ঈমান আনার পর একজন মুসলিমের কতটুকু জ্ঞান দরকার পরিপূর্ণ ইসলাম পালনে?

প্রশ্ন- ঈমান আনার পর একজন মুসলিমের কতটুকু জ্ঞান দরকার পরিপূর্ণ ইসলাম পালনে?

উত্তর- ইসলাম আসলে একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যাবস্থা। এটি শুধু ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ নয়। এটা ব্যক্তি জীবনের গণ্ডি অতিক্রম করে সমাজ, রাষ্ট্র সব জায়গায় এর ব্যাবহার আছে। আলাহপাকের এরশাদ –

الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَمِمَّا رَزَقْنٰهُمْ يُنْفِقُوْنَ
“যারা গায়বের প্রতি ঈমান আনে, নামায কায়িম করে এবং আমি যে জীবনোপকরণ তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।”
(সূরা বাকারা – ৩ )

উক্ত আয়াতে ৩ ধরণের ইবাদাত পাওয়া যায়। গায়েবের প্রতি ঈমান দ্বারা সকল আত্মিক ইবাদাত, সলাত দ্বারা সকল দৈহিক ইবাদাত আর আল্লাহর দেয়া রিযিক হতে ব্যয় দ্বারা আর্থিক ইবাদাত। তাহলে ৩ ধরণের ইবাদাত হল-

১) আত্মিক ইবাদাত।
২) দৈহিক ইবাদাত।
৩) আর্থিক ইবাদাত।

আমাদের সমাজে দৈহিক ইবাদাতের ক্ষেত্রে মুসলিমরা বেশ তৎপর। কিন্তু আত্মিক আর আর্থিক ইবাদাতের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে বেশ শিথিলতা কাজ করে। পবিত্র কোরআন এ আল্লাহপাকের এরশাদ-

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِى السِّلْمِ کَاۤ فَّةً ۖ وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِ ۗ اِنَّهٗ لَـکُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
“হে মু’মিনগণ! ইসলামের মধ্যে পূর্ণভাবে প্রবেশ কর এবং শায়ত্বনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।”
(সূরা- বাকারা – ২০৮)

اَ لْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَـكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَ تْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَـكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا ۗ
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিআমাত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবূল করে নিলাম।
(সূরা মায়িদা- ৩)

তাই পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে হলে আমাদের এই ৩ ধরণের ইবাদাতে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আত্মিক ইবাদাতের মধ্যে রয়েছে ঈমান, আখলাখ। আর দৈহিক ইবাদাতের মধ্যে রয়েছে ইবাদাত ( আল্লাহর হক) আর মু’আশেরাত ( বান্দার হক)। আর আর্থিক ইবাদাতের মধ্যে রয়েছে মু’আমেলাত।

প্রত্যেক নর নারীর দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা ফরজ। এই হাদিস আমরা প্রায় সবাই জানলেও জানিনা এই ফরজের সীমা কতটুকু। আসুন জানি তাহলে। এজন্যে ৫ টি মৌলিক বিষয়( ঈমান,ইবাদাত,মু’আমেলাত,মু’আশেরাত, আখলাখ) এগুলি সম্পর্কে মুটামুটি জীবন
চালাতে যতটুকু দরকার তা সবার জানতে হবে যদিও আপনি জেনারেল লাইন বা মাদ্রাসা লাইন যে লাইনে পড়ুন না কেন।

১) ঈমান ( তাওহিদ, আকিদা, এছাড়া ৭০ এর অধিক শাখা)

২) ইবাদাত ( জ্ঞান অর্জন, পবিত্রতা, সলাত, সিয়াম, জিহাদ ইত্যাদি)

৩)মু’আমেলাত ( অর্থনৈতিক বিষয় বস্তু যেমন বিবাহ, আয় রোজকার, ব্যাবসা, মিরাছ, ইত্যাদি)

৪)মু’আশেরাত (আদব কায়দা ও বান্দার হক যেমন ইয়াতিম,মিস্কিন,আত্মিয়, মুসাফির, পিতা মাতা, স্ত্রীর হক ইত্যাদি।)

৫) আখলাখ। (বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ। আভ্যন্তরীণ গুণ যেমন তাওবা, সবর, শুকর, তাওয়াক্কুল, রজা, ইখলাস ইত্যাদি বাহ্যিক গুণ ইনসাফ, সত্যবাদি, আমানতদার
ইত্যাদি।)

বি:দ্র :-
আত্মিক ইবাদাতে যে পূর্ণতা লাভ করে বাকি ইবাদাত তার জন্যে সহজ হয়ে যায়। আখলাখের মধ্যে আত্মশুদ্ধি বা তাযিকিয়া সবার জন্য ফরয। তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধির পারিভাষিক শব্দ হল তাসাওউফ। ইলমে তাসাওউফ এর মূল কথা হল যখন আমলে অলসতা আসলেও পালন করা আর গুনাহ করতে ইচ্ছে হলে তাকে দমিয়ে রাখা।
তাসাওউফের(তাজকিয়াতুন নাফস) ৩ টি স্তর। যেমনঃ

১) মুজাহাদা( খাবার, ঘুম, কথা প্রয়োজনের বেশি না করা ইত্যাদি)।
২) নফলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছা।
৩) একজন হক্কানি শায়েখের সহবতে থেকে নিজের আধ্যাত্মিক উন্নতির কাজ চালিয়ে যাওয়া তা’লিম আর তরবিয়তের মাধ্যমে।

এছাড়া যেমন কোন রোগ অহংকার কি, নিফাক কি। এ সম্পর্কে কোরআন এর আয়াত, হাদিস, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ইত্যাদি জানতে হবে।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *