জান্নাতী হুরদের বৈশিষ্টঃ (১-১৬)

জান্নাতী হুরদের বৈশিষ্টঃ (১-১৬)

১ (মুতাহহারাহ): তারা হবেন পূতপবিত্র। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের দোষত্রুটিখুঁতমুক্ত। রাগ-মেয়েলি ঈর্ষা-হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত। কথায় কথায় রাগ করে জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবেন না। কটাক্ষ-খোঁটা দিবেন না। এমনকি প্রতি মাসে ‘বিশেষ’ কিছুও থাকবে না। সন্তান লালন-পালনের ব্যস্ততা থাকবে না। গর্ভধারনের শুগুল থাকবে না। প্রসব পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদী বিচ্ছেদও থাকবে না। সবদিক দিয়েই পবিত্র। এই সুখটা হবে চিরস্থায়ী। (শব্দটা: বাকারা ২৫)।

২ (ইনশা): আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করবেন। জান্নাতী নারী, এটুকু ভাবলেই তো মনের মধ্যে কেমন একটা ভাব ছলকে ওঠে! তার উপর স্বয়ং রাব্বুল আলামীন যদি বলেন: আমি তাদেরকে ‘বিশেষ’ পদ্ধতিতে সৃষ্টি করেছি! তাহলে তর সয় কী করে! (ওয়াকিয়াহ: ৩৫)।

৩ (আবকার): কুমারী! ব্যস একশব্দেই সব বলা হয়ে গেলো। বিয়ের আগে রাত জেগে পরপুরুষের সাথে ‘ইয়ে’ করেনি। স্কুল-কলেজের অবাধ সুযোগ গ্রহণ করেনি। বিয়ে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কিছু করেনি। কোনও দুষ্ট আত্মীয়ের পাল্লায় পড়েনি। মার্কেটে-অনুষ্ঠানে লোভী পুরুষের জুলজুলে দৃষ্টিতে ক্লেদাক্ত হয় নি। একেবারেই আনকোরা। অনাঘ্রাত। অনাবৃত। অধরা। তার ওড়না ধরেও কেউ টানাটানি করেনি। ‘চোলি কা পিছে কেয়া হ্যায়’ বলে পাড়ার রোয়াকে বসে, কেউ শিষ দিয়ে ওঠেনি। গাদাগাদি ভীড়াক্কার বাসে গা ঘেঁষাঘেঁষিও হয়নি। (ওয়াকিয়া: ৩৬)।

৪ (উরুবান): স্বামী-সোহাগিনী। স্বামী অন্তঃপ্রাণা। স্বামীর হৃদয়ের প্রশান্তি। ভালোবাসার নানা ছলাকলায় দক্ষ। প্রেমের চৌষট্টি কলা তো বটেই আরও যত কলা আছে, সবতাতেই নিপুণা। নখরাপটিয়সী। তার প্রতিটি আচরন, হরকত-সাকানাতই প্রেমরস উদ্রেক করে। স্বামীকে দেখলেই তার অধরে দুষ্ট হাসি ফুটে ওঠে। হাস্য-পরিহাসে স্বামীকে মজিয়ে রাখে। নরম কোমল মিহি স্বরে কথা বলে। কপট রাগ দেখিয়ে স্বামীকে উত্তেজিত করে তোলে। ভেংচি কেটে কথা বলবে। গাল ফুলিয়ে অভিমান দেখাবে। এমন সব অঙ্গভঙ্গি-বাকভঙ্গি করবে, স্বামী কাছে না এসে পারবে না। এমনকি এমন কথা বলবে…………………! আরবী গুলোতে আরও বিপদজনক অর্থও দেয়া আছে ‘শব্দটার’! সেসব আর নাইবা বললাম। (শব্দটা ওয়াকিয়ার: ৩৭)

৫: (আতরাবান): সমবয়েসী। শেষ বয়েসের দিকে লক্ষ্য রেখে, দুনিয়াতে স্ত্রীর বয়েস কম হওয়া ভাল। কিন্তু জান্নাতে তো বার্ধক্য নেই। সমবয়েসী সঙ্গীনিই সবদিক থেকে, ‘সবকিছুর’ জন্যে উপযুক্ত।

৬ (খাইরাত): উত্তম চরিত্রবতী। কল্যাণী। সুশীলা। সুলক্ষণা। মনোরম আচার-আচরণের অধিকারীনি। নম্র-ভদ্রভাষী। আগাগোড়া কল্যাণবর্তী।

৭ (হিসান): সুন্দর। অসম্ভব সুন্দর। নিখুঁত নিদাঘ।

৮ (লাম ইয়াতমিসহুন্না): তাদেরকে আগে কোনও জ্বিন বা মানব স্পর্শ করেনি। আরো মূলানুগ করে বলতে গেলে: তাদের সতীচ্ছেদ করেনি। একেবারে আনকোরা! টাকশালী কড়কড়ে! সদ্যফোটা শিশিরসিক্ত ‘লালগোলাব’!

৯ (হুর): অপুর্ব সুন্দর চোখের অধিকারীনি। চোখের শাদা অংশ উজ্জল শুভ্র । পাশাপাশি চোখের কালো অংশও গভীর কালো। চোখটা লম্বাটে না হয়ে খানিকটা গোলাকৃতির। আয়তকার। সবমিলিয়ে কাতেলানা ‘নয়নধারীনি’!

১০ (ঈন): ডাগর চোখের অধিকারীনি। বিশালাক্ষী।

১১ (বাইদুম মাকনুন): তারা যেন সুরক্ষিত ডিম্ব। ডিমের খোসার মধ্যে কুসুম ও পানি যেমন নিরাপদে থাকে, জান্নাতের ‘স্ত্রীরা’ও তেমন থাকবে।

১২ (কাসিরাতুত্তারফ): অবনতদৃষ্টিধারীনি। পরপুরুষের দিকে তাকাবে না। দুনিয়াতে বোরকা পরে, হাতমোজা পা’মোজা পরে, খাস পর্দা করে, এমন নারীর সংখ্যা কম নয়। কিন্তু পর পুরুষের দিকে তাকায় না, এমন নারী বিরলই বলতে গেলে। কতো কতো অসূয্যস্পর্শাকেও দেখেছি, বাড়িতে মেহমান এলে, বেড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতে! ব্যতিক্রম থাকতে পারে। জান্নাতবাসীনিগন ভিন্ন ধাঁচের ‘খালক’। নিজের হালালপ্রেমিক’ ছাড়া অন্য কারো দিকে তাদের চোখই যাবে না। কারন তারা সব সময় চোখ নিচু করেই থাকবে। দুনিয়ার বোরকাপরাদের কাউকে কাউকে দেখা যায়: কালো আচ্ছাদনের আড়াল থেকে হানা তাদের দৃষ্টিমিসাইলে, অনেক পুরুষকে শরাহত হয়ে তড়ফাচ্ছে।

১৩ (ইয়াকুত): তারা হবেন নীলকান্তমণি পাথরের মতো অপূর্ব। বিচ্ছুরিত সৌন্দর্যের অধিকারীনি।

১৪ (মারজান): প্রবালমুক্তার মতো। সমুদ্রের গভীরে থাকা বহুমূল্য জহরতের মতো।

১৫ (মাকসূরাত ফিলখিয়াম): তাঁবুতে অবরোধবাসীনি। টো টো করে ঘুরে বেড়ায় না। স্বামীকে নিয়েই, পতিকে ঘিরেই তার সবকিছু আবর্তিত হয়!

১৬ (লু‘লুউম মাকনূন): সুরক্ষিত মুক্তার মতো। মুক্তোর দানা থাকে ঝিনুকের খোলের মধ্যে। অনেক যতন করে রাখা তোরঙ্গের মধ্যে! তারা থাকবেন অতি আদর যত্নে!

© জান্নাতের জীবন সঙ্গিনী

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *