শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফিতনাহ পূর্ণ বাক্যঃ ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’

⚠ “শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফিতনাহ পূর্ণ বাক্যঃ ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’…!!!”
✅ ‘শুধু ইসলাম-ধর্ম নয়, দ্বীন ইসলামের অনুসরণ করুন…’
☑ || ‘একটি বিশ্লেষণ’, ‘দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন’ ও ‘চেতনার উত্তরণ’ ||

[আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করি, আপনি কোনটার অনুসরণ করেন ? ইসলাম ধর্ম ? নাকি ইসলামী জীবনব্যবস্থা ? আপনার উত্তর কি হবে ? আপনার উত্তর যদি হয় ইসলাম ধর্ম, তবে এই লেখাটি পড়ার আপনার সামান্যতম প্রয়োজন নেই, দয়া করে এড়িয়ে চলুন।

যদি কিনা ধৈর্য ধরে বড় লেখা পড়ার, কিংবা সূক্ষ্মভাবে কোন কিছু নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারার শক্তি না থাকে, তবে এই লেখাটিকে এড়িয়ে যাওয়াই উচিত হবে, কেননা এই লেখাটির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ক্রিটিক্যাল থিংকিং, বা আপনাকে গভীরভাবে ভাবতে শেখানো, আপনাকে নতুনভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করা, আপনাকে সামান্য চিন্তার খোরাক দেওয়া বা আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে সামান্য পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা; শুধুমাত্র বস্তাপঁচা বড়-লেখা ভর্তি বস্তা-ভরা জ্ঞান দেওয়া নয়…। আপনাকে সামান্য ভাবতে পারলেই আমি সফল ইনশাআল্লাহ…।

তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় কোনো রেফারেন্স দেইনি, যাতে করে আপনাদের ব্যক্তিগত গবেষণার তার উন্মোচিত হয়…। এর সত্যতা যাচাই করে দেখতে ও আরো জানতে আপনাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়…।]

‘ইসলাম শান্তির ধর্ম…!!!’ আহা ! কি সুন্দর একটি বাক্য, অসাধারণ। কিন্তু পুরো লেখাটি নিয়ে যদি আপনি সামান্যতম চিন্তা করে দেখতে পারেন, তবে খুব শীঘ্রই আপনি বুঝতে পারবেন, এই বাক্যটি বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহর পতনের অন্যতম একটি কারণ। এই বাক্যটিই বর্তমান সময়ে শতাব্দীর অন্যতম ফিৎনাহ পূর্ণ বাক্য, মুসলিম উম্মাহকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে, শুধুমাত্র কিছু সামান্য আচার-আচরণ, রীতিনীতি ও সংস্কারের সমন্বয়ে সৃষ্ট (অসম্পূর্ণ ইসলাম) ধর্মের মাঝে ডুবিয়ে রাখতে, বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রুসেডে এই বাক্যটির জোড়া মেলা ভার…!! আগেই বলেছি, এই লেখাটি ইসলামী জীবনব্যবস্থা নিয়ে, শুধুমাত্র ধর্ম’ নিয়ে না…।

প্রশ্ন হলো, ‘ধর্ম’ ও ‘জীবনব্যবস্থা’ এই শব্দ দুটি দ্বারা কি বুঝায়, কি পার্থক্য রয়েছে এদের মাঝে ? মূলত শুধুমাত্র ‘ধর্ম’ বলতে বুঝায় কিছু আচারপ্রথার মিশ্রণ, কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাস-আকিদাহ, নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা থেকে উদ্ভূত নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি-ওয়ার্ল্ডভিউ ও কিছু কার্যক্রমের সমন্বয়কে…। আর ‘জীবনব্যবস্থা’ বলতে বোঝায় জীবনের প্রতিটি দিক যেমন, একদম সূক্ষাতিসূক্ষ ছোট ছোট বিষয় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকারব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, কূটনীতিবিদ্যা, নির্দিষ্ট পরিবারব্যবস্থা ও নিজস্ব মূল্যবোধ-নৈতিকতার মাপকাঠিসহ সমাজব্যবস্থা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সমস্ত দিকের সমন্বয়কে…।

সনাতন ধর্ম একটি ধর্ম, খৃস্টবাদও একটি ধর্ম, প্যাগানিজম বা পৌত্তলিকতার ধর্মগুলোও ধর্ম, কিন্তু তারপরও সমস্ত কিছুতে ইসলামের নাম আগে চলে আসে…! সন্ত্রাসবাদ, নারী-নিগ্রহ, ব্যক্তিস্বাধীনতায় বাধা, মুক্তজ্ঞান চর্চায় বাধা, অন্ধবিশ্বাস, মৌলবাদ, তরবারির মাধ্যমে ধর্ম প্রচার… ইত্যাদি সবকিছুতেই…!!! কেননা ইসলাম অন্যান্য ধর্ম’গুলোর মতো নয়, এটি একটি সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা; আর ধর্ম’ ও জীবনব্যবস্থা’ এই দুটির ধারণা সম্পূর্ণ আলাদা, আর এই পার্থক্যটাকেই নষ্ট করে দেয় উপরের “ইসলাম শান্তির ধর্ম” বাক্যটি…!!! এ-বাক্যটি দ্বারা আপনারা কি বুঝাতে চান, আপনারা নিজেরাই জানেন না হয়তোবা।

আপনি চাইলে একই সাথে একজন ‘ধর্মে বিশ্বাসী’ (ইসলাম ব্যতীত) এবং পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র’ ইত্যাদির ওপর আস্থাশীল হতে পারেন… কিন্তু ইসলাম একটি সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা হওয়ায় ইসলাম গ্রহণ করতে হলে আগে এগুলোর প্রত্যেকটিকে বর্জন করে, এগুলোর প্রত্যেকটি সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তারপর ইসলাম মানতে হবে [লা ইলাহা’/ আল্লাহ ব্যতিরিকে অন্য কোন ইলাহ/তাগুত বর্জন’ এর ব্যাখ্যা…]। আর ইসলামী জীবনব্যবস্থার মানতে যাওয়ার মূল সমস্যা এটাই…। কিন্তু “ইসলাম শান্তির ধর্ম” বাক্যটি দ্বারা এগুলোর প্রতি সহনশীলতা পোষনের একটি মনোভাব তৈরি হয়… অথচ আল্লাহ কুরআনে বলেন,

“আর তুমি কিতাল (লড়াই/জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) চালিয়ে যাও, যতোক্ষণ না ফিতনাহ দূরীভূত হয়…।” [সূরা আনফাল, আয়াত ৩৯]

অর্থাৎ, একই সাথে গণতন্ত্র-ধনতন্ত্র বা পুঁজিবাদ-সমাজতন্ত্রের মতো ফিৎনাহ, কিংবা জাতীয়তাবাদের মতো হারাম বিষয় ও ইসলাম থাকতে পারেনা… এটা সম্ভব না, হয় কুরআনের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য এগুলো সব বিলুপ্ত হবে, নয়তোবা মুসলিমদের ঈমানী শক্তির দীনতা বা সামরিক শক্তিহীনতার কারণে ইসলাম বিলুপ্ত হবে…।

ইসলামের ইতিহাস পড়ে দেখুন, এ-ব্যতীরেকে তৃতীয় কোনো পথ নেই… বাংলাদেশের এগুলোর প্রত্যেকটিই আছে, আবার শতকরা ৯০ ভাগ জনসংখ্যা মুসলিম…!!!!! গোলমালটা ঠিক কোথায়, আমার মাথায় ধরে না…।

✅✅✅ ইসলাম হলো একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা, এতে ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ’ বা ‘আল্লাহ এর জন্য মিত্রতা স্থাপন ও কেবল আল্লাহর জন্যই বৈরিতা পোষণ’ এর মতো দূরদর্শি আদিকাহ থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি দিকই উপস্থিত। কিন্তু যখন ইসলামকে আপনি শুধু একটি ‘ধর্ম’ হিসেবে চিহ্নিত করবেন, তখন ইসলামের ৯০% অংশই হারিয়ে যাবে, তখনই আর অর্থব্যবস্থা, সরকারব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থার কনসেপ্ট আপনার মাথায় ঢুকবে না; তখন এগুলো দেখে মনে হবে ধর্মের ভিতরে আবার এগুলো কি…!!!

বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রুসেড শুরু হওয়ার সময় খ্রিস্টানরা উপরের বাক্যটি আমাদের এজন্যই শিখিয়ে দিয়েছিলো… আর তাই পুরো বিশ্বে পুজিবাদের গোলাম, সন্ত্রাসীদের দ্বারা মুসলিমরা সবচাইতে নির্যাতিত-নিপীড়িত হওয়ার পরও ‘সন্ত্রাসী/উগ্রবাদী/মৌলবাদী’ হিসেবে মুসলিমরাই চিহ্নিত…। আর একই সাথে নিজেকে মুসলিম’ ও সন্ত্রাসবিরোধী’ বলে পরিচয় দিতে গিয়ে তৈরি হয়েছে পরিচয়ের সংকট, যা জন্ম দিয়েছে পরাজিত মানসিকতার।

কেউ কোন রাষ্ট্র’ বা সে রাষ্ট্রের সংবিধান’ এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তার মতাদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে তাকে বলা হয় ‘বিদ্রোহী-জঙ্গি, রাষ্ট্রদ্রোহী’… আর সেখানে আমরা তাদের মেনে চলা সকল প্রকার ‘মানবরচিত জীবনব্যবস্থা/ সংবিধান’ ‘পুরোপুরি’ ধ্বংস’ করে দিয়ে’ কেবল আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চাই, পুরো একটি সভ্যতা ধ্বংস করে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি সভ্যতা তৈরি করতে চাই,, এতে করে আমরা তাদের চোখে ‘সন্ত্রাসবাদী’ পরিচিত হবো না তো কি ‘সাধু’ হিসেবে চিহ্নিত হবো…???

জর্জ বুশ একটা কথা বলেছিলেন, “সিদ্ধান্ত তোমাকে কোনো একটা নিতেই হবে, হয় তুমি আমাদের সাথে, নয়তোবা সন্ত্রাসবাদের সাথে।”
আপনি কোন দলের সাথে থাকবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা, অ্যামেরিকান পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদের সাথে ? নাকি সন্ত্রাসবাদের নামে ঢাকা পড়ে যাওয়া দ্বীন ইসলামের ?

⚠ || চক্রান্ত || ⚠

যতটুকু জানা যায়, মনস্তাত্ত্বিক ক্রুসেড শুরু হওয়ার সময়ে, ইসলামে আরবিতে নাজিরা কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত’ ও গুরুত্ব’ বিষয়ক অসংখ্য জাল হাদিস তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল মুসলিমদের মাঝে, খ্রিস্টবাদী ক্রুসেডাররাও সম্ভবত চেয়েছিল যে মুসলিমরা বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতের মগ্ন হয়ে থাকুক… তাদের চক্রান্ত যে কতটা সূক্ষ… সেটা এখানেই বোঝা যায়। তাদের পরিকল্পনা মাফিক আমরাও ব্যস্ত হয়ে গেলাম না বুঝে তন্ত্র মন্ত্র পাঠের মতো বেশি বেশি আরবিতে নাজিরা কুরআন তিলাওয়াতে… আর আড়ালে যে ‘কুরআন বুঝে পড়া’ এবং ‘সেটার বিধিবিধান ও আইন বাস্তবায়নের কনসেপ্ট’ পুরোটাই মাটিচাপা পড়ে গেল, সেদিকে কোন খেয়ালই থাকলো না আমাদের, প্রাথমিকভাবে তারা এতেই সফল।

ক্রুসেডের ইতিহাস বিস্তারিত না জানলে মনস্তাত্ত্বিক ক্রুসেডের আগা-মাথা বোঝানো সম্ভব না। তবে এতটুকু জানুন যে, এটা হচ্ছে একটা বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই… যেটার মধ্যে আমরা মুসলিমরা ইহুদিবাদী-খ্রৃষ্টান ও নাস্তিক্যবাদী-পুঁজিবাদী স্যাটানিক-ফ্রিম্যাসনদের সাথে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত৷ খ্রীস্টান ক্রুসেডাররা এই বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াউ শুরু করেছিল, কেননা তারা দীর্ঘ সময়ের ক্রুসেডে বুঝতে পেরেছিল যে মুসলিমদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয়। কোন এক রাশিয়ান সেনা কমান্ডার বলেছিল,

“মুসলিমদের সশস্ত্র যুদ্ধে পরাজিত করা কখনোই সম্ভব নয়, কেননা বন্দুকের নলের মাথায় আমরা দেখি মৃত্যু, আর মুসলিমরা তাকে জান্নাত…।”

সালাফে সালেহীনের আল্লাহর নিকট সব সময় দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাদের শাহাদাতের মৃত্যু দেন, যেন আল্লাহ তাদেরকে কাফেরদের সাথে জিহাদরত অবস্থায় শাহাদাতের অমীয় সুধা পানের সুযোগ করে দেন… আর আমরা দোয়া করি আল্লাহ যাতে আমাদের মৃত্যু দেন সিজদায়…!!! চিন্তার দীনতা-হীনতা, পরাজিত মানসিকতা ও সালাফে সালেহীনের ভাবনার দুনিয়ার সাথে আমাদের ভাবনার দুনিয়ার ফারাকটা বুঝতে পেরেছেন…? তাদের চিন্তা-ভাবনা সবকিছু ছিল ‘ন্যায়বিচার, ইনসাফ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠা কেন্দ্রিক’… আর আমাদের চিন্তাভাবনা সব হলো ‘শান্তি কেন্দ্রিক’ যদি শান্তির সাথে অন্যায়-অবিচার বাস্তবায়িত হয়, যদি জাতিসংঘ-ন্যাটো জোটের সাথে মিলে মুসলিম নিধনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাতে সমস্যা কি, শান্তির পথে ইসলামও তো শান্তির কথা বলে, তাই না ?

☑ || ইসলাম শান্তির নয়, ন্যায়পরায়ণতার ধর্ম || ☑

“ইসলাম অর্থ শান্তি” আর “ইসলাম শান্তির ধর্ম” এই দুইটি বাক্যই আমাদের ইসলামের নববী মানহাজ ও ইসলামের নববী পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে…। কুরআন-হাদিসে সরাসরি কোথাও এই বাক্য দুটি পাবেননা, পাবেন ন্যায়বিচার-ইনসাফের কথা, ইসলাম শান্তির ধর্ম নয়, ইসলাম ন্যায়পরায়নতা ও সুবিচারের ধর্ম, ন্যায়পরায়নতা প্রতিষ্ঠায় শান্তি ভঙ্গ করার অসংখ্য নজির রয়েছে সালাফে সালেহীনের জীবনে, রাসুল (স.) এর সীরাতে। ইসলাম সমতার ধর্ম নয়, ইসলাম বাস্তবতার ধর্ম, তাই ইসলাম নারী-পুরুষ, সমকামী-উভকামী, শিশুকামী-মৃতকামী’ বা বড়-ছোট সবাইকে সমতা দেওয়ার কথা বলে না, বলে ন্যায়বিচার দেওয়ার কথা, ইসলাম কোন বাস্তবতা বিবর্জিত ধর্ম নয়। এবিষয়ে সংক্ষেপে জানতে ইউটিউবে Ummah Network চ্যানেলের ‘ইসলাম কি শুধুই শান্তির ধর্ম ?’ টাইটেলের ভিডিওটি দেখতে পারেন। আদর্শিকভাবে আমি এই ইউটিউব চ্যানেলটিকে সমর্থন করলেও, কার্যতগতভাবে সমর্থন করিনা।

⚠ || শত্রুর পরিচয় || ⚠
যদি জিজ্ঞাসা করি, বর্তমান সময়ে ইসলামের সবচাইতে বড় ও ক্ষতিকত শত্রুকে কে, বা কি ? অধিকাংশই উত্তর দিবে নাস্তিকতা কিংবা জঙ্গিবাদ, অথবা আমেরিকা…। আর এর থেকেই বুঝা যায়, আমরা বাস্তবতা সম্পর্কে কতোটা অজ্ঞ, কতোটা মূর্খ। যদি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির বিবেচনায় বর্তমানে ইসলামের সবচাইতে বড় শত্রুর কথা বলা হয়, তবে বর্তমান সময়ের সকল সচেতন আলেম-উলামারা একমত হয়েছেন, সেটা হলো আমাদের মুসলিমদের মধ্যেই থাকা, আমাদের অবচেতন মনের জগতের মধ্যেই বিরাজমান “পরাজিত মানসিকতা…!!!”

? || পরাজিত মানসিকতা || ?
পরাজিত মানসিকতা’ আসলে কি বা কেন, সেটা নিয়ে বলতে গেলে এরকম আরো দু-একটি লেখা দরকার হবে, সেটা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলতে চাই না, যদি এ বিষয়ে সত্যিকার অর্থে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই-অবশ্যই আসিফ আদনানের লেখা “চিন্তাপরাধ” বইটা পড়ে দেখবেন। চিন্তার জগতে ঝড় উঠাতে, ভাবনার জগতে আলোড়ন সৃষ্টিতে, আমাদের চোখের উপর থাকা পশ্চিমা লেন্সের আভাকে সরিয়ে বাস্তবতায় ফিরে আসার জন্য বইটা Must… এটা কোন ইসলামী বই নয়, তবে মুসলিমদের জন্য লেখা বই।

সবকিছুতে পশ্চিমা মূল্যবোধকে ধ্রুব ধরে নিয়ে ইসলাম, কুরআন, নাস্তিকতা, নারীবাদ, গণতন্ত্র, পুজিবাদকে বিচার করার যে মানসিকতা, সেটাই হচ্ছে পরাজিত মানসিকতা। যদি কখনো আপনি কুরআন-হাদীসে বিজ্ঞান খুঁজে থাকেন, যদি কখনো আপনি ইসলামে কোন নারীবাদী হাদিস-আয়াত-বিধান খুঁজে থাকেন, যদি গণতন্ত্রকে ইসলাম কায়েমের পদ্ধতি মনে করে থাকেন, যদি কখনো কোনো সুন্নত বা ইসলামের কোনো বিধানকে বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণের চেষ্টা করে থাকেন… বা বলে থাকেন, ‘এটা বিজ্ঞানসম্মত সুন্নাত, কুরআনের বৈজ্ঞানিক আয়াত এটি, এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে’ তবে আপনি নিশ্চিত থাকুন যে আপনার অবচেতন মনের গহীনে পরাজিত মানসিকতা খুব শক্তভাবে শেকড় গেড়ে রয়েছে, আর এতক্ষণে আমি কেবলমাত্র পরাজিত মানসিকতার শত শত উদাহরণ এর একটি উদাহরণ দিলাম। হ্যা, বিজ্ঞান দিয়ে কুরআন-সুন্নাহকে বিচার করার মানসিকতাও একটা উদাহরণ। অমুসলিম’ কিংবা নাস্তিক’ দাওয়াহ এর ক্ষেত্রে অবশ্য বিজ্ঞানের কথা ভিন্ন, সেটার হিসাব এখানে হবে ন।

কোন বিজ্ঞানের ধারণা যদি ইসলামের কোন বিধানের বিরুদ্ধে যায়, আপনি কে সেটা পালন করবেন না ? কোন সুন্নত যদি বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়, আপনি কি সেটা পালন করা বন্ধ করে দিবেন ? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন, আর সঠিক উত্তরটা জানতে অবশ্যই “চিন্তাপরাধ” বইটি পড়ে দেখবেন আশা করি।

? || মিডিয়া || ?
পরাজিত মানসিকতার পর দ্বিতীয় সবচাইতে বড় শত্রু হিসেবে আমি যেটা জানি, সেটা হলো ‘সাইবার ক্রুসেডার’ বা ‘মিডিয়া”। এটার সূচনাটা সহজেই বুঝবেন, কিন্তু বাকি ৯৫% এখানে বোঝানো সম্ভব না। পশ্চিমারা ইসলাম ও মুসলিম’কে সাইজ করতে মিডিয়াকে সবচাইতে বেশি ব্যবহার করে থাকে, যখন মিডিয়াগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বলে, মাদ্রাসাকে মাদকের আড্ডাখানা, হুজুরদের ধর্ষণের যন্ত্র বলে, পর্দাকে ব্যাক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে… তখন সরাসরি আমরা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করি সত্য। কিন্তু প্রতিনিয়ত ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে আমাদের একটু একটু করে নিজের অজান্তে খড়গহস্ত করে তোলার জন্য যে প্রতিনিয়ত আমাদের অবচেতন মনে সাবলিমিনাল মেসেজগুলো দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে কি আপনি সচেতন ?

তারা যখন ইসলামের কোন বিধানের বিরোধিতা করে, আমরা সরাসরি তার বিরোধিতা করি, কিন্তু তারা যখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলে, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বলে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলে, আমরা ঠিকই সুরে সুর মিলিয়ে বলি এগুলো ইসলামে নেই, এগুলো ইসলাম না… বাহ ! অসাধারণ ! জঙ্গিবাদী দলগুলোর কার্যক্রমগুলো হয়তোবা শরীয়াহসম্মত নয়, কিন্তু তাই বলে সেই কুফফার মিডিয়ার সাথে সহমত পোষণ এর অনুমতি আপনাকে দিল কে ? তারা এসব নিউজ এর ভিতরে সাবলিমিনাল মেসেজের মাধ্যমে যে আমাদের জন্য বিভ্রান্তিকর কিছু মিশিয়ে দেবে না, বিভ্রান্ত ৭২ দল ব্যতীরেকে জান্নাত প্রাপ্ত সেই একমাত্র দলের আকিদাহ বিরুধী কিছু মিশিয়ে দেবে না, এটার গ্যারান্টি কই ? বিশ্বাস করবেন না জানি, প্রথম আলো, জনকন্ঠ, একুশে টিভি, বিটিভি, বিশেষ করে বিবিসি বাংলা’ ও ডিবিসি-একাত্তর মিডিয়া, বর্তমান বাংলাদেশে প্রকাশ্য যদি ইসলামের কোনো প্রকাশ্য শত্রু থাকে, এগুলো হলো সেই প্রথম কাতারের শত্রু গুলোর নাম…।

? || “পুজিবাদ : দ্য গ্রেট” || ?
এখন বলতে চাই ইসলামের সবচাইতে ‘Hottest’ শত্রুর নামঃ “পুজিবাদ বা ধনতন্ত্র”… একে মূলত এই সিরিয়ালে রাখা যায়না, কেননা উপরের দুইটি বিষয় সৃষ্টির কারণ কেবলমাত্র এই পুজিবাদকে টিকিয়ে রাখার এজেন্ডা…। পুজিবাদের ভৌতিক কাহিনী নিয়ে এরকম দশ-বারোটা পোস্ট লিখলেও তা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে… তাও কিছু কথা বলতে চাই।

ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বিরোধ অনেক পুরনো, মূলত ধনতন্ত্র বা পুজিবাদের সামনে সমাজতন্ত্রের মতো অন্যান্য যেসব শত্রু চলে এসেছে, পুজিবাদ তাকে একদম লেংটা করে, নাকানি-চুবানি খাইয়ে, উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছে। গত শতাব্দীতে দীর্ঘ সময় ধরে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে চলমান বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত এসে সমাজতন্ত্র পরাজিত হয়। অর্থাৎ পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রের বিরোধিতা করার মতো যে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, তাকে একদম কবর দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পুঁজিবাদ খুঁজে দেখে তার পরবর্তী শত্রুকে হবে… তখন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে তারা সাপ নয়, কুমিড় নয়, আস্ত ডাইনোসর খুঁজে পায়…।

পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল মতাদর্শ, ধর্ম, সভ্যতার মূল্যবোধ-নৈতিকতা’কে হিসাব করে দেখা গেল, পৃথিবীর বুকে একমাত্র ‘ইসলাম’ই হচ্ছে ‘এমন কিছু একটা’, যা কিনা পুঁজিবাদের সাথে টক্কর তোমার সম্পূর্ণ ক্ষমতা রাখে…!!! অবশেষে এতদিনে ইসলামের উপর পূর্ণরূপে পড়লো শকুনের চোখ…!!! হিন্দুত্ববাদ, খৃষ্টবা কিংবা অন্যান্য কোন ধর্ম-সভ্যতা আর পৃথিবীতে নেই, যে কিনা পুঁজিবাদের জন্য ‘ভয়ের কিছু একটা’ হতে পারে… তবে শুধুমাত্র ইসলাম-ই হলো সেই একমাত্র কিছু একটা, পুঁজিবাদের বিপরীতে যার প্রত্যেকটি সেক্টরে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে, প্রত্যেকটি মাপকাঠিতে, কিছু না কিছু একটা রয়েছে, যা কিনা পুঁজিবাদের সে ক্ষেত্রটিকে বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম। আর এর থেকেই শুরু হলো মহাযুদ্ধ।

RAND আরও গবেষণা করে বুঝতে পারলো, পৃথিবীর বুকে এই মুহূর্তে আমেরিকান ভোগবাদী-পুঁজিবাদের জন্য সবচাইতে বড় হুমকি হলো স্বয়ং ইসলাম, কোনো একক ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠী নয় ! মুসলিমরা নয় ! হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যামুয়েল পি হান্টিংটন এ-দুই সভ্যতার সংঘাতকে সংক্ষেপে তার ‘দ্য ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন’ বইয়ে তুলে ধরেছেন এভাবে,

“ইসলামী মৌলবাদ পশ্চিমাদের জন্য আসল সমস্যা না; বরং সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন সভ্যতার ধারক হওয়ার কারণে স্বয়ং ইসলামী তাদের আসল সমস্যা। পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসলাম উভয়েই মনে করে তারা অন্য সভ্যতার চেয়ে উত্তম, এবং অন্যদের উচিত তাদের সভ্যতা সংস্কৃতিকে গ্রহণ করা, তারা আরো মনে করে, তাদের এই অবস্থান অন্য মানুষদেরকেও মেনে নিতে বাধ্য করা উচিত। ইসলাম এবং পশ্চিমা বিশ্বের এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পেছনে এটাই হলো মূল কারণ।”

অর্থাৎ অধ্যাপক সাহেব ইসলামকে কোন একটি সাধারণ’ বা একক ধর্ম’ হিসেবে না, বরং একটি আলাদা সভ্যতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি CIA, কিংবা আমেরিকান সেনাবাহিনীকেও ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করেননি, বরং খোদ পশ্চিমা সংস্কৃতি, সভ্যতা ও মূল্যবোধকেই ইসলামের জন্য শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একইভাবে আরো উপাত্ত তারা তিনি দেখিয়েছে, কেন পশ্চিমা সভ্যতার জন্য সবচাইতে বড় হুমকি পুরো ইসলাম’, কোন ইসলামী সংগঠন, কোন ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠী, কিংবা ইসলামিক মতাদর্শ নয়, খেলাফত ব্যবস্থার বাস্তবায়ন কিভাবে পশ্চিমা সভ্যতা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যেকোনো মুহূর্তে…।

পুঁজিবাদ ও ইসলামী সভ্যতা’ বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীর বুকে তখনই শান্তি আসা সম্ভব, যখন এই দুইটি সভ্যতার মধ্যে যেকোনো একটি সভ্যতা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে…। এর আগে না। আর সেজন্যেই ইসলামকে একদম মূল থেকে উপড়ে ফেলার জন্য আজ পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্ব এমন অসভ্য পদক্ষেপ নিয়েছে, যেগুলোকে চিনতে না পেরে আমরা সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছি, এবং তাদের সফলতা নিজেরাই খুলে দিয়েছি… মুসলিম হিসেবে এগুলো জানা যেমন আমাদের অবশ্য কর্তব্য, তেমনি মুসলিম হিসেবে এবিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আসিফ আদনানের “চিন্তাপরাধ”, ডঃ আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস এর “সভ্যতার সংঘাত” এবং অবশ্যই-অবশ্যই ডাঃ শামসুল আরেফিনের “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০” বই তিনটি পড়ে দেখতে বলবো।

পুঁজিবাদের নিজস্ব যে ওয়ার্ল্ডভিউ, ইসলামের ওয়ার্ল্ডভিউ ঠিক তার বিপরীত। পুঁজিবাদ যেখানে ক্ষমতা অর্জন করে শুধুমাত্র সম্পদ কুক্ষিগত রাখতে বলে, ঠিক তার বিপরীতে ইসলামী নিয়ম হলো সম্পদ কুক্ষিগত না করে সদাকাহ এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়া। বর্তমান পৃথিবীর ৫০% সম্পদের মালিক কেবল ১% ধনিক শ্রেণির মানুষ, এটাই পুঁজিবাদ, অথচ বিপরীতে ইসলামী খিলাফতকালে মুসলিম জাহানের প্রধান নেতা বা আমীর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পোশাক পর্যন্ত ছিল তালি দেওয়া…!!! এটাই ইসলাম। আগেই বলেছি, প্রতিটি বিষয়ে পুজিবাদ ইসলামের বিপরীত, আর তাই মনস্তাত্ত্বিকভাবে ও সশস্ত্রভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র ইসলামকে সাইজ করার উদ্দেশ্যেই পুঁজিবাদের যাত্রা চলছে এখন।

◻ || নারীবাদ, ব্যক্তিস্বাধীনতা || ◻
কথাটা অদ্ভুত হলেও সত্য, মধ্যযুগের ইউরোপে নারীদের প্রতি হওয়া মারাত্মক ও বিভৎস পর্যায়ের নারী নিগ্রহ, নারী নির্যাতন ও নানা উছিলায় নিরীহ নারীদের ধরে ধরে ধর্ষণ, ও হত্যা করার বিপরীতে নারীদের অধিকার আদায়ে ও তাদের মানুষ হিসেবে চিত্রিত করার জন্য আসলেই নারীবাদের প্রথম ওয়েভটির দরকার ছিল। তবে প্রথম দু-একটি ওয়েভের পরে এখন নারীবাদ কাজ হচ্ছে শুধুই পুঁজিবাদ প্রচারের জন, পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখার মাধ্যম হিসেবে। আর পুজিবাদি নারীবাদকে শক্তিশালী করতে তৈরি করা হয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতা’ ও ট্রান্সজেন্ডার’ এর মতো ধারণার, বারবার ব্যবহার করা হয়েছে বিজ্ঞানকে… সৃষ্টি করা হয়েছে ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনের মতো নারী-পুরুষের সংজ্ঞাকে ঝাপসা করে দেওয়া বিকৃত বিষয়ের…। আমরা সাধারণভাবে কয়টি লিঙ্গের কথাই বা জানি; তিনটা, সর্বোচ্চ চারটা। নারী, পুরুষ, হিজরা (ইন্টারসেক্স) এবং ট্রান্সজেন্ডার, সেটাও আবার অনেকে জানে না। অথচ বৃটেনের সংবিধানে মোট আইনিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এরকম ৩১ টি লৈঙ্গিক পরিচয়কে…!!!!! চিন্তাপরাধের এক অধ্যায়ে মূলত এর বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এরকম সবগুলো চ্যালেঞ্জের একটাই সমাধান, তা হলো নিজেদেরকে পশ্চিমা মূল্যবোধ থেকে গড়ে তোলার চেষ্টা না করে, পশ্চিমের বাস্তবতা সম্পর্কে নিজেদের সতর্ক করা, পশ্চিমের চক্রান্ত গুলো সম্পর্কে সকলকে সাবধান করা।

▪ || ইসলামীকরণ || ▪
পশ্চিমাদের আরেকটি অসাধারণ চাল হলো অনৈসলামিক বিষয়ের ইসলামীকরণ করে, মুসলিমদের মুলো দেখিয়ে চুপচাপ নিষ্ক্রিয় করে রাখা। যেমন আল্লাহ ফিতনাহ নিরসন ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসেবে আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের দাওয়াত দিতে বলেছেন, দাওয়াতে কাজ না হলে ইলমি জিহাদ বা বিতর্কবিদ্যার সাহায্য নিতে বলেছেন, তাতেও কাজ না হলে সশস্ত্র জিহাদ করা ফরজে কিফায়া।

প্রথমটিতে কাজ হচ্ছে না আমাদের নিজস্ব দুর্বল কাঠামোগত সমস্যার জন্য… দ্বিতীয় টি করার জন্য প্রতিবার তৈরি করে দিয়েছে নারীবাদী-নাস্তিক্যবাদীদের… ফলে আমরা নারীবাদ-নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদির মূল কাঠামোকে খন্ডন না করে ব্যস্ত হয়ে আছি তাসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদ কিংবা আসিফ মহিউদ্দিনের মতো নিম্নমানের ভাড়াটে মালের পিছনে… ব্যস্ত হয়ে আছি তাদের যুক্তি খন্ডাতে ও তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে। অথচ করণীয় ছিল ভিন্ন কিছু… ডাঃ শামসুল আরেফীন স্যার তার “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০” বইতে যা কিছুটা করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।… আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রেও কাজ না হলে সশস্ত্র জিহাদ ফরজে কিফায়া হিসেবে রয়েছে, এটাই শেষ ঢাল। অথচ পশ্চিমের গোলাম মিডিয়া শব্দধর্ষণের মাধ্যমে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ এর মতো একটি ফরজ বিধানকে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ-মৌলবাদ ইত্যাদি ট্যাগ দিয়ে মানুষের মনে এবিষয়ে ভীতি সৃষ্টি করে দিয়েছে…। আর যারাই বা এবিষয়ে জানে, তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে কেবলমাত্র ইসলামী গণতন্ত্র, ইসলামী প্রজাতন্ত্র’ ইত্যাদি ফাপা বুলির কারণে…!!!

কোনো অনৈসলামিক বিষয়কে যতোই ইসলামীকরণ করা হোক, সেটা কখনোই ইসলামী কিছু হয়ে যায় না। যেমন নেদারল্যান্ডের ইসলামী পতিতালয়, সুইডেনের ইসলামী নাইট ক্লাব, ভারতের ইসলামী (মদের) বার ইত্যাদি তেমন ভিত্তিহীন, ঠিক তেমনি ইসলামী রাজতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্রও ভিত্তিহীন…। সত্যিই অদ্ভুত, ইসলামকে ঠুসানোর জন্য যে গণতন্ত্রের জন্ম হলো, সেই গণতন্ত্র দিয়েই আমরা ইসলামকে পুনরুদ্ধার করতে চাই…!!! পশ্চিমারা আমাদের শিখিয়ে দিলো, ‘আমাদের ডমিনেট করতে তোমরা গণতন্ত্র ব্যবহার করো’ আর তাতে বিশ্বাস করে আমরা ঠিকই পশ্চিমাদের ডমিনেট করতে গণতন্ত্রের ব্যবহার করছি…!!! আমাদের মস্তিষ্ক কি পোকায় খেয়ে ফেলেছে…???

অনেক কথাই বলার ছিল, কিন্তু বলার সুযোগ নেই, লেখা বেশি বড় হয়ে গেলে কেউই পড়বেন না জানি, এই লেখার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আপনাদের সামান্য একটু ভাবনার খোরাক দেওয়া, চিন্তায় আলোড়ন সৃষ্টি করা। আর মুসলিম ভাই হিসেবে শেষ-মেষ একটা দাবি জানিয়ে যাবো, “চিন্তাপরাধ” “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০” ও “সভ্যতার সংকট” এই তিনটি অবশ্যই পড়ে দেখবেন…। অন্তত চিন্তার জগতে দাসত্বের শিকল থেকে বেরিয়ে আসতে এই তিনটি বই কিছুটা হলেও সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ। আর যদি শুধুমাত্র ধর্মের হিসাব বাদ দিয়ে ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চান, তবে অবশ্যই অবশ্যই মাওলানা তারেকুজ্জামানের “ইসলামী জীবনব্যবস্থা” বইটি পড়ে দেখতে পারেন। #auto_post #লিখাটি কে লিখেছে তা আমার কাছে নেই। আমার সংগ্রহে ছিলো। এই লেখার কিছু বিষয় আমার কাছে অস্পষ্ট। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত আকারে আছে তাই সঠিক অর্থ অনুধাবন হয়তো সবার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তবে লেখাটি সামগ্রিক দিক দিয়ে ভালো এবং সুন্দর। এখন কেউ আবার নিজে নিজে গিয়ে (জি)হাদ শুরু করিয়েন না। এর ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে তাই তা জেনে-বুঝেই করুন। অর্ধবুঝে যেনো আমরা উলটাপালটা কিছু করে না বসি।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *