কাল থেকে একটা স্ক্রিনশর্ট চোখে ভাসছে। হাওয়া আ. এর কারণে নাকি আমরা জান্নাত খুইয়েছি। বক্তব্যটা দেখে হাসব না কাঁদব, বুঝতে পারছিলাম না। কারণ, প্রথমদিকের কয়েকটি সূরা অর্থসহ পড়লেও, এই ধরনের গলদ ধারণার উৎপত্তি হতো না।
.
নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার দোষটা কোনো নারীর, এটা বাইবেলের মতামত। বাইবেল বলেছে :
“And Adam was not one deceived; it was the woman who was deceived and became a sinner.” [1 timothy 2:14]
অর্থাৎ, আদম আ. নয় বরং হাওয়া আ.-ই শয়তান দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিলেন। আদম আ. নাকি ফল খাওয়ার পর বলছিলেন :
“She gave me some fruit from the tree and I ate it.” [Genesis 3:12]
.
শ্লোকগুলোর মাধ্যমে দোষটা সম্পূর্ণভাবে নারীর ওপর চাপিয়ে দেয় বাইবেল। বাইবেলের ভাষায় একে বলা হয় ‘আদিপাপ’ (Original sin/Ancestral sin)। যার সম্পূর্ণ দায়ভার একজন নারীর। এরজন্যেই নাকি ঈশ্বর নারীজাতিকে অভিশাপ দেন। আর এই অভিশাপের কারণে গর্ভধারণ ও প্রসবের সময় নারীদের কষ্ট হয়।
.
“I will greatly increase your pains in child-bearing; with pain you will give birth to children.” [Genesis 3:16]
.
এগুলো আগাগোড়াই বাইবেলের মিথ্যাচার। কুরআন মাজীদ এই ধরনের দাবি করেনি কোথাও। বরং দোষটা দুজনকেই দিয়েছে। কুরআন বলছে :
“তারপর তাদের লজ্জাস্থান— যা তাদের পরষ্পর থেকে গোপন রাখা হয়েছিল— তাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেবার জন্যে শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল। সে তাদেরকে বলল, ‘তোমাদের রব যে, তোমাদের এ গাছটির কাছে যেতে নিষেধ করেছেন তার পেছনে এ ছাড়া আর কোনো কারণই নেই যে, পাছে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাও অথবা তোমরা চিরন্তন জীবনের অধিকারী হয়ে পড়ো।’ আর সে কসম খেয়ে তাদেরকে বলল, আমি তোমাদের যথার্থ কল্যাণকামী। এভাবে প্রতারণা করে সে তাদের দুজনকে ধীরে ধীরে নিজের পথে নিয়ে এল। অবশেষে যখন তারা সেই গাছের ফল আস্বাদন করল, তাদের লজ্জা স্থান পরস্পরের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজেদের শরীর ঢাকতে লাগল জান্নাতের পাতা দিয়ে। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বলল, ‘আমি কি তোমাদের এ গাছটির কাছে যেতে নিষেধ করিনি এবং তোমাদের বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?’ (এ কথা শুনে) তারা দুজনেই বলে উঠল, ‘হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। এখন যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো, এবং আমাদের প্রতি রহম না করো, তা হলে নিঃসন্দেহে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব।’” (সূরা আল-আ’রাফ : ২০-২৩)
.
কুরআনের বক্তব্য খুবই পরিষ্কার। দুজনেই নিজেদের ওপর জুলুম করেছিলেন, এবং দুজনেই তাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছিলেন আল্লাহর কাছে। তাই একজনের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়াটা কুরআনের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। আদিপাপের ধারণা ইসলামে নেই। আল্লাহ তাআলা কোনো অভিশাপও দেননি নারীজাতিকে। গর্ভধারণ থেকে নিয়ে সন্তান প্রসব— কোনোটাই আদিপাপ-জনিত কষ্ট নয়। বরং এগুলো অশেষ সওয়াবের কাজ।
.
নবি স. বলেন : “গর্ভধারণ থেকে নিয়ে দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত একজন মহিলা আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারের ন্যায় সওয়াব পেতে থাকে। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায়, তবে তার জন্যে রয়েছে শহীদের সওয়াব।” [তাবারানি : ১৩৭৩৪; মাজমাউয যাওয়াইদ : ৪/৩০৮] (** জাকারিয়া মাসুদ)