বাংলাদেশে মূলত ছয় প্রকারের আনপেইড ফেমিনিস্ট দেখা যায়।

বাংলাদেশে মূলত ছয় প্রকারের আনপেইড ফেমিনিস্ট দেখা যায়। অর্থাৎ, কোন প্রকার ফান্ডিং/স্যালারি ছাড়াই এরা ফেমিনিজমের অনুসরন করে

ক)ইসলামিক পরিবারে জন্মে সেই পরিবারের পুরুষদের না-ইনসাফি দেখে অতিষ্ঠ ফেমিনিস্ট। এনারা ব্যক্তিগত জীবনে প্রায়শই ধার্মিক। এনাদের প্রাপ্তিস্থান দেশের ইস্টার্ন বেল্টে। সিলেট-কুমিল্লা-নোয়াখালি-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার।

খ)লিবারেল ফেমিনিস্ট। এরা মূলত দেশের হাই ক্লাস ও এলিট ক্লাস ফ্যামিলিগুলির বড় করা ব্রাউন মাদাম। চিন্তায় ও চেতনায় তারা পাশ্চাত্যের অনুসরনকারী, চামড়ায় অশ্বেতাঙ্গ। তাদের কাছে দেশের বাইরের যেকোন কিছুই সেক্সি, যদিও জগতের যাবতীয় সিস্টেমেরই প্রোস এন্ড কন্স আছে এবং ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রেই, বার্ডস আই ভিউ থেকে দেখলে ম্যাক্সিমাম মানুষ যেই সিস্টেমেই যাক না কেন ঐ সিস্টেমের যাবতীয় ভাল ও মন্দের উভয়েই ভোগ করে। এদের একাংশ পেইড ফেমিনিস্টদের ডোনার হয়।

গ)সেক্সুয়ালি এবিউজড ফেমিনিস্ট। এরা সেক্সুয়াল এবিউজের শিকার হয়ে ফেমিনিস্ট হয়ে যায়। এদের অনেকে রক্ত সম্পর্কের ঘনিষ্ট আত্মীয়দের দ্বারা অথবা স্বামী/বয়ফ্রেন্ডের দ্বারা সেক্সুয়ালি এবিউজড। এরা পরিবার তো বটেই, পুরুষদেরই ঘৃণা করে। এদের প্রাপ্তিস্থান সারাদেশ, লঘুমাত্রায়।

ঘ)সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড ফেমিনিস্ট। এদের সাধারনত শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক কিছু চক্রে দেখা যায়। এদের কেউ কেউ বেশিদিন আনপেইড থাকে না, দ্রুত কোন না কোন পেইড ফেমিনিস্ট গ্রুপের সাথে জুটে যেতে পারে। সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্য মানদন্ডের চেয়ে ভিন্নরকম দর্শনধারী হওয়ায় এরা পুরুষ সংক্রান্ত একটা হতাশা ও সেখান থেকে বিদ্বেষে ভোগে। শুধু পুরুষ নয়, ক্ষেত্রবিশেষে এদের হতাশা খোদার ওপরে গিয়েও পড়ে, কেন তাকে সমাজের চোখে গ্রহনযোগ্য মানদণ্ডে রুপসী করে সৃষ্টি করা হল না, সেজন্যে।

ঙ)ট্রেন্ডি ফেমিনিস্টঃ এরা ফেমিনিস্ট কারন ফেমিনিস্ট হওয়াটা কুউল।

চ)ক্যারিয়ারিস্ট ফেমিনিস্টঃ ক্যারিয়ারে সাফল্যের পথে যেকোন বাধা এরা ডিঙ্গিয়ে যেতে চান, তাই তারা ফেমিনিস্ট, কারন তারা মনে করেন পুরুষতন্ত্রই নারীর ক্যারিয়ারে অগ্রগতির পথে মূল বাধা।

বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশে ফেমিনিজমের উত্থান সরাসরি ইনসাফ ও আদলের অভাবজনিত সমস্যা ও মানসিক উপনিবেশের ফলাফল। শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক সেক্যুলারাইজেশান এবং অর্থনীতির একচেটিয়া কনজুমারাইজেশান এর চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।

বাংলাদেশের আমজনগন, ছেলে বা মেয়ে যাই হোক, তারা সাধারনত ইউরোপ ত্রিশ বছর থেকে পঞ্চাশ বছর আগে যা করেছে তা এখন করছে। তবে থার্ড ওয়েভ ফেমিনিজম ধরতে এদেশের ফেমিনিস্টদের সময় কম লেগেছে, যদিও থার্ড ওয়েভটাকে তারা পরিচয়গত কারনে পুরোপুরি আত্মস্থ করতে পারে নি।

পশ্চিমে ফেমিনিজম একটা স্লোলি ডিকেয়িং আইডিওলজি। বাংলাদেশ যেহেতু পোলারাইজড একটা রাষ্ট্র, এখানে একটা শ্রেণী অবশ্যই তীব্রভাবে ফেমিনিজমের অনুসারী হবে এটাই স্বাভাবিক। এর বিপরীতে, তীব্র এন্টি ফেমিনিস্ট আরেকটা স্রোতও এখানে তৈরি হবে, বা হয়ে আছে।

ফেমিনিজম মূলত প্রিভিলেজড মেয়েদের জন্য পুজিবাদের দেয়া খেলনা। পশ্চিম ইউরোপে মেয়েরা ক্রমেই এই খেলনা ছেড়ে দিচ্ছে। পশ্চিম ইউরোপ পৃথিবীর বুদ্ধিবৃত্তিক নেতা।

পশ্চিম ইউরোপ যখন মোটের ওপর ফেমিনিজমকে ত্যাগ করবে, তার দশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে পূর্বের ফেমিনিস্টরা বুঝতে পারবে তারা ভুল ছিল।

করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভোগবাদ। এর ফলে বিশ্বব্যাপী নারীবাদের জনপ্রিয়তা ক্রমেই হ্রাস পাবে।

কৃষি, পশুপালন ও পরিবার ছাড়া মানুষ অচল, তা একবিংশ শতাব্দী আবার মানুষকে কান ধরে শেখাবে।

লিখাঃ- Muhammad Sajal

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *