নবীজির কঠোরতা!

নবীজির কঠোরতা!

আপনি নবী স.-এর দয়ার প্রতি ভালোবাসা রাখেন আর কঠোরতার প্রতি কি লজ্জিত? মনে মনে ভাবেন, বনু কুরাইজার হত্যাকান্ড না করলেই পারতেন। আপনি স্পষ্টত নেফাকিতে আছেন। নবী স.এর সকল সিদ্ধান্তের উপর ঈমান আনা ফরয। যদি কোন শাইখ এ বিষয়গুলো না বলেন, সমর্থন না করেন তবে তার কাছ থেকে আপনি সহীহ ইলম পাবেন না। সে ইসলামের অনেক বিষয় গোপন করছে।

কঠোরতা—–
১.
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের শেষে অসংখ্যবার দোয়া করেছেন যেন আরবের পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী মুদার গোত্রে ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ নেমে আসে, যেন তারা ধ্বংস হয়। বোখারির একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক মাস পর্যন্ত আরবের কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়া করার জন্য নামাজে রুকুর পর কুনুতে নাযেলা পাঠ করেছেন।’

সহিহ বোখারি ৯৫২, ২৭৩১, ৩১৪৮, ৪২৪৩ ও ৫৭৬৭ নং হাদিস

২.
ক. পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদের উদ্দেশ্যে অভিশাপ দিয়েছেন।
খ. জনৈক ব্যক্তি নামাজের সময় সামনে দিয়ে যাওয়া নিষেধ স্বত্বেও গাধায় আরোহণ করে চলে যায়, রাসুল সা. তিনি তাকে অভিশাপ দিয়েছেন, যার দরুন লোকটি চিরতরে পঙ্গু হয়ে পড়ে।
গ. নিষেধ সত্ত্বেও একদল লোক আকাবার মরুপ্রান্তরে আগে পানি সংগ্রহে গেলে তিনি তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন।
-সহিহ বোখারি ৬৪ ও ৫৪৬৫-৬৬ নং হাদিস।

৩.
নবী স. বলেন “কেয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইয়াহুদি পাথরের আড়ালে আত্মগোপণ করে থাকলে পাথর বলবে, ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহুদি রয়েছে, তাকে হত্যা করো’”।
-সহিহ বোখারি ২৭২৪-২৫ নং হাদিস; সহিহ মুসলিম ৭০৭১-৭৪ নং হাদিস।

৪.
নবী সা.এর নেতৃত্বে বনি কুরাইজার প্রায় ৭শ সাবালক পুরুষকে হত্যা করা হয়। প্রায় তিনদিন ধরে মদীনার অদূরে তাদেরকে শিরচ্ছেদ করা হয়। সাহাবীগণ নিজেরা সেটা বাস্তবায়ন করেন। কি, শরীর শিউরে উঠে?

দেখুন সহিহ বোখারি ২৮২৯, ৩৫৩২ ও ৩৮২১ নং হাদিস; সুনানে নাসায়ি ৩৪৩০-৩১ নং হাদিস।

রাসুল সা.এর কঠোরতার কথা শুনার পর আপনার চেহারা যদি পাংশে হয়ে যায়, আপনি যদি লজ্জিত হয়ে যান, আপনি যদি মনে মনে এই ইসলাম মেনে নিতে না পারেন তবে আপনি ধরে নিন আপনার ইমান নেই। আপনি মুমীন হতে পারেননি। আপনি মনে মনে এগুলোকে হিংসাত্মক ও অমানবিক মনে করেন আর এগুলোকে তা‘বীল করেন ব্যাখ্যা করেন মানে হলো আপনি নেফাকিতে আছেন। আপনি এমন কোন স্কলারের ফ্যান হয়ে থাকলে সে ডুবছে আপনাকেও ডুবাচ্ছে। এখুনি বাদ দিয়ে ইমান হেফাযত করুন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন –

ক.
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আর তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। (সূরা ফাতহ ২৯ আয়াত)

খ-
“অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৬৫]

গ.
‘‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ’’ (সূরা আল আহযাব:০৬)

ঘ.
নবী (সা.) বলেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষের চাইতে প্রিয় হই’’ (বুখারী ও মুসলিম)।

ঙ.
আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা নবী (সা.) এর সাথে ছিলাম। নবী (সা.) হযরত ওমর (রা.) এর হাত ধরা ছিলেন। অত:পর ওমর (রা.) রাসূল (সা.)কে বললেন: হে রাসূল আমি আপনাকে সবচাইতে বেশি ভালবাসি তবে আমার নিজের চাইতে বেশি নয়। নবী (সা.) বললেন: তাহলে হবে না; আল্লাহর শপথ! তোমার নিজের চাইতেও আমাকে বেশি ভালবাসতে হবে। তখন ওমর (রা.) বললেন: এখন আমি আপনাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি। অত:পর নবী (সা.) বললেন: হে ওমর তাহলে এখন ঠিক আছে’’ (বুখারী)।

পার্ট, ০২ —————-
.

মুসলিম সমাজে পশ্চিমা মস্তিষ্কধারীরা রাসুল স.এর দয়া ও ভালোগুণগুলো আলোচনা করে আর ইসলামকে শান্তির ধর্ম প্রচার করে বেড়ায়। যখনই কাফির মুশরিক ও নাস্তিকগণ রাসুল সা,কে নিয়ে আপত্তি তোলে তখন এরা লজ্জিত হয় ও ঈমান হারিয়ে ফেলে।
আসুন,নবী স.এর দয়া, কোমলতা জানার সঙ্গে সঙ্গে কঠোরতাও দেখি । আপনার অবস্থা কি? মিলিয়ে নিনতো।

ক. রাসুল স.এর দরদ ও কোমলতা!
১.
দশ হাজার সাহাবীসহ মক্কা বিজয়ে যাচ্ছেন রাসুল ﷺ। রাস্তায় সদ্যপ্রসূত একটা কুকুর বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। এটা যেন সৈন্য দ্বারা পৃষ্ঠ হয়ে মারা না যায় এ জন্য তিনি তাই তিনি সাহাবি জুয়াইল বিন সুরাকা আল দামরি রা. কে পাহারায় দিলেন যেন কুকুরটি নিরাপদ থাকে।
২.
আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর রা. এঁর সূত্রে ইমাম আহমাদ এবং আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেন, ‘একবার আল্লাহ্‌র রাসুল ﷺ একজন আনসারি সাহাবির বাগান অতিক্রম করছিলেন। বাগানে বাঁধা একটা উটকে কাঁদতে দেখে তিনি নিজ হাতে উটের চোখের পানি মুছে দেন।’ এবং তার মালিককে সতর্ক করে দেন যেন সে আল্লাহকে ভয় করে পশুর প্রতি দয়া করে।

=ফলাফল, আমরা পশুর প্রতি নবী স.কে দরদী,মায়ময় দেখে আপ্লুত হই।তাকে ভালোবাাসি। তাঁর প্রতি ঈমান রাখি। কঠোরতার ব্যাপার আসলে তখন আমাদের ভুমিকা কী থাকে?
.
যদি আপনি কঠোরতা ও দয়ার ক্ষেত্রে রাসুল স.কে একইভাবে মানতে না পারেন তবে আপনি মুনাফিকের কাতারে আছেন, নেফাকের রোগে আপনি আক্রান্ত।
ইস্তেগফার করুন। পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করুন। আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করুন। আখেরাত পরিষ্কার করুন।
(আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে নেফাকের রোগ থেকে হেফাযত করুন। আমীন।)

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *