কোনো বর্ণনা (হাদিস বা আসার) সহিহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে :

কোনো বর্ণনা (হাদিস বা আসার) সহিহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে :

১. সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য হওয়া। দীনদারি, তাকওয়া, সততা ও সত্যবাদিতার গুণে গুণান্বিত হওয়া।

২. সকল বর্ণনাকারী কর্তৃক বর্ণনা ভালোভাবে মুখস্থ, আত্মস্থ ও হৃদয়ঙ্গম থাকা।

৩. বর্ণনাসূত্রের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক পর্যায়ে সংযুক্তি থাকা। বর্ণনাসূত্রের কোনো পর্যায়ে দুই বর্ণনাকারীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা না থাকা।

৪. হাদিস ও আসারটি সনদে (বর্ণনাসূত্রে) ও মতনে (বক্তব্যে) শুযুয তথা বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্ত থাকা। শুযুয অর্থ হলো, বর্ণনাকারী তারচে অগ্রগণ্য কোনো বর্ণনাকারীর ব্যতিক্রম বলা।

৫. হাদিস ও আসারটি সনদে ও মতনে ‘ইল্লত’ থেকে মুক্ত থাকা। ইল্লত বলা হয় এমন সূক্ষ্ম দোষকে, যা হাদিসের বিশুদ্ধতার পথে অন্তরায় হয়। তবে শাস্ত্রজ্ঞ ইমাম ছাড়া সাধারণ কেউ তা বুঝতে পারে না।

এই পাঁচওটি ব্যাপার নিশ্চিত হলে তবেই কোনো হাদিস বা আসারকে সহিহ বলা যায়। আজকাল গুগলসার্চ বা শামেলানির্ভর অনেক তাহকিককারীকেই দেখা যায়, শুধু প্রথম তিনটি বিষয় নামকাওয়াস্তে যাচাই করেই কোনো হাদিস বা আসারের ব্যাপারে বিশুদ্ধতার হুকুম আরোপ করে বসে। শুযুয ও ইল্লত যাচাইয়ের ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ ও উদ্যমই দেখা যায় না। তাছাড়া ইল্লত বের করতে পারা যারতার সাধ্যের কথাও নয়। কেউতো আবার পাঁচ ধাপের কোনো ধাপেই কষ্ট ব্যয় করে না। তারা নিজের পক্ষের বর্ণনার ক্ষেত্রে কারও থেকে সহিহ হওয়ার অভিমত পেলে অমনি তা লুফে নেয়। অন্যান্য ইমামগণের বিপরীত বক্তব্যও তখন সযত্নে উপেক্ষা করে। অথচ নিজের পক্ষে গেলে হাদিসকে সহিহ বলা ও বিপক্ষে গেলে তা দুর্বল প্রমাণের প্রবণতার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও বিশেষ কিছু ব্যাপারে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ রয়েছে।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, অনেক বর্ণনাকারীর ব্যাপারেই জরাহ-তাদিলের গ্রন্থাদিতে পরস্পরবিরোধী অভিমত পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রেও বিপরীত মতসমূহের মধ্য হতে কোনোটিকে অগ্রগণ্য করার শাস্ত্রীয় নিয়মনীতি রয়েছে। সেই নিয়মনীতিগুলো উপেক্ষা করে কেবলই নিজের পক্ষে গেলে সেই অভিমত লুফে নেওয়া এবং অন্যসব অভিমতকে ছুড়ে ফেলা কোনো ইনসাফের কথা নয়। কারও মুখ থেকে ভিন্ন কিছু বের হলেই বিষয়টা এমন ইখতিলাফি কোনো ব্যাপার হয়ে যায় না যে, যার যেটা ইচ্ছা, তার বুঝি সেটা গ্রহণ করার এখতিয়ারই কায়েম হয়ে গেছে। উলুমুল হাদিসের বড় যোগ্যতা প্রয়োজন হয় পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মধ্যে কোনোটিকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য। হ্যাঁ, হাইব্রিড পদ্ধতিতে কেউ তাহকিক করতে চাইলে তার এত সময় বের করার ফুরসত কোথায়!

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *