দুনিয়ার বাস্তবতা

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, দুনিয়াদার লােকদের দৃষ্টান্ত সে সম্প্রদায়ের মতাে, যারা একটি নৌকায় আরােহণ করল। নৌকাটি তাদের নিয়ে একটি দ্বীপের নিকট পৌঁছিল। সেখানে পৌঁছার পর নৌকার মাঝি তাদেরকে মল-মূত্র ত্যাগের জন্য নৌকা হতে নামতে বলল। তারা সবাই জরুরত সারানোের জন্য নৌকা থেকে নামল। নামার সময় নৌকার মাঝি তাদের সবাইকে সতর্ক করে বলল, তােমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এস; অন্যথায় নৌকা তােমাদের রেখে চলে যাবে। নৌকার আরােহীরা সবাই নৌকা থেকে নেমে পুরাে দ্বীপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে গেল। তাদের কেউ কেউ নিজ নিজ প্রয়ােজন শেষ করে দ্রুত নৌকায় আরােহণ করল। যারা তাড়াতাড়ি ফিরে আসল, নৌকায় এসে তারা দেখতে পেল নৌকা একেবারেই খালি, তাই তারা তাদের পছন্দমতাে ভালাে ভালাে জায়গাগুলাে বসার জন্য বেছে নিল এবং উত্তম ও মনােরম আসনগুলাে দখল করে নিল। আর কিছু লােক ছিল তারা দ্বীপের মধ্যে অনেক সময় অবস্থান করল; সেখানে তারা সুন্দর সুন্দর ফুল, গাছপালা, তরুলতা ও বাগবাগিচা দেখতে লাগল এবং বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখির আওয়াজ ও গান শুনতে লাগল। তারা দ্বীপের সুন্দর সুন্দর পাথর দেখে অভিভূত হলাে এবং তা উপভােগ করতে লাগল। তারপর তাদের মনে পড়ল নৌকার কথা! আমরা তাে আরও দেরি করলে নৌকা হারাব; নৌকা আমাদের রেখে চলে যাবে। তাই তারা তাড়াতাড়ি গিয়ে নৌকায় আরােহণ করল। তখন তারা গিয়ে দেখল নৌকা তাদের আসার আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। তারা তুলনামূলক সংকীর্ণ জায়গা পেল। আর সেখানেই তারা বসে পড়ল। আর এক শ্রেণির লােক তারা সুন্দর সুন্দর ও মূল্যবান পাথরের ওপর একবারে আসক্র হয়ে পড়ল; তারা কিছু পাথর সেখান থেকে নিয়ে আসল। তারপর যখন তারা ফিরে আসল, তারা দেখতে পেল নৌকায় তাদের পাথর রাখার জায়গা তাে দুরের কথা তাদের জন্যও সংকীর্ণ জায়গা ছাড়া খােলামেলা কোনাে বসার জায়গা আর অবশিষ্ট নেই। ফলে তাদের বহনকৃত পাথর তাদের কষ্টের কারণ হলাে এবং এগুলাে তাদের জন্য এক মহাবিপদ হলাে। লজ্জায় তারা পাথরগুলাে ফেলেও দিতে পারছে না এবং বহন করা ছাড়া কোনাে উপায়ও দেখছে না। তারপর তারা নিরুপায় হয়ে পাথরগুলােকে তাদের কাঁধে নিল। এতে তারা খুব লজ্জা পাচ্ছিল; কিন্তু তাদের লজ্জা তাদের কোনাে উপকারে আসেনি। কিছু সময় অতিবাহিত হলে, তাদের ফুলগুলাে শুকিয়ে দুর্গন্ধ বের হলাে এবং উপস্থিত লােকদের কষ্টের কারণ হলাে। আর কিছু লােক দ্বীপের সৌন্দর্য ও চাকচিক্য দেখে এমনভাবে ডুবে পড়ল, তারা নৌকার কথা একেবারে ভুলে গেল এবং উপভােগ করতে করতে অনেক দূরে চলে গেল। নৌকা ছাড়ার সময় যখন মাঝি উচ্চস্বরে তাদের ডাক দিল, তারা তাদের খেল-তামাশার কারণে মাঝির চিৎকার একটুও শুনতে পেল না। তারা তাদের কাজেই ব্যস্ত ছিল; কখনাে তারা ফুলের ঘ্রাণ নেয়, কখনাে ফল ছিড়ে, আবার কখনাে গাছের সৌন্দর্য অবলােকন করে। এ অবস্থায় থাকতে থাকতে এমন এক সময় আসল, এখন তারা বাঘের আতঙ্কে ভুগছে, না জানি বাঘ এসে তাদের খেয়ে ফেলে। কাঁটাযুক্ত গাছ তাদের ঘিরে ফেলছে, যা তাদের কাপড়কে নষ্ট করছে এবং পায়ের মধ্যে বিধে পড়ছে। চতুর্দিক থেকে গাছ-পালা ও ডালপালা তাদের ওপর ছিটকে পড়ার আশঙ্কায় তারা খুব আতঙ্কিত।

  • উদ্দাতুস-সাবেরীন: ১৯৫-১৯৬

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *