নবীজী সা. এর প্রতি ভালোবাসা – ২

‘আহাদ’ [আল্লাহ এক] ‘আহাদ’ বলে একটি লােক মৃদু শব্দ করছেন। তীব্র অত্যাচারের কারণে তিনি নড়াচড়া করতেও কষ্ট পাচ্ছেন। যারা অত্যাচার করছিল তারাও শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দিয়েছে। কিন্তু লােকটির মুখ থেকে ‘আহাদ’ শব্দটি দূর করতে পারেনি। রাগে ক্ষোভে ওরা লােকটির গলায় রশি বেঁধে গরু-ছাগলের মতাে টানাটানি করছে। টানতে টানতে হাঁপিয়ে উঠেছে। কিন্তু তবুও লােকটি ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ বলেই যাচ্ছেন। ওদের রাগ এবার আরও বেড়ে গেল। ছােটোছােটো ছেলেমেয়ের হাতে রশি দিয়ে দিলাে। ওরা ইচ্ছেমতাে লােকটিকে নিয়ে টানাটানি করল। টানাটানির পালা এক সময় শেষ হলাে। এবার নতুন কিছু লােকটির জন্যে অপেক্ষা করছে। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে লােকটিকে নিয়ে যাওয়া হলাে। পাথর চাপা দিয়ে রাখা হলাে বুকের ওপর। সূর্যের উত্তাপ এতটাই বেশি যে, বালি গরম হয়ে লােকটির শরীর পুড়তে লাগল কিন্তু তবুও তিনি বিচলিত হলেন না। তাঁর মুখ দিয়ে কেবল একটাই শব্দ বেরােচ্ছে ‘আহাদ।

এই লােকটি নবিজিকে ﷺ ভালােবেসে ছিলেন। তাঁর ভালােবাসা এতটাই নিখাদ ছিল যে, অত্যাচারের-পর-অত্যাচার তাঁকে টলাতে পারেনি। যত অত্যাচার করা হয়েছে, তাঁর ভালােবাসা আরও বেড়েছে। তিনি তাঁর ভালােবাসার দাবিকে সত্যে পরিণত করেছিলেন। [ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মাআদ, ২/১৪৬]

নবি ﷺ একদিন দুনিয়া থেকে বিদেয় নিলেন। তাঁর অন্যান্য সাথিদের মতাে এই লােকটিও সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে হারিয়ে পাগলপারা হয়ে গেলেন। লােকটি ছিলেন মাসজিদে নববির মুয়াজ্জিন। কিন্তু নবিজি ﷺ দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর আযান দেওয়া বন্ধ করে দিলেন তিনি।

লােকটি অন্তর থেকে নবিজির ﷺ শুন্যতা অনুভব করতেন। তাই তাকিয়ে থাকতেন নবিজির ﷺ ঘরের দিকে, যেখানে তিনি শুয়ে আছেন। তাকাতেন আর ভাবতেন, নবি যদি এসে বলতেন—কী ব্যাপার, বসে আছ কেন? সালাতের সময় হয়েছে, আযান দাও। আযান দিয়ে আমাদের তৃপ্ত করাে’—কতই-না ভালাে হতাে। কিন্তু তিনি তাে চলে গেছেন। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। লােকটি এ কথাগুলাে ভাবতেন, আর ঝড় বয়ে যেত তাঁর অন্তরে। বারবার মনে হতাে নবিজির ﷺ সাথে কাটানাে দিনগুলাের কথা। শেষমেশ বিরহ সইতে না পেরে তিনি পাড়ি জমালেন সিরিয়ার পথে।

১৭ হিজরির শেষের দিকের কথা। উমার ইবনুল খাত্তাব (◌ؓ) তখন আমিরুল মুমিনীন। অতপর্ণ কাজে সিরিয়ায় গেলেন তিনি। অনেক সাহাবা জড়াে হলেন সেখানে।

বােনাে বন্ধুরা এক জায়গায় জড়াে হয়েছেন কতদিন পর, একজন অপরজনের সাথে কুশলাদি বিনিময় করছেন। চোখের জল ফেলছেন বুকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময় সালাতের ওয়াক্ত হলাে। সাহাবিরা লােকটিকে আযান দিতে অনুরােধ করলেন। রাজি হলেন না তিনি। বারবার অনুরােধ করেও রাজি করানাে গেলাে না তাঁকে। শেষমেষ আমিরুল মুমিনীন অনুরােধ করলেন। এবার রাজি হলেন তিনি। দাঁড়িয়ে গেলেন আযানের জন্যে। শুরু হলাে আযান। সে আযান শুনে কান্নার রােল পড়ে গেল সাহাবাদের মধ্যে। উমার(◌ؓ)বাচ্চা শিশুর মতাে কাঁদতে লাগলেন।

তাঁদের মনে হতে লাগল সেই দিনগুলাের কথা, যখন নবি ﷺ জীবিত ছিলেন। আর এই লােকটি সে সময় আযান দিতেন। সাহাবাদের চোখে ভেসে উঠল সেই দৃশ্যগুলাে। তাঁরা কেঁদে চোখ ভাসালেন। লােকটি যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’[‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল ﷺ] পর্যন্ত পৌঁছুলেন, তাঁর পক্ষে আর আযান দেওয়া সম্ভব হলাে না। তিনিও কাঁদতে লাগলেন। চোখ ঝাপসা হয়ে গেল তাঁর। অন্তর দিয়ে সেই মানুষটিকে অনুভব করলেন, যাকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালােবেসেছেন।[ইবনু কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/১৪৯]

লােকটি যেদিন মারা যাচ্ছেন সেদিন তাঁর স্ত্রী বলছিল, হায়, আজ কী দুঃখের দিন! আজ কী কষ্টের দিন! আমার স্বামী আজ দুনিয়া থেকে বিদেয় নিচ্ছেন।

তখন লােকটি বলছিলেন, “না, আজ আমার সুখের দিন। আজ আনন্দের দিন। কাল আমি সেই মানুষটির সাথে থাকব, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালােবাসি। জানাে, সে লােকটি কে? কী তাঁর নাম?

আমি বলব না। এটা তােমার জন্যে ‘কুইক কুইজ’ তবে আমি একটা হিন্ট দিতে পারি। নবিজি ﷺ মিরাজের রাত্রিতে লােকটির পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন।

তুমি কি এই লােকটির মতাে নবিজিকে ভালােবাসাে?

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *