হায় আফসোস! এ অপূরণীয় ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে?

সম্প্রতি এক ভাই তার স্ট্যাটাসে কুয়েটের নাম উল্লেখ করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলা র‍্যাগ সংস্কৃতির তীব্র নিন্দা করেছেন। এর সাথে তিনি যে ছবিটা দিয়েছিলেন সেটা অবশ্য অন্য ভার্সিটির ছিলো। যদিও তিনি দাবী করেননি, ছবিটা কুয়েটের ছিলো, তারপরেও আমাদের তীব্র দাবীর মুখে তিনি কুয়েটের নাম এবং ঐ ছবি দুটোই সরাতে বাধ্য হয়েছেন। তবে সবকিছু এখানেই শেষ করা যাবে না।

একজন প্রাক্তন কুয়েটিয়ান হিসেবে উনি যা লিখেছেন আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কুয়েটের র‍্যাগ-ডে’তে মোটেও এমন অশালীন কিছু হয় না। এখানে ছেলে-মেয়েরা র‍্যাগ-ডে’তে একত্রিত হয়ে দ্বীনি মুযাকারা করে। আর র‍্যাগ-ডে’র দিন দুপুরবেলা অডিটোরিয়ামের সামনে গান ছেড়ে যখন ছেলে-মেয়েদের একসাথে নাচতে দেখেন, সেটা আসলে আপনাদের ভুল দেখা। তারা আসলে নাশীদ ছেড়ে হাত-পা নেড়ে রূহানী ‘ইলম অর্জন করে স্রষ্টাকে অনুভব করার চেষ্টা করে। আর রাতের বেলা কনসার্টে গায়িকার সাথে  ‘আহারে জীবন আহা জীবন’- গান গাওয়ার মাধ্যমে আমরা আসলে জীবনের উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করি। ‘কেন আমরা এ পৃথিবীতে এসেছি, এ জীবনের মানেই বা কী’- তা অনুভব করার চেষ্টা করি।

পুরো র‍্যাগ-ডে জুড়েই থাকে ইসলামী আমেজ। সূরা নূরের কথা স্মরণ করে ছেলেরা তাদের দৃষ্টি নত করে মেয়েদের টি-শার্টে বিভিন্ন কথা লিখে দেয়। আর তাছাড়া, হাদিসে তো গায়রে মাহরামদের স্পর্শ করার কথা আছে। টি-শার্টে লিখে দিলে তো আর সরাসরি স্পর্শ হচ্ছে না।

জানি অনেকে এখন বলবেন, তাহলে একে-অপরের গায়ে রঙ মেখে দেওয়ার ব্যাপারে আমি কী বলব? দেখুন যেসব ছেলে, মেয়েদের গালে-মুখে রঙ মেখে দেয় তারা আসলে তাদের সহপাঠীদের ‘দ্বীনি-বোন’ মনে করে। আপনারাই বলুন বোনের গায়ে কি রঙ মেখে দেওয়া হারাম?

তবে কাঠ-মোল্লাদের তো আর যুক্তির শেষ নেই। কেউ কেউ বলবে হাদিসে এসেছে, যারা যে জাতির সাদৃশ্য অনুসরণ করবে, তারা সে জাতির-ই অন্তর্ভুক্ত। তাহলে এসব রঙ মাখামাখি কি হিন্দুদের হোলি খেলার সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন হয়ে যাচ্ছে না? এসব কাঠ-মোল্লারা আসলে আমাদের হাজার বছরের ধর্মীয় সম্প্রতি নষ্ট করতে চাচ্ছে। আমরা বাঙ্গালীরা মুসলমানদের কুরবানী ঈদ বাদে সকল ধর্মীয় উৎসবই ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’- নীতিতে পালনে বিশ্বাসী। কিন্তু যারা বলবে, ‘ইসলামে সবচেয়ে বড়ো পাপ শিরক এর উৎসবে একজন মুসলিম কীভাবে অংশগ্রহণ করে?’ তাদের বলব, “Don’t Judge me. My heart is pure.” আর যদি অন্য ধর্মের উৎসব ভালো না লাগে, তাহলে পাকিস্তান-সৌদি আরব চলে যান। সেখানে যেয়ে শুধু মুসলমানদের উৎসব পালন করেন।

কী জানি বলছিলাম? ওহ হ্যাঁ, র‍্যাগ-ডে নিয়ে। দেখেন অবস্থা! কই ছিলাম, কই চলে এলাম! মোল্লাদের জন্য কথা বলেও শান্তি নাই। এই মোল্লারা মাদ্রাসায় বলৎকার থামাতে পারে না, আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটু মুক্তবুদ্ধির চর্চা করলে ওদের গায়ে আগুন ধরে যায়। এসব গুটিকয়েক মোল্লাদের জন্যেই আজ পুরো বিশ্বজুড়ে ইসলামের এতো বদনাম। আমাদের মতো ‘মোজলেম’-রা আছে বলেই ইসলামের এখনো কিছুটা সুনাম আছে। আমরা যদি এসব কাঠমোল্লাদের ইগনোর করে কাজ চলিয়ে যেতে পারি, আর কয়দিন পর হয়তো ইসলামের সুনাম মিল্কিওয়ে ছাড়িয়ে এন্ড্রোমিডায় চলে যাবে।

এছাড়া কিছু ফেলো কুয়েটিয়ান ব্রাদারেন লিখেছেন, ইলেক্ট্রিকাল ডিপার্টমেন্টের পরপর তিনজন হেড তাবলীগের হওয়ায় ৪ বছর ধরে এ ডিপার্টমেন্টে কোনো ‘নাইট প্রোগ্রাম’ হচ্ছে না। যার কারণে, পুরো কুয়েট মাদ্রাসায় পরিণত হচ্ছে। আমি তাদের সাথে একমত। ‘নাইট-প্রোগ্রাম’ না হওয়ার কারণেই কুয়েটের আজ এতো অনগ্রসরতা। মানুষ কুয়েটের নাম শুনলেই বলে, “এটা কি কুমিল্লায়?” আমরা যদি মাসে মাসে ‘নাইট প্রোগ্রাম’ করতে পারতাম তাহলে হয়তো এতোদিনে এমআইটিকেও ছাড়িয়ে যেতাম।

হায় আফসোস! এ অপূরণীয় ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে?

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *