পর্ব ৮- যখন পুরুষ পাল্টা আঘাত করে

নারীবাদ নিচ্ছেন , এর ফল নিতে প্রস্তুত আছেন তো?- ৮
“যখন পুরুষ পাল্টা আঘাত করে”
(জ্ঞাতব্যঃ এই লেখার ভাষা ও বিষয়বস্তু অত্যন্ত সংবেদনশীল।)
২০১৮ সালের অক্টোবরে বিখ্যাত গেইম ডেভেলপার কোম্পানি “রকস্টার গেমস” ওপেনওয়ার্ল্ড গেইম “রেড ডেড রিডেম্পশন ২” রিলিজ করে। গেইমটির পটভূমি ছিলো ১৯০০ সালের শুরুর দিকে। গেইমটিতে একটা সিন ছিলো এরকম, একজন ফেমিনিস্ট রাস্তার পাশে ব্যানার নিয়ে নারীদের ভোটাধিকারের জন্য স্লোগান দিচ্ছে। ‘শিরাকো’ নামের একজন গেমার ইউটিউবে একটা ভিডিও আপলোড করেন। যাতে দেখা যায় গেইমের প্রধান ক্যারেক্টার ওই ফেমিনিস্টকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয় এবং ভিডিওটার শিরোনাম দেয়া হয় “বিরক্তিকর ফেমিনিস্টকে পেটানো”।
ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যায়। এই ভিডিও নারীবাদিদের বেশ ক্ষেপিয়ে তোলে এবং শিরাকোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা শুরু করে। এক পর্যায়ে ইউটিউব তার ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করে দেয়।
তারপর শুরু হয় অন্য আরেক কাহিনী। ছোট বড় প্রায় সব ধরণের গেমাররা শিরাকোর পক্ষে টুইট, ভিডিও, আর্টিকেল পোস্ট করা শুরু করে। ব্যাপক দাবীর মুখে অবশেষে ইউটিউব তার চ্যানেল ফেরত দেয়। তারপরই ব্যাপারটা ট্রেন্ড হয়ে যায়। অনেকে শিরাকোর মত করে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেন। গেমে কেউ ওই ফেমিনিস্টকে ট্রেনের নিচে ফেলে হত্যা করেন তো কেউ কুমির দিয়ে খাইয়ে দেন। শিরাকো এইরকম ভিডিও দিয়ে পুরো একটা প্লেলিস্ট তৈরি করেছেন এবং ইউটিউবে এই টপিকে অসংখ্য ভিডিও আছে। (রেফারেন্স-৩৫)
তবে এখানে গুরুত্বপুর্ণ একটা ব্যাপার দেখা যায়। সেটা হল, সাধারণ দর্শকদের সমর্থন। ওই গেমপ্লের ভিডিওগুলোর নিচের কমেন্টগুলোর প্রায় সবগুলোই কাজটার সমর্থনে, যা অবাক করার মত।
নারীবাদের উর্বরভূমি পশ্চিমা দেশগুলোর পুরুষেরা নারীবাদের প্রতি সহনশীল হবেন, এমনটাই ধারণা করে বাকী দুনিয়া। কিন্তু সেইসব পুরুষেরা নারীবাদের প্রতি যে মারাত্মক মাত্রার ক্ষোভ পুষে রেখেছিলেন তার বহিঃপ্রকাশ এর আগে সোশাল মিডিয়াতে এতটা দেখা যায় নি।
গেইমে হয়ত একটা থ্রিডি ক্যারেক্টারকে পেটানো হয়েছে, বাস্তব দুনিয়ার কোনো নারী আহত হয় নি। কিন্তু ব্যাপারটা একটা জিনিস স্পষ্ট করে দেয়, ফেমিনিস্টবান্ধব আদালত, সমাজ, কর্মস্থল এগুলো কোনঠাসা করে রাখা পুরুষদের বাস্তবে এমন প্রতিশোধ নিতে বাধা দিচ্ছে, তাই তারা বেছে নিয়েছেন একটা অ্যাানিমেটেড ক্যারেক্টারকে তাদের ‘পাঞ্চিং ব্যাগ’ হিসেবে -এরকমটাই লিখেছে ভাইস নিউজ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, শুধুমাত্র ওই ফেমিনিস্টকে পেটানোর জন্যই ‘রেগুলার গেমার নন’-এরকম অনেকে ওই গেমটি কিনেছিলেন। (রেফারেন্স-৩৬)
তবে এসবের কারণও আছে। সেই ১৯০১ সালের ভোটাধিকারের দাবীতে চলা ‘নির্দোষ’ নারীবাদি আন্দোলন , আর আজকের সর্বব্যাপি নারীবাদ, আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। যেই সমঅধিকারের দাবীতে নারীরা রাস্তায় নেমেছিলেন, তার হাজারগুণ আদায় হয়ে গিয়েছিলো সত্তরের দশকে। এরপরে এত বছর ধরে যা হয়েছে সবই কর্পোরেশনগুলোর স্পন্সরে। কর্পোরেট সেক্টরে অভার সাপ্লাইয়ের কারণে নারীকে কম বেতন দিতে হয়, সাথে যোগ করুন সেক্স সেলসের এক্সট্রা প্রফিট, প্রফিট ম্যাক্সিমাইজশনের ধর্ম মেনে চলা ব্যবসায়ীদের জন্য নারীবাদের চেয়ে বিনিয়োগের লাভজনক অপশন আর কী ছিল? আর তাই নারীবাদের জন্য সার্বিক জালানী যুগিয়ে গেছে কর্পোরেশনগুলো। পুরো মেকানিজমটা হয়ে গেছে পুরুষকে ডমিনেট করার মেশিন। যার ফলে পরিবারের সবার জন্য এটিএম কার্ড হয়েও বাবাকে বাঁচতে হয় স্টুপিডের মত, ইন্ডাস্ট্রীর জীবন বাজি রাখা কাজগুলো করেও পুরুষকে ইকুয়াল পের মত অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মানতে হয়- গত কয়েক দশক ধরে প্রচুর ভুগেছে পশ্চিমা পুরুষেরা।
পুরুষদের তরফ থেকে এরকম সর্বব্যাপি প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া তাই স্বাভাবিক। নির্যাতনের শিকল ছেড়ার কথা বলে পুরুষের বিরোধীতায় যে নারীবাদের জন্ম, পুরুষরাই এখন তাদের ভিক্টিম। বিশ্বের নানান অঞ্চলের নানা ধরণের ‘পুরুষ অধিকার আন্দোলন’ তাই ক্রমেই প্রাসঙ্গিক হচ্ছে। এই লেখায় তারই একটা ধারণা দেবার চেষ্টা করবো।
শুরু করা যাক।
১। MGTOW (Men Going Their Own Way):
নারীবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সক্রিয় আবার একই সাথে নিস্ক্রিয় আন্দোলনের নাম MGTOW (উচ্চারণ- মিগটাও)। নিস্ক্রিয় এই কারণে যে, তাদের বাস্তবিক কোনো কর্মসূচী নেই। এর পরিবর্তে এড়িয়ে যাওয়াকে তারা সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ মনে করেন।
২০০০ সালের দিকে এর যাত্রা শুরু হয়। তাদের আইডিওলজি অনুযায়ী নারীবাদকে তারা সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করেন। তাদের বিশ্বাস, নারীবাদ পুরুষের জীবন ধংসের জন্য নারীদের ব্রেইনওয়াশ করছে। তাদের সবচেয়ে আপত্তির জায়গা হলো মিথ্যা ধর্ষণ মামলা।
তবে নারীবাদকে ছাপিয়ে তারা নারীদেরকেই বিষাক্ত বলে ধরে নেন। তারা মনে করেন, নারীবাদ নারীদের ধ্বংস করে ফেলেছে এবং সমাজ, আদালত, রাষ্ট্র সবকিছু নারীদের ফেভারে চলে গেছে। তাই কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মসুচীই আর কাজ করবে না। বরং, যেটা কাজ করবে সেটা হলো, জীবনের সর্বস্তরে নারীদের এড়িয়ে চলা। পুরোপুরিও না পারলে অন্ততঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত।
তাদের এই আইডিওলজি গ্রহণ করার নাম রেডপিল নেওয়া।
তাদের এই আন্দোলনে কোনো নারী সদস্য হতে পারেন না। আর কোনো পুরুষ সদস্য হতে চাইলে তাকে সংগঠনের চারটি লেভেলের (প্রকৃতপক্ষে ৫ টি) যেকোনো একটির সদস্যপদ নিতে হয়।
লেভেলগুলো হলোঃ
▰ লেভেল ০ঃ (সাধারণ সচেতন) – এই লেভেলের সদস্যরা নারীবাদের ধোঁকাবাজির ব্যাপারে সচেতন। তারা বিশ্বাস করেন জেন্ডার ইকুয়ালিটি একটা মিথ্যা ও প্রপাগান্ডা। তবে তারা বিয়ের ব্যাপারে এখনো পজিটিভ এবং বিয়ে করে থাকেন। এই লেভেলকে পার্পল পিলও বলা হয়।
▰ লেভেল ১ঃ (দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে জড়ান না) – এই লেভেলের সদস্যরা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক যেমন বিয়েতে অংশ নেন না। তবে স্বল্পমেয়াদি সম্পর্ক করে থাকেন।
▰ লেভেল ২ঃ (স্বল্পমেয়াদি সম্পর্কেও জড়ান না) – তারা নারীদের সাথে কোনো ধরণের মানসিক ও শারীরিক সম্পর্কে জড়ান না।
▰ লেভেল ৩ঃ (অর্থনৈতিক সীমা আরোপণ) – এই লেভেলে এসে একজন সদস্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।
▰ লেভেল ৪ঃ (চুড়ান্ত পর্যায়) – এই পর্যায়ে পুরোপুরি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং নিজের মত করে বসবাস করতে শুরু করেন।
মিগটাও এর সদস্য হবার জন্য কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যেহেতু তাদের সমস্ত কার্যক্রমই প্যাসিভ তাই তাদের প্রকৃত সদস্য সংখ্যা কতজন তা জানা যায় না। তাদের অধিকাংশ সদস্য উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে হলেও নানা দেশে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতেও কিছু সদস্যকে দেখা যাচ্ছে। ২০১৪ সালে মিগটাও ফোরামের যাত্রা শুরু হয় এবং এতে প্রায় লক্ষাধিক রেজিস্টার্ড সদস্য রয়েছেন। mgtow.tv নামে তাদের একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি ইউটিউবে কয়েকশো চ্যানেল থেকে এই আইডিওলজি প্রচার করা হয়।
