আজ আপনাদের সামনে ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ -এর ফতোয়া বোর্ডের চল্লিশজন মুফতির নাম তুলে ধরবো।

আজ আপনাদের সামনে ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ -এর ফতোয়া বোর্ডের চল্লিশজন মুফতির নাম তুলে ধরবো। অর্থাৎ, যাদের হাত ধরে হানাফী মাজহাবের সূত্রায়িত হয়েছিল৷ তার পূর্বে একটি ভিত্তিহীন আপত্তির জবাব দিতে চাই –

১. অনেকের ধারণা যে, হানাফী মাজহাব মানে তাকলীদে শাখসী বা একজন ব্যক্তির অনুকরণ৷

ধারণাটিই মোটেও সঠিক নয়। যারা এমন দাবী করেন, তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ও মূর্খতা থেকে আপত্তি করেন। শারীয়ার ইতিহাস নিয়ে যাদের পড়াশোনা আছে ; তাদের মাথায় নূন্যতম এমন কোন প্রশ্ন আসবে না৷

১২০ হিজরী থেকে নিয়ে ১৩০০ হিজরী পর্যন্ত হানাফী মাজহাব মোট সাতটা পর্যায়ে অসংখ্য মুজতাহিদ ফকীহ এর দ্বারা নানান সংযোজন-বিয়োজন বা সংস্কার সাধনের মাধ্যমে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে৷ বলাবাহুল্য, এতে হানাফী মাজহাবে অনেক পূর্বের-পরের মাস’আলায় পরিবর্ধন এসেছে৷

শুধু তাই নয় – কেবল প্রথম পর্যায়ে, অর্থাৎ ইমামে আজম আবু হানিফা রাঃ – এর জীবদ্দশায় হানাফী ফিকহ সংকলনে চল্লিশ জনের একটা বোর্ড গঠন করেন। প্রতিটা নতুন মাস’আলা এই বোর্ডে উত্থাপন করা হতো। চল্লিশজন মুজতাহিদ মুফতির আলোচনা-পর্যালোচনার পরে সার্বজনীন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। আর এভাবে হানাফী মাজহাবের মাস’আলা সংকলন এর কাজ শুরু হয়৷

এবার বুদ্ধিমান কোন পাঠক কি মনে করবেন যে, হানাফী মাজহাব মানে তাকলীদ শাখশী তথা কেবল এক ব্যক্তির অনুসরণ ? নাকি বিরাট একটা মুজতাহীদ জামাতের অনুসরণ ? এ তো গেলো প্রথম পর্যায়ের কথা, দ্বিতীয় থেকে নিয়ে সপ্তম পর্যায়ে রয়ে গেলো আরো কতো শত শত মুজতাহিদ মুফতির সংস্কার কাজ৷ এসব থেকে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, হানাফী মাজহাব নির্দিষ্ট কোন এক ব্যক্তির অনুসরণ করে না বরং হাজার হাজার মুজতাহিদ মুফতির সমন্বিত ইজতেহাদ বা গবেষণাকে অনুকরণ করে।

তাহলে প্রশ্ন হতে পারে – আবু হানীফার নামে মাজহাব হলো কেন ?

এটা তো কমন কথা। সর্বপ্রথম উনার মাধ্যমে ফিকহী সংকলন শুরু হয়েছে। তাই উনার সংকলিত ফিকাহ’কে প্রথমে ” ফিকহে হানাফী ” বলা হতো৷ পরবর্তীতে পর্যাক্রমে ” ফিকহে হানাফী ” থেকে ” হানাফী মাজহাবে ” রুপান্তরিত হয়ে যায়। আর উভয়টার মাঝে অর্থগত বা উদ্দেশ্যগত কোন ব্যবধান না থাকায় কেউ এটা নিয়ে আপত্তি তুলে নাই৷

যাইহোক , আমি এবার ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ – এর ফতোয়া বোর্ডের সেই চল্লিশজন মুজতাহিদ মুফতির নাম তুলে ধরছি৷ যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গুছানো ও সাজানোভাবে ফিকহে ইসলামী সর্বপ্রথম সংকলিত হয় । আল্লাহ তা’লা যেন তাদের সবাইকে মুসলিম উম্মাহের পক্ষ থেকে জাযায়ে খায়র দান করেন – আমীন৷

ইমাম ত্বহাবী রহ. আসাদ ইবনে ফুরাত হতে অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করে বলেন – ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ ফিকহের সংকলনের কাজ যাদের দ্বারা সমাপ্ত করেন,তাদের সংখ্যা চল্লিশজন এবং তারা হলেন –

১. কাযী আবূ ইউসুফ
২. ইমাম মুহাম্মাদ
৩. ইমাম যুফার
৪. ওয়াকী ইবন জাররাহ
৫. ইয়াহইয়া ইববে জাকারীয়া
৬. আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক
৭. দাউদ ইবনে নুসাইর
৮. হাফস ইবনে গিয়াস
৯. ইউসুফ ইবনে খালিদ
১০. আফিয়া ইবনে ইয়াজিদ
১১. হিব্বান ইবনে আলী
১২. মুনদিল ইবনে আলী
১৩. আলী ইবনে মুসহীর
১৪. কাসীম ইবনে মা’আন
১৫. আসাদ ইবনে আমর
১৬. ফযল ইবনে মুসা
১৭. আলী ইবনে যারইয়ান
১৮. হিশাম ইবনে ইউসুফ
১৯. ইয়াহইয়া ইবনে সাইদ আল-কাত্তান
২০. শুআইব ইবনে ইসহাক
২১. হাফস ইবনে আব্দুর রহমান
২২. হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ
২৩. খালিদ ইবনে সুলাইমান
২৪. আব্দুল হামিদ ইবনে আব্দুর রহমান
২৫. আবূ কাসেম যাহহাক ইবনে মাখখাদ
২৬. মাক্কী ইবনে ইবরাহীম
২৭. হাম্মাদ ইবনে দালীল
২৮. আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরীস
২৯. ফুজাইল ইবনে ইয়ায
৩০. হাইসাম ইবনে বাশীর
৩১. নূহ ইবনে দাররাহ
৩২. যুহাইর ইবনে মুআবিয়া
৩৩. শরীক ইবনে আব্দুল্লাহ
৩৪. নসর ইবনে আব্দুল কারীম
৩৫. মালিক ইবনে মা’ফুল
৩৬. জাবীর ইবনে খাযিম
৩৭. জারীর ইবনে আব্দুল হামীদ
৩৮. হাসান ইবনে যিয়াদ
৩৯. হাম্মাদ ইবনে আবী হানীফা
৪০. আবূ ইসমাতা নূহ ইবনে মারয়াম

[[ সূত্রঃ তাজকিরাতুল হুফফাজ → ইমাম জাহাবী রাঃ ১/১৬৮, আল-মাক্কী ৯৬/১৩২, মানাকিবু ইমামে আজম দ্রঃ ]]

প্রিয় সত্যানুরাগী,
উপরের সবাই ” খাইরে কুরুন ” তথা রাসূল সাঃ এর ভাষ্যে ” উত্তম সময়কার ” মুজতাহীদ মুফতিগণ। যাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফিকহে হানাফীর যাত্রা শুরু হয়৷ যারা ফিকাহ’র পাশাপাশি হাদিস শাস্ত্রেও সমান পারদর্শী ছিলেন৷ অতএব, তারা শুধু ফিকাহ জানতেন আর হাদীস জানতেন না, এ কথা বলার মোটেও অবকাশ নাই৷

সর্বশেষ,
আরেকটা আপত্তির জবাব দিয়ে শেষ করছি – অনেকের দাবী যে, ইমাম জুফার – ইমাম মুহাম্মাদ কিংবা ইমাম ইউসুফ রাঃ অসংখ্য মাস’আলায় ইমামে আজমের বিরুধীতা করেছেন৷ তো আমরা করলে কি হয় ?

তার উত্তর দু’টা দিক দিয়ে বলবো –

১. উনারা সবাই মুজতাহিদ মুতলাক ছিলেন। যে কোন তারা মাস’লায় কারো সাথে দ্বিমত পোষণ করার শার’ঈ অনুমোদন রাখেন । তবে স্মাতব্য যে, উনারা মুজতাহিদ হওয়ার পরেও দিনশেষ অধিকাংশ মাস’আলায় ইমামে আজমের তাকলীদ করেছেন।

২. উনারা সবাই মাজহাবের ফুরু’ই মাস’লায় ইখতেলাফ করেছেন। উসূলি মাস’আলায় নয়। আর শাখাগত মাস’লায় বৈপরীত্য থাকা আহামরি কিছু না। আজও অবধি অনেক শাখাগত মাস’আলায় হানাফী আলেমদের মধ্যকার পারস্পরিক বিরোধ আছে। এটা কোন উল্লেখ্য বিষয়ই না৷

ওয়াল্লাহু আ’লামু বিসওয়াব ?

আব্দুল কারীম আল-মাদানী,
ইসলামীক শারীয়া বিভাগ,
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *