কারও অনুসরণের জন্য যে বিষয়গুলো প্রথমে জাজ করে নেওয়া জরুরি – আলি হাসান উসামা

‘বার্তাবাহকের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া’। ‘আপনি তো তাদের ওপর দারোগা নন’। ‘আপনি স্মরণ করিয়ে দিন; নিশ্চয়ই উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে’। ‘আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে’। ‘আপনার ওপর যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে, আপনি তা সবই পৌঁছে দিন।’ আল-কুরআন

প্রথমে বলে নিই, দলান্ধ বা ব্যক্তিপূজারীদের জন্য এই লেখা নয়; আরও সহজ করে বললে, আমার কোনো লেখাই তাদেরকে উদ্দেশ্য করে রচিত নয়। সুতরাং এই রোগে আক্রান্ত কোনো রোগী থাকলে তাদেরকে আগেই সালাম। আমার লেখা বা কথা ফলো করলে অযথাই তাদের অন্তর্জ্বালা বাড়বে। আমি কারও কষ্টের কারণ হতে চাই না, আবার খ্যাতি ও প্রসিদ্ধির মোহে পড়ে ইলমি আমানতের সঙ্গেও খেয়ানত করতে চাই না।

কারও অনুসরণের জন্য যে বিষয়গুলো প্রথমে জাজ করে নেওয়া জরুরি :

১. তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ, উলুহিয়্যাহ, হাকিমিয়্যাহ এবং আসমা ওয়াস সিফাতের স্বীকৃত ও সর্বসম্মত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ব্যক্তির অবস্থা ও অবস্থান।

২. শিরক ও কুফর, বিশেষত প্রচলিত কুফরি মতবাদ-মতাদর্শের ব্যাপারে ব্যক্তির অবস্থান। হারবি কুফফার এবং তাদের দোসরদের সঙ্গে তার সম্পর্কের ধরন।

৩. আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’র চর্চা এবং তাগুতের ব্যাপারে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যায়ন।

৪. সুন্নাহ ও বিদআতের ব্যাপারে তার অবস্থান। দীনের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠা—সবক্ষেত্রে তার অনুসৃত পদ্ধতি কি সুন্নাহসম্মত নাকি তা নবোদ্ভাবিত রীতিনীতির অন্ধ অনুসরণ? কোনো বাতিল ফেরকা (খারেজি, মুরজিয়া, মাদখালি, মডারেট, বিদআতি প্রভৃতি) দ্বারা কি তিনি প্রভাবিত?

৫. হকপন্থী আলিমগণের দৃষ্টিতে তার মূল্যায়ন কেমন? তার অধিকাংশ শিষ্য ও অনুসারী কারা এবং তাদের দীনদারির অবস্থা কী? তার প্রচারিত দীন কি সাহাবিদের পালিত দীনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাকি পশ্চিমাদের দ্বারা পরিমার্জিত মডারেট ইসলামের সঙ্গে সংগতি ও সাদৃশ্যপূর্ণ।

৬. মাজলুম ফরজের ব্যাপারে তার চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি। এই ফরজের ওপর আমলকারী মহান জামাআতের ব্যাপারে তার মূল্যায়ন এবং তাদের চোখে তার অবস্থান।

৭. আকিদা এবং আমলের সর্বপ্রকার নিফাক থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। তাফাককুহ ফিদ দীন (দীনের গভীর ব্যুৎপত্তি), রুসুখ ফিল ইলম (সুগভীর জ্ঞান), বাসিরাত (দূরদর্শিতা), খাশইয়াত (আল্লাহর ভয়) এবং তাওয়াজু (বিনয়) থাকা।

৮. ফিকহের ক্ষেত্রে তার অবলম্বিত মতাদর্শ কি সর্বজনস্বীকৃত নাকি তা বিচ্ছিন্ন? দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন মতামত থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ জন্য ফায়সালা হবে অধিকাংশ মতামতের বিবেচনায়।

৯. হককে হক এবং বাতিলকে বাতিল বলার নির্দ্বিধ যোগ্যতা। দলিলের আলোকে সালাফে সালেহিনের অনুসরণ ও অনুকরণ।

১০. কিতমান (গোপন করা), তাহরিফ (অপব্যাখ্যা করা) এবং তালবিস (মিশ্রিত করা) থেকে মুক্ত থাকা।

@মুফতি মাওলানা আলি হাসান উসামা (রাজবাড়ি)

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *