উত্তম মৃত্যুর প্রস্তুতি

মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে উত্তম প্রস্তুতি কি?

টোটাল প্রস্তুতি বললে জাহান্নাম থেকে বেচে থাকার আমল করা, গুনাহ মাফের আমল করা, জান্নাতে প্রবেশের আমল করা। এই তিনটা ভালো করে করতে পারলেই ভালো প্রস্তুতি হবে ইনশা আল্লাহ। তাই না? টোটাল ফুটবলের মতো। পুর্বে আমরা জাহান্নাম থেকে বাচা আর গুনাহ মাফের কিছু আমলের কথা বলেছি। আজ জান্নাতে যাওয়ার কিছু আমলের কথা বলব। সংকলন করেছেন উস্তায ইমরান হেলাল।

১) আজানের জবাব দেয়া:

“মুয়াজ্জিন যখন বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’, তখন যদি তোমাদের কেউ বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। এরপর যখন বলে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সেও বলে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এরপর যখন বলে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ’, সেও বলে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ’। এরপর যখন বলে ‘হাইয়া আলাস সালাহ’, সে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। এরপর যখন বলে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’, সে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। এরপর যখন বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’, সেও বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। এরপর যখন বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সেও বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যদি সে ব্যক্তি তার অন্তর থেকে তা বলে থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (মুসলিম ২৮৫)

২) প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পড়া:

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোনো বাধা থাকবে না” (সিলসিলাতু আহাদিস আস-সাহিহাহ ২/৬৯৭)

৩) সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার: ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দুআ,

‘হে আল্লাহ, আপনিই আমার রব। আপনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার দাস। আপনার সাথে করা প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদার যতটুকু সম্ভব আমি পালন করার চেষ্টা করছি। আমার কাজকর্মের অনিষ্ট থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমার উপর আপনার যে অনুগ্রহ, আমি তার স্বীকৃতি দিচ্ছি। আর আমার যে পাপ, তারও স্বীকৃতি দিচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ আপনি ছাড়া আর কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না’।

[আরবিটা কমেন্টে দেখুন]

যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা বলবে এবং যদি সে রাতে মৃত্যবরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যদি কেউ তা সকালে বলে এবং সেই দিনে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (বুখারি/৬৩২৩)

৪) আল্লাহর ৯৯টি নাম:

“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি সেগুলো গণনা করবে [মুখস্থ করবে/ ঈমান আনবে/ সে অনুযায়ী আমল করবে] সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (বুখারি/২৭৩৬)

৫) অহংকার ও ঋণমুক্ত থাকা:

“যে ব্যক্তি তিনটি বিষয় থেকে মুক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে – অহংকার, গুলুল [গণিমতের সম্পদ আত্মসাৎ করা] এবং ঋণ”। (ইবনু মাজাহ.২৪১২); সাহিহ।

৬) জিহ্বা ও যৌনাঙ্গ সংরক্ষণ করা:

“যে ব্যক্তি তার দুই চোয়াল এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের ব্যাপারে আমাকে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দিচ্ছি”। (বুখারি/৬৪৭৪)

৭) বারো রাকাত সালাত:

“যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাকাত সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। যুহরের পূর্বে ৪ রাকাত ও পরে ২ রাকাত, মাগরিবের পর ২ রাকাত, ঈশার পর ২ রাকাত এবং ফজরের পূর্বে ২ রাকাত”। (তিরমিজি/৪১৫); সাহিহ।

৮) বোন ও কন্যা সন্তানের দেখাশোনা করা:

“যে ব্যক্তির তিনটি মেয়ে বা তিনজন বোন আছে বা দুটি মেয়ে বা দুজন বোন আছে এবং সে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করে ও তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে; তার জন্য জান্নাত”। (তিরমিজি/১৯১৬); হাসান।

৯) তাকওয়া ও সুন্দর চরিত্র:

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: কোন বিষয়টির কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন: “তাকওয়া এবং সুন্দর আচরণ”। (ইবনু মাজাহ/৪২৪৬); সাহিহ।

১০) তাওয়াক্কুল:

আমার উম্মতের ৭০ হাজার ব্যক্তি কোনো হিসাবনিকাশ ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে; তারা হলো – যারা অন্যের কাছে ঝাড়ফুঁক চায় না, শুভ-অশুভ লক্ষণ নির্ণয় করে না এবং তাদের রবের উপর ভরসা করে”। (বুখারি/৬৪৭২)

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *