নববর্ষ পালনের বিধানঃ
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড় দিন তাদের বিশ্বাসমতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন। মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হতো ২৫শে মার্চ, এবং তা পালনের উপলক্ষ্য ছিল, ঐ দিন খ্রিষ্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট এ মর্মে ঐশী বাণী প্রেরিত হয় যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্র জন্ম দিতে যাচ্ছেন।
পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এ দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন ‘সাবাত’ হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলরে মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে।
সুতরাং নববর্ষ পালন অমুসলিমদের সংস্কৃতি তাই এসব পালন করা হারাম। কেননা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
[সুনানে আবূ দাউদ:৪০৩৩]
আনাস ইবনে মালিক(রা.) বর্ণিত:
قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا ، فَقَالَ : مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ ؟ قَالُوا : كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا : يَوْمَ الْأَضْحَى ، وَيَوْمَ الْفِطْرِ )
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি(সা.) বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন: ইয়াওমুল আদ্বহা ও ইয়াওমুল ফিতর।
[সুনান আবু দাউদঃ১১৩৪; সুনানে নাসায়ীঃ১৫৫৬- হাদিসটির মান সহীহ]
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, নববর্ষের বিপরীতে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন। ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।”
[সহীহ বুখারী: ৯৫২; সহীহ মুসলিম: ৮৯২]
ইমাম যাহাবী তার সনদে, ইমাম সয়মারী তার সনদে ও ইমাম খত্বীবে বাগদাদি তার সনদে বর্ণনা করেন(রহিমাহুমুল্লাহ)-
ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর দাদা তাঁর পিতাকে পারস্যের নওরোযের দিন (নববর্ষের দিন) আলী রা.-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোয উপলক্ষ্যে) ফলে আলী রা. বললেন,
نَوْرِزُوْنَا كُلَّ يَوْم
“আমাদের(মুমিনের) প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ।”
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৬/৩৯৫;তারীখে বাগদাদ ১৫/৪৪৪;আত ত্ববাক্বাতুস সানিয়্যাহ ফি তারাজিমিল হানাফিয়্যা ১/২৫; আখবারু আবি হানিফা,সয়মারী]
অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলীর (রাদ্বি.) এ ফতোয়া দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, নববর্ষ উপলক্ষ্যে পরষ্পরে উপহার বা প্রেজেন্টশন আদান প্রদান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় নাজায়িয।
ইমাম ফখরুদ্দীন উসমান বিন আলী আয যাইলায়ী বলেন,-
নওরোজ(নববর্ষ) ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরং কুফরী।
[তাবইনুল হাকায়েক : ৬/২২৮]
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান (রহ.)’র ছাত্র ইমাম আবু হাফস আল কাবীর (রহ.) বলেন, . ‘‘কোনো ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করলো। এরপর সে নববর্ষের দিনে এ দিনকে সম্মান ও ভালোবাসা দেখিয়ে কোনো মুশরিককে একটি ডিমও যদি উপহার দেয়, তাহলে সে কুফরি করলো। তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।’’
لَوْ أَنَّ رَجُلًا عَبَدَ اللَّهَ خَمْسِينَ سَنَةً ثُمَّ جَاءَ يَوْمُ النَّيْرُوزِ، وَأَهْدَى لِبَعْضِ الْمُشْرِكِينَ بَيْضَةً يُرِيدُ بِهِ تَعْظِيمَ ذَلِكَ الْيَوْمِ فَقَدْ كَفَرَ، وَحَبِطَ عَمَلُهُ .
[আল বাহরুর রায়েক, তাকমিলাতুত তুরী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৫৫৫, প্রকাশনায় : দারুল কিতাবিল ইসলামী; তাবঈনুল হাক্বায়েক ৬/২৮৮]
ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ তার লিখিত রিসালা “আত তামাসসুক বিস সুনানি ওয়াত তাহযির মিনাল বিদয়ি “- তে নববর্ষ পালনকে বিদআত, নিন্দনীয় জাহেলদের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন –
” أما مشابهة الذِّمة في الميلاد ، والخميس ، والنيروز ، فبدعة وحشة.فإن فَعلها المسلم تديُّناً فجاهل ، يزجر وُيعَلَّم ، وإن فعلها حُبّاً [لأهل الذِّمة] وابتهاجاً بأعيادهم فمذموم أيضاً، وإنْ فعلها عادةً ولعباً، وإرضاءً لعياله، وجبراً لأطفاله فهذا محل نظر، وإنما الأعمال بالنيَّات، والجاهل يُعذر ويبين له برفق، والله أعلم “
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে এই গুনাহ থেকে হিফাযত করুন। (আমীন)