হাজবেন্ড যেটা পছন্দ করেন না, সেটা করবেন না। ওয়াইফ যেটা পছন্দ করেন না সেটা করবেন না।

হাজবেন্ড যেটা পছন্দ করেন না, সেটা করবেন না।
ওয়াইফ যেটা পছন্দ করেন না সেটা করবেন না।

জাগতিক বিষয়ক গুলোর থেকে দাম্পত্য সুখ বেশি জরুরী। প্রয়োজনে নিজের ‘ভাল লাগা’ স্যাক্রিফাইস করুন, ‘ভাল থাকার’ জন্য।
.
কানে আসে, বেশ কিছু দাম্পত্য কলহের কারণই এই ফেসবুকিং৷ ফেসবুকিং করতে যেয়ে পরস্পরের জন্য পরস্পরের সময় হয়ে উঠেনা। অনেকে এতই লেখালেখিতে ব্যস্ত যে পরস্পরের হকাদায়ের সময় নেই।

অনেকের লেখক লেখিকার সাংসারিক অশান্তি কিংবা ডিভোর্স এর কারণও এই ফেসবুক। এরা নিজের স্বামী/ স্ত্রীর থেকে ফেসবুকে বেশি সময় দেয়।

স্বামী পছন্দ করেন না স্ত্রী এত সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকুক, কিংবা স্ত্রী পছন্দ করেন না স্বামী এত সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকুক, কিন্তু কারোর পছন্দ অপছন্দে কারোর কেয়ার নেই।
.

“ফেসবুকিং দাম্পত্য জীবনকে একঘেয়েমি করে দেয়”
.
.
অবসরে দুইজন একসাথে পাশাপাশি বসা ৷

কথা ছিল দৃশ্যটা হবে এমন, দুইজনের দুই হাতে থাকবে, অপর জনের দুই হাত। চোখে চোখ রেখে শেয়ার করা হবে মনের কথা, বুকে মাথা রেখে আহ্লাদ করে পেশ করা হবে একের পর এক অভিযোগ। সত্য মিথ্যে প্রশংসা করা হবে।
.
চোখ যেমনই হোক হরিণী চোখের সাথে তুলনা করা হবে, চুল রুক্ষ হলেও বলা হবে মেঘ কালো কেশ, চেহারা যেমনই হোক চাঁদের সাথে তূলনা করা হবে।

পরস্পরের ভাল দিক গুলো তুলে ধরা হবে। দুজনের জন্য দুজনের স্যাক্রিফাইস গুলো একে অপরকে বলবে। দুজন দুজনকে পেয়ে একসাথে রবের কৃতজ্ঞতা আদায় করবে।
.
অথচ দৃশ্যটা এমন যে, দুইজনের দুই হাতে মোবাইল। দুইজনের চোখও মোবাইল স্ক্রীনে। দুইজনই সোশ্যাল মিডিয়াতে অপর কাপল গুলোর সুখ দেখে বেড়াচ্ছে, লাইক কমেন্ট করছে।

দুজনের না হলেও, একজনের হাতে মোবাইল, সে মোবাইলে ব্যস্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় বা গেমিং এ।
অপরপক্ষ ডাকছে, কিছু বলছে সেদিকে না তাকিয়েই হু হু করে মাথা নাড়ানো।

অথচ মুহুর্ত টা ছিল নিজেদের সুখী করে নেওয়া।
.
লেখক ভাইরা অনেকেই রোজ অফিসে যাবার আগে ভাইরা স্ত্রীর কপালে চুমু দিতে ভুলে গেলেও, ফেসবুক নোটিফিকেশন বা অচেনা ফ্রেন্ডসদের ম্যাসেজ চেক করতে ভুলে যান না। ঘরে ফিরে স্ত্রীর খোঁজ না নিলেও, ফেসবুকে “হোয়াটস আপ ফ্রেন্ডস” লিখতে ভুলেন না।

লেখিকা বোনেরা অনেকেই রোজ স্বামীর মাথা টিপে দিতে ভুলে গেলেও, সারাদিন অফিসে কী কী হলো ইত্যাদি খোঁজ নিতে ভুলে গেলেও, ফেসবুকে পোস্ট লিখতে ভুলে যান না।
.
ওয়াল্লাহি ভাই! , জীবনে যতটা সময় পরনারীর দিকে তাকিয়ে তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন, তার দশভাগের এক ভাগ সময়ও নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলে দাম্পত্য জীবনটা পানসে হতো না।

যতটা সময় পরস্ত্রীর গুণে মুগ্ধ থেকেছেন সে সময়টা নিজের খারাপ স্ত্রীরও ভাল দিক গুলো মুল্যায়ন করলে সে খারাপ স্ত্রীও কৃতজ্ঞতায় ভাল হয়ে যেত, আপনার মনের মত হয়ে যেত।
…..

ওয়াল্লাহি বোন! জীবনে যতটা সময় অন্যের স্বামীর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে ভাবতে থেকেছেন, তার দশভাগের একভাগ সময়ও নিজের স্বামীর ভাল দিক গুলো নোটিশ করার চেষ্টা করলে আপনার দাম্পত্য জীবন নিয়ে কোন অভিযোগ থাকত না।

আপনার স্বামী আনরোমান্টিক। ভালবাসি বলতে পারেনা। যখন তখন যে জড়িয়ে ধরতে হয়, এই অনুভুতি গুলো তার নেই। কপালে রোজ চুমু দেয়না। মানুষটা একদম রসকস হীন। রোজ ফুল আনে না। চকলেট কিনে দেয়না।

কিন্তু মানুষটা আপনাকে খাওয়াচ্ছে। বাজারে গেলে নিজের সাধ্যমত সব থেকে সুন্দর পোশাকটা আপনার জন্য কিনে আনছে৷ হয়ত পোশাকটায় সে ঠকে গেছে, কিন্তু পোশাকের পেছনে ভালবাসাটা জিতে গেছে।
.
এই নিরস মানুষটা কলুর বলদের মত খেটে যাচ্ছে আপনার মুখে হাসি ফোঁটাতে। কখনও ট্রেইনে জার্নির সময় তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছেন কাঁধ ব্যাথা হয়ে গেলেও পরম যত্নে আগলিয়ে নিয়েছে।

সারাদিন অফিসে, রাস্তায় বা বিলবোর্ড এর শরীর বের করা নারীদের থেকে চোখ সংযত করে চলে এই নিরস মানুষটা।
.
ভালবাসি বলতে পারেনা তবে দায়িত্ব পালনে কোন কমতি রাখেনি। রোমান্টিক না, কিন্তু আপনাকে কখনও কষ্ট দেয় না। ম্যারেজ ডে এর তারিখ টা ভুলে যায় কিন্তু দায়িত্ব পালনে ভুলেনা।

জ্বি পুরুষ মানুষের দায়িত্ব পালনই তার ভালবাসা। সে পরনারীতে আসক্ত নয় এটাই তার রোম্যান্স। সে লুকিয়ে আপনাকে দেখে এটাই তার রোমান্টিকতা।
.
একদিন সহজ করে দিন। মনের ভাষা মুখ থেকে বের করুন। জোর জবস্তি করে ভালবাসি বলান, হাতটা আপনিই ধরুন। অর্ডার করে দিন রোজ যেন ফুল আনে, চকলেট না আনলে চেঁচামেচি করুন।

এভাবে কয়েকদিন করলেই মানুষটা রোমান্টিক প্রেমিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ কথা দিলাম। সত্যিই। প্রত্যেকেই রোমান্স প্রিয়, কেউ এক্সপ্রেস করতে পারেনা।
.
.
আপনার স্ত্রী আনরোমান্টিক। ভালবাসি বলেনা ৷ শুধু ঝগড়া করে, চেঁচামেচি করে। একটু বাঁচাল টাইপ।

কিন্তু কীসের স্বার্থে করে?

পরপুরুষের সাথে তো কথা বলেনা। আপনার সাথে চিল্লায়। প্রশ্রয় দিন। সে নিজে চিল্লালেও অন্য কাউকে আপনার বিপক্ষে চিল্লাতে দেয়না। কেউ আপনাকে নিয়ে কিছু বললে তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিবে। প্রিয়তম স্বামী কে শুধু সে একা চিল্লাবে।

আপনি রাগ না করে বলুন, “চিল্লালে তোমাকে অপরূপা লাগে, তোমার মুখের কথা গুলো ফুলের কাঁটা হয়ে আমার হৃদয়ে বিঁধে। তুমি একটা আস্ত গোলাপ, আল্লাহ আমাকে গোলাপ দিয়েছেন তাই কাঁটা তো হজম করতে হবেই।”
.
এই কথা বলার পর দেখবেন, কেমন আহ্লাদ করে চুপ হয়ে যাবে, রাগ চলে যেয়ে শান্ত হয়ে যাবে এবং আড়চোখে আপনার দিকে তাকিয়ে বলবে, ‘যত্তসব !’

আপনি বলুন, “হুম আমি যত্তসব, আর তুমিই আমার সব।”

এবার যদি বলে, “পাগল” তাহলে আপনি বলবেন না, “তোর গুষ্টি পাগল” বরং বলুন, “হুম পাগল তোমার জন্য”

এরপরের দৃশ্যটা না লিখি। অবিবাহিতরা আছে ফ্রেন্ডলিস্টে।

এভাবে কয়েক মাস, এক বছর প্র্যাকটিস চালান, দেখবেন স্ত্রী কেমন জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর টাইপ বউ হয়ে গেছে।

.
স্বামী স্ত্রী সব সময় মনের মত রেডিমেড পাওয়া যায়না। তবে প্রচুর দুয়া, একটূ খানি চেষ্টা আর সবরের মাধ্যমে টেকনিক খাঁটিয়ে নিজের মনের মত করে নেওয়া যায়।

ইগো নিয়ে থাকলে সমস্যার সমাধান হয়না। অপরপক্ষ কখন আগে ভাল হবে সে প্রতীক্ষায় দিন গুণতে থাকলে, শুধু সময়ই বাড়ে আর এই ভাবেই যৌবন চলে যায়, মৃত্যু চলে আসে।

আপনিই আগে স্টেপ নিন সব কিছু ঠিকঠাক করার।
.
দুইজন একসাথে থাকলে কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকবেন না। আর ভুলেও কখনও নিজের স্বামী স্ত্রীকে অন্যের স্বামী স্ত্রীর সাথে তুলনা দিবেন না।
.
.
দ্বীনের প্র্যাকটিস গোঁড়ামি ভাবে শুরু করার আগে আমরা অনেকেই একাকটু গান শুনেছি। আল্লাহ আমাদের অতীত ক্ষমা করুন এবং ভবিষ্যতে শোনা থেকে হেফাজাত করুন।

কোনটা কোনটা মুখস্থও থেকে গেছে। গানে শিরকী শব্দ না থাকলে, গান গেয়ে শোনান মাঝে মাঝে। একটা সুন্দর গানের লিরিক্স শিখিয়ে দিই (অনেক আগের),

//

হয়তো তোমারি জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়ায়ে
.
যদি কখনো এ প্রান্তে
চেয়েছি তোমায় জানতে
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে
ছুটে ছুটে গেছি তাই।
.
আমি যে নিজেই মত্ত
জানি না তোমার শর্ত
যদি বা ঘটে অনর্থ
তবুও তোমারে চাই……… (তন্ময় ভাইয়ের লেখা থেকে)

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *