর সম্মিলন ঘটে। (আকিদা ও ফিকহে) হানাফি হোক বা সালাফি, হায়াতি হোক বা মামাতি, পাঞ্জ পিরি হোক বা সালাফি, শাফেয়ি হোক কিংবা মালিকি বা হাম্বলি—এ সবই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ছায়াদার বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা, তার কিশলয় ও পত্রপল্লব। সকল ধারার মূল উৎস হলো কুরআন ও সুন্নাহ। দ্বীনের শাখাগত বিষয়ে সাহাবিগণ রা.-এর মধ্যেও মতবিরোধ হয়েছিল; যে ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের অর্ধ শতাব্দীর মুহতামিম হাকিমুল ইসলাম কারি তায়্যিব রহ. বলেন :
‘সাহাবিগণের পারস্পরিক বিরোধের ক্ষেত্রে ভুল ও সঠিকের দ্বন্দ্ব হয়েছে; হক ও বাতিল কিংবা আনুগত্য ও অবাধ্যতার নয়। আর এ কথা তো সর্বজনবিদিত যে, মুজতাহিদ ভুল করলেও প্রতিদান পায়; তিরস্কার নয়।’[মাসলাকে উলামায়ে দেওবন্দ : ২৫ (তায়্যিব পাবলিশার প্রকাশিত)]
ব্যাপকভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, আজকাল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মধ্যে আপসে যে মতবিরোধগুলো দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, তার অনেকগুলো সাহাবিযুগ থেকে অদ্যাবধি অবিচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে। এসব শাখাগত মতবিরোধকে কেন্দ্র করে যারা বিভেদ উসকে দেয়, তাদের ব্যাপারে জনৈক বড় সুন্দর বলেছেন :
‘তোমরা নামাজে হাত নাভীর ওপরে বাঁধবে নাকি নিচে—এ নিয়ে আপসে লড়াই করো। অথচ তোমাদের দুশমন কুফফারগোষ্ঠী তোমাদের সবার হাতই কেটে দিতে চায়!’
আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত মুসলিম উম্মাহর যত তবকা (স্তর) আছে, তারা সবাই এক সমুদ্র থেকে প্রবাহিত নদীর মতো। তাদের মধ্যে যত বর্ণ ও ধারা আছে, তারা সবাই একই তাসবিহের দানার মতো। তারা সকলে এক দেহেরই বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সবগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মিলেই দেহ গঠিত হয়। দেহের কোনো অঙ্গ অপর অঙ্গকে কেটে ফেললে তা আর বিনির্মাণ করার সক্ষমতা রাখে না। আহলুস সুন্নাহর সকল ধারা একই অন্তরের অভিন্ন আধার। এর কোনো একটি ধমনীও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে গোটার মৃত্যু অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কুরআন ও সুন্নাহর একনিষ্ঠ অনুসারী এ সকল ধারার অবস্থাও অনুরূপ। ভালো-মন্দ সব ধারার মধ্যেই কম-বেশি পাওয়া যায়; তবে ভুলে গেলে চলবে না, সবার উৎসমূল কিন্তু একই কুরআন ও সুন্নাহর অনুকরণ, কল্যাণ ও সফলতার অনুসরণ।
ভালোবাসা–ঘৃণার মাপকাঠি দলান্ধতা নয়
যারা শাখাগত মতবিরোধকে কেন্দ্র করে বিভেদ উসকে দেয়, শাখাগত মতবিরোধকে কেন্দ্র করে অন্যদের কাফির ও ফাসিক বলে বেড়ায়, নিজেদেরকে একমাত্র হকের ঠিকাদার আখ্যায়িত করে অন্যদেরকে গোমরাহ বলে প্রচার করে, তারা সিরাতে মুসতাকিম (দীনের সরল পথ) এবং মেজাজে শরিয়ত থেকে বিচ্যুত, প্রান্তিক চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত। কারও ভুল বা মন্দ আচরণের কারণে পুরো ধারাকে গলদ এবং বাতিল বলে আখ্যায়িত করা মূলত সেসব খারাপ মানুষের অন্ধ অনুকরণ ও পক্ষপাতদুষ্ট সমর্থনের ফল, যারা এসব ধারার মধ্যে ঘাপটি মেরে লুক্কায়িত থাকে। এরকম ঢালাও বিরোধিতার ফল এই হয় যে, আমার অস্বীকৃত ধারার অনুসারী বিপুল পরিমাণ হকপন্থী ও দীনদরদী মনীষীও অবচেতনে প্রত্যাখ্যাত হয়; অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তাদের সংখ্যাটাই সর্বাধিক ছিল। জনৈক আলিম ফিতনার বড় সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেল : ‘ফিতনা হলো মন্দদের প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে ভালোদেরও প্রত্যাখ্যান করা’।
এক সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির খুব কর্মঠ সদস্য ছিলাম। কার্জন হলে ক্লাসের সময়টা বাদ দিয়ে একটা বড় সময় কেটেছে টিএসসিতে।
আমি তানভির মোকাম্মেলের কাছে চিত্রনাট্য লেখা শিখেছি, সুভাষ দত্তের কাছ থেকে ফিল্ম ক্রিটিসিজম শিখেছি, মইনউদ্দিন খালেদের কাছ থেকে আর্ট অ্যাপ্রেসিয়েশন শিখেছি, শিশির ভট্টাচার্যের কাছ থেকে ক্যারিকেচার কারে কয় – সেটা।
আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, জাফর ইকবাল, আনিসুল হক – প্রতিটা তথাকথিত আলোকিত বাতিঘরের সাথে বসে কথা বলেছি, মুখোমুখি।
কেন?
এটা আমার একটা জেদ।
১৯৯৮ থেকে ২০০৮ অবধি কুইজ করেছি, ডিবেটও। যারা বিতার্কিক, যারা ‘তুখোড়’ তাদের যুক্তি আর সততা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়েছি।
মানুষের চোখের দিকের তাকালে তার হৃদয়ের একটা ঝলক পাওয়া যায়।
সেই ঝলকটা আমাকে বার বার বলে দিয়েছে – এই বাংলাদেশে যাদের জ্ঞানী হিসেবে পূজা করা হয়, বুদ্ধিজীবি হিসেবে সম্মান দেখানো হয়, সুশীল-সুভব্য হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয় এদের প্রায় শতভাগই ঠগ।
সমকালীন প্রকাশনীর বইগুলো বস্তাবন্দী হয়ে আজকে যেভাবে চট্টগ্রামের মাঠে পড়েছিল, ২০১৬ সালের একটা দিন এভাবেই আমাদের অনেকগুলো বই ডিবি অফিসের মিন্টো রোডে পড়েছিল। অনেকদিন পরে বইগুলো ফেরত পেয়েছিলাম। সরোবর প্রকাশন চালানোর অনুমতি পাইনি।
ব্যাপারটা এমন না, হঠাৎ পুলিশের কাছে মনে হয়েছে আমাদের বই ভয়ংকর। তারা আমাদের বইগুলো পড়েছে, সমস্যা খুঁজে পায়নি। কিন্তু তাহলেও কেন এই নিষেধ?
কারণ প্রগতিশীল পরিব্রাজক দলের কেউ গিয়ে বলে এসেছে এরা জঙ্গী। এদের বই নিষিদ্ধ করেন। পুলিশ পপুলার বুদ্ধিজীবি ন্যারেটিভ ঘাটায়নি।
গত বছর একুশের বইমেলায় আরিফের বই বিক্রি বন্ধ করাটা ছ্যাঁচড়ামোর লেভেলে নেমে গিয়েছিল। তারপরেও ওরা দমেনি।
ওরা তারা যারা এন্টেলেকচুয়াল বেটারমেন্টের কথা বলে। ‘মাজল মি নট’ ওরাই আমাদের শিখিয়েছিল যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্লগ বন্ধ করে দিয়েছিল। ওরা মুক্ত বুদ্ধির কথা বলে। ওদের ব্লগের নাম মুক্তমনা।
ওরা স্বাধীনতার কথা বলে। স্বাধীনতার চেতনার দোহাই দেয় দুই বেলা, সপ্তাহে সাতদিন, বছরে ৩৬৫ দিন।
আর ওরা সুযোগ পেলে আমাদের গলায় গামছা পেচিয়ে মারতে চায়। সাহস পায় না দেখে ছাত্রলীগকে কাজে লাগায়। আবরারের লাশ বের হয়।
পুলিশকে কাজে লাগায়, গার্ডিয়ান প্রকাশনীর নূর মোহাম্মদ ভেতরে ঢুকে যায়।
আমি হুজুর। আমি পষ্ট বলি – বাক স্বাধীনতায় আমি বিশ্বাস করি না। তুমি কাফির ভালো কথা – আমার রসুলকে নিয়ে, আল্লাহকে নিয়ে বাজে কথা বলতে পারবা না।
তুমি প্রগতি ফেরি করে বেড়াও। তুমি আমাকে বলো ধর্মান্ধ, কারণ তোমার ফ্যালাসির স্তুতি আমি করি না। তুমি আমাকে বলো, তুমি আমার চেয়ে ভালো – কারণ তুমি উদার, আমি উদার নই। তোমার ধর্মে বাক-স্বাধীনতা আছে, আমার ইসলামে নেই।
এই তোমার উদারতা? জাতীয় মেলায় আমার বই তুমি বিক্রি করতে দাও না?
তুমি আসলে ভন্ড। তুমি জানো তোমার কথাগুলো ট্র্যাশের মতো লাগে আমার যুক্তির সামনে।
তুমি বুদ্ধিতে আমার কাছে হেরে গেছ, যুক্তিতে হেরেছ। তোমার চেয়ে আমি সিনেমা ভালো বুঝি। আর্ট ভালো বুঝি, সংষ্কৃতি কী আর সেটা কীভাবে কাজ করে তোমার চেয়ে কম জানি না আমি।
বিজ্ঞান? প্রযুক্তি? ব্যবসা? আসো তোমাকে শেখাই কোনটা কী। তুমি ইংলিশ গান শুনো আর আমি ইংলিশে জার্নাল লেখি। তোমার পিএইচডি থিসিসের মতো কপি পেস্ট না, নিজের মৌলিক লেখা।
আমি জানি আমার সাথে কথা বলতে তোমার লজ্জা লাগে। তোমার জ্ঞানের দৈন্যতাতে তোমার নিজের কাছে তোমাকে ফকিন্নি গোছের মনে হয়।
মোরালিটির একটা ভাব ধরতে সেটাও আর রইল না।
বাফা, ছায়ানট, উদীচি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, একুশে বই মেলা, শিল্পকলা একাডেমি, সংষ্কৃতি মন্ত্রণালয় – তোমার সব ঐশ্বর্য আর প্রতীক নিয়ে হেরে গেলে?
এত এত সব টিভি চ্যানেল নিয়েও তুমি দুটা মাত্র চ্যানেল – ইসলামী টিভি আর পিস টিভিকে সহ্য করতে পারলে না, বন্ধ করে দিলে?
প্রথম আলো, জনকন্ঠ, যুগান্তর, সমকাল, কালের কন্ঠ, ডেইলি স্টার – এত নামী-দামী ব্র্যান্ড যারা প্রতিদিন শত শত পৃষ্ঠা ভর্তি করে তোমাদের ধর্ম প্রচার করছ, সেই তোমরা হেরে গেলে হুজুরদের দুই বছরে বের হওয়া দুটো বইয়ের কাছে?
তোমরা কী করে খাও সেটা আমরা জানি। যারা তোমাদের মতো চাটে না তাদেরকে তোমরা এইটুকু সহ্য করতে পারো না?
তোমরা আখিরাতে হেরেছ আগেই। এবার দুনিয়াতেও হারলে। তোমাদের জন্য আমাদের করুণা।
তোমরা বিজেপির ভারতে চলে যাও।
বাংলাদেশটা আমাদের, মুসলিমদের ইনশা আল্লাহ। (লিখেছেনঃ অপু ভাই)