তবে প্যাসিভ থাকলেও নারীবাদিরা এই সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে মহাক্ষ্যাপা। কারণ অ্যাকচুয়াল কার্যক্রম না থাকলেও নারীবাদবিরোধী আন্দোলনের একটা বিরাট অংশ মিগটাও এর ব্যানারে একত্রিত হচ্ছে এবং নিয়মিতই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই আইডিওলজি গ্রহণের ঘোষনা আসছে।
মিগটাও এর প্রতিষ্ঠাতা দুজনের সাক্ষাৎকার ও তাদের মেনিফেস্টো পড়তে রেফারেন্স ২৬ ও ২৭ এ দেওয়া লিঙ্কে দেখতে পারেন।
মিগটাও এর মত ‘ম্যানোস্ফেয়ার’ নামে অনলাইন ভিত্তিক আরো একটি আন্দোলন চালু রয়েছে। তবে এর পরিসর অনেক বড়। এর আইডিওলজিগুলো হল, নারীবাদের কঠোর বিরোধীতা, নারীদের প্রতি প্রতিকূল আচরণ ও কট্টর ডানপন্থা। Men’s rights movement, Incels (Involuntary Celibates), Men Going Their Own Way (MGTOW),
Pick-up artists (PUA) ও Fathers’ Rights Groups নিয়ে গঠিত হয়েছে Manosphere মুভমেন্ট।
(নোটঃ ব্যক্তিগতভাবে আমি মিগটাও বা ম্যানোস্ফেয়ার কোনোটারই সমর্থক নই। নারীবাদের ব্যাপারে শরয়ী অবস্থানই আমার অবস্থান।)
২। যখন পুরুষ পাল্টা আঘাত করেঃ
২০১৪ সালে নিউইয়র্কের সাবওয়েতে জর্জ পেনা নামে এক ব্যক্তির সাথে এক মেয়ের ঝগড়া লাগে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে মেয়েটি জর্জকে চড় মারে। জবাবে জর্জও পাল্টা থাপ্পড় মেরে বসেন। মেয়েটি জর্জের নামে মামলা করে। যেহেতু মেয়েটি আগে মেরেছে তাই জর্জ খালাস পান।
তাদের এই মারামারির ভিডিও ভাইরাল হয়। বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা হয়। রুবিন রিপোর্ট নামে এক অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, যদিও মেয়েটা আগে চড় মেরেছে, তারপরও জর্জের তাকে মারা উচিত হয় নি। একজন বলেন, কোনো নারী যদি পুরুষকে আঘাত করে তাহলে পুরুষটির কোনোভাবেই পাল্টা আঘাত করা উচিত নয়, বরং তার উচিত সেখান থেকে সরে যাওয়া। (রেফারেন্স-৩০)
ইউটিউবে ওই ভিডিওর নিচে প্রায় শতভাগ কমেন্ট জর্জের কাজকে সমর্থন করে। অধিকাংশই জানান জর্জের জায়গায় তিনি থাকলে একই কাজ করতেন। এমনকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নারী লেখেন, জর্জ ঠিক করেছে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই লেখা তো সবাই পড়েছেন, “শুনিয়াছি, নাকি বিলাত প্রভৃতি মেচ্ছদেশে পুরুষদের মধ্যে একটা কুসংস্কার আছে, স্ত্রীলোক দুৰ্ব্বল এবং নিরুপায় বলিয়া তাহার গায়ে হাত তুলিতে নাই।”
এটা একসময় শতভাগ সঠিক ছিল। লেডিস ফার্স্ট, নারীর জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেওয়া, সিড়িতে হাত ধরে নামানো, নারীর সামনে হাটু গেড়ে বসে বিয়ের জন্য প্রপোজ করা -এগুলো সব পশ্চিমারাই শিখিয়েছে।
কিন্তু এখন অবস্থা পালটে গেছে। এক্সট্রিম ফেমিনিজমের যুগ চলছে। আমেরিকার প্রতি সাত জনে একজন নারী তার পুরুষ সঙ্গীর গায়ে হাত তুলে থাকেন। (রেফারেন্স- ২৫)
শুধু হাত তোলাই নয়, বরং সেইসব ভিডিও মজা করার জন্য অনলাইনে ছেড়ে দেওয়া হয়ে উঠেছে খুব স্বাভাবিক। এমনকি পাবলিক প্লেসে কোনো নারী পুরুষকে পেটালেও মানুষ সেটাকে ফান হিসেবেই দেখে।
তবে এই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এক সময়ে যেমন ‘মেয়েমানুষের গায়ে হাত তুলতে নেই’ বলে এক সাধারণ সত্য প্রতিষ্টিত ছিলো, পশ্চিমাদের মনোভাব বদলাচ্ছে। ডিবেট ডট অর্গ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় , ৬৭% মানুষ মনে করেন এইরকম পাল্টা আঘাত সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। (রেফারেন্স- ২৪)
একটা ভিডিও এরকম ছিলো, বাসে এক কলেজছাত্রী বয়স্ক বাস ড্রাইভারকে থাপ্পড় মারে। তখন ওই বাস ড্রাইভার পাল্টা চড়থাপ্পড় দেন। এসময় একজনকে বলতে শোনা যায়, “সে তো একজন নারী।” জবাবে ওই বাস ড্রাইভার বলেন, “সে একজন পুরুষ হতে চেয়েছিল। তাই আমি তাকে পুরুষের মতই ট্রিট করেছি।” (রেফারেন্স- ২৩)
একসময়ের বিখ্যাত র‍্যাপার টুপাক শাকুরও এক ইন্টারভিউতে এইধরণের নারীদের পেটাতে চেয়েছিলেন। (রেফারেন্স- ২২)
আপনি যদি ইউটিউবে When men hit back লিখে সার্চ দেন তাহলে এইরকম অনেক ভিডিও পাবেন। তবে ভিডিওর চেয়ে দেখার বিষয় হলো কমেন্টবক্স। প্রায় শতভাগ কমেন্ট ভিডিওর সমর্থনে পাবেন। আর এই কমেন্টগুলো যে অশিক্ষিত-পশ্চাৎপদ কোনো দেশের মানুষের তা নয়, বরং ‘শিক্ষিত’ পশ্চিমা দেশগুলোর, যাদেরকে বাকী দুনিয়া ওহীর মত অনুসরণ করে।
৩। ভয়ংকরঃ
ডিসেম্বর ৬, ১৯৮৯ সাল।
বিকেল চারটার কিছু পর। হাতে একটা রাইফেল আর হান্টিং নাইফ নিয়ে কানাডার মন্ট্রিলের ইকোল পলিটেকনিকে ঢোকেন মার্ক লিপিন নামে এক যুবক। এক ক্লাসরুমে গিয়ে ছাত্র আর ছাত্রীদেরকে আলাদা লাইনে দাড় করান। ছাত্রদের বেরিয়ে যেতে বলেন। এরপর নয়জন ছাত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। তারমধ্যে ছয়জন সাথে সাথে মারা যায়। গুলি করার সময় চিৎকার করে বলেন, “আমি নারীবাদকে ঘৃণা করি।”
এরপর আরো ৮ জন ছাত্রীকে গুলি করে এবং একজনকে ছুরি মেরে হত্যা করেন।
তার এই হামলার কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন তিনি নারীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। পরবর্তিতে তিনি সুইসাইড করেন এবং সুইসাইড নোটে লিখে যান “নারীবাদ আমার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
গত বছর এটি “নারীবাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা” নামে স্বীকৃতি পায়।
এছাড়াও,
এ বছরের শুরুতে মেক্সিকোর জুয়ারেজ শহরে বাইক চালিয়ে বাড়ি যাবার সময় এক ফেমিনিস্টকে গুলি করে হত্যা করা হয়। (রেফারেন্স-৩২)
জুলাই মাসে আমেরিকার নিউজার্সিতে একজন আইনজীবী, যিনি ফেমিনিজমের বিরুদ্ধে কাজ করতেন, ফেমিনিস্টদের পক্ষ নেওয়ায় এক জজের বাড়িতে গুলি করেন, এতে তার ছেলে মারা যায়। (রেফারেন্স-৩১)
এ ধরণের হত্যাকান্ড কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে হামলার পিছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে আমরা এক্সট্রিম ফেমিনিজমকেই খুঁজে পাই, যাদের দ্বারা হামলাকারী মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এর বাইরে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রায়ই ডানপন্থি সংগঠনগুলো এরকম হামলা করে থাকে। তবে সম্ভবতঃ মুসলিম না হওয়ায় সেরকম মিডিয়া কাভারেজ পায় না।
যেমন, ইউক্রেনে টিভি ক্যামেরার সামনেই কট্টর ডানপন্থীরা এক ফেমিনিস্ট র‍্যালিতে হামলা চালায়। (রেফারেন্স-৩৩)
একইভাবে ‘কোসাক’ নামের অর্থডক্স খৃস্টানদের একটি গ্রুপ রাশিয়ান ফেমিনিস্টদের উপর হামলা চালায়। (রেফারেন্স-৩৪)
৪। নারীবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির উত্থানঃ
পশ্চিমা দেশগুলোতে নারীবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলের উত্থান দ্রুতগতিতে বাড়ছে, বিশেষ করে ইউরোপে। শুধুমাত্র নারীবাদের বিরোধীতার উপর ভর করে কোনো রাজনৈতিক পার্লামেন্টে যাওয়া তো দূরের কথা, অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে রাজনীতি করে যেতে পারবে- এটুকু পর্যন্ত কয়েক বছর আগেও অভাবনীয় ছিলো। কিন্তু এটা ঘটে চলেছে।
এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্পেনের ভক্স (বাংলা অর্থ-কন্ঠস্বর)। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ভক্স শুরু থেকেই অভিবাসন, সমকামীতা আর নারীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো। ৫ বছর আগে পলিটিকাল ফর্মেশনের সময় যাদের সমর্থন ছিলো ২ শতাংশেরও কম, তারা গত বছরের নির্বাচনে তিন মিলিয়ন ভোট পেয়ে পার্লামেন্টের ৫২টি আসনে জয়লাভ করে। একইসাথে পার্লামেন্টের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে যা সরকার গঠন করতে চাওয়া যেকোনো দলের জন্য বড় ফ্যাক্টর। (রেফারেন্স- ১৭)
ভক্স ইউরোপের প্রথম এবং একমাত্র ডানপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে পার্লামেন্টে এত বিপুল জনসমর্থন নিয়ে যেতে পেরেছে।
কিন্তু ভক্স কি এমন করেছে যা তাদের অন্যান্য ডানপন্থি রাজনৈতিক দল থেকে আলাদা করে রেখেছে? কেন স্বঘোষিত উগ্র-ডানপন্থি, রেসিস্ট আর ফ্যাসিস্ট হওয়া সত্ত্বেও মানুষ এরকম আনকোরা একটা দলকে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়েছে?
এ ব্যাপারে অনেকগুলো রাজনৈতিক বিশ্লেষণ পড়েছি, সবাই একটাই কথা বলেছেন, নারীবাদ। শুরু থেকেই প্রকাশ্য নারীবাদের বিরোধীতাই তাদের ইউরোপের অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে আলাদা করেছে। অন্যান্য ডানপন্থি দলগুলো সবাই নারীবাদের বিরোধিতা করে, কোনো কোনো দল সশস্ত্র হামলাও চালিয়েছে, কিন্তু ভক্সের মত টানা নারীবাদ বিরোধী কর্মসূচি কারোরই ছিলো না। (রেফারেন্স- ১৮, ১৯)
ভক্স মানুষের সমর্থন পাওয়ার অন্যতম কারণ নারীবাদের অত্যাধিক বাড়বাড়ন্ত, যার ভুক্তভোগী অসংখ্য মানুষ। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, স্পেনের ৮৭% সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট-রেইপ মামলা মিথ্যা। এর সাথে রয়েছে ডিভোর্স, রিলেশনশীপ জটিলতা আর ব্রোকেন ফ্যামিলি। ভক্স শুরু থেকেই স্পষ্ট করে বলেছে, নারীবাদের উদ্দেশ্য কখনই লিঙ্গসমতা নয়, বরং পুরুষকে ঘৃণা আর ডমিনেশন। তাদের অন্যতম দাবী ছিল, যেহেতু লিংগ-সহিংসতা আইনের এত ভয়ংকর অপব্যবহার হচ্ছে, আর সবসময় পুরুষই ভিক্টিম হচ্ছে, এতে পরিবর্তন আনতে হবে। আর এখন পার্লামেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকায় সেদিকে তারা বহুধাপ এগিয়ে গেল।
তবে ভক্সের সমর্থক শুধু পুরুষরাই নন, বহুসংখ্যক নারীরাও আছেন। এছাড়া, অনেকে এরকম রয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে রেসিজম বা ফ্যাসিজম সমর্থন না করলেও শুধুমাত্র নারীবাদ প্রতিরোধের জন্য ভক্সকে ভোট দিয়েছেন। আগে ফেমিনিজমের ভিক্টিম হওয়া একজন পুরুষ বড়জোর রাস্তায় একটা ব্যানার নিয়ে দাড়াতে পারতো। কিন্তু এখন তাদের পাশে দাড়ানোর মত কেউ পার্লামেন্টেও পৌঁছে গেছে।
ভক্সের এরকম অভুতপুর্ব উত্থান স্পেনের নারীবাদি আন্দোলনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অনেক অন্যায় অর্জন ধুলিস্মাত হওয়ায় এরই মধ্যে নারীবাদিদের মরাকান্না জুড়তে দেখা গেছে। এর আগে তাদের মারাত্মক অপরাধগুলোকে স্রেফ মিসোজিনিক অপপ্রচার আর পুরুষ ভিক্টিমকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিলেও সাধারণ মানুষের এরকম স্বতঃস্ফূর্ত নারীবাদ বিরোধী সমর্থনকে মোটেই উপেক্ষা করতে পারছে না। তাদের এত ভয় পাওয়ার কারণ হলো, কট্টর নারীবাদ-বিরোধী জেনেও যারা ভক্সকে ভোট দিয়েছে তারা কোনো দরিদ্র-অশিক্ষিত-ব্যাকডেটেড দেশের নাগরিক নন, এমন নয় যে তারা ফেমিনিজম বুঝতেন না।
ইতোমধ্যে স্পেনের নারীবাদি আন্দোলন দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসসহ নানা দিবসে তারা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী দিয়ে থাকে। (রেফারেন্স- ১৯)
সাধারণ মানুষ নারীবাদ ঘৃণা করে, এই সত্য শুধু স্পেনেরই নয় পুরো ইউরোপের নারীবাদিদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। কারণ ভক্সের সাফল্য দেখে ইউরোপের অন্যান্য ডানপন্থি দলগুলো একই পথে হাটতে শুরু করেছে।
তবে শুধু পুরুষ নির্যাতনই নয়, কট্টর খ্রিস্টান ডানপন্থি এই দলগুলোর সাথে নারীবাদের রয়েছে মৌলিক শত্রুতা। নিচে কিছু ফ্যাক্ট দেখে নিন-
❒ নারীবাদের জন্মলগ্ন থেকেই খ্রিস্টান ধর্মের সাথে শত্রুতা রয়েছে। বড় উদাহরণ হলো, ফিমেল সাইন হিসেবে যে চিহ্নটি ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ এই চিহ্ন-♀, এখানে ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন এখানে একটি উল্টো ক্রস রয়েছে। যার উৎপত্তিই ছিল ক্রিশ্চিয়ানিজমের বিরোধিতার জন্য।
( ফিমেল সাইন নিয়ে কিছু বিব্লিকাল থিওরি আছে, যা সিরিজের দশম পর্বে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে)
❒ ইউরোপের খ্রিস্টানরা খ্রিস্টানদের জন্মহার অস্বাভাবিক রকম কমে যাবার জন্য নারীবাদকে মোটা দাগে দায়ী করেন। ব্রোকেন ফ্যামিলি, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব, সন্তান বড় করার চেয়ে ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দেওয়ায় সন্তানরা যথাযোগ্য পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠা- এসব নারীবাদেরই কুফল বলে তাদের বিশ্বাস। আর জনসংখ্যা ও জন্মহার কমে যাওয়ায় অনিচ্ছা ও বিরোধিতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কারণে অভিবাসীদের জায়গা দিতে হচ্ছে। অভিবাসীদের বড় অংশ মুসলিম হওয়ায় তা ইউরোপের খ্রিস্টানদের জন্য ভবিষ্যৎ হুমকি বলে দাবী করে আসছে সবগুলো ডানপন্থি সংগঠন।
❒ অ্যাবরশন খ্রিস্টান ধর্মে মানুষ হত্যার শামিল। আর পুরো ইউরোপজুড়ে নারীবাদিরা ‘ফেমিনিস্টস ইউনাইটেড নেটওয়ার্ক ইউরোপ (FUN Europe)’ এর ব্যানারে অ্যাবরশনের বৈধতার জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে, যা ধার্মিক খ্রিস্টানরা মোটেও ভালো চোখে দেখছে না। (রেফারেন্স-১৩)
❒ ফেমিনিস্টদের অন্যতম এজেন্ডা হল সমকামীতা। সমকামীতা প্রায় সব ধর্মেই পাপ বলে গণ্য। আর নারীবাদি নেত্রীদের একটা বড় অংশ লেসবিয়ান হওয়ায় তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ।
এই শত্রুতা আজকের না। বেকায়দায় পড়লেই নারীবাদিরা যে ছেলেভোলানো গল্প শোনায়, “ও আপনি নারীবাদের অর্থই বোঝেন না, নারীবাদ মানে হলো নারী-পুরুষ সমানাধিকার”, তার বাস্তবতা নিজেরাই অসহায় ভিক্টিম হয়ে টের পেয়েছে ইউরোপের পুরুষেরা।
আর তাই ভক্সের উত্থান সময়ের দাবী ছিলো।
৫। চীনে নারীবাদ ও ব্যাকল্যাশঃ
জেনে হয়ত আশ্চর্য হবেন, চীনে একসময় রাষ্ট্রীয়ভাবে “একধরণের নারীবাদ” প্রতিষ্টিত ছিল। ১৯৪৯ সালে মাও সে তুং ক্ষমতায় আসার পর নারীদেরকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন। এইসব কর্মজীবী নারীদের নাম দেয়া হয় “আয়রন গার্ল”। ষাটের দশক থেকে টানা ২৫-৩০ বছর চীনে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতিটি সিনেমায় এরকম একটা করে শক্তিশালী নারী চরিত্র ছিলো। ১৯৯০ সালের হিসাব অনুযায়ী চীনের ৭৩.২% নারী শ্রমঘন পেশায় কাজ করতেন। নারীরা ইন্ডাস্ট্রিতে আসলে উৎপাদন ব্যায় কম হবে, ফলে প্রফিট বেশী হবে, এটা চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি কোনো রাখঢাক না করেই জানিয়েছিল, পশ্চিমাদের মত চলচাতুরির আশ্রয় নেয়নি। (রেফারেন্স-১)
নব্বই দশকের পর থেকে চায়না নারী স্বাধীনতার ব্যাপারে পুরোপুরি ব্যাকল্যাশ নেয়। উগ্র নারীবাদি আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় এবং নারীরা নির্বাহি পদ্গুলোতে যেতে থাকায় বিশৃংখলা দেখা দেয়। কারণ নারীবাদিরা সেই পুরোনো পুরুষ ডমিনেশনের পথে হাটতে শুরু করে। চীনা সরকার তাদের সেই খায়েশ শক্ত হাতে দমন করে। ২০১৯ সালের ডাটা অনুযায়ী, নারীরা চীনের মোট শ্রমশক্তির অর্ধেক হলেও দেশের মাত্র ৯.৭% নির্বাহী পদে তাদের রাখা হয়েছে। এমনকি চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অফ চায়নার সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পলিট-ব্যুরো কমিটির ২৫ সদস্যের মধ্যে নারী মাত্র একজন। এর পরিবর্তে নারীদেরকে ‘নারীসুলভ’ পেশায় নিয়োজিত করার ব্যপারে জোর দেয়া হয়। (রেফারেন্স-২,৩)
প্রসঙ্গতঃ জানিয়ে রাখি, পার্লামেন্টে নারীর সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ আছে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায়। সেখানকার সংসদে নারী সংসদ সদস্য আছে ৬১%, এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি, মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের তিন ভাগের এক ভাগ।
জি জিনপিং ক্ষমতায় আসার পর নিয়মিত নারীবাদিদের অ্যারেস্ট করতে দেখা গেছে। প্রতি বছর নারী দিবস আসলেই এরকম ঘটনা ঘটে। এমনকি চীনের নারীবাদি সংগঠনগুলোকেও কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, চীনের সবচেয়ে বড় আর পুরোনো নারীবাদি সংগঠন, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘অল চায়না উইমেন’স ফেডারেশন’ এর কথা।
চলুন তাদের ওয়েবসাইটের একটা স্টেটমেন্ট পড়ে আসা যাক ‘লেফটওভার উইমেন’দের নিয়ে। (লেফটওভার উইমেন বলতে বোঝায়, তিরিশের ঘরে পা দিয়েছে কিন্তু বিয়ে করে পরিবার গঠন করে নি এমন নারী। বাংলা করলে দাঁড়ায় “এঁটো মহিলা”। এই টার্মটা চীনে এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে, চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় একে ন্যাশনাল ভোকাবুলারিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। )
তাদের ওয়েবসাইট women.org.cn এ নিচের বক্তব্যটা রয়েছে।
“সুন্দরী মেয়েদের একজন ধনী আর সম্ভ্রান্ত পুরুষকে বিয়ে করতে খুব বেশী শিক্ষার দরকার নেই। কিন্তু মোটামুটি কিংবা কুৎসিত দেখতে একজন মেয়েকে এ ব্যাপারে বেগ পেতে হতে পারে। মেয়েরা মনে করে, প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে বেশী লেখাপড়া করা তাদের যোগ্যতা বাড়াবে। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারে না যে, তাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের মূল্যও কমতে থাকে। তাই যতদিনে তারা মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি শেষ করে বেরোচ্ছে ততদিনে ইতোমধ্যে তার বয়স্ক হয়ে গেছে, শুকিয়ে যাওয়া মুক্তার মত। শুধুমাত্র যখন তাদের তারুণ্য শেষ হয়ে যায় কিংবা বয়ফ্রেন্ড ছুড়ে ফেলে তখনই তারা জীবনসঙ্গী খুজতে শুরু করে। আর তাই অধিকাংশ লেফটওভার উইমেন আমাদের সিম্প্যাথি ডিজার্ভ করে না।”
জ্বী, এটা একটা ৭০ বছরের পুরোনো নারীবাদি সংগঠনের অফিশিয়াল বক্তব্য ছিলো। (রেফারেন্স-৪)
৬। ভারতের পুরুষ অধিকার আন্দোলনঃ
স্বর্গের একটা ডেফিনিশন ছিলো এরকম, জার্মান গাড়ী, চাইনিজ খাবার, আমেরিকান বেতন আর ভারতীয় বউ। তবে ভারতীয় বউয়ের ব্যাপারটা এখন আর ঠিক সেরকম নেই। পরকীয়া, স্বামীকে পেটানো আর স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা- এর সবগুলোতে ভারতীয় বউরা এখন র‍্যাংকিংয়ে উপরের দিকে।
আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের রাজনীতি, ধর্ম আর কালচারের কারণে সেখানে অল-আউট-ফেমিনিজম প্রতিষ্ঠা করা দৃশ্যতঃ প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এর পরিবর্তে যা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় আইনের অপব্যবহার, যার সবগুলোর ভিক্টিম প্রায় পুরুষ। ভারতে নারীদের পক্ষে ৪০ এর কাছাকাছি আইন রয়েছে, পুরুষের বেলায় এই সংখ্যাটা শূণ্য।
সবচেয়ে বেশী অপব্যবহার হচ্ছে ৪৯৮(এ) বা যৌতুক আইন এবং ধর্ষণ আইন। এই দুই আইন অগণিত পুরুষের জীবন তছনছ করে দিয়েছে।
পরিসংখ্যান দেখা যাক।
আপনি যতক্ষণে এই লেখাটি পড়ে শেষ করবেন ততক্ষণে ভারতে একজন বিবাহিত পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। ভারতের ৬৮% আত্মহত্যাকারীই পুরুষ, যাদের ৭৪% বিবাহিত। এক বছরে যৌতুক মামলায় আটক হওয়া ২০০,০০০ জনের মধ্যে মাত্র ১৪.৪% এর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা গেছে, যার অর্থ বাকী ৮৫.৬% এর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা নেই। আর ধর্ষণ মামলার ৭০% ই মিথ্যা। (রেফারেন্স-৯, ১০, ১১, ১২)
এইসব মিথ্যা মামলা জন্ম দিচ্ছে দিল্লীতে ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা কিংবা ধর্ষণে অভিযুক্ত হয়ে আত্মহত্যার পর নির্দোষ প্রমাণিত হবার মত মর্মান্তিক ঘটনার। (রেফারেন্স-৭,৮)
অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে তাই পুরুষ অধিকার সংগঠন গুলো একইসাথে নারীবাদ বিরোধী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কারণ নারীবাদি সংগঠনগুলো এইসব মিথ্যা অভিযোগকারীদের আশ্রয়, আইনগত ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
ভারতে ৪০ টির মত পুরুষ অধিকার সংগঠন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংগঠন হলো সেইভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলিস ফাউন্ডেশন বা SIFF। সংগঠনটি ভারতের স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতাও করেছিল।
সমাজ, আদালত সাথে মিডিয়াও পুরুষের বিপক্ষে দাড়ানোয় তাদের জন্য এইসব সংগঠনগুলোই একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে।
ভারতের পুরুষ অধিকার আন্দোলন নিয়ে ভাইস নিউজ একটি রিপোর্ট করেছিল। রিপোর্টার ছিলেন ভারতের জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল এআইবির উৎসব চক্রবর্তি। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, যে কেউ দেখলেই বুঝবে, পুরো রিপোর্টে তিনি ফেমিনিস্টদের পক্ষে পক্ষপাতমুলক কথা বলেছেন। অথচ কিছুদিন পর এই ফেমিনিস্টরা তাকেই ফলস মীটু কেইসে ফাসিয়ে দেয়। (রেফারেন্স-৬)
৭। ইংল্যান্ডের পুরুষ অধিকার আন্দোলনঃ
ব্রিটেনে নারীবাদ এক্সট্রিম পর্যায়ে পৌছেছে। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। এই বছরের জানুয়ারীতে একটা বিজ্ঞাপন সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করা হয় কারণ তাতে কোনো নারী ক্যারেক্টার ছিলো না। (রেফারেন্স- ২১)
অন্ততঃ ৫০% ব্রিটিশ তরুণ মনে করেন নারীবাদিরা বাড়াবাড়ি করছে। (রেফারেন্স- ১৪)
যুক্তরাজ্যে পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করছে জাস্টিস ফর মেন অ্যান্ড বয়েজ। তারা ২০১৫ সালের ইলেকশনে কয়েকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিল। তাদের মেনিফেস্টোর মধ্যে ছিলো বয়েজ স্কুলগুলোতে শুধুমাত্র পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ, লেসবিয়ানদের জন্য স্পার্ম ব্যংকের অ্যাক্সেস বন্ধ করা ইত্যাদি। তাদের মতে, “নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হলে কেবল অর্ধেক সমস্যার সমাধান হবে।” তবে তারা সবচেয়ে বেশী পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘এ মাসে সবচেয়ে মিথ্যুক নারীবাদি’ নামে একটা অ্যাওয়ার্ড চালু করে। (রেফারেন্স- ১৫,১৬)
৮। কোরিয়ার ব্যর্থ নারীবাদঃ
দক্ষিণ ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে লিঙ্গ-সমতার সূচকে সবচেয়ে উপরে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। কোরিয়া ঐতিহাসিকভাবে রক্ষণশীল হওয়ায় নারীবাদ কখনোই মেইন্সট্রিমে আসতে পারে নি। তবে নারীবাদিরা ব্যাপক চেষ্টা করেছিল My life is not your porn, স্পাইক্যম-পর্নবিরোধী আন্দোলনের সময়। এটি ছিল মীটু আন্দোলনের আগে এবং এটিকে মীটু আন্দোলনের জন্য পরোক্ষ প্রভাবক হিসেবে ধরা হয়। আন্দোলনটা সাধারণ নারীদের হলেও নারীবাদিরা একে ছিনতাই করতে চেