|| রাব্বিয়াতুল বাইত কেমন হওয়া উচিত ||
আরবিতে প্রিয়তমা স্ত্রীকে বলা হয়, রাব্বিয়াতুল বাইত — ঘরের রাণী।
প্রেম করার জন্য মেয়ের অভাব না হলেও সংসার করার জন্য মেয়ের অভাব রয়েছে। প্রেম করা যায় এমন সকল মেয়েই সংসারী হতে পারেনা, রাব্বাতুল বাইত হবার যোগ্যতা রাখেনা।
কিন্তু সংসারী প্রত্যেকটা মেয়েই প্রেমময়। রাব্বাতুল বাইত। সংসারী বলতে কী বুঝায় ? ঘরের রাণী কেমন হওয়া উচিত ?
.
সিনেমা নাটকে সম্পর্ক যেভাবে উপস্থাপন করে যেমনঃ
একসাথে প্রতিদিন ঘুড়ে বেড়ানো, ঘাড়ে চড়িয়ে নিয়ে ঘুরা, রেস্টুরেন্ট চেকইন, সবুজ মাঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতে হাত রেখে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা, রোমান্স ইত্যাদি- আসলে বাস্তবতা এমন না।
অনেকে শুধু এই থিওরী তে বিয়ে করতে আগ্রহী যে বিয়ের পর দুইজন একসাথে রোমান্স করব, ঘুরব, রেস্টুরেন্ট এ যাবো আর চেক ইন দিব , আর ফিজিক্যাল ব্যাপারটা তো আছেই, সেটা বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য না হলেও বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য এবং গুরুত্বপূর্ণও।
.
কিন্তু জীবন এত সহজ না। এখানে অনেক গুলো ঝামেলার ব্যাপার আছে। সংসারে অভাব আসবে, ঝামেলা আসবে, মনোমালিন্য কথা ধরা ধরি দেখা দিবে, সদস্য গুলোর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে, চিন্তা বিষন্নতা আসবে, এক সময় মনেও হবে বিয়ে করে ভুল করেছি, হয়ত কঠিন কোন বিপদ আসবে, অসুখ বিসুখ হবে কারোর ইত্যাদি। তারপর আল্লাহ যখন নেয়ামত হিসেবে সন্তান দান করবেন, সেই সন্তান একই সাথে নেয়ামত আবার পরীক্ষা, কাউকে সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, কাউকে না দিয়ে। মুলত সংসার জীবনটাই পরীক্ষা।
কিন্তু এই সব কিছুকে ম্যানেজ করা যায় যে একজনকে সাথে নিয়ে এমন কাউকে বিয়ে করা যায়, এমন কারোর সাথেই সম্পর্ক টা হওয়া উচিত।
.
যৌবনের পুরোটা জুড়েই একজন মানুষ ফ্যান্টাসী তে ভুগে। ঠোটে ঠোট ডুবাতে সবারই ভালো লাগে, কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে যখন সেই ঠোট দিয়ে লালা ঝরবে তখন সেটা পরিষ্কার করে দেওয়ার মানসিকতা কয়জনের আছে ?
যার সাথে বিছানায় প্রতিনিয়ত যৌবন উপভোগ করা হয় সেই মানুষটিই বৃদ্ধকালে যখন বার্ধক্যজনিত কারণে বিছানায় পড়ে থাকবে, বিছানা নষ্ট করবে সেই সময়গুলিতে প্রতিনিয়ত তার সেবা করা সেভাবেই উপভোগ করতে প্রস্তুত তো ? এইগুলো কি কেউ চিন্তা করে দেখি ?
.
আধুনিক কালের বেশিরভাগ সম্পর্ক গুলো ফ্যান্টাসী দিয়ে শুরু হয়, তাই ফ্যান্টাসী শেষে আবার ভেঙ্গেও যায়, এমনকি বিয়ে হলেও ভেংগে যায়। যেই চামড়া দেখে আকৃষ্ট হচ্ছি, সন্তান হবার পর যখন সেই চামড়া গুলোতে টান পড়বে, ফিগার মুটিয়ে যাবে তখনও আমরা আকৃষ্ট হবো তো ?
আসলে সম্পর্ক গড়ার সময় এইসবের খেয়াল আসে না। কারন শুধুমাত্র তাতক্ষনিক কে নিয়ে ভাবা হয় সেই সম্পর্কে। শারীরিক সৌন্দর্য, ক্ষনিকের আনন্দ ডেটিং গুলোই সেখানে মুখ্য থাকে।
.
বিয়ে করার জন্য খুব সাবধানে পাত্রী পছন্দ করা উচিত। আপনার সংগী আপনার পোষাক, পোষাক এর কাজ ইজ্জত আব্রু রক্ষা করা, সে আপনার দ্বীন কে পূর্নাংগকারী, দ্বীনের অর্ধেক, আপনার ইহকাল পরকাল জড়িয়ে আছে তার সাথে। কেবল ফ্যান্টাসীতে ভুগে ফ্যান্টাসী ভালো জমবে কে প্রাধান্য দিয়েই জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া উচিত না।
.
একজন সচ্চরিত্রবান মেয়ে কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলে, যদি কোন কারনে তার স্বামীর শারীরিক গঠন, চেহারা তার অপছন্দও হয় তবুও সারাজীবন সে তার স্বামীকে ভালোবেসে সেবা করে যাবে শুধু আল্লাহ এর সন্তুষ্টির জন্য। স্বামীর সন্তুষ্টিতে আল্লাহ এর সন্তুষ্টি, স্বামী কারোর উপর সন্তুষ্ট থাকলে সে খুব সহজেই জান্নাতের যেকোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। জান্নাতে তার কোন চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ থাকবেনা ভেবে এই দুনিয়াটা সে শোকর বা সবর করেই কাটিয়ে দিবে।
অনুরূপ ভাবে একজন সচ্চরিত্রবান ছেলে কে স্বামী হিসেবে গ্রহন করলে কোন কারনে তার স্ত্রীর শারীরিক গঠন, সৌন্দর্য ইত্যাদি তাকে সন্তুষ্ট না করলেও সেও আল্লাহ এর সন্তুষ্টির জন্য সারা জীবন স্ত্রীকে ভালোবেসে যাবে, তার সেবা করবে কারন রাসূল (সাঃ) এর ভাষ্যমতে সেই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।
.
তাই বিয়েতে কেবল এবং কেবলই একজন আল্লাহ ভীরু, আল্লাহ লাভার কে প্রাইওরিটি দেওয়া উচিত। সাথে আল্লাহ সৌন্দর্য, বংশমর্যাদা এবং শিক্ষা মেলালে আলহামদুলিল্লাহ, আর না মেলালেও আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ অন্যদিক দিয়ে পুষিয়ে দিবেন।
অনেকেরই দেখা যায় স্বামী স্ত্রী দুইজনের চেহারাই হয়ত মোটামুটি কিন্তু সন্তানরা যেন একেকজন রাজপুত্র হয়েছে। আর এই দুনিয়ার সামান্য প্রাপ্যতাকে বিশাল সুদে পুষিয়ে রাখার জন্য তো আল্লাহ পরের দুনিইয়া প্রস্তুত রেখেছেন। এই সুদ হারাম বা, জীবনের একমাত্র হালাল সুদ।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বুঝার তৌফিক দিক।