ঠক, ঠক, ঠক!
- “কে?”
আমার পরিচয় শুনে মালিক দরজা খুলে বাইরে এলেন এবং নিজেকে পিটার বলে পরিচয় দিয়ে চশমার ফাঁক দিয়ে সরু চোখে আমাকে দেখতে লাগলেন।
সাথে সাথেই আমি মূল প্রশ্নে চলে গেলামঃ
-“পিটার সাহেব, কেমন আছেন?”
-“জ্বি ভালাে। কী চান?”
-“আচ্ছা, আপনাকে একটা স্পিরিচুয়াল প্রশ্ন করলে কি রাগ করবেন?”
-“না, বলুন না।” দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন পিটার সাহেব। দেখে মনে হলাে আজ একজন মুসলিমকে বাগে পেয়ে নাস্তা করবেন সাধ মিটিয়ে।
আমি দ্বিতীয় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলামঃ
-“পিটার সাহেব, আপনি যদি আজ রাতে মারা যান এবং এরপর আল্লাহর সামনে দাড়াতে হয়, এবং আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কেনো আমি তােমাকে আমার জান্নাতে ঢুকতে দিবাে?’ আপনি কী উত্তর দিবেন?”
ধূত গোঁফের ফাঁক দিয়ে উনার তড়িৎ উত্তর এলাে, “আমি বলবাে, ‘কেনো আপনি আমাকে আপনার জান্নাতে ঢুকতে দিবেন না?”
ওই দেখাে! এটা কী বললেন ভদ্রলােক? আমি দ্রুত সামলে নিয়ে বললাম, “পিটার ভাই, আমি যদি আপনার দরজায় নক করে ভিতরে ঢুকতে চাইতাম, আর আপনি আমাকে বলতেন,
“কেননা আমি আপনাকে আমার ঘরে ঢুকতে দিবাে?
এবং প্রত্যুত্তরে আমি যদি বলতাম, ‘ঢুকতে দিবেন না কেনাে?” তখন আপনি কী। বলতেন?”
আমার বুকে আঙ্গুল ঠকতে ঠুকতে পিটার সাহেব উত্তর দিলেন, “আমার ঘরের ভেতরে আপনি ঢুকবেন নাকি ঢুকবেন না সেটা আমিই আপনাকে বলবাে!”
সাথে সাথেই ঝেড়ে দিলাম, “আল্লাহও আপনাকে ঠিক এই উত্তরটাই দেয়ার অধিকার রাখেন!”
পিটার সাহেব হালকা ধাক্কা খেলেন। চোখ চিকন করে বললেন, “সত্যি বলতে কি, আমি আল্লাহতে বিশ্বাসই করি না। আমি একজন এথিইস্ট (নাস্তিক)।”
-“আপনি এথিইস্ট?”
-“জি, হ্যাঁ।”
-“ঠিক আছে। আপনি কি একদমই নিশ্চিত যে আল্লাহ নেই?”
-“আমি পুরােপুরি নিশ্চিত না আসলে। একজন আল্লাহ থাকতেও পারেন।”
-“তাহলে আপনি আসলে একজন এথিইস্ট নন, বরং এগনস্টিক (সংশয়বাদী)। কারণ, একজন এথিইস্ট বলেন, আমি নিশ্চিতভাবেই জানি আল্লাহ বলে কিছু নেই এবং একজন এগনস্টিক বলেন, আমি নিশ্চিতভাবে জানি না আল্লাহ আছেন কিনা।”
-“ওহ! আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি এগনস্টিকই।” উনি স্বীকার করে নিলেন।
-“আপনি কোনাে ধরণের এগনস্টিক তাহলে?”
ক্লিনশেইভড গালের মাঝখানে থাকা ঝাঁটার মতােন গোঁফের নীচ দিয়ে ম্লান হাসি হেসে তিনি বললেন, “বুঝিনি।” সম্ভবত তিনি ভাবছিলেন, “কী আজিব! এক মিনিট আগে আমি এথিইস্ট ছিলাম। এখন আমার কোনাে ধারণাই নেই যে আমি কোনাে ধরণের এগনস্টিক!”
-“আসলে দুই ধরনের এগনস্টিক আছে। সাধারণ এগনস্টিক বলে, সে কোনােকিছুই নিশ্চিতভাবে জানে না, আর দ্বিতীয় ধরণের এগনস্টিক বলে, নিশ্চিতভাবে কোনােকিছুই জানা সম্ভব না।”
-“আমি দ্বিতীয় দলের। কোনােকিছুইতাে আসলে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব না।”
পিটার সাহেবের আত্মঘাতী বক্তব্যটা আমি লুফে নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
-“পিটার সাহেব, আপনি যদি বলেন যে আপনি কোনােকিছুই নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন না, জানা সম্ভব না, তাহলে এটা আপনি কীভাবে জানলেন?”
উনাকে একটু বিভ্রান্ত দেখালাে। বললেন, “কী বুঝাতে চাচ্ছেন?”
একটু ঘুরিয়ে বললাম প্রশ্নটাকে, “আপনি কী করে নিশ্চিতভাবে জানলেন যে কোনােকিছুই নিশ্চিতভাবে জানা অসম্ভব?”
উনার মুখে বাতি জ্বলে ওঠাটা নিজের চোখে দেখলাম যেনো। উত্তর পেলাম, “ওকে। আমার মনে হয়, নিশ্চিতভাবে কিছু জিনিস জানা অবশ্যই সম্ভব। সেক্ষেত্রে আমি প্রথম দলের সাধারণ এগনস্টিক।”
যাক! ব্যাপারটা এগুচ্ছে তাহলে। কয়েকটা প্রশ্নেই পিটার সাহেব এথিইজম হতে সরে এসে দ্বিতীয় সারির এগনস্টিসিজম ছেড়ে এখন সাধারণ এগনস্টিসিজমে পৌঁছলেন।
আমি বললাম, “যেহেতু আপনি স্বীকার করে নিলেন যে আপনার পক্ষে নিশ্চিতভাবে জানাও সম্ভব, তাহলে কেননা আপনি জানেন না যে আল্লাহ আছেন?”
কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলেন, “কারণ, এই ব্যাপারে আমার কাছে কোনাে প্রমাণ নেই।”
আমি মিলিয়ন ডলারের প্রশ্নটা করলাম, “আপনি কি প্রমাণ দেখতে ইচ্ছুক?”
-“অবশ্যই।” তিনি জবাব দিলেন।
এই ধরণের মানুষেরাই আসলে বেস্ট মানুষ, যারা সৎভাবে একটা ব্যাপারকে দেখতে চান, বুঝতে চান। সৎ ইচ্ছা থাকাটা খুবই খুবই জরুরী। কারণ, একজন অনিচ্ছুকের জন্যে লক্ষ প্রমাণও যথেষ্ট না।
আপনি কি সত্যিই সততার সাথে পিটার সাহেবের মতাে সত্যটাকে দেখতে চান, বুঝতে চান, মানতে চান? জানতে চান সেই প্রমাণগুলােকে যেগুলাে সুনিশ্চিত সত্যটাকে আপনার সামনে। উদ্ভাসিত করবে, আর আপনি ভেবে-চিন্তে যাচাই করে নিবেন কথাগুলাে সত্য কিনা আসলেই?
যদি তাই হয়, তাহলে পরের লেখাটা পড়বার আমন্ত্রণ রইলাে।