খৃষ্টান মিশনারি ও আমাদের ঈমান বিক্রির মহোৎসব

┇খৃষ্টান মিশনারি ও আমাদের ঈমান বিক্রির মহোৎসব┇
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
বাংলাদেশে খৃষ্টান মিশনারির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার আগে মিশনারির সংজ্ঞাটা ভাল করে জেনে রাখুন-
” A missionary is a member of a religious group sent into an area to promote their faith or perform ministries(যাজকবৃত্তি) of services such as education, literacy, social justice, health care and economic developement.” [1]
মিশনারির সাথে শিক্ষা ও চিকিৎসার সম্পর্ক বেশ গভীর। মিশনারি স্কুলগুলো সাধারণত কলোনিয়াল/ঔপনিবেশিক এলাকার জনগণকে ” westernization” করার উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হত, হচ্ছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, এর মাধ্যমে নতুন খৃষ্ট যাজক এবং টিচার বের করে আনার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের মাঝে খৃষ্টধর্ম প্রচার। [2]
সর্বপ্রথম খৃষ্ট ধর্ম প্রচারের গল্প বেশ পুরনো, সেই ১৫১৭ সালের কথা। [3] কিন্তু মিশনারিরা মুসলিমদেরকে আল্লাহর দ্বীন থেকে সরিয়ে নিতে কোনভাবেই সক্ষম হয়নি, তাই তারা তাদের কর্মপদ্ধতি বদলে ফেলল। গত শতাব্দীতে তারা লক্ষ্য করে, ধীরে হলেও কাজে অগ্রগতি হচ্ছে। ১৯৩৫ সাল থেকে তারা স্থানীয় জনগনের মাতৃভাষায় কাজ করা শুরু করে, বাইবেল ও গস্পেল অনুবাদের কাজ হাতে নেয়। সেই সাথে তারা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব ফেলার ব্লুপ্রিন্ট হাতে নেয়। অবশেষে, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ‘সাফল্য’ লাভ করতে শুরু করে।
সমাজের প্রতিটি স্তরে তারা যে পরিমাণ অর্থের স্রোত বইয়ে দিচ্ছিল, তাতে করে তাদের কর্মকাণ্ডে বাঁধা প্রদান করার ইচ্ছে কোন সরকারেরই ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের অসহায় মানুষের কাছে কাচা পয়সা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে তারা নব উদ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। একটি উদাহরণ দেই, শুধু Caritas নামক একটি ক্যাথলিক মিশনারি সংগঠনই ঐ সময়ে ৩৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নেয়। [4] অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তারা তো জনগণের উন্নতির জন্যই কাজ করছে, তাহলে এত সমস্যা কিসের?

সমস্যা আছে। ২০০৪ সালে ভয়াবহ সুনামির পর টেক্সাসের Gospel for Asia-এর প্রেসিডেন্ট K.P. Yohaman বলেন,’এই দুর্যোগ জনগণের মাঝে ‘GOD’ এর বাণী ছড়িয়ে দেয়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ নিয়ে এসেছে।’ তিনি আরও জানান, ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ১৪৫০০ জন লোকাল মিশনারি সদস্য সুনামিতে আক্রান্ত মানুষের মাঝে বাইবেল ও “How to find hope in this time through the word of GOD” শীর্ষক বিভিন্ন ছোট ছোট পুস্তিকা বিলি করছে। [5]
এছাড়াও “Light of love for Aceh” নামক খৃষ্টান গ্রুপের প্রধান Willium Suhanda বলেন, তারা আশা করছেন তারা ৫০ জন শিশুকে খৃষ্টানদের এতিমখানায় নিয়ে যাবেন, যেন তারা শিশুদের কাছে ” খৃষ্টান মূল্যবোধ প্রচার করতে পারে, যাতে তারা যীশুর ভালবাসার রূপ দেখতে পায়।”
অ্যামেরিকার একটি দল ৩০০ জন শিশুকে এয়ারলিফটের মাধ্যমে খৃষ্টানদের অরফানেজে নিতে গিয়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। তাদের দাবি, তাদের এ কাজ “মাদার তেরেসার অনুরূপ কাজ, যিনি হিন্দু এতিম শিশুদের খৃষ্টান শিশুদের সাথে একই বাসায় লালনপালন করতেন।” [6] “মাদার” তেরেসা সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে ‘The Missionary Position: Mother Teresa in Theory and Practice’ বইটি পড়তে পারেন।

বাংলাদেশেও এদের কার্যক্রম এই ধারা থেকে খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। এদেশের মিশনারিরা মূলত সরকারের ছত্রছায়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের ধর্মপ্রচারের কার্যক্রমের গতি ত্বরান্বিত করছে। Daily Star এর “Not just a minority” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে তাদের প্রায় ৫০০০ প্রাইমারি স্কুল রয়েছে- যেগুলোর মধ্যে ১৩০০ স্কুলই সম্প্রতি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে তৈরি করা হয়েছে।
দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে অবাধ অর্থের প্রবাহ বইয়ে দেয়ার ফল সাম্প্রতিক সময়ে এসে তারা ভোগ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই তারা ঢাকা ও চট্টগ্রামকে Archdiocese অর্থাৎ মহাধর্মপ্রদেশ বলে ঘোষণা দিয়েছে, কিছুদিন আগেই পোপ ফ্রান্সিস Moses M. Costa-কে চট্টগ্রামের নতুন Archbishop ঘোষণা করেছেন। চট্টগ্রামে Bangladesh Christian Mission (BCM) নামক সংগঠনটি অবাধে মিশনারি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে; সেখানে তারা ইতোমধ্যেই ৬০ত টি চার্চ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলও তাদের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পায়নি। [7] ইসলামী দাওয়া ইন্সটিটিউট-এর পরিচালক মুফতি জোবায়ের হোসেন বলেন,” ঠাকুরগাঁয়ের পুরিহিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে এক স্কুল পরিদর্শন করি। প্রিন্সিপ্যালকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কার নামে খাবার খাওয়ান? তিনি উত্তর দিলেন, আমরা প্রভুর নামে খাবার খাওয়াই। একটি শিশুকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কার নামে খাবার খাও? সে বলল, আমরা যীশুর নামে খাবার খাই।”
এছাড়াও তিনি পার্বতীপুরের একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন,” সেখানকার মিশনারি হাসপাতালের স্কুলে পড়া এক শিশুকে তার পড়াশোনার বিষয় জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, সে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কের সাথে মুসলিম বাইবেল পড়ে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, মুসলিম বাইবেলে কি পড়? সে জানাল, ইসলামী গান। গান শোনাতে বললে সে গান শোনাল,
যীশু আমার সঙ্গে
আমিও তার সঙ্গে,
তিনি আমাকে প্রেম করেন,
তিনি আমাকে রক্ষা করেন। [8]
তারা প্রাইমারি লেভেলকে টার্গেট করে কাজ পরিচালনা করছে, কারণ শৈশবেই শিশুর ব্রেইনওয়াশ করে দিতে পারলে পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত করার কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। আপনার সন্তান তাদের পাশ্চাত্য (ইসলামের স্পর্শহীন) শিক্ষায় শিক্ষিত হলে, ক্রুশ অঙ্কিত পোশাক পড়লে তার ঈমান বৃদ্ধির কোন কারণই নেই। তাদের প্রতিষ্ঠানে ইসলামি বই পড়ানো হয়না, রবিবারে বাচ্চাদের নিয়ে বাইবেল পড়ানো হয়। গরিব পরিবারগুলোকে পোশাক, খাবারদাবার, অর্থ-সম্পদ থেকে শুরু করে গরু-ছাগল পর্যন্ত প্রদান করা হয়। [9]
কুড়িগ্রামে মিশনারিদের ” প্রেস ভেটেরিয়ান চার্চ অব বাংলাদেশ” নামক একটি এনজিও সেই ২০০০ সাল থেকে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তাদের প্রভাবে কেউ প্রকাশ্যে খৃষ্টান হয়েছে, কেউবা গোপনে ইসলাম ত্যাগ করেছে। সেখানকার রুপকুমার নদীতে তারা নও খৃষ্টানদের ব্যাপটাইজড করাত। সম্প্রতি কিছু মুসলিম দায়ীর দাওয়াতে পুনরায় ইসলামে ফিরে আসা ভাইরা জানিয়েছে, কাউকে এনে ঐ নদীতে ব্যাপটাইজড করাতে পারলে তাকে ১০০০০ টাকা দেয়া হত। [10]
এছাড়াও রোহিঙ্গাদের মাঝেও তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে, এবং তা বেশ ঘটা করেই হচ্ছে। দুদিন পর পর ইউনিসেফের আহ্বানে বিশ্বখ্যাত অভিনেতা অভিনেত্রীরা এসে তাদের সাথে সময় কাটাচ্ছেন, খুব ভাল কথা। কিন্তু ভিতরের খবর শুনলে আপনি আঁতকে উঠতে বাধ্য। রোহিঙ্গা মুসলমানদের এই দুঃসময়ে তাদেরকে টাকা দিয়ে,সেবা দিয়ে খৃষ্টান বানিয়ে খৃষ্ট ধর্ম প্রচারের জন্য যাজক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে; যদিও তারা বলছে যে, যীশু তাদেরকে স্বপ্নযোগে খৃষ্টান হবার জন্য আহ্বান করেছেন! [11] কিছুদিন আগে এক আলেম এ কথাও বলেছেন যে, এসব কাজে কেউ বাঁধা দিতে পারছে না; তারা সরকারি প্রোটেকশনে নির্ভয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও তিনি বলেছেন, এক মসজিদে গিয়ে দেখতে পান, মসজিদের ইমাম খৃষ্টান হয়ে গেছে, তার হাতে ” কিতাবুল মুকাদ্দাস”।
আলেমদের সব কথাই আমি রেফারেন্স হিসেবে দিব না, কিছু Worldwide মিশনারি সংগঠনের ইনফো আপনাদের দেখাই। GOD Report নামক মিশনারি প্রোমোটার ওয়েবসাইটের একটি আর্টিকেলে দাবি করা হয়, একজন ‘এক্স-মুসলিম’ যাজকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৬ সালেই দেশের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ২০০০০ মুসলিম খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে। এছাড়া অন্যান্য যাজকদের দাবি অনুযায়ী, কেউ ৬০০০, কেউবা ৭০০ মুসলিমকে খৃষ্টান বানিয়েছে। [12]
Christian Freedom International নামক অপর এক মিশনারিদের ওয়েবসাইটের দেয়া ইনফো অনুযায়ী, ২০১০-২০১৬ সালের মধ্যে ৯১০০০ মুসলিম খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে। [13]
Vatican Radio এর দেয়া ইনফো অনুযায়ী জানা যায়, শেষ ২০ বছরে বাংলাদেশে Diocese ( an area controlled by a bishop) এর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ৮ টি Diocese রয়েছে, যা খৃষ্টান বিশপদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। [14]
NGO Bureau of Bangladesh Govt. বাংলাদেশে খৃষ্ট ধর্ম প্রচারে জড়িত, এমন ৫২ টি NGO আইডেন্টিফাই করেছে। [15]
এছাড়াও Opne Doors Uk এর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে খৃষ্টানদের ধর্মান্তরিত করার কাজ সম্পর্কে অনেক ইনফরমেশন পাবেন। [16]

যদিও আমরা জানি যে মিশনারিরা তাদের কাজ ও সফলতাকে বড় করে তুলতে অতি বর্ধিত এবং মিথ্যা তথ্য দেয়াটা খুবই স্বাভাবিক, তবুও বাস্তবতা আমাদেরকে সেই বিলাসী চিন্তা করার সুযোগ দেয় না। আমাদের সামনে পূর্ব তিমুর কিংবা দক্ষিণ সুদানের ইতিহাস জ্বলজ্বল করছে, এখন আমাদের ভাবা উচিত, আমরা সেদিকে যাচ্ছি কিনা।
আমি আপনাদের সামনে ইরতিদাদের ব্যাপারে ইসলামের কোন মূলনীতি তুলে ধরব না, কিংবা তাৎক্ষনিক কোন সিদ্ধান্তগ্রহণ করতেও বলব না। তবে আপনাদের আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, আল্লাহর রাসূল ﷺ ও তাঁর সাহাবীরা এই ঈমানের জন্যই নিজেদের জীবন আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। এই রূহানী সম্পদ ব্যতীত আমাদের প্রত্যেকের জীবন বৃথা। যে ঈমান ছড়িয়ে দিতে তারা আল্লাহর কিতাব হাতে নিয়ে পৃথিবীর সকল ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়েছিলেন, আজ আমাদেরই ভূমিতে আমাদের কাছ থেকেই কাফিররা সেই ঈমান কিনে নিচ্ছে, তাও মাত্র দশ হাজার টাকায়!
বড় কোন ঝড় আসার পূর্বে পরিবেশ যেভাবে নিশ্চুপ হয়ে যায়, আজ এ দেশের মুসলিমদের মাঝেও সেরকম নির্লিপ্ততা দেখা যাচ্ছে, কোন কিছুতেই তারা আর পরোয়া করছে না। কিন্তু আমাদের ভাইদের ঈমান বিকিকিনির যে উৎসব চলছে, তা বন্ধ করার দায়িত্ব কাদের? মিশনারি নামক ঈমান বিধ্বংসী ফিতনা দূরীকরণে এ দেশের প্রতিটি মুসলিমের এগিয়ে আসা উচিত, এই বিষয়ে উম্মাহর ঐক্যমত হওয়ার কাঙ্ক্ষিত সময় খুব সম্ভবত আমরা বহু আগেই পার করে এসেছি। কুফফারদের এই ঈমান বিকিকিনির বাজারে দরিদ্র দুর্বল ঈমানদার ভাইদের ঈমান বিক্রি প্রতিরোধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় আর কারো জানা আছে কি?
References:
[1] https://bit.ly/3dqH3AU , On being a missionary, Book by Thomas Hale Jr.
[2] https://bit.ly/2zHlqhh
[3] https://bit.ly/2ZMr4cu , https://bit.ly/3dl5H6k
[4] https://bit.ly/36EOwtE
[5] https://bit.ly/3dqHXgM
[6] https://bit.ly/2XdX4F1
[7] https://bit.ly/2Ah0sG7
[8] https://bit.ly/2ZNNk5T
[9] https://bit.ly/3cf4pIy
[10] https://bit.ly/2XbOTJ2
[11] https://bit.ly/2M71UgV , https://bit.ly/2Ma91VN
[12] https://bit.ly/2XHZpqt
[13] https://bit.ly/2XdD4SL
[14] https://bit.ly/2M7DJig
[15] https://bit.ly/3dldjpq
[16] https://bit.ly/3eCaK2t
[এছাড়াও দেখতে পারেন, ‘ The Authority of the Face: Missionary Representations in South-west Bangladesh.’ by Cosimo Zene.]

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *