ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন সেক্সিস্ট মানুষ – Sadiqur Rahman Khan

স্বীকার করতে লজ্জা নাই, ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন সেক্সিস্ট মানুষ।সেক্সিজমকে আমি খারাপ কিছু মনে করি না।
আজ পর্যন্ত বাসে কোনো মেয়ে দাঁড়াইয়া থাকসে আর আমি বইসা থাকসি, এমন হইতে দিইনি। তিনটা টিউশনি শেষ কইরা রাতে যখন হলে ফিরতাম, ক্লান্তিতে শরীর ভাইঙা যাইতো। তারপরও, কোনো নারী দাঁড়াইয়া আছে দেখলে আমি তারে বসতে দিসি। এখন পর্যন্ত এর হেরফের হয় নাই।যতদিন শক্তি আছে, ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ হেরফের হবে না।
এইটা মোটাদাগে একটা সেক্সিস্ট আচরণ। ছেলে মানুষ, খুব বুড়ো না হলে আমি দাঁড়াই না।
কিন্তু মেয়ে মানুষ যেকোনো বয়সের হলেই দাঁড়াইয়া বসতে দিই।এমন সেক্সিজম আরো বেশি বাড়ুক, আমি এটাও চাই।
নারী আর পুরুষকে আমি সমান চোখে দেখি না। আমার পরিবার এইটা আমারে শেখায় নাই। ছোটবেলা থেকেই আব্বু আমারে অটো বা লেগুনাতে চলাফেরা করা শেখাইসে। আর বোনরে সবসময়ই রিকশার ভাড়া দিসে। কারণ, আমার আর তার নিরাপত্তা কনসার্ন সেইম না। আমার চেয়ে বোনের নিরাপত্তা দরকার বেশি।
বাপের সাথে আমার সম্পর্কটা ঝগড়া আর গন্ডগোলের। যেহেতু আমরা দুইজন ভিন্ন আদর্শের মানুষ। এবং আর্গুমেন্ট এর সময় আমি বাপরে অনেক কঠিন কঠিন কথা বলি। উনি কোনদিন রাগ করেন না। হাসেন, মক করেন, কাউন্টার দেন। বাংলাদেশের কয়টা ছেলে বাপের সাথে কথা বলার এমন স্বাধীনতা পাইসে, আমি জানি না।
বাট আব্বুর কড়া নির্দেশ ছিলো, মায়ের সাথে এমনে রাফভাবে কথা বলা যাবে না। কষ্ট পাইতে পারে, বলা তো যায় না!! মায়ের সাথে কথা বলার সময় আমি বেশি সাবধান থাকি।
দেখতে গেলে ইসলামেও কিন্তু সেক্সিজম আছে। নবীজিরে যখন জিগানো হইলো, কার সম্মান বেশি, তিনবার বলা হইলো মায়ের কথা, চতুর্থবার বলা হলো বাপের কথা। কাজেই, সেক্সিজম জিনিসটা সব সময় খারাপ না।
রাজশাহীর রাস্তায় যদি কোনো ছেলে আরেকটা ছেলেরে রাম ধোলাই দেয়, লোকজন তাকাবে। বকাবকি করবে। কিন্তু পাবলিক প্লেসে একটা মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে দেইখেন, মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না। মেয়েদের ব্যাপারে এই সেন্টিমেন্ট যুগ যুগ ধরেই তৈরি হওয়া। এবং এটারে আমি খারাপ বলে মনে করি না।
এইজন্যই একজন ছেলের সিগারেট খাওয়ার চেয়ে একজন মেয়ের সিগারেট খাওয়ার প্রতিক্রিয়া বেশি হবে এবং হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, এই লোকগুলো বাসে কোনো পুরুষ দাঁড়াইয়া থাকলে দাঁড়াবে না কিন্তু কোনো মেয়েরে দাঁড়াইয়া থাকতে দেখলে এরা নিজে দাঁড়াইয়া মেয়েটারে বসতে দেবে। এটাকে আমি খারাপভাবে নিচ্ছি না।
(তাই বলে রাজশাহীতে যে ঘটনা ঘটেছে, তাকে কোনোভাবেই জাস্টিফাই করার সুযোগ নাই। শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার জন্য যেসব কুৎসিত গালি উনাকে শুনতে হয়েছে, এটা স্পষ্ট হ্যারাজমেন্টের পর্যায়ে পড়ে। যদি উনি বেআইনি কিছু করেন, তবে সেজন্য অথরিটি ব্যবস্থা নেবে। মাস পিপল কোনোভাবেই এই অধিকার রাখে না।)
এখন এইজন্য যদি আমারে মৌলবাদি বা ব্যাকডেটেড উপাধি পাইতে হয়, তাইলে সেই উপাধি আমি খুশিমনে মাথা পেতে নিতে রাজি আছি।
বহু পুরুষকে বন্দি করে রাখা হইসে। পুরুষ রাষ্ট্রদূতের মাথা কেটে ফেলা হইছে, যুদ্ধ বাঁধে নাই। অথচ একজন নারীরে অপহরণ করে বন্দি করে রাখার দরুন আমাদের সাহাবারা যুদ্ধ বাঁধাইয়া দিতে পিছপা হয় নাই। নারী এবং শিশুদের প্রতি এই সেন্টিমেন্ট আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া। নারী এবং শিশুর ইজ্জতের জিম্মাদারি প্রতিটি মুসলিম পুরুষের রক্তেই আছে ।
পশ্চিমা লিবারেলদের চোখ দিয়ে এটারে জাজ করা সম্ভব না। কারণ পশ্চিমা লিবারেলরা কখনওই নারীর সম্মানের কোনো দাম দেয় নাই। ক্রুসেডের সময় ওরা নিজের মেয়ে, নিজের বোনরে পর্যন্ত গোয়েন্দাগিরি করার জন্য পাঠাইতো, পতিতাবৃত্তি করার জন্য মুসলিম দেশে দেশে পাঠাইতো। সালাহউদ্দিন আইয়ূবী বলেছিলেন, ওদের কাছে ওদের মা বোনের সম্মান না থাকতে পারে, আমার কাছে আমার মা বোনের সম্মান আছে। আমি কখনওই আমার মেয়েদের অসম্মানিত করে, বেইজ্জতি করে আমার গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাবো না। এতে যদি আমার পরাজয়ও হয়, আমার দুঃখ থাকবে না।
পার্থক্যটা তখনও ছিলো, এখনও আছে। আমার ভাইয়ের সিগারেট খাওয়া দেখে আমি যতটা কষ্ট পাবো, বোনের সিগারেট খাওয়া দেখলে কষ্ট পাবো তারচেয়ে বেশি, এটাই সত্য। এই সত্য আমি সবসময়ই নিঃসংকোচে এবং নির্লজ্জভাবেই স্বীকার করতে চাই। কে কী মনে করলো, সেটা আমি কেয়ার করি না।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *