” মাজহাব বিমুখী ” হওয়া বর্তমান সময়ের বড় একটা ট্রেন্ড। এই প্রবণতায় অনেকেই না -জেনে আগ বাড়ছেন৷ তবে, এই বিমুখতা নিয়ে হৈচৈ হলেও এর পরবর্তী ফলাফল নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না৷
মাজহাব ত্যাগ করে পরবর্তীতে কে কি হলেন, এর একটা ফিরিস্তি নিয়ে আলোচনা করি।
নতুন দ্বীন শিখা অনেকের গায়ে যখন ” সহীহ সহীহ ” বাতাস লাগে, তখন তনু-মনে আলাদা একটা ভাব আসে। আর এই ভাব থেকে অনেক বিষাক্ত শুক্রাণু জন্মে, যার ফলাফল কখনো ইমানহারা অবস্থা হয়৷
এর একটা জলন্ত উদাহরণ দেই –
প্রিয় ছোট ভাই Ishtiaq Ahmad এর বর্ণনা অনুযায়ী, উনার এক নিকটজনের বিবর্তন কাহিনী প্রায় এরকম –
একজন দ্বীনি ভাই। শুরুর দিকে মাজহাব ইত্যাদি নিয়েই ইমানের হালতে ছিলেন। পরবর্তীতে, হঠাৎ গায়ে সহীহ বাতাস লাগে৷ এক পর্যায়ে সহীহ পাল দৌঁড়াতে থাকেন।
নাহ, বেশীদিন সহীহ পাল দৌঁড়াতে পারেন নাই। বাতাসের সীমাবদ্ধতায় এক পর্যায়ে এগনস্টিক হয়ে যান । বর্তমানে, তিনি একজন নাস্তিক! আল-ইয়াজুবিল্লাহ !
এর কারণ, একটাই! কারো তোওয়াক্কা না করে নিজে নিজেই সব সহীহ খুঁজে বের করা। যারা এমন করেন, তাদের অনেকেই আবার –
→ সহীহ খুঁজতে গিয়ে এক পর্যায়ে মাজহাব ত্যাগ করেন।
→
সহীহ খুঁজতে গিয়ে এক পর্যায়ে সিহাহ সিত্তাহ ত্যাগ করেন।
→ সহীহ খুঁজতে গিয়ে পর্যায়ে বুখারী-মুসলিম ত্যাগ করে আহলে কোর’আন হয়ে যান।
→ সহীহ খুঁজতে গিয়ে এক পর্যায়ে কোর’আন ত্যাগ করে একেবারে সহীহ পন্থায় নাস্তিক হয়ে যান।
নোটঃ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ও সত্যতা ইশতিয়াক ভাই থেকে প্রমাণ সহ জেনে নিতে পারবেন।
আরেকটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি –
একদিন একজন ভাই ইনবক্সে এসে বললেন – ভাই, আমি যদি শুধু বুখারী-মুসলিম অনুসরণ করি, তাহলে কি কোন সমস্যা হবে ?
আমি বললাম –
বুখারী-মুসলিম এর পাশাপাশি বাকি প্রসিদ্ধ হাদিসের চার কিতাব মানলে কি অসুবিধা হবে ?
তিনি বললেন –
না, ভাই ! আমি শুধু সহীহ হাদীসই অনুসরণ করি। বাকি চার কিতাবে ( আবু দাউদ,তিরমিজি,নাসাই, ইবনে মাজাহ) তো জাল,জইফ ইত্যাদি হাদিসে ভরপুর। তো এসব মানব কেন ?
আমি বললাম –
শুধু বুখারী-মুসলিম মেনে কি আপনার দ্বীনের উপর চলা যথেষ্ট হয়ে যায়?
তিনি বললেন –
জ্বি, হ্যাঁ ! আমি যা চাই ; সব বুখারী-মুসলিমে পেয়ে যাই। তাই অন্য কিছু আমার খুঁজতে হয় না৷
তখন বললাম –
আপনি যে নামাজে বুকের উপর হাত বাঁধেন, এর একটা দলীল কোর’আন বা বুখারী-মুসলিম থেকে দেন।
তিনি বললেন –
আমার মোবাইলে এখন চার্জ কম। বাসায় গিয়ে হাদিস এপ্সে তালাশ করে আপনাকে জানাব।
আমি বললাম –
এখন, তখন এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত খুঁজলেও আপনি বুখারী-মুসলিমে বুকের উপর হাত বাঁধার দলীল পাবেন না। কারণ, এই দলীল তো বুখারী-মুসলিমে নাই। আপনি নামাজে হাত বাঁধতে হলে বাধ্য হয়ে বাকি চার কিতাবের দ্বারস্থ হবেন।
তিনি বললেন –
যাই, পরে কথা হবে। এখন মোবাইলে চার্জ নাই।
( হায় মোবাইল! হায় চার্জ)
যাইহোক, পরবর্তীতে এই ভাই সহীহ পন্থায় পলায়ন করেছেন৷ আর কোন দিন কথা হয়নি, হয়তো বেচারা আমার উপর বেজায় ক্ষেপে আছেন! আল্লাহ মা’লুম!
যাইহোক, প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা ! আপনাদেরকে অনুরোধ করে বলি, সহীহ খুঁজে খুঁজে আমল করুন – অসুবিধা নাই। তবে, অনুগ্রহ করে কোন না কোন আলিমের তত্ত্বাবধানে জেনে নিবেন।
সবকিছু নিজের উপর ন্যস্ত না করে, আলিমদের উপর ও কিছু ছেড়ে দিবেন। তবে, নিজেকে এগনস্টিক চিন্তা থেকে হেফাজত করতে পারবেন।
নতুনা, নিজের অজান্তেই কোন এক সময় এভাবে বিবর্তন হতে হতে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যেতে পারেন। আল্লাহ মা’ফ করুক!
এমন অনেক দেখেছি, যারা শুরুতে –
→ মাজহাব ত্যাগ করেছেন
→ পরে সিহাহ সিত্তা ত্যাগ করেছেন
→ পরে হাদিসই ত্যাগ করেছেন
→ শেষতক, আহলে কোর’আন হয়ে আছেন
ইতিহাসে, বিভিন্ন বাতিল ফিরকার আবির্ভাব কিন্তু এভাবেই হয়েছে। এটা না ওটা, ইত্যাদি যাচাইয়ের ভার নিজের উপর নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা থেকে একদিন বাতিক ফেরকায় পরিগনিত হয়েছে।
আপনারা যারা সহীহ খুঁজতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন, আপনাদের এই প্রচেষ্টা ও ইচ্ছাকে মন থেকে এপ্রিশিয়েট করি। তবে, অনুরোধ থাকবে, আপনি যে মানহাজের হোন ; সেই মানহাজের সম্মানীত শায়খদের অনুসরণ করে চলবেন।
আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুক!