নির্ধারিত কোন মাজহাব না মেনে একেক সময় একেক মাজহাব মানা যাবে কি ?

নির্ধারিত কোন মাজহাব না মেনে একেক সময় একেক মাজহাব মানা যাবে কি ?

_______________________________

অনেক ভাই আছেন, যারা খিয়ার ফিল মাজহাব বা মন চাহিদা নির্ভর  – যখন যে মাজহাব ইচ্ছা ; সেটাই মানেন৷ অর্থাৎ,  যে মাজহাবের মাস’আলাটা নিজের অবস্থার অনূকূলে হয়,  তখন সে মাজহাবের মাস’আলাকেই গ্রহণ করেন।অথবা, অধীক শক্তিশালী দলীল ভেবে একেল সময় একেক মাজহাব অনুসরণ করেন। তাদের বেহাল দশা সাদৃশ্য একটা বর্ণনা নিয়ে আজকের পোস্ট৷

অনেকেই বলে থাকেন, চার মাজহাব সত্য। তাহলে যে এক সাথে চার মাজহাব বা যখন যেটা ইচ্ছা, সেটা মানলে অসুবিধা কোথায়?  চার মাজহাবই তো সত্য !

স্পেশালি, আমি নিজে এই প্রশ্নের অনেক সম্মুখীন হয়েছি। যারা প্রশ্ন করেছিলেন, তাদের সবাইকে জাস্ট বলেছিলাম – প্রত্যেক মাজহাবের মূলনীতি ও মাস’আলা বর্ণনার প্যাটার্ন ভিন্ন। আপনি একাধিক মাজহাব একই সঙ্গে অনুসরণ করতে গেলে অনেক সময় আমল নিয়ে বিপকে পড়তে হবে বা আমল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে৷

আজকের পোস্টে সেটাই বুঝাতে চাইবো যে, এক সাথে দু’মাজহাব বা সুবিধাজনক মাস’আলা অনুসরণ করলে কিভাবে আমল নষ্ট হয়ে যায়   –

ধরুন,  আলোচনাটা হোক হানাফী ও শাফেয়ী মাজহাবদ্বয়ের ভিন্ন দু’টি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে –

শুরুতেই দু’টা মাসআ’লা উল্লেখ করে নেই –

১. শীতের দিনে কারো গায়ে থেকে রক্ত ঝরালে ওজু ভঙ্গ হবে কি না  _________ হানাফী মাজহাবের মতে ওজু ভেঙ্গে যাবে। শাফেয়ী মাজহাবের মতে ওজু ভঙ্গ হবে না।

২. কোন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ যদি গাইরে মাহরাম মহিলাকে পর্দা ছাড়া স্পর্শ করে তাহলে তার ওজু ভঙ্গ হবে কি না _______ হানাফী মাজহাব মতে ওজু ভঙ্গ হবে না৷ শাফেয়ী মাজহাব মতে ওজু ভঙ্গ হবে৷

এবার ধরুন,

( উদাহরণ স্বরুপ )

একজন সুবিধাজনক ব্যক্তি, যিনি সবসময় সব মাজহাব থেকে সহজ ও অনুকূলে মতের উপর আমল করতে চান। উনার যদি শীতের দিনে কখনো গায়ে থেকে রক্ত ঝরায়, তাহলে তিনি সুবিধাজনক হিসেবে শাফেয়ী মাজহাবের মত গ্রহণ করে বলবেন ______ আমার ওজু ভঙ্গ হয় নাই। এ ক্ষেত্রে হানাফী মাজহাব অনুসরণ করবেন না, কারণ হানাফী মত গ্রহণ করলে শীতের দিনে ওজু পূণরায় করতে হবে!

উনি পরক্ষণেই ভুলে কিংবা যেভাবে হোক – পর্দা ছাড়া কোন গাইরে মাহরাম মহিলাকে স্পর্শ করলেন। এবার চিন্তা করলেন যে, এই অপরাধে ওজু ভঙ্গ হয়ে গেলো কি না?  চিন্তা করে দেখলেন,  হানাফী মাজহাবের মতে তো এমতাবস্থায় ওজু ভঙ্গ হবে না। তাই হানাফী মত গ্রহণ করলেন৷ আর শাফেয়ী মত পরিত্যাগ করলেন। কারণ, শাফেয়ী মত গ্রহণ করলে তাঁকে পূণরায় ওজু করতে হবে৷

লোকটি প্রথম মাস’আলা তথা রক্ত ঝরার ইস্যুতে শাফেয়ী মত গ্রহণ করেছেন এবং দ্বিতীয় মাস’আলা তথা গাইরে মাহরাম মহিলাকে স্পর্শ করার ইস্যুতে হানাফী মত গ্রহণ করেছেন৷ অর্থাৎ,  দু’টা পৃথক মাস’আলায় দু’টা ভিন্ন মাজহাবের নিজের সুবিধার মতটা গ্রহণ করেছেন৷ ফলে উনার আর ওজু করতে হয়নি। রক্ত ঝরা এবং গাইরে মাহরাম স্পর্শ করা সত্ত্বেও নতুন ওজু না করে এমতাবস্থায় নামাজ আদায় করলেন।

নামাজ আদায় করে উনার স্মরণে এলো যে, নামাজ তো পড়ে নিলাম। তবে এবার দু’জন হুজুরকে জিজ্ঞেস করে নেই – আমার নামাজ হলো কি না ? 

→ প্রথমে চলে গেলেন হানাফী মাজহাবে দীক্ষিত একজন মুফতির কাছে, গিয়ে উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা দিলেন –

মুফতি সাহেব ফতোয়া দিলেন – আপনার নামাজ হয় নাই। কারণ, শরীর থেকে রক্ত ঝরালে ওজু ভঙ্গে হয়ে যায়৷ আপনার ওজু নামাজের পূর্বেই ভঙ্গ হয়ে গেছে। কিন্তু আপনি নতুন ওজু করেন নাই। ফলে, আপনি ওজুবিহীন নামাজ আদায় করেছেন। আর ওজুবিহীন নামাজ কখনো হয়  না৷

হানাফী মুফতির কাছে নিরাশ হয়ে চলে গেলেন ,,,,,

→ শাফেয়ী মাজহাবে দীক্ষিত ও পান্ডিত্বপূর্ণ একজন মুফতি সাহেবের কাছে৷ গিয়ে উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা দিলেন –

শাফেয়ী মাজহাবের মুফতী ফতোয়া দিলেন – আপনার নামাজ হয় নাই। কারণ, আপনি ওজু অবস্থায় গাইরে মাহরাম মহিলাকে স্পর্শ করেছেন৷ আর এই স্পর্শের কারণে আপনার ওজু ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু, আপনি নামাজের পূর্বে নতুন ওজু করেন নাই। আর ওজু ছাড়া নামাজ কখনো হয় না।

বেচারা সুবিধাবাদী লোক অবস্থার শিকার হয়ে চরম একটা ধাক্কা খেয়ে ভাবলেন  –

গ্রামে-গঞ্জের ময়-মুরব্বীয়ান ঠিকই বলেন  – একসাথে দুই নৌকাচড়তে গেলে মাঝখানে ডুবে মরতেই হয়৷। এক সাথে সকল মাজহাবের সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কারো কাছে আমার ঠাই হলো।  কোন মাজহাবের মতেই বুঝি আমার নামাজ হলো না!

যাইহোক,
প্রিয় ভাইয়েরা!
আলোচিত বিষয়টি দলিল-আদিল্লা সহ পেশ করলে অনেক লম্বা লেখার দরকার। তাই আকার-ইঙ্গিতে অতি সংক্ষেপে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করলাম। আশাকরি, সুবিধাজনক বা যখন যে মাজহাব ইচ্ছা ; সে মাজহাব মানার চেষ্টা করবেন না৷ মাজহাব মানলে একটা মাজহাবকেই পূর্ণাঙ্গভাবে মানবেন। না মানলে টুটালি আহলে হাদীস মতাদর্শ মানবেন। কিন্তু, মাজহাব মানার নামে নতুন আরেকটা পথ – খেয়ার ফীল মাজহাব বা মাজহাবে স্বেচ্ছাচারীতা আবিস্কার করবেন না৷

একটা কথা দিয়ে শেষ করছি –
এভাবে খেয়ার ফীল মাজহাব  বা যখন যেটা ইচ্ছা, সেটা মানা যাবে কি না _____ এরকম একটা প্রশ্ন একদিন আমাদের ক্লাসে একজন ছাত্র জিজ্ঞেস করেছিলো –

মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ ফিকা’হের শায়খ, শারীয়া বিভাগের উচ্চপদস্থ শিক্ষক ড. আল-বিলাদী হাফিজাহুল্লাহ স্পষ্ট করে বললেন যে, শারীয়াতে খেয়ার ফীল মাজহাব বা মাজহাবে যখন যেটা ইচ্ছা, সেটা মানার সুযোগ নাই। মানলে সম্পূর্ণভাবে একটা মাজহাবের মূলনীতির আলোকে মাসালা-মাসাইল অনুসরণ করতে হবে৷

বারাকাল্লাহু ফীকুম!

_________________________

আব্দুল কারীম চৌঃ,
ইসলামীক শারীয়া বিভাগ,
মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব৷

নোট –

মাজহাব গঠিত হওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে উসুল বা মূলনীতি !

আর মতানৈক্য তৈরী হয় মূলনীতির আলোকে। আপনি যখন একেক সময় একেক মাজহাব মানবেন৷ তখন দেখা যাবে কোন মাজহাবের মূলনীতিই গ্রহণ হচ্ছে না

ফলে, আপনি নিজেকে আর মাজহাবী দাবী করে লাভ নাই। সৎ সাহস নিয়ে ডিরেক্ট বলে ফেলবেন, আপনি নিরেট লা-মাজহাবী!

আপনি নিজেকে মাজহাবী দাবী করবেন আবার মাজহাবের মূলনীতি অস্বীকার ডিঙ্গিয়ে যাবেন, এটা তো হতে পারে না !

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *