যখন কোনো লোক তার ভাইকে বলে হে কাফির, তখন এটা তাদের কোনো একজনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-.
“যখন কোনো লোক তার ভাইকে বলে হে কাফির, তখন এটা তাদের কোনো একজনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে”[১].
.
এই হাদিস এইভাবেই সহিহ বুখারি, আদাবুল মুফরাদ, মুসনাদু ইমাম আহমাদ, সহিহ ইবন হিব্বান ইত্যাদিতে রয়েছে। সহিহ মুসলিমে এভাবে আছে-.
.
أَيُّما امْرِئٍ قالَ لأَخِيهِ: يا كافِرُ، فقَدْ باءَ بها أحَدُهُما، إنْ كانَ كما قالَ، وإلَّا رَجَعَتْ عليه..
.
“যখন কোনো লোক তার ভাইকে বলে- হে কাফির, তখন সে যেমন বলেছে বিষয়টা এমনই হলে এটা তাদের একজন (অর্থাৎ উদ্দীষ্ট ব্যক্তির) দিকে ফিরে, আর যদি তা না হয় (অর্থাৎ সে আসলেই কাফির না হয়) তাহলে (যে বলেছে) তার দিকে ফিরে”[২].
.
সব জায়গাতেই এটা ইবন উমার(রা.) এর একক বর্ণনা। আবু হুরাইরাহ(রা) থেকেও একটা সনদ আছে।.
.

এই হাদিসকে অনেকে যাহিরী/বাহ্যিক অর্থের ওপর ভিত্তি করে এভাবে ব্যাখ্যা করে যে কাউকে কাফির বললে যদি সে সত্যিকার অর্থে কাফির না হয়ে থাকে তাহলে যে বলল সে কাফির হবে! অথচ আহলে সুন্নাতের মূলনীতি হচ্ছে কবিরা গুনাহের কারণে কেউ কাফির হয় না, তাহলে কাউকে কাফির বলে অপবাদ দিয়ে কবিরা গুনাহ করে একজন লোক কাফির হবে কেন?.
.
বাস্তবতা হচ্ছে এই দাবিটা আসলে যাহিরী দাবি, খানিকটা খারিজিপনাও আছে। আহলে সুন্নাতের মুহাদ্দিসগণ এই হাদিসের বহু ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এক উমদাতুল ক্বারী পড়লেও দেখবেন সেখানে ৭টা ব্যাখ্যা আছে।.
.
আবুল ফযল ইয়ায বিন মূসা(রাহ.) বলেন-.
.
أى بمعصية الكذب فى حق القائل إن كذب
.
“(প্রত্যাবর্তন করবে) অর্থাৎ বক্তা মিথ্যে বলে থাকলে তার মিথ্যার গুনাহ ফিরে আসবে”[৩].
.
ইমাম কুরতুবী(রাহ) বলেন-.
.
أي رجع بإثمها.
.
“অর্থাৎ এর গুনাহ ফিরে আসবে”[৪].
.
ইমাম আবু বকর আসরামও(রাহ) বলেছেন-.
.
وَيُمكن أَن يكون الْمَعْنى: بَاء بإثمها..
.
“এটা সম্ভব যে এর অর্থ হচ্ছে এর গুনাহ ফিরে আসবে”[৫].
.
এই হাদিসের শরাহগুলো পড়লে অনেক ব্যাখ্যা সামনে আসবে। স্পষ্ট করে বলে দেয়া যায় না যে ,কেউ কাউকে তাকফির করলে নিজেই কাফির হয়ে যাবে। আক্ষরিকভাবে কাফির হবে এই দাবি সম্পর্কে ইমাম আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী(রাহ.) বলেন-.
.
وقد أطلق الغزالي في إكفار من أكفر أخاه، والمتأخرون إلى كونه إن قالها سابًا شاتمًا لم يكفر، وإن كان من عقيدته ذلك، فهو كافرٌ.
.
“যে তার ভাইকে তাকফির করে আল গাযালী তার ওপর তাকফিরের হুকুম আরোপ করেছেন। আর মুতা’আখখিরীন আলিমগণের মতে যদি এই তাকফির গালি হিসেবে বলা হয় তাহলে তাকফির হবে না, আর যদি সে বিশ্বাস করেই এটা বলে তাহলে সে কাফির হবে”[৬].
.
সব শেষে এই হাদিসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সামাহাতুশ শাইখ আব্দুল আযীয বিন বাযের(রাহ.) বক্তব্য উল্লেখ্ করছি, তিনি বলেন-.

.والمعنى التحذير، ليس معناه أنه كفر أكبر، بل معناه التحذير من هذا الكلام السيئ، وأن صاحبه على خطر عظيم إذا قاله لأخيه، فينبغي حفظ اللسان وأن لا يتكلم إلا عن بصيرة.
.
“এর অর্থ হচ্ছে ভীতিপ্রদর্শন, এর অর্থ মোটেও কুফরে আকবর নয়( অর্থাৎ কাউকে কাফির বললেই কেউ কাফির হয় না); বরং এর অর্থ হচ্ছে এরকম খারাপ কথা হতে ভীতি প্রদর্শন করা- যে ,এরকম কথা যে তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলবে সে বড় ঝুঁকির মাঝে রয়েছে। কাজেই উচিত হচ্ছে- জিভকে সামলাবে এবং দূরদর্শিতা ছাড়া কথা বলবে না”[৭].
.

[১) ইমাম বুখারি(রাহ.), আস সহিহ, হা: ৬১০৪
2) ইমাম মুসলিম(রাহ.), আস সহিহ, হা: ৬০
3) শরহু মুসলিম লি কাযি ইয়ায: ১/৩১৭
4) মুহাম্মাদ বিন মুসা আল লু’লুই, আল বাহরুল মুহিতিস সাজ্জাজ: ২/৩৯০
5) ইমাম ইবনুল জাওযী(রাহ.), কাশফুল মুশকিল: ২/৫৬৭
6) আল্লামা বদরে আলম মিরাঠী(রাহ.), ফাইযুল বারী: ৬/১৫২
7) শাইখ বিন বায(রাহ.), ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব, شرح حديث: “من قال لأخيه يا كافر …”] (উস্তাজ মানজারুল কারিম)

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *