মুসলমানদের পতনে (রাজনৈতিক পতন মাত্র) বিশ্ব কি হারিয়েছে?

মুসলমানদের পতনে (রাজনৈতিক পতন মাত্র) বিশ্ব কি হারিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক কিছুরই নাম আসবে। তবে সবচে গুরুত্বপূর্ণ যা হারিয়েছে তা নিয়ে আজ আসুন কথা বলি।
খুব ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন, বিচার ব্যবস্থার গলদ শুধু বাংলাদেশেই নয় , বরং সমগ্র সাউথ এশিয়া সহ সারা বিশ্বে একটা গুরুতর সমস্যা। স্পেশালী ফরমাল কলোনিয়াল বিশ্বে। যারা অন্ধের মতন ইউরোপীয়ান বিচারব্যবস্থা ফলো করে।
বাংলাদেশের উদাহরনই দি। কোন হত্যা বা ধর্ষন মামলা যদি হয়, তাহলে অপরাধী একদম নিশ্চিত হবার পরেও তার ধরে বিচার করতে ২০-২৫ বছর লাগে। এবং বিচারে সাধারনত: আসামী বেকসুর খালাস হয়।

একদম সবার সামনে দিনে দুপুরে হত্যা বা ধর্ষন হলেও এই নরমাল বিচার। মনে করেন, একজন পুলিশ অফিসার আজ চাকরিতে জয়েন করলেন, তিনি একটা মামলা শুরু করলেন, তো তার রিটায়ারমেন্ট এসে যাবে, কিন্তু মামলার বিচার হবেনা। এ হল অবস্থা। বিচারকেরও তাই। বিচারক রিটায়ারমেন্টে যাবার আগে সব মামলার রায় দিয়ে যেতে পারেকিনা? খেয়াল করবেন।

তো, দেখেন ব্যাপারটা কতটা হাস্যকর। এজন্য আমি বিচারক বা পুলিশকে দোষ দিচ্ছিনা পুরোপুরি।
আসলে সমস্যাটা বাংলাদেশের লীগাল ফ্রেইমওয়ার্কের যেটা সেই ব্রিটিশরা তৈরী করে দিয়ে গেছে।

ইভেন ভারতেও একই অবস্থা। ভারত সরকার তার সবোর্চ্চ শক্তি প্রয়োগ করে নির্ভায়া হত্যাকান্ডের বিচার করতে ৫-৬ বছর সময় নিয়েছে। অথচর এটা ৫-৬ সপ্তাহের বিচার। বাংলাদেশে ইয়াসমীন হত্যা? সেই ১৯৯৬ সালে র ঘটনা। যদ্দূর মনে পড়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিচার চলেছে।

লতিফুর রহমানের মেয়ের যে ঘটনা? সেই ১৯৯৯ সালের ঘটনা। আইনি প্রকৃয়ায় গেছেন লতিফুর রহমান। আজও মামলার ফাইনাল কোন রায় হয়েছে কিনা জানিনা।

দেখেন কি অবস্থা। এক মামলা প্রথমে নিম্ন আদালত রায় দেয়, সেটা হাইকোর্টে যায়, সেখান থেকে সুপ্রীম কোর্টে যায়। এই করতে করতে ২০ বছর। তারপর আবার রাষ্ট্রপতির অনেক দয়া তো আছেই।

যেখানে রাষ্ট্র নিজে বা ধনী ব্যক্তিরা সবোর্চ্চ চেষ্টা করে ২০ বছরে ন্যায়বিচার পায়না, সেখানে গরীব মানুষদের কি হয় তা তো বুঝতেই পারেন। তাইনা?

তো আসল সমস্যা এখানে: যেকোন জিনিস অতিরিক্ত ত্যানা প্যাচাইতে গেলে একদম তিতা হয়ে যায়। ইউরোপীয়ান বিচার ব্যবস্থাটা এরকম। আসলে এই বিচার ব্যবস্থায় সিম্প্লীসিটি নাই। মাত্রাতিরিক্ত পেপারওয়ার্ক, বুরোক্রেসি আর ফাইল চালাচালি। যেগুলো ব্যাসিকালী না করলেও হয়।

গরীব মানুষ ভয়ে স্বাক্ষ্য দিতে আসেনা, স্বাক্ষ্য দিতে আসলে পথে খুন হয়ে যাবার সম্ভাবনা। আর ৫০ টাকায় কোর্টের সামনে স্বাক্ষ্য বিক্রি হয়। তাইনা?

ওইদিনে নিরীহ মানুষকে রিমান্ডে নিয়ে খুনের আসামী বানানো যায়। ফাসির রায় হবার পরে দেখা যায়, সে জাহালম ছিল। যে লোক খুন হইছে, সে আসলে ফেইক খুন হইছে। আসলে সে জিন্দা।
একজন অপরাধ করে আরেকজন জাহালমকে ধরে জেলে পুরে দেয়। ওদিকে সত্যিকারে অপরাধীকে ‘পাছে নিরাপরাধ শাস্তি পায় কিনা’ এই অযুহাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তাহলে এত পেপারওয়ার্ক বুরোক্রেসি করে কি লাভ হল? কনফার্ম করতে তো পারলেন না।

ফলাফল: সরকার থাকতে না পেরে ক্রসফায়ার করে। যেটা কোন সমাধান নয়। আমরা ক্রসফায়ার চাইনা, বিচার চাই মাত্র। ন্যায় বিচার। সঠিক সময়ের মধ্যে

এক মহিলারে দেখলাম পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তার অপরাধ সে তার ধর্ষক কে খুন করছে। এখন মহিলারে শাস্তি দিবে। ব্রিটিশ আইন। তো, আইন অনুযায়ী আসলে তার ধর্ষিত হয়ে যাবার কথা, ধর্ষীত হয়ে, তারপর ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা, যেটাতে ধর্ষক বেকসুর খালাস পাবে। তা না করে সে ধর্ষক কে কেন আঘাত করলো? সে বেআইনী কাজ করে ফেলছে, সে নরহত্যা করেছে, তাই তার এখন মৃত্যুদন্ড হবে। কি হাস্যকর যুক্তি। পৃথিবীর সবচে বড় স্টূপিডও বুঝে, মহিলা কোন অন্যায় করেনি, কিন্তু বিচারক কানতে কানতে মহিলাকে মৃত্যুদন্ড দিবে এই মামলায়, কারন বিচারকও বুঝে যে ন্যায়বিচার হচ্ছেনা। কীয়েক্টাবস্থা।

তো, এই যে হাস্যকর একটি আইনী ব্যবস্থা ব্রিটিশরা আমাদের দিয়ে গেছে? এটাই হল ইসলামের পতনে আমরা যা পেয়েছি, তা। ইভেন সরকার চাইলেও ন্যায়বিচার করতে পারেনা এখন। সর্বশক্তি দিয়েও না । কারন হাস্যকর আইনী সিস্টেম।

সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এই আইনে মোটামুটি চলে, কারন ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চসহ সব ইউরোপীয়ান রা কলোনী বানাইয়ে এই সিস্টেম চালু করে দিয়ে গেছে। সবাই ফেডআপ, কিন্তু সমাধানের কথা কেউ বলবেনা।

সমাধান কি জানেন?

সমাধান খুব সহজ। এত পেপারওয়ার্কবুরোক্রেসিফাইল চালাচালি: দরকার নাই। যেখানে ঘটনা ঘটবে সেখানে বিচারক তার বাহিনী নিয়ে যাবে। বিচারক, তার তদন্ত কর্মকর্তা সহ সব পার্টির (বাদি-বিবাদি বোথ) সাথে কথা বলবে, ঘটনা তদন্তে সে সাথে থাকবে। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় সে সাথে থাকবে। ব্যাস , কয়দিন লাগে? ১-২-৩ সপ্তাহের মধ্যে অপরাধীকে ঝুলিয়ে দেয়া যায়, যদি বিচারক চান।

কত্ত সহজ। আগেকার যুগে ছিল, শত শত বছর মুসলিম বিশ্বে এভাবে চলছে, কোন প্রবলেম হয় নাই। এখানে প্রসেসটা গুরুত্ব পূর্ণ, শুধু শাস্তির কঠোরতা ই নয়। কারন ইসলামী আইন বলতে মানুষ অনেক সময় কঠোর শাস্তিটাই বুঝে। কিন্তু প্রোসেসটার মধ্যে যে একটা সিম্প্লীসিটি আছে, সময় কম লাগে, ইসলাম এই আননেসেসারী পেপারওয়ার্ক টানে নাই __ এই জিনিসটা বুঝেনা। শুধু কঠোর শাস্তিই নয়, বরং দ্রুত প্রসেসিং টাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

মানে ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থাতেও কিন্তু কঠোরতা আছে: যেমন মৃত্যুদন্ড আছে। ইসলামী বিচারেও আছে। কিন্তু ব্রিটিশ বিচারে অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দিতে ২০-২৫ বছর লাগে, ইসলামী ব্যবস্থায় ২-৩ সপ্তাহ লাগে। ব্রিটিশ বিচারে ১০০ খুনীর মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদন্ড হয়, ৯৫ জন বেকসুর খালাস পেয়ে আবার খুন করে। ইসলামী বিচারে ১০০ খুনীর মধ্যে ৯৮ জনের মৃত্যুদন্ড হয়। ব্রিটিশ বিচারে একজন খুনীকে বিচার করতে ১০০ সরকারী কর্মকর্তার ১০,০০০ কর্মঘন্টা নষ্ট হয়, ইসলামী বিচারে মাত্র ৫-১০ জন কর্মকর্তার ৩০-৪০ ঘন্টা সময় ব্যায় হয়। ব্রিটিশ বিচারে বাদীকে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়, ইসলামী বিচারে বাদী অলমোস্ট বইসা বইসা ফ্রী ফ্রী বিচার পায়। — এ ব্যাপারগুলো বুঝা জরুরী। শুধু

ইসলামী বিচারের কঠোরতা টা্ই না, সহজতাও।

ইউরোপীয়ান আইনের সমস্যা হল, এখানে বিচারককে রোবোটের মত আইন দেখে বিচার করতে হয়। বিচারক বুঝতেছে, যে হাস্যকর বিচার হচ্ছে, কিন্তু কিছু করার নাই। কারন আইনে লেখা আছে তাই। বিচার এখানে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রামের মত। ”ইফ এই ঘটে তাহলে এই, এলস ইফ __ এই ঘটে, তাহলে এই । ” কিন্তু বিশেষ অবস্থা যদি ঘটে, যেমন মহিলা ধর্ষক কে হত্যা করেছে বাধ্য হয়ে, তাহলে কি হবে? সেটা তো আইনে লেখা নাই। আইন অনুযায়ী মহিলা ধর্ষককে আঘাত করতে পারবেনা, তাকে ধর্ষীত হয়ে যেতে হবে। না হলে মহিলার মৃত্যুদন্ড। এইটা হইলো আউটপুট। এভাবে বিচার হয় বলেন? বিচারক কে দোষ দিয়ে লাভ কি? বিচারিক প্রসেসটাই কম্পিউটার প্রোগ্রামের মতন, এখানে বিচারকের আক্বল ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। হাস্যকর। মানুষ কি এরকম রোবোট? যে তারে প্রোগ্রাম দিয়ে চালাবেন?

ইসলামী ব্যাপারটা সহজ। বিচারকের হাতে ক্ষমতা , সে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিবে, জেনারেল গাইডলাইন আছে আইনে, সে তার আক্বল ব্যবহার করতে পারবেনা কেন বলেন। কারন মানুষ তো রোবোট নয়, এমন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে, যেটা আগে থেকে একদম প্রোগ্রামের মতন লেখা যায় না। তাইনা?

ইউরোপে মানুষ বালেগ একটু দেরীতে হয়, তাই ওরা ১৮ বছরকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে। এখন, তাদের দেখাদেখি, আমরাও বানাইছি ১৮ না হলে বালেগ হবেনা । কাজেই আইনের ব্যবহারিক রূপ হইলো, আপনাদের মেয়ে ছেলে দেরকে কে ১৮র কম বয়সী যুবকরা যত খুশী তত হত্যা ধর্ষণ করতে পারবে, আইনগতভাবে এটা বৈধ তাদের জন্য। আপনি আইনী পথে আগালে কিছুই করতে পারবেন না, বড়জোর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে কিছুদিন আরামে থাকবে সে, বের হয়ে আবার রিপীট, ১৮ পর্যন্ত সব মাফ। কতটা হাস্যকর দেখেন? মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায় দেখেন? ইসলাম কত সুন্দর দেখেন, মানুষের ফিজিকাল একটা ইনসিডেন্ট, যা তার হরমোনাল ম্যাচুরিটির পরিচায়ক, সেটাকে বালেগ হবার ক্রাইটেরিয়া বানিয়ে দিয়েছে। এটা যদি ওয়াহী না হয়, তাহলে ওয়াহী কোনটা বলেন?

তো ডকুমেন্টারী দেখছিলাম, যে আফগানে তা.বা. দের উত্থানের পিছনে কারন কি? কেন তারা আবার কামব্যাক করছে। কারন আশরাফগানি সরকার বিচার করে ট্র্যাডিশনাল ইউরোপীয়ান ফ্রেইম ওয়ার্ক অনুযায়ী।

দুই পাঠানের মধ্যে ঝগড়া? এখন আদালতে ঘুরো আর ডেইটের পর ডেইট পড়ো। বছর চলে যায়, কিন্তু রায় হয়না। রায় হলেও সেটা আবার উচ্চ আদালতে পাল্টে যায়। ফাসির আসামি ফাসি চায়, কিন্তু বুঝেনা যে কি হবে কি হবেনা?

অথচ তা.বা. রা? মাত্র ২-৩ সিটিং এ ১ সপ্তাহে রায় দিয়ে বাস্তবায়ন করে দিতো। বোথ পার্টি খুশী ছিল। এজন্য পাঠানরা সমানে তা.বা. তে যোগ দিচ্ছে।

তো , ইউরোপীয়ান আইনের এই বিশাল ত্রূটি বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলোর জন্য একটি আর্শিবাদ ছিল এবং আছে এখনও। শুধু বাংলাদেশে না, সমগ্র মুসলিম বিশ্বে। কারন বিচার নিয়ে সবাই পিসড অফ। ইভেন বিচারক পুলিশ তারাও, বিচারক নিজেও বুঝেনা যে তাকে এত স্টূপিডের মত বিচার কেন করতে হবে, সে রায় দিতে চায় ন্যায়ের পক্ষে, কিন্তু তার হাত পা বান্ধা। ইভেন সেক্যুরাও পিসড অফ। যদিও ওরা এর সমাধান নিয়ে কথা বলতে চায় না, কারন ইউরোপকে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে সুপিরিয়র মনে করে কপি করে। আর সমাধান তো ইসলামে, এ কথা তারা কেমনে বলে।

মানুষের কাছে, ইসলামী আইনের সহজতা এবং এর সিম্প্লিসিটিকে তুলে ধরতে হবে, যেটা করতে অবশ্য ইসলামী দলগুলো এখনও সফল হয়নি। মোটাদাগে এটা একটা বিশাল পয়েন্ট। বিশাল। ইভেন পিউ রিসার্চ সেন্টারে এসেছিল, মুসলিম দেশ গুলো ৮৫-৯৫% ইসলামী সিস্টেম চায়। কজ সবাই জানে, সমস্যা কোথায়। যদিও করা কঠিন।

কোন দল যদি এটা করতে পারে, চিরকাল মানুষ তাদের আদর করে ক্ষমতায় রাখবে।

ইসলামী ব্যক্তিত্বরা, মাথায় রাখবেন। মানুষকে আপনারা যা অফার করতে পারেন, আর কেউ তা পারেনা।

তাহলে দেখুন, ইসলাম কেন দরকার? ইসলামের পতনে বিশ্ব কি হারালো? আশা করি বিশ্ব তা আবার ফিরে পাবে। এই জুলুম বন্ধ হবে।
যাজাকাল্লাহ।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *