যারা ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করতে চানঃ (পর্ব-২) [ছাত্রবস্থায় বিয়ের প্রস্তুতি]

যারা ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করতে চানঃ (পর্ব-২)
❒ এবারের আলোচনা –
“অভিভাবক বিয়ের ব্যাপারে সহায়তা না করলে, একজন ছেলে যে চরিত্র রক্ষার্থে এবং ফিতনা এড়াতেই ছাত্রবস্থায় বিয়ে করতে চান তার প্রথম থেকেই কীভাবে এগুনো উচিত বা কী করনীয় বা কী প্রস্তুতি রাখা উচিত”
.
একজন ছেলের ক্ষেত্রে বিয়ে করতে শরীয়ত মোতাবেক অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন বাধ্যতামূলক নয়, অভিভাবক ছাড়াও বিয়ে বৈধ হয়।
তবে এমন করা উচিত নয় কারণ অভিভাবক কে কষ্ট দিয়ে বিয়ে করলে বিয়ে বৈধ হয়ে গেলেও,তাদের দুয়া ছাড়া, তাদের কষ্ট দিয়ে জীবনে সুখী হওয়া যায়না এমন অহরহ দৃষ্টান্ত আছে।
অনেকের দেখা যায়, বিয়ের পর সন্তান হয়না, রিজিকে বরকত আসেনা, সংসারে অশান্তি লেগে থাকে ইত্যাদি । হতেও পারে এসব পিতামাতাকে কষ্ট দেবার শাস্তি। আবার হতেও পারে ঈমানের পরীক্ষা, আল্লাহ তায়ালাই সে ব্যাপারে ভালো জানেন, অনুমান থেকে বেচে থাকা জরুরী।
তবে যেসব পাপের শাস্তি পরকাল ছাড়া ইহকালেও পাওয়া যায় এর মধ্যে একটি হলো পিতামাতা কে কষ্ট দেবার শাস্তি। কেবল পরকাল নয় বরং ইহকালেও আল্লাহতায়ালা এই পাপের জন্য লাঞ্ছিত করেন । ইতিহাসে এসেছে অনেক বড় ঈমানদার দেরও মৃত্যুর সময় মুখে কালেমা আটকে গিয়েছিল শুধুমাত্র পিতামাতাকে কষ্ট দেবার জন্য।
//
প্রসংগে ফিরি। যখন বিয়ের ব্যাপারে অভিভাবক সহায়তা করেন না কিন্তু বিয়ে হয়ত প্রয়োজনীয় ও ফরজ হয়ে গিয়েছে তখন সর্বপ্রথম একজন ছেলে যা পারে,
প্রথমত কোন হারামে জড়িত থাকলে (হারাম সম্পর্কে) সেখান থেকে সরে আসুন। হারামের মধ্যে থেকে হালাল প্রাপ্তির আমল বা চেষ্টা ফলপ্রসু হয় না। আর আল্লাহর জন্য স্যাক্রিফাইস করলে আল্লাহ কল্পনার থেকেও উত্তম বদলা দিয়ে থাকেন আলহামদুলিল্লাহ।
.
এবার আল্লাহ্‌ এর কাছে দুয়া করতে থাকুন যেন আল্লাহ্‌ আপনার অভিভাবক কে বুঝ দান করেন। ফরজ ইবাদাত গুলোর পাশাপাশি তাহাজ্জুদে কাদবেন আল্লাহ এর কাছে, সালাতুল হাজত (মনোবাসনা পূরনের আমল) আদায় করবেন একজন আদর্শ দ্বীনি জীবন সঙ্গিনীর ব্যাপারটা যেন আল্লাহ তায়ালা সহজ করে দেন।
কারন আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করলেই যেকোন কিছু মুহুর্তেই বাস্তবায়িত হয়ে যায়, সর্বদা উপলক্ষ্য থাকা প্রয়োজন নয়।
আর এই ক্ষেত্রে দুয়ার থেকে বড় কোন মেডিসিন নেই। দৃষ্টি হেফাজাত করবেন সর্বপ্রকার ফিতনা থেকে এবং প্রতিবার দৃষ্টি হেফাজাতের সময় আল্লাহ কে মনে মনে বলবেন,
‘হে আল্লাহ ! আমি দৃষ্টি দিলেও আপনি ছাড়া আর কেউ জানতে পেত না, শুধুমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য আপনার ভয়েই তা থেকে বিরত থেকেছি, সুতরাং কেবল আপনার থেকেই প্রতিদান প্রত্যাশী। আমাকে দ্রুত বৈধ একজন চক্ষুশীতলকারী দান করুন এবং যতদিন তা না দান করেন আমাকে ধৈর্য্য দিন এবং ফিতনা থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন’
বিপদ আপদে নেক আমলের গুরুত্ব অনেক মাথায় রাখবেন। পরে এগুলোর বিনিময় চাওয়া যায়, এই সংক্রান্ত পোস্ট (আগের লেখা দেখুন)
মুলত দুয়া শিখিয়ে দেওয়ার বিষয় না, যে যত সুন্দর ভাবে দুয়া করতে পারে সে তত লাভবান হয়। দুয়া কবুলের সব মুহুর্ত গুলো লুফে নিন যেমন রাতের শেষ ভাগ, জুম্মার দিন, বৃষ্টির সময়, আযান ও ইকামাতের সময়, ইফতারের সময় ইত্যাদি।
মোস্ট ইমপর্ট্যান্ট দুয়া করতে থাকা যেন বাদ না থাকে, সিচুয়েশন যতই কঠিন থেকে কঠিনতর হোক।
.
আল্লাহ এর উপর ভরসা করে এবার নিজের প্রচেষ্টা শুরু করবেনঃ-
অভিভাবক কে বুঝাবেন যে সে ফিতনার স্বীকার হচ্ছে্ন। বিয়ের প্রয়োজন বোধ করছেন। বিয়ে একটা ইবাদাত, দ্বীন ও চরিত্র রক্ষার বৈধ মাধ্যম তাই বিয়ের কথা বলতে লজ্জার কিছু নেই।
যদি জানানোর পর বাপ মা দু চারটা থাপ্পড় মারেও, গালিগালাজ করেও, কিংবা কবিরাজের কাছে নিয়ে যেতে চান যে ছেলে কে জাদু করা হয়েছে ভেবে তবুও হতাশ হবেন না। অসুস্থ্য সমাজের কাছে আপনি এমনই প্রত্যাশা করতে পারেন ।
.
অভিভাবক দের মধ্যে মা কে দিয়ে আগে শুরু করতে পারেন। ছেলেদের সাথে মা এর সম্পর্ক বাবার থেকে তুলনামুলক সুন্দর হয়।
মা এর কাছে যেয়েই হাত ধরে মনের কথা বলা শুরু করুন, কান্নাকাটি করুন প্রয়োজনে। মা এর চোখে চোখ রেখে মনে মনে দুয়া করতে থাকুন, আল্লাহ এর সাহায্য চাইতে থাকুন।
কিংবা বড় কোন ভাই বোন যারা আপনার প্রতি একটু নরম, সহনশীল তাদের সাহায্য নিন।
যাইহোক অভিভাবককে এই বিষয়ে প্রথম বলতে যাবার আগে ইস্তেখারা করে নিবেন, সালাতুল হাজত সহ দুয়া দরুদ পড়ে যাবেন, আল্লাহ এর কাছে অবশ্যই সাহায্য চাইবেন,
“হে আল্লাহ ! আমার জন্য ব্যাপারটা সহজ করুন, আপনি সহজ না করা পর্যন্ত সব কিছুই কঠিন, হে আমার রব, আপনি আর রহমান – পরম দয়াময়, আমার অভিভাবকের মনে এই (বিয়ের) ব্যাপারে আমার জন্য দয়ার সৃষ্টি করুন”
.
অভিভাবককে বুঝাবেন, চাইলে আপনি আর দশজনের মত প্রেম করতে পারতেন, বিবাহ বহির্ভুত শারীরিক সম্পর্কও করতে পারতেন। আপনি এইসব পথে যাননি সে, কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ এর ভয়ে আর বাবা মা এর মান সম্মানের চিন্তায়। তারা কষ্ট পাবে ভেবে। আপনার পারিবারিক শিক্ষাকে আপনি সম্মান করেন আর প্রত্যাশা করেন যে পরিবারও আপনাকে বুঝবে, আপনার প্রয়োজনকে সম্মান করবে – এটা বলুন।
বুঝাতে থাকুন বিয়ের উপকারিতা, উপযোগিতা, সওয়াব ইত্যাদি সম্পর্কে একবারে কাজ হবেনা,হাল ছেড়ে দেওয়াও যাবেনা। রোজ বলুন, খাবার টেবিলে বলুন , মা এর ঘরে যেয়ে মা কে পা টিপে দিতে দিতে বলুন।
কিংবা একদিন বাবার সাথে আলাদা ভাবে চা এর টং এ যান, শৈশবে বাবার সাথে ঘটা কোন সুন্দর মুহুর্তের স্মৃতিচারন করুন। আন্তরিক হউন এবং তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন। অন্তত একশবার বুঝানোর নিয়ত রাখুন। কোনভাবেই হাল ছাড়বেন না। একদিকে দুয়া + অন্যদিকে নিজের চেষ্টা আপনাকে সফল করবেই ইনশাআল্লাহ।
[সম্ভব হলে তাদের বুঝাতে প্রথম পোস্ট টা (শুরুতে লিংক দেওয়া) কোনভাবে তাদের কাছে পৌছে দিন]
.
যারা বাবা মা এর সাথে ফ্রী না তারা তৃতীয় কোন ব্যাক্তির সাহায্য নিবেন, অবশ্যই এমন কেউ যাকে আপনার অভিভাবক পছন্দ করেন, যার কথার তারা মূল্য দেনঁরএবং উক্ত ব্যক্তি পরহেজগার হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ পরহেজগার মানুষরা ভালো কাজে সাহায্য করতে নিজে থেকে আগ্রহী, তাদের নিজস্ব দ্বীনি টেকনিক থাকে। আল্লাহ এর উপর ভরসা করার পর আপনি তাদের সাহায্য নিতে পারেন।
//
বাসায় দ্রুত আপনার বিয়েতে রাজী হয়ে গেলেও কিন্তু আপনাকে ক্যারিয়ার বিল্ডআপে এবার উঠে পড়ে লাগতে হবে। আগে থেকেই প্রস্তুূতি রাখুন যেন পড়া শেষেই চাকরি পেতে দেরী নাহয়।
ছাত্রবস্থায় সামান্য হলেও উপার্জন এর চেষ্টা করুন, যেই কাজে আপনার প্রতিভা আছে সেটা দিয়েই। অবশ্যই যেন হালাল হয়।
কোন প্রতিভা না থাকলে ফল বেচুন, লোকে কী ভাববে তা যদি আপনিই ভাবেন তাহলে লোকে কী ভাববে ?
কারন আপনার বউ চাইবে সে ডাল ভাত খাক তাও আপনার উপার্জনে, সে স্বর্ণের নয় কাচের চুড়ি পরবে তাও যেন আপনি নিজে কিনে দেন। বউও অবশ্য তেমনই চ্যুজ করতে হবে যে দ্বীনদার হবে, স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী যে অবস্থাতে থাকবে সে অবস্থাতেই আলহামদুলিল্লাহ পড়তে পারে এমন।
বউ ধার্মিক না হলে লাইফ হেল। (এ সংক্রান্ত অন্য পোস্ট আগে দেওয়া হয়েছে), কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত পড়তে চাইলে লিংকঃ
(আগের লেখা দেখুন)

//
ছাত্রবস্থাতেই যেপথে উপার্জন করা যায় যেমন টিউশনি, ফ্রিল্যান্সিং, ছোট খাট স্বল্প পুজিতে বিজনেস ইত্যাদি শুরু করুন, বিয়ে করবার নিয়ত যে সময়ে তার অন্তত বছর দুয়েক আগে থেকে প্রস্তুতি রাখার চেষ্টা করুন।
খাওয়া দাওয়া টা ফ্যাক্ট না কিন্তু বউ এর যখন স্নো ক্রীম লাগবে (কারন সে আপনার জন্যই সুন্দর থাকতে চায়), আচার খেতে ইচ্ছে করবে সে প্রয়োজনেও বাবার কাছে হাত পাতা টা দৃষ্টি কটুর এবং আপনার আত্মমর্যাদা তে লাগা স্বাভাবিক।
অবশ্যই সামান্য কিছু হলেও উপার্জনের নিয়ত রাখবেন। যেকোন হালাল কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে, হোক না নিম্নমানেরই। আল্লাহ তায়ালা বরকত দিয়ে উচ্চ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
.
তবে উপার্জনের পথের ব্যাপারে একেবারেই চিন্তিত হবেন না, এই ক্ষেত্রে স্বয়ং আল্লাহ এর ওয়াদা আছে যে তিনি আপনাকে স্বচ্ছলতা দান করবেন এবং তিনি এটাও ঘোষনা করেছেন , বিবাহিত ব্যাক্তির তাঁর রবের উপর অধিকার আছে যে তিনি তাদের সাহায্য করবেন। একটা পথ আল্লাহ তায়ালা বের করে দিবেনই। আল্লাহর ওয়াদাই একজন বিশ্বাসীর জন্য যথেষ্ট।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
যে কিনা আল্লাহ এর উপর ভরসা করেন, তাঁর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
সর্বশেষ নাসীহাহ – পড়াশোনা, উপার্জন ইত্যাদির থেকেও আল্লাহ এর ইবাদাতের জন্য আলাদা ভাবে সময় বের করে নিবেন, আল্লাহ এর হকের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা দুহাতে নেয়ামত ভরে দিবেন, অন্তরে প্রাচুর্যতা দান করবেন এবং দরিদ্রতা দূর করবেন এমন ওয়াদা দিয়েছেন।
দেখবেন, পড়াশোনা, উপার্জন সব কিছুতেই আল্লাহ সময়ের মধ্যে বরকত দিয়ে দিবেন, টাইম ম্যানেজমেন্ট আল্লাহই করে দিবেন।
অন্যথায় আল্লাহ তায়ালার হুশিয়ারী, আল্লাহ হাতকে ব্যস্ততায় ভরে দিবেন এবং অভাব কখনই দূর করবেন না। যার দরুন উপার্জন করতে যেয়ে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবে। কোন কাজই ঠিক মত হবেনা।
ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই দ্রুত সফল হবেন। আল্লাহ তায়ালা সহজ করুন।
আর সফল হতে আপাতত যে কয়েকদিন লাগে এর মাঝে যদি খুব বেশী শারীরিক সমস্যা বোধ করেন, রাসুল (সাঃ) শেখানো পদ্ধতি, রোজা রাখুন কারন রোজা উত্তেজনা কমিয়ে দেয়। তাছাড়া ইফতারে দুয়া কবুল এর সুযোগটাও পাচ্ছেন সেই ক্ষেত্রে।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *