শায়েখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান রহ.

১৮৫৭ সালে বৃটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর উপমহাদেশে আলেম-উলামাদেরকে পাইকারী নির্মুলের ফলে নেতৃত্ব দেয়ার মতো আলেম তো দূরের কথা, দান-কাফন করতে পারে এমন কোনাে আলেমও অবশিষ্ট ছিলাে না। সুতরাং ইলমে দ্বীন চর্চার পাশাপাশি নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্য দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সশস্ত্র সংগ্রামের পরিবর্তে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাগরণ ও চেতনা ছড়ানোর প্রয়াস শুর হয় এডেমিক পন্থায় ।


দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দির ভয়াল নৈঃশব্দ ও স্থবিরতার পর এই আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন দারুল উলুমের প্রথম ছাত্র, পরবর্তীকালে দারুল উলুমের সঙ্গে মুদৱরিসিন শায়খুল হিন্দ হজরত মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি। তাঁর প্রজ্ঞা ও নিরলস কর্মতৎপরতার ছোঁয়ায় উলামায়ে হকের মৃতপ্রায় রাজনৈতিক অঙ্গন পুনরায় সরগরম হয়ে ওঠে।


জাতীয় চেতনাকে শানিত করে স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবানের জন্যে তিনি কর্মজীবনের শুরু থেকেই নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন । হুজ্জাতুল ইসলাম হজরত মাওলানা কাসেম নানুতবি রহ.-এর মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে হজরত শায়খুল হিন্দ ১৮৭৮ সালে দারুল উলুমের সাবেক ছাত্রদেরকে নিয়ে ‘সামারাতুত তারবিয়্যাহ’ নামে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া শুরু করেন।


১৯০৯ সালে শায়খুল হিন্দ রহ. নিজের একান্ত শিষ্য মাওলানা উবায়দুল্লাহ সিদ্দিকে ‘জমিয়তুল আনসার’ নামক সংগঠন গড়ে তােলার নির্দেশ দেন। এ সংগঠনের একটি অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিলাে। ১৯১৬ সালে হজরত শায়খুল হিন্দ রহ. বৃটিশ বিরােধী স্বাধীনতা সংগ্রামে তুর্কি খলিফার সমর্থন ও আফগানিস্তানের পথে ভারতে বৃটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানের চুক্তি সম্পাদনের জন্য মক্কা গমন করেন এবং তুর্কি খলিফা আনােয়ার পাশা তার আহবানে সাড়াও দেন। কিন্তু মক্কার বৃটিশ তাবেদার গভর্ণর শরিফ হােসাইনের ষড়যন্ত্রে ১৯১৬ সালের ডিসেম্বরে হজরত শায়খুল হিন্দ গ্রেফতার হন। শিক্ষক ও শায়খের প্রতি অশ্রত এবং অভূতপূর্ব ভালােবাসা, দায়বদ্ধতা ও আনুগত্য দেখিয়ে হজরত শায়খুল ইসলাম সায়্যেদ হােসাইন আহমদ মাদানি রহ. সেচ্ছায় বন্দিত্ব বরণ করেন। সেটি ইতিহাসের আরেক অধ্যায়। প্রথমে তাদেরকে জেন্দা, সেখান থেকে মিশরে বৃটিশ সামরিক ব্যারাক, সর্বশেষ ভূমধ্যসাগরীয় মাল্টায় নির্বাসন দেয়া হয়। তিন বছর পর ১৯২০ সালের মার্চে মাল্টা থেকে ছাড়া পেয়ে নােদে পৌছে স্বাধীনতার চেতনায় সরাসরি খেলাফত কন্ফারেন্সে যােগ দেন। এসময় তাকে ‘শায়েখুল হিন্দ’ উপাধি দেওয়া হয়।


দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসারী ও সুনাম-সুখ্যাতি আজ উপমহাদেশ ছাপিয়ে আরব, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ইলমে নববির সুবাস বিস্তৃতির পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি, দাওয়াত-তাবলিগ, ইলায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্যে দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শিক সন্তানেরা পৃথিবীর পথপ্রান্তে কাজ করছে, এর ভিত্তিমূল হজরত শায়খুল হিন্দ রহ.-এর হাতেই গ্রোথিত হয়েছে। মাদানি,থানভি তারই মেহনত মাত্র ।

হাজার বছরে ইতিহাস

মুফতি পালনপুরী, পৃঃ ৩৪৮-৩৪৯

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *