আব্দুল কারিম মাদানির মাজহাব বিষয় লেখার ডক

আস সালামু আলাইকুম, এখানে কমেন্টে আপনারা দেখতে পাবেন মাজহাব বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখার ইনশা আল্লাহ্‌। এই লেখার সর্ট লিংকঃ http://tiny.cc/karim-madani

Related Post

40 Replies to “আব্দুল কারিম মাদানির মাজহাব বিষয় লেখার ডক”

  1. Abdul Karim Al-Madani
    DleussceimfbeetSporodd 25, 20oigc2t0dncgs ast o9rllhS:1c1unmo PMedn ·
    একজন ভাই হঠাৎ রাস্তায় পেয়ে পথ আটক করে পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে গেলেন৷ ভালো-মন্দ ও খুশগল্প করে শুরু করলেন মাজহাব কেন্দ্রীক আলোচনা৷
    এক পর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন –
    মাজহাব মানতে হবে – এটার স্ব-পক্ষে একটা দলীল দিন যে, রাসূল সাঃ বলেছেন – মাজহাব মানা যাবে।
    আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম –
    মাজহাব মানতে হবে না – এটার স্ব-পক্ষে একটা দলীল দিন যে, রাসূল সাঃ বলেছেন – মাজহাব মানা যাবে না !
    ভাই’টির খানিকটা গোস্বা পেলো। এবার কিছুটা উঁচু বাক্যে বললেন –
    আরে ভাই –
    কোন কিছু মানার জন্য দলীল লাগে ; না মানার জন্য দলীল লাগে না৷
    আমি বললাম –
    মানার জন্য দলীল লাগে আর না মানার জন্য দলীল লাগে না কিংবা অপর কথায় দলীল থাকা কোন আমল সাব্যস্তা হওয়া আর দলীল না থাকা কোন আমল অসাব্যস্ত প্রমাণিত হওয়া।
    ইত্যাদি, এই জাতীয় কথাবার্তা -কে উসূল বা মূলনীতি বলে। আর এই মূলনীতিগুলা মাজহাবের ইমামগণের’ই আবিস্কার৷ যেমনঃ ইমাম আজম রাঃ এর প্রধান উসূল হচ্ছে –
    কোন আমল সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দলীল লাগবে। আর দলীল প্রথমত কোর’আন, কোর’আনে না পেলে হাদীস, হাদীসে না পেলে ইজমা অতঃপর ইজতেহাদ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে৷ আর দলীল না থাকলে সেই আমল শারীয়ায় সাব্যস্ত হবে না৷
    তো ভাই, আপনি তো দিনশেষ মাজহাবের ইমামদের উসুলই অনুসরণ করলেন। আর উসূল বা মূলনীতির অনুসরণকেই তো মাজহাবের অনুসরণ বলেন৷ নতুন কোন ধর্ম-কর্ম কিংবা কোর’আন-হাদিসের বাহিরা কিছু মানার নাম মাজহাব না৷
    ভাই’কে আরো বললাম –
    আপনি কি খেয়াল করেছেন যে, মৌখিক স্বীকারোক্তি না দিলেও কথাবার্তায় কিন্তু আপনি অনায়াসে মাজহাবকেই অনুসরণ করে যাচ্ছেন ?
    ভাই’টি লম্বাচওড়া কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো –
    ধূর যাহ, এতোদিনে যা বুঝলাম ; তাও আবার আওলা-জাওলা হয়ে গেলো !

  2. উসূল বা মূলনীতি আবার কী?
    আমরা হাদীসে যা পাব ; তাই আমল করবো। তাই না?
    উপরের কথাগুলো মানুষ দু’কারণে বলে –
    ১. হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞতা
    ২. উসূল সম্পর্কে অজ্ঞতা
    অথচ, নিয়ম হচ্ছে – একটা হাদিস জানার পর সেটার উপর আমল করতে হলে সেই হাদিসটার অবস্থা ও আমলের মূলনীতি জানতে হবে৷ নতুবা, সহজে বিভ্রান্তিতে পতিত হবেন৷
    উসূল কি জিনিস?
    আর এটার প্রয়োজনীয়তা কি?
    বা এটার ব্যবহারবিধী কি ?
    ইত্যাদি সব বিষয়ের জবাব সংক্ষিপ্ত একটা হানাফী মাজহাবের উসূল বা মূলনীতি দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহ তাওফীক দাতা !
    ধরুন,
    হানাফী মাজহাবের একটা উসূল হচ্ছে –
    কোন রাবী যদি একটা হাদীস বর্ণনা করেন এবং হাদিসটা সহীহ৷ কিন্তু, রাবী এর বিপরীত আমল করে থাকেন। তাহলে হানাফী মাজহাবের মূলনীতি হল – বর্ণনাকারীর হাদীস ধর্তব্য না ; বরং উনার আমল’ই ধর্তব্য৷ এ ক্ষেত্রে বর্ণিত হাদিস’টা মানসুখ ( রহিত) আর আমলটাকে নাসিখ ( রহিতকারী) হিসেবে বিবেচ্য হবে৷
    উদাহরণস্বরূপ –
    ১. আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাঃ বলেছেন – যদি কুকুর তোমাদের কারো পাত্র থেকে পান করে নেয়, তাহলে সে যেন তা সাত বার ধৌত করে নেয়। ( বুখারী;মুসলিম)
    এই হাদিস’টার দিকে লক্ষ্য করুন! স্পষ্ট বলা হচ্ছে যে, কোন পাত্রে কুকুর পান করে থাকলে, সেটাকে সাত বার ধৌত করতে হবে৷ আর হাদিসটা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু!
    কিন্তু, অপর আরেকটা সহীহ হাদিসে পাওয়া যায় যে, আবু হুরায়রা রাঃ নিজেই এমতাবস্থায় সাত বার ধৌত না করে মাত্র তিন বার ধৌত করেছেন !
    এবার দেখা গেলো –
    আবু হুরায়রা রাঃ এর বর্ণিত হাদিস এবং তার আমলের মধ্যে পরস্পর বিরোধ রয়েছে৷অর্থাৎ, তাঁর বর্ণিত হাদিসে সাত বারের কথা আর আমলে পাওয়া যায় তিন বারের কথা৷ এমতাবস্থায়, উম্মাহের করণীয় কী ? করণীয় হলো, একটা মূলনীতি দাঁড় করা বা উসূল এর দিকে ধাবিত হওয়া !
    এই জায়গায় এসে ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ ফতোয়া দেন যে, রাবীর আমলের উপর হুকুম সাব্যস্ত হবে। কারণ, বর্ণিত হাদিস’টি মানসুখ হতে পারে৷ নতুবা, জালিল কদর সাহাবী কখনো রাসূল সাঃ এর কথার বিপরীতে আমল করতেন না৷
    এবার,
    আপনাদেরকে শেষ একটা কথা বলি –
    ধরুন,
    আপনি একটা হাদিসের গ্রন্থ ও একটা হানাফী মাজহাবের ফতোয়া গ্রন্থ পড়তাছেন।
    ১. হাদিস গ্রন্থে পড়লেন –
    রাসূল সাঃ বলেছেন – কুকুরে পান করলে পাত্র সাতবার ধৌত করতে হবে৷
    ২. ফতোয়া গ্রন্থে পড়লেন –
    ইমামে আজম বলেছেন – কুকুরে পান করলে তিনবার ধৌত করলে চলে৷
    আপনি না জানেন উসূল, না জানেন হাদিসের হুকুম – তবে উভয়টা পড়ে বললেন –
    সর্বনাশ ! আবু হানীফা এসব কি করলেন ? রাসূল বলেছেন, সাত বার আর তিনি ফতোয়া দিলেন তিন বার !!
    তখন হয়তো আরো বলবেন, আশ্চর্য ! আবু হানীফা তো কোন হাদিস’ই জানেন না। শুধু কিয়াস করেন। নিশ্চিত, আবু হানিফার কাছে এই হাদিস পৌঁছে নাই!
    প্রিয় ভাই আমার,
    মাজহাবের বিষয়টা ঠিক এই জায়গায় এসে ঠেকে৷ আপনি হয়তো আক্ষরিক জ্ঞান দিয়ে দেখতাছেন – আবু হানীফা রাঃ বুখারী /মুসলিম কিংবা অন্যান্য সহীহ হাদিস থাকা সত্ত্বেও নেননি৷ কিন্তু, পিছনের কাহিনি হয়তো জানেননি। তাই তো, মন চাহিদা আজেবাজে কথা বলছেন! আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক!
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    আইন ও বিচার বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়

  3. mDtecettctlmbrdeSgrdu i28pS,oeg s202in0 Smsmfnaofreatco 4h:df30S PM ·
    মাস’আলা-মাসাঈল জানার জন্য সরাসরি হাদিসের কিতাব নাকি ফিকহি কিতাব পড়বেন ? কোনটি বেশী নিরাপদ ?
    ____________________
    ইসলামি বিধানে চলার পথে প্রতিটা পদে পদে মাস’আলা-মাসাঈল জেনে চলতে হয়৷ তাই তো আমরা কেহ সরাসরি কোর’আন-হাদিস পড়ি ; আবার কেহ ফিকহী কিতাব অধ্যায়ন করি।
    প্রসঙ্গ আলোচনা হচ্ছে – একজন সাধারণ মুসলিমের জন্য মাসালা-মাসাইল জানতে কোনটি বেশী নিরাপদ ? সরাসরি কোর’আন-হাদিস নাকি ফিকহী কিতাব ?
    [ আমি আগেই বলে রাখি, কোর’আন-হাদিস সাধারণ অধ্যায়নে সওয়াব বা প্রয়োজনীয়তার বিকল্প নাই। আমি এখানে জাস্ট,মাসালা-মাসাইল বুঝার জন্য কোনটি বেশী নিরাপদ , তা নিয়ে আলোচনা করছি ]
    বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করার পূর্বে হাদিস ও ফিকহী কিতাবের মধ্যকার পার্থক্য তুলে ধরা জরুরি মনে করছি –
    হাদীস গ্রন্থঃ –
    যেখানে সকল ধরণের আহাদিস সন্নিবেশিত করা হয়। সহীহ, জঈফ, রাসূলের জন্য খাস,নাসেখ-মানসুখ সহ যাবতীয় হাদীস সংগ্রহ করা হয়৷ কোনটা আমলের প্রযোজ্য, কোনটি প্রযোজ্য নয় , এমন কিছুর বিবরণ হাদিস গ্রন্থাবলীতে সাধারণত পাওয়া যায় না৷
    ফিকহী গ্রন্থঃ –
    জীবনে চলার পথে প্রতিটা পদে পদে প্রয়োজনীয় সকল মাসালা-মাসাইল দলীল-প্রমাণ সহ উপস্থাপিত থাকে৷ ইবাদাত, মো’আমালাত, হুদুদ ইত্যাদি পার্ট পার্ট সুন্দরভাবে সাজানো-গোছানো থাকে৷
    সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হাদীসটির দলীল দিয়ে মাসালা-মাসাইল সাজানো হয়ে থাকে৷
    উভয়টির সারসংক্ষেপ দাঁড়ায় –
    হাদিসের কিতাব পড়লে একজন সাধারণ মুসলিম জানতে পারে না, কোন হাদিসটি আমলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর কোন হাদিসটি প্রযোজ্য নয়।
    তবে, ফিকহি কিতাব পড়লে একজন সাধারণ মুসলিম সহজেই বুঝতে পারবে যে, আমলের ক্ষেত্রে কোন হাদিসটি প্রযোজ্য । কেননা, ফোকাহায়ে কেরাম বিপুল পর্যালোচনার পরে নাসেখ-মানসুখ তফাৎ করে আমলের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রযোজ্য হাদিস’টি মাস’আলায় বর্ণনা করে থাকেন।
    তাহলে, আমাদের সামনে পরিসস্কার হয়ে গেলো যে, যারা লক্ষ লক্ষ হাদিসের নাসেখ-মানসুখ ইত্যাদি নিয়ে ধারণা রাখেন, তারা কেবল সরাসরি হাদিস পাঠ করে মাসালা-মাসাইল জেনে তার উপর আমল করতে পারেন। আর যারা সাধারণ মুসলিম ; তাদের জন্য ফিকহী কিতাবাদী পড়া আবশ্যকীয় ।
    কেননা একজন সাধারণ মুসলিম জানে না –
    → কোনটা হাদিস আর কোনটা সুন্নাহ!
    → কোন’টার হুকুম রহিত হয়ে গেছে বা বাকি আছে।
    → কোনটা নাসিখ আর কোনটা মানসুখ।
    → হাদিসের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয় জানে না।
    এছাড়াও, অনেক বিষয় আছে হাদীসে ; যা একজন সাধারণ মুসলিম কস্মিনকালেও জানতে পারে না। সুতরাং, কেবল মাসলা-মাসাইল জানার জন্য একজন সাধারণ মুসলিমের জন্য ফিকহী কিতাবাদী পড়া অত্যন্ত আবশ্যকীয় ও নিরাপদ বটে৷
    এবার আপনাদের সামনে হাদীসের নাসেখ-মানসুখ নিয়ে যৎসামান্য আলোকপাত করি –
    মানসুখ → যে হাদিসের হুকুম রহিত হয়ে গিয়েছে
    নাসেখ → যে হাদীস হুকুম রহিত করে নতুন কোন হুকুম নিয়ে এসেছে
    প্রশ্ন হতে পারে –
    রাসূল সাঃ এর হাদিসে কি এভাবে নাসেখ-মানসুখ আছে ? জ্বী, হ্যাঁ ! এরকম অসংখ্য হাদীস আছে ; যার হুকুম পরবর্তীতে রহিত হয়ে যায়। যা মোহাদ্দিসীনে কেরাম আবিস্কার করেছেন বা কিছুটা রাসূল সাঃ বলেছেন বা বিপরীত আমল করে বুঝিয়েছেন।
    হাদিসের নাসেখ-মানসুখ বুঝার কিছু মূলনীতি –
    → রাসূল সাঃ জীবনের প্রথম দিকে একভাবে আমল করেছেন, পরবর্তীতে অন্য ভাবে করেছেন৷
    → রাসূল সাঃ প্রথমে একভাবে বলেছেন, পরে অন্যটি বলেছেন৷
    → রাসূলঃ একভাবে বলেছেন, তবে আমল ভিন্নভাবে করেছেন।
    → রাসূল সাঃ একভাবে বলেছেন, সাহাবাগণ অন্যভাবে আমল করেছেন৷
    এছাড়াও, আরো অনেক মূলনীতি আছে, যার আলোকে পরিস্কার হয় – হাদিসের নাসেখ-মানসুখ ।
    রাসূল সাঃ এর হাদিসের নাসেখ-মানসুখ নিয়ে সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেন ইমাম হাফীজ ইবনু শাহীন ( ৩৮৫ হিঃ) রাহিমাহুল্লাহ ! বইটিতে তিনি ৬৬৬ হাদিস সন্নিবেশিত করেছেন, যে’সব হাদীস আমাদের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে, তবে হুকুম বাকি নেই। অর্থাৎ, উম্মাহ এর উপর আমল করতে পারবে না৷
    সর্বশেষ, আপনাদেরকে একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেই যে, একজন সাধারণ মুসলমানের জন্য কখনো সরাসরি হাদিস পড়ে মাসালা-মাসাইল জানা সম্ভব না ; যদি না সে পাশাপাশি ফিকহি কিতাব পড়ে।
    হাদিসের কিতাবে আছে –
    ما رواه أبو داود والترمذي من حديث معاوية: من شرب الخمر فاجلدوه، فإن عاد في الرابعة فاقتلوه.
    সহীহ সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেনঃ ” যে ব্যক্তি মদ পান করবে, তাকে বেত্রাঘাত করো। যদি যে পূণরায় মদ করে এমনকি চারবার করে ফেলে, তাহলে তাকে হত্যা করো। ”
    ফিকহী কিতাবে আছে –
    কোন ব্যক্তি যদি মদ পান করে, তাহলে তাকে বেত্রাঘাত করা হবে৷ একই কাজ বারবার করলে, তাকে পুণরায় বেত্রাঘাত করা হবে৷ কখনো হত্যা করা যাবে না৷
    আপনি যদি একজন সাধারণ মুসলিম হোন এবং উপরে বর্ণিত হাদিস’টি পড়েন তাহলে বলবেন, বারবার মদ পানের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ! কিন্তু, যদি দেখেন কোন মুফতী ফতোয়া দিচ্ছেন যে, বারবার মদ্যপানে মৃত্যদন্ড শাস্তি দেওয়া যাবে না, তাহলে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে ?
    নিশ্চিত বলবেন, এই মুফতি হাদীস জানেন না৷ জানলেও মানেন না। এই মুফতী সাহেব অন্ধ তাকলীদ করেন। এই মুফতী সাহেব মাজহাব পুজারী। এই মুফতী সাব,,,আরো কতো কিছু হয়তো বলবেন !!
    বস্তুত, আপনি একজন সাধারণ মুসলিম মোটেও জানেন না যে, এই হাদিস’টা মানসুখ তথা এই হুকুম রহিত হয়ে গিয়েছে। এটার উপর আর আমল চলবে না৷
    ইমাম নাবাবী রাঃ মুসলিম শারীফের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট উল্লেখ করে বলেন –
    ” এই হাদীসটা মানসুখ হয়ে গিয়েছে। একজন মদ পানকারীকে কখনো মৃত্যুদন্ড দেওয়া যাবে না। বরং, যত বার মদ পান করবে, ততো বার তাকে বেত্রাঘাত করা হবে ”
    প্রিয় ভাই আমার,
    মাজহাব নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি এই জায়গা থেকেই শুরু হয়। আমরা অনেকেই জানি না, হাদিসের নাসেখ-মানসুখ। অথচ, ডিরেক্ট পড়ে ফেলি বিশাল বিশাল হাদিসের গ্রন্থ!
    আর যৎসামান্য ফিকহার কিছু হাদিসের বিপরীত হলেই সহসা বলে ফেলি –
    → আবু হানফী রাঃ তো হাদীস বিরোধী ছিলেন
    → আবু হানীফা রাঃ এর কাছে তো হাদিস পৌঁছেই নাই
    → আবু হানীফা দাঃ কিয়াসকে হাদিসের উপর প্রাধান্য দিতেন।
    আরো কতো কথা,,,,,
    আল-ইয়াজুবিল্লাহ !
    আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে জাহালত থেকে দূরে রাখেন এবং কোর’আন-হাদিসের প্রকৃত বুঝ দান করেন৷
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    ইসলামীক আইন ও বিচার বিভাগ,
    মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব৷

  4. একটা আপত্তি ও নিষ্পত্তি
    _________________
    খুব সংক্ষেপে বলি –
    আমরা যখন ফিকহী বিষয়ে দালিলিক আলোচনা করি। ঠিক তখন দেখা যায়, কিছু লোক একগাদা লেখা কোথায় থেকে সংগ্রহ করে এনে কমেন্ট বক্সে হাজীর করবে৷ দেখে মনে হবে, বিরটা বড় একজন বিদ্বান৷ বস্তুত, এরা কপি-পেস্টের ইঞ্জিনিয়ার !
    যাইহোক, তারা বিভিন্ন লেখা হাজির করে বুঝাতে চায় যে, অনেক মোহাদ্দীস ইমাম আজম আবু হানীফা রাঃ কে হাদীশ বিশারদ হিসেবে গ্রহণ করেন নাই। দূর্বল রাবী হিসেবে বিবেচ্য করেছেন।
    আপনারা এরকম অনেক লেখাই দেখতে পাবেন। হয়তো, প্রথম পলকে আপনাদের চেহারা গড়বড় হয়ে যেতে পারে । চিন্তাজগতে বিভ্রান্তি প্রবেশ করতে পারে৷ তাই আজকের এই ছোট লেখায় আমি এর সংক্ষিপ্ত জবাব দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ !
    জ্বী, হ্যাঁ ! আমরাও এটা বলি যে, কিছু মুতাশাদ্দীদ মোহাদ্দীস ইমামে আজমের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এরকম তৎকালীন সময়ে একে অপরের প্রতি অনেকেই তীর ছুঁড়েছেন। তাই বলে কি এটাই চূড়ান্ত হবে ?? আপনার বিবেক কি বলে ??
    যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইসলামী শারীয়ায় প্রসিদ্ধ চার মাজহাবের কোন ইমামের ব্যাপারে কি আপনাদের সন্দেহ আছে ? আই মিন, ইমাম/মুজতাহিদ বলে মনে হয় না, এমন কেউ আছেন ?
    আপনারা সালাফী/মাজহাবী সবাই উচ্চবাক্যে একই তালে বলবেন – না, না – এটা হতে পারে না । চার মাজহাবের সবাইকে আমরা দল-মত নির্বিশেষে ইমাম ও মুজতাহিদ বলে মানি এবং এই একটা জায়গায় উম্মাহের সবার ঐক্যবদ্ধ রয়েছে৷
    তবে, আমি যদি আজ আপনাদেরকে বলি যে, ইতিহাসের প্রসিদ্ধ ফকীহ ও মালেকী ইমাম, ইবনে রুশদ রাহিমাহুল্লাহ এর মতে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ কোন মুফতী’ই নন । তাহলে আপনাদের রিএকশন কেমন হবে ?
    আপনারা নিশ্চিত, হয়তো আমার তথ্য মিথ্যা বলবেন। আর তথ্য সঠিক হলে, ইবনে রুশদ রাহিমাহুল্লাহ এর কথা প্রত্যাখান করবেন । আর বলবেন, আমরা নিঃসংকোচে আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ -কে ইমাম ও মুজতাহিদ বলে মান্য করি৷
    জ্বি, আমি আপনাদেরকে ভুল তথ্য দেই নাই। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় এর সর্ব-বিভাগে পঠিতব্য ফিকহী গ্রন্থ ” বিদায়াতুল মুজতাহীদ ” এর মোসান্নীফ ইমাম ইবনে রুশদ রাহিমাহুল্লাহ বিশ্বাস করেন যে, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাঃ একজন নিছক মোহাদ্দীস, তিনি কখনো মুফতী বা ফিকহে মুজতাহীদ ইমাম নন৷ ফলে, উক্ত কিতাবে ইবনে রুশদ রাঃ বিভিন্ন মাস’আলায় তিন মাজহাবের কথা উল্লেখ করে বলেন -” আরো কেউ কেউ বলেছেন ” ! মানে, আহমদ বিন হাম্বল রাঃকে হাইড করে জাস্ট কথাটা উল্লেখ করেছেন৷
    ইবনে রুশদ রাঃ এর সূক্ষ্ম চিরন্তন সত্য বিষয়টি পৃথিবীর সকল আলিম-উলামাদের জানা৷ এমনকি, আমাদের মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সাব্জেক্ট শুরু করার আগেই সংশ্লিষ্ট উস্তাদ বিষয়টি সবাইকে শুরুতে জানিয়ে দেন৷
    আচ্ছা, তাই বলে কি আমরা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ -কে ইমাম মানি না ? উনাকে মুজতাহিদ ইমাম হিসেবে শ্রদ্ধা করি না ? আমরা অবশ্যই, ইবনে রুশদ রাহিমাহুল্লাহ এর দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে ইমাম ইবনে হাম্বল রাঃ কে ইমাম হিসেবে মানি ও শ্রদ্ধা করি৷
    একই কথা ও চিন্তা ইমামে আজম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এর ক্ষেত্রে। উনি ফিকহী বিষয়ে শুরুতে বেশ চিন্তামগ্ন ও ব্রত ছিলেন। ফলে, সমসাময়িক অনেক মোহাদ্দীসগণ ইমামে আজমকে মোহাদ্দীস হিসাবে বিবেচ্য করতেন না। তাই বলে কি তাদের কথাই চূড়ান্ত হয়ে যাবে ??
    আবু হানীফার ব্যাপারে কিছু মুহাদ্দীসের বিচ্ছিন্ন কথা যদি চূড়ান্ত হয়ে থাকে, তাহলে তো ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ এর ব্যাপারে ইবনে রুশদ রাহিমাহুল্লাহ এর কথাও চূড়ান্ত হওয়ার কথা৷
    তবে কি আপনারা তাই করেন ? আই মিন, আবু হানীফাকে যেভাবে মোহাদ্দীস হিসেবে মান্য করেন না, সেভাবে কি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাঃকেও মুজতাহিদ ইমাম হিসেবে প্রত্যাখান করেন ??
    এখানে এসে কারো কারো ডাবল স্ট্যান্ডবাজি ধরা পরে যায়৷ একদিকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ -কে ইমাম মানেন, আবার অপর দিকে ইমামে আজমকে মুহাদ্দীসগণের কাতার থেকে প্রত্যাখান করেন।
    আল-ইয়াজুবিল্লাহ!
    তারা সবাই আমাদের সালাফ। তারা আমাদের থেকে ইমানে, আমলে ও সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে৷ তাদেরকে দোয়া করার জন্য আল্লাহ তা’লা আমাদেরকে পবিত্র কোর’আনে শিখিয়ে দিচ্ছেন –
    ربنا اغفرلنا ولاخواننا الذين سبقوانا بالايمان
    ওগো প্রভূ, আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং ক্ষমা করো তাদেরকে ( সালাফ) , যারা আমাদের থেকে ইমানে এগিয়ে গিয়েছেন৷
    আল্লাহ তো আমাদেরকে সালাফদের ব্যাপারে দোয়া শিখিয়েছেন। সমালোচনা আর গালমন্দ করতে শিখান নি। তবুও যদি প্রিয় ভাই, সমালোচনা করতেই হয়। তবে ইনসাফ বজায় রেখে সমালোচনা করুন। নতুবা, জালিম হিসেবে সাব্যস্ত হবেন। আর জানেন’ই তো, আল্লাহ তা’লা জালিমদের ব্যাপারে বলতাছেন –
    ان الله لا يحب الظالمين
    নিশ্চয়ই, আল্লাহ তা’লা জালিমদেরকে ভালোবাসেন না৷
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    ইসলামিক আইন ও বিচার বিভাগ,
    মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব৷
    _____________________________________
    বিস্তারিত জানতে, বিদায়াতুল মুজতাহিদ এর ভূমিকা পড়ুন। হাদিস শাস্ত্রে আবু হানীফার অবস্থান জানতে মানাকিবে ইমাম আজম পড়ুন৷ আবু হানীফার ব্যাপারে কিছু মোহাদ্দীসের এমন মনোভাব কেন, জানতে আল-ফিকহুল আকবর এর অনুবাদ পড়ুন।

  5. হানাফী মাজহাবের একটি চমৎকার উসূল বা মূলনীতি এবং মাজহাব নিয়ে বিভ্রান্তির নিরসন
    ____________________________
    ইতিপূর্বে অনেকবার বলেছি যে, হাদীস কিংবা ফিকাহ বলেন ; মূলনীতি না জানার কারণে অনেকের মনে বিভ্রান্তি তৈরী হয়। ফলে, যে কোন মাজহাব নিয়ে সহজে গালমন্দ বা বদ-গোমান চলে আসে৷ বস্তুত, কেউ যদি প্রত্যেক মাজহাবের স্বতন্ত্র মূলনীতিগুলা জানে ও ভালো করে বুঝে, তাহলে আশাকরি কেহ মাজহাবকে কোর’আন-হাদিসের মুখামুখি হিসেবে দাঁড় করাবে না৷
    হাদীসের ক্ষেত্রে হানাফী মাজহাবের একটা চমৎকার মূলনীতি বা উসূল হলো –
    ” খবরে ওয়াহিদ হাদীস যদি কোর’আনে কারীমের আ’ম আলোচনার বিপরীত বা বর্ধিত কিছু হয়, তাহলে কোর’আনের আ’ম আলোচনার উপর আমল হবে। খবরে ওয়াহীদকে কেতঈ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। ”
    নোটঃ হাদীস বর্ণনার দিক দিয়ে দু’প্রকার –
    ১. মুতাওয়াতীর
    এমন হাদিসকে বলে, যার বর্ণনাকারী প্রত্যেক যুগে অগণিত হয়ে থাকেন। এতে মিথ্যার কোন অবকাশ থাকে না৷
    ২. খবরে ওয়াহিদ
    এমন হাদিসকে বলে, যার বর্ণনাকারী একজন, দু’জন বা তিনজন হয়ে থাকেন , তবে মুতাওয়াতির পর্যায়ে কখনো না৷
    আশাকরি, খবরে ওয়াহীদ কি, তা জানা হয়ে গেছে। এখন উপরোল্লিখিত হানাফী মাজহাবের উসূল বা মূলনীতি এর ব্যাখ্যা দিচ্ছি –
    ধরুন, কোর’আনে কারীমে একটা হুকুম এসেছে আর হুকুমটা একেবারে আ’ম ( ব্যাপক ) আলোচনা। নিয়ম হচ্ছে, আ’ম ( ব্যাপক) হুকুমকে খাস ( নির্দিষ্ট) করবে কোর’আনের অন্য আয়াত বা হাদীস৷
    এবার যদি কোর’আনের আ’ম ( ব্যাপক) হুকুমকে খাস ( নির্দিষ্ট ) করতে চায় কোন খবরে ওয়াহিদ হাদীস, তাহলে এই ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা, হাদিসের মূলনীতিতে, খবরে ওয়াহীদ ইলমে জান্নী ( সন্দেহপ্রবণ ) এর ফায়দা দেয়। কেতঈ বা নিশ্চিত কোন কিছুর ফায়দা দেয় না। যদিও তা রাবীর দিক থেকে বা সব দিক দিয়ে হাদীসটা সহীহ৷
    এবার উপরোক্ত মূলনীতির একটা উদাহরণ কোর’আন ও হাদীস থেকে পেশ করি –
    ১. কোর’আনে কারীমে সূরায়ে হাজ্জ্বের ৭৭ নং আয়াতে আল্লাহ তা’লা বলেন –
    إركعوا واسجدوا
    তোমরা রুকু করো এবং সেজদা করো।
    খেয়াল করুন, উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’লা একটা আম ( সাধারণ ) ঘোষণা দিয়েছেন সেজদা করার জন্য । সেজদাহ কিভাবে করবে বা কি কি অঙ্গ সেজদার অন্তর্ভুক্ত, তা কোর’আনের কোথাও বর্ণিত নয়৷ আর সরল অর্থে সেজদাহ হচ্ছে, কপালটা মাটিতে স্পর্শ করালেই চলে৷
    ২. সহীহ হাদীসে এসেছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি সাতটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সেজদাহ করতে৷ প্রথমতো, কপাল। তারপর, রাসূল সাঃ ইশারাহ করে বলেন, দু’হাত, দু’হাটু ও দু’পায়ের গোড়ালি ইত্যাদি। ( বুখারী ; ১৫৪ )
    এবার খেয়াল করুন, কোর’আনে বর্ণিত কেবল সেজদা’র কথা। কিন্তু, এই হাদিসে এসেছে – সেজদাহ হতে হবে সাতটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাটির সাথে মিলনের মাধ্যমে৷ তাহলে পাওয়া গেলো, কোর’আনের আম হুকুমকে এই হাদীস এসে খাস বা নির্দিষ্ট করতেছে৷
    আমরা পাইলাম, কোর’আনের আ’ম ( সাধারণ) হুকুম ও হাদিসের খাস ( নির্দিষ্ট ) আলোচনা।
    এই জায়গায় এসে, ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা কোর’আনের আম হুকুমকে প্রাধান্য দিবো৷ হাদিসের খাস হুকুমকে আম হুকুমের উপর প্রাধান্য দিবো না। কেননা, হাদীসটা মুতাওয়াতির পর্যায়ের নয় ; বরং, খবরে ওয়াহীদ৷ যদি হাদিসটা মুতাওয়াতির হতো, তাহলে মেনে নিতে কোন বাঁধা ছিলো না৷ কেননা, মুতাওয়াতির হাদিস ইলমে ইয়াকিন এর ফায়দা দেয় আর খবরে ওয়াহীদ ইলমে জান্নি এর ফায়দা দেয় ।
    নোটঃ এই মূলনীতিতে, ইমাম আজম আবু হানীফা রাঃ খবরে ওয়াহীদকে ফারজ হিসেবে না ধরে সুন্নাহ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।
    শেষকথা , উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম যে, হাদীস কেবল সহীহ হলে আ বুখারীতে আসলেই আমলের উপযুক্ত হয় না। বরং, আরো কিছু কথা বাকি থেকে যায়৷ আর বাকি কথার মধ্যে এটি অন্যতম একটি !
    সহীহ হওয়া সত্ত্বেও খবরে ওয়াহীদ হাদিসকে গ্রহণ করা যাবে কি না, এই ব্যাপারে ইমামদের বিশাল মতানৈক্য রয়েছে৷ ইমাম আজম আবু হানীফা রাঃ বলেন, পাঁচটি শর্তের মাধ্যমে খবরে ওয়াহীদকে গ্রহণ করা যায় অন্যথায়, তা সহীহ হওয়া সত্ত্বেও গ্রহণ করা যাবে না৷
    নোটঃ খবরে ওয়াহীদ গ্রহণ করার শর্ত নিয়ে অন্য কোন লেখায় আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ ।
    এবার, আপনি হয়তো খবরে ওয়াহিদ চিনেন না, মুতাওয়াতির জানেন না, ওয়াহিদ গ্রহণ করার শর্ত জানেন না৷ কিন্তু, শুধু দেখলেন হাদীসটা সহীহ বা বুখারী/মুসলিমে এসেছে ; বাট, আবু হানীফা রাঃ গ্রহণ করেন নাই ।
    তাহলে কি বলবেন, আবু হানীফা হাদীস জানেন না ? আবু হানীফার কাছে হাদীস পৌঁছে নাই ? আবু হানীফা দূর্বল রাবী ? আবু হানীফা হাদিস বিরোধী ?
    সাবধান ! নিজের অজ্ঞতা দিয়ে কখনো উম্মাহের সালাফগণের ব্যাপারে মিথ্যা ধারণা করবেন না৷ উনারা কোর’আন-হাদিসের বিশাল পান্ডিত্ব নিয়েই ফতোয়া দিয়েছেন। সবকিছুর এদিক-ওদিক বিবেচনা করেই রায় দিয়েছেন৷ আলোচিত মাস’আলায় দেখেন, তিনি হয়তো খবরে ওয়াহিদ হাদিসকে ফারজ হিসেবে গ্রহণ করেন নাই, তবে কি কোর’আনের উপর আমল করেন নাই ? তাহলে কোন বিবেকে আপনি বলবেন, হানাফী মাজহাব মানেই কোর’আন-হাদীস বিরোধী ??
    রাহিমাকাল্লাহ ইয়া আবা হানীফা ❤️❤️
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারীয়া বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়৷

  6. একজন দ্বীনি ভাই ইনবক্সে এসে কিছু কথা বলতে চেয়েছেন। বললাম, চালিয়ে যান৷
    শুরুতেই প্রশ্ন করলেন –
    কোর’আন-হাদিস থাকা সত্ত্বেও মাজহাব নিয়ে কেন পড়াশোনা করা দরকার ? কোর’আন-হাদিসে যা আছে, তাই মানবো ! মাজহাব নিয়ে কেন পড়ে থাকবো ?
    আমি বললাম –
    কোর’আন-হাদিস থাকা সত্ত্বেও উলুমুল হাদীস তথা সহীহ, জঈফ, মাওজু ইত্যাদি নিয়ে কেন পড়াশোনা করার দরকার ? কোর’আন-হাদিসে যা আছে, তাই’ই মানবেন। সহীহ / জঈফ ইত্যাদি নিয়ে পড়ে থাকেন কেন ?
    তিনি বললেন –
    আহারে ভাই, সহীহ / জঈফ এগুলা তো হাদিস জানার জন্য বা সঠিকটা বুঝার জন্য পড়ি৷ এগুলা তো কোর’আন-হাদিসের বাহিরা কিছু না৷
    আমি বললাম –
    আহারে ভাই, মাজহাব তো মাস’আলা-মাসাইল জানার জন্য বা সঠিক আমল বুঝার জন্য পড়বেন। এগুলা তো কোর’আন-হাদিসের বাহিরা কিছু না।
    আশ্চর্য ! এ কথা বলতেই দেখি ইতিমধ্যে আমি অন্ধ-কারাগারে বন্দি হয়ে গেছি। ভাইটি অসহ্য হয়ে অল্প কথায় ব্লক মেরে পলায়ন করলেন৷
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারীয়াহ বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়

  7. এক ভাই যুক্তি দিয়ে বলতাছেন –
    ” আমরা যখন তারকারী বাজারে যাই, তখন যেনতেন তারকারী কিনি না। তখন আমরা কি করি? যাচাই-বাছাই করে ভালো যে তারকারি, তা ক্রয় করি।
    তাহলে দ্বীনি বিষয়ে আমরা কেন যাচাই-বাছাই করবো না ? আমরা অবশ্যই সবার কথা শুনব ৷ যারটা ভালো হবে, যাচাই-বাছাই করে তারটাই গ্রহণ করবো । ”
    প্রতুত্তরে আমি বললাম –
    ” আমরা কখনো পঁচা বাজারে যাই না। ফলে ভালো-মন্দ যাচাই-বাছাই করার কোন প্রয়োজন ও হয় না। সর্বদা ভালো বাজারে চলে যাই, যেখানে যাচাই-বাছাই করেই ভালো মাল রাখা হয়েছে। ফলে কষ্টকরে আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হয় না৷ আমরা ভালো বাজারে যা পাই, তাই কিনে নিয়ে আসি৷
    তাহলে দ্বীনি বিষয়ে কেন আমরা উম্মাতের শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদদের কাছে যাবো না ? যারা যাচাই-বাছাই করেই সব ভালো ফতোয়া দিয়ে গিয়েছেন। আমরা প্রয়োজন হলেই তাদের ভালো ফতোয়া গ্রহণ করি। তাদের কাছে ভালো-মন্দ নিয়ে আমাদের কোন সংশয় করতে হয় না।
    কারণ, আমরা বুঝেশুনেই তো তাদের কথা গ্রহণ করি ; যাদের কাছে ভালো ছাড়া মন্দ কিছু নেই ৷ আর আপনাদের সংশয় করতে হয়। কেননা, যাদের অনুসরণ করেন ; তাদের কথায় ভালো-মন্দের মিশ্রণ রয়েছে। ফলে, যাচাই-বাছাই করে ভালোটা গ্রহণ করতে হয়। ”
    শেষ করছি, গ্রামের এক মুরব্বী চাচার কথা দিয়ে৷ তিঁনি একদিন বললেন –
    ” ওবা ভাতিজা, কখনো কখনো যেমন লাটি ; তেমন মুগুর হাতে নিতে হয় ৷ শক্ত মুগুর না হলে লাটি কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়াবে না। “

  8. ” হানাফী মাজহাব ” এর অর্থ কী ?
    ২২০ হিজরী থেকে নিয়ে অদ্যাবধি পর্যন্ত একগুচ্ছ আহনাফ ফোকাহাদের সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ ফাতোয়ার সমষ্টিগত নাম ” হানাফী মাজহাব “। আর যারা এই ফাতোয়া গ্রহণ করে, তারা হয় ” হানাফী অনুসারী “।
    এই সংজ্ঞা থেকে কয়েকটি কথা স্পষ্ট হয়ে যায় –
    ১. হানাফী মাজহাব কোন ব্যক্তি তাকলীদ করে না ( তাকলীদে শাখসী )
    কারণ, হানাফী মাজহাবের ফাতোয়াগুলাতে কোন একক ব্যক্তির মতামত প্রাধান্য পায় নাই৷ সময়ের শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ ফকিহদের সম্মিলিত ফাতোয়া স্থান পেয়েছে। ফলে, এক সাথে একাধীক ব্যক্তির তাকলীদ হয়ে থাকে।
    ২. হানাফী মাজহাব মানেই আবু হানীফা রাঃ এর ফতোয়া নয়। বরং, পরবর্তী সালাফ-খালাফ অনেক ফোকাহের মতামত ও চিন্তার সমন্বিত নাম হানাফী মাজহাব।
    ৩. হানাফী মাজহাবে এমনও অনেক ফতোয়া আছে, যা খুদ ইমামে আজম রাঃ এর বাহ্যিক ফাতোয়ার বিপক্ষে রয়েছে৷ তদুপরি, আদিল্লার ভিত্তিতে পরবর্তীতে খালাফদের ফতোয়া হানাফী মাজহাবে প্রাধান্য পেয়েছে৷
    মোদ্দাকথা, তাকলীদে শাখসী হারাম ফাতোয়া দিয়ে হানাফী মাজহাবকে ঘায়েল করা যাবে না৷ কেননা, হানাফী মাজহাবে হাজারো মুজতাহিদ মুকাইয়াদ ফোকাহার ফতোয়া সন্নিবেশিত হয়েছে৷

  9. ইমাম আবু বাকর আল-বাকিল্লানী রাহিমাহুল্লাহ একজন প্রথিতযশা বিতার্কিক ছিলেন। তিঁনি একদা একজন খৃষ্টান পাদ্রীর সাথে বিতর্কে জড়িত হোন।
    এক পর্যায়ে খৃষ্টান পাদ্রী বললো –
    আপনারা মুসলিম সম্প্রদায় বর্ণবাদী, সাম্প্রদায়িক ।
    ইমাম বাকিল্লানী রাঃ বললেন –
    কিভাবে আমরা বর্ণবাদী হলাম ??
    খৃষ্টান পাদ্রী বললো –
    আপনারা নিজেদের পুরুষদের জন্য আহলে কিতাবী ( ইহুদী-খৃষ্টান) মেয়ে বিবাহ বৈধ মনে করো, অথচ আহলে কিতাবী পুরুষের জন্য আপনাদের মেয়ে বিবাহ বৈধ মনে করো না।
    ইমাম বাকিল্লানী রাঃ বললেন –
    আমরা ইহুদী মেয়ে বিবাহ করি, কেননা আমরা মূসা আঃ এর উপর ঈমান এনেছি। খৃষ্টান মেয়ে বিবাহ করি, কেননা আমরা ঈসা আঃ এর উপর ঈমান এনেছি৷
    তোমরা কবে আখেরী নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা সাঃ এর উপর ঈমান এনেছ যে, তোমরা আমাদের মেয়ে বিবাহ করবে ?
    ইমাম বাকিল্লানী রাঃ এর জবাব শুনে খৃষ্টান পাদ্রী একেবারে হতবিহ্বল হয়ে গেলো ।

  10. ” মাজহাব বিমুখী ” হওয়া বর্তমান সময়ের বড় একটা ট্রেন্ড। এই প্রবণতায় অনেকেই না -জেনে আগ বাড়ছেন৷ তবে, এই বিমুখতা নিয়ে হৈচৈ হলেও এর পরবর্তী ফলাফল নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না৷
    মাজহাব ত্যাগ করে পরবর্তীতে কে কি হলেন, এর একটা ফিরিস্তি নিয়ে আলোচনা করি।
    নতুন দ্বীন শিখা অনেকের গায়ে যখন ” সহীহ সহীহ ” বাতাস লাগে, তখন তনু-মনে আলাদা একটা ভাব আসে। আর এই ভাব থেকে অনেক বিষাক্ত শুক্রাণু জন্মে, যার ফলাফল কখনো ইমানহারা অবস্থা হয়৷
    এর একটা জলন্ত উদাহরণ দেই –
    প্রিয় ছোট ভাই Ishtiaq Ahmad এর বর্ণনা অনুযায়ী, উনার এক নিকটজনের বিবর্তন কাহিনী প্রায় এরকম –
    একজন দ্বীনি ভাই। শুরুর দিকে মাজহাব ইত্যাদি নিয়েই ইমানের হালতে ছিলেন। পরবর্তীতে, হঠাৎ গায়ে সহীহ বাতাস লাগে৷ এক পর্যায়ে সহীহ পাল দৌঁড়াতে থাকেন।
    নাহ, বেশীদিন সহীহ পাল দৌঁড়াতে পারেন নাই। বাতাসের সীমাবদ্ধতায় এক পর্যায়ে এগনস্টিক হয়ে যান । বর্তমানে, তিনি একজন নাস্তিক! আল-ইয়াজুবিল্লাহ !
    এর কারণ, একটাই! কারো তোওয়াক্কা না করে নিজে নিজেই সব সহীহ খুঁজে বের করা। যারা এমন করেন, তাদের অনেকেই আবার –
    → সহীহ খুঁজতে গিয়ে এক পর্যায়ে মাজহাব ত্যাগ করেন।

    সহীহ খুঁজতে গিয়ে এক পর্যায়ে সিহাহ সিত্তাহ ত্যাগ করেন।
    → সহীহ খুঁজতে গিয়ে পর্যায়ে বুখারী-মুসলিম ত্যাগ করে আহলে কোর’আন হয়ে যান।
    → সহীহ খুঁজতে গিয়ে এক পর্যায়ে কোর’আন ত্যাগ করে একেবারে সহীহ পন্থায় নাস্তিক হয়ে যান।
    নোটঃ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ও সত্যতা ইশতিয়াক ভাই থেকে প্রমাণ সহ জেনে নিতে পারবেন।
    আরেকটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি –
    একদিন একজন ভাই ইনবক্সে এসে বললেন – ভাই, আমি যদি শুধু বুখারী-মুসলিম অনুসরণ করি, তাহলে কি কোন সমস্যা হবে ?
    আমি বললাম –
    বুখারী-মুসলিম এর পাশাপাশি বাকি প্রসিদ্ধ হাদিসের চার কিতাব মানলে কি অসুবিধা হবে ?
    তিনি বললেন –
    না, ভাই ! আমি শুধু সহীহ হাদীসই অনুসরণ করি। বাকি চার কিতাবে ( আবু দাউদ,তিরমিজি,নাসাই, ইবনে মাজাহ) তো জাল,জইফ ইত্যাদি হাদিসে ভরপুর। তো এসব মানব কেন ?
    আমি বললাম –
    শুধু বুখারী-মুসলিম মেনে কি আপনার দ্বীনের উপর চলা যথেষ্ট হয়ে যায়?
    তিনি বললেন –
    জ্বি, হ্যাঁ ! আমি যা চাই ; সব বুখারী-মুসলিমে পেয়ে যাই। তাই অন্য কিছু আমার খুঁজতে হয় না৷
    তখন বললাম –
    আপনি যে নামাজে বুকের উপর হাত বাঁধেন, এর একটা দলীল কোর’আন বা বুখারী-মুসলিম থেকে দেন।
    তিনি বললেন –
    আমার মোবাইলে এখন চার্জ কম। বাসায় গিয়ে হাদিস এপ্সে তালাশ করে আপনাকে জানাব।
    আমি বললাম –
    এখন, তখন এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত খুঁজলেও আপনি বুখারী-মুসলিমে বুকের উপর হাত বাঁধার দলীল পাবেন না। কারণ, এই দলীল তো বুখারী-মুসলিমে নাই। আপনি নামাজে হাত বাঁধতে হলে বাধ্য হয়ে বাকি চার কিতাবের দ্বারস্থ হবেন।
    তিনি বললেন –
    যাই, পরে কথা হবে। এখন মোবাইলে চার্জ নাই।
    ( হায় মোবাইল! হায় চার্জ)
    যাইহোক, পরবর্তীতে এই ভাই সহীহ পন্থায় পলায়ন করেছেন৷ আর কোন দিন কথা হয়নি, হয়তো বেচারা আমার উপর বেজায় ক্ষেপে আছেন! আল্লাহ মা’লুম!
    যাইহোক, প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা ! আপনাদেরকে অনুরোধ করে বলি, সহীহ খুঁজে খুঁজে আমল করুন – অসুবিধা নাই। তবে, অনুগ্রহ করে কোন না কোন আলিমের তত্ত্বাবধানে জেনে নিবেন।
    সবকিছু নিজের উপর ন্যস্ত না করে, আলিমদের উপর ও কিছু ছেড়ে দিবেন। তবে, নিজেকে এগনস্টিক চিন্তা থেকে হেফাজত করতে পারবেন।
    নতুনা, নিজের অজান্তেই কোন এক সময় এভাবে বিবর্তন হতে হতে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যেতে পারেন। আল্লাহ মা’ফ করুক!
    এমন অনেক দেখেছি, যারা শুরুতে –
    → মাজহাব ত্যাগ করেছেন
    → পরে সিহাহ সিত্তা ত্যাগ করেছেন
    → পরে হাদিসই ত্যাগ করেছেন
    → শেষতক, আহলে কোর’আন হয়ে আছেন
    ইতিহাসে, বিভিন্ন বাতিল ফিরকার আবির্ভাব কিন্তু এভাবেই হয়েছে। এটা না ওটা, ইত্যাদি যাচাইয়ের ভার নিজের উপর নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা থেকে একদিন বাতিক ফেরকায় পরিগনিত হয়েছে।
    আপনারা যারা সহীহ খুঁজতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন, আপনাদের এই প্রচেষ্টা ও ইচ্ছাকে মন থেকে এপ্রিশিয়েট করি। তবে, অনুরোধ থাকবে, আপনি যে মানহাজের হোন ; সেই মানহাজের সম্মানীত শায়খদের অনুসরণ করে চলবেন।
    আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুক!

  11. আমাদের দেশে অনেকেই দাবী করেন যে, এ দেশে মক্কা-মাদীনার ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷
    মূলত, তারা বুঝাতে চান – বাংলাদেশে মক্কা-মাদীনার মতো সহীহ আমল সমূহ প্রচার করতে চান।
    ওয়েল! ভালো কথা৷
    তারপর যদি, আপনি তাদেরকে বলেন –
    মক্কা-মাদীনায় তো জুম’আর নামাজে দুই আজান হয়। আপনারা একটা করেন কেন ?
    মক্কা-মাদীনায় তো তারাবীহ বিশ রাকাত হয়৷ আপনারা আট রাকাত পড়েন কেন ?
    এরকম বেশ কিছু তাদের কথা ও কাজের বৈপরীত্য আছে, এগুলা আপনি যখন তাদের সামনে তুলে ধরবেন। ঠিক তখন মক্কা-মাদীনার ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার সেই সুর পাল্টে যাবে৷
    তখন বলবে –
    মক্কা-মাদীনা কি শারীয়তের দলীল??
    কি এক অবস্থা ????

  12. ইমাম সাহেবে সালাম ফেরাতে না ফেরাতেই দেখি পাশের একজন মুসল্লি খুব হুলুস্থুল হয়ে পিছনের কয়েক কাতার লোক ডিঙ্গিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন!
    আমি খানিকটা অবাক-বিস্ময় হলাম। তিনি নামাজে কতইনা সুন্দরে বুকের উপর হাত বাঁধলেন। অত্যন্ত যথাযথ উপায়ে একাধিকবার রাফয়ে য়াদাইন করলেন। কি চমৎকার লম্বালম্বি করে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ালেন।
    দেখে মনে হলো, কতইনা শান্তি আর প্রশান্তির নামাজ। চিন্তা আসলো, তাহলে লোকটি নামাজ শেষ হতেই এভাবে দৌঁড়ঝাপ দিয়ে বের হওয়ার কারণ কি ?
    ভাবতে থাকলাম, হয়তো কোন প্রবলেম আছে!
    শান্তশিষ্ট দ্বীনি ভাইটির কোন সমস্যা কি না, তা জানতে অনেকটা কৌতূহল জাগ্রত হলো। নিয়ত করলাম, মসজিদ থেকে বের হয়ে সাক্ষাত পেলে জিজ্ঞেস করে দেখবো, কি ব্যাপার !
    ভাগ্যক্রমে, মসজিদ থেকে বের হতেই পেয়ে গেলাম৷ সালাম-কালাম করে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি জবাবে বললেন –
    ভাই, এই মসজিদে নামাজ শেষে বিদ’আতি কাজ হয়৷ আমার তা সহ্য হয়না। তাই নামাজ শেষেই বের হয়ে যাই। অন্য কোন সমস্যা না৷
    আমি বললাম –
    কোন সে বিদ’আত ভাইজান ?
    তিনি বললেন –
    নামাজ শেষে সম্মিলিত মোনাজাত।
    আমি বললাম –
    ওহ, হো !
    তারপর বললাম –
    দেখেন, দোয়া যদি বিদ’আতই হয় ; তবে আপনাকে কেউ বাধ্য করে না৷ ইমাম সাহেব স্বেচ্ছায় দোয়ার জন্য হাত তুলেন। আপনার ইচ্ছা হলে দোয়া করবেন, না হলে বসে থাকবেন।
    তবে এভাবে সবাইকে ডিঙ্গিয়ে বের হয়ে যাওয়া অসৌজন্যমূলক ও এমনকি কখনো মুসল্লিদের কাছে ন্যাক্কারজনক মনে হয়৷
    ভাই রে ভাই, এ কথা বলতেই লোকটি বেজায় ক্ষেপে উঠলো ।
    একটু থামিয়ে বললাম –
    বিদ’আত কাজ করেন না,এটা প্রশংসনীয়। তবে, সূন্নাহ কাজ তারক করলে, তা কিন্তু নিন্দনীয়। আপনি বিদ’আত কাজ না করে, সুন্নাহ ( তাসবীহ) কাজ তো করতে পারেন। আপনাকে কেউ বাঁধা দিবে না৷
    প্রিয় ভাইয়েরা,
    নামাজের শেষে সম্মিলিত মোনাজাত অকাট্য পন্থায় সাব্যস্ত না৷ কেউ এড়িয়ে যেতে চাইলে অনুগ্রহকরে সবাইকে ডিঙ্গিয়ে মসজিদ থেকে বের না হয়ে, বরং চুপসে বসে সুন্নাহ আমল করবেন।
    নামাজ শেষে সম্মিলিত মোনাজাত রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত না হলেও বিভিন্ন তাসবীহাত প্রমাণিত । অতএব, বিদ’আত পরিত্যাগ করতে গিয়ে সুন্নাহ কাজ যেন ভুলে না যাই।

  13. আল্লাহু আকবার !
    আমি হয়তো আপনাদেরকে বিষয়টা বুঝাতে দশ বছর লাগতো ; সেই বিষয়টা আরবের প্রখ্যাত এই শায়খ অতি সংক্ষেপে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
    আপনাদের বুঝার স্বার্থে আমি এখানে হু-বহু অনুবাদ তুলে ধরলাম। ( ভিডিও লিংক কমেন্টে)
    ________________________________
    আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!
    একজন ব্যক্তি উটর গোস্ত খাওয়ার হুকুম সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করলো –
    উটের গোস্ত খেলে ওজু ভঙ্গ হবে কি না ?? এটা একটা প্রসিদ্ধ মাস’আলা৷
    আমি বললাম –
    এই মাস’আলায় উলামাগণ ইখতেলাফ করেছেন।
    সে বললো –
    বিশুদ্ধ মত কোনটি?
    আমি বললাম –
    প্রত্যেকেই যে যেটা মত দিয়েছেন,তার কাছে সেটিই বিশুদ্ধ৷
    সে বললো –
    আপনি আমাকে এই ব্যাপারে কি উপদেশ দিবেন?
    আমি বললাম –
    তুমি তোমার দেশের আলিম-উলামার মতটাই গ্রহণ করবা এবং সেই অনুযায়ি আমল করবা৷ আর এই মতটা গ্রহণের মধ্য দিয়েই তুমি শান্তি থাকবা৷
    সে বললো –
    আপনার প্রতি কৃতজ্ঞত জানাচ্ছি।আল্লাহ কবুল করুক।
    আমি এই লোকটির মাঝে দেখতে পেলাম যে, সে প্রকৃত প্রশ্নকারী। কারণ, মতবিরোধ মাসালা বর্ণনার পদ্ধতি এমনটা আমরা শিখেছি আমাদের শায়খদের থেকে। মতবিরোধ মাসালায় আপনার উচিত হলো, নিজ দেশের আলিম-উলামার মতটা গ্রহণ করা৷
    মতানৈক্যপূর্ণ মাসালায় আজকাল আমাদের মধ্যে পারস্পরিক যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেছে, তার অন্যতম কারণ হলো ______ মূর্খতা৷ মূর্খতা ? জ্বী, হ্যাঁ মুর্খতা।
    কেননা, আমাদের অনেকেই ফতোয়া জানার জন্য চলে যায় ( ভিন্ন দেশের ফতোয়া জানা) নিজ দেশের বাহিরা আলিম-উলামাদের কাছে। অতঃপর, তাদের কথা নিয়ে আসে নিজ দেশের আলিম-উলামাদের কাছে, যাদের থেকে সে দ্বীন শিখেছে, নিজের নাম-কালাম শিখেছে। শেষতক, ভিন দেশের মাসালা জেনে নিজ দেশের আলিম-উলামাদের বলে –
    “আপনাদের ফতোয়া ভুল। বলেছেন, সৌদির শায়খ ”
    প্রত্যেক মানুষই চায় যে, সবাই যেন তার শায়খের কথা মানে। আর যে তার সাথে এক মত হয় না। তাকে শত্রু মনে করে। এটা বড় ধরণের ভুল৷ এটা কোন আকলই নায়।
    এজন্য সৌদি আরবের একজন প্রখ্যাত আলিম,মদীনার বসবাসকারী ও মসজিদে নববীর শায়খ শায়খ আব্দুল্লাহ আল আমিন ইবনে মুহাম্মাদ আল আমিন হাঃ কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো –
    মাস’আলাটিতে রাজেহ মত কোনটি ??
    শায়খ বললেন –
    কার নিকট রাজেহ ?? তুমি কি আমার নিকট রাজেহ মত চাও ?? আমার কাছে যে মতটি রাজেহ, তা আমার জন্য ছেড়ে দাও৷ আর যদি তুমি আলিম না হও, আহলে রাজেহ ( মুজতাহিদ ফিল মাজহাব) না হও, তাহলে তোমার দেশের আলিম-উলামাদের তাকলীদ ( অনুসরণ) করো৷ যারা তোমাদের মাঝে ফতোয়া দিয়ে থাকেন। আর এভাবে বিষয়টি সমাপ্তি হয়ে যায়৷ বিষয়টি একদম সহজ ! যাদের ফিকাহ জ্ঞান কম, তারাই পারস্পরিক ঝগড়াঝাটিতে লিপ্ত হয়৷
    একবার ইমাম আহমদ রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হলো –
    আমি কি এমন ইমামের পিছনে নামাজ পড়বো ? যে ফজরের নামাজে কুনুত পড়ে ( যেটা শাফেয়ী মত) ?
    তিনি বললেন –
    আমি কি ইমাম শাফেয়ীর পিছনে নামাজ পড়বো না?? প্রশ্নটি ইমামকে খুব রাগান্বিত করলো। যদিও ইমাম আহমদ রাঃ এর মতে নাওয়াজিল নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত পড়া যাবে না৷
    জ্বী, হ্যাঁ ! বিষয়টা একদম সহজ৷ এসব বিষয়ে আকাবিরদের সেই প্রথম শতাব্দি থেকে ইখতেলাফ লেগে আছে ৷ অস্বাভাবিক কিছু না এসব।
    অতএব,
    যে ব্যক্তির ইলম-কালাম নাই বা তারজিহ করার মতো যোগ্যতা নাই, তার উচিত এসব মাসালায় নিজ দেশের আলিম-উলামার মতকে গ্রহণ করা। নিজ দেশে প্রতিষ্ঠিত মাজহাবের উপর আমল করা। যে মাজহাব নিজ দেশে পড়ানো হয়৷ সেই মাজহাব অনুসরণ করা৷
    মোটেও ভিন দেশের মাজহাব অনুসরণ করতে যেয়ো না। প্রত্যেকেই যার যার মাজহাব অনুসরণ করেন। আর এসব মাসালা তো ইজতেহাদিয়্যাহ৷
    যেসকল মাসালায় সকল আলিম-উলামার ঐক্যমত রয়েছে, সে বিষয়ে তো মাজহাব সংক্রান্ত কিছু বলা হয় না ! মনে করুন, জুহরের নামাজ চার রাকাত। কেউ বলে না এটা আহমদের মাজহাব। এই ক্ষেত্রে সবার মাজহাব একই৷ মাজহাব তো এসেছে কেবল মতবিরোধপূর্ণ মাসালার কারণে। কোন মুত্তাফাক বা স্পষ্ট মাসালার কারণে আসে নাই৷ সুতরাং, কেন আপনি নিজের দেশের মাজহাবের কথা ছেড়ে অন্য দেশের মাজহাবের কথা মানবেন ?? কেন ??
    নিজ দেশের আলিম-উলামারাও মুজতাহিদ, অন্য দেশের আলিম ও মুজতাহিদ । তুমি কোন আলিম নও। তোমার কোন পরিবার নাই, আবার কোন দল ও নাই ( মানে নিজের কোন মাজহাব নাই)৷ তুমি যখন নিজ দেশের আলিম-উলামার অনুসরণ ছেড়ে অন্য দেশের আলিম-উলামার অনুসরণ করো, তখন এতে লাভ কি পাও ? একজনের তাকলীদ ছেড়ে আরেকজনের তাকলীদে করলেন , এতে লাভ কি হলো ?? নতুন কিছু তো নিয়ে আসতে পারো নাই ??
    এটা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, তুমার মূর্খতার উপরে মূর্খতা রয়েছে ( মানে গন্ড মূর্খ) । মতানৈক্য বিষয়ে সবসময় নিজ দেশের আলিম-উলামার মতামত জেনে নাও৷ জিজ্ঞেস করে নাও৷ এবং তাই অনুসরণ করো। তুমি কস্মিনকালেও কোন মাজহাবে এমন কোন মতামত পাবে না, যার ব্যাপারে অন্য মাজহাবের আলিম-উলামা বিদাত বলেছেন!
    এমনকি, শুনেন আমার কথা, যদি নিজ মাজহাবের কোন মতামতকে অন্যরা বিদাত বলে, তবুও তা অনুসরণ করো। এটা আমার ব্যক্তিগত রায়৷ পূর্ব্ববর্ত্তী ও পরবর্তী আলিমরা যেসব বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে নিজেকে নিজেকে পেরেশান করো না৷
    শেষ করবো একটা ঘটনা দিয়ে যা, আমার বেলায় ঘটেছিলো –
    একদা আমরা মসজিদে রাহমাতে ( সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ একটা মসজিদ) ছিলাম। ফজরের নামাজ পরবর্তীতে বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন লোক আমার কাছে আসলো এবং করলো –
    এই মসজিদে ইমামের ( মসজিদে রাহমাত) সবকিছু আমার ভালো লাগে, তবে দুইটা মাসালা ব্যতীত৷
    আমি বললাম –
    সেই দুই মাসালা কি?
    সে বললো –
    প্রথম মাসালা –
    এই ইমাম ফজরের নামাজে কুনুত পড়েন। আর কুনুত পড়া বিদ’আহ৷ অর্থাৎ, সে একটা মতানৈক্য মাসালায় সমস্যা দেখালো এবং সাথে সাথে বিদ’আত এর হুকুম দিয়ে দিলো।
    আমি বললাম –
    তোমার মতামত কি? যদি আজকে আমাদেরকে মালিক ইবনে আনাস রাঃ ফজরের নামাজ পড়াতেন এবং তিনি দুয়ায়ে কুনুত পড়তেন ?
    সে বললো –
    মালিক ইবনে আনাস রাঃ কখনো এমন করবেন না৷
    আমি বললাম –
    তোমার মতামত কি? যদি আজকে ইমাম শাফেয়ী এসে আমাদেরকে ফজরের নামাজ পড়াতেন এবং ফজরের নামাজে কুনুত পড়তেন ?
    সে বললো –
    ইমাম শাফেয়ী কখনো এমনটা করবেন না৷
    তখন আমি বললাম –
    তুমি কি কখনো পড়াশুনা করেছো যে, উনারা দু’জন কি কুনুতের ব্যাপারে কি বলেছেন ? বা তাদের পূর্ববর্তীরা কি বলে গিয়েছেন ?
    সে বললো –
    আমাকে অমুক শায়খ বলেছেন এবং তিনি এই সময়ের শায়খ থেকে আমাকে শুনিয়েছেন।
    আমি তাকে আঞ্চলিক ভাষায় বললাম –
    এখানেই থেমে যান ! তুমি এই জামানার একজন শায়খ থেকে নকল করেছো আর আমি নকল করছি মালিক ইবনে আনাস, ইমাম শাফেয়ী, ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে। আর তুমি বলছো অমুক তমুক শায়খ এর কথা !!
    এখানেই থেমে যান। তুমি কোন আলিম নও৷ এবং তুমি তাদের সারীতেও না৷
    লোকটি এবার তার দ্বিতীয় মাসালার কথা বললো। প্রথম মাসালার মতো এই মাসালায় ও লোকটি এই জামানার অমুক তমুক শায়খের কথা বলে আর আমি বলি প্রথম যুগের সাহাবী, তাবেয়ীদের কথা৷
    আমি আবার বললাম –
    থেমে যাও! আমি বলছি প্রথম যুগের মনীষাদের কথা আর তুমি এই যুগের শায়খদের কথা ? তুমি কোন আলিম নও। সুতরাং তুমি এখানেই থেমে যাও।
    এটাই হচ্ছে বর্তমান জামানার সবচেয়ে বড় সমস্যা। সে জানে না সুফিয়ান সাওরী কে ছিলেন । তার কানে কখনো পৌঁছে নাই ইবনে মোবারক এর নাম৷ জানে না সাত ফুকাহা কারা ! সে জানে না আবু হানিফা কে ! সে জানে না এরা কারা !! তারপরও সে এসে আপনাকে বলবে – অমুক বলেছেন, এটা বিদ’আহ।
    যাইহোক, মতানৈক্য মাসালা সমূহ আপনার মাইন্ডকে ব্রড করে। তবে নিজ দেশের প্রতিষ্ঠিত মাজহাব এর উপর আমল করুন৷ যদিও অন্যরা ভিন কিছু আমল করে। কেননা, দ্বীনি বিষয় খুবই প্রশস্ত৷
    তুমি তো কোন আলিম নও, আহলে তারজীহ নও, তুমি তো কোন মুজতাহিদ নও। সুতরাং তুমি নিজ দেশের প্রসিদ্ধ ইমামদের অনুসরণ করো।
    দোয়া করি, আল্লাহ তালা যেন আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের তাকফীক দান করেন৷ এবং আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন৷

  14. সুবহানাল্লাহ !
    আসুন, এক নজরে জেনে নেই যে, সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কিভাবে ফতোয়া দিতেন
    ________________________
    একদা এক ব্যক্তি ইবনে উমার রাঃ কে এক মাস’আলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ইবনে উমার রাঃ মাস’আলা শুনে মাথা নিচু করে রইলেন, প্রশ্নকারীর কোন উত্তর দিচ্ছিলিনে না৷ প্রশ্নকারী ধারণা করলেন যে, ইবনে উমার রাঃ হয়তো তার মাস’আলাটির জিজ্ঞাসা শুনেন নাই৷
    ফলে, লোকটি ইবনে উমার রাঃ কে বললেনঃ
    আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুক, হে ইবনে উমার, আপনি কি আমার মাস’আলা শুনেন নাই ?
    ইবনে উমার রাঃ বললেন –
    অবশ্যই, শুনেছি ! তবে, আপনারা মনে করেন যে, আপনারা আমাদেরকে যে বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন ; সে বিষয়ে আল্লাহ তা’লা আমাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন না !
    ইবনে উমার রাঃ আরো বললেন –
    বিষয়টি আমাদের উপর ছেড়ে দিন। আমরা বিষয়টি নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করবো। যদি আমাদের কাছে যথোপযুক্ত উত্তর থাকে,তাহলে আপনাকে জানাবো৷ আর যদি কোন উত্তর না পাই, তাহলে বলবো এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোন ইলম নাই৷ (১)
    আল্লাহু আকবার!
    এবার চিন্তা করুন, জলিল কদর সাহাবী ইবনে উমার রাঃ ফতোয়ার ব্যাপারে কতইনা সতর্ক ছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কখনো ফতোয়া দিয়ে দায়মুক্তি মনে করতেন না৷ তাঁরা ফতোয়া প্রদানে আল্লাহকে ভয় করতেন। আল্লাহর জিজ্ঞাসার ব্যাপারে সতর্ক থাকতেন। পূর্ণাঙ্গ পাকাপোক্ত না হয়ে কখনো কোন ফতোয়া দিতেন না৷
    উল্লেখ্যঃ ফতোয়া মানেই কোর’আন-হাদিসের দলীল থাকলেই বলে দেওয়া নয়। বরং, প্রশ্নকারীর অবস্থা, পরিবেশ ও সময় ইত্যাদি বিবেচনা করতঃ কোর’আন-হাদিস ও ফতোয়ার মূলনীতির আলোকে সমাধান দেওয়াকে ফতোয়া বলে৷
    ইবনে জামা’আহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন –
    রাসূল সাঃ এর অধিকাংশ সাহাবী তো খুব কমই ফতোয়া দিতেন৷ এমন অনেক সাহাবী আছেন, যাদের জীবদ্দশা থেকে মাত্র দু’একটি ফতোয়ার কথা জানা যায়৷ অধিকাংশ সাহাবী’ই সতর্কতাবশত ফতোয়া প্রদান থেকে বিরত থাকতেন৷ (২)
    __________________
    ১. طبقات ابن سعد ط العلمية (4/126).
    ২. (تذكرة السامع والمتكلم ص 23)

  15. কিছুদিন পূর্বে একজন লা-মাজহাবী ভাই এসে আমাকে বললেন –
    ভাই, আমরা তো কেবল সহীহ হাদিস পাইলে মানি৷ অন্য কিছু নয় !
    আমি তখন বললাম –
    বাহ, বেশ ভালো তো ! আচ্ছা, আমাকে কি তিরমিজী শরীফের ১৮৭ নং হাদিসটা দেখে কিছু জানাবেন ?
    তিনি বললেন –
    হাদিসটিতে লেখা – রাসুল ( সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ভয় অথবা বৃষ্টিজনিত কারণ ছাড়া মদীনাতে জোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করেছেন ।
    আমি তখন বললাম –
    আচ্ছা ভাই, আপনি এই হাদিস অনুযায়ী প্রতিদিন আমল করছেন তো ?
    তিনি বললেন –
    নাহ, এটার উপর আমল করছি না৷
    আমি তারপর বললাম –
    কেন ? নবী সাঃ কতো সহজ করে দিয়েছেন । কি দরকার আমাদের জোহরের জন্য আলাদাভাবে বিরতি দেওয়ার, আমরা আসরের সময় এক সাথে জোহর ও আছর পড়ে নিব । এবং এশার সময় এক সাথে মাগরিব ও এশা পড়ে নিব ।
    এবং দেখেন হাদিসের শেষে এটাও লেখা আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেনঃ
    উম্মতের অসুবিধা হ্রাস করাই নবী সাঃ এর উদ্দেশ্য ছিল । তো কেন আপনি চার ওয়াক্তে চার নামাজ পড়ে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন, দুই ওয়াক্তে চারটা পড়ে নিন৷
    তিনি বললেন –
    এটা হয়তো সফরের সময় নামাজের কথা বলেছেন।
    আমি বললাম –
    নাহ, দেখেন ! হাদিসেই লেখা আছে যে, রাসূল সাঃ তখন মদীনাতে মুকীম ছিলেন। সফরে নয়। আর হাদিসটি ইমাম তিরমিজী রাঃ সফরের অধ্যায়েও আনেন নি। তাহলে এটা সফরের সময়ের জন্য হবে কেন ?
    তিনি বললেন –
    আচ্ছা, তাহলে আমি পরবর্তীতে জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।
    অতঃপর, ভাইটি গতকাল এসে আমাকে বললেন যে, ইমাম তিরমিজি রাঃ কিতাবুল ইলালে বলছেনঃ
    এই হাদিস অনুযায়ী আমল করা যাবে না।
    আমি বললাম –
    ইন্না লিল্লাহ! এ কি কন ভাই ? আপনি তো দেখি আমাদের মতো মুকাল্লীদ হয়ে গেলেন! আমি আপনাকে রাসুল সাঃ এর সহীহ হাদিস পেশ করেছি। আর আপনি আমল করছেন ইমাম তিরমিজীর কথা। আপনি সহীহ হাদিস এর উপর আমল বাদ দিয়ে ইমাম তিরমিজী রাঃ এর কথার উপর আমল করছেন কেন ?
    আমি আরো বললাম –
    ভাই দেখেন, আমরা যখন এরকম ব্যাপারে ইমাম আজম আবু হানীফা রাঃ এর গবেষণালব্ধ মতামত গ্রহণ করি, তখন আপনারা আমাদেরকে হানাফী মুকাল্লীদ বলে গালি দেন। অথচ, আপনারাই আবার চাপে পড়ে ইমাম তিরমিজীর তাকলীদ করলেন। আমাদের তাকলীদ করা অবৈধ হলে, আপনাদের তাকলীদ করা বৈধ কেন ? কেন এই ডাবল স্ট্যান্ডবাজি ?
    আমি তখন আরো বললাম –
    ভাই দেখেন, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রঃ ফাতহুল বারীতে লিখেনঃ
    এমন বহু হাদিস আছে, যেগুলো সহিহ কিন্তু মানসুখ হয়ে গেছে । এবং আপনি যেই কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে বললেন, সেখানে ইমাম তিরমিজি রঃ এটাও বলেছেন যে, ফুকাহায়ে কেরামরাই হাদিসের অর্থ সব থেকে ভালো বুঝেন !
    পরিশেষে এ কথাও বললাম, আপনারা আর আমাদের পার্থক্য হচ্ছে, আমরা শ্রেষ্ঠ ফোকাহাদের তাকলীদ করি আর আপনারা মন-চাহিদা যখন-তখন যে কোন শায়খের তাকলীদ করেন।
    বিঃদ্রঃ- শায়খ মুফতী বেলাল বিন আলী ( হাফিজাহুল্লাহ) এর বর্ণিত ঘটনাবলম্বে ঈষৎ সম্পাদিত ও পরিমার্জিত !
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারীয়াহ বিভাগ, মাদীনা বিশ্ববিদ্যালয়৷

  16. শায়খদের বিভ্রান্তি ছড়ানো আর কতো ? বিসমিল্লাহ কি সূরায়ে ফাতেহার অংশ ?
    ___________________
    একটু আগে, ইনবক্স মারফতে একটা ভিডিও পেলাম। ভিডিওটিতে, দেশের একজন প্রখ্যাত শায়খ প্রচন্ড রাগ-ক্ষোভ নিয়ে বাংলাদেশের সকল আলিম-উলামাদেরকে বিদাতী বানিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিচ্ছেন –
    ” বিসমিল্লাহ সূরায়ে ফাতেহার অংশ ”
    আসুন, বিশুদ্ধ হাদীস ও আরব শায়খদের ফতোয়া থেকে জেনে নেই যে, বিসমিল্লাহ সূরায়ে ফাতেহার অংশ কি না !
    আত্তাওফীক মিনাল্লাহ !
    মহান আল্লাহ তা’লা পবিত্র কোর’আনে ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোর’আনকে তিনি সংরক্ষণ করে রাখবেন। কোর’আনের বিন্দুমাত্রও কোন কিছু কখনো হেরফের হতে পারে না৷
    আমরা মুসলিম মাত্রই বিশ্বাস করি যে, কোর’আনে কোন হজফ-এযাফা নেই। এমনকি, কোন আয়াত বা অক্ষর নিয়েও কোথায় সংশয় নেই।
    অতএব, বিসমিল্লাহ সূরায়ে ফাতেহার অংশ কি না, এ নিয়ে কোন দ্বিধা থাকার কথা না৷ কেননা, কোর’আন সংরক্ষণের দায়িত্ব খুদ আল্লাহ তা’লা নিজেই নিয়েছেন৷ আর বিসমিল্লাহ সূরায়ে ফাতেহার অংশ হলে এটা নিয়ে মতানৈক্য থাকার কথা ছিলো না। কারণ, আল্লাহ তা’লার ওয়াদা শতভাগ সত্য৷
    বিসমিল্লাহ – যে সূরায়ে ফাতেহার অংশ নয়, এটা হাদীসে কুদসী ও বিশুদ্ধ অন্যান্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ নিয়ে কেহ সন্দেহ করতে পারে না৷
    হাদীসে কুদসী –
    عن أبي هريرة رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول قال الله تبارك وتعالى :
    قَسَمْتُ الصلاَةَ بَـيْنِي وَبَـيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ، فَنِصْفُهَا لِي وَنِصْفُهَا لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ، قَالَ رَسُولُ اللّهِ صلى الله عليه وسلم: اقْرَأُوا يَقُولُ الْعَبْدُ (الْحَمْدُ للّهِ رَبّ الْعَالَمِينَ). يَقُولُ اللّهُ عَزّ وَجَلّ: حَمَدَنِي عَبْدِي,,,,
    এই হাদিসে স্পষ্ট করে বলা আছে, সূরায়ে ফাতেহার সূচনা – আলহামদুলিল্লাহি রাব্বীল আলামীন থেকে। বিসমিল্লাহ যদি সূরায়ে ফাতেহার অংশ হতো ; তবে হাদিসে কুদসিতে ” বিসমিল্লাহ ” উল্লেখ থাকতো৷ ( মুসলিম )
    দ্বিতীয় হাদীস –
    حديث أنس رضي الله عنه قال: صَلّيْتُ خَلْفَ النّبِيّ صلى الله عليه وسلم، وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ.
    فَكَانُوا يستَفتحونَ بِـ(الْحَمْدُ لله رَبّ الْعَالَمِينَ)، لاَ يَذْكُرُونَ (بِسْمِ الله الرّحْمَنِ الرّحِيمِ) فِي أَوّلِ قِرَاءَةٍ، وَلاَ فِي آخِرِهَا.
    আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন –
    আমি রাসূল সাঃ, আবুবাকর, উমার ও উসমান রাঃ এর পিছনে নামাজ আদায় করেছি৷ তাঁরা সবাই ” আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন ” থেকে নামাজ সূচনা কর‍তেন৷ তারা কিরাতের শুরুতে কিংবা শেষে ” বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ” উল্লেখ করতেন না৷ ( মুসলিম )
    নোটঃ খেয়াল করুন, উভয়টি কিন্তু মুসলিম শরীফের বিশুদ্ধ হাদীস। শায়খগণ এবার সহীহ হাদীস কিভাবে এড়িয়ে চলেন ?
    আসুন, এবার আরব শায়খদের ফতোয়া জেনে নেই। আমি চাইলে একাধীক আরব শায়খের ফাতোয়া উল্লেখ করতে পারি৷ কিন্তু, দীর্ঘ হয়ে যাবে ; তাই শুধু বিন বায রাঃ এর ফতোয়া উল্লেখ করছি৷
    শায়খ বিন বায রাঃ বলেন –
    الصواب أن البسملة في أول الفاتحة وفي جميع السور آية مستقلة ليست من الفاتحة ولا من غيرها، التسمية بسم الله الرحمن الرحيم آية مستقلة ليست من الفاتحة ولا من غيرها من السور ولكنها آية مستقلة وأول الفاتحة: الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، هذا أول الفاتحة هذا الصواب وهذا الصحيح من أقوال أهل العلم
    বিশুদ্ধ হচ্ছে, সূরায়ে ফাতেহার শুরুতে কিংবা অন্যান্য সূরার শুরুতে যে বিসমিল্লাহ আছে, তা একান্ত স্বতন্ত্র বিষয়। এটা ফাতেহাহ কিংবা অন্যান্য সূরার আয়াত নয়৷ এবং সূরায়ে ফাতেহার প্রথম আয়াত হচ্ছে –
    ” আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন ”
    এই আয়াতই হচ্ছে সূরায়ে ফাতেহার প্রথম আয়াত। আর এটাই বিশুদ্ধ মত আহলে ইলমদের নিকট৷
    ফতোয়ার লিংক – https://bit.ly/2XmjJxZ
    আলোচনার সারকথা –
    বিসমিল্লাহ সূরায়ে ফাতেহার অংশ কি না, এ নিয়ে ফোকাহাদের মাঝে ইখতেলাফ ছিল। ইমাম শাফেয়ী রাঃ বাদে দুনিয়ার বাকি সকল ইমামগণ একমত হয়েছেন যে, বিসমিল্লাহ সূরায়ে ফাতেহার অংশ নয় ! সুতরাং, কেউ যদি নামাজে বিসমিল্লাহ না পড়ে, তার নামাজ হবে । তবে, সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া সবার মতে সুন্নাহ !
    এবার চিন্তা করুন,
    সম্মানীত শায়খগণ ইতিহাসের একান্ত ছোটখাটো ভুলে যাওয়া একটা মতকে প্রাধান্য দিয়ে, হাদিসে কুদসী সহ একাধীক সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে কি ফায়দা অর্জন করতে চান ? আর এই শাজ মতকে গ্রহণ করে তিনি দেশের সবাইকে গণহারে বিদাতী ফতোয়া দিয়ে কি বুঝাতে চান ?
    ইয়া লাল-আজাব!
    আমার আফসোস এই জায়গায়ও নয়। আক্ষেপের জায়গা হলো, শায়খে কিন্তু দেশী সকল আলিমকে বিদাতী ফতোয়া দিয়েছেন বিসমিল্লাহ -কে সূরায়ে ফাতেহার আয়াত হিসেবে গ্রহণ না করায়।
    তবে প্রশ্ন হলো, শায়খ বিন বায রাঃ সহ আরো প্রমূখ আরবের শায়খ যারা ফতোয়া দিয়েছেন – বিসমিল্লাহ সূরায়ে ফাতেহার অংশ নয়। তারাও সবাই কি বিদাতী আলিম ???
    দেশের আলেমগণ বিদাতী, এটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু, আরবের সালাফী শায়খগণ বিদাতী, এটা কি করে মেনে নিব ???
    বিঃদ্রঃ- শায়খ মুজাফফার বিন মুহসিন সাহেব এই ফতোয়াটি দিয়েছেন।
    ধন্যবাদ !
    __________________
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারীয়াজ বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় ।

  17. হানাফী মাজহাবের যাত্রা কিভাবে ? কখন থেকে ? কোথায় থেকে ? এবং কার মাধ্যমে ?
    _________________
    সম্মানিত পাঠক,
    খুব সংক্ষেপে উপরোক্ত চারটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ ৷ যা সকলের জন্য জানা থাকা একান্ত জরুরী । বারাকাল্লাহু ফীকুম!
    ১৭ হিজরীতে হযরাত উমার রাঃ এর খেলাফতকালে ইরাক বিজয় হয়। তখন ইরাক্বে তিনি নতুন একটা শহর প্রতিষ্ঠা করেন – কূফা ! উমার রাঃ কূফা শহরকে মুসলমানদের জন্য রাজধানী বা প্রশাসনিক শহর হিসেবে নির্ধারিত করেন।
    সেখানকার মুসলমানদের দ্বীনি শিক্ষা-দীক্ষার জন্য হযর‍ত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ -কে শিক্ষক হিসেবে ইরাক্বের কূফা নগরীতে প্রেরণ করেন। দীর্ঘ ষোলটি বছর কূফা নগরীতে আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ দ্বীনের শিক্ষা দান করেন।
    ৩২ হিজরীতে তিঁনি মৃত্যু বরণ করলে দ্বীনের শিক্ষা-দীক্ষার দায়ভার চলে আসে ইবনে মাস’উদ রাঃ এর শ্রেষ্ঠতম ছাত্র – আলক্বামা রাঃ এর কাছে। তিঁনিও দীর্ঘ ত্রিশটা বছর দ্বীনের খেদমাত দিয়ে থাকেন।
    ৬২ হিজরীতে হযরাত আলক্বামা রাঃ মৃত্যু বরণ করলে কূফা নগরীর দ্বীনি দায়িত্ব চলে আসে তাঁরই শ্রেষ্ঠ ছাত্র – ইবরাহীম নাখায়ী রাঃ এর কাঁধে । তিঁনিও দীর্ঘ দিন যাবত কূফায় দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে থাকেন।
    ৯৬ হিজরীতে ইবরাহীম নাখায়ী রাঃ মৃত্যুবরণ করলে কূফা নগরীর দ্বীনি খেদমতের দায়ভার চলে আসে তারই শ্রেষ্ঠ ছাত্র – হাম্মাদ বিন সুলাইমানের উপর। তিনি দীর্ঘ চব্বিশটা বছর কূফা নগরীতে দ্বীনের খেদমাত আঞ্জাম দিয়ে থাকেন।
    ১২০ হিজরীতে হাম্মাদ বিন সুলাইমান মৃত্যুবরণ করলে সমগ্র কূফা নগরীর দ্বীনি খেদমাত, ফিকহী খেদমাত ও রাহবারিত্ব চলে আসে হযরত ইমামে আজম আবু হানিফা রাঃ এর কাঁধে৷
    ইমামে আজম দীর্ঘ ত্রিশটি বছর কূফা নগরীতে কোরান, হাদিস, ফিকাহ ইত্যাদি খেদমতে নিরলস মেহনত ও রাহবারিত্ব করে যান।
    ছকের মাধ্যমে ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ – এর শিক্ষক তালীকার পরম্পরা তুলে ধরলাম –
    ইমাম আজম আবু হানীফা

    হাম্মাদ বিন সুলাইমান

    ইবরাহীম নাখায়ী

    আলক্বামা

    আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ

    হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাঃ
    উপরোক্ত ছক থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত যে, কূফা নগরীতে দ্বীনের জ্ঞান বিস্তার লাভ করে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ থেকে। কেই এই জ্বলীল কাদর সাহাবী ? উনার সম্পর্কে দু’একটা হাদিস জেনে নেই –
    হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ রাসূল সাঃ এর সঙ্গি ছিলেন। জীবনের বিরাট একটা সময় রাসূলের সাথে কাটিয়েছিলেন। রাসূলের পরিবারের সাথে বেশ সখ্যতা ও আসা-যাওয়া ছিল। দূরবর্তী অনেক সাহাবা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ -কে রাসূলের পরিবারের একজন মনে করতেন।
    ১. রাসূল সাঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ এর উপর এতোটা আস্থাশীল ছিলেন যে, তিনি বলেন –
    ” আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ আমার উম্মাতের জন্য যা পছন্দ করবে, আমিও তা পছন্দ করবো। সে যা অপছন্দ করবে, আমি ও তা অপছন্দ করবো ”
    ২. রাসূল সাঃ বলেন –
    ” আমি যদি মাশওয়ারা ছাড়া কাউকে খলীফা নিযুক্ত করতাম, তাহলে আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃকে নিযুক্ত করতাম ”
    ৩. রাসূল সাঃ বলেন –
    ” কেউ যদি কোর’আন যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে, সেভাবে তেলাওয়াত করতে চায় ; সে যেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ কে অনুসরণ করে ”
    ৪. রাসূল সাঃ বলেন –
    ” তোমরা চারজন থেকে ইলম হাসিল করো। তন্মধ্যে প্রথমেই আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ এর নাম উল্লেখ করেন ”
    ৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ এর ব্যাপারে হযরত উমার রাঃ এর মন্তব্য হলো –
    ” আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ হলেন ইলমের বা জ্ঞানের একটা পরিপূর্ণ ঘর ”
    প্রিয় পাঠক,
    হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ এর অসংখ্য ফজিলত থেকে মাত্র পাঁচটা বর্ণনা এখানে তুলে ধরলাম। সচেতন ও বুদ্ধিমান মেধাবী পাঠকের জন্য এটুকুতেই বুঝা যথেষ্ট যে, তিঁনি একজন উচ্চপর্যায়ের জ্ঞানী সাহাবী ছিলেন।
    যাইহোক , রাসূল সাঃ এর সাহচর্য-ধন্য হযর‍ত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাঃ এর মাধ্যমে দ্বীনের প্রকৃত জ্ঞান ইরাকের কূফা নগরীতে পৌঁছে। এক এক করে সেই দ্বীনে জ্ঞানের গুরু দায়িত্ব ১২০ হিজরীতে ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ এর কাঁধে চলে আসে৷
    ইমাম আজম আবু হানীফা রাঃ হাদিসে-খেদমতের পাশাপাশি ফিকহী জ্ঞানের পিছনে মনোনিবেশ করেন। এক পর্যায়ে কূফা নগরীর আনাচ-কানাচে তাঁর ফিকহী পান্ডিত্বের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এতে দূরদূরান্তর থেকে অসংখ্যা ছাত্র বৃদ্ধি পেতে থাকে৷
    এক পর্যায়ে ফিকহী সংকলন এর সু-চিন্তা চলে আসে এবং ছাত্রদের মধ্যে ইমামে আজম আবু হানিফা রাঃ এর ফিকাহ জ্ঞান আহরণের মাত্রা বেড়ে যায়। তখন আবু হানিফা রাঃ কূফা নগরীর প্রসিদ্ধ চল্লিশজন (৪০) মুজতাহিদ ফকীহ নিয়ে ফতোয়া বোর্ড গঠন করেন। বোর্ডের গুরু দায়িত্ব ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ গ্রহণ করেন। প্রতিটা নতুন ও উদ্বুদ্ধ মাস’আলা ফতোয়া বোর্ডে উঠানো হতো৷ সেখানে চল্লিশজন মুজতাহিদ ফকীহ ইলমি মোনাকাশা করতেন। সবশেষ, সকলের আলোচনা শেষে ইমাম আজম আবু হানীফা রাঃ সু-চিন্তিত সিদ্ধান্ত দিতেন। আর সেখান থেকে হানাফী মাজহাবের যাত্রা সূচিত হয়।
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারীয়াহ বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়৷

  18. আমি কেন মাজহাব মানি ?
    _________________________
    আমি আগাগোড়া একজন ফিকহুশ শারীয়া’র ছাত্র। অন্য কথায় বলা যায়, শারীয়াতের মাসালা-মাসাইল নিয়ে পড়াশোনা করা ও ইসলামের প্রসিদ্ধ চার মাজহাবের তূলনামূলক আলোচনা করাই আমার স্টাডি কনসার্ন৷ মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাওয়া মাত্রই এই সাব্জ. নিয়ে পড়াশোনার আগ্রহ জাগে। অবশেষ, আল্লাহর রহমতে সেই সুযোগ পেয়ে যাই ৷
    সম্মানিত পাঠক,
    শিরোনাম দেখেই অনেকটা অনুমিত যে, মাজহাবের ছাত্র হিসেবে আমার দাবী – আমি মাজহাব মানতে বাধ্য বা কেন মাজহাব অনুসরণ করি? অনেক ভাইয়ের হয়তো বিষয়টা পছন্দ হবে না। তাই শুরুতেই অনুরোধ করবো যে, পুরা লেখাটি আদ্যপ্রান্ত পড়বেন। আল্লাহ তা’লা আপনাকে জাযায়ে খায়র দান করুক !
    আমি মাজহাব মানতে বাধ্য কেন (?) ____ এ জন্য যে, আমি শারীয়তের মাসালা-মাসাইল নিয়ে স্টাডি করতে গিয়ে অসংখ্য কোরান-হাদিসের নাস বা মূল পেসেজ পাই, যা থেকে সরাসরি বোধগম্য করা বা মাসালা বের করা আমার পক্ষে সম্ভব না ৷
    → কোরানের এমন অনেক আয়াত পাই –
    যা থেকে সরাসরি মাসালা উদঘাটন এর সক্ষমতা আমার নাই। বাধ্য হয়ে কোন এক মুফাসসিরের ব্যাখ্যা পড়তে হয়৷
    → রাসূল সাঃ এর এমন অনেক হাদিস পাই –
    যা থেকে সরাসরি মাসালা উদঘাটন এর সক্ষমতা আমার নাই। তাই বাধ্য হয়ে কোন এক মুহাদ্দিসের ব্যাখ্যা জানতে হয়।
    [ বক্ষমান লেখা হাদিস নিয়ে। একটু নিচে বিস্তারিত জানতে পারবেন ইনশা আল্লাহ ]
    → কোরান-হাদিসের অসংখ্য মূল পেসেজ পাই, যা থেকে সরাসরি শারীয়তের মাসালা উদঘাটন করা আমার পক্ষে সম্ভন না৷ তাই বাধ্য হয়ে আমি কোন এক মাজহাবের সম্মানীত ইমামের ইজতেহাদ বা গবেষণাকে তাকলীদ বা অনুসরণ করতে হয় ৷
    [ চলমান প্রবন্ধের শেষাংশে বিস্তারিত জানতে পারবেন ইনশা আল্লাহ ]
    চলে আসি মূল কথায়,
    সপ্তাহ খানেক আগে আপনাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম যে, কোরানের এমন কিছু বিষয় আছে, যা থেকে সরাসরি মাসালা উদঘাটন করা যায় না। বাধ্য হয়ে মাজহাবের ইমামদের তাকলীদ বা অনুসরণ করতে হয়।
    চলমান প্রবন্ধে এ কথা বুঝিয়ে দিব ( ইনশাআল্লাহ) যে, এমন অনেক হাদিস ও আছে, যা থেকে সরাসরি মাসালা উদঘাটন বা আমল করা যায় না। বরং, বাধ্য হয়ে কোন এক মাজহাবের ইমামের তাকলীদ বা অনুসরণ করতে হয়।
    ( Let’s then see the matter – তাহলে চলুন এখনি বিষয়টা বুঝে নেই। )
    শারীয়াতের বেচাকেনা অধ্যায়ে একটা প্রসিদ্ধ মাসালা আছে, তার আরবী নাম হলো – التسعير ( আত্তাস’ঈর)।
    এটার শাব্দিক অর্থ – মূল্য নির্ধারণ করা।
    পারিভাষিক অর্থ – সরকার বা বাজার কমিটি কর্তৃক কোন পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া এবং এটার উপর বেচা-কেনার জন্য উভয়পক্ষকে ( ক্রেতা-বিক্রেতা) বাধ্য করা৷
    মাসালা হলো – শারীয়াতে এভাবে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া জাইজ কি না ?
    উত্তর – এই মাসালার সরাসরি কোর’আনে কারীমে কোন কিছু পাওয়া যায় না । তবে হাদীস শরীফে স্পষ্ট একটা নাস পাওয়া যায়। তা হলো –
    (( قال النَّاسُ يا رسولَ اللَّهِ ، غلا السِّعرُ فسعِّر لَنا ، قالَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ : إنَّ اللَّهَ هوَ المسعِّرُ القابضُ الباسطُ الرَّازقُ ، وإنِّي لأرجو أن ألقَى اللَّهَ وليسَ أحدٌ منكُم يطالبُني بمَظلمةٍ في دمٍ ولا مالٍ ))
    মূল সারসংক্ষেপ হলো –
    একদা মদীনায় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেলো। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাঃ কে বললেন – হে আল্লাহর রাসূল ! দাম বেড়ে গিয়েছে। আপনি আমাদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিন।
    রাসূল সাঃ জবাবে বললেন – আল্লাহ তা’লা কেবল দাম নির্ধারণ কর্তা, তিঁনিই রিজিক গ্রহীতা, তিঁনিই রিজিক প্রশস্তদাতা এবং রিজিকদাতা।
    মোদ্দাকথা, সাহাবাদের অনুরোধে রাসূল সাঃ পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অনাগ্রহ দেখিয়ে বললেন, আল্লাহ তা’লা রিজিক দাতা, তিনিই রিজিক ফেরতগ্রহীতা, তাই তিনিই সবকিছুর মূল্য নির্ধারণ কর্তা৷
    [[ হাদিসের মানঃ ১০০% সহীহ ]]
    যাইহোক, হাদিসের স্পষ্ট ভাষ্য ও ফতোয়া হচ্ছে — সরকার বা বাজার কর্তৃক কোন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া না-জাইজ। যেহেতু রাসূল সাঃ তা করেন নাই।
    অপরদিকে সরাসরি হাদিসের উপর আমল করলে যে প্রশ্ন মাথায় চলে আসে। তা হলো –
    ১. আল্লাহ তা’লা কোথায় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন ? চাল, ডাল, গমের দাম কতো ? কোরান-হাদিসের কোন জায়গায় উল্লেখ আছে ?
    ২. ওহী তো বন্ধ, নিত্যনতুন পণ্যের দাম আল্লাহ তা’লা কিভাবে জানিয়ে দিবেন ?
    ৩. পণ্যের দাম আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারণ হলে ব্যবসায়ীরা নিজ থেকে দাম নির্ধারণ করে এবং উলামায়ে কেরাম তার বৈধতা দেন কেন ?
    ৪. আরব বা ইউরোপে বড় বড় সুপার মলে সব পন্যের দাম নির্ধারিত। তা বৈধ হয় কি করে ?
    মোদ্দাকথা, সরাসরি হাদিস মানতে গেলে এমন এ
    সব অচৈতন্য হাজারো প্রশ্ন মাথায় ভনভন করবে। আমরা বিশ্বাস করি, এসব আজাইরা চিন্তা বা প্রশ্ন করার দরকার নাই। হাদিসের বাহ্যিক অর্থ একটা হলেও উদ্দেশ্যেগত অর্থ অবশ্যই ভিন্নতা রয়েছে। যা তালাশ করলে পেয়ে যাবো ইনশা আল্লাহ৷
    এই হাদিসের কোন ব্যাখ্যা কোরান বা অন্য কোন হাদিসে পাওয়া যায় নাই। তাই আমরা এবার সরাসরি চলে যাবো মাজহাবের সম্মানীত ইমামদের ইজতেহাদ বা গবেষণাগারে৷ দেখবো, তারা এই হাদিসের কি ব্যাখ্যা দেন বা উপরোক্ত মাসালার কি ফতোয়া দিয়ে থাকেন ।
    → হাদিসের বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোন পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা না -জাইয। কেননা, রাসূল সাঃ তা করেন নাই।
    → ইমামদের ঐক্যমতে সরকার বা বাজার কমিটি কর্তৃক পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা জাইজ ৷
    তাহলে আপাততঃ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, রাসূল সাঃ এর হাদিস ও ইমামদের ফতোয়ায় বৈপরীত্য রয়েছে৷ নাহ, আসলে কোন বৈষম্য না। বরং, আমাদের বোধগম্যের অপ্রতুলতা। আমরা তাদের ভাষ্য দেখবো এবং তার পর বুঝতে পারবো যে, আসলেই তাদের গবেষণা হাদিস মোতাবেক ও একদম বাস্তবতার সাথে যথোপযুক্ত ৷
    সরকার কর্তৃক পণ্যের দাম নির্ধারণ করা জাইজ কি না _____ এই প্রশ্নে ফোকাহায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ বলেন, সম্পূর্ণ জাইজ এবং তা বর্তমানে ইসলামী শারীয়ায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত।
    ফোকাহাদের দাবী ও তাঁদের দলীল –
    ১. হাদিসের এসেছে আল্লাহ তা’লা দাম নির্ধারক ____ তার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তা’লা প্রত্যেকটা পণ্যের আলাদা আলাদা করে দাম নির্ধারণ করে দিবেন৷ আর এটা আল্লাহ তা’লার শানে যায় না৷
    বরং, হাদিসের উদ্দেশ্যগত ব্যাখ্যা হচ্ছে – আল্লাহ তা’লা প্রত্যেক মানুষকে পরিপক্ব আক্বল ও মেধা দিয়েছেন। অপরদিকে, সবাইকে ইনসাফ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে মানুষ তার আকল, মেধা দ্বারা প্রত্যেক কিছুতে ইনসাফ পালন করবে। বেচা-কেনায় সম্পূর্ণ আদালত বা ন্যায়বিচার পোষণ করে। আর আল্লাহ তা’লা ন্যায়বিচারকারীদের পছন্দ করেন। কারণ, তিঁনি নিজেই ন্যায়বিচারকারী৷
    ২. রাসূল সাঃ এর অপর একটা হাদিস হলো এবং এটা ইসলামী শারীয়ার মূলনীতিভুক্ত –
    (( لا ضرر ولا ضرار في الإسلام ))
    অর্থাৎ, ইসলামে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বা কাউকে ক্ষতি করার সুযোগ নাই ।
    [[ হাদিসের মানঃ হাসান ]]
    ফোকাহায়ে কেরাম বলেন –
    সরকার কর্তৃক যদি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে না দেওয়া হয় ; তাহলে সময়-সুযোগ বুঝে কিছু অসাধু বা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে সাধারণ জনকে কষ্টে ফেলে দিবে। যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ !
    ৩. সরকার কর্তৃক উল্লেখ্য পণ্যের দাম নির্ধারিত না হলে স্থান ভেদে মূল্যে ভিন্নতা থাকতে পারে। যা সম্পূর্ণ বৈষম্য ও বে-ইনসাফী। আর ইসলামে বে -ইনসাফী বা বৈষম্যের জায়গা নাই ।
    ইত্যাদি সব কারণে ও উম্মাহের ব্যাপক কল্যাণ স্বার্থে ( যেটাকে শারীয়ার একটা মূলনীতি ধরা হয় – عام مصلحة الناس ) ইসলামের সম্মানীত চার মাজহাবের ইমামগণ সরকার বা বাজার কমিটি কর্তৃক পণ্যের দাম নির্ধারণ করাকে জাইজ বা বৈধতা দিয়েছেন ৷ যদিও তা হাদিসের বাহ্যিকতার সাথে সাংঘর্ষিক ; কিন্তু ইসলামের মূলনীতি ও হাদিসের উদ্দেশ্যগত অর্থের সাথে সম্পূর্ণ যৌক্তিক !
    শেষকথা ,
    লেখাটি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেশ লম্বা হয়ে গেলো। তাই আর বেশী কিছু না লিখে একথা বলবো যে, আমি একজন শারীয়াতে ইসলামীয়ার নৈমিত্তিক ছাত্র হয়ে উপরোল্লিখিত ইত্যাদি সব কারণে ______ মাজহাব মানতে বাধ্য !
    ফালিল্লাহিল হামদ, পূর্ণাঙ্গ শারীয়া মানতে গিয়ে মাজহাবের অনুসরণ করে আমি কখনো বিপকে পড়িনি বা কিয়ামত পর্যন্ত বিপকে পড়ার কোন সুযোগই নাই। কেননা, মাজহাবের সম্মানীত ইমামগণ উম্মাহের জন্য কোরান-হাদিসের আলোকে কিয়ামত অবধি সকল সমূহ সম্ভাবনাময় সমস্যার সমাধান ও তার মূলনীতি প্রণয়ন করে গিয়েছেন। যা থেকে মানুষ কোরান-হাদিসে সরাসরি কোন কিছু না পেলে, মাজহাবের মূলনীতির আলোকে সমস্যার সমাধান করতে পারে । সুবহানাল্লাহ ♥
    অনেক কষ্ট করে অগুছালো / অপরিপক্ক কিংবা অ-সাহিত্যপূর্ণ আগাছাময় লেখা পড়ায় আপনার জন্য অন্তর থেকে দোয়া রইলো – জাযাকাল্লাহ খাইরান ?

  19. সৌদি আরবে কি ” হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা ” আছেন ??
    অনলাইন জগতে যতো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, তন্মধ্যে এটি একটি কমন প্রশ্ন ছিলো – সৌদি আরবে কি হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন ??
    এর একটা বিহিত কারণ আছে অবশ্যই। আমাদের দেশে সংখ্যাঘরিষ্ট মুসলমান হানাফী মাজহাব অনুসরণ-অনুকরণ করেন। আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি, মূল এবং মৌলিক হানাফী মাজহাব ফলো করেন। নতুন হানাফী বা মূল হানাফী থেকে দূরবর্তী কোন নব্য আবিস্কৃত হানাফী মাজহাব অনুসরণ করা হয় না৷
    যাইহোক, কিছু সংখ্যাক শায়খ আছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবের রেফার করে খেয়ে না -খেয়ে হানাফী মাজহাবের বিরুদ্ধাচারণে লেগে থাকেন। এতে জনমনে প্রশ্ন জাগে যে, সৌদি আরবে কি হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা নেই ? থাকলে উনারা (!) এতো হানাফী বিদ্বেষী হোন কি করে ?
    কিছু শায়খের বিরুধীতা ও হানাফী মাজহাব নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা এতই যে, সাধারণ মানুষের মনে এমন প্রশ্ন জাগা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার!
    যাইহোক, আমি আজকের লেখায় খানিকটা জানান দেওয়ার চেষ্টা করবো যে, সৌদি আরবে হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন কি না!
    প্রথমত দু’টি কথা –
    ১. সৌদি আরবে রাষ্ট্রিয় রসমি বা প্রতিষ্ঠিত মাজহাব হচ্ছে – হাম্বলী মাজহাব৷ দেশটির প্রত্যেক মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিকহ বলতে হাম্বলী মাজহাবই পড়ানো হয়৷
    জ্বী, আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি – দেশটিতে সু- নির্ধারিত একটা মাজহাবই তথা হাম্বলী মাজহাব পড়ানো হয়।এমনকি, উসূলুল ফিকহ ও কেবল হাম্বলি মাজহাবের পড়ানো হয়৷ বেশী দূর যাওয়ার দরকার নাই। ধরুন, আমাদের মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় এর কথা।
    আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীয়া বিভাগে ( ফিকাহ) একাট্টা হাম্বলী মাজহাবের বই পড়ানো হয়। ফিকাহের বই হচ্ছে –
    ” আর-রাওজুল মুরবীঈ ”
    বইটি হাম্বলী মাজহাবের একক প্রসিদ্ধ মতন-গ্রন্থ ( মাজহাবের মূল ট্যাক্সট বই) জাদুল মুস্তাক্বনা’ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা গ্রন্থ, যা সকল শ্রেণীর ফিকাহ-শিক্ষার্থীদের কাছে জানাশুনা । তদুপরি, বইটি নিয়ে কারো সন্দেহ থাকলে নিচের লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত জানতে পারেন –
    লিংক – shorturl.at/ktU08
    ২. সৌদি আরবের রাসমি বা প্রতিষ্ঠিত মাজহাব যেহেতু হাম্বলি এবং পাশাপাশি কোর্টকাছারিতেও এই মাজহাব অনুসরণ হয়, সেই হিসেবে ভিন্ন মাজহাব রাসমিভাবে প্রতিষ্ঠা হওয়া অনেকটা ইস্পাত-কঠিন৷ কারণ, এক সাথে একাধিক মাজহাব একজন ব্যক্তি যেভাবে অনুসরণ করতে পারে না, তেমনিভাবে একটা রাষ্ট্রের জন্য একাধীক মাজহাব রাসমি হতে পারে না৷ একাধীক মাজহাব রাসমি হলে, কি যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা বোধ হয় ফিকা’র নিম্নস্তরের শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারবে৷
    যাইহোক, সৌদি আরবে হাম্বলী মাজহাব প্রতিষ্ঠিত হলেও অন্যান্য প্রসিদ্ধ তিন মাজহাবের আলিম-উলামা ও মাদারিস অবশ্যই বিদ্যমান রয়েছে। অনেক বড় বড় মাশায়েখও রয়েছেন।
    সৌদি আরবে মাজহাবের বিচিত্র ইত্যাদি জানতে নিচের আল-জাজিরার রিপোর্ট পড়ে নিতে পারেন। আমার কাছে অত্যন্ত রিলায়াবল মনে হয়েছে –
    সূত্রঃ- shorturl.at/nEY15
    আমার এই পোস্টে যেহেতু সৌদি আরবে হানাফী আলিম-উলামার সন্ধান দেওয়া উদ্দেশ্য ; সেহেতু অন্যান্য মাজহবের ব্যাপারে তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলাম।
    এবার আসি মূল আলোচনায় – সৌদি আরবে কি হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন?
    এক কথায় – জ্বী, হ্যাঁ !
    সৌদি আরবে অসংখ্য হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন এবং নির্ধারিত হানাফী ফিকহের মাদ্রাসাও রয়েছে।
    বক্ষমান লেখায় সৌদি আরবের মতো বিশাল রাষ্ট্রের সকল হানাফী উলামায়ে কেরাম ও মাদ্রাসা সমূহ এক সাথে তুলে ধরা আমার জন্য সম্ভব না। তাই, মাত্র একটা হানাফী ঐতিহ্যবাহী পরিবারের ফিরিস্তি তুলে ধরব ইনশা আল্লাহ !
    এর পূর্বে বলে রাখা বাহুল্য যে, পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ প্রাঙ্গণে মসজিদে হারামুল মাক্কাতে শায়খ মাক্কী আল- হিযাজী প্রায় চল্লিশ বছর থেকে নিয়মিত দারস প্রদান করে আসছেন৷ তিনি একজন খ্যাতিমান হানাফী স্কলার বা আলিম। উনার হাজারের উর্ধ্বে আরবী,উর্দু ও ইংলিশ লেকচার ইউটিউবে আছে৷ আরো বলা বাহুল্য যে, উনার প্রতিষ্ঠিত মক্কাতে হানাফী ফিকহের মাদ্রাসাও রয়েছে৷
    শায়খকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটা ডকুমেন্টারি – https://youtu.be/IMo4p16arT0
    যাইহোক, সৌদি আরবের প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ একটা জেলা হচ্ছে – আহসা, যা রাজধানী রিয়াদ থেকে পূর্ব দিকে রয়েছে৷ এই জেলাতে জন্ম নিয়েছেন সৌদি আরবের অসংখ্য আলিম-উলামা। সবচেয়ে মজার তথ্য হচ্ছে, এই প্রভিন্সে চার মাজহাবের আলিম-উলামা ও সকলের সৌহার্দপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন মাজহাবের স্বতন্ত্র হালকা/মাদারিস ও রয়েছে৷
    সেই ” আহসা ” অঞ্চলের একটা প্রসিদ্ধা হানাফী পরিবার হচ্ছে – আলে মোল্লা পরিবার। যা বছর বছর ধরে ইলম, আমল ও তাজকিয়া লাইনে সৌদি আরবে সমৃদ্ধি ও খ্যাতী লাভ করে আসছে।
    এই পরিবারে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য আলিম-উলামা , যারা প্রত্যেকেই হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত স্কলার ছিলেন। দারস-তাদরীসের পাশাপাশি হানাফী মাজহাবের উপর বিভিন্ন বই-পুস্তক লিখে পুরা মুসলিম বিশ্বে পরিবারটি সু-খ্যাতী অর্জন করেছে ।
    ঐতিহ্যবাহী ” আল-মোল্লা ” এই হানাফী পরিবারের কয়েকজন খ্যাতিমান স্কলার এর নাম ও তাদের দ্বীনি লাইনের খেদমত তুলে ধরছি –
    [[ উল্লেখ্যঃ নিম্নে বর্ণিত সকল শায়খ হানাফী মাজহাবের অনুসারী ও খ্যাতিমান স্কলার ছিলেন ]]
    ১. শায়খ আলি বিন হুসাইন আল- ওয়াইজ আ-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । উনার নামানুসারে পরবর্তীতে সেই পরিবারের নাম হয়ে যায় ” উসরাতু আলে-মোল্লা “, যা পুরা পৃথিবী জুড়ে প্রসিদ্ধ। তিনি তৎকালীন সময়ে আহসা অঞ্চলের ( ১০০০ হিজরীতে) কাজী ছিলেন।
    ২. শায়খ মোহাম্মাদ বিন আলী আল-ওয়াইজ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনি এগারোশত হিজরীর একজন প্রসিদ্ধা স্কলার ছিলেন। তৎকালীন সময়ে সেই এলাকার বিচারপতি ছিলেন।
    ৩. শায়খ মোহাম্মাদ বিন ইমাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ৷ তিনি এগারোশত হিজরীর শেষ ও বারোশত হিজরীর প্রথম দিকে আহসার প্রধান বিচারপতি ছিলেন। পাশাপাশি একজন প্রসিদ্ধ ফকীহ হিসেবে খ্যাতী লাভ করেছিলেন। তার বেশ কয়েকটি ফতোয়ার বইও রয়েছে৷
    ৪. শায়খ আব্দুল মালীক বিন আব্দুল্লাহ বিন আলী আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনিও তৎকালীন সময়ের একজন খ্যাতিমান কাজী ও মুফতি ছিলেন।
    ৫. শায়খ মোহাম্মাদ বিন আহমাদ মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনি তৎকালীন সময়ের একজন সু-প্রসিদ্ধ আলিমে-দ্বীন ছিলেন। সৌদি আরবের বর্তমান প্রসিদ্ধ মসজিদ ” জামিউশ শুয়ূখ ” এর ইমাম ছিলেন, যে মসজিদটি ইলম ও হালকার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো। ১০৪৪ হিজরীতে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
    ৬. শায়খ উমার বিন আহমাদ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । যিনি তৎকালীন সময়ে আহসা অঞ্চলে বেশ কিছু মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন আওকাফ প্রতিষ্ঠা করে তিনি নিজেই সেগুলার দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ইলম বিতরণ করেন।
    ৭. শায়খ কাজী আব্দুর রাহমান বিন উমার মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । যিনি আহসার প্রধান বিচারপতি ছিলেন বারোশত হিজরীর শেষ দশকে।
    ৮. শায়খ কাজী মুফতি মোহাম্মাদ বিন উমার মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনি আহসার প্রধান মুফতি ও কাতীফ অঞ্চলের প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ বই রচনাও রয়েছে। তন্মধ্যে –
    ١ – نيل المرام لمن تولى القضاء والأحكام
    ٢-القول المبرم الذي ليس لإبرامه نقض في حكم إجارة العقار قبل القبض
    ٣- مقامة الطيب في الأدب
    ৯. আল্লামা শায়খ আবু বাকর বিন মোহাম্মাদ বিন উমার মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তৎকালীন সময়েত একজন খ্যাতিমান আলিম ও লেখক ছিলেন। তার বেশ কিছু লিখিত বই রয়েছে। তন্মধ্যে –
    ١-الزهر العاطر بتلخيص صيد الخاطر
    ٢- قرة العيون المبصرة بتلخيص كتاب التبصرة لابن الجوزي
    ٣- منظمة تحفة الطلاب في الفقه
    ٤- منظومة منهاج السلوك
    ٥- إتحاف الطالب في الفقه الحنفي
    ১০. শায়খ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন শায়খ আবু বাকর মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনিও তৎকালীন সময়ের একজন খ্যাতিমান ওয়াইজ,লেখক, শিক্ষক ও তাজকিয়া লাইনের ধারক-বাহক ছিলেন। তার বেশ কিছু বই ও রয়েছে। তন্মধ্যে –
    ١- قلائد الذهب شرح وسيلة الطلب في الفقه
    ٢-قمع المعاند في انتهاك حرمة المساجد
    ٣- مختصر في ترجمة والده
    ১১. শায়খ কাজী মুফতি আব্দুল লাতীফ বিন আব্দুর রাহমান আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । সেই সময়ের সবচেয়ে বড় মুফতি ছিলেন। আহসা অঞ্চলের সবচেয়ে লম্বা সময়ের কাজী ছিলেন। তার বিচার কার্য প্রায় ৩০ বছর ছিল। এছাড়াও, তিনি ফতোয়া ও কিতাব তাসনীফে পারদর্শী ছিলেন। তার উল্লেখ্য বই –
    ١- وسيلة الظفر في المسائل التي يفتي فيها بقول زُفَر
    ٢- نيل المرام بشرح كفاية الغلام
    ٣- وكلاهما مطبوعان بتحقيق حفيده عبد الإله
    ১২. শায়খ আবু বাকর বিন শায়খ আব্দুল্লাহ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তেরদশ হিজরীর অন্যাতম একজন আলিম ছিলেন। তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু মসজিদ-মাদ্রাসার দায়িত্বে ছিলেন। উসমানী শাসনামল ও সৌদি প্রতিষ্ঠাল্পগ্নে তিনি একজন খ্যাতিমান মুফতি ও কাজী ছিলেন।
    ১৩. শায়খ আহমদ বিন শায়খ আব্দুল লাতীফ আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । তিনি সৌদি প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সৌদি সকল প্রসিদ্ধ শায়খ থেকে ইলম শিক্ষা লাভ করেছেন। আহসায় মাসজিদে মোল্লা প্রতিষ্ঠা করেন এবং মাদ্রাসাতু কুব্বার দায়িত্ব আঞ্চাম দেন৷ তিনিও একজন খ্যাতিমান লেখক ও শিক্ষক ছিলেন।
    ১৪. শায়খ মোহাম্মাদ বিন আবি বাকর আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । আহসা অঞ্চলের একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দীস ছিলেন। পবিত্র মক্কাতুল মুকাররামা থেকে ইলম অর্জন করে পারিবারিক সকল মসজিদ-মাদ্রাসার দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি একজন খ্যাতিমান লেখক ছিলেন। উল্লেখ্য –
    ١- اللفظ المعقول في علم الأصول
    ٢-سلم المريد في علم التجويد
    ٣ شرح متن الآجرومية في النحو.
    ১৫. শায়খ আব্দুর রাহমান বিন আবু বাকর আল-মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ । সমকালীন সময়ের একজন প্রসিদ্ধ মুফতী ও মুহাদ্দীস। পবিত্র মক্কাতুল মুকাররামায় পড়াশোনা করে সেখানে কিছুদিন ইলমে দ্বিনের খেদমত আঞ্জাম দেন এবং পরবর্তীতে নিজের বাপ-দাদার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ-মাদ্রাসার দায়িত্ব আঞ্জম দেন। তার উল্লেখ্য দু’টি বই –
    ١- مجموعة من الرسائل في الحديث والفقه
    ٢- ديوان شعر.
    সম্মানিত পাঠক,
    উনারা ছিলেন সৌদি আরবের আহসা অঞ্চলের মাত্র একটা পরিবারের ( ১০০০-১৩০০) হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ উলামায়ে কেরাম। এছাড়াও, সেই অঞ্চলের হানাফী অনেক স্কলার ছিলেন । যেমনঃ
    ১. শায়খ রাশেদ আল-মুরাইখী আল-হানাফী
    ২. শায়খ রাইদ আব্দুল্লাহ আল-হানাফী
    ( উনার প্রসিদ্ধ বই হচ্ছে – আল-মুখতাসারু ফিল কাওয়াইদিল ফিকহীয়াহ)
    ৩. ইব্রাহীম বিন হাসান মোল্লা আল-হানাফী
    ( উনার প্রসিদ্ধ বই হচ্ছে – হেদায়াতুন নাসিকী ইলা মা’রেফাতে আদাবিল মানাসিকি)
    ৪. ইয়াহয়া বিন শায়খ মোহাম্মাদ বিন আবু বাকর আল-হানাফী। ( উনার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে – হেদায়াতুল মুহতাজী লি-শামাইলে তিরমিজী)
    প্রিয় পাঠক,
    আলোচনা হচ্ছিল সৌদি আরবের আহসা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ” মোল্লা পরিবারের ” হানাফী স্কলারসদের পরিচয় নিয়ে। ইতোপূর্বে যাদের নাম উল্লেখ হয়েছে, সবাই ছিলেন সেই যুগের!
    এই ঐতিহ্যবাহী পরিবারে আমাদের সময়েও অনেক বড় স্কলারস বের হয়েছেন। যাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ না করলে নয়। যেমন –
    ১. শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাহমান আল-মোল্লা হানাফী রাহিমাহুল্লাহ । তিনি ১৩৩০ হিজরীতে সৌদি আরবেই জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি জীবনের প্রথম দিকে আহসা৷ মক্কায় পড়াশোনা করলেও শেষ পড়াশোনা ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে সমাপ্তি করেন৷
    দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের বাপ-দাদা প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা সমূহের তাদরিসি দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি আহসা অঞ্চলের সর্বপ্রথম প্রকাশনা লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম হচ্ছে – মাকতাবাতুত তা’আউনি আস-সাকাফিউ ( مكتبة التعاوني الثقافي )
    ২. শায়খ মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আবু বাকর মোল্লা হাফিজাহুল্লাহ। ১৪২২ হিজরীতে পবিত্র আহসা নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে বর্তমানে মাসজিদে কানবরীতে বিভিন্ন হালাকাত এর আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। তার শিক্ষকতায় রয়েছে ফিকাহ, হাদিস, উসূল, আদব ও তারিখ ইত্যাদি ।
    ৩. শায়খ ইয়াহয়া বিন শায়খ মোহাম্মাদ বিন আবু বাকর আল-মোল্লা হাফিজাহুল্লাহ৷ ঐতিহ্যবাহী মোল্লা পরিবারের বর্তমান ইলমি কর্ণধার । যিনি আহসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীয়া বিভাগ হতে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন খেদমতে দায়িত্বরত রয়েছেন। বিবিধ হালকা, মাজাল্লাহ, তাসনীফাত ইত্যাদি সহ অগণিত তার খেদমত রয়েছে। বিশেষত, হানাফী মাজহাবের খেদমতে তার অসামান্য অবদান রয়েছে।
    সম্মানিত পাঠক,
    মোল্লা পরিবারের অন্যতম ইলমী কর্ণধার শায়খ আবু বকর বিন মোহাম্মাদ আল-মোল্লা আল-হানাফী আল-আহসা’ঈ এর হানাফী মাজহাব নিয়ে খেদমতের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই তুলে ধরছি,যা সারা বিশ্বে ইলম-প্রিয় মানুষের কাছে সমাদৃত –
    ١ – هداية المحتذي لشمائل ترميذي ( اعتنى به )
    ٢- تحفة المبتدئ ( في الفقه الحنفي )
    ٣- منهاج الراغب إلى إتحاف الطالب في الفقه الحنفي
    ٤- زواهر القلائد على مهمات القواعد ( أصول الفقه الحنفي )
    ٥- إسعاف أهل العبادة بنص الصلاة على السجادة ( مباحث الفقه الحنفي )
    ঐতিহ্যবাহী এই হানাফী পরিবারের অনেক সমাদর রয়েছে সেই অঞ্চলে। রয়েছে ইলমে ও আমলে অনেক খ্যাতি। দারস-তাদরীসেও রয়েছে অগণিত অবদান। সেই অঞ্চলে তাদের প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে৷ বিশেষত, হানাফী ফিকহের উপর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাও সেখানে রয়েছে।
    সৌদি আরবের আহসা অঞ্চলে তাদের প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাজহাবের তিনটা মাদ্রাসা রয়েছে।
    ১. আল-মাদ্রাসাতুল হানাফীয়্যাহ
    ( https://mobile.twitter.com/hanfi_school1?lang=en)
    ২. মাদ্রাসাতুশ শারীয়াহ আল-হানাফীয়াহ
    ৩. মাদ্রাসাতু শায়খ আবু বাকর আল-মোল্লা আল-হানাফী
    শেষ কথা,
    সু -হৃদ পাঠক৷
    মনে আছে কোন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে?
    জ্বি, হ্যা আলোচনা চলছে – সৌদি আরবে কি হানাফী মাজহাবের আলিম-উলামা আছেন ?
    বাংলাদেশের চেয়ে মাত্র তেরোগুণে বড় বিশাল এই রাষ্ট্রের সকল আলিম-উলামার পরিচয় বা তাদের মাজহাব জানা আমার পক্ষে একা সম্ভব না৷ আমি এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ আহসা অঞ্চলের মাত্র একটা পরিবারের হানাফী আলিম-উলামার উল্লেখ্য কিছু স্কলারের পরিচয় দিলাম, যারা যুগ যুগ ধরে কোর’আন -হাদিসের খেদমতের পাশাপাশি হানাফী মাজহাবে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন৷ এছাড়াও, আমার জানাশোনা অসংখ্য সৌদি শায়খ রয়েছেন, যারা হানাফী মাজহাবকে অনুসরণ করছেন।
    অথচ,দিন-শেষে কিছু সংখ্যক শায়খ থেকে শুনবেন যে, সৌদি আরবে মাজহাব বলতে কিছু নাই ?।
    তথ্যসূত্রঃ- বিভিন্ন অনলাইন জার্নাল

  20. আবু হানিফা রাঃ – এর দলিলকৃত হাদিসগুলা কি আসলেই জঈফ বা দূর্বল ??? (( পর্বঃ দুই ))
    [[ সকলের জন্য জানা থাকা জরুরী ]]
    ============================
    → ভূমিকা,
    হিজরির চতুর্থ শতাব্দী তথা আব্বাসী যুগ থেকে চার মাজহাবের পূর্ণাঙ্গতা, প্রসিদ্ধতা, অনুসরণ-অনুকরণ পুর দম্পে শুরু হয়। সেই থেকে নিয়ে প্রায় এক যুগ মাজহাব চর্চা হয়। প্রত্যেক মাজহাবের উপর স্বতন্ত্র বই রচনা করা সহ বিশাল খেদমত হয় ৷ আল্লাহ সেসব উলামাদেরলে জাযায়ে খায়র দান করুক ___ আমীন!
    হিজরির বারো তম শতাব্দীতে এসে মাজহাবের বিরুদ্ধে তুলকালাম শুরু হয়৷ যদিও উনাদের সংখ্যা অতি নগণ্য ছিল। বিশেষত, আবু হানীফা রাঃ যে সব মাসালা রেফার করেছিলেন, সেগুলোকে দূর্বল বা জঈফ হাদীস প্রমাণে উঠেপড়ে লাগেন।
    এর পিছনে মেইন কারণ ছিল ______ উসূলুল হাদিস ও উসূলুল ফিকাহ (( হাদিস ও ফিকার মূলনীতি)) এর মধ্যকার সমন্বিত জ্ঞান না থাকা। যারা একদম হাদিস নিয়ে গবেষণা ও উসূলুল ফিকাহ উপেক্ষা করেছেন। মূলে তারাই মাজহাবী ইমামদের হাদিসগুলা জঈফ বা দূর্বল প্রমাণে লেগেছিলেন।
    বস্তুত, জ্ঞানের প্রত্যেক শাখার একটা মূলনীতি আছে। হাদিসের যেমন মূলনীতি আছে, ফিকাহ এর ও তেমন আছে। যারা উভয়ের মূলনীতি সামনে রেখে হাদিসের তাহকীম বা বিচার করেন, তাদের কাছে বিরোধ লাগার কথা না। আর যারা উভয়ের সমন্বিত তাহকীম করেন নাই, তাদের কাছে খটকা লাগারই কথা।
    তারই একটা উৎকৃষ্ট প্রমাণ নিয়ে সাজানো আজকের পোস্ট। এটা হানাফী মাজহাবের অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়, তথাপি মনযোগ সহকারে পড়লে আশাকরি বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাওফীক দাতা !
    → টপিক্স – মাজহুল ( সিফাত) রাবীর হাদীস
    মনে করুন, একজন রাবীর মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার সকল গুণাবলী বিদ্যমান। কেবল, আদালত নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। অর্থাৎ, তিনি আদিল নাকি ফাসিক ____ তা জানা যায়নি। আদিল হলে উনার হাদিস গ্রহণযোগ্য ; আবার ফাসেক হলে উনার হাদিস পরিত্যাজ্য ____ এটা সর্বসম্মতি ব্যাপার। কিন্তু, প্রশ্ন হলো _____ উনার আদালতের ব্যাপারে কোন কিছু জানা না গেলে কি হুকুম হবে ??? অন্য কোন হাদিস না পাওয়া গেলে এই ক্ষেত্রে এমন রাবীর হাদিস গ্রহণযোগ্য হবে কি না ??
    [[ অনুগ্রহ করে, প্রশ্নটা না বুঝে থাকলে উপরের প্যারাটা আবার পড়ুন ]]
    এই ব্যাপারে, ফুক্বাহায়ে কেরাম দু’ভাগে বিভক্ত –
    ১. আবু হানীফা রাহিঃ, কিছু সংখ্যক শাফেয়ী রাহিঃ ও উনার সাথীবৃন্দের মতে, এমন রাবীর খবর / হাদীস ফিকহী মাসালায় গ্রহণযোগ্য।
    (( সূত্র – ইরশাদু তুল্লাবিল হাকাঈক ১১২ ))
    ২. ইমাম শাফী, কিছু সংখ্যাক মালেকী ও হাম্বলী ইমামদের মতে, এমন রাবীর খবর / হাদিস ফিকহী মাসালায় অগ্রহণযোগ্য।
    (( সূত্র – মুসতাসফা ১ / ১৯ ))
    এমন রাবীর – যার আদালতের ব্যাপারে অস্পষ্টতা রয়েছে – হাদীস গ্রহণে উসূল বিদদের মাঝে দু’ভাগ রয়েছে। এক দলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হলে ও অপর পক্ষের জন্য অগ্রহণযোগ্য ছিল। তবে উভয়ের পক্ষে শক্তিমান দলীল বা প্রমাণ রয়েছে –
    ১. ইমাম আবু হানীফা রাহিঃ ও উনার সাথীবৃন্দের দলীল। উনারা মোট পাঁচটা দলিল পেশ করেছেন ; আমি সেখান থেকে দু’টা তুলে ধরছি –
    (ক) একবার মদীনায় রাসূল সাঃ একজন গ্রাম্য লোক থেকে চাঁদ দেখার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। অথচ, রাসূল সাঃ ঐ গ্রাম্য লোকের ব্যাপারে মুসলিম ছাড়া অন্য কোন গুণের ব্যাপারে জানতেন না।
    [[ সূত্র : হাদিসটি আবু দাউদে -২৩৪০, তিরমিজিতে – ২৯১, নাসায়ীতে -২১১১ ও ইবনে মাজায় -১৬৫২ নাম্বারে রয়েছে ]]
    উনারা বলেন, দেখুন – যদি আদালতের ব্যাপারটা জানা থাকা একান্ত আবশ্যক হতো ; তাহলে রাসূল সাঃ কখনো ঐ গ্রাম্য লোকের আদালত না জানা সত্ত্বেও তার চাঁদের ব্যাপারে সাক্ষী গ্রহণ করতেন না৷
    (খ) রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর পরে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ অসংখ্য গ্রাম্য লোক, গোলাম ব্যক্তি ও নারীদের থেকে হাদিসের রেওয়ায়াত গ্রহণ করেছেন। অথচ, সাহাবায়ে কেরাম উনাদের আদালতের ব্যাপারে তেমন কিছু জানতেন না৷
    [[ সূত্রঃ রাওজাতুন নাজীর – ১৩৮ ]]
    ২. ইমাম শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী ইমামদের রাঃ দলীল। উনারাও মোট পাঁচটা দলীল পেশ করেছেন, তন্মধ্যে আমি দু’টা তুলে ধরলাম –
    (ক) খবরে ওয়াহীদ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ঐক্যমত হলো ___ রাবী আদীল হতে হবে৷ আর উক্ত রাবীর আদালতের ব্যাপারে যেহেতু কিছুই জানা যায়নি, তাই উনার খবরে ওয়াহিদ বা হাদিসটি গ্রহণ করা যাবে না।
    (খ) এমন রাবী যেমনিভাবেই আদালতে বা কোর্টে সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নায় ; তেমনি হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে ও গ্রহণযোগ্য নায় ৷
    মোদ্দাকথা, উভয়ের পক্ষে শক্তিমান দলিল থাকায় এক পক্ষের জন্য এমন রাবীর হাদিস গ্রহণযোগ্য হলেও অপর পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। আর বিষয়টি এতই দুর্বোধ্য যে, ” রাওজাতুন নাজীর ” এর মুসান্নীফ রাহিঃ কোন মতকেই তারজীহ বা প্রাধান্য দেননি ৷
    তাই, এমন রাবী থেকে হাদিস নিয়ে দলিল পেশ করলে দলিলের আলোকে হানাফী মাজহাবে বিশুদ্ধ হবে এবং বাকিদের মাজহাবে অশুদ্ধ হবে৷ কোনটাকে খাটো করা বা কোন মতকে অশুদ্ধ বলা যাবে না।
    → এবার আসি মূল আলোচনায় –
    আপনার উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্টত বুঝতে পেরেছেন যে, উভয় পক্ষের দালিলিক আলোচনা মজবুত । এখন যদি ইমাম আবু হানীফা রাহিঃ এমন কোন রাবীর খবরে ওয়াহিদ হাদিসটা কোন মাসালায় ইস্তেদলাল বা দলীল হিসেবে পেশ করেন, তাহলে কি হাদিসটা জঈফ হবে ?? পরিত্যক্ত হবে ?? আমলের অযোগ্য হবে ??
    [[ বিচারের দায়ভার পাঠক মহলে ছেড়ে দিলাম ]]
    শেষ কথা, এরকম কিছু মূলনীতির সাথে পরিচিত না থাকায় অথবা উনারা ভিন্ন মাজহাবের হওয়ায় কিছু সংখ্যক ভাইয়েরা হানাফী মাজহাবের ইস্তেদলালকৃত হাদিসগুলা গণহারে জঈফ বা দূর্বল বলে থাকেন। আর আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক ভাইয়েরা না বুঝে বিষয়টাকে ডামাডোল পিটিয়ে প্রচার করে থাকেন। দোয়া করি, রাব্বে কারীম যেন আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করেন ৷
    [[ বিস্তারিত জানতে, ইমাম গাজালী রাহিঃ এর ‘ মুস্তাসফা ‘ পড়বেন। ইবনে কুদামা রাহিঃ এর ‘ রাওজাতুন নাজীর ‘ পড়বেন। পৃষ্ঠা নং যথাক্রমে – ১/২৯ ও ১৩৬ ]]
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী,
    ইসলামিক আইন ও বিচার বিভাগ,
    মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।

  21. আবু হানিফা রাঃ – এর হাদিসগুলা কি আসলেই জঈফ বা দূর্বল ??? (( পর্বঃ এক))
    [[ সবার জন্য বিষয়টি জানা থাকা জরুরী ]]
    ============================
    → ভূমিকা –
    অধুনা সময়ে এসে উম্মাহ একটা বিশাল ঝামেলায় আপতিত। চার মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম, আবু হানিফা রাঃ মাসালা-মাসাইলে যে হাদিসগুলা রেফার করেছেন, সেগুলোর অধিকাংশ নাকি জঈফ বা দূর্বল ______ এমন একটা বিশাল অজ্ঞতাপূর্ণ তুহমত দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। যারা ছড়াচ্ছেন, তারা নিঃসন্দেহে সত্য জানা সত্যেও কেবল হিংসার বশবর্তী হয়ে মিথ্যা – অপবাদ ছড়াচ্ছেন৷ আল্লাহ সবাইকে হেদায়ত দান করুক ____ আমীন!
    যাইহোক, আজকের লেখায় হাদিসে সনদ নিয়ে আলোচনা করব। যদিও বিষয়টি আহলে ইলমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ; তথাপি আশাকরি সবাই সহজপাঠ্য হিসেবে লেখাটি পাবেন৷
    → মূল কথা –
    আমরা জানি, হাদিসের দূর্বলতা দু’দিক থেকে হয়। এক, রাবী বা বর্ণনাকারীর দিক থেকে। দুই, মতন বা মূল হাদিসের দিক থেকে। আমার পর্যালোচনা সনদের দিক থেকে।
    আমরা তাও জানি, ইমাম বুখারী রাঃ এর জন্মের প্রায় শতাধিক বছর আগে ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ দুনিয়ায় আগমন করেছেন। এবং তাও জানি যে, ইমাম আবু হানীফা অধিকাংশ মুহাদ্দিসিনদের মতে একজন তাবেয়ী। কারো মতে চারজন, আবার কারো মতে সাতজন সাহাবীর সান্নিধ্য সহ শিক্ষা নিয়েছেন৷
    ধরুন,
    ইমাম আবু হানীফা একজন তাবেয়ী। তাহলে বলা যায়, তিনি কারো থেকে হাদিস গ্রহণ করলে রাবী এবং রাসূল সাঃ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুই স্তর থাকে। তাবেয়ী → সাহাবী → রাসূল সাঃ৷
    ধরুন,
    ইমাম বুখারী রাঃ একজন তাবেয়ে তাবেয়ী। তাহলে বলা যায়, তিনি কোন হাদিস গ্রহণ করলে রাবী এবং রাসূল পর্যন্ত অন্তত চার স্তর থাকে। রাবী → তাবেয়ে তাবী → তাবী → সাহাবী → রাসূল সাঃ।
    এবার একটা চার্ট পর্যালোচনা দেখুন,
    আচ্ছা,মনে করুন একটা হাদিস বর্ণিত হচ্ছে এভাবে পর্যায়ক্রমে –
    রাসূল সাঃ

    উমর ইবনু খাত্তাব রাঃ

    আলক্বামা বিন ওয়াক্ক্বাস

    ইয়াহয়া বিন সাঈদ

    সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা

    মু’আম্মাল ইবনে ইসমাইল

    ইমাম বুখারী রাঃ
    আশাকরি, চার্ট দেখে বুঝতে পারছেন যে, একটা হাদিস রাসূল সাঃ থেকে ইমাম বুখারী পর্যন্ত পৌঁছেছে৷
    এবারে ইমাম আবু হানীফা ও বুখারীর নিকট এই হাদিসের মান নিয়ে আলোচনা করি –
    সংক্ষেপে বলি,
    হাদিসটি ইমাম আবু হানীফা রাঃ এর নিকট সহীহ এবং বুখারী রাঃ এর নিকট জঈফ। এবং উভয়ের তাহকীম সহীহ বা বিশুদ্ধ।
    বলবেন কিভাবে?
    জ্বী, তাহলে এবার গভীর মনযোগ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করুন।
    ✅ ইমাম আবু হানীফা রাঃ এর নিকট হাদিসটি সহীহ বা বিশুদ্ধ –
    কারণ, তিনি হাদিসটি গ্রহণ করেছেন – আলকামা রাঃ থেকে । কেননা, আবু হানীফা রাঃ উনাকে উনার জীবদ্দশায় পেয়েছেন এবং শিক্ষাদীক্ষা নিয়েছেন। আর সর্বসম্মতিক্রমে, আলক্বামা রাঃ একজন সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য রাবি। তাই আবু হানীফার হাদিস গ্রহণ সহীহ বা বিশুদ্ধ৷ কারণ, উনার পর্যন্ত হাদিসের সনদে বা রাবীদের মাঝে কোন সমস্যা নাই।
    ❌ ইমাম বুখারীর নিকট হাদিসটি জঈফ বা দূর্বল –
    কারণ, তিনি হাদিসটি গ্রহণ করেছেন মু’আম্মাল ইবনে ইসমাইল থেকে। আর, মু’আম্মাল যেহেতু স্মৃতি শক্তির ব্যাপারে সমালোচিত, তাই ইমাম বুখারী রাঃ উনার বর্ণিত হাদিসটা ” সহীহুল বুখারীতে ” স্থান দেন নাই। ” উমার ইবনে খাত্তাব ” থেকে নিয়ে ” সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা ” পর্যন্ত সকল রাবী সিকাহ হওয়া সত্ত্বেও কেবল ” মু’আম্মাল ইবনে ইসমাইল ” এর কারণে ইমাম বুখারী রাঃ হাদিসটি ” সহীহুল বুখারীতে ” স্থান দেন নি।
    → এবার গভীরভাবে চিন্তা করে বলুন,
    ইমাম আবু হানীফার হাদিস গ্রহণ কি অশুদ্ধ? মোটেও না! কারণ, ইমাম বুখারী রাঃ যে রাবীর কারণে হাদিসটি জঈফ বলেছেন, ইমাম আবু হানীফা তো উনাকে তথা মু’আম্মালকে পানই নাই৷ মু’আম্মাল এর জন্মের বহু আগে আবু হানীফা রাঃ মৃত্যু বরণ করেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি তো একজন সীকাহ রাবী তথা আলক্বামা থেকে হাদিসটা গ্রহণ করেছেন। তাই নিশ্চিন্তে, আবু হানীফার হাদিস গ্রহণ সহীহ৷
    তাই সারাংশে উক্ত হাদিসের পর্যালোচনায় বলা যায় –
    এই হাদিসটি ইমাম আবু হানীফার গ্রহণ বিশুদ্ধ। কারণ, তিনি একজন সিকাহ রাবী তথা আলক্বামা থেকে হাদিসটি গ্রহণ করেছেন৷
    আবার একই হাদিস ইমাম বুখারীর গ্রহণ অশুদ্ধ৷ কারণ, তিনি হাদিসটি একজন জঈফ রাবী তথা মু’আম্মাল থেকে শুনেছেন।
    শেষ কথা,
    নতুন দ্বীনে আসা প্রেক্টিসিং মুসলিম ভাইদের অনুরোধ করে বলব, কোন হাদিসের ব্যাপারে জঈফ শব্দ শুনলেই নাক ছিটকাবেন না। জঈফ মানেই পরিত্যাজ্য বা নাক ছিটকানো না। জঈফ হাদিস এর প্রকার মোট -৪৯ টা রয়েছে। সব ক’টি জঈফ হাদিস পরিত্যক্ত বা আমলের অনুপযুক্ত ___ ব্যাপারটা এমন না। তন্মধ্যে কিছু হাদিস আছে, যা আমলের যোগ্য এবং অনেক মুহাদ্দিসীনে কেরাম থেকে উক্ত জঈফ হাদিসের উপর আমলের বর্ণনা রয়েছে।
    যেমন, ইমাম তিরমিজী রাঃ উনার ” জামিউল কাবীর ” গ্রন্থে বলেন –
    আমি উক্ত হাদিসের কিতাবে সহীহ, হাসান, জঈফ ইত্যাদি হাদিস উল্লেখ করেছি। তবে যে হাদিসগুলা এনেছি, তার উপর কোন না কোন মুহাদ্দিসের আমল দেখেছি / শুনেছি, তারপর আমার কিতাবে স্থান দিয়েছি৷
    ইমাম তিরমিজী রাঃ এর উক্তি থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, তখনকার সময়ে মুহাদ্দিসীনদের মাঝে সঙ্গত কারণে কিছু কিছু জঈফ হাদিসের উপর ও আমল ছিল।
    তাই আমি আমার দ্বীনি ভাইদের বলব, জঈফ হাদিস শুনলেই আঁতকে উঠবেন না। হাদিসটির ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের তাহকীম জানবেন। তারপর, সিদ্ধান্ত নিবেন ইনশা আল্লাহ ! আল্লাহ আপনাদের প্রচেষ্টাতে বারাকাত দান করুক ___ আমীন!
    আব্দুল কারীম চৌধুরী,
    ইসলামিক আইন ও বিচার বিভাগ,
    মদীনা ইসলামীক বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।

  22. কোর’আন ও হাদীস থাকা সত্ত্বেও মাজহাব কেন এসেছিলো ??
    __________________
    কাক ডাকা গ্রীষ্মের ভরদুপুর পড়ন্ত খরাসার বিকেলে হলের চারিপাশে সারিবদ্ধ খেজুর গাছের নিচে বসে সূরায়ে নূরের বঙ্গানুবাদ পড়তেছিলাম। শারীয়াতের বিভিন্ন মাসাইল সমৃদ্ধ এই সূরা পাঠ ও হৃদয়াঙ্গমে চমৎকার লাগে৷ একবার পড়ে দেখবেন, ভালো না লেগে উপায় নাই !
    যাইহোক, সূরায়ে নূরের বঙ্গানুবাদ পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে নিচের আয়াতে এসে থমকে গেলাম। মোটেও এগুতে পারলাম না –
    ((ٱلزَّانِی لَا یَنكِحُ إِلَّا زَانِیَةً أَوۡ مُشۡرِكَةࣰ وَٱلزَّانِیَةُ لَا یَنكِحُهَاۤ إِلَّا زَانٍ أَوۡ مُشۡرِكࣱۚ وَحُرِّمَ ذَ ٰ⁠لِكَ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِینَ))
    [Surat An-Nur 3]
    বঙ্গানুবাদ –
    [[ ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে। ]]
    বঙ্গানুবাদ পড়ে বড় আশ্চর্য হলাম। বারেবারে মাথায় দু’টি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে –
    ১. একজন জিনাকারী আরেকজন জিনাকারিনীকে আল্লাহ তা’লা বিবাহ করার কথা বলছেন। কিন্তু বিষয়টা কেমন দাঁড়ায়? কে জিনাকারি আর কে পুতপবিত্র, তা বুঝব কি করে ?
    ২. একজন জিনাকারীকে মুশরিক বিয়ে করার কথা বলছেন। কথাটা কেমন হয়ে গেলো না ?
    যেখানে আল্লাহ তা’লা অপর আয়াতে মুশরিকদের সাথে বিবাহ নিষেধ করেছেন – যেমন,
    ((ولا تنكحوا المشركات حتى يؤمن ))
    অর্থাৎ, যতক্ষণ না ইমান আনবে, ততক্ষনে মুশরিকদের বিবাহ করা যাবে না৷
    বড্ড বিপকে পড়লাম! এক আয়াতে আল্লাহ তা’লা মুশরিকদের সাথে বিবাহের কথা বলছেন, অপর আয়াতে নিষেধাজ্ঞার কথা _____ কি ব্যাপার!
    মনে তখন ভাবনা এলো,
    বাংলা বঙ্গানুবাদ কিনে কোরান বুঝা এতো সহজ না। এই কোরান বুঝতে শত শত তাফসীর এর আবির্ভাব হয়েছে। হাজারো হাদিসে কোরানের ব্যাখ্যা রয়েছে। লাখো মুফতির ফতোয়া রয়েছে। তাই যেনতেন বাংলা পড়ে কোরান পূর্ণাঙ্গ বুঝা আমার পক্ষে সম্ভব না৷
    ভাবলাম, তাফসিরে ইবনে কাসীরের সহযোগিতা নেই। তাফসির বের করতেই দেখি ইবনে কাসীর রাঃ বলতেছেন –
    قال عبدالله ابن عباس : المراد بالنكاح هنا الجماع ليس الزواج
    টাস্কিত খেলাম! সারাজীবন পড়ে আসলাম, نكاح এর অর্থ বিবাহ, এবার জানতে পারলাম নিকাহ এর অপর অরর্থ جماع তথা সঙ্গম করা!
    যাইহোক, সাহাবা রাঃ এর তাফসীর এটা ; না মেনে উপায় নাই। তাহলে এবার আয়াতের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা হলো –
    // একজন জিনাকারী অপর জিনাকারিনী মহিলার সাথে খারাপ কাজ করবে অথবা কোন মুশরিকের সাথে। কোন ভালো-সালেহ বান্দা এই কাজ করতে পারে না৷ \\
    মোটামুটি, একটা হৃদয়াঙ্গমে পৌছলাম। তবে আরো কতো বিষয় আছে, মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কোথায় এবং কি পড়লে উত্তর পাবো, তাও জানতে পারছি না৷
    মনে প্রশ্ন জাগলো –
    [[ আচ্ছা ধরে নিলাম, নিকাহ দ্বারা সঙ্গম করা উদ্দেশ্য। তবে একজন জিনাকারী ও জিনাকারীনীর বিবাহের হুকুম কি হবে?? ]]
    তাফসিরে ইবনে কাসীর উপরোক্ত আয়াতের সব ব্যাখ্যা পড়লাম। সমাধান পেলাম না। ভাবলাম, কোরানেও স্পষ্ট পেলাম না৷ হাদিসেও পেলাম না৷ হাদিসে থাকলে ইবনে কাসীর রাঃ উল্লেখ করতেন।এতেও পেলাম না। তাহলে বাকি শুধু ফিকাহ’র কিতাবাদী !
    গেজুর বাগান থেকে দৌঁড়ে রুমে ফিরে আসলাম। টেবিলের উপর এলোপাতাড়ি রেখে দেওয়া ফিকাহ’র কিতাব – বিদায়াতুল মুজতাহিদ – হাতে নিলাম !
    দাড়াম – করে কিতাবুন নিকাহ বের করলাম। একটা একটা পৃষ্টা উল্টিয়ে উপরোক্ত মাসালাটি খুঁজতে লাগলাম। এক পর্যায়ে দেখতে পেলাম লেখা –
    ما حكم نكاح الزاني / الزانية ؟
    একজন জিনাকারী / জিনাকারিনীর বিবাহের হুকুম কী ?
    মাসালাটি পেয়ে যারপরনাই খুশী হলাম। মাসালাটি আপাততমান দেখতে সহজ বোধ হলেও কোরানের বাহ্যিক বর্ণনায় অনেক জটিল !
    অতঃপর সমাধান পেয়ে গেলাম। ইবনে রুশদ রাঃ এর ভাষ্যে –
    // একজন সৎ ও পবিত্র লোক কখনো কোন জিনাকারী মহিলাকে বিবাহ করা বিশুদ্ধ হবে না। যেহেতু আল্লাহ তা’লা পবিত্র কোরানে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন – জিনাকারী অপর জিনাকারীনী ছাড়া অন্যা কাউকে বিবাহ করতে পারবে না৷ তবে ওই মহিলা / পুরুষ যদি খালেসভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করে নেয়, তবে তার সাথে বিবাহ শাদী জাইজ আছে। কেননা, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন –
    التائب من الذنب كمن لا ذنب له
    একজন তওবাকারী খালেস তাওবা করলে এমন হয়ে যায়, যেন তার কোন গুনাহই নাই।
    হাদিসের ভাষ্য মতে জিনাকারী/জিনাকারিনী তাওবা করে নিলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যার ফলে সে অন্যান্য লোকের মতো সালেহ ও পবিত্র হয়ে যায়৷ অতএব, জিনাকারি/জিনাকারিনী যদি তাওবা করে নেয়, তাহলে তাদের সাথে বিবাহ শাদী বৈধ ৷
    এবং এই মতটা ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ সহ অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের। \\
    চিন্তা করুন,
    মুজতাহিদীনে কেরাম একটা কঠিন মাসালাকে কতইনা সহজ করে সমাধান দিয়েছেন। আচ্ছা, এই সমাধান কি উনারা মন গড়া দিয়েছেন ?? নাকি কোরান-হাদিসের আলোকে ??
    নিশ্চিত বলবেন যে, ইমামদের মতটা অবশ্যই হাদীস সম্মত। এবার যদি উম্মাহ এই ফতোয়ার উপর আমল করে, তাহলে আবু হানীফার কথার উপর আমল হয় নাকি কোরান ও রাসূল সাঃ এর হাদিসের উপর ?? আপনারা অবশ্যই বলবেন,হাদিসের উপরে!
    তবুও দিনশেষে একদল লোক বলবে যে, মাজহাব মানে ব্যক্তির অনুসরণ । কোরান-হাদিসের অনুসরণ না। আল-ইয়াজুবিল্লাহ !
    যে সব বিষয়ে প্রত্যক্ষ কোরান-হাদিসের বর্ণনা নাই, সেসব বিষয়ে মুজতাহিদীনে কেরামের গবেষণালব্ধ মতের আলোকে পরোক্ষাভাবে কোরান-হাদিসের অনুসরণকেই মাজহাব বলে ৷
    অথচ, কিছু লোক আছে ; যারা বলে কোরান-হাদিস থাকতে মাজহাব কেন ? আরে ভাই, কোরান-হাদিসের যেসব বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা আছে, সেগুলার জন্য মূলত মাজহাব না।যেসব বিষয়ে স্পষ্ট আলোকপাত আছে,সেগুলাতে ফোকাহাদের ইত্তেফাক বা ঐক্যমত রয়েছে৷ মাজহাব তো এসেছে –
    → অস্পষ্ট বিষয়কে স্পষ্ট করতে
    → পারস্পরিক বৈপরীত্য বিষয়ে সমাধান করতে
    → কোনটি খাস,কোনটি আম বর্ণনা দিতে
    → কোনটি রহিত আর কোনটি বহাল তা বর্ণনা দিতে
    → নতুন উদ্ভাবনী সকল মাসালার সমাধান দিতে
    → উম্মাহকে এক ও ঐক্য করতে
    অনেকে না বুঝে মনে করেন, মাজহাব মানে কোরান,হাদিসের মতো তৃতীয় একটা বিষয় । এটা একটা অমূলক ও ভ্রান্ত ধারণা৷
    শারীয়াতের মৌলিক উপাদান কোরান ও হাদিস। মাজহাব কেবল কোরান ও হাদিসের সঠিক মত ও পথে চলতে ব্যবহার হয়। এছাড়া অন্য কিছু না৷
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    ফিকাহ বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়।

  23. সিলেট নয়াসড়ক পয়েন্ট থেকে সুজা চলে আসি কুমারপাড়া এলাকায়। জেল রোড হয়ে বন্দর যাব, তাই পায়ে হেটে নিরবধি চলতে থাকি৷
    পথিমধ্যে, সালাতের আজান হয়ে গেলে রোডের পার্শের মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য প্রবেশ করি৷ মসজিদে মিডিয়াবাজি আর সাজসজ্জা দেখে বুঝতে দেরী হলো না যে, এটা কেমন মসজিদ!
    কিছুটা মনে উচ্ছাস নিয়েই সুজা মসজিদে প্রবেশ করি। ভিতরে এক কোণায় গিয়ে দুখুলুল মাসজিদ এর দু’রাকাত নামাজ পড়তে মনস্থির করলাম।
    ইতিমধ্যে দেখলাম, একজন লোক খুব গতিতে আমার দিকে এগিয়ে আসতেছেন। আমি আর সেদিক না তাকিয়ে সরাসরি নামাজ শুরু করি!
    নামাজ সমাপ্ত করে দেখি, লোকটি আমার পিছনে বসে আছে। আমার দিক ফিরে জিজ্ঞেস করলো –
    আপনি এখানে কি জন্য ?
    আমি বললাম –
    নামাজ পড়ার জন্য ভাইয়া।
    লোকটি পূণরায় বললো –
    নামাজ পড়তে, নাকি ফেতনা সৃষ্টি করতে ?
    আমি বললাম –
    এ আবার কি ? ফেতনা সৃষ্টি কর‍তে আসব কেন? এটা মসজিদে জিরার ( রাসূলের যুগে ফেতনা সৃষ্টির জন্য মোনাফেকরা স্বতন্ত্র মসজিদ তৈরী করেছিল) নাকি যে, এখানে আসা মানেই ফেতনা সৃষ্টি করা ?
    আরো বললাম –
    আচ্ছা, আপনাদের এই মসজিদ কি মসজিদে জেরার? যে, যে কেহ এখানে আসলে, তার উদ্দেশ্য ফেতনা সৃষ্টি করা হয়ে থাকে ?
    লোকটি বললো –
    নাহ, মানে আপনি যে ফেইসবুকে অনেক ফেতনা সৃষ্টি করেন। এ জন্য জিজ্ঞেস করলাম। মনে অন্য কিছু নিয়েন না।
    নৈতিকতাঃ-
    ফেইসবুকে দালিলীক লেখালেখি ও ভুল ফতোয়ার জবাবী লেখা দিলে ফেতনা সৃষ্টি হয় কিভাবে, তা এখনো আমার বোধগম্য না !
    আপনারা যদি আগেবাগে মাজহাব নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তি করতেন না, তাহলে আমাদের ও এসব জবাবী লেখার প্রয়োজন ছিলো না।
    আপনারা শুরু করেন, আর আমরা জবাব দেই। কিন্তু, শুরুটা ফেতনা না হয়ে, জবাবটা ফেতনা হয়ে যায় _______ এই অংক’টা আমার মোটেও বুঝে আসলো না।

  24. ফোকাহায়ে কেরাম ফিকাহ বা ইসলামী আইনকে চার ভাগে বিভক্ত করেন –
    ১. ইবাদাত। যেমনঃ নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদি।
    ২. মু’আমালাত ইনসানিয়্যাহ। যেমনঃ বিবাহ, তালাক ইত্যাদি।
    ৩. মু’আমালাত মালিয়াহ৷ যেমনঃ ক্রয়বিক্রয়, ব্যাংক ইত্যাদি।
    ৪. মু’আকাবাত। যেমনঃ হুদুদ, জেল, শাস্তি ইত্যাদি।
    ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে তরুণ প্রফেসার ড. শামরানী [ হাফিজাহুল্লাহ ] ক্লাসে এসে ধড়ফড় লেকচার শুরু করে উপরোক্ত চার প্রকারের বিষয়টি পরিস্কার করলেন। এবং বললেন –
    ” তোমরা এযাবৎ প্রথম দু’প্রকার তথা ইবাদাত ও বিবাহ-তালাক নিয়ে বিস্তারিত আইন-কানুন জেনেছো। এই সেমিস্টারে তোমরা জানতে যাচ্ছ, বিজনেস কনসেপ্ট / কারেন্ট বিজনেজ পলিসি / ব্যাংকিং এন্ড ফিনেন্স ইত্যাদি সহ সমসাময়িক সকল ব্যবসায়ীক ধারণা ইত্যাদি। এসবের সকল শারয়ী সমাধান জানতে যাচ্ছ।
    তবে, তোমরা কেয়ারফুল ! ইবাদাত / বিবাহ /তালাক ইত্যাদিতে কোরান-হাদিসের সরাসরি অধিকাংশ প্রামাণ্য পেলেও এই চাপটারে এতো কিছু পাবে না। বরং, অল্প কিছু সংখ্যাক মূলনীতি আছে – যা চার মাজহাবের ফোকাহায়ে কেরাম আবিস্কার করে গিয়েছেন – সেগুলোর উপর নির্ভর করে পুরা ব্যবসা-পলিসি জানতে হবে৷
    তিনি আরো বললেন, রাসূল সাঃ বা সাহাবায়ে কেরাম এর যুগে যে ব্যবসা পদ্ধতি ছিল, তা এখনকার ব্যবসার সাথে নূন্যতম মিল নাই। তাই সরাসরি কোন প্রমাণ কোরান-হাদিস থেকে খুঁজে পাবেন না৷ তবে কিছু উসূল মূলনীতি আছে, যার আলোকে শারয়ী সমাধান দিতে পারো। ”
    আর মূলনীতি হলো চারটি –
    ١- الأصل في البيع الحل
    ٢- العبرة في العقود المقاصد والمعاني
    ٣- الأصل في الشروط الإباحة
    ٤- الخراج عن الضمان
    তরুণ প্রফেসার পুরা দু’ঘন্টা এই চার মূলনীতির উপর আলোচনা রেখে বলিষ্ঠ কন্ঠে বললেন –
    ” তোমরা কখনো ফোকাহায়ে কেরাম ছাড়া স্বয়ংক্রিয় হতে পারো না। তাঁদের দেখানো বা রেখে যাওয়া মূলনীতি ছাড়া বর্তমান বিজনেস পলিসির শারয়ী সমাধান দিতে পারো না । তাই মাজহাবের ফোকাহাদের মূলনীতি আগে ভালো করে আন্ডারস্ট্যান্ডিং করো। দ্যান, শাখাগত মাসালা-মাসাইল নিয়ে অগ্রসর হও। ”
    নীতিকথা –
    সুবহানাল্লাহ !
    আমি ফিকাহ বা ইসলামিক আইন যতো পড়তেছি, ততো প্রতিটা মাজহাবের প্রতি বেশী শ্রদ্ধাশীল হচ্ছি। যতো জানি, ততো মাজহাবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। যতো মাজহাবের উসূল বা মূলনীতি নিয়ে গবেষণা করি, ততো মাজহাবের প্রতি আশ্চর্য বোধ করি !
    অথচ, যখন আমাদেরই কিছু দ্বীনি ভাই মাত্র ইবাদাতে দু’চারটা সহীহ হাদিসের দোহাই দিয়ে পুরা মাজহাবের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন কিংবা মাজহাবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান ; তখন বুকে খুব কষ্ট ও মনে আফসোস লাগে৷ আপাততঃ মেনে নিলাম, কেবল সহীহ হাদিস মানতেই হবে ! মাজহাব মানা যাবে না৷ মাজহাব বলতে কিছু নাই।
    তাহলে আমার প্রশ্ন হলো –
    সহীহ হাদিস বা অধিকাংশ সরাসরি কোর’আন-হাদিসের নাস দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হলো শুধু – ইবাদাত। এছাড়া, নিকাহ / তালাক / ব্যবসা / ব্যাংকিং /শাস্তি ইত্যাদিতে প্রায় ৬০% মাসালায় দেখা যায় সরাসরি কোন দলিলই নাই।ফিকহের মূলনীতি, ইজতেহাদ, কিয়াস ইত্যাদি মেনে সমাধান দিতে হয়। এই ক্ষেত্রে আপনারা -যারা মাজহাব অস্বীকার করেন বা মাজহাবকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখান – কি করেন ?
    আমরা তো মোটামুটি পার হয়ে যাই। কারণ, মাজহাবের সম্মানীত ইমামগণ উম্মাহের চিরন্তন ফায়দার বা ফেতনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক মূলনীতি তৈরি করে গিয়েছেন। আমরা সেগুলোকে ফলো করে সমাধান পেয়ে যাই। এ ক্ষেত্রে আপনারা কার দিকে তাকিয়ে থাকেন ?
    আমাদের যেসব ভাইয়েরা গাইরে মুকাল্লীদ দাবী করেন, তারা বস্তুত মাজহাবটাকে বা তাদের পড়াশুনাকে কেবল ইবাদতে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন৷ ফলে কে রাফয়ে য়াদাইন করলো না / কে আমীন বলল না / কে ফাতিহা পড়লো না — এ নিয়ে ঝগড়াঝাটির শেষ নাই।
    অথচ, মাজহাব তো কেবল ইবাদত সংক্রান্ত বিষয়াবলির জন্য আসে নাই। বরং, বর্তমান বিজনেস ইত্যাদি সম যতো বিষয়াবলিতে সরাসরি কোন নাস বা কোরান-হাদিসের দলীল নাই, সেগুলোর কিয়াসী বা মূলনীতির আলোকে সু-স্পষ্ট সমাধানকল্পে মাজহাব এসেছে। যেসব বিষয়ে সরাসরি নস/দলীল এসেছে, সেগুলোর জন্য মাজহাব আসে নাই । বরং, মতবেদপূর্ণ বিষয় বা দলীলের অনুপস্থিত – এমন বিষয়ে ইজতেহাদী সমাধান নিয়ে মাজহাব এসেছে৷ আল্লাহ আমাদের ভাইদেরকে সঠিক বুঝার তাওফীক দান করুক !
    ________________
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    ইসলামিক আইন ও বিচার বিভাগ,
    মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব৷

  25. আমি নির্ধারিত কোন মাজহাব মানি না, কোর’আন-হাদিসের অধীক নিকটবর্তী যা তা মানি
    ____________________
    জ্বী, হ্যাঁ ! কথা সত্য ; তবে বাস্তবায়ন কঠিন। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ বাক্য আছে, তা হলো – To say is easy but to do is hard।
    যাইহোক , যারা উপরোক্ত শিরোনামের প্রবক্তা, তাদের কথা সুন্দর । তবে তা মুখেই ইতি থাকবে , বাস্তবায়নে কস্মিনকালেও সম্ভব না।
    তার দু’টি কারণ –
    ১. অস্পষ্ট ও জঠিল বিষয়ে কোর’আন-হাদিসের অধীক নিকটবর্তী মতটা আবিস্কার করার জন্য তো মতানৈক্য বা মাজহাব এসেছে। তো আপনি আবার নতুন করে কি আরেকটা মাজহাব আবিষ্কার করবেন ?
    ২. মাজহাব সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত যুগ যুগ ধরে আলিম-উলামারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন যে, চার মাজহাব ছাড়া কোর’আন-সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তী বলে কোন মাজহাব তৈরী করা যায় কি না। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কেউ পারেন নাই। সুতরাং, আপনি নিশ্চিত থাকেন যে আপনিও পারবেন না।
    মোদ্দাকথা, কোর’আন-সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তীটা আমল করি _____ এ কথা মুখে বলা যতোটা সহজ ; কাজে বাস্তবায়ন এতো সহজ না৷
    যেমনঃ এর একটা উদাহরণ দেখি আমরা।
    ফরজ নামাজে ইমাম সাহেবের পিছনে সূরায়ে ফাতেহাহ পড়ার হুকুম৷ ??? এই ব্যাপারে কোর’আন-হাদিসে বহু আলোচনা আছে।
    → আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
    ” وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون ”
    অর্থ: আর যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয়।
    ® এ আয়াত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর বক্তব্য তাফসীরে তাবারী (৯খ. ১০৩পৃ.) ও তাফসীরে ইবনে কাসীরে (২খ. ২৮পৃ.) এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে-
    وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون ” يعني في الصلاة المفروضة
    অর্থ : যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয় অর্থাৎ ফরজ নামাযে।
    ® হযরত ইবনে মাসঊদ রা. এর মতও তাই। তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে:
    صلى ابن مسعود، فسمع أناسا يقرءون مع الامام، فلما انصرف، قال: أما آن لكم أن تفقهوا ؟ أما آن لكم أن تعقلوا ؟ وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا كما أمركم الله
    অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রা. নামায পড়ছিলেন, তখন কতিপয় লোককে ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়তে শুনলেন। নামায শেষে তিনি বললেন : তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি, তোমাদের কি বোঝার সময় হয় নি? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরব থাকবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। (৯ খ. ১০৩ পৃ.)
    ® যায়দ ইবনে আসলাম ও আবুল আলিয়া র. বলেছেন:
    كانوا يقرأون خلف الإمام فنزلت : { وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون }
    অর্থাৎ তাঁরা (সাহাবীগণ) ইমামের পেছনে কেরাত পড়তেন, তখন অবতীর্ণ হয়
    وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون
    ® ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল র. বলেছেন:
    أجمع الناس على أن هذه الآية في الصلاة
    অর্থাৎ এবিষয়ে সকলেই একমত যে, উক্ত আয়াত নামায সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। (মাসাইলে আহমদ লি আবী দাউদ, পৃ. ৪৮)
    মোদ্দাকথা, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেলো যে, নামাজে ইমাম সাহেবের পিছনে কিরা’আত পড়া যাবে না।
    এবার আমরা বিপরীত মতটা দেখি।
    প্রসিদ্ধ হাদীস –
    لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب
    অর্থাৎ – যে ব্যক্তি নামাজে সূরায়ে ফাতেহাহ পড়লো না, তার নামাজই হলো না।
    এটা একটা প্রসিদ্ধ হাদীস, যার ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ নাই। তো ভাইয়েরা, এবার চিন্তা করে দেখুন। উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণ করে যে, নামাজে ইমামের পিছনে কিরা’আত পড়া লাগবে না। আবার নিচের হাদিসে প্রমাণ করে যে, সূরায়ে ফাতেহাহ না পড়লে নামাজই হবে না৷
    এবার বলুন, এই যে কঠিন একটা পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়, যার মধ্যে সমন্বয়ে করে কোর’আন-সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তী মতটা কি আবিস্কার করা আপনার পক্ষে সম্ভব ?
    আহারে ভাই, মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে কোর’আন-সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তী মতটা যদি সু-স্পষ্ট পাওয়া যেতো, তাহলে তো ইসলামে চার মাজহাবের প্রয়োজনই হতো না।
    শেষকথা, ইসলামে কোর’আন-সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তী মত বলতে কিছু নাই। চার মাজহাবের সকল মতই কোর’আন-সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তী৷ তাই তো আহলে সুন্নাহ ওয়াল-জামাতে চার মাজহাবই বিশুদ্ধ ও স্বীকৃত । যে কোন একটা মানলেই চলে।
    আপনি যতোই মুখে বলুন আমি কোর’আন-সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তী মত মানি, অন্তরে কিন্তু নিজস্ব শায়খদের মত মানেন ঠিকই। কোর’আন-সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তী মত যাচাই-বাছাই করার মতো যোগ্যতা আপনার-আমার নাই। সুতরাং, চুপসে যে কোন একটা মত মেনে নেওয়াতেই কামিয়াবী।হুদাই মুখে মুখে এ কথা যে না বলি -” আমি কোর’আন- সুন্নাহের অধীক নিকটবর্তী ” মত মানি।
    _______________
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।

  26. প্রকৃত সালাফ কারা ??
    ” সালাফ ” নাম ধারণ করে যারা অতিরঞ্জন করে, তাদের অধিকাংশই জানে না যে, মূলত ” সালাফ ” কারা হবেন, তা নিয়েও বিশদ মতানৈক্য রয়েছে।
    কারণ, কোর’আন এবং হাদিসের কোথাও সালাফ এর স্পষ্ট কোন সংজ্ঞা/বর্ণনা নাই। যার কারণে কেউ মনে করেন, সালাফ বলতে কেবল ___ সাহাবা বুঝানো হয়। আবার কেউ মনে করেন সালাফ বলতে ____ সাহাবা ও তাবেয়ী বুঝানো হয়। আবার কেউ মনে করেন সালাফ বলতে ____ কুরুনে ছালাছা বুঝানো হয়। আর এটাই সর্বাপেক্ষা অধীক বিশুদ্ধ মত৷
    তবে একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, কিছু সংখ্যক ভাইয়ের ধারণা যে, সালাফ বলতে তাদের মানহাজের নির্ধারিত কিছু শায়খ বুঝায়৷ এর বাহিরা সবাই খারেজী৷ এটা একটা অজ্ঞ ও বালখিল্য ধারণা৷
    আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ মতে কুরুনে ছালাছা ( সাহাবা+তাবেয়ী+তাবে’ তাবেয়ী) যদি সালাফ হন, তাহলে শীয়া খারেজীরা বাদে বাকি আমরা সবাই’ই সালাফী। কারণ, আমরা তো নিঃসংকোচে সাহাবা+ তাবেয়ী+তাবে তাবেয়ীদের মানি ও অনুসরণ করি ৷
    বরঞ্চ কিছু স্বল্পসংখ্যক লোক সালাফী নাম নিয়ে তাবেয়ী/তাবেয়ে তাবীদের স্বীকৃত ইমামদের অনুসরণ করে না। বস্তুত, বিশুদ্ধ মতে উনারা আংশিক সালাফী হলেও পূর্ণ হতে পারে না। পরিপূরক হতে হলে সালাফদের ( মাজহাবের ইমামগণ সহ) সবাইকে নিঃসন্দেহে মেনে নিতে হবে৷
    শেষকথা, কিছু সংখ্যক লোকের কাছে সালাফ এখন নির্ধারিত কিছু শায়খ সমন্বিত একটা চেতনার নাম । যারা সে’সব শায়খের গুণগান গাইবে, তারাই সালাফী। নচেৎ ভিন্ন কেহ সালাফী হতে পারবেন না ৷
    আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, সালাফিজম নির্ধারিত কোন শায়খ-মাশায়েখের অনুসরণের উপর ন্যস্ত বিষয় নয়। বরং, সকল সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবেয়ে তাবীদের আহলে সুন্নাহের ইমামদের নিরংকুশ অনুসরণ ও তাদের বিশুদ্ধ আকিদা লালনের নাম হচ্ছে সালাফীজম।
    সুতরাং, ব্যাপকার্থে আমরা আহলে সুন্নাহ ওয়াল-জামাতের সবাই সালাফী। সালাফিজম নির্ধারিত কোন গোষ্ঠীর বা শায়খদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি না।

  27. হানাফী মাজহাব কি ইমাম আবু হানীফার মৃত্যুর চারশত ( ৪০০) বছর পর প্রতিষ্ঠিত ??
    _______________________
    অনেকগুলো প্রোপাগাণ্ডা আর মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুক। এরকম আজগুবি / অসঙ্গতিপূর্ণ অনেক প্রশ্ন পেয়ে খুব বিব্রত হচ্ছি। কেননা, এসব মিথ্যা-বানায়োটি তথ্য ছড়াচ্ছেন একদল স্কলার/দায়ী ব্যক্তিবর্গ, যাদের অন্ধ অনুসারীগণ না বুঝে / না পড়ে / না জেনে চোখ বন্ধ করে উম্মাহের শ্রেষ্ট সালাফদের প্রতি কুৎসা রটাচ্ছেন। আল্লাহ এসব অবুঝ বান্দাদের ক্ষমা করুক !
    এই প্রশ্নটা প্রায়ই আমি পেয়ে থাকি যে –
    ” হানাফী মাজহাব ইমামে আজমের মৃত্যুর ৪০০ বছর পর প্রতিষ্ঠিত । ”
    আবার এই প্রশ্নটাকে অনেকেই ঘুরিয়ে আরেক অর্থে বলেন যে –
    ” আবু হানীফার মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে আর হানাফী মাজহাব প্রতিষ্ঠিত ৪০০ হিজরীর পরে ”
    প্রশ্ন দেখেই বাহ্যত বুঝা যায় যে, হানাফী মাজহাব আর ইমামে আবু হানফীরা সাথে কোন সম্পর্ক নাই। যেহেতু, মাঝখানে বিশাল একটা সময়ের তফাৎ রয়েছে। এটা একটা সহীহ ব্লাক মেইল ধরা যায়!!
    আসলেই কি তাই?? আজ বিষয়টা ক্লিয়ার করবো ইনশা আল্লাহ ।
    উত্তরঃ-
    মূল লেখাটা পড়ার আগে একটা বিষয় বুঝতে হবে যে, মাজহাব প্রতিষ্ঠা বলতে কি বুঝায় ??
    মাজহাব প্রতিষ্ঠা বলতে দু’টা বিষয় বুঝায় –
    ১. কোর’আন হাদীস থেকে মাসালা-মাসাইল বর্ণনার পদ্ধতি ও মূলনীতি সর্বস্ব জ্ঞান বিদ্যমান থাকা।
    ২. মাজহাবের ইমামের ছাত্র থাকা, মাজহাবের বই পুস্তক থাকা, অতঃপর মাজহাবটা মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচার পাওয়া। ধীরে ধীরে মাজহাবটা অনুসরণীয় হয়ে উঠা।
    আর এভাবেই একটা মাজহাব প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে, গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো – মাজহাবের নির্ধারিত মাসালা-মাসাইল ও উসূলের বই-পুস্তক থাকা।
    এবার আমরা জানবো যে, তাহলে হানাফী মাজহাবের বই-পুস্তক বা প্রচার-প্রসার কবে থেকে শুরু হয়েছে ?? যদি দেখা যায়, সত্যি ইমামে আজমের মৃত্যুর ৪০০ বছর হানাফী মাজহাবের বই লিখা হয়েছে, তবে ধরে নিব উপরোক্ত প্রশ্ন সত্য।
    ইমাম আজম আবু হানীফা রাঃ মৃত্যু বরণ করেন ১৫০ হিজরীতে৷ তিনি অসংখ্য ছাত্র রেখে যান, তন্মধ্যে উল্লেখ্য তিন জন ছিলেন –
    ১. ইমাম আবু ইউসুফ
    ২. ইমাম মুহাম্মাদ
    ৩. ইমাম জুফার
    ( রাহিমাহুমুল্লাহ )
    ইমাম আজম রাঃ হানাফী মাজহাবের মাসাইল, মূলনীতি ইত্যাদি উনার ছাত্রদের কাছে শিক্ষা দান করেন। তবে সেই সময়ে লেখালেখির প্রচলন না থাকায় ইমাম আজমের স্ব-হস্তে লিখিত কোন বই পাওয়া যায় না। তবে উনার সুযোগ্য ছাত্রগণ ইমামে আজমের ইলম বুকে ধারণ করেন। আর সুযোগ্য ছাত্রদের মাধ্যমেই হানাফী মাজহাবের ইলম-কালাম বিস্তার লাভ করে৷
    ইমামে আজমের মৃত্যুর পর উনার ছাত্রদের উপর সেই ইলমি দায়িত্ব আরোপিত হয়। তন্মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ দারস-তাদরীস ও বিচার ব্যবস্থাপনার খেদমতে বেশী নিয়োজীত হন। আর ইমাম মোহাম্মাদ ইবনে হাসান শায়বানী রাঃ দারস-তাদরীসের পাশাপাশি লিখালিখির জগতে মনযোগ নিবেশন করেন।
    তিনি তার উস্তাদ ইমামে আজমের সকল মাসালা-মাসাইল সংরক্ষণে ১৭৯ হিজরীতে ” জাহিরুর রেওয়ায়াহ ” নামে গ্রন্থ রচনা করেন। যা মোট ছয়টা কিতাবের সন্নিবেশ ছিলো এবং ইমামে আজমের সকল মাসাইল ও উসূল সংকলিত ছিলো।
    সেই বই ছয়টি –
    ১. মাবসুত
    ২. জিয়াদাত
    ৩. জামিউস সাগীর
    ৪. জামিউল কাবীর
    ৫. সিয়ারে কাবীর
    ৬. সিয়ারে সাগীর
    এই মোট ছয়টি বই হলো হানাফী মাজহাবের আনুষ্ঠানিক যাত্রার বই, যা থেকে তৎকালীন আলিম-উলামা পড়াশোনা ও পড়ানো সহ বিচারিক কার্যক্রম ইত্যাদি শুরু করেন। খেয়াল করেন, বইগুলা কিন্তু লিখে হয়েছে – ১৭৯ হিজরীতে !!
    এবার আপনি বলেন তো, হানাফী মাজহাব কি ৪০০ হিজরীর পরে প্রতিষ্ঠিত?? আবু হানীফার মৃত্যুর ৪০০ বছর পরে প্রতিষ্ঠিত ?? নাকি ইমামে আজমের মৃত্যুর মাত্র ২৯ বছর পর তথা ১৭৯ হিজরীতে আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠিত ??
    যাইহোক, হানাফী মাজহাব এর বিস্তার মূলত এই ছয়টি কিতাব থেকে বিস্তৃত। এই ছয়টি কিতাবকে আবার একত্র করেন হাকীম আশ-শাহীদ রাঃ ” কাফী ” নামক গ্রন্থে৷
    অতঃপর, সেই কাফী নামক গ্রন্থের প্রায় ৩০ খন্ডের ব্যাখ্যা গ্রন্থ লিখেন ইমাম সারাখসী রাহিমাহুল্লাহ , যা থেকে যুগ যুগ ধরে উম্মাহের ইমামগণ ইলমের সুধা পান করে আসছে।
    আমি অতি সংক্ষেপে হানাফী মাজহাবের মূল কিতাবাদী ও সন তুলে ধরছি –
    ১. জাহিরুর রিওয়ায়াহ ( লিখা হয়ঃ ১৭৯ হিজরীতে)
    যা ছয়টি গ্রন্থের সমাহার৷ ইমাম আজমের ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ রাঃ লিখেছেন।
    ২. কাফী ( লিখা হয়ঃ ৩৩৪ হিজরীতে )
    যা উপরের ছয়টি গ্রন্থের একত্র সংকলন। সংকলন করেছেন হাকিম শাহীদ রাঃ।
    ৩. মাবসুত ( লিখা হয়ঃ ৪৮৩)
    এটা উপরের কাফী গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থ, যা মোট ৩০ খন্ডে রয়েছে। লিখেছেন ইমাম সারাখসী রাঃ।
    এবার চিন্তা করুন,
    হানাফী মাজহাব কখন এবং কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো ?? আর একদল লোক অনুসারীদের মাঝে কি প্রচার করে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন ?? আর অন্ধ অনুসারীরা না পড়ে / না জেনে / না বুঝে কি তুলকালাম করছে ??
    সূত্রঃ-
    ১. উইকপিডিয়া
    ২. আল-মাজহাবুল হানাফীয়ু
    ৩. মানাকিবু ইমামে আবি হানিফা
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারীয়া বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় ।

  28. বিতর্কের এক পর্যায়ে তিনি বললেন –
    রাসূলের মাজহাব কি ছিল?
    আমি বললাম –
    রাসূলের মাজহাব ওহী ছিল।
    তিনি আবার বললেন –
    তাহলে সাহাবাদের মাজহাব কি ছিল?
    আমি বললাম –
    সাহাবাদের মাজহাব স্বয়ং রাসূল সাঃ ছিলেন।
    তিনি এবার বললেন –
    তাহলে আমাদের মাজহাব ভিন্ন কেন ?
    আমি বললাম –
    কারণ, আমাদের উপর যেমনি ওহী আসবে না, তেমনি সাহাবাদের মতো রাসূল সাঃ -কে সরাসরি জিজ্ঞেস করার আর সুযোগ হবে না।
    তিনি পুনরায় বললেন –
    ওহী নাজিল না হলে কি হবে, রাসূলকে না পেলে কি হবে — কোরান এন্ড হাদিস তো আছে ?
    আমি বললাম –
    কোরান হাদিস থেকে সরাসরি মাসালা-মাসাইল বর্ণনা করার যোগ্যতা তথা ইজতেহাদের যোগ্যতা তোমার আছে? তাহলে তোমার জন্য মাজহাব না। আমার মোটেও এই যোগ্যতা নাই, তাই আমি ফোকাহাদের মাজহাব মানি। তাদের ইজতেহাদ নিয়ে পড়াশোনা ও জানাশোনা করে সঠিকমত কোরান-সুন্নাহের উপর আমল করি।
    তিনি অবশেষ – আমায় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
    আমি অবশেষ – উনার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় নিয়োজিত হলাম – হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সহ আমার এই ভাইকে সঠিক বুঝ দান করো।
    পরবর্তীতে –
    ভাইটি কি যেন ভেবে আজ পূণরায় ইনবক্সে এসে বললেন – আসলে ভাই, লা -মাজহাব এসে ফিৎনাহ তৈরী করেছে। আমলে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করেছে৷ আমি এখন অসিডি রোগ থেকে বাঁচতে চাই৷
    আমি বললাম –
    প্রিয় ভাই! আমি সেটা আগেই বলেছি৷ আমার পক্ষে ইজতেহাদ করা সম্ভব না। তাই আমি মাজহাব মানি, তাদের মতামতকে সামনে রেখে রাসূলের সুন্নাহের উপর আমল করি।ফলে আমার আমলিয়্যাতে কোন ওয়াসওয়াসা নাই। আমার ব্রেইনে কোন অসিডি রোগ নাই। আলহামদুলিল্লাহ ? আর এটাই ছিল মূলত মাজহাবের মূল শিক্ষা যে, মানুষ কোরান-হাদিসের সঠিক নির্দেশনা মানতে গিয়ে যাতে অথৈ সাগরে হাবুডুবু না খায়, ওয়াসওয়াসা রুগে না পায়। সেজন্য যুগের শ্রেষ্ঠ ইমামগণ উম্মাহের জন্য শান্তির ধারা রেখে গেছেন। আর তা হলো – শারীয়ার সু-বিন্যস্ত ও ভেজালমুক্ত পথ,মত বা মাজহাব।
    অপর পাশ থেকে ছোট্ট একটা খুশীর সংবাদ এলো –
    ভাই! তাহলে আজ থেকে আমিও আপনার মতো একই পথ ধরলাম ♥
    আলহামদুলিল্লাহ – আ’লা কুল্লী হাল ?

  29. হাতে সময় থাকলে গভীর মনোযোগে পড়তে পারেন৷ ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে মূল হাতিয়ারটা কি, তা জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ !
    ১.
    কেউ যদি কোর’আন বুঝতে চায় বা কোর’আনে পূর্ণাঙ্গ পারদর্শী হতে চায় তাহলে তাকে প্রাথমিকভাবে অনুবাদ পাঠে মনোযোগ দিতে হবে। অনুবাদ পাঠকালে কোর’আনের বেশ কিছু দুর্বোধ্য বিষয় সামনে আসবে, তখন মনে হবে কেবল অনুবাদ’ই যথেষ্ট নয় বরং তাফসীর বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ আবশ্যকীয় পড়তে হবে। অতঃপর, তাফসীর গ্রন্থ অধ্যায়নকালে কিছু Terminology বা পরিভাষা দুর্বোধ্যতা আসবে কিংবা এমন কিছু আলোচনা আসবে, যা সহজে বোধগম্য হচ্ছে না, তখন আপনাকে তাফসীরের হাতিয়ার হিসেবে ” উলূমুত তাফসীর ” বা ” তাফসীরের মূলনীতি ” গ্রন্থ পড়তে হবে।
    অর্থাৎ, আপনি যখন কোর’আনকে পরিপূর্ণ রুপে বুঝতে যাবেন, তখন আপনাকে পরম্পরায় অনুবাদ → তাফসীর → ও মূলনীতি আবশ্যকীয় পড়তে হবে। নতুবা, আপনার কোর’আন হৃদয়াঙ্গমে পরিপক্বতা আসবে না। এজন্য প্রতিটা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে “কোর’আন ডিপার্টমেন্টে ” অনুবাদ, তাফসীর এর পাশাপাশি উলুম কোর’আন বা কোর’আনের মূলনীতি গ্রন্থ মেজর বা আবশ্যকীয় সাব্জেক্ট হিসেবে পড়ানো হয় ৷
    ২.
    আপনি যখন হাদিস স্টাডি করতে যাবেন, তখন ফার্স্ট লেভেলে অনুবাদ পঠনে মনযোগ দিবেন। পড়তে পড়তে এমন কিছু হাদিস সামনে আসবে, যার বাহ্যিক অর্থ আপনার বুঝে আসবে না৷ তখন বাধ্য হয়ে আপনাকে হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ পড়তে হবে ৷ প্রতিটা হাদিসের ব্যাখ্যা অধ্যায়ন শেষ উক্ত হাদিসের মান ইত্যাদি নিয়ে বেশ পর্যালোচনা আসবে। সেগুলা আবার আপনার বুঝতে চরম কঠিনতা পোহাতে হবে। তখন আবার আপনাকে ” উলুমুল হাদিস ” বা হাদিসের মূলনীতি গ্রন্থ পড়তে হবে।
    অর্থাৎ, আপনি যদি হাদিসে পরিপূর্ণ জ্ঞান আহরণ করতে চান, তাহলে হাদিসের অনুবাদের পাশাপাশি হাদিসের ব্যাখ্যাও জানতে হবে। সর্বশেষ, পরিপক্বতার জন্য হাদিসের মূলনীতি ও সমহারে জানতে হবে৷ নতুবা, হাদিসের মান যাচাই-বাছাই ও পরস্পর বিরোধপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার কায়দা না জানার কারণে ভুলভ্রান্তি চলে আসতে পারে। এজন্য প্রতিটা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে “হাদিস ডিপার্টমেন্ট ” হাদিসের ব্যাখ্যার পাশাপাশি উলুমুল হাদিস বা হাদিসের মূলনীতি নামে একটা সাব্জেক্ট বাধ্যতামূলক রাখে৷
    ৩.
    আপনি যদি এবার ফিকাহ বুঝতে চান, তাহলে নির্ধারিত কোন মাজহাবের বা চার মাজহাবের মোকারান এর পাঠ্যপুস্তক পড়তে হবে। ফিকাহ অধ্যায়ন কালে আপনি যখন প্রতিটা মাজহাবের দালিলিক পর্যালোচনা পড়বেন, তখন দেখবেন অনেক কথা চলে আসছে, যা আপনি আগে জানেন নাই। তখন বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হবে উসুলুল ফিকাহ বা ফিকাহের মূলনীতিতে ( এযাবৎ আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন সাব্জেক্ট মনে হয়েছে) ৷ একজন ইমাম যখন কোন দলীলের তারজীহ দেন, তখন তিনি উসূল বা মূলনীতিকে সামনে রেখেই দেন।
    অর্থাৎ, আপনি যদি ফিকাহ এর পরিপূর্ণ জ্ঞান পেতে চান, তাহলে মাসালা-মাসাইল পাঠের পাশাপাশি উসুলুল ফিকহ বা ফিকাহের মূলনীতি বুঝতে হবে। নতুবা, একজন ইমাম কোন মূলনীতির ভিত্তিতে তিনি দালিলিক আলোচনা করলেন, তা বুঝতে পারবেন না। আর না বুঝার কারণে মনে করবেন যে, আবু হানীফা রাঃ এখানে ভুল করেছেন!! আবু হানীফার কাছে হাদিস’ই পৌঁছেনি!! আবু হানীফা তো হাদিস’ই জানতেন না!! এক্সেট্রা….
    এজন্য, প্রতিটা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিকাহ ডিপার্ট্মেন্টে মাসালা-মাসাইল এর পাশাপাশি উসূলুল ফিকহ বা ফিকাহের মূলনীতি বাধ্যতামূলক পড়ানো হয়। আমাদের ডিপার্টমেন্টে তো পুরা বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ’ই এই সাব্জেক্ট পড়ায় !
    ৪.
    এবার আপনার কোর’আন, হাদিস ও ফিকাহ অধ্যায়ন সব শেষ। ইচ্ছা জাগলো, আপনি মুফতি হতে চান। তখন আপনার জন্য উপরোক্ত কোর’আন, হাদিস ও ফিকাহের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আরো গুরুত্বপূর্ণ দু’টা মানদণ্ড আয়ত্ত করতে হবে৷ তা হলো –
    ক. কাওয়াইদে ফিকহিয়া ( قواعد الفقهية ) বা ফিকহার নিয়মাবলি ভালো করে আত্মস্থকরণ করতে হবে৷ কারণ, বিশেষায়িত নিয়মের ভিত্তিতে অনেক মাসালার সমাধান করা হয়।
    খ. মাক্বাসিদে শার’ঈয়াহ ( مقاصد الشريعة) বা শারীয়ার উদ্দেশ্যনিহীত কথা নিয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা থাকতে হবে। নতুবা, সমসাময়িক যে কোন বিষয়ে ফতোয়া দিয়ে আপনাকে দুর্বোধ্য পোহাতে হবে।
    মোদ্দাকথায়, একজন বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ মুফতী হতে হলে আপনাকে কোর’আন, হাদিস ও ফিকাহের জ্ঞানের পাশাপাশি উপরোক্ত দু’টি বিষয় তথা ” কাওয়াইদে ফিকহিয়া ও মাকাসিদে শারীয়া ” সম্পূর্ণ জানতে হবে। এজন্য প্রতিটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিকাহ বা ইফতা বিভাগে কোর’আন, হাদিস, ফিকাহের পাশাপাশি উপরোক্ত দু’বিষয় মেজর সাব্জেক্ট হিসেবে পড়ানো হয়।
    ৫.
    ফতোয়া দিতে তার অন্যতম শর্ত হলো – মাক্বাসিদে শারীয়াহ জানতে হবে৷ কেবল, পূর্বেকার ইমামদের মাসালা বলে দেওয়ার নাম’ই ফতোয়া না। বরং, পরিস্থিতি বিবেচ্যে মাকাসিদে শারীয়াকে সামনে রেখে কোর’আন-হাদিসের দালিলিক আলোচনার নাম’ই ফতোয়া।
    যারা এক্সট্রিম মাজহাব অনুসরণ করেন, তারাও কখনো কখনো আপন মাজহাবের মত থেকে সরে আসতে হয়। কারণ, পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্তে যেতে হবে। তবে একমাত্র উদ্দেশ্য হয় ____ মাকাসিদুশ শারীয়া বা শারীয়ার উদ্দেশ্যকথা৷
    শেষ পর্বে, মাকাসিদে শারীয়াহ নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। আমাদের দেশে এই বিষয়ে অনবিজ্ঞ থাকার কারণে অনেকেই এমনভাবে ফতোয়া দেন যে, সাথে সাথে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। বস্তুত, মাকাসিদে শারীয়াহকে সামনে রেখে ফতোয়া দিলে কখনো এমন বিতর্ক সৃষ্টি হতো না।
    মাকাসিদে শারীয়াহ কি ? মাকাসিদে শারীয়ার প্রয়োজনীয়তা কি ? এই দু’টি বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করে লেখাটি সমাপ্ত করবো ইনশা আল্লাহ৷
    ক. মাকাসিদে শারীয়াহ কি ?
    ইবনে রাজাব রাঃ বলেন – শরীয়ত প্রণেতা যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে হুকুম-আহকাম আরোপ করেছেন, তাই হচ্ছে মাকাসিদে শারীয়া৷ (১)
    ইমাম শাতিবী রাঃ বলেন – সর্বসম্মত যে, শারীয়ত আমাদের উপর যে হুকুম-আহকাম আরোপ করেছে, তার একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হলো, আমাদের ব্যাপক উপকার সাধন ( ইহকাল-পরকাল) । আর এটাই হচ্ছে মাকাসিদে শারীয়াহ৷ (২)
    খ. মাকাসিদে শারীয়াহ প্রয়োজনীয়তা কী ?
    ইমাম শাতিবী রাঃ বলেন – মানুষ যখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, সে শারীয়াতের প্রতিটা ক্ষেত্রে শারে বা শরীয়ত প্রবেণতার উদ্দেশ্যকথা বুঝতে পারে, প্রত্যেকটা হুকুম-আহকাম এর পিছনের রহস্য উদঘাটন করতে পারে। তাহলে সে এমন একটা গুণ অর্জন করলো, যার দ্বারা সে ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে রাসূল সাঃ এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। (৩)
    এছাড়াও মাকাসিদে শারীয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ড. ফায়সাল বিন সাউদ ( হাফিজাহুল্লাহ) তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ ( علم مقاصد الشريعة الإسلامية) তে উল্লেখ করেন –
    → এটা এমন একটা ইলম যে, যার থেকে কখনো একজন মুজতাহিদ কিংবা মুফতি অমুখাপেক্ষী হতে পারেন না। কারণ, মুজতাহিদ কিংবা মুফতি তার ইজতেহাদের ক্ষেত্রে মাকাসিদে শারীয়াকে সামনে রাখতে হয় ৷ আর মাকাসিদে শারীয়াকে ঘিরেই ফতোয়া দিতে হয়। শারীয়ার খেলাফ মেজাজ কোন কথা কখনো গ্রহণযোগ্য না।
    → এটা এমন একটা ইলম , যারা দ্বারা প্রতিটা দালিল-আদিল্লার বাস্তবতা জানা যায়, উদ্দেশ্য বুঝা যায়। বিশেষত, বিরোধপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে মাকাসিদে শারীয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ।
    → এটা এমন একটি জ্ঞান , যার দ্বারা একজন ফিকাহ বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষকের ফিকহী অভিজ্ঞতা দৃঢ় ও মজবুত হয়।
    → এটা এমন একটি জ্ঞান , যার দিকে প্রত্যেক বিচারক / প্রশাসক / অভিভাবক প্রত্যাবর্তন করতে হয়। কারণ, তারা বিচার কার্যকালে মাকাসিদে শারীয়াহকে সামনে রেখে আম-মুফসিদাহ বাতিল করে আম-মুসলিহাহ প্রতিষ্ঠা করতে হয় ৷
    → এটা এমন একটা ইলম , যার দ্বারা আল্লাহর উপর ইয়াকীন-বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বুঝা যায়। (৪)
    এছাড়াও, মাকাসিদের শারীয়া আরো বেশ কিছু প্রয়োজনীয়তা ও উপকারীতা তুলে ধরেন, যার থেকে একজন দ্বীনি লেভেলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কখনো অমুখাপেক্ষী হতে পারেন না। বিশেষত, যারা দাওয়াতি ময়দানে কাজ করেন এবং সমাজে ফতোয়া বিস্তার করেন, তাদের জন্য মাকাসিদে শারীয়া পড়া কাল-ফারজ। যা না পড়লে নয়!
    খিতামাল মিসক, দীর্ঘ আলোচনা পড়ে অনেকে বিব্রত হয়ে বলতে পারেন যে, দ্বীন সহজ। বাংলা অনুবাদ আর এপলিকেশন এর মাধ্যমে হাদিস পড়লেই তো ফতোয়া দেওয়া যায়। এসব আবার কী ? রাসূল তো কোর’আন-হাদিস মানতে বলেছেন। এসব নয় ?
    ভাইদের একটা কথা বলবো, বক্ষমান লেখায় যেসব বিষয়ের আলোচনা এসেছে, তার একটাও কোর’আন-হাদিসের বাহিরা কিছু নয়। বরং, কোর’আন-হাদিসকেই পরিপূর্ণ জ্ঞানে বুঝতে এতোসব আয়োজন৷ জাযাকুমুল্লাহু খাইরান !
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী,
    ইসলামী শারীয়া বিভাগ, ফিকাহ
    মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।
    _____________________
    (১) মুনতাহাল উসুলি ওয়াল আমালে ১৮৪
    (২) আল-মুওয়াফাকাত ১৩৯
    (৩) আল-মুওয়াফাকাত ১০৬
    (৪) মাকাসিদে শারীয়াহ ৫৪

  30. হানাফী মাজহাবের ফিকহী সনদ
    ( ছবিটা মোবাইল গ্যালারীতে সেইভ করে রাখবেন )
    ______________________
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

    আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাজিয়াল্লাহু আনহু

    আলক্বামা আন-নাখায়ী রাহিমাহুল্লাহ

    ইবরাহীম আন-নাখায়ী রাহিমাহুল্লাহ

    হাম্মাদ বিন আবি সুলাইমান রাহিমাহুল্লাহ

    ইমাম আজম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ
    নোটঃ এই সিলসিলার প্রমাণিক আলোচনা দু’দিন আগে করেছি। এই ছবিটা জর্ডানের ফিকহে হানাফী বিশ্ববিদ্যালয় এর অফিসিয়াল পেইজ থেকে সংগৃহ করেছি।

  31. তিনি বললেন –
    হানাফী মাজহাব সঠিক না৷ কারণ, হানাফীদের মধ্যে বেরলভী, মাজার পুজারী আরো কতো ভ্রষ্ট দল আছে৷
    আমিও তড়িঘড়ি বললাম –
    তাহলে ইসলাম ধর্মও সঠিক না ( আ’উজুবিল্লাহ) ! কারণ, ইসলাম ধর্মে শীয়া, খারেজী, রাফেদী,আইএস সহ আরো অনেক ভ্রষ্ট দল আছে।
    তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললেন –
    কেন আবার আমি ইসলাম ধর্ম সঠিক হবে না ? ওদের কারণে আমার ধর্ম কখনো খারাপ হতে পারে না৷
    আমিও শান্তভাবে বললাম –
    তাহলে কেন আবার হানাফী মাজহাব সঠিক হবে না ? ওদের কারণে হানাফী মাজহাব কখনো বেঠিক হতে পারে না।
    আমি আরো বললাম –
    শুনেন! যেমনিভাবে ইসলাম ধর্ম কখনো শীয়াবাদ সহ ভ্রষ্টদলের চিন্তা সাপোর্ট করে না, তেমনি হানাফী মাজহাব ও বেরলভী, মাজার পুজারী ইত্যাদি ভ্রষ্ট দলের চিন্তা প্রশ্রয় দেয় না ৷
    অতএব, শীয়া / রাফেদী /খারেজী /আইএস ইত্যাদির কারণে যেমনিভাবে আপনি ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না, তেমনি বেরলভী / মাজার পুজারী / কথিত সুন্নি ইত্যাদি ভ্রষ্ট দলের কারণে হানাফী মাজহাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না৷ হানাফী মাজহাব আকিদাগত বিষয় নয় , বরং শারীয়াতের শাখাগত মাসালা-মাসাইল নিয়ে কথা বলে। আকিদা আর ফিক্কাহ এক না।এটুকু পার্থক্য আগে জানতে হলে ইউটিউব ছেড়ে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তী হোন।
    পরিশিষ্টে, উনি মুখ ফিরিয়ে পিছন দিকে ফিরে চলে গেলেন। আমিও চলে গেলাম।
    প্রিয় ভাইয়েরা,
    একটু চিন্তা করুন। খুদ আহলে হাদিসরা এখন বহু দলে-উপদলে বিভক্ত । যারা মোটামুটি ওয়ার্ল্ড র‍্যাঞ্জে জানাশোনা রাখেন, তারা জানেন যে, ভন্ড-খারেজী আই.এস সি ইত্যাদি ফেরকাগুলা আহলে হাদীস মতাদর্শেরই । তাই বলে কি পুরো আহলে হাদিস দল-মত খারেজী হয়ে গেছে ?
    আই.এস আহলে হাদিস মতাদর্শি হওয়ার পরেও আহলে হাদিস দল-মত যদি খারাপ না হয়, তবে বেরলভী আর কথিত মাজার-পূজারীরা হানাফী হওয়ার কারণে হানাফী মাজহাব খারাপ হবে কেন ? কেন ভ্রষ্ট দলের কারণে হানাফী মাজহাবকে কটাক্ষ করা হবে ? মাজহাব কি কখনো এসব করতে আদেশ করেছে ?
    একটু হলেও বিবেক’কে নাড়া দিন!
    মাজহাব নিয়ে আমার দর্শন হচ্ছে –
    It’s by the definition, Not for any misaction.

  32. আসসালামু আলাইকুম !
    ইনবক্সে অনেকের একটা কমন প্রশ্ন। স্বতন্ত্র উত্তর না দিয়ে সবার সুবিধার্থে এখানে বলছি। আশাকরি, এর পর থেকে আর কেহ এ ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না।
    প্রশ্নটা হচ্ছে –
    শায়খ ইমাম নাসিরুদ্দীন আল-বানী রাহিমাহুল্লাহ -কে কেন মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত ও সৌদি আরব থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো ?
    উত্তর হচ্ছে –
    আমি জানি না ।
    ধন্যবাদ সবাইকে !

  33. প্রসঙ্গঃ মাজহাব পরিবর্তন করা যাবে কি ??
    আজকের বিষয় খুবই গুরুত্ববহ। মাজহাব পরিবর্তন করা যাবে কি না ? অর্থাৎ, কেউ হানাফী মাজহাবের হলে, সে কি মালেকী / শাফেয়ী বা হাম্বলী হতে পারবে ?
    এই বিষয়ে আমাদের দেশে যেমন বাড়াবাড়ি আছে, তেমনই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপলব্ধির অভাব আছে । কেউ যদি হানাফী হয় এবং অন্য মাজহাবে পরিবর্তন হতে চায় ___ তাহলে কোন আলেম বা বিশেষত হানাফী কেহ তা সাপোর্ট করেন না ৷ বরং, চরম মাত্রায় ধমক দেন।
    এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ! মাজহাব বিষয়ে এতো কঠোরতা কখনো কাম্য না ৷ প্রাজ্ঞা ও সহনশীলতার সাথে মাজহাবকে ডিল করতে হবে। নতুবা, ফেতনা-ফাসাদ কখনো অন্ত পাবে না ৷
    যাইহোক, মাজহাব পরিবর্তন করা যাবে কি না ____ এই প্রশ্নের সোজা উত্তর হলো –
    জ্বী, মাজহাব পরিবর্তন করা যাবে৷ অর্থাৎ, আপনার হানাফী মাজহাব এর উপর ইতকান বা পরিতৃপ্তি না আসলে আপনি অন্য মাজহাব অনুসরণ করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে শারীয়াহ যেমন বাঁধা দেয় না ; তেমনি চার মাজহাবের উসূল ও মানা করে না।
    দলীল –
    মাজহাবের ক্রমবিকাশ হয়েছে প্রত্যেক ইমামের ছাত্রদের থেকে। আমরা ইতিহাস পড়লে দেখতে পাই, এমন অসংখ্য ইমামদের ছাত্র রয়েছেন ; যারা আপন ইমামের মাজহাব ত্যাগ করে অন্য ইমামের মাজহাব গ্রহণ করেছেন ৷
    ইমাম শা’রানী রাঃ – মাজহাব পরিবর্তন করার ব্যাপারে ইমাম কারাফী রাঃ থেকে বর্ণনা করেন –
    [[ يجوز الانتقال من جميع المذاهب إلى بعضها بعضا ]]
    অর্থাৎ, প্রত্যেক মাজহাবেই এক মাজহাব থেকে অন্য মাজহাব পরিবর্তন হওয়া জাইজ করেছে। (( সূত্রঃ – আল-মিজানুল কোবরা /৩৯))
    চার মাজহাবের সম্মানীত ইমামগণের ছাত্ররা পরবর্তীতে আপন ইমামের মাজহাব পরিবর্তন করার ব্যাপারে ইমাম সুয়ুতী রাঃ বেশ কিছু আলেমের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন –
    ১. শায়খ আব্দুল আজীজ আল-খাজা’ঈ রাঃ প্রথমে মালেকী মাজহাবের অনুসরণ করতেন। পরবর্তীতে, ইমাম শাফী রাঃ যখন বাগদাদে আগমন করেন ; তখন তিনি শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী হয়ে যান ৷
    ২. ইবরাহীম আল -বাগদাদী রাঃ প্রথমে হানাফী মাজহাবের ছিলেন। পরবর্তীতে, ইমাম শাফী রাঃ যখন বাগদাদে আগমন করলেন ; তখন তিনি শাফেয়ী মাজহাবের অনুরাগী হয়ে যান।
    ৩. ইমাম তাহাবী রাঃ প্রথম দিকে শাফেয়ী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম ও অনুরাগী ছিলেন। পরবর্তীতে, তাহাবী রাঃ তাঁর আপন মামা ইমাম মুজনী রাঃ থেকে হানাফী মাজহাবের শিক্ষাদীক্ষা পেলে তিঁনি শাফেয়ী মাজহাব ছেড়ে হানাফী মাজহাবের ইমাম বা অনুসারী হয়ে যান।
    ৪. একইভাবে, শাফেয়ী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম খতীব আল-বাগদাদী রাঃ প্রথমে হাম্বলী মাজহাবের ছিলেন। পরবর্তীতে তিঁনি শাফেয়ী মাজহাবের হয়ে যান৷
    ৫. একইভাবে, প্রসিদ্ধ গ্রন্থ – আল’মুজমাল এর মুসান্নীফ ইবনে ফারিস রাঃ প্রথমে শাফী মাজহাবের ছিলেন। পরবর্তীতে, তিঁনি মালেকী মাজহাবের অনুসারী হয়ে যান।
    [[ সূত্র – আল’মিজানুল কোবরা / ৪০]]
    প্রিয় ভাইয়েরা!
    মাজহাব কোন কোরান-হাদিসের সরাসরি স্পষ্ট উদ্ধৃত বিষয় না । বরং, সম্মানীত ইমামগণের ইজতেহাদী বিরাট এক ইলমি খেদমত ও বিরোধপূর্ণ কিংবা অদৃশ্য মাসালার সুবিন্যস্ত সুরাহা মাত্র । যার বিস্তার-বিকাশ সম্মানিত ইমামগণের ছাত্রদের মাধ্যমে হয়েছে।
    অতএব, মাজহাব পরিবর্তন করা যাবে কি না ____ এর দলিল কোরান-হাদিস থেকে না দিয়ে যাদের দ্বারা মাজহাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তথা সম্মানীত ইমামগণের ছাত্রদের মাজহাব পরিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরলাম। যা থেকে স্পষ্টত বোধগম্য হয় যে, মাজহাব পরিবর্তন করতে শারীয়া কিংবা মাজহাবের উসূলের দৃষ্টিতে কোন রকম বাঁধা নাই।
    কিন্তু, আমার প্রিয় ভাইয়েরা,
    সম্মানীত ভাইয়েরা, যারা মাজহাব পরিবর্তন করা যাবে না — এই প্রশ্ন আমাকে বারবার করে যাচ্ছেন। আপনাদের তরে আমার দু’টি কথা –
    দ্বীনি ভাই!
    দেখুন – মাজহাব আমাদের পর্যন্ত বিরাট একটা দ্বীনি সেবার মাধ্যমে এসেছে । হাজার হাজার আলিম-উলামার লেখালেখি, পড়াপড়ি ও বয়ানের মাধ্যমে আমাদের উপমহাদেশে হানাফী মাজহাব এসেছে। তাই আমরা অগত্যা এই মাজহাব মানি।
    উপরের আলোচনা থেকে মাজহাব পরিবর্তন এর বৈধতা প্রমাণিত হলেও এই না যে, আপনি চাইলেই মাজহাব পরিবর্তন করে নিলেই মুক্তি পেয়ে যাবেন। মাজহাব পরিবর্তন করার আগে নিম্নোক্ত বিষয়াবলী আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে –
    আপনি যে মাজহাবের অনুসরণ করতে যাচ্ছেন, আপনার দেশে/জেলায় কিংবা এলাকায় সেই মাজহাবের –
    (১) কোন আলিম আছেন কি না ?
    [[ যাতে ঠেকে গেলে তাদের জিজ্ঞাস করতে পারেন ]]
    (২) কোন মুফতি আছে কি না ?
    [[ যাতে তাদের থেকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করতে পারেন ]]
    (৩) কোন মাদ্রাসা/প্রতিষ্ঠান আছে কি না ?
    [[ যাতে আপনি শিখতে চাইলে পড়তে পারেন ]]
    (৪) কোন বই/পুস্তক/ফতোয়ার গ্রন্থ আছে কি না ?
    [[ যাতে নিজে নিজে অন্তত স্টাডি করতে চাইলে পেতে পারেন ]]
    প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা,
    সম্মানীত কোন এক ইমামের মাজহাব পরিবর্তন করার আগে যাচাই করে নিবেন যে, উপরোক্ত চারটি বিষয় আপনার আশেপাশে এভেইলেবল কি না ৷ নতুবা, হিতে বিপরীত কাহিনি হতে পারে। কেননা, উপরের আলোচনায় যাদের মাজহাব পরিবর্তন নিয়ে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে ; চিন্তা করে দেখুন, তাঁরা ঠিক তখনই মাজহাব পরিবর্তন করেছেন ; যখন সেই মাজহাবের কোন ইমামের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাছাড়াও, তাঁরা সবাই মোটামুটি ইজতেহাদের পর্যায়ের ছিলেন।
    মনে করুন,
    আপনি হানাফী থেকে মালেকী মাজহাবে পরিবর্তন হতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনাকে ভেবে দেখতে হবে আমাদের দেশে মালেকী মাজহাবের –
    → কোন আলিম আছেন কি না ?
    → কোন মুফতি আছেন কি না ?
    → কোন প্রতিষ্ঠান আছে কি না ?
    → কোন ফতোয়ার বই আছে কি না ?
    যদি পান, তাহলে আপনি নির্দ্বিধায় মালেকী মাজহাবে পরিবর্তন হতে পারেন। নতুবা, আপনার জন্য মহৎ ও কল্যাণ হলো সেই মাজহাবের উপর থাকা ; যেই মাজহাব আপনার দেশে প্রচলিত রয়েছে। যেই মাজহাবের আলিম-উলাম / বইপুস্তক ইত্যাদি আপনার দেশে রয়েছে। জাযাকাল্লাহ খাইরান !
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    ইসলামী আইন ও বিচার বিভাগ ( শারীয়াহ)
    মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।

  34. আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক জেনারেল শিক্ষিত ভাইয়েরা একজন ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর থেকে কখনো ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল সাইন্স বিদ্যা কামনা করেন না।
    একজন বাংলা সাহিত্যের প্রফেসর থেকে কখনো পদার্থ, রসায়ন কিংবা সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞান আশা রাখেন না।
    আর্টস এর শিক্ষার্থী থেকে কখনো ব্যবসা শিক্ষার জ্ঞান প্রত্যাশা করেন না। বিজ্ঞানের ছাত্র থেকে কখনো ইতিহাস শিক্ষার চাহিদা করেন না।
    মোদ্দাকথা, যে যেই বিদ্যায় নয় ; তার থেকে সেই বিদ্যা কখনো তালাশ করেন না৷ কিংবা, এক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ থেকে কখনো সকল বিষয়ের জ্ঞান চাহিদা করেন না।
    জ্বী, হ্যাঁ – আমি অনেক জেনারেল শিক্ষিত/সাধারণ মানুষের কথা বলছি, যারা একাডেমি জীবনে একজন থেকে কখনো একাধীক পারদর্শীতা বা দখলদারির কথা ধারণাও করতে পারেন না।
    কিন্তু, তারাই আবার ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ এর ক্ষেত্রে এসে জগতের সব কিছু কামনা করেন ।
    \\ আবু হানীফা রাহঃ কেন সিহাহ সিত্তার মতো কিতাব লিখেন নাই। কেন তাফসীর লিখেন নাই। কেন আকিদার বই লিখে যান নাই //
    ( যদিও আবু হানীফার এসব বিষয়ে গ্রন্থ আছে )
    এরকম আরো কতকিছু তারা কামনা করে।
    কিন্তু, একটাবারও ভেবে দেখেন না যে, একজন মানুষ কখনো একাধীক বিষয়ে অগাধ জ্ঞান রাখলেও সব বিষয়ে সমান খেদমত করতে পারেন না।
    আবু হানীফা রাহঃ অবশ্যই তাফসীর, হাদিস, ফিকাহ আকিদা সব বিষয়ে পারদর্শীতা রাখেন৷ তা না হলে তো তিনি একজন উম্মাহের স্বীকৃত ইমামই হতে পারতেন না। তাই বলে কি উনি সব বিষয়ে সমান খেদমত করে যেতেই হবে ? ফিকাহ রচনার পাশাপাশি হাদিসেও সমান বিশাল সমাহারের রচনা করতেই হবে ? তিনি তো অবশ্যই, হাদিসে অনবদ্য খেদমত রেখেছেন। নতুবা, মুসনাদ ( হাদিস সংকলন) কোথায় থেকে এলো ?
    আসুন অন্যদের নিয়ে পর্যালোচনা করি। তারা ইমামে আজমের বেলায় সকল চাহিদা বেশ করলেও বাকিদের বেলায় এই হিসাবটা কষেন না।
    আসুন, আমরা এখন নির্মোহ একটা পর্যালোচনা করি৷
    ১. ইমাম বুখারী রাহঃ। নিঃসন্দেহে একজন ইমামুল আইম্মা ফিল হাদীস। এতে কারো সন্দেহের লাশ মাত্রও নাই।
    তবে, ইমাম বুখারী রাহঃ ফিকাহ শাস্ত্রে কি অবদান রেখেছেন ? কতটা ফিকহি বই বা উসুল লিখে গিয়েছেন ? কতটা তাফসির গ্রন্থ বা আকিদার স্বতন্ত্র কিতাব লিখে গিয়েছেন ? খেদমত করেছেন, তবে অন্যান্য ইমামদের মতো কি ফিকাহ শাস্ত্রে খেদমত করেছেন?
    ২. একই কথা বাকি অন্যান্য হাদিসের মুসান্নিফদের বেলায়। তারা হাদিসের পাশাপাশি ফিকাহ, তাফসির ও আকিদায় কি সমান খেদমত করতে পেরেছেন ?
    ৩. আসুন ইবনে কাসীর রাহঃ এর বেলায়। তিনি তাফসিরে যেমন খেদমত করেছেন, সমান খেদমত কি ফিকাহ, হাদিস কিংবা আকিদায় করেছেন ?
    প্রিয় ভাইয়েরা,
    এভাবে নির্মোহ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ইসলামের প্রত্যেক মনীষাই নির্ধারিত একটা জায়গায় বেশী খেদমত করেছেন। অর্থাৎ, যে যে বিষয়ে অভিজ্ঞ ; সে বিষয়েই অপেক্ষাকৃত খেদমত বেশী করেছেন।
    এর অর্থ এই নয় যে, উনার এপ্সেসিফিক বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন না। বরং, উনারা সকল বিষয়েই ধারণা রাখতেন। তবে, নির্ধারিত একটা বিষয়ে বেশী খেদমত করেছেন।
    একই হিসাব ইমামে আজম রাহিমাহুল্লাহ এর বেলায়। তিনি জীবনের শুরুর দিকে হাদিস বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা ও গবেষণায় মনযোগ দেন। পরবর্তীতে, ফিকাহ শাস্ত্রে নিমজ্জিত হওয়ায় এই বিষয়ে লেগে থাকেন। যার ফলে, হাজারে হাজার মাসাইল ও উসুল প্রণয়ণ করে রেখে যান।
    এর অর্থ এই নয় যে, তিনি শুধু ফিকাতেই পারদর্শী ছিলেন। হাদিস, তাফসির ইত্যাদি জানতেন না। কেউ এমন ধারণা করলে, সেটা মারাত্মক ভুল হবে।

  35. আমরা মাসলা-মাসাইল জানার জন্য একটা ফিকহি কিতাব বের করলাম –
    কোর’আন-হাদিসের গবেষণার আলোকে মুফতা বিহী একটা মাসালা গ্রহণ করলাম । বাস, আমরা হয়ে গেলাম অন্ধ মুকাল্লীদ!
    উনারা হাদিস জানার জন্য একটা এপ্স বা বাংলা বই বের করলেন –
    এপ্সের কোনায়-কানায় বা বইয়ের টিকায় লেখা ” সহীহ ” দেখেই হাদিস গ্রহণ করলেন। বাস, উনারা হয়ে গেলেন গাইরে মুকাল্লীদ।
    এই হিসাবটা আমি বুঝলাম না। উনারা হাদিস সহীহ হওয়ার যে স্বীকৃত পাঁচটা শর্ত আছে, এর ধারে কাছে না গিয়েও জাস্ট কোনায়-কানায় লিখা ” সহীহ ” দেখেই আমল শুরু করলেন। এটা কি অন্ধ তাকলীদ হয় না ?
    ধরুন, হাদীস সহিহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে :
    ১. সনদ মুত্তাসিল হওয়া।
    ২. রাবি আদিল হওয়া।
    ৩. রাবি দ্বাবিত হওয়া।
    ৪. শায না হওয়া।
    ৫. মু‘আল্লাল না হওয়া।
    উপরোক্ত পাঁচটি বিষয়ে নূন্যতম একটা বিষয়েও জাররা পরিমাণ ধারণা না রেখে বা যাচাই-বাছাই না করেই যেভাবেই হোক একজন মুহাদ্দীস সহীহ বলেছেন, বাস উনার কথার উপর বিশ্বাস করে আমল শুরু করলেন।
    এতে করে উনারা গাইরে মোকাল্লিদ হোন কি করে ?
    প্রিয় পাঠক,
    আপনাদের কি মনে হয় ? যারা বলে বেড়ান, আমরা তাকলীদ করি না৷ উনারা কি সবাই –
    → হাদিসের ইত্তেসাল নিয়ে সব জানেন?
    → বর্ণনাকারীর আদালত নিয়ে বিস্তারিত জানেন?
    → বর্ণনাকারীর স্মরণ-শক্তির নিয়ে জ্ঞাত আছেন?
    → হাদিসের সুজ্জত নিয়ে আলোকপাত রাখেন?
    → হাদিসের তা’লীলাত নিয়ে জ্ঞান রাখেন ?
    ভাইরে, আমার তো বিশ্বাস । উনাদের শিংহভাগই এসব ইস্তেলাহ বা টারম নিয়ে কোন ধারণাই রাখেন না। অথচ, দিন শেষে তারা দাবী করবেন, আমরা কারো অন্ধ তাকলীদ করি না। আমরা যাচাই-বাছাই করে আমল করি!
    বাহ ! কি সুন্দর না ?

  36. ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ফিকহী বোর্ড ও আবু হানীফা রাহঃ এর ফতোয়া বোর্ডের সদস্য-তালিকা
    ___________________________
    ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ফতোয়া বোর্ড গঠন করেন ইমামে আজম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ । নতুন কোন মাস’আলা-জিজ্ঞাসা সামনে এলে এই মাস’আলাটি ফতোয়া বোর্ডে উপস্থাপন করা হতো। ফতোয়া বোর্ডের সদস্য ছিলেন, মোট ৪০ জন ইমাম, যারা ফিকাহ শাস্ত্রে মুজতাহিদ ছিলেন!
    ফতোয়া বোর্ডের ৪০ জন সদস্য মাস’আলাটি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করতেন। সর্বশেষ, ইমামে আজম আবু হানীফা রাহঃ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতেন এবং তিঁনি তার ছাত্রদেরকে লিপিবদ্ধ করে রাখতে আদেশ করতেন।
    এভাবে হানাফী মাজহাবের প্রতিটা মাস’আলা ইমামে আজম ও তাঁর মহামান্য ফতোয়া বোর্ডের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ হয়েছে। পরবর্তীতে, সে’সব মাস’আলাকে ইমামে আজম রাহঃ এর নিকটতম ও ঘনিষ্ঠ ছাত্র ইমামে মোহাম্মাদ বিন হাসান আশ-শায়বানী রাহিমাহুল্লাহ ” জাহিরুর রেওয়ায়াহ ” নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। যা মোট ছ’টি কিতাবে সন্নিবেশিত ছিলো।
    সেগুলা হচ্ছে –
    ১. মাবসূত
    ২. জিয়াদাত
    ৩. জামিউস সাগীর
    ৪. জামিউল কাবীর
    ৫. সিয়ারে সাগীর
    ৬. সিয়ারে কাবীর
    এই ছ’টি কিতাব থেকে মূলত হানাফী মাজহাবের বিস্তার লাভ করে এবং এরই মাধ্যমে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ১৩০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাজহাব,আজও অক্ষুন্ন ও সুরক্ষিত রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ !
    আসুন, এক নজরে জেনেই –
    ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত ফিকহী বোর্ডের সৌভাগ্যবান সেই চল্লিশজন সদস্য কারা ছিলেন –
    ফিকহী বোর্ডের আমির ছিলেন ইমামে আজম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ –
    বোর্ডের সদস্যবৃন্দ –
    1- الإمام زفر بن هذيل المتوفى سنة ( 158) هــ
    2- الإمام مالك بن مغول المتوفى سنة ( 159) هــ
    3-الإمام داؤد الطائي المتوفى سنة ( 160) هــ
    4-الإمام مندل بن علي المتوفى سنة ( 168) هـ
    5- الإمام نضر بن عبد الكريم المتوفى سنة ( 169)هـ
    6- عمرو بن ميمون المتوفى سنة ( 171)هـ
    7- الإمام حبان بن علي المتوفى سنة ( 172)هـ
    8- الإمام أبو عصمة المتوفى سنة ( 173) هـ
    9- الإمام زهير بن معاوية المتوفى سنة ( 173)هـ
    10- الإمام قاسم بن معين المتوفى سنة ( 175)هـ
    11- الإمام حماد بن أبي حنيفة المتوفى سنة ( 176) هـ
    12-الإمام هياج بن بسطام المتوفى سنة ( 177)هـ
    13- الإمام شريك بن عبد الله المتوفى سنة ( 178)هـ
    14-الإمام عافية بن يزيد المتوفى سنة ( 180)هـ
    15- الإمام عبد الله بن المبارك المتوفى سنة ( 181)هـ
    16- الإمام أبو يوسف القاضي المتوفى سنة ( 182)هـ
    17- الإمام محمد بن نوح المتوفى سنة ( 182)هـ
    18 الإمام هشيم بن بشر السلمي المتوفى سنة ( 183)هـ
    19- الإمام أبو سعيد يحيى بن كريا المتوفى سنة (184)هـ
    20 الإمام فضيل بن عياض المتوفى سنة ( 187)هـ
    21- الإمام أسد بن عمرو المتوفى سنة ( 188)هـ
    22- الإمام محمد بن الحسن الشيباني المتوفى ( 189)هـ
    23- الإمام علي بن المسهر المتوفى سنة ( 189)هـ
    24-الإمام يوسف بن خالد المتوفى سنة ( 189)هـ
    25- الإمام عبد الله بن ادريس المتوفى سنة ( 192)هـ
    26 – الإمام فضل بن موسى المتوفى سنة ( 192)هـ
    27- الإمام علي بن طبيان المتوفى سنة ( 192)هـ
    28- الإمام حفص بن غياث المتوى سنة ( 194)هـ
    29 – الإمام وكيع بن الجراح المتوفى سنة ( 197)هـ
    30 – الإمام هشام بن يوسف المتوفى سنة ( 197)هـ
    31- الإمام يحيى بن سعيد القطان المتوفى سنة ( 198)هـ
    32- الإمام شعيب بن إسحق المتوفى سنة ( 198)هـ
    33- الإمام أبو حفص بن عبد الرحمن المتوفى سنة (199)هـ
    34- الإمام أبو مطيع البلخي المتوفى سنة (199)هـ
    35- الإمام خالد بن سلمان المتوفى سنة ( 199)هـ
    36- الإمام عبد الحميد المتوفى سنة ( 203)هـ
    37 – الإمام حسن بن زياد اللؤلؤي المتوفى سنة ( 204)هـ
    38- الإمام أبو عاصم النبيل المتوفى سنة ( 212) هـ
    39- الإمام مكي بن إبراهيم المتوفى سنة (215)هـ
    40- الإمام حماد بن دليل. (217)
    তথ্যসূত্র –
    الخيرات الحسان (ص: 72)
    ومناقب الموفق (2/ 133)
    ومناقب الكردري (1/ 49)
    والجواهر المضيئة (1/ 140)
    والفوائد البهية (ص: 295)
    وهداية الساري (1/ 549)
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারিয়াহ বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় ।

  37. মাজহাব চারটা কেন ?
    ________________________________
    সে অনেক কথা !
    মাজহাব চারটা হবে কেন ? ইতিহাসে আরোও তো মাজহাব ছিলো, তবে এই চার মাজহাবকে মানতেই হবে কেন ? চার মাজহাব এসে ইসলামকে চারভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। মাজহাবের মতানৈক্যর কারণে ইসলামের পতন হয়েছে। বাগদাদের পতন হয়েছে। এরকম কিছু প্রশ্ন আপনারা কি শুনতে পান ?
    জ্বী, হ্যাঁ ! হয়তো আপনাদের অনেকেই ইতোমধ্যে এই প্রশ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছেন । অনেকেই হয়তো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সদুত্তরের অভাবে নিরুত্তর হয়ে আছে৷ তাই ভাবলাম, বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখার দরকার৷ আল্লাহ তাওফীক দাতা !
    বিষয়টি পরিস্কার করার জন্য লেখাটিকে দু’টি প্রশ্নে ভাগ করে নিচ্ছি। এতে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে ইনশাআল্লাহ !
    ১. মাজহাব কেন আসলো?
    ২. অনেক মাজহাব থেকে চার মাজহাব কেন?
    প্রথম প্রশ্ন –
    মাজহাব কেন ?
    উত্তর –
    আমরা জানি যে, আহকামুশ শারীয়া বা শারীয়াতের বিধি-নিষেধ দু’প্রকার –
    ১. স্পষ্ট আহকাম
    ১. অস্পষ্ট আহকাম
    শারীয়াতের যে সকল বিষয়াদী একদম স্পষ্ট রয়েছে, সে’সব বিষয়ে মাজহাবের কোন বিতর্ক নাই। অপর কথায় বলা যায় যে, ইসলামের মৌলিক বিষয়ে মাজহাবের কোন বিতর্ক নাই। যেমন ধরুনঃ নামাজের হুকুম ফরজ , রোজার হুকুম ফরজ ইত্যাদি ।
    শারীয়তের এমন কিছু বিষয় আছে, যা কোর’আন-হাদিসে অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য এসেছে। অপর কথায় বলা যায় যে, শারীয়তের ফুরুয়ী মাসালায় অস্পষ্টতা থাকার কারণে মতানৈক্য হয়েছে।
    যেসব ফুরুয়ী বা শারীয়তের শাখাগত বিষয়ে অস্পষ্টতা এসেছে, সেসব বিষয়ে ইসলামের যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামগণ নিজস্ব যোগ্যতার বলে গবেষণা করেছেন। আর সেই গবেষণার ফলাফল একাধিক এসেছে বিধায় মাজহাব বা একাধীক মতবাদ এসেছে৷
    যেমন ধরুনঃ আল্লাহ তা’লা পবিত্র কোর’আনে সূরায়ে বাক্বারার ২২৯ নং আয়াতে বলেন –
    والمطلقات يتربصن بانفسهن ثلاثة قروء
    উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’লা তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের ইদ্দতের বর্ণনা দিয়েছেন। তবে আয়াতে “কুরু ” শব্দটা অস্পষ্ট । এর কুরু শব্দ দ্বারা হায়েজ উদ্দেশ্য নাকি তুহুর উদ্দেশ্য, তা ক্লিয়ার না। যার কারণে, মাজহাবের ইমামগণ গবেষণা করে একটা ফলাফল বের করেছেন। আর এই ফলাফলের ভিন্নতার নামই হলো মাজহাব।
    মোদ্দাকথাঃ সংক্ষেপে আমরা জানতে পারলাম দু’টা বিষয় –
    ১. শারীয়াতের মৌলিক কোন বিষয়ে মাজহাবের ইমামদের মতানৈক্য নাই। বরং ফুরুয়ী তথা শাখাগত বিষয়ে মতবেদ রয়েছে ।
    ২. শারীয়তের স্পষ্ট কোন বিষয় বর্ণনার জন্য মাজহাব তৈরী হয় নাই। বরং, অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য বিষয় বর্ণনার জন্য মাজহাব বা মতানৈক্য এসেছে ৷
    দ্বিতীয় প্রশ্ন –
    অনেক মাজহাব থেকে চার মাজহাব কেন হলো ?
    উত্তর –
    এ কথা চির সত্য যে, সাহাবা ও কিবার তাবেয়ী পরবর্তী যুগ থেকে অনেক মুজতাহিদ ইমামের গবেষণা থেকে মাজহাব আবিস্কৃত হয়েছিলো বা তারা ইমাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। এমন শতাধীক মুজতাহিদ ইমামের নাম পাওয়া যায়, যারা নিজস্ব যোগ্যতায় ইজতেহাদ দ্বারা শারীয়াতের স্পষ্ট ও দুর্বোধ্য বিষয়ের সমাধান দিয়ে গেছেন। তবে তারা পরবর্তীতে তাদের মতবাদকে মাজহাব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
    এর অনেক কারণ আছে। তবে মৌলিক কয়েকটি কারণ আমি এখানে উল্লেখ করছি –
    ১. কোন মাজহাব তখনই স্বীকৃতি পাওয়ার কথা, যখন কোন মাজহাবে ইসলামের শুরু-শেষ সকল সম্ভাবনাময় সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাবে পূর্ণাঙ্গ সকল বিষয় ফুটে আসে নাই। যার ফলে, ইতিহাসে কেবল প্রসিদ্ধ চার মাজহাবই স্বীকৃতি পায়। অন্য কোন মাজহাব স্বীকৃতি পায় নাই।
    ২. মাজহাব এর জন্য অতীব প্রয়োজনীয় হলো উসূল বা মূলনীতি থাকা। কারণ, ভবিষ্যতে কোন নতুন বিষয়ে সমাধান দিতে হলে উসূল বা মূলনীতি এর প্রয়োজন হয় । আমরা দেখতে পাই, চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন ইমামের বা মাজহাবের কোন মূলনীতি নাই। যার কারণে চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব স্বীকৃতি পায় নাই।
    ৩. মাজহাব আমাদের পর্যন্ত কোন তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পৌঁছে নাই। বরং, মাজহাবের ইমামগণ ইজতেহাদ করেছেন। তাদের গবেষণা প্রতিটা যুগে মুসলিম মনীষাগণ সংরক্ষণ করেছেন। ফলে আমাদের কাছে যথাসুন্দরে এই চার মাজহাব পৌঁছেছে৷ চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব সেভাবে আমাদের কাছে পৌঁছে নাই। ফলে চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব স্বীকৃতি পায় নাই।
    ৪. ইসলামের স্বীকৃত চার মাজহাবের ইমামগণের হাজার হাজার ছাত্র ছিলেন। যারা মাজহাবকে প্রচার-প্রসারে কাজ করেছিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও মাজহাব স্বীকৃতি পেয়েছিল। আব্বাসী যুগে হানাফী মাজহাব অনুযায়ী পূর্ব-পশ্চিম সারা বিশ্বে বিচার কার্য পরিচালিত হতো। অন্যান্য মাজহাব সেভাবে হয়নি, বিধায় চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব স্বীকৃতি পায় নাই।
    ৫. স্বীকৃতি চার মাজহাবের বই-পুস্তক আমাদের কাছে যেভাবে স্বতন্ত্র এসেছে, সেভাবে অন্যান্য কোন মাজহাবের বইপত্র আসে নাই। বিধায় চার মাজহাব ছাড়া অন্যান্য কোন মাজহাব এককভাবে অনুসরণীয় হিসেবে স্বীকৃতি পায় নাই।
    মোদ্দাকথা, বলতে গেলে আরো অনেক কথা আছে। তবে সবচেয়ে গুরুতর বাস্তব কথা হলো, এটা আল্লাহ তা’লারই একটা ইচ্ছা যা নিয়ামত হিসেবে উম্মাহের উপর ন্যস্ত রয়েছে। নতুবা, তেরো শত বছর আগের ইলম এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে অক্ষুণ্ণ থাকা মোটেও স্বাভাবিক বিষয় না। আল্লাহ তা’লার অনুগ্রহ না থাকলে এসব মাজহাব আরো অনেক আগেই দুনিয়া থেকে মুছে যেতো। কিন্তু, আল্লাহ তালা যুগে যুগে এমন মানুষ তৈরী করেছেন, যারা মাজহাবের ইলমকে বুকে ধারণ করেছিলেন বিধায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। যা চার মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাবের বা মতবাদের ক্ষেত্রে ঘটে নাই।
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারীয়াহ বিভাগ, ফিকাহ।
    মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।

  38. আরবের প্রখ্যাত সালাফী আলেম শায়খ মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রাহঃ এর ফতোয়া গ্রন্থের দু’টি পৃষ্ঠার স্কিন শর্ট আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
    প্রথম পৃষ্ঠার একেবারে শুরুতে লিখা আছে –
    ” এতে কোন সন্দেহ নাই যে, সাহাবা যুগ থেকে নিয়ে আমাদের এ যুগ পর্যন্ত এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা অজ্ঞতা কিংবা অপরিপক্ক জ্ঞানের কারণে নিজে নিজে শারীয়তের মাসলা-মাসাইল উদঘাটন করতে পারেন না।
    এজন্য তারা আহলে ইলম বা শারীয়তের পান্ডিত ব্যক্তির জিজ্ঞেস করবে। আলিম-উলামা যা বলবে, তা গ্রহণ করবে। আর তাদের কথা গ্রহণ করার নামই হচ্ছে – তাকলীদ ”
    শায়খ রাহিমাহুল্লাহ এর পরের পৃষ্ঠায় একেবারে শেষ প্রান্তে এসে বলেন –
    ” বাস্তবতা হচ্ছে, তাকলীদ সাহাবী যুগ থেকেই বিদ্যমান। তারপর, কোর’আনের একটা আয়াত বর্ণনা করেন ”
    সুবহানাল্লাহ !
    এবার চিন্তা করুন, আমাদের স্ব-দেশী সালাফী ভাইদের কথা। যারা কি পরিমাণ তাললীদের নাম শুনলে ঘৃণার-স্তুপে ভরে দেন। অথচ, আরব-আজমে স্বীকৃত ও সর্বজনবিদিত সালাফী শায়খ তাকলীদ নিয়ে কি বলতেছেন ? আর আমাদের সালাফী ভাইয়েরা তাকলীদ নিয়ে কি ঘৃণা পোষণ করেন ?
    যাইহোক, শায়খ রাহঃ এর ফতোয়া থেকে আমরা কয়েকটা বিষয় ক্লিয়ার হলাম –
    ১. তাললীদ সাহাবা যুগেও ছিলো। অতএব, যারা তাকলীদের বিরোধীতা করে ; প্রকৃতপক্ষে তারা সাহাবীদের কার্যকে অস্বীকার করে। নাউজুবিল্লাহ !
    ২. তাকলীদ জাইয ও শারীয়াহ সম্মত। যারা তাকলীদ হারাম মনে করেন, তারা মূলত শারীয়ার একটা অকাট্য হুকুমকে অমান্য করেন। আস্তাগফিরুল্লাহ!
    ৩. যারা শারীয়ার মাসালা-মাসাইল নিজে নিজে উদঘাটন করতে অক্ষম ; তারা অবশ্যই তাকলীদ করবে। নতুবা, কোর’আনের একাধীক আয়াত অস্বীকার করা হবে।
    ৪. সালাফদের অনুসারী সালাফী হতে হলে তাদের ফতোয়া ও কথায় বিশ্বাসী হতে হবে। নতুবা, মুখে সালাফী সালাফী বলে ফেনা তুলে আর কার্যকলাপে সালাফ-বিরোধী ফতোয়া দিলে প্রকৃত সালাফী হওয়া যাবে না।

  39. তাকলীদে শাখসী বা ব্যক্তির অনুসরণ বৈধ কী ?
    __________________
    সম্মানীত পাঠক,
    আহসানাল্লাহু ইলাইকুম !
    উপরোক্ত শিরোনামের উপর সংক্ষেপে কয়েকটি কথা বলি। যারা শারীয়ার ইতিহাস পড়েছেন, তাদের অবশ্যই জানা থাকার কথা যে, তাকলীদে শাখসী বা ব্যক্তির অনুসরণ সাহাবা যুগ থেকেই প্রমাণিত। এই মর্মে বোখারী শরীফের হাদীস ও রয়েছে।
    আমাদের দেশে অনেক দ্বীনি ভাই বলে থাকেন যে, হানাফী মাজহাব মানেই তাকলীদে শাখসী আর তাকলীদে শাখসী হারাম !
    তাদের দাবী-দাওয়ার দু’টা বিষয় –
    ১. হানাফীরা শুধু তাকলীদে শাখসী করে
    ২. তাকলীদে শাখসী হারাম
    আজ পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহঃ এর ফতোয়া সমগ্রে চমৎকার একটা হিস্ট্রি পেলাম। যেখানে তাকলীদ শাখসির কথা যেমন এসেছে, তেমনি হানাফী ছাড়া অন্যান্য মাজহাবেও তাকলীদে শাখসী করে, তার যুৎসই প্রামাণ্য রয়েছে।
    ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন –
    والاوزاعي إمام أهل الشام وقد كانوا على مذهبه الى المأة الرا بعة
    সরল বঙ্গানুবাদ –
    ইমাম আওজাঈ রাহিমাহুল্লাহ ( তিঁনি দ্বিতীয় শতকের ইমাম ছিলেন ) একজন ইমাম ছিলেন। শামবাসীগণ চতুর্থ শতক পর্যন্ত তার মাজহাবের উপর ছিলো। ( ২/৫৩৮)
    ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ এর ছোট্ট এই তথ্যকণিকা থেকে কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় –
    ১. দ্বিতীয় হিজরী থেকে নিয়ে চতুর্থ হিজরী পর্যন্ত উম্মাহের বিশাল একটা অংশ ( শামঃ মূলত বর্তমান চারটা দেশের সমন্নয়ক ) নির্ধারিত এক মাজহাবের অনুসারী ছিল বা তাকলীদে শাখসী করতেন।
    ২. তাকলীদে শাখসী হানাফী ছাড়াও আরো অন্যান্য মাজহাবে বিভিন্ন সময়ে আমল হয়েছে। শুধু হানাফীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়।
    ৩. দ্বিতীয় হিজরী থেকে নিয়ে চতুর্থ হিজরী পর্যন্ত তাকলীদে শাখসী করেছে শামবাসী। এ থেকে কি প্রমাণিত হয় ? তাকলীদে শখসী নিয়ে যারা তুলকালাম করেন, তারা শামবাসী সবাইকে পথভ্রষ্ট বলবেন ? শামে তো তৎকালীন সময়ে অসংখ্য মুহাদ্দীস, মুফাসসির কিংবা ফকীহ ছিলেন !
    জাযাকুমুল্লাহু খাইরান
    ওয়া বারাকাল্লাহু ফীকুম !
    _____________________
    আব্দুল কারীম আল-মাদানী
    শারিয়াহ বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়।

  40. সংক্ষেপে একটা কথা বলি –
    নির্ধারিত কোন মাজহাব না নেমে সকল মাজহাব থেকে অধিক শক্তিশালী মতটা গ্রহণ করা একটা বৃথা প্রচেষ্টা ও অরণ্য রোদন বৈ কিছু না।
    কারণ,
    ১. অধিক শক্তিশালী মতটা স্পষ্ট ও নির্ণয় করার মতো বিষয় হলে, চার মাজহাব আবিস্কার হওয়ার কোন প্রয়োজন ছিলো না। দরকার ছিলো না এতো মত-পথ তৈরী হওয়ার।
    ২. অধিক শক্তিশালী মতটা স্পষ্ট হলে এযাবৎ সকল শক্তিশালী মত নিয়ে একটা মাজহাব প্রণয়ন হতো। যেটার নাম হতো শক্তিশালী মাজহাব। কিন্তু, ইতিহাসে এই শক্তিশালী মাজহাব এখনো জন্ম হয় নাই।
    ৩. অধিক শক্তিশালী মতটা সহসা বের করার মতো হলে এই অধিক শক্তিশালী মত-সমগ্র নিয়ে ফিকহী বই রচিত হতো। কিন্তু, মতানৈক্যর উর্ধ্বে উঠে এযাবৎ নিরংকুশ এমন কোন ফিকহি বই রচনা হয় নাই।
    যেমন ধরুন –
    সহীহ হাদিসের আলোকে নামাজ নিয়ে রচিত বাংলাদেশের দু’জন প্রখ্যত সালাফী আলিমের বই আছে। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, উভয়ের চিন্তা সহীহ হাদীস ও অধিক শক্তিশালী মত গ্রহণ করা থাকা সত্ত্বেও উভয় বইয়ের মধ্যে মতানৈক্য পাওয়া যায়।
    তাছাড়া, আহলে হাদিস ও সালাফী আলেমদের মধ্যকার ইখতেলাফ নিয়ে রচিত হয়েছে একটা বই বাংলা ভাষায়। আপনারা বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন যে, অধিক শক্তিশালী মাজহাব তৈরী করতে গিয়ে আরো কতো শত শত মাজহাব ও মত যে তৈরী হয়েছে, আল্লাহ মা’লুম। ( বইয়ের ছবি কমেন্ট বক্সে দিচ্ছি )
    শেষ করছি, বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সালাফী আলেম শায়খ কাজী ইবরাহীম সাহেবের একটা উদ্ধৃতি দিয়ে। তিনি কোন এক বক্তব্যে বলেন –
    ” বাংলাদেশে আহলে হাদিসই এখন ১৯ দলে বিভক্ত। তারচেয়ে ভালো ছিল তো চার মাজহাব। ”
    সচেতন ও বিজ্ঞা পাঠক মহল অবশ্যই ক্রিটিকাল থিংক ও এথিক্স থেকে বুঝতে পারছেন যে, মুখে যেরকম বলা হয়ে থাকে অধিক শক্তিশালী মত গ্রহণ করা ; কাজে সে’রকম সহজ না। বিষয় এতোটা সহজ হলে সহীহ হাদিস ও শক্তিশালী মত গ্রহণের নামে বাংলাদেশে আহলে হাদিস আলেমগণ ১৯ দলে ( ইবরাহিম স্যারের বক্তব্যের আলোকে ) বিভক্ত হওয়ার কথা ছিলো না।
    বিঃদ্র- অবশ্যই বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ আলেমদের হিসাব আমার এই পোস্টের বাহিরা। লেখাটি উদ্দেশিত হয়েছে, সাধারণ আম লোকের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *