আশআরী এবং আছারী আক্বীদা পন্থীদের মৈত্রী বন্ধন! পর্ব:১
লেখকঃ শাইখ আব্দুল্লাহ আল মামুন হাফি.
.
ইমাম ইবনু কাসীর রহিমাহুল্লাহ মাযহাবে শাফেয়ী ও ফুরুয়ী আক্বীদার ক্ষেত্রে তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়া জামাতের অধিকাংশ মুহাদ্দিস, ফুক্বাহা ও সালেহীনদের মত ইমাম আবুল হাসান আল আশআরী রহিমাহুল্লাহ’র অনুসারী ছিলেন, এতদ্বসত্ত্বেও তিনি হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফক্বীহ, মুহাদ্দিস এবং ফুরুয়ী আক্বীদায় ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুল্লাহ তথা আছারী আক্বীদার অনুসারী ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহিমাহুল্লা’র ছাত্র ছিলেন। ছাত্র এবং উস্তাদ তারা একে অন্যকে খুব মর্যাদার নজরেই দেখতেন।
.
একবার ইমাম বুরহানুদ্দীন ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহর সাথে ইমাম ইববনু কাছীর রহ:’র মিষ্টি ও হাস্য রসাত্মক ঝগড়া হল!….
.
ইমাম ইবনু হাজার আল আসক্বালানী আশ শাফেয়ী আল আশআরী রহিমাহুল্লাহ, বর্ণনা করেন-
ومن نوادره انه وقع بينه وبين عماد الدين بن كثير منازعة في تدريس الناس فقال له ابن كثير انت تكرهني لأنني أشعري فقال له: لو أن ما بين رأسك الى قدمك شعر (يعرض هنا بالاشعرية) ما صدقك الناس في قولك انك أشعري وشيخك ابن تيمية
“এবং ইবনুল কাইয়্যিম রহ: এর আজীব ও গরীব ঘটনার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, একবার ইবনু কাসীর রহঃ’র সাথে লোকদের তাদরিস সংক্রান্ত কোন এক বিষয়ে (মিষ্টি) ঝগড়া লাগল! ইবনু কাছীর রহঃ ইবনুল কায়্যিমক কে বললেন-
আপনি আমাকে এ জন্য অপছন্দ করেন যে, আমি আশআরী আক্বীদার!!? ইবনুল ক্বায়্যিম রহঃ বললেন- যদি তোমার মাথা হতে কদম পর্যন্ত শা’র(তথা চুল) থাকে!* তবুও মানুষ তোমার একথা বিশ্বাস করতে চাইবেনা যে, তুমি আশআরী!অথচ তোমার শায়খ হচ্ছে ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহ:।”
.
(দুরারুল কা-মেনাহ ১/৫৮)
.
- এখানে ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ আশ’আরী শব্দের শা’র অংশটুকু মজা করার অর্থে উল্লেখ করেছেন যার অর্থ হচ্ছে চুল!!!
.
সালাফদের যুগে আশ’আরী, মাতূরীদি ও আছারী আক্বীদার মাঝে ফুরুয়ী আক্বীদার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মতভেদ ছিল কিন্তু কিন্তু মৌলিক আক্বীদায় তারা এক ছিলেন।তারা পরস্পরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করতেন, একে অন্যকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত থেকে খারেজ(বের) করতেন না।ইসলামী ইতিহাস গ্রন্থ গুলো এটিই সাক্ষ্য দেয় যে, তারা প্রত্যেকেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সাহায্যকারী ছিলেন।
.
একথা অনস্বীকার্য নয় যে, উম্মাহর জমহুর (অধিকাংশ) ফুক্বাহা মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুয়াররীখীন(ঐতিহাসিকগন), উলামা এবং সালেহীন ফুরুয়ী আক্বীদার ক্ষেত্রে আশ’আরী কিংবা মাতূরীদি ছিলেন।
সুতরাং তাদের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত ও ফিরক্বায়ে নাজিয়াহ( মুক্তি প্রাপ্ত দল) থেকে বের করে দেওয়া মানে এই উম্মাহ ইলম, আমলের বৃহৎ যাখীরাহ তথা ভাণ্ডার থেকে বঞ্চিত হবে। বরং বলা যায় একেবারে শূণ্য হয়ে যাবে।
আশ’আরী, মাতূরিদী ও আছারী আক্বীদা আহলুস সুন্নাহ নামক এক গাছের তিন শাখাঃপর্ব-২
*
আশ’আরী, মাতূরীদি ও আছারী আক্বীদার মৈত্রী বন্ধনের ধারাবাহিকতায় এবার আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মু’তাবার তথা গ্রহনযোগ্য ইমামদের উক্তি মুতাবেক আমরা এ মৈত্রী সম্পর্কের প্রমান পেশ করব বি ইজনি ওয়া তাওফীকিল্লাহ।
.
ইমাম জালাল আদ দাওয়ানী রহঃ বলেন-
“ফিরক্বাতুন নাজিয়াহ তথা মুক্তিপ্রাপ্ত দল হল আশ’ আরীগন অর্থাৎ উসূলের ক্ষেত্রে (তথা আক্বীদার ক্ষেত্রে) শায়খ আবুল হাসান আশারীর অনুসারী গন,….. যদি তুমি বলঃ কিভবে আপনি এই ফয়সালা করলেন যে আশারীরা ফিরক্বায়ে নাজিয়াহ??? আমি বলবঃ হাদিসের পরম্পরা ও ভাবভঙ্গিমাতে এটি উপলব্দি হয় যে, তারা ফিরক্বায়ে নাজিয়াহ। যারা নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্নিত হাদিস, এবং তার সাহাবাদের থেকে বর্নিত বর্ননায় আকীদা পোষণ করেন।…. এবং তারা তাদের আক্বিদার ক্ষেত্রে রাছূলুল্লাহ ও তার সাহাবীদের থেকে বর্নিত সহীহ হাদীস সমূহ আকড়ে ধরেন, এবং এর বাহ্যিক হুকুমের বাইরে অতিক্রম করেনা তবে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিত, মুতাযিলাদের মত এরা আক্বল তথা যুক্তি শাস্ত্রের দিকে একদম ঝুকেও পড়েনা বা আক্বল তথা যুক্তি শাস্ত্রকে আক্বিদার ব্যাপারে শিথিল ও করেনা।”
.
আরবী ইবারাতঃ
(الفرقة الناجية، وهم الأشاعرة أي التابعون في الأصـول للشيخ أبي الحسـن… فـإن قلت: كيف حكم بأن الفرقة الناجية هم الأشاعرة؟ وكل فرقة تزعم أنها ناجية؟ قلت سياق الحـديث مشعر بأنهم – يعني الفرقة الناجية – المعتقدون بما روي عن النبـي ‘ وأصحابه، وذلك إنما ينطبق على الأشاعرة، فإنهم متمسكون في عقائدهم بالأحاديث الصحيحة المنقولة عنه ‘ وعن أصحابه، ولا يتجاوزون عن ظواهرها إلا لضرورة، ولا يسترسلون مع عقولهم كالمعتزلة) .
[শারহুল আক্বায়েদিল ই’দ্বদিয়্যাহ ১/৩৪]
.
ইমাম ইদ্বদুদ্দীন আল ঈজী রহঃ বাতিল ফিরক্বার সংখ্যা উল্লেখ করার পর বলেন-
“এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যতিক্রমী ফিরক্বাটি হচ্ছে, যাদের ব্যাপারে নবী ( ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেন – “ما أنا عليه وأصحابي” অর্থাৎ “যারা আমার ও সাহাবীদের মতাদর্শে থাকবে”, আর এরা হচ্ছেন আশ’আরীগন এবং সালাফদের মাঝে যারা মুহাদ্দিস ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতে অন্তর্ভূক্ত তারা, এবং এদের মাযহাব এসব (উল্লেখিত) বিদ’আত মুক্ত।”
.
আরবী ইবারাতঃ
(وأما الفرقة الناجية المستثناة الذين قال النبي ـ ‘ ـ فيهم “هم الذين على ما أنا عليه وأصحابي” فهم الأشاعرة والسلف من المحدثين وأهل السنة والجماعة، ومذهبهم خالٍ من بدع هؤلاء).
[আল মাওয়াক্বেফঃ৪৩০]
.
আছারী আক্বিদার ও হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু সালেম ইবনু সুলাইমান আস সাফফারীনী রহঃ বলেন-
“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত (মূলত) ৩টি দলঃ
১। আছারীঃ এদের ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুল্লাহ।
২। আশ’আরীঃ এদের ইমাম আবুল হাসান আল আশ’আরী রহিমাহুল্লাহ।
৩। মাতূরীদিঃ এদের ইমাম আবূ মানসূর আল মাতূরীদি রহিমাহুল্লাহ।
.
আরবী ইবারাতঃ
أهل السنة والجماعة ثلاث فرق:
*الأثرية، وإمامهم أحمد بن حنبل رضي الله عنه.
*والأشعرية، وإمامهم أبو الحسن الأشعري رحمه الله.
*والماتريدية، وإمامهم أبو منصور الماتريدي رحمه الله تعالى
.
[লাওয়মিউ’ল আনওয়ারিল বাহিয়্যাহ ওয়া ছাওয়াতিউ’ল আছরারিল আছারিয়্যাহ- বাইরুত ১/৭৩; শারহু দুররাতিল মুদ্বিয়্যাহ ফি আক্বীদাতিল ফিরক্বাতিল মারদ্বিয়্যাহ]
.
ইমাম ইবনু আজীবাহ রহঃ বলেন-
“আর আহলুস সুন্নাহ হচ্ছেন আশায়েরীরা এবং তাদের সহিহ আক্বীদার অনুসারীগন, যেমনটি আহলুস সুন্নাহর(ইমামদের) কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।”
.
আরবী ইবারাতঃ
(أما أهل السنة فهم الأشاعرة ومن تبعهم في اعتقادهم الصحيح، كما هو مقرر في كتب أهل السنة).
[তাফসীফে সূরা ফাতিহার উপর তার রচিত “আল বাহরুল মাদীদ” ঃ৬০৭]
.
ইমাম মুরতাদ্বা আয যুবাইদী রহঃ বলেন-
” যখন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতকে ইত্বলাক্ব করা হয় তখন তার উদ্দেশ্য হয় আশ’আরী এবং মাতূরীদি গন”
.
আরবী ইবারাতঃ
(إذا أطلق أهل السنة والجماعة فالمراد بهم الأشاعرة والماتريدية).
[ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাক্বীন ২/৬]
.
তিনি রহঃ একই কিতাবের অন্য স্থানে বলে:
“আহলুস সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য ৪টি দলঃ মুহাদ্দিসদের দল (তথা আছারী),( সুন্নাহপন্থী) সূফীদের দল, আশারী এবং মাতূরীদিদের দল।”
.
আরবী ইবারাতঃ
(والمراد بأهل السنة هم الفرق الأربعة، المحدثون والصوفية والأشاعرة والماتريدية)
[প্রাগুক্ত ২/৮৬]
.
ইমাম তাজউদ্দীন আস সুবকী রহঃ বলেন-
“জেনে রেখ, ওয়াজিব(ফরজ),জায়েজ, হালাল-হারাম মনে করার আক্বীদায় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সকলে (অর্থাৎ প্রত্যেক অংশ) একই আক্বীদায় একমত।যদিও তারা পরস্পরে পদ্ধতিগত, এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছার জন্য নিতীগত (তথা ফুরুয়ী) ইখতেলাফ করে থাকে। মোটকথা ব্যাপক অনুসন্ধান ও তাহকিকের পর জানা গেছে তারা (আহলুস সুন্নাহ) তিনটি বড় দলে বিভক্তঃ
প্রথম দলঃ আহলুল হাদীস ( তথা হাদীস শাস্ত্রের মহাপন্ডিতগন বা আছারীগন)। তাদের অনুসৃত নিতীমালা হচ্ছে শ্রুতির দলিল, অর্থাৎ আমি বুঝাতে চাচ্ছি- কুরান, সুন্নাহ ও ইজমা।
.
২য় দলঃ আহলুন নজর ওয়াল আক্বল যুক্তিবাদী,ও দর্শন শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জনকারীগন, এরা হচ্ছেন- আশারী, এবং হানাফিয়্যাগন (তথা মাতূরিদীগন)। আশায়েরা আক্বীদার শায়খ হচ্ছেন ইমাম আবুল হাসান আল আশ’আরী এবং হানাফিয়্যাদের (আক্বীদার) শায়খ হচ্ছেন ইমাম আবু মানসূর আল মাতূরিদী।
.
৩য় দলঃ আহলে উইজদান ও কাশফ ওয়ালগন। এবং তারা হচ্ছেন সূফীগন ( তথা সুন্নাহ পন্থী সূফিগন, যেমন- ইমাম জুনায়দ বাগদাদি, আবু বকর শিবলী, আব্দুল্লাহ তাসতুরী, সুলাইমান দারানী, শায়খ আব্দুল ক্বাদের আল জীলানি রহঃ প্রমূখ)। এবং তাদের অনুসৃত নীতিমালা হচ্ছে- সূচনালগ্নে এরা আহলুল হাদিস ও আহলুন নজর (সহিহ যুক্তিবাদি) দের অনুসৃত নীতিমালা অনুযায়ী চলে, আর শেষে কাশফ ও ইলহাম অনুযায়ী ভাল- মন্দের সিদ্ধান্ত নেন।”
**( উল্লেখ্য যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের স্বতঃসিদ্ধ আক্বিদা হচ্ছে আল্লাহ ওয়ালা নেককার দের আল্লাহর তরফ থেকে কাশফ ইলহাম কারামতের ছূরতে হয়ে থাকে। কাশফ মানে অপ্রকাশ্য জিনিস উন্মোচন হয়ে যাওয়া আর ইলহাম মানে মনের মাঝে আল্লাহর পক্ষ থেকে ভাল- মন্দের উদ্রেক হওয়া, যেমনটি সূরা শামসের মাঝে আল্লাহ তা’লা ইরশাদ করেছেন।)
.
আরবী ইবারাতঃ
اعلم أن أهل السنة والجماعة كلهم قد اتفقوا على معتقد واحد فيما يجب ويجوز ويستحيل، وإن اختلفوا في الطرق والمبادئ الموصلة لذلك، وبالجملة فهم بالاستقراء ثلاث طوائف:
الأولى: أهل الحديث ومعتمد مباديهم الأدلة السمعية، أعني الكتاب والسنة والإجماع.
الثانية: أهل النظر العقلي والصناعة الفكرية، وهم الأشعرية والحنفية، وشيخ الأشعرية أبو الحسن الأشعري، وشيخ الحنفية أبو منصور الماتريدي…
الثالثة: أهل الوجدان والكشف، وهم الصوفية، ومباديهم مبادئ أهل النظر والحديث في البداية، والكشف والإلهام في النهاية
.
[ইশারাতুল মারাম মিন ইবারাতিল ইমাম, হাশিয়া, পৃঃ ২৯৮; ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাক্বীন, মুরতাযা যুবাইদী ২/৬;শারহু আক্বীদাতিল ইমাম ইবনু হাজেব আল মালেকী,তাজউদ্দিন আস সুবকি ]
আশ’আরী, মাতূরিদী ও আছারী আক্বীদা আহলুস সুন্নাহ নামক এক গাছের তিন শাখাঃপর্ব-৩
*
ইমাম আবুল হাসান আব্দুল আযীয ইবনুল হারেস আত তামীমী আল হাম্বলী।
.
৩১৭ হিজরীতে তিনি জন্মগ্রহণ আর ৩৭১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি (রহঃ) ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের ও হাম্বলী তথা আসারী আক্বীদার অন্যতম পুরোধা। হাদীস, ফিক্বহ, উসূল(আক্বীদাহ),ফারায়েয সহ বেশ কিছু শাস্ত্রের শাস্ত্র জ্ঞানী ছিলেন তিনি। এসব বিষয়ে তিনি অনেক কিতাবও লিখেছেন৷ তিনি হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম আবুল ক্বাসেম আল খিরাক্বী, আবু বকর আব্দুল আযীয সহ প্রমুখদের শিষ্যত্ব অর্জন করেছেন।তার মৃত্যুর পরে তাকে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলের ক্ববরের পাশেই কবর দেওয়া হয়। তার সন্তানাদি ও নাতি-পুতিরাও বাগদাদের বিশিষ্ট হাম্বলী আলেম ছিলেন।
.
[বিস্তারিত দেখুনঃ ত্ববাক্বাতুল হানাবিলা, আবু ইয়ালা ২/১৩৯; আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ,ইবনে কাসীর ১১/২৯৮; মানাক্বেবুল ইমাম আহমাদ,ইবনুল জাওযীঃ৬২৩- আব্দুল্লাহ আত তুরকীর তাহক্বীক সহ; আল মানহাজুল আহমাদ, আলীমি ২/৬৬;আল মাক্বসাদুল আরশাদ ২/১২৭]
.
ইমাম আবূ ইয়ালা তার ব্যাপারে বলেন-
رجل جليل القدر
“তিনি একজন জলিলুল ক্বদর তথা অনেক সম্মানিত আলেম।” [ত্ববাকাতুল হানাবিলা ২/১৩৯]
.
ইমাম খত্বীবে বাগদাদী তাকে মুসনাদে আহমাদের দুইটি হাদীস জাল করার অভিযোগ করেছেন।
أنه قد وضع حديثين في ” مسند أحمد”
[তারীখে বাগদাদ ১০/৪৬১]
এই জন্য ইমাম যাহাবী বলেন-
إنه متهم بالوضع
[মীযানুল ই’তেদাল ২/৬২৪]
.
কিন্তু তিনি হাম্বলীদের নিকট শ্রদ্ধাভাজন ও গ্রহনযোগ্য। এমনকি তার ব্যাপারে এই অভিযোগকে কোন হাম্বলী মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ গ্রহন করেন নি বরং ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ইমাম ইবনুল জাওযী আল হাম্বলী রহঃ। তিনি বলেনঃ
وقد تعصب عليه الخطيب وهذا شأنه في أصحاب أحمد.
“উনার ব্যাপারে খত্বীব (বাগদাদী) মাযহাবী গোড়ামীতে বাড়াবাড়ি করেছেন! আর তার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, তিনি আহমদ ইবনু হাম্বলের অনুসারীদের (প্রায়ই) সমালোচিত করবে।”
[আল মুনতাজ্বম ফী তারীখিল মুলূকি ওয়াল উমাম, ইবনুল জাওযী ৭/১১০]
এতক্ষণ উনার ব্যাপারে আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল আসারী ও হাম্বলী মাযহাবে উনার বিশেষ অবস্থান কি ছিল তা নিয়ে। যখন আসারী ও আশারীদের দ্বন্দে বিশ্ববাসী পেরেশান তখন এই মহান ইমাম(রহঃ) আশ’আরী আক্বীদার প্রখ্যাত ইমাম ক্বাযী আবূ বকর আল বাক্বিল্লানী রহঃ এর সাথে মহা খাতির ও বন্ধুত্বে লিপ্ত!! এমন উভয়ের মাঝে এত ঘনিষ্টতা ছিল যে, ইমাম বাক্বিল্লানী তার নাম চিঠিতে এভাবে লিখতেন- আবু বকর আল হাম্বলী!!
.
ইমাম ইবনু আসাকীর (রহঃ) যামানার আবূ ইউসূফ খ্যাত ক্বাযী আবু আব্দিল্লাহ ইবনুল হুসাইন আদ দামেগানী আল হানাফী রহঃ থেকে বর্ণনা করেন-
وكان أبو الحسن التميمي الحنبلي يقول لأصحابه: تمسكوا بهذا الرجل- أي بالباقلاني- فليس للسنة عنه غنى أبدا. قال: وسمعت الشيخ أبا الفضل التميمي الحنبلي رحمه الله وهو عبد الواحد بن أبي الحسن بن عبد العزيز بن الحرث يقول: اجتمع رأسي ورأس القاضي أبي بكر محمد بن الطيب- يعني الباقلاني- على مخدة واحدة سبع سنين. قال الشيخ أبو عبد الله: وحضر الشيخ أبو الفضل التميمي يوم وفاته العزاء حافيا مع إخوته وأصحابه وأمر أن ينادي بين يدي جنازته: “هذا ناصر السنة والدين، هذا إمام المسلمين، هذا الذي كان يذب عن الشريعة ألسنة المخالفين، هذا الذي صنف سبعين ألف ورقة ردا على الملحدين “، وقعد للعزاء مع أصحابه ثلاثة ايام فلم يبرح، وكان يزور تربته كل يوم جمعة في الدار” اهـ.
“আবুল হাসান আত তামীমী আল হাম্বলী তার ছাত্রদের
বলতেন-” এই লোকটাকে আকড়ে ধরো (ভাল ভাবে অনুসরণ করো), আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আত তার থেকে কখনই অমুখাপেক্ষী নন। আমি শাইখ আবুল ফাদ্বল আত তামীমী আল হাম্বলী রহঃ থেকে শুনেছি তিনি বলতেন- দীর্ঘ ৭ বছর একই বালিশে আমার ও আবু বকর বাকিল্লানীর মাথা লেগেছিল!! শাইখ আবূ আব্দিল্লাহ বলেন- বাকিল্লানীর মৃত্যুর শোক সভায় আবুল ফাদ্বল আত তামীমী খালি পায়ে তার ভাই ও ছাত্রদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে ছিলেন। এবং তিনি তাদের নির্দেশ দিলেন যেন, তার খাটিয়ার সামনে এই এ’লান দেয় যে- উনি ছিলেন আহলুস সুন্নাহ ও দ্বীনের অন্যতম সাহায্যকারী ইনি হচ্ছেন মুসলমানদের ইমাম, ইনি মুলহিদ দের খন্ডন করতে ৭০ হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন। এই শোক সভায় তিনি তার ছাত্রদের সাথে ৩ দিন যাপন করেছেন। তিনি প্রত্যেক জুমায় তার ক্ববর যিয়ারত করতেন।”
.
[তাবয়ীনু কাযিবিল মুফতারী- বাক্বিল্লানীর জিবনীঃ২২১ ]
.
এখানে শুধু একজন হাম্বলী নন শীর্ষস্থানীয় হাম্বলী ও আসারীদের এহেন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আমাদের কি শিক্ষা দেয়??
.
- উল্লেখ্য যে অনেকেই এই দাবী করে বসেন ইমাম ক্বাযী বাক্বিল্লানী আসারী আক্বীদায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন!! এটি অবান্তর ও প্রমাণহীন দাবী। বিস্তারিত উল্লেখ করার সময় নেই।
.
আশ’আরী, মাতূরীদি ও আসারী আক্বীদাহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের একটি গাছের ৩টি শাখা। পর্বঃ৪ (প্রসঙ্গঃ ইমাম ইবনু কুল্লাবের প্রসংসায় আহলুস সুন্নাহর ইমামরা)
………………………………………………………….
একথা সত্য যে, ইলমে কালাম চর্চা করে বাতিল ফিরক্বাহকে জবাব দিয়ে সেসময় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতকে শক্তিশালী রুপে উপস্থাপন করেছিলেন ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ আল কুল্লাবী রহঃ ও তার অনুসারীরা।
এক্ষেত্রে তিনি সিফাতে বারী তা’লা সংক্রান্ত কতিপয় আক্বীদায় তার পূর্ববর্তী সালাফদের অনুসৃত নীতি ‘তাফউইদ’,’ ইমরার’ ও ‘ইমদ্বা’ কে মেনে আরও বিশ্লেষণাত্মক ব্যাখ্যা করায় খলক্বে কুরআন ও লফজে কুরআনের মাসালায় শাসক কর্তৃক অত্যাচারিত ও আপোষহীন ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ)’র সাথে তার কিছুটা মনোমালিন্য ও মতভিন্নতা হয়েছিল।
একই মাসালায় যেমন সমস্যা হয়েছিল ইমাম আহমাদের অন্যতম বন্ধু ইমাম কারাবিসীর সাথে। এই জন্যে ইমাম আহমাদ (রহঃ) তখন তার কাছের ছাত্রদের ইমাম ইবনু কুল্লাবের সাহচর্য পরিত্যাগ করার উপদেশ দিতেন। আর এমন প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা ঘটা আবহমানকাল থেকে পুনরাবৃত্তি হওয়া ইতিহাস মুতাবেক একদমই স্বাভাবিক! যা এখনকার সময়ে বিভিন্ন বড় বড় আলেমদের মাঝেও পরিলক্ষিত হয়।
কিন্তু এই ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ)’র এই নিষেধাজ্ঞা কে কেন্দ্র করে তার অনুসারী জামাত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিংবা অনিচ্ছায় অথবা ইমাম আহমাদ রহঃ এর একনিষ্ঠ অনুসরনের আবেগ থেকে আহলুস সুন্নাহর এই মহান ইমামকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে লাঞ্চিত করেছে, এমনকি তাকে নাসারাদের (খ্রিস্টানদের) দালাল উপাধি পর্যন্ত দিয়েছে। ইমাম যাহাবী ও ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহিমাহুমাল্লাহের মত দুইজন প্রাজ্ঞ আলেম যারা ইমাম আহমাদের আক্বীদার অনুসারী বলে প্রসিদ্ধ তারা পর্যন্ত এই অপবাদের বিরোধিতা করেছেন।
এবং আরও আফসোসের বিষয় হচ্ছে ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ আল কুল্লাবী রহঃ এর উপর আরোপিত অনেক জঘন্য মিথ্যা অপবাদকে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুল্লাহর অনুসারী আহলুস সুন্নাহর অনেক সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগনও নিজেদের কিতাবে কিংবা বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন।
ফলতঃ আকীদাহ কেন্দ্রিক এই ফিতনাটি আহলে ইলম ও আওয়ামদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেল আহলুস সুন্নাহর অনুসারী দলের মাঝে। এভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলেমদের মাঝে ভাগাভাগি আবহমানকাল থেকেই চলে আসছে।
আক্বীদার ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ (রহঃ) ও ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ আল কুল্লাবী (রহঃ) উভয়ের কর্মপন্থা ও অনুসৃত নীতি ভিন্ন হলেও তাদের উদ্দেশ্য একই। এবং উভয়কেই আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী মনে করি।
একথা প্রমানিত যে, অধিকাংশ সালাফরা আল্লাহর সিফাতকে ‘সিফাতে যাতিয়া’ ও ‘সিফাতে ফে’লিয়া’ এই দুই ভাগে বিভক্ত করা ব্যতীত ‘ইসবাত’ করতেন। এবং মু’তাযিলারা আল্লাহর সিফাতকে নফী তথা নাকোচ করত। এজন্য আল্লাহর সিফাতকে ইসবাত করার কারণে সালাফদের দলকে মু’তাযিলারা ‘সিফাতিয়া’ বলে আখ্যায়িত করত।
কিন্তু পরবর্তীতে সালাফদের একদল আল্লাহর সিফাতকে ইসবাত ও শক্তিশালী রুপে প্রমান করতে গিয়ে ইলমুল কালামের অনুসৃত নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। যা তাদের পূর্ববর্তী সালাফরা পছন্দ করতেন না।
ইমাম শাহরাস্তানী রহ. (৪৭৯-৫৪৮ হি.) বলেন-
حتى انتهى الزمان إلى عبدالله بن سعيد الكلابي، وأبي العباس القلانسي، والحارث بن أسد المحاسبي. وهؤلاء كانوا من جملة السلف إلا أنهم باشروا علم الكلام، وأيدوا عقائد السلف بحجج كلامية، وبراهين أصوليه، وصنف بعضهم، ودرس بعضهم، حتى جرى بين أبي الحسن الأشعري وبين أستاذه مناظرة في مسائل من مسائل الصلاح والأصلح فتخاصما، وانحاز الأشعري إلى هذه الطائفة، فأيد مقالتهم بمناهج كلامية، وصار ذلك مذهباً لأهل السنة والجماعة، وانتقلت سمة الصفاتية إلى الأشعرية .
‘পরবর্তীতে ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ আল কুল্লাবী রহঃ, আবুল আব্বাস আল ক্বলানিসী ও হারেস ইবনুল আসাদ আল মুহাসেবীর যামানা আসল এবং তারাও সালাফদের অন্তর্ভুক্ত তবে তারা ইলমুল কালাম চর্চা করেছেন, এবং তারা সালাফদের আক্বীদাহ সমূহকে শক্তিশালী করতেন ইলমুল কালামের অনুসৃত নীতিতে দলিল প্রয়োগ করে (যা পূর্ববর্তী অধিকসংখ্যক সালাফদের নিকট অপছন্দনীয় ছিল), তাদের কেউ কেউ কিতাব লিখে একাজ করতেন কেউ আবার দারস তাদরীসে একাজ করতেন। একারণে সেসময় (মু’তাজিলা থাকা অবস্থায়) ইমাম আবুল হাসান আল আশআরী (রহঃ) ও তার উস্তাযের সাথে বিশুদ্ধ ও সর্বাধিক বিশুদ্ধ আক্বীদাহ নিয়ে ব্যাপক বাক-বিতণ্ডা ও মুনাযারা হয়েছিল। এভাবে আবুল হাসান আল আশআরী মু’তাযিলা আক্বীদাহ পরিত্যাগ করে উল্লেখিত জামাতের সাথে সম্পৃক্ত হলেন,এবং ইলমুল কালামের নীতিতে তাদের মতাদর্শকে শক্তিশালী করেন। যা পরবর্তীতে আহলুস সুন্নাহর মাযহাব হিসেবে বিবেচিত হয়। এবং (মু’তাযিলাদের দেওয়া) ‘সিফাতিয়াহ’ দলের উপাধি (সালাফদের থেকে) স্থানান্তরিত হয়ে ইমাম আবুল হাসান আল আশআরীর দিকে সম্পৃক্ত হয়।
[আল মিলাল ওয়ান নিহাল ১/৬৭- দারুত তাওফীক্বিয়া,তুরাস]
পরবর্তীতে উল্লেখিত ঐসকল ইলমুল কালাম পন্থী সালাফদের অনুসারী আহলুস সুন্নাহর এই সর্ববৃহৎ জামাআত প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ‘আশআরী’ নামে উপাধি লাভ করেন।
[ইলমুল কালাম, ড. আহমাদ মাহমূদ সবহীঃ৪২২]
সিফাত কেন্দ্রিক আক্বীদাহর ক্ষেত্রে নীতিগত মতপার্থক্যের কারণে অনেক ইমামই এই মহান ব্যক্তির ব্যাপারে ইনসাফ করতে পারেননি!
অথচ ইমাম তাজুদ্দীন আস সুবকী (রহঃ) বলেন-
“كان من أهل السنة على الجملة، وله طول الذيل في علم الكلام وحسن النظر”.
”তিনি সামগ্রিকভাবে আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইলমুল কালাম ও (বাতিল ফিরক্বার সাথে) উত্তম ভাবে মুনাযারা করায় তার ব্যাপক অবদান ছিল।”
[ত্ববাক্বাতুশ শাফেয়িয়্যাতিল কুবরা, সুবকী ১/৯৫]
ইমাম তাজুদ্দীন আস সুবকী (রহঃ) আরও বলেন-
وابن كلاّب على كل حال من أهل السنة
‘ইমাম ইবনু কুল্লাব সব দিক বিবেচনায় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত। ‘
[ত্ববাকাতুশ শাফেইয়া ২/৩০০]
ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেন এবং ইমাম যাহবী (রহঃ)ও এটি উল্লেখ করেছেন।
“وكان ممن انتدب للرد عليهم – يعني الجهمية والمعتزلة – أبو محمد عبدالله بن سعيد بن كلاب، وكان له فضل وعلم ودين، ومن قال إنه ابتدع ما ابتدع؛ ليظهر دين النصارى في المسلمين، كما يذكره طائفة في مثالبه، ويذكرون أنه أوصى أخته بذلك، فهذا كذب عليه، وإنما افترى عليه المعتزلة والجهمية الذين رد عليهم، فإنهم يزعمون أن من أثبت الصفات فقد قال بقول النصارى”
“জাহমিয়া ও মু’তাযিলাদের খন্ডন করায় যারা প্রসিদ্ধ তাদের মাঝে আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু কুল্লাব অন্যতম। মর্যাদা, ইলম ও দ্বীনতারিতায় তার বিশেষত্ব রয়েছে। আর যারা বলে থাকে যে, তিনি মুসলমানদের মাঝে খ্রিস্টানদের ধর্ম অনুপ্রবেশ করার জন্যে দ্বীনের মাঝে বহু বিদ’আতের আবিষ্কার করেছেন! যেমনটি একদল লোকেরা তার সমালোচনায় এই কথা উল্লেখ করে! এবং তারা একথাও বলে থাকে যে, তিনি তার বোনকেও এদিকে আহবান করেছেন!
তবে এটি তার উপর মিথ্যা আরোপ। মূলত মু’তাযিলা ও জাহমিয়ারা তার প্রতি অনেক বাড়াবাড়ি করত যাদের তিনি খন্ডন করতেন। তারা ধারাণা করে যে, যারা আল্লাহর সিফাতকে ইসবাত করে তারা খ্রিষ্টানদের মতবাদ গ্রহন করে!!”
[মাজমূউল ফাতাওয়া ৫/৫৫৫; সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/১৭৫-
এক্ষেত্রে ইমাম যাহাবীর বক্তব্য নিম্নরুপঃ
وقال بعض من لا يعلم: إنه ابتدع ما ابتدعه ليَدُسَّ دين النصارى في ملتنا، وإنه أرضى أخته بذلك، وهذا باطل، ]
ইমাম যাহাবী (রহঃ) ইমাম ইবনু কুল্লাবের ব্যাপারে আরও বলেন-
والرجل أقرب المتكلمين إلى السنة، بل هو في مناظريهم.
তিনি এমন ব্যাক্তি যিনি মুতাকাল্লিমদের মধ্যে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অধিকতর নিকটবর্তী, বরং (বলতে গেলে) তিনি তাদের দর্পন স্বরুপ।
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/১৭৬]
ইমাম যাহাবীর এই বক্তব্যের টীকায় শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত্ব রহঃ লিখেন-
كان إمام أهل السنة في عصره، وإليه مرجعها،
তিনি তার যামানায় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইমাম ছিলেন। আর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত সেসময় তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছে (অর্থাৎ তিনি এর তখনকার মুখপাত্র ছিলেন)।
[প্রাগুক্ত ]
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহঃ বলেন-
“وابن كلاب إمام الأشعرية أكثر مخالفة لجهم، وأقرب إلى السلف من الأشعري نفسه”
”ইবনু কুল্লাব হচ্ছেন আশআরীদের ইমাম। যিনি (জাহমিয়াদের নেতা) জাহম ইবনু সাফওয়ানের ( তার বাতিল মতাদর্শের) সাংঘাতিক বিরোধী ছিলেন। এবং তিনি মূলত আশ’আরিদের মাঝে সালাফদের অতি নিকটবর্তী।”
[মাজমূউল ফাতাওয়া ১২/২০২-২০৩]
এছাড়াও ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) এর প্রখ্যাত ছাত্র ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম (রহঃ) পর্যন্ত তার রচিত ‘ইজতিমাউ জুয়ূশিল ইসলামিয়া’ কিতাবের বহু স্থানে ইমাম ইবনু কুল্লাবের প্রশংসা করেছেন, যদিও তিনিও ইমাম ইবনু তাইমিয়ার মত উক্ত কিতাবে তার সাথে তাদের কিছু মতের অমিল গুলোও উল্লেখ করেছেন।
ইমাম ইবনু কুল্লাবকে বিদআতি আখ্যায়িত করা হলে ইমাম ইবনু আবী যাইদ আল মালেকী (রহঃ) জবাবে বলেন-
وما علمنا من نسب إلى ابن كلاّب البدعة، والذي بلغنا أنه يتقلّد السنة ويتولّى الردَّ على الجهمية وغيرهم من أهل البدع يعني عبدالله بن سعيد بن كلاّب
‘আমাদের জানামতে তিনি অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু কুল্লাব আহলুস সুন্নাহ ওয়ালা জামাতের তাকলীদ করেন। এবং জাহমিয়া সহ অন্যান্য বিদআতি ফিরক্বাহদের কঠোর ভাবে খন্ডন করেন।’
[তাবঈনু কাযিবিল মুফতারিঃ৪০৫]
ইমাম ইবনু কাযী শুহবাহ রহঃ বলেন-
كان من كبار المتكلمين ومن أهل السنة، وبطريقته وطريقة الحارث المحاسبي اقتدى أبو الحسن الأشعري
তিনি মুতাকাল্লিমদের ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বড় মাপের ইমাম ছিলেন, তার এবং হারেস আল মুহাসেবীর অনুসৃত নীতিকেই আবুল হাসান আল আশআরী অনুসরণ করেছিলেন।’
[ত্ববাকাতুশ শাফেইয়া, ইবনু কাযী শুহবাহ ১/৭৮]
একই কথা আল্লামা জামালুদ্দীনাল আসনাউই (রহঃ) ও বলেন-
كان من كبار المتكلمين ومن أهل السنة
‘তিনি মুতাকাল্লিমদের ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বড় মাপের ইমাম ছিলেন।’
[ত্ববাকাতুশ শাফেইয়া, আসনাউই ২/২৭৮]
ইমাম আবুল হাসান আল আশআরী (রহঃ) যখন আক্বীদাহ বিষয়ক কোন কিছু আলোচনা করতেন তখন প্রায়ই এভাবে বলতেন-
“ذهب شيخنا الكلابي عبدالله بن سعيد إلى…”
‘আমাদের শায়খ আল কুল্লাবী আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ এই মত পোষণ করেছেন যে…..’
[নিহায়াতুল ইকদাম, শাহরাস্তানীঃ১৭২- দারুল কুতুবিল ইলমিয়া,বাইরুত]
ইলমুল কালাম ও আক্বীদাহর বিষয়ে ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম কারাবিসী ও ইমাম ইবনু কুল্লাব থেকে গ্রহন করতেন বলে ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ বলেন-
البخاري في جميع ما يورده من تفسير الغريب إنما ينقله عن أهل ذلك الفن كأبي عبيدة والنضر بن شميل والفراء وغيرهم، وأما المباحث الفقهية فغالبها مستمدة له من الشافعي وأبي عبيـد وأمثالهـما، وأما المسائـل الكلامية فأكثرها من الكرابيـسي وابن كُـلاَّب ونحـوهما
‘ইমাম বুখারীর বর্ণিত সকল বিষ্ময়কর তাফসীরের ক্ষেত্রে তিনি এই শাস্ত্রের উপযুক্ত ব্যক্তিদের থেকে বর্ণনা করতেন।
যেমনঃ আবু উবাইদাহ, নাদ্বর ইবনু শুমাইল, এবং ফাররাহ সহ প্রমুখ, আর ফিক্বহী আলোচনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি ইমাম শাফেয়ী ও আবু উবাইদাহর মত ফুকাহাদের থেকে বর্ণনা করতেন। এবং ইলমুল কালামের (আক্বীদাহর) মাসালায় তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারাবিসী ও ইবনু কুল্লাব ও অন্যান্যদের মত বর্ণনা করতেন।’
[ফাতহুল বারী ১/২৯৩]
উল্লেখ্য যে, যেহেতু ইমাম ইবনু হাজারের এই বক্তব্য পাঠকদের সামনে উপস্থাপিত হল আর এখানে ইমাম কারাবিসীর কথাও আলোচনা প্রসঙ্গে আসল তাই আমি উনার সাথে ইমাম আহমাদের মনোমালিন্যতার প্রসিদ্ধ ঘটনা উল্লেখ করতে চাচ্ছি যা ইমাম ইবনু কুল্লাবকে ইমাম আহমাদ (রহঃ) কর্তৃক বর্জনের অন্যতম একটি প্রাসঙ্গিক কারণ।
ইমাম ইবনু আব্দিল বার আল মালেকী (রহঃ) বলেন-
وكانت بينه ـ يعني الكرابيسي ـ وبين أحمد بن حنبل صداقة وكيدة، فلمّا خالفه في القرآن عادت تلك الصداقة عداوة، فكان كلُّ واحد منهما يطعن على صاحبه، وذلك أن أحمد كان يقول: من قال القرآن مخلوق فهو جهمي، ومن قال القرآن كلام الله ولا يقول غير مخلوق ولا مخلوق فهو واقفي، ومن قال لفظي بالقرآن مخلوق فهو مبتدع. وكان الكرابيسي وعبدالله بن كلاّب وأبو ثور وداود بن علي وطبقاتهم يقولون: إن القرآن الذي تكلم الله به صفة من صفاته لا يجوز عليه الخلق، وإن تلاوة التالي وكلامه بالقرآن كسب له وفعل له وذلك مخلوق وإنه حكاية عن كلام الله… وهجرت الحنبلية أصحاب أحمد بن حنبل حسيناً الكرابيسي وبدّعوه وطعنوا عليه وعلى كل من قال بقوله في ذلك
‘ইমাম কারাবিসী ও ইমাম আহমাদের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। যখন কুরআন কেন্দ্রিক (একটি সুক্ষ্ম মাসালায়) তিনি ইমাম আহমাদের বিপরীত মত পেশ করলেন তখন এই বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হয়! একে কেন্দ্র করে উভয় ইমামের ছাত্ররা একে অপরকে নানা রকম অপবাদ ও দোষারোপ করত। কেননা ইমাম আহমাদ বলতেন- যে বলবে কুরআন আল্লাহর আল্লাহর মাখলুখ সে জাহমী, যে বলবে কুরআন আল্লাহর কালাম এবং একথা বলবেনা যে, এটি মাখলুখ নয় সে আমার মতের সাথে সাথে একমত, আর যে বলবে কুরআন তিলাওয়াতে আমার উচ্চারিত শব্দ মাখলুক সে বিদআতি!!
অথচ ইমাম কারাবিসী, ইবনু কুল্লাব, আবু সাওর, দাউদ আয যাহেরী (রহিমাহুমুল্লাহ) এবং তাদের সমপর্যায়ের লোকেরা বলতেন-
যে কুরআন আল্লাহর (নিসৃত) বাণী দ্বারা তিনি কথা বলেছেন তা আল্লাহর সিফাত সমূহের মাঝে অন্যতম সিফাত, তাকে মাখলুক বা সৃষ্ট বলা জায়েয নেই।
আর কোন ব্যক্তির তিলাওয়াত কিংবা কুরআনের উদ্ধৃতিতে তার কুরআন উচ্চারণ হচ্ছে তার ‘কাসব ওয়া ফে’ল’ তথা উপার্জিত ও কর্ম। আর ইহা (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ঐক্যমতে বান্দার উপার্জিত ও কর্ম) মাখলুক।….. একারণে তখন হাম্বলীরা যারা আহমাদ ইবনু হাম্বলের শিষ্য ছিলেন তারা কারাবিসীর ব্যাপারে ভাল ধারণা এবং তার আক্বীদাহ পোষণ কারীদের বর্জন করে এবং তাদের বিদআতি সহ গুরুতর অপবাদ ও দোষারোপ করতে থাকে।’
[আল ইনতেক্বাঃ১৬৫]
এবং ইমাম কারাবিসীর সাথে এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেন ইমাম ইবনু কুল্লাব,ইমাম মুহাসেবী, ইমাম ক্বলানিসী, মুহাম্মাদ ইবনু নাসর আল মারওয়াযী, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম ও ইমাম দাউদ আয যাহেরী সহ প্রমুখ। এই কারণে ইমাম আহমাদ ও তার শিষ্যরা ইবনু কুল্লাবের প্রতি ভাল আক্বীদাহ পোষণ করতেন না।
উল্লেখ্য যে, ইমাম বুখারী রহঃ এই প্রসঙ্গে ছোট একটি বইও লিখেছেন যাতে উল্লেখ কুরআন আল্লাহর কালাম হওয়া এবং বান্দার উচ্চারণ তার কর্ম হওয়া ও বান্দার কর্ম মাখলুক হওয়া এবং জাহমিয়াদের নিন্দাও উল্লেখ করেছেন যার নাম ‘খলকু আফআলিল ইবাদ’।
এবং এই কিতাবে তিনি এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে ইমাম আহমাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-
فأما ما احتج به الفريقان لمذهب أحمد ويدعيه كل لنفسه فليس بثابت كثير من أخبارهم، وربما لم يفهموا دقة مذهبه، بل المعروف عن أحمد وأهل العلم أن كلام الله غير مخلوق وما سواه مخلوق، وأنهم كرهوا البحث والتنقيب عن الأشياء الغامضة، وتجنبوا أهل الكلام والخوض والتنازع إلا فيما جاء به العلم وبيّنه رسول الله صلى الله عليه وسلم
[খলকু আফআলিল ইবাদঃ৪৩]
আর ইমাম মুসলিমও এ ব্যাপারে কোন কিছু লুকায়নি বরং প্রকাশ্যেই এ মতে সমর্থন করেছেন। যেমনটি ইমাম যাহাবীও বর্ণনা করেছেন তার ব্যাপারে।
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১২/৪৫৩,৫৭২]
ইমাম আহমাদ ও কারাবিসীর একই ঘটনা ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) উল্লেখ করে বলেন যে, ইমাম কারাবিসীর এই বক্তব্য (যার বিরোধিতায় এত কিছু) এতে সমর্থন জানিয়েছিলেন ইমাম বুখারী ও ইমাম দাউদ আয যাহেরী (রহিমাহুমাল্লাহ)। এবং ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) পর্যন্ত এই বক্তব্যের সমর্থন জানিয়ে ইমাম আহমাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের যৌক্তিক কারণ বর্ণনা করেন যে, মূলত ইমাম আহমাদ খলক্বে কুরআন মাসালায় উদ্ভুত বিদআতি ও কুফুরী আক্বীদাহর শিকড় উৎখাত করতে এ ব্যাপারে এত কঠোরতা অবলম্বন করেছেন!
তিনি ইমাম কারাবিসীর জিবনী উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন-
وأن أحمد بن حنبل كان تكلم فيه بسبب مسألة اللفظ، وكان هو أيضاً يتكلم في أحمد، فتجنَّب الناس الأخذ عنه لهذا السبب. قلت: الذي رأيت عنه أنه قال كلام الله غير مخلوق من كل الجهات إلا أن لفظي بالقرآن مخلوق، ومن لم يقلْ [ أي يعتقد ]: إن لفظي بالقرآن مخلوق فهو كافر. وهذا هو المنقول عن البخاري وداود بن على الظاهري، وكان الإمام أحمد يسدُّ في هذا البابَ لأجل حسم مادة القول بخلق القرآن
[ত্ববাকাতুল ফুক্বাহায়িশ শাফেইয়া ১/১৩৩]
এতে বুঝা যাচ্ছে, ইমাম আহমাদ মূলত ‘সাদ্দুন লিয যারায়ি’র উসূল অনুসরণে এ মাসালায় এত কঠোর ছিলেন।
কোন হারাম বা গুনাহের কাজের যাবতীয় হালাল ও জায়েয মাধ্যমও বন্ধ করার দ্বারা হারাম কাজকে প্রতিরোধ করাই হচ্ছে ফুকাহাদের ভাষায় ‘সাদ্দুন লিয যারায়ি’।
ইমাম যাহাবী (রহঃ) ফিক্বহী মাযহাবে শাফেয়ী হলেও আক্বীদাহর ক্ষেত্রে তিনি মূলত হাম্বলী বা আসারী। তিনি পর্যন্ত লফজে কুরআনের ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলের এই মতের বিপরীতে ইমাম কারাবিসী (রহিমাহুল্লাহ)’র মতকে ‘হক্ব’ আখ্যায়িত করেন। এবং ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ)’র এই কঠোরতাকে ‘সাদ্দুন লিয যারায়ি’র হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
ولا ريب أن ما ابتدعه الكرابيسي وحرره في مسألة اللفظ وأنه مخلوق هو حق، لكن أباه الإمام أحمد لئلا يُتذرع به إلى القول بخلق القرآن فسدّ الباب
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১, ১২/৫১০, ৮২]
ইমাম যাহাবী (রহঃ) আরও বলেন-
وكان يقول ـ يعني الكرابيسي ـ القرآن كلام الله غير مخلوق، ولفظي به مخلوق، فإن عنى التلفظ فهذا جيد، فإن أفعالنا مخلوقة، وإن قصد الملفوظ بأنه مخلوق فهذا الذي أنكره أحمد والسلف وعدّوه تجهماً
ইমাম কারাবিসী বলেন- আল কুরআন আল্লাহর কালাম এবং ইহা মাখলুক নয়। তবে এই কুরআনে আমার উচ্চারিত শব্দ মাখলুক। (যাহাবী বলেন) যদি তিনি এর দ্বারা কুরআন তিলাওয়াতে বান্দার উচ্চারণ কে বুঝিয়ে থাকে তাহলে এতো জাইয়্যেদ (অর্থাৎ এই আক্বীদায় কোন সমস্যা নেই)। কেননা (আহলুস সুন্নাহ মতে) আমাদের সকল কার্যাদি মাখলুক। আর যদি উদ্দেশ্য হয়, কুরআলের শব্দই মাখলুক, সেক্ষেত্রে এই আক্বীদাহকেই ইমাম আহমাদ ও সালাফরা অস্বীকার করেছেন এবং এমন আক্বীদাহ পোষণ কারীকে জাহমিয়া বলেছেন।
[মীযানুল ই’তিদাল ১/৫৪৪]
আর ইমাম কারাবিসীর বক্তব্য থেকে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, তিনি এখানে কুরআন তিলাওয়াতের সময় আমাদের মত সৃষ্টির উচ্চারিত শব্দের কথা বুঝাতে চাচ্ছেন। অর্থাৎ আল্লাহর কালাম হচ্ছে আল্লাহর সিফাত। কিন্তু তার বান্দাদের উচ্চারিত কালাম হচ্ছে আল্লাহর মাখলুক।
ইমাম যাহাবী (রহঃ) এই কথাগুলোই আরেকটু গুছিয়ে ও বিস্তারিত এভাবে বলেন (যা আলেমদের বোঝার সুবিধার্থে পেশ করায় অনুবাদ করা হলনা)-
فقد كان هذا الإمام [ يعني أحمد ] لا يرى الخوض في هذا البحث خوفا من أن يُتذرّع به إلى القول بخلق القرآن، والكف عن هذا أولى. آمنا بالله تعالى وبملائكته وبكتبه ورسله وأقداره والبعث والعرض على الله يوم الدين. ولو بسط هذا السطر وحُرِّرَ وقُرِّرَ بأدلته لجاء في خمس مجلدات، بل ذلك موجود مشروح لمن رامه. والقرآن فيه شفاء ورحمة للمؤمنين. ومعلوم أن التلفظ شيء من كسب القارئ غير الملفوظ، والقراءة غير الشيء المقروء، والتلاوة وحسنها وتجويدها غير المتلو، وصوت القارئ من كسبه فهو يُحدث [ يعني يفعل، وليس الإحداث المرادف للخلق كما تقول المعتزلة ] التلفظ والصوت والحركة والنطق، وإخراج الكلمات من أدواته المخلوقة، ولم يحدث كلمات القرآن ولا ترتيبه ولا تأليفه ولا معانيه
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/২৯০]
তবে ইমাম বাইহাক্বী (রহঃ) ইমাম আহমাদের এই কঠোর অবস্থানের চমৎকার এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ইমাম আহমাদের পুত্র থেকে বর্ণনা করেন-
‘আমি আমার বাবার কাছ থেকে শুনেছি, যে ব্যক্তি বলবে আমার কুরআন তিলাওয়াতের উচ্চারণ মাখলুক আর এর দ্বারা যদি তার উদ্দেশ্য হয় কুরআন তাহলে সে কাফের।’
এ কথা উল্লেখ করে ইমাম বাইহাক্বী রহঃ বলেন-
এই বক্তব্যটি ইমাম আহমাদ থেকে উনার পুত্র দ্বারা লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষিত যে, ‘যদি তার উদ্দেশ্য হয় কুরআন ‘। আর এই বাক্যটিই অনেক বর্ণনাকারী তার থেকে লফজে কুরআন বিষয়ক বক্তব্য বর্ণনা করার সময় ভুলবশত উল্লেখ করেননি।
عن عبدالله بن أحمد بن حنبل قال : سمعت أبي يقول: ( من قال لفظي بالقرآن مخلوق يريد به القرآن فهو كافر ) ( ثم علق الحافظ البيهقي قائلا ? قلت : هذا تقييد حفظه عنه ابنه عبدالله وهو قوله: يريد به القرآن. فقد غفل عنه غيره ممن حكى عنه في اللفظ خلاف ما حكينا حتى نسب إليه ما تبرأ منه فيما ذكرنا .
[আসমা ওয়াস সিফাত, বাইহাক্বীঃ২৬৬]
এই ঘটনা সুবিস্তর উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইমাম আহমাদ সহ তার ছাত্রদের মত ইমামদের এত কঠোরতার পরেও উভয়ের ব্যক্তিগত যৌক্তিক ও গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা অবলম্বন করেও আমরা পরস্পরে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী হতে পারি। তাই ইমাম ইবনু কুল্লাবের সাথে ইমাম আহমাদ অন্যান্যদের কিছু ইখতিলাফের কারণে আমরা ইবনু কুল্লাবকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের গন্ডি থেকে বের করে দিবনা।
(আল্লাহ আমাদের পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও মুহাব্বাত নসীব করুন। আমীন)
আশ’আরী, মাতূরীদি ও আসারী একই বৃক্ষের ৩টি শাখা। পর্বঃ৫ (আলোচ্য বিষয়ঃ আক্বীদাহর দ্বন্দের জেরে হত্যার পরিকল্পনা!)
………………………………………………………….
বাগদাদের রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে এটা অস্বীকার করা যাবেনা যে, সে সময় আশ’আরী ও হাম্বলী (আসারী) দের মাঝে আক্বীদাহকে কেন্দ্র করে তুমুল ঝগড়াঝাটি হতো। এ বিষয়ে ইতিহাস সুদীর্ঘ ও ভয়ংকর। রাজনৈতিক কারণে ও শব্দের ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে দীর্ঘকাল পর্যন্ত এ ফিতনা ছিল। যার ইতিহাস পরবর্তীতে ইনশাআল্লাহ আলোচনা করব।
ইহাকে কেন্দ্র করে একে অপরকে হাশাউই, মুজাসসিমী, জাহমিয়া ফতোয়া দিয়ে পরস্পরের পিছনে সালাতও আদায় করতেন না। যার প্রভাব এই যামানা পর্যন্তও রয়ে গেছে।
এমনও হয়েছিল যে, আবু সাঈদ ইবনু আবী সাহল আল ফক্বীহ আল হাম্বলী প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সম্মিলিত ভাবে আশআরীদের লা’নত করতেন!! যেমনটি আবু বকর আল মুক্বরী রহঃ বর্ণনা করেন-
كان يلعنهم كل يوم بعد صلاة الغداة في المحراب في الجمع وهم يؤمنون، .
[জামউল জুয়ূশি ওয়াদ দাসাকির আ’লা ইবনি আসাকির,ইবনুল মিবরাদঃ২০৩]
ইবনুল মিবরাদ তার ‘জামউল জুয়ূশি ওয়াদ দাসাকির আ’লা ইবনি আসাকির’ কিতাবের প্রায় শেষের দিকে প্রায় ৪১৭ জন হাম্বলী বড় বড় আলেমদের নাম উল্লেখ করে আশআরীদের লা’নত করা ও তাদের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য নকল করেছেন!!!
সেসময় আবু নুয়াইম আল আসবাহানী (মৃ-৪৩০ হি.) রহঃ এর মত হাফেজে হাদীস ও নন্দিত আলেমকে এই ইখতিলাফের কারণে পরিত্যাগ করার দাবী জানিয়েছিল তথাকথিত হাম্বলীরা!!
এতেই ক্ষান্ত হয়নি আক্বীদাহর এসব ফুরুঈ ইখতিলাফের কারণে তাকে হত্যা করার জন্যে উদ্ধুদ্ধ হয়েছিল। এবং এই ঘটনা উল্লেখ করে ইমাম যাহাবী (রহঃ) ‘আসহাবুল হাদীস’ নামের দাবীদার ঐসকল ফিতনাবাজদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন-
এরা মূলত ‘আসহাবুল হাদীস’ নয় বরং এরা হচ্ছে পাপাচারী ও মূর্খ! আল্লাহ তাদের অনিষ্টতাকে ধ্বংস করুন!
قال أبو طاهر السلفي: سمعت أبا العلاء الفُرساني يقول: حضرت مجلس أبي بكر بن أبي علي الذكواني المعدل في صغري مع أبي، فلما فرغ من إملائه، قال إنسان: من أراد أن يحضر مجلس أبي نُعيم، فليقم، وكان أبو نُعيم في ذلك الوقت مهجورًا بسبب المذهب، وكان بين الأشعرية والحنابلة تعصب زائد يؤدي إلى فتنة، وقيل وقال، وصداع طويل، فقام إليه أصحاب الحديث بسكاكين الأقلام، وكاد الرجل يُقتل. قلت : ما هؤلاء بأصحاب الحديث، بل فجرة جهلة، أبعد الله شرهم.
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১৭/৪৬০; তাযকিরাতুল হুফফাজ ৩/১০৯৫]
ইমাম ইবনু জারীর ত্ববারী (রহঃ) কেও এই জন্যে সেই তথাকথিত হাম্বলীরা অনেক হেনস্থা করেছিলেন। তাকে শিয়া অপবাদ দেওয়া হয়েছিল যেমনটি সুবিস্তর উল্লেখ করেছেন ইমাম যাহাবী, ইমাম ইবনু কাসীর, ইমাম ইবনুল আসীর ও ইমাম সালাহউদ্দিন আস সাফাদী প্রমুখ।
এবং এসকল তথাকথিত হাম্বলীদের তিনি ‘মুতাআসসিবাতুল হানাবিলা’ তথা ‘গোড়াপন্থি হাম্বলী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
[ত্ববাকাতুল ফুকাহায়িশ শাফেইয়া ১/১৩৩; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১১/১৪৫; আল কামেল ফিত তারীখ ৭/৮; সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১৪/২৭২-২৭৭; আল ওয়াফী বিল ওফায়াত ২/২৮৪-ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) তার তবাক্বাতে এই ব্যাপারে যেই বক্তব্য দিয়েছেন তা হচ্ছেঃ
كان قد وقع بينه – الطبري – وبين الحنابلة أظنه بسبب مسألة اللفظ، واتهم بالتشيع، وطلبوا عقد مناظرة بينهم وبينه، فجاء ابن جرير لذلك ولم يجئ منهم أحد، وقد بالغ الحنابلة في هذه المسألة وتعصبوا لها كثيراً، واعتقدوا أن القول بها يفضي إلى القول بخلق القرآن، وليس كما زعموا، فإن الحق لا يحتاط له بالباطل، والله أعلم]
তবে একথাও অনস্বীকার্য যে, এই চলমান চক্রে অনেক আশআরীরাও ঐসকল কট্টর হাম্বলী তথা আসারীদের নীরব বসে নির্লিপ্ত থাকেননি!
যদিও পরবর্তীতে উভয় দলের অনেক উলামায়ে কেরাম এই দ্বন্দ্ব নিরসনে বেশ ভুমিকা পালন করেছিল।
এই ফিতনা ও তার ধরন বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ
[ত্ববাকাতুশ শাফেঈয়া আল কুবরা ৪/৭৯, ৭/১৬২; যাইলু ত্ববাক্বাতিল হানাবিলা, ইবনু রাজাব ১/১৬,১৯, ২০, ৩৭, ৫৩,৫৪; আল মুনতাযাম, ইবনুল জাওযী ১৬/১৮১, ১৭/১৯১; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১২/৭১, ১২৩; আল কামিল ৭/১১৩-১১৪; ৮/৪১৩; তাবঈনু কাযিবিল মুফতারিঃ৩১০; সিয়ারু আলামিন নুবালা ; তারীখে ইবনু খালদূন ৩/৪৭৭। ]
এতদসত্ত্বেও ই’তিদাল পন্থী আশ’আরী ও আসারী আক্বীদাহর লোকেরা এই বিবাদের বাইরে গিয়ে সমঝোতা করার প্রয়াস করেছেন। যেমন- ইমাম ইবনু তাইমিয়া, ইমাম যাহাবী, ইমাম ইবনু কাসীর, ইমাম তাজুদ্দীন আস সুবকী, ইমাম সাফফারিনী আল হাম্বলী, ইমাম মুরতাযা আয যাবেদী সহ প্রমুখ।
শাফেয়ী কিংবা আশ’আরী এবং হাম্বলী কিংবা আসারী দের মাঝে বহুল আলোচিত সেই দ্বন্দ যার প্রভাব এখন পর্যন্ত এই উম্মতের মাঝে বিদ্যমান তার স্বরুপ ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পোস্টে উল্লেখ করব।
ইমাম ইবনু কুল্লাবের উপর ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ.’এর আনীত অভিযোগের স্বরুপ সন্ধানেঃ
এর আগেও আমরা দালিলিক ভাবে প্রমাণ করেছিলাম যে, বাগদাদের তৎকালীন সময়ে আক্বীদা নিয়ে হাম্বলী ও শাফেঈদের মাঝে তুমুল ঝগড়া ও মারামারি ছিল (এবং অচিরেই আমরা এ ব্যাপারটি আরও বিস্তারিতভাবে লিখব)। সেসময় তাদের তাআসসুব এক পর্যায়ে মিথ্যা অপবাদের রুপ নিল। আর ঐ অপবাদগুলো পরবর্তীতে অনেকেই নিজের ঘরানার লোকমুখে যা প্রচলিত ছিল বা তাদের ঘরানার কোন আলেমদের বই পুস্তকে তা পেলেই বিনা তাহকীকেই প্রচার করতেন। এদের মাঝে উভয় দলেরই অনেক সুপ্রসিদ্ধ আলেমরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এরুপ একটি বিষয়ের উদাহরণ হচ্ছে ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. এর একটি বক্তব্য। আসারী আক্বীদাহর সাথে তাদের (আসারীদের) যে দ্বন্দ্বের অন্যতম প্রধান একটি কারণ ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) উল্লেখ করে বলেন-
“وكان الناس قبل أبي محمد بن كلاب صنفين:
فأهل السنة والجماعة: يثبتون ما يقوم بالله تعالى من الصفات والأفعال التي يشاؤها ويقدر عليها.
والجهمية من المعتزلة وغيرهم: تنكر هذا، وهذا.
فأثبت ابن كلاب: قيام الصفات اللازمة به، ونفى أن يقوم به ما يتعلق بمشيئته وقدرته من الأفعال وغيرها ووافقه على ذلك أبو العباس القلانسي وأبو الحسن الأشعري وغيرهما.
وأما الحارث المحاسبي فكان ينتسب إلى قول ابن كلاب، ولهذا أمر أحمد بهجره، وكان أحمد يحذر عن ابن كلاب وأتباعه…”
অর্থাৎ (সিফাত কেন্দ্রিক আক্বীদাহয়) মানুষরা আবু মুহাম্মদ ইবনু কুল্লাবের পূর্বে দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেনঃ
১) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতঃ তারা আল্লাহর গুনাবলী ও কর্ম যা তার ইচ্ছা ও ক্ষমতার সাথে দন্ডায়মান (সম্পৃক্ত) তা সাব্যস্ত করেন।
২) জাহমিয়াহ যাদের মধ্যে মু’তাযিলা ও অন্যান্যরা রয়েছেঃ তারা এই উভয় বিষয়কে অস্বীকার করে।
৩) অতঃপর ইবনু কুল্লাবের আগমন ঘটলে তিনি আল্লাহ তিনি আল্লাহর সিফাতে লাযেমাহ (তথা আল্লাহর অপরিহার্য গুনাবলীকে) সাব্যস্ত করেন এবং আল্লাহর কর্মগত গুনাবলীর মাঝে আল্লাহর মাশিয়াত (ইচ্ছা) ও কুদরত (ক্ষমতা) আল্লাহর সিফাতে লাযেমার সাথে দন্ডায়মান থাকার বিষয়টি নাকোচ করেন!
এবং তার সাথে এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন- আবুল আব্বাস আল ক্বলানিসী, ও আবুল হাসান আল আশআরী সহ অন্যান্যরা। এবং হারেস আল মুহাসেবিও ইবনু কুল্লাবের এই মতের উপর ছিলেন।
ফলত ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ) তার অনুসারীদের তাকে পরিত্যাগ করার নির্দেশ দিলেন, এবং ইতিপূর্বে ইমাম আহমাদ ইবনু কুল্লাব ও তার অনুসারীদের থেকেও তাদের সতর্ক করেছিলেন।
[দারউ তা’আরুজিল আক্বলি ওয়ান নাক্বলি ১/২৪৩- দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বাইরুত]
আল্লাহর কর্মগত গুনাবলীর মাঝে আল্লাহর মাশিয়াত (ইচ্ছা) ও কুদরত (ক্ষমতা) আল্লাহর সিফাতে লাযেমাহর সাথে দন্ডায়মান থাকার বিষয়টি নাকোচ করার যেই তথ্যটি ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) দিয়েছেন তা আসলে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল-বুঝাবুঝি ছাড়া কিছুই না।
এবং ইমাম ইবনু কুল্লাব (রহ.) কিংবা আশ’আরীরা সিফাতে আফ’আলের তথা আল্লাহর কর্মগত গুনাবলীর মাঝে মাশিয়াত, কুদরত ও কালামকে আল্লাহর সিফাতে লাযেমাহ, সিফাতে আযালিয়া কিংবা সিফাতে ক্বদীমাহ হিসেবেই আখ্যায়িত করে থাকেন যেমনটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সালাফরা করেছিলেন।
ইমাম ফখরুদ্দীন আর রাযী আশ’আরী ও ইবনু কুল্লাবের আক্বীদাহর অন্যতম মুখপাত্র যেমনটি সকল আহলে ইলমের নিকট বিদিত, তিনি বলেন-
أن إرادة الحق تعالي قديمة أزلية
‘আল্লাহ তা’আলার ইরাদা (যাকে মাশিয়াত ও ইচ্ছাও বলা হয় তা) ক্বদীম ও আযালী (তথা আল্লাহর সত্তার সাথে সর্বদা দন্ডায়মান)। ‘
[হাশিয়াতু আলাল খমসূন ফী উসূলিদ দ্বীন, রাযী পৃ.১৬২]
এরপর তিনি কয়েকটি বাতিল ফিরক্বাহর এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভ্রান্ত আকীদার লোকদের কিছু যুক্তির জবাব দিয়ে বলেন-
فثبت: أن كلام الحق عز و جل قديم أزلي
‘অতএব প্রমানিত হল যে, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লার কালাম (বাণী) ক্বদীম ও আযাল।’
[হাশিয়াতু আলাল খমসূন ফী উসূলিদ দ্বীন, রাযী পৃ.১৬৯]
তিনি আরও বলেন-
فثبت بما ذكرنا: أن كلام الله صفة حقيقة قائمة بذاته،
‘অতএব আমরা যেসব আলোচনা করলাম এতে প্রমানিত হয় যে, আল্লাহর কালাম আল্লাহর সিফাতে হাক্বীকি, এবং তা আল্লাহর সত্তার সাথে অবিরাম দন্ডায়মান।’
[হাশিয়াতু আলাল খমসূন ফী উসূলিদ দ্বীন, রাযীঃ১৭৩]
ইমামুল হারামাইন আল জুওয়াইনি আল আশ’আরী (রহ.)ও আল্লাহর ইরাদা ও মাশিয়াতকে আযালিয়া ক্বদীমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
فالباري تعالي أذن متصف بكونه مريدا بإرادة قديمة أزلية
[লুমাঈল আদিল্লাহ ফী আক্বায়িদিল মিল্লাহ,জুওয়াইনী পৃ.৪]
আশ’আরীদের অন্যতম আক্বীদা বিশারদ শাইখ মুহাম্মাদ আবু উলইয়ান আশ শাফেয়ী তাঁর ‘খুলাসাতু মা ইউরাম মিন ফান্নিল কালাম’ কিতাবেও ‘ইরাদা/মাশিয়াত’ ও ‘কুদরত’ কে আল্লাহর সত্ত্বার সাথে অবিরাম দন্ডায়মান গুন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন-
و له صفات وجودية أزلية قائمة بذاته تعالي، حقائقها مخالفة لها في غيره. و هي: القدرة……. و الإرادة……. و العلم……
আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) ইমাম ইবনু কুল্লাব, ইমাম ক্বলানিসী ও ইমাম আবুল হাসান আশ’আরী (রহ.) দের ব্যাপারে তা নাকোচ করার যেই তথ্য দিলেন তার বিপরীতে ইমাম ইবনু তাইমিয়ারও বহু পূর্বে (৪২৯ হিজরীতে মৃত) প্রখ্যাত আক্বীদাহ বিশারদ ইমাম আব্দুল ক্বাহের আল বাগদাদী (রহ.) এই তিনজন এবং তাদের অনুসারীদের থেকে এগুলো তাদের দ্বারা ইসবাত করে আল্লাহর সিফাতে আযালী হওয়ার পক্ষে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন!
[দ্রষ্টব্যঃ উসূলুদ দ্বীন, বাগদাদী- চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদ ‘মাসআলাতু ফী আদাদি সিফাতিহিল আযালিয়াহ’ এবং একই অধ্যায়ের ৭ম পরিচ্ছেদের ‘মাসআলাতু ফী ইরাদাতিল্লাহি ওয়া মুরাদাতিহী’ শিরোনামে । পৃঃ১১৩-১১৪, ১২২-১২৩- দারুল কুতুবিল ইলমিয়া,বাইরুত]
এছাড়াও ইমাম ইবনু কুল্লাব, ক্বলানিসী, হারেস আল মুহাসেবী (রহিমুহুমুল্লাহ) আল্লাহর ইলম কুদরত, হায়াত, ইরাদা, সাম'(শ্রবণ), ও বাসার (দৃষ্টি) কে সালাফদের মত সিফাতে আযালিয়া হিসেবে ইসবাত করার কারণেই তো মুতাযিলারা তাদেরকে ‘সিফাতিয়া’ ফিরক্বাহ বলে ব্যাঙ্গ করত যেমনটি ইতিপূর্বে ইমাম শাহরাস্তানী (রহ.) এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করা হয়েছে।
[দ্রষ্টব্যঃ আল মিলাল ওয়ান নিহাল (১/৬৬-৬৭) – দারুত তাওফীক্বিয়া,তুরাস]
সুতরাং ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.)’র আনীত অভিযোগ সুপ্রমানিত নয়।
এসম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আসারি বা সালাফি আকিদা ই মূল আকিদা যার শুদ্ধতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। আর আশয়ারী বা মাতুরিদি আকিদাও বিশুদ্ধ, এবং তা আসারি আকিদারই বিশুদ্ধ বা শুদ্ধতর ব্যাখ্যা, যা ততকালীন সময়ের বিভ্রান্তির মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় বা অপরিহার্য ছিল।
আমার মূল্যায়ন কি যথাযথ হয়েছে?
জি। তবে এই সালাফী আকিদা প্রচলিত কথিত সালাফী আক্বীদা নয় সেসময়কার মহান সালাফদের আকিদাকেই আমি বুঝিয়েছি।