একটি কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, ইসলামে বাড়াবাড়ি নেই আবার ছাড়াছাড়িও নেই, ইসলাম মধ্যমপন্থা – কথাটি সত্য। কিন্তু বর্তমান যুগে যারা কথাটি বলেন, তাদের অধিকাংশই কথাটিকে ভুল পথে পরিচালিত করেন। পাশাপাশি আরেকটি কথাও শোনা যায়, “ইসলাম সহজ”, এ কথাটিও সত্য, কিন্তু অধিকাংশ বক্তার উদ্দেশ্য খারাপ হয়ে থাকে!
.
আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলাম মানেই মধ্যমপন্থা, অর্থাৎ, ইসলামে যা আছে তাই মধ্যমপন্থা; এখানে কমানো-বাড়ানোর সুযোগ নেই। ইসলাম নিজেই সহজ, ইসলাম যখন প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ করতে বলে তখন যেমন ইসলাম সহজ, ইসলাম যখন যুদ্ধের কথা বলে, তখনও ইসলাম সহজ।
.
ইসলামে পর্দার বিধানের যেই কঠোরতা আছে, সেই কঠোরতার অনুসরনই মধ্যমপন্থা, এটাকে শিথিল করার নাম মধ্যমপন্থা নয়। ইসলামে শাতীমে রাসূলের হত্যার বিধান আছে, সেটাকে পরিবর্তন করে ছাড় দেওয়া মধ্যমপন্থা নয়, বরং শাতীমকে হত্যা করাই মধ্যমপন্থা। ইসলামে কাফিরদের সাথে বারা’আ বা শত্রুতা পোষনের বিধান রয়েছে, এই বারা’আ-ই হচ্ছে মধ্যমপন্থা, বারা’আ বাদ দিয়ে বন্ধুত্বতার নাম মধ্যমপন্থা নয়।
.
নাচ-গান, সিনেমা, সুদ, মদ, ঘুষ, বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করা – এসবই হারাম, আর এই হারামকে হারাম বলাই মধ্যমপন্থা, কেননা হারাম বলাটাই ইসলামের বিধান। হারামকে হালাল করা বা শিথিল করা ‘মধ্যমপন্থা’ নয়, বরং তা মধ্যমপন্থার নামে কুফর!
.
ইসলাম যেটাকে ফরয-ওয়াজিব করেছে সেটাকে ফরয-ওয়াজিব হিসেবে মেনে নেওয়াই মধ্যমপন্থা, যেটাকে হারাম করেছে সেটাকে হারাম মেনে পরিত্যাগ করাই মধ্যমপন্থা; এখানে কাটছাট করাকে মধ্যমপন্থা বলা হয় না।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অগনিত ওয়ায়েজ বা বক্তাগন সাধারন জনগনের মন-মর্জি রাখার জন্য, তাদের খুশী করার জন্য শারী’আতের বিধানের ক্ষেত্রে শিথিলতাকে “মধ্যমপন্থা”র নাম দিয়েছেন!!
.
অথচ এটি মধ্যমপন্থা নয়, বরং শারী’আহকে বিকৃতকরণ! আল্লাহ তা’আলা যা হারাম করেছেন তা হারাম, এখানে কোনো শিথিলতা নেই, আল্লাহ তা’আলা যা ফরয-ওয়াজিব করেছেন তারা ফরয-ওয়াজিব, এটিকে ঐচ্ছিক বানানোর কোনো সুযোগ নেই।
.
আল্লাহ তা’আলা যা দিয়েছেন তাই মধ্যমপন্থা, শিথিলতার নাম মধ্যমপন্থা নয়।
.
অনেকেরা আবার ফিক্বহী ইখতিলাফের ক্ষেত্রে শিথিলতা ও শারী’আতের বিধানের ক্ষেত্রে শিথিলতাকে গুলিয়ে ফেলেন! এমনটা হয় অজ্ঞতার কারণে অথবা দলান্ধতার কারণে!
.
দেখুন, আল্লাহ তা’আলা ফজরের সালাতকে ফরয করেছেন, এখন কোনো বৃদ্ধ মানুষের যদি ফজরে উঠে সালাত আদায় করতে কষ্ট হয়, তাহলে কী ইসলাম তাকে এই সালাত কাযা করে পরে দিনের বেলায় আদায় করার অনুমতি দিচ্ছে? – না কখনোই না!
কিন্তু এই সালাত তো বৃদ্ধের জন্য কষ্টকর! তা সত্ত্বেও শারী’আহ এখানে কোনো ছাড় দিচ্ছে না, আর এটা বাড়াবাড়ি বা কঠরতা নয়, বরং এটাই মধ্যমপন্থা, কেননা এটাই ইসলাম।
কেউ যদি বলেন, এই বৃদ্ধের জন্য সালাত কাযা করার অনুমতি আছে, তাহলে তিনি মধ্যমপন্থার নামে শারী’আহ বিকৃত করলেন ও এমন কথা বললেন যা ‘কুফর’।
.
আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের জন্য শারী’আহ নয়; বরং শারী’আতের জন্যই আমরা! আল্লাহ তা’আলা আমাদের তৈরিই করেছেন তার শারী’আহ মেনে চলার জন্য, একমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য।
.
কিছু মানুষকে বলতে শোনা যায়, ‘যদি মানুষই না থাকে, শারী’আহ মেনে চলবে কে?’ – আসুন কথাটি উল্টে দেইঃ “যদি শারী’আহ-ই মেনে না চলেন, তাহলে আপনাকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য কী?!”
.
.
Collected from : ustaz মাইনউদ্দিন