পর্ব ৫- অথর্ব নারীবাদী বুড়ি

নারীবাদ নিচ্ছেন , এর ফল নিতে প্রস্তুত আছেন তো?- ০৫
“অথর্ব নারীবাদী বুড়ি”
কিছুদিন আগে একজন ৫৫ বছর বয়সী নারীবাদির সাক্ষাৎকার নিয়ে ইন্টারনেটে রীতিমত হইচই পড়ে যায়। তিনি বলেছিলেন, “নারীবাদ একটা ধোঁকাবাজি, এটা আমাকে গত ৫৫ বছর বিয়ে করতে দেয়নি।” সেই শুরু থেকেই বিয়েকে সেক্সিস্ট, পুরুষের নারী দমনের হাতিয়ার হিসেবে দেখিয়ে আসা নারীবাদিদের মুখে যখন এরকম কথা শুনতে পাওয়া যায় তখন এটা স্পস্ট যে, কোথাও কোনো সমস্যা আছে। নারীবাদের ফসল ঠিক যেভাবে ঘরে আসার কথা ছিলো সেরকম আসছে না।
তাহলে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে আসা সেই আদর্শ তাদের বয়স্কাদের কি দিয়েছে আর সেসব বয়স্কা নারীবাদিদের অবস্থাই বা কি হয়েছে- চলুন দেখে আসি।
১। বয়স্কা নারীবাদিঃ
আধুনিক নারীবাদ যতগুলো ব্যাপারে উত্তর দিতে পারেনি তার মধ্যে একটা হল বয়স্ক নারীবাদি।
অন্য নারীদের কথা দূরে থাক, স্বয়ং নারীবাদিরাই বৃদ্ধ বয়সে কি ধরণের নিশ্চয়তা পাবে এ নিয়ে নারীবাদ কোনোদিন চিন্তিত ছিলো না। ফলাফল, অগণিত অথর্ব অসুখি নারীবাদি বুড়ি।
এই বুড়িয়ে যাওয়া নারীবাদিদের বলতে শোনা যাচ্ছে, আমরা তো যা চেয়েছিলাম সব পেয়েছি। ক্ষমতা, নারী স্বাধীনতা, ক্যারিয়ার। কিন্তু আমি সুখি নই কেনো? আমার জন্য কেউ নেই কেন? (রেফারেন্স ১৮ তে দেওয়া ভিডিওর শুরুর দিকে দেখুন)
আসলেই কেউ নেই। নিজেরা আজীবন পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, কেউ নিজের পরিবার ছেড়ে এসেছেন, কত সাজানো পরিবার ভেঙ্গে দিয়েছেন, তাই নিজেদের পরিবার থাকার প্রশ্নই ওঠে না। ‘সহযোদ্ধাদের’ অবস্থাও একই রকম, কেউ হাসপাতালে, কেউ হোমলেস, কেউ ওল্ডশেল্টার হোমে। তবে যেখানেই থাকেন এটা নিশ্চিত, আছেন একাকী আর অসুখী। নারীবাদি র‍্যালিগুলোতেও যাওয়া হয়না, র‍্যালিগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে হাটার শক্তি নেই। নতুন প্রজন্মের মেয়েরাও তাদের কথা শোনে না।(রেফারেন্স-১৬)
Yale ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর নারীবাদ নিয়ে গবেষণার উপসংহার টেনেছেন এভাবে, ” নারীবাদ তার চলার পথে ফেলে গেছে কিছু একাকী, অসুখী আর নিঃসন্তান মহিলাকে” (রেফারেন্স-১৭)
২। বুড়ি ও বিড়ালঃ
ক্যাট লেডি বলতে বোঝানো হয় এমন একজন মহিলা যিনি একা, স্বামী-সন্তান-সংসার নেই।
থার্ড ওয়েভ ফেমিনিজম এরকম লাখো একাকী নারীর জন্ম দিয়েছে।(রেফারেন্স-১৫)
বহু নারী এরকম রয়েছেন যারা ২০ বছর বা তার চেয়ে বেশী সময় ধরে একা থাকছেন। একই কারণে একাতিত্বে ভোগা নারীর সংখ্যা এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অবস্থা এরকম, সঙ্গ দেওয়া দূরে থাক, সময়মত ঔষধ খাইয়ে দেবার মতও কেউ নেই। ওল্ড হোমে গিয়ে একাতিত্ব কাটানোর মত সামর্থ্যও সবার নেই। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকান ওল্ডহোমের গড় মাসিক খরচ ছিলো ৩,৬০০+ ডলার, যা সত্যিই অনেক। তো এই একাকী মহিলাদের দিন কাটে পোষা বিড়াল কিংবা কুকুরের সাথে, কবে মরবেন সে অপেক্ষায়।
৬০ বছর বয়সী একজন নারীবাদি মহিলা একটা ব্লগে লিখেছেন, “তিনি একাই থাকেন, স্বামী-ছেলেমেয়ে নেই। একাতীত্ব কাটাতে অনেক কিছুই করেন। বাড়িতে রান্নার পরিবর্তে রেস্টুরেন্টে যান। কিন্তু চারপাশে কাপল আর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ফ্যামিলিগুলোর আনন্দোৎসবের মাঝে চামড়া কুচকে যাওয়া অসুস্থ বুড়িকে কে পছন্দ করবে?” (রেফারেন্স-১৪)
৩। রোমান্টিক বুড়িঃ
আগের পর্বে এই ব্যাপারে খানিকটা বলেছিলাম। তিরিশের দিকে যখন একজন নারী দেখছে তার ‘সেক্সুয়াল মার্কেট ভ্যালু’ কমে যাওয়া শুরু করেছে তখন সে পারফেক্ট কারো সাথে সেটেল হয়ে যেতে চায়। সবার ভাগ্যে নিশ্চয় সেটা নেই। যারা পেয়ে যায় তারা দ্রুত বিয়ের জন্য তোড়জোর করে। বাকীরা করে অপেক্ষা।
যখন বায়োলজিকাল ঘড়ি স্লো হয়ে যাওয়া শুরু করে, মা হবার সম্ভাবনা কমে যেতে থাকে তখন নারীবাদি আদর্শ যেন উধাও হয়ে যায়, কোনোভাবে একটা পুরুষ হলেই হল । তবে মজার ব্যাপার, এসব ৩৫+ মহিলাদের সাথে পুরুষদের ডেটে যেতে না চাওয়ার অন্যতম কারণ হলো তারা বাচ্চার জন্য প্রচন্ড চাপ দেয়। যা একটা শর্ট-টার্ম রিলেনশনশিপে কেউই আশা করে না।
চল্লিশের পরে মুল বিপর্যয় শুরু। একেবারে নিরুপায় না হলে কেউ এসব মহিলাদের ধারেকাছে ঘেষে না। এইসব বয়স্ক মহিলাদের তাই দেখা যায় ভারী মেকআপ আর সংক্ষিপ্ত পোষাকে একটু পুরুষ সঙ্গের আশায় ডেসপারেট হয়ে ঘুরতে । ‘আদর্শ’ পুরুষরা তো কবেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাই ‘শিকার’ করতে দেখা যায় পিজ্জা ডেলিভারি বয়, ট্যাক্সি ড্রাইভার, বারটেন্ডার কিংবা যে একটু মিষ্টি করে কথা বলেছে তাকে। এ ব্যাপারে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের একটা লেখা আছে, পড়তে পারেন। (রেফারেন্স-৮)
৪। বিষণ্ণতার মহামারীঃ
আমেরিকাতে প্রতি চারজন মধ্যবয়সী মহিলার একজন ডিপ্রেশনের চিকিৎসা নেন। এটা উদ্বিগ্ন করার বিষয় বটে , কেন এমন বিপুলসংখ্যক মহিলাকে ফিজিকালি ফিট থাকার পরও একগাদা ট্যাবলেট গিলতে হচ্ছে। বড় কারণ ? নারীবাদ অবশ্যই। (রেফারেন্স-১)
কিভাবে?
পুরো আমেরিকান সমাজটাই এরকম হয়ে গেছে, একজন মেয়ে কোনো না সময়ে নারীবাদের ‘নারীর ক্ষমতায়নের’ স্ক্রিপ্টটা পড়ছে। ফলে উপযুক্ত বয়সে সংসার শুরু করার পরিবর্তে ক্যারিয়ার ভিত্তিক লাইফস্টাইলই তাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। নারীবাদ তাকে আজীবনের জন্য একটা ‘অ্যামেজিং’ লাইফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার কিছুটা নমুনা সে ইতোমধ্যে দেখেছে। আর তাই সংসার-সন্তান নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে করেছে। যে বয়সে সমবয়সী কারো সন্তান ফোর্থ গ্রেডে পড়ছে, সেই সময়ে সে তার ম্যানেজার পদে প্রমোশনটা পেয়ে গেছে, ফ্লাটের সোফা বদলাচ্ছে। স্কুলের ক্লাসমেটের বাচ্চার প্রথম ‘মাম্মি’ বলার ভিডিও যখন ইন্সটগ্রামে দিয়েছে তখন হয়ত সে কয়েকটা মোটা ফাইল টানাটানি করছে। বিপত্তি বাধছে তখনি, যখন তার মা হবার ক্ষমতা শেষ হয়ে যাচ্ছে, বায়োলজিকাল কারণেই তখন মাতৃত্বের স্বাদ নেবার প্রয়োজন মনে করছে। কিন্তু দেরী হয়ে গেছে।
ব্যাপারগুলোকে মেলানো যাক। সে আশেপাশে কিছু সন্তানসহ সুখী মা কে দেখছে। এরকম অপশন তারও ছিলো, শুধু বাদই দেয়নি, এগুলোর বিরোধিতা করেছে। নতুন করে শুরু করারও সুযোগ নেই, চামড়ায় টান পড়া, মা হবার ক্ষমতা হারানো মহিলার সাথে কে ঘর বাধবে। উপরন্তু যেই পুরুষের বিরোধিতায় জীবন কাটলো, সেই একই বয়সের পুরুষেরা পুরোপুরি রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছে কোনো সমস্যা ছাড়াই। তখন বুঝতে পারছে নারীবাদ কিছু মিথ্যা বেচেছে, আর সে পুরো জীবনের দামে সেটা কিনেছে। এখন তাই কিছু এক্স-নারীবাদিকে মুখ খুলতে দেখা যাচ্ছে।
এবার আসুন, একটা আইডিওলজি এতদিন ধরে বিশ্বাস করে আসলেন, এখন নিজেই দেখছেন সেটা মিথ্যে, নিজের হাতে হ্যাপি লাইফের সুযোগ ছিলো, পায়ে ঠেলেছেন , সেসব হ্যাপি লাইফের উদাহরণ রোজ চোখের সামনে ঘুরছে, নতুন করে শুরু করার সুযোগ নেই, বরং এখনকার এই মানসিক যন্ত্রণা নিয়েই জীবনের প্রায় বাকী অর্ধেক পার করতে হবে- ডিপ্রেশনের জন্য আর কী দরকার?
৫। কথাবন্ধ, দমবন্ধঃ
একজন মহিলা দিনে প্রায় ২০,০০০ শব্দ বলে, যা পুরুষের প্রায় তিন গুণ। এটা নারীদের অন্যতম চাহিদার মধ্যে একটা যে, দিনের শেষে কেউ তার কথা মন দিয়ে শুনবে। আর নারীবাদ এখানে সমস্যায় পড়েছে। একজন মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধা নারীবাদি, যাদের জীবন দর্শনই হল, কোনো পুরুষের দরকার নেই, তারা এই বয়সে একা থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তাহলে তার সেই কথাগুলো শুনবে কে? আরেকজন নারীবাদি? তার নিজেরও তো ২০,০০০ শব্দ জমা হয়ে আছে, শোনার কেউ নেই। আর তাই এই বয়সী নারীবাদিরা হয়ে উঠছেন খিটখিটে স্বভাবের, এতদিন ধরে একসাথে লড়াই করে আসা ‘সিস্টার’কেই এখন সহ্য করতে পারেন না। এটা একটা ইস্যু এখন। কারণ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে , এরকম একাকী মহিলাদের কারো কারো কয়েকদিন কেটে যাচ্ছে কারো সাথে কথা না বলেই।
একটা ভিডিওতে দেখলাম, একজন মহিলা রোজ মার্কেটে যায় শুধুমাত্র কারো সাথে কথা বলতে, তার কথা শোনার মত নিজের কেউ নেই। (রেফারেন্স-৭)
৬। বৃদ্ধা-শ্রম ও হোমলেসঃ
নারীবাদি হওয়া মানেই যে আপনি ধনী হয়ে যাবেন , ব্যাপারটা মোটেই এরকম নয়, অন্তত অধিকাংশের ক্ষেত্রে সেরকম ঘটে না। অধিকাংশ নারীবাদিকেই দেখা যায় ৫০+ বছর বয়সে এসেও কাজ করে যেতে। কিন্তু সমস্যা হল, এই বয়সটা চাকরির বাজারের বিবেচনায় বৃদ্ধ আর পেনশন পাবার মত অত বৃদ্ধও নয়-একটা উভয়সঙ্কট। জীবনযাত্রার খরচ রোজ বাড়ছে, কিন্তু আপনার কাজের ক্ষমতা কমছে, তুলনামুলকভাবে বেতনও তাই। আর আয় করে খাওয়ানোর মতও তো কেউ নেই। ফলাফল-হোমলেস! রিপোর্ট বলছে, ৫৫+ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে হোমলেস হবার হার সবচেয়ে বেশী। (রেফারেন্স-১২,১৩)
আমি পরিসঙ্খ্যান দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। যেই বয়সে নিয়ম মেনে খাবার আর ওষুধ খেয়েও সুস্থ থাকা কঠিন, সেই বয়সে কিনা ঘুমোতে হচ্ছে রাস্তায়!
৭। হিংসুকঃ
বয়স্ক নারীবাদিরা প্রচন্ড রকমের হিংসুটে হয়ে থাকে। বিশেষ করে নতুন কাপল যারা নতুন বিয়ে করেছে বা একটা সন্তান আছে তাদের হিংসা করে, কি অনলাইনে-কি অফলাইনে। এখানে প্রথমতঃ তারা মনে করে বিয়ে মানে পুরুষের দাসী হয়ে যাওয়া। তো যখন কোনো মেয়ে বলে সে তার স্বামীকে শ্রদ্ধা করে, সন্তানদের দেখাশোনা করাই তার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়, তাহলেই হয়েছে। একেবারে তেড়ে যায় তার দিকে, হাজার রকম থিওরী আর যুক্তি শুনিয়ে দেয়, ভর্ৎসনা করে। দ্বিতীয়তঃ যেহেতু তাদের নিজেদের জীবনে এরকম কিছু জোটেনি, আরেকজনকে পেতে দেখে সহ্য করা কঠিন। আপনারা অনলাইনে বিভিন্ন ফোরামে দেখবেন, কোনো মেয়ে স্বামী-সংসারের পক্ষে কথা বললে তাকে একেবারে ধুয়ে দেওয়া হয়। এখানে একটা লিঙ্ক দিচ্ছি। (রেফারেন্স-২)
ক্যান্ডেস ওয়েন বলেন, আপনি একজন মহিলা হয়ে ওদের গিয়ে বলুন আপনি নারীবাদি নন। তাহলেই ওইসব মহিলাদের বিষাক্ত মুখ দেখতে পাবেন।
নারীদের হিংসা এমনিই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তার উপর যদি হয় নিঃসন্তান-একাকী-বুড়ি, তাহলে তো কথাই নাই।
৮। অন্তর্কোন্দলঃ
বয়স্ক নারীবাদিদের জন্য অন্যতম সমস্যা হলো অসহিষ্ণুতা। একজন অল্পবয়সী নারীবাদির অন্য আরেকজনের মতের প্রতি যে সহিষ্ণুতা আর নমনীয়তা দেখা যায়, মধ্যবয়সী নারীবাদির বেলায় পুরোপুরি উল্টো। খিটখিটে মেজাজ, মতের মিল না হলেই তাকে টেনে নামানোর চেষ্টা আর শেষ দেখে ছাড়া্র প্রবণতা লক্ষনীয়-অনলাইন অফলাইন দু’জায়গাতেই। এক্ষেত্রে তাদের শিকার আর কেউ নয়, আরেকজন নারীবাদিই। ব্যাপারটা এতই সিরিয়াস যে এ ব্যাপারে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেবোরাহ সিজেলের Sisterhood Interrupted বইটার কথা বলা যেতে পারে। পুরো বইটাতে আলোচনা করেছেন, কত সহজেই নারীবাদিদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল লেগে যায়। তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন Why Feminists Fight With Each Other শিরোনামে। (রেফারেন্স-৯)
তবে শুধু মুখের কথায় নয়, এগুলো অনেক সময় মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। এক জায়গাতে দেখেছিলাম, পুরুষ শায়েস্তা করার জন্য ফাইট শিখতে এসে নিজেরাই মারামারি করে সব ভন্ডুল করে দিয়েছিলো। (রেফারেন্স- ১০, ১১)
সারকথা এই, নারীবাদ বৃদ্ধ বয়সের ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। বরং নারীবাদি আদর্শে জীবন উৎসর্গ করে আসার পর মাঝবয়সে যখন নিজেকে একা আর বিচ্ছিন্ন আবিস্কার করছে, তখন নারীবাদের ধোকাবাজির ব্যাপারটা টের পাচ্ছে।
এই ধোঁকা খাওয়া কেউ কেউ মুখ খুলছে, কারো কথা মিডিয়ায় আসছে না বা আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
আদর্শিক সান্তনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখা ‘সিস্টার’রা যখন নিজের লাইফে এমন বিপর্যয় দেখছে তখন সেই সান্তনা আর কাজ করছে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সেক্স অ্যান্ড দ্যা সিটির লেখিকা ক্যান্ডেস বুশনেলের কথা। হাজারো নারীবাদিকে সান্তনা দিয়েও নিজে যখন মা না হতে পারার জন্য প্রকাশ্যে আফসোস করেন, তখন একথা স্পস্ট, বৃদ্ধা নারীবাদিরা ভালো নেই। একি রকম কথা বলেছিলেন ক্যান্ডেস ওয়েন, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মাইলি সাইরাস আর লিনা ডানহামের ব্যাপারে, যারা আধুনিক নারীবাদ প্রচার করে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “তাদের সুখি হওয়ার কোনো কারণ নেই”।
আজকে নারীবাদিদের বৃদ্ধ বয়সের এই করুণ পরিণতি নারীবাদের মার্কেটিংয়ে যেমন ভাটা ফেলছে তেমনি নারীবাদের বিরোধিতায় যারা কাজ করছে তাদের জন্য বড় স্বস্তির কারণ। এরা তো সেইসব নারী, যারা খুব মৌলিক কিছু অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে পুরো সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে ফেলার কাজে লাগিয়েছে। আর তাই এসব নারীদের জন্য বিন্দুমাত্র সিম্প্যাথি নেই পশ্চিমা পুরুষদের।
• কিছু বয়স্ক নারীবাদির অনুশোচনাঃ
বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া সাবেক নারীবাদির অনুশোচনার কথা আজকে নতুন কিছু নয়, ইন্টারনেটে প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে এখন। তিনজনের কথা উল্লেখ করছি-
১।”আপনি যদি অল্পবয়স্ক আর স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকেন, একটা চাকরী থাকে তাহলে নারীবাদ আপনার জন্য দারুন জিনিস।
আমরা যা চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি, যেমন স্বাধীনতা। কিন্তু ফলাফলটা আমরা যা ভেবেছিলাম সেরকম হয়নি। আমরা চাকরী দিয়েই শেষ করেছি, ক্যারিয়ার দিয়ে নয়। এই বৃদ্ধ বয়সে আমরা স্বাধীন তবে ক্লান্ত আর একাকী। নারীবাদ ৩০শের নিচে যেকোন মেয়ের জন্য দারুণ জিনিস “

  • ফে ওয়েল্ডন (রেফারেন্স ৩)
    ২।” আমি খুব দেরীতে বুঝেছি যে নারীবাদ একটা স্ক্যাম। আজকে আমার বয়স ৫৫ , অবিবাহিতা এবং বাচ্চা নেওয়ার বয়স পার করে এসেছি। আমি যদি কোনোভাবে পিছনে ফিরে যেতে পারতাম তাহলে অবশ্যই নারীবাদের ধোঁকাবাজির ব্যাপারে নিজেকে সতর্ক করতাম। “
    -ক্যান্ডেস ওয়েন, আমেরিকান নারীবাদি। (রেফারেন্স ৪)
    ৩।”আমি একজন ৫০ বছর বয়সী মহিলা। আমার চারটা কলেজ ডিগ্রি আছে। আমি একজন নারীবাদি মায়ের হাতে বড় হয়েছি। তিনি আমার বাবাকে ঘৃণা করতেন। আমার মা-ও সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ছিলেন। আমাকে শিখিয়েছিলেন পড়াশোনা আর ক্যারিয়ারই সব। আমিও তাই মেনে নিয়েছিলাম। এটা ভুল ছিলো। কিন্তু বুঝতে দেরী হয়ে গেলো।
    এখনো আমি কাজ করি, প্রতিদিন অফিসে যাই। অফিস শেষে আবার বাসায় এসে একা। বাসার প্রতিটা জিনিস আমাকে বিরক্ত করে। আমার অন্যান্য কলিগরা যেখানে বাচ্চাদের সাথে বেড়াতে যায়, ডিনার পার্টি করে সেখানে আমি বাসায় আমার কুকুর-বিড়ালের সাথে দিন কাটাই।
    আমি মেয়েদের বলবো, বয়স ২০শের আশেপাশে থাকতেই কাউকে খুজে নিও। “
    -ডেনিস প্রেজারের রেডিও শো থেকে (রেফারেন্স ৫)
    আরো এরকম রিগ্রেট পড়তে রেফারেন্স ৬ এ দেওয়া লিঙ্কে যেতে পারেন।
    • প্রেক্ষিত আমাদের দেশ
    আমাদের দেশের ব্যাপারে বলতেই হয়। বহুযুগ ধরেই পরিবারের সবচেয়ে বয়স্কা নারী অর্থাৎ “দাদী” অন্যতম ক্ষমতাবান ব্যাক্তি হিসেবে সম্মানিত হয়ে আসছেন। সংস্কৃতিটা এরকম, পরিবারে নতুন বউ আসতে হলে দাদীর পছন্দ হতে হবে, একটা ঘর তোলার সময় দাদী অনুমতি দিলে তবেই। এই তো আমাদের ট্রাডিশন। এমনকি এখনো পরিবারগুলোতে দাদী ভেটো দিলে অনেক সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়। পরিবারগুলোতে দাদীর অবস্থান অনেকটা রাণীর মত। সারাজীবন ধরে পরিশ্রম করে গড়া সংসারে তার প্রত্যক্ষ সামগ্রীক প্রভাব জীবনের শেষ দিনগুলোতে মানসিক স্যাটিস্ফেকশন এনে দেয়।
    এবার আসুন, নারীবাদের মাধ্যমে আসলে কী বয়ে আনা হচ্ছে। একটা সোজাসুজি হিসাব- নারীবাদের যে ক্রাইটেরিয়া, তা কোনো পুরুষই মানবে না। আপনি নারীবাদি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন , তারমানে আপনি একা থাকার সিদ্ধান্তও নিলেন। তো এইভাবে বৃদ্ধ বয়সে নাতি-নাতনী নিয়ে, জীবনের মৌলিক প্রয়োজনগুলোর ব্যাপারে একদম নিশ্চিন্ত থেকে, শেষ বয়সে জীবনের সেরা সময়টা কাটানোর পরিবর্তে যদি একা একটা ফাঁকা বাড়িতে , পরদিন মরে যাবার ইচ্ছে নিয়ে, ওয়াইন গিলে, বিড়াল কোলে ঘুমিয়ে যাওয়াই যদি আপনার জীবনের লক্ষ্য হয়, তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে নারীবাদ নিতে পারেন, এগুলো কেবল নারীবাদই দিতে পারে।
    আরো একটা ব্যাপার লক্ষনীয়, আমাদের পরিবারের সম্মানিতা মহিলারা, যারা ৩০ বছর পরিশ্রম করে একটা সংসার গড়ে তুলেছেন, ৫ জন মানুষকে ‘মানুষ’ করেছেন, যাদের সবাই গ্রাজুয়েট আর নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, একগাদা নাতি-নাতনী নিয়ে এক বর্ণাঢ্য জীবন পার করছেন, যিনি অসুস্থ হলে অন্তত ১০ জন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, একাকিত্ব কি জিনিস কোনোদিন দেখেননি, ১০ জনের একটা সংসারে যার কথাই শেষ কথা- নারীবাদিদের চোখে তিনি মোটেও ‘সফল’ নারী নন, কেননা তার ‘ক্যারিয়ার’ নেই।
    বরং তাদের চোখে সফল নারী কে? যিনি তরুণ বয়সে কোথাও জব করতেন, আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে কোনো পুরুষের অধীনে যেতে চাননি, ফলে স্বামী-সংসার-সন্তান কোনোটাই নেই তার, তবে সফল ক্যারিয়ারের নিদর্শনস্বরূপ ‘বিরাট ফাঁকা একটা বাড়ী’ আছে , বিত্ত থাকলেও তিনি অসুস্থ হলে কিংবা মরে গেলেও কারো কিছু আসে যায় না, বরং যার যাবে আসবে সেই লোকটাই বা কে? শেষ দিনগুলো কাটছে বিড়াল, ওয়াইন আর কোন একদিন মরে যাবার প্রতিক্ষা নিয়ে।
    সফল নারী বটে!
    কিছু কমেন্টসঃ
    ১। “আমার মা আমার বাবাকে ছেড়ে যান ১৯৮১ সালে, তখন আমার বয়স ১০ বছর। আমার বাবা একজন সৎ মানুষ ছিলেন এবং আমাদের পরিবারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। আমাদের তিন বেডরুমের বাড়ী ও দুটো কার ছিলো। আমরা ধনী ছিলাম না, কিন্তু আমাদের কখনো ভাত কাপড়ের অভাব হয়নি। আমার মা-র কাছে এই জীবন বোরিং লাগতো।
    তিনি ভেবেছিলেন তিনি আরো বেটার কাউকে পাবেন। আমার বাবাকে ছেড়ে দেন এবং আরেক জায়গায় বিয়ে করেন। কিন্তু ঐ লোকটা ছিলো মাতাল এবং একটা খারাপ লোক। অতিরিক্ত মদপানের কারণে মাত্র ৫০ বছর বয়সে মারা যান।
    আমার বাবা খুব কস্ট পেয়েছিলেন। তারপরেও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বড় করেছেন, যতদিন পর্যন্ত আমরা করদাতা না হচ্ছি।
    আমার বাবা ৫০ বছর বয়সেই রিটায়ার করেছেন। ওদিকে আমার মা-র বয়স এখন ৭০, একাই থাকেন এবং এখনো চাকরী করতে হচ্ছে।
    আমি মনে করি আমার মা একটা বাজে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”
    ২। “আমার স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাস হাসপাতালে ছিলো, ওখানেই মারা গেছে । আমি প্রায় প্রতিদিন হাসপাতালে যেতাম। সেখানে কিছু সিঙ্গেল মহিলাদের দেখেছি, মাসের পর মাস বেডে শুয়ে আছে , একজন মানুষও তাকে দেখতে যায়নি। ঐভাবে একা একা শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তাদের জন্য কস্ট লাগার কথা ছিল, কিন্তু এটা তারা নিজেরা বেছে নিয়েছে। বরং অন্য কোনো রোগীর কোনো ভিজিটর গেলে হাত বাড়িয়ে ডেকে কথা বলতে চায়।”
    ৩। “২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলাম এমন এক নারীকে, যাকে আমি ভালবাসতাম। আমাদের তিন সন্তান ছিলো। আমি সপ্তাহে ৬০-৭০ ঘন্টা কাজ করতাম আমার পরিবারকে সুখী রাখতে। ১৭ বছর পর আমার স্ত্রীর মনে হল, সংসারের মাধ্যমে তার মতও একজন নারীকে আটকে রাখা হয়েছে। আমাকে ডিভোর্স দিলো, যা আমি কখনই চাইনি। কয়েক বছর পর , যখন তার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, সে আবার ফিরে আসতে চাইলো। আমি ফেরত নেইনি। এসব নারীরা মনে করে জীবন খুবই সহজ। আসলে জীবন কঠিন”
    ৪। “কয়েক বছর আগে একটা অনুষ্ঠানে এক ব্যাক্তি একজন নারীবাদি লেখিকাকে ছুরিকাঘাত করেন। তার অভিযোগ , ঐ লেখিকার বই পড়েই তার বোন নারীবাদি হয়েছে, তিন সন্তানকে ফেলে রেখে ঘর ছেড়েছে। বড় ছেলেটা তখন কেবল হাইস্কুলে। স্কুল থেকে ফিরে ছোট ভাইবোনকে খাইয়ে আবার ছুটতো পার্টটাইম কাজে। ওদের বাবা সারাদিন কাজ করতো। ছোট বাচ্চাগুলোকে সামলানো কঠিন ছিল, কারন তারা সবসময় বলতো , মা কোথায়? আজকে তিন ভাইবোনই প্রতিষ্ঠিত। আর তাদের মার কিছুই নেই, না নারীবাদী বোনেরা, না টাকা, না সংসার। সে আবার সংসারে ফিরতে চেয়েছিল। ওদের বাবা হয়ত ক্ষমা করে দিতেন, কিন্তু সন্তানরা ঢুকতে দেয়নি। তারা মা বলে এমন এক মহিলাকে চিনতো, যে তাদের জাহান্নামে ফেলে পালিয়েছিল।”
    ৫। “নারীবাদ পুরুষদের ক্ষতি করেছে আর নারীদের ধ্বংস করেছে”।
    • রেফারেন্সঃ
    ১। http://www.thumotic.com/feminism-depression-epidemic
    ২। https://medium.com/…/prepare-to-be-lonely-spinsters…
    ৩। https://twitter.com/BBCNewsn…/status/849746443195736064…
    ৪। https://www.kanyidaily.com/…/feminism-is-a-scam-it-kept…
    ৫। https://ozconservative.blogspot.com/…/yet-more-feminist…
    ৬। https://ozconservative.blogspot.com
    ৭। https://www.youtube.com/watch?v=agWvHpovTvE
    ৮। https://www.facebook.com/…/permalink/551391565436928/
    ৯। https://www.alternet.org/…/why_feminists_fight_with…/
    ১০। https://pjmedia.com/…/feminist-fight-club-members-beat…/
    ১১। https://www.youtube.com/watch?v=xtYazq6jO6Y
    ১২। https://www.abc.net.au/…/women-over-fifty…/8619526
    ১৩। https://www.abc.net.au/…/older-women-forced-into…/897770
    ১৪। https://www.newstatesman.com/…/what-it-s-be-single…
    ১৫। https://www.reddit.com/…/3rd_wave_feminism_is_creating…/
    ১৬। https://www.wnd.com/…/the-aging-sagging-fruits-of…/
    ১৭। https://www.dailywire.com/…/study-feminism-leaving-wake…
    ১৮। https://www.youtube.com/watch?v=WvrsRnrH-i0

  • (মুলতঃ সিরিজের ৪, ৫ ও ৬ ইন্টাররিলেটেড। একসাথে দেওয়া গেলে ভালো হত। কিন্তু অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় সম্ভব হল না। তবে তিনটা একসাথে পড়লে কিছুটা আইডিয়া পাওয়া যাবে আশা করি। মাআ’সসালাম)

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *