সৌদি আরবে কি ” হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা ” আছেন ??

সৌদি আরবে কি ” হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা ” আছেন ??


অনলাইন জগতে যতো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, তন্মধ্যে এটি একটি কমন প্রশ্ন ছিলো – সৌদি আরবে কি হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন ??
এর একটা বিহিত কারণ আছে অবশ্যই। আমাদের দেশে সংখ্যাঘরিষ্ট মুসলমান হানাফী মাজহাব অনুসরণ-অনুকরণ করেন। আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি, মূল এবং মৌলিক হানাফী মাজহাব ফলো করেন। নতুন হানাফী বা মূল হানাফী থেকে দূরবর্তী কোন নব্য আবিস্কৃত হানাফী মাজহাব অনুসরণ করা হয় না৷
যাইহোক, কিছু সংখ্যাক শায়খ আছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবের রেফার করে খেয়ে না -খেয়ে হানাফী মাজহাবের বিরুদ্ধাচারণে লেগে থাকেন। এতে জনমনে প্রশ্ন জাগে যে, সৌদি আরবে কি হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা নেই ? থাকলে উনারা (!) এতো হানাফী বিদ্বেষী হোন কি করে ?
কিছু শায়খের বিরুধীতা ও হানাফী মাজহাব নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা এতই যে, সাধারণ মানুষের মনে এমন প্রশ্ন জাগা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার!
যাইহোক, আমি আজকের লেখায় খানিকটা জানান দেওয়ার চেষ্টা করবো যে, সৌদি আরবে হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন কি না!
প্রথমত দু’টি কথা –
১. সৌদি আরবে রাষ্ট্রিয় রসমি বা প্রতিষ্ঠিত মাজহাব হচ্ছে – হাম্বলী মাজহাব৷ দেশটির প্রত্যেক মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিকহ বলতে হাম্বলী মাজহাবই পড়ানো হয়৷
জ্বী, আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি – দেশটিতে সু- নির্ধারিত একটা মাজহাবই তথা হাম্বলী মাজহাব পড়ানো হয়।এমনকি, উসূলুল ফিকহ ও কেবল হাম্বলি মাজহাবের পড়ানো হয়৷ বেশী দূর যাওয়ার দরকার নাই। ধরুন, আমাদের মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় এর কথা।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীয়া বিভাগে ( ফিকাহ) একাট্টা হাম্বলী মাজহাবের বই পড়ানো হয়। ফিকাহের বই হচ্ছে –
” আর-রাওজুল মুরবীঈ “
বইটি হাম্বলী মাজহাবের একক প্রসিদ্ধ মতন-গ্রন্থ ( মাজহাবের মূল ট্যাক্সট বই) জাদুল মুস্তাক্বনা’ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা গ্রন্থ, যা সকল শ্রেণীর ফিকাহ-শিক্ষার্থীদের কাছে জানাশুনা । তদুপরি, বইটি নিয়ে কারো সন্দেহ থাকলে নিচের লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত জানতে পারেন –
লিংক – shorturl.at/ktU08
২. সৌদি আরবের রাসমি বা প্রতিষ্ঠিত মাজহাব যেহেতু হাম্বলি এবং পাশাপাশি কোর্টকাছারিতেও এই মাজহাব অনুসরণ হয়, সেই হিসেবে ভিন্ন মাজহাব রাসমিভাবে প্রতিষ্ঠা হওয়া অনেকটা ইস্পাত-কঠিন৷ কারণ, এক সাথে একাধিক মাজহাব একজন ব্যক্তি যেভাবে অনুসরণ করতে পারে না, তেমনিভাবে একটা রাষ্ট্রের জন্য একাধীক মাজহাব রাসমি হতে পারে না৷ একাধীক মাজহাব রাসমি হলে, কি যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা বোধ হয় ফিকা’র নিম্নস্তরের শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারবে৷
যাইহোক, সৌদি আরবে হাম্বলী মাজহাব প্রতিষ্ঠিত হলেও অন্যান্য প্রসিদ্ধ তিন মাজহাবের আলিম-উলামা ও মাদারিস অবশ্যই বিদ্যমান রয়েছে। অনেক বড় বড় মাশায়েখও রয়েছেন।
সৌদি আরবে মাজহাবের বিচিত্র ইত্যাদি জানতে নিচের আল-জাজিরার রিপোর্ট পড়ে নিতে পারেন। আমার কাছে অত্যন্ত রিলায়াবল মনে হয়েছে –
সূত্রঃ- shorturl.at/nEY15
আমার এই পোস্টে যেহেতু সৌদি আরবে হানাফী আলিম-উলামার সন্ধান দেওয়া উদ্দেশ্য ; সেহেতু অন্যান্য মাজহবের ব্যাপারে তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলাম।
এবার আসি মূল আলোচনায় – সৌদি আরবে কি হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন?
এক কথায় – জ্বী, হ্যাঁ !
সৌদি আরবে অসংখ্য হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন এবং নির্ধারিত হানাফী ফিকহের মাদ্রাসাও রয়েছে।
বক্ষমান লেখায় সৌদি আরবের মতো বিশাল রাষ্ট্রের সকল হানাফী উলামায়ে কেরাম ও মাদ্রাসা সমূহ এক সাথে তুলে ধরা আমার জন্য সম্ভব না। তাই, মাত্র একটা হানাফী ঐতিহ্যবাহী পরিবারের ফিরিস্তি তুলে ধরব ইনশা আল্লাহ !
এর পূর্বে বলে রাখা বাহুল্য যে, পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ প্রাঙ্গণে মসজিদে হারামুল মাক্কাতে শায়খ মাক্কী আল- হিযাজী প্রায় চল্লিশ বছর থেকে নিয়মিত দারস প্রদান করে আসছেন৷ তিনি একজন খ্যাতিমান হানাফী স্কলার বা আলিম। উনার হাজারের উর্ধ্বে আরবী,উর্দু ও ইংলিশ লেকচার ইউটিউবে আছে৷ আরো বলা বাহুল্য যে, উনার প্রতিষ্ঠিত মক্কাতে হানাফী ফিকহের মাদ্রাসাও রয়েছে৷
শায়খকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটা ডকুমেন্টারি – https://youtu.be/IMo4p16arT0
যাইহোক, সৌদি আরবের প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ একটা জেলা হচ্ছে – আহসা, যা রাজধানী রিয়াদ থেকে পূর্ব দিকে রয়েছে৷ এই জেলাতে জন্ম নিয়েছেন সৌদি আরবের অসংখ্য আলিম-উলামা। সবচেয়ে মজার তথ্য হচ্ছে, এই প্রভিন্সে চার মাজহাবের আলিম-উলামা ও সকলের সৌহার্দপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন মাজহাবের স্বতন্ত্র হালকা/মাদারিস ও রয়েছে৷
সেই ” আহসা ” অঞ্চলের একটা প্রসিদ্ধা হানাফী পরিবার হচ্ছে – আলে মোল্লা পরিবার। যা বছর বছর ধরে ইলম, আমল ও তাজকিয়া লাইনে সৌদি আরবে সমৃদ্ধি ও খ্যাতী লাভ করে আসছে।
এই পরিবারে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য আলিম-উলামা , যারা প্রত্যেকেই হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত স্কলার ছিলেন। দারস-তাদরীসের পাশাপাশি হানাফী মাজহাবের উপর বিভিন্ন বই-পুস্তক লিখে পুরা মুসলিম বিশ্বে পরিবারটি সু-খ্যাতী অর্জন করেছে ।
ঐতিহ্যবাহী ” আল-মোল্লা ” এই হানাফী পরিবারের কয়েকজন খ্যাতিমান স্কলার এর নাম ও তাদের দ্বীনি লাইনের খেদমত তুলে ধরছি –
[[ উল্লেখ্যঃ নিম্নে বর্ণিত সকল শায়খ হানাফী মাজহাবের অনুসারী ও খ্যাতিমান স্কলার ছিলেন ]]
১. শায়খ আলি বিন হুসাইন আল- ওয়াইজ আ-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । উনার নামানুসারে পরবর্তীতে সেই পরিবারের নাম হয়ে যায় ” উসরাতু আলে-মোল্লা “, যা পুরা পৃথিবী জুড়ে প্রসিদ্ধ। তিনি তৎকালীন সময়ে আহসা অঞ্চলের ( ১০০০ হিজরীতে) কাজী ছিলেন।
২. শায়খ মোহাম্মাদ বিন আলী আল-ওয়াইজ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনি এগারোশত হিজরীর একজন প্রসিদ্ধা স্কলার ছিলেন। তৎকালীন সময়ে সেই এলাকার বিচারপতি ছিলেন।
৩. শায়খ মোহাম্মাদ বিন ইমাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ৷ তিনি এগারোশত হিজরীর শেষ ও বারোশত হিজরীর প্রথম দিকে আহসার প্রধান বিচারপতি ছিলেন। পাশাপাশি একজন প্রসিদ্ধ ফকীহ হিসেবে খ্যাতী লাভ করেছিলেন। তার বেশ কয়েকটি ফতোয়ার বইও রয়েছে৷
৪. শায়খ আব্দুল মালীক বিন আব্দুল্লাহ বিন আলী আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনিও তৎকালীন সময়ের একজন খ্যাতিমান কাজী ও মুফতি ছিলেন।
৫. শায়খ মোহাম্মাদ বিন আহমাদ মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনি তৎকালীন সময়ের একজন সু-প্রসিদ্ধ আলিমে-দ্বীন ছিলেন। সৌদি আরবের বর্তমান প্রসিদ্ধ মসজিদ ” জামিউশ শুয়ূখ ” এর ইমাম ছিলেন, যে মসজিদটি ইলম ও হালকার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো। ১০৪৪ হিজরীতে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
৬. শায়খ উমার বিন আহমাদ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । যিনি তৎকালীন সময়ে আহসা অঞ্চলে বেশ কিছু মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন আওকাফ প্রতিষ্ঠা করে তিনি নিজেই সেগুলার দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ইলম বিতরণ করেন।
৭. শায়খ কাজী আব্দুর রাহমান বিন উমার মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । যিনি আহসার প্রধান বিচারপতি ছিলেন বারোশত হিজরীর শেষ দশকে।
৮. শায়খ কাজী মুফতি মোহাম্মাদ বিন উমার মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনি আহসার প্রধান মুফতি ও কাতীফ অঞ্চলের প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ বই রচনাও রয়েছে। তন্মধ্যে –
١ – نيل المرام لمن تولى القضاء والأحكام
٢-القول المبرم الذي ليس لإبرامه نقض في حكم إجارة العقار قبل القبض
٣- مقامة الطيب في الأدب
৯. আল্লামা শায়খ আবু বাকর বিন মোহাম্মাদ বিন উমার মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তৎকালীন সময়েত একজন খ্যাতিমান আলিম ও লেখক ছিলেন। তার বেশ কিছু লিখিত বই রয়েছে। তন্মধ্যে –
١-الزهر العاطر بتلخيص صيد الخاطر
٢- قرة العيون المبصرة بتلخيص كتاب التبصرة لابن الجوزي
٣- منظمة تحفة الطلاب في الفقه
٤- منظومة منهاج السلوك
٥- إتحاف الطالب في الفقه الحنفي
১০. শায়খ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন শায়খ আবু বাকর মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনিও তৎকালীন সময়ের একজন খ্যাতিমান ওয়াইজ,লেখক, শিক্ষক ও তাজকিয়া লাইনের ধারক-বাহক ছিলেন। তার বেশ কিছু বই ও রয়েছে। তন্মধ্যে –
١- قلائد الذهب شرح وسيلة الطلب في الفقه
٢-قمع المعاند في انتهاك حرمة المساجد
٣- مختصر في ترجمة والده
১১. শায়খ কাজী মুফতি আব্দুল লাতীফ বিন আব্দুর রাহমান আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । সেই সময়ের সবচেয়ে বড় মুফতি ছিলেন। আহসা অঞ্চলের সবচেয়ে লম্বা সময়ের কাজী ছিলেন। তার বিচার কার্য প্রায় ৩০ বছর ছিল। এছাড়াও, তিনি ফতোয়া ও কিতাব তাসনীফে পারদর্শী ছিলেন। তার উল্লেখ্য বই –
١- وسيلة الظفر في المسائل التي يفتي فيها بقول زُفَر
٢- نيل المرام بشرح كفاية الغلام
٣- وكلاهما مطبوعان بتحقيق حفيده عبد الإله
১২. শায়খ আবু বাকর বিন শায়খ আব্দুল্লাহ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তেরদশ হিজরীর অন্যাতম একজন আলিম ছিলেন। তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু মসজিদ-মাদ্রাসার দায়িত্বে ছিলেন। উসমানী শাসনামল ও সৌদি প্রতিষ্ঠাল্পগ্নে তিনি একজন খ্যাতিমান মুফতি ও কাজী ছিলেন।
১৩. শায়খ আহমদ বিন শায়খ আব্দুল লাতীফ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনি সৌদি প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সৌদি সকল প্রসিদ্ধ শায়খ থেকে ইলম শিক্ষা লাভ করেছেন। আহসায় মাসজিদে মোল্লা প্রতিষ্ঠা করেন এবং মাদ্রাসাতু কুব্বার দায়িত্ব আঞ্চাম দেন৷ তিনিও একজন খ্যাতিমান লেখক ও শিক্ষক ছিলেন।
১৪. শায়খ মোহাম্মাদ বিন আবি বাকর আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । আহসা অঞ্চলের একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দীস ছিলেন। পবিত্র মক্কাতুল মুকাররামা থেকে ইলম অর্জন করে পারিবারিক সকল মসজিদ-মাদ্রাসার দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি একজন খ্যাতিমান লেখক ছিলেন। উল্লেখ্য –
١- اللفظ المعقول في علم الأصول
٢-سلم المريد في علم التجويد
٣ شرح متن الآجرومية في النحو.
১৫. শায়খ আব্দুর রাহমান বিন আবু বাকর আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । সমকালীন সময়ের একজন প্রসিদ্ধ মুফতী ও মুহাদ্দীস। পবিত্র মক্কাতুল মুকাররামায় পড়াশোনা করে সেখানে কিছুদিন ইলমে দ্বিনের খেদমত আঞ্জাম দেন এবং পরবর্তীতে নিজের বাপ-দাদার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ-মাদ্রাসার দায়িত্ব আঞ্জম দেন। তার উল্লেখ্য দু’টি বই –
١- مجموعة من الرسائل في الحديث والفقه
٢- ديوان شعر.
সম্মানিত পাঠক,
উনারা ছিলেন সৌদি আরবের আহসা অঞ্চলের মাত্র একটা পরিবারের ( ১০০০-১৩০০) হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ উলামায়ে কেরাম। এছাড়াও, সেই অঞ্চলের হানাফী অনেক স্কলার ছিলেন । যেমনঃ
১. শায়খ রাশেদ আল-মুরাইখী আল-হানাফী
২. শায়খ রাইদ আব্দুল্লাহ আল-হানাফী
( উনার প্রসিদ্ধ বই হচ্ছে – আল-মুখতাসারু ফিল কাওয়াইদিল ফিকহীয়াহ)
৩. ইব্রাহীম বিন হাসান মোল্লা আল-হানাফী
( উনার প্রসিদ্ধ বই হচ্ছে – হেদায়াতুন নাসিকী ইলা মা’রেফাতে আদাবিল মানাসিকি)
৪. ইয়াহয়া বিন শায়খ মোহাম্মাদ বিন আবু বাকর আল-হানাফী। ( উনার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে – হেদায়াতুল মুহতাজী লি-শামাইলে তিরমিজী)
প্রিয় পাঠক,
আলোচনা হচ্ছিল সৌদি আরবের আহসা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ” মোল্লা পরিবারের ” হানাফী স্কলারসদের পরিচয় নিয়ে। ইতোপূর্বে যাদের নাম উল্লেখ হয়েছে, সবাই ছিলেন সেই যুগের!
এই ঐতিহ্যবাহী পরিবারে আমাদের সময়েও অনেক বড় স্কলারস বের হয়েছেন। যাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ না করলে নয়। যেমন –
১. শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাহমান আল-মোল্লা হানাফী রাহিমাহুল্লাহ । তিনি ১৩৩০ হিজরীতে সৌদি আরবেই জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি জীবনের প্রথম দিকে আহসা৷ মক্কায় পড়াশোনা করলেও শেষ পড়াশোনা ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে সমাপ্তি করেন৷
দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের বাপ-দাদা প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা সমূহের তাদরিসি দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি আহসা অঞ্চলের সর্বপ্রথম প্রকাশনা লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম হচ্ছে – মাকতাবাতুত তা’আউনি আস-সাকাফিউ ( مكتبة التعاوني الثقافي )
২. শায়খ মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আবু বাকর মোল্লা হাফিজাহুল্লাহ। ১৪২২ হিজরীতে পবিত্র আহসা নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে বর্তমানে মাসজিদে কানবরীতে বিভিন্ন হালাকাত এর আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। তার শিক্ষকতায় রয়েছে ফিকাহ, হাদিস, উসূল, আদব ও তারিখ ইত্যাদি ।
৩. শায়খ ইয়াহয়া বিন শায়খ মোহাম্মাদ বিন আবু বাকর আল-মোল্লা হাফিজাহুল্লাহ৷ ঐতিহ্যবাহী মোল্লা পরিবারের বর্তমান ইলমি কর্ণধার । যিনি আহসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীয়া বিভাগ হতে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন খেদমতে দায়িত্বরত রয়েছেন। বিবিধ হালকা, মাজাল্লাহ, তাসনীফাত ইত্যাদি সহ অগণিত তার খেদমত রয়েছে। বিশেষত, হানাফী মাজহাবের খেদমতে তার অসামান্য অবদান রয়েছে।
সম্মানিত পাঠক,
মোল্লা পরিবারের অন্যতম ইলমী কর্ণধার শায়খ আবু বকর বিন মোহাম্মাদ আল-মোল্লা আল-হানাফী আল-আহসা’ঈ এর হানাফী মাজহাব নিয়ে খেদমতের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই তুলে ধরছি,যা সারা বিশ্বে ইলম-প্রিয় মানুষের কাছে সমাদৃত –
١ – هداية المحتذي لشمائل ترميذي ( اعتنى به )
٢- تحفة المبتدئ ( في الفقه الحنفي )
٣- منهاج الراغب إلى إتحاف الطالب في الفقه الحنفي
٤- زواهر القلائد على مهمات القواعد ( أصول الفقه الحنفي )
٥- إسعاف أهل العبادة بنص الصلاة على السجادة ( مباحث الفقه الحنفي )
ঐতিহ্যবাহী এই হানাফী পরিবারের অনেক সমাদর রয়েছে সেই অঞ্চলে। রয়েছে ইলমে ও আমলে অনেক খ্যাতি। দারস-তাদরীসেও রয়েছে অগণিত অবদান। সেই অঞ্চলে তাদের প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে৷ বিশেষত, হানাফী ফিকহের উপর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাও সেখানে রয়েছে।
সৌদি আরবের আহসা অঞ্চলে তাদের প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাজহাবের তিনটা মাদ্রাসা রয়েছে।
১. আল-মাদ্রাসাতুল হানাফীয়্যাহ
( https://mobile.twitter.com/hanfi_school1?lang=en)
২. মাদ্রাসাতুশ শারীয়াহ আল-হানাফীয়াহ
৩. মাদ্রাসাতু শায়খ আবু বাকর আল-মোল্লা আল-হানাফী
শেষ কথা,
সু -হৃদ পাঠক৷
মনে আছে কোন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে?
জ্বি, হ্যা আলোচনা চলছে – সৌদি আরবে কি হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন ?
বাংলাদেশের চেয়ে মাত্র তেরোগুণে বড় বিশাল এই রাষ্ট্রের সকল আলিম-উলামার পরিচয় বা তাদের মাজহাব জানা আমার পক্ষে একা সম্ভব না৷ আমি এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ আহসা অঞ্চলের মাত্র একটা পরিবারের হানাফী আলিম-উলামার উল্লেখ্য কিছু স্কলারের পরিচয় দিলাম, যারা যুগ যুগ ধরে কোর’আন -হাদিসের খেদমতের পাশাপাশি হানাফী মাজহাবে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন৷ এছাড়াও, আমার জানাশোনা অসংখ্য সৌদি শায়খ রয়েছেন, যারা হানাফী মাজহাবকে অনুসরণ করছেন।
অথচ,দিন-শেষে কিছু সংখ্যক শায়খ থেকে শুনবেন যে, সৌদি আরবে মাজহাব বলতে কিছু নাই ?।
তথ্যসূত্রঃ- বিভিন্ন অনলাইন জার্নাল
লিখেছেন- উস্তায Abdul Karim Al-Madani

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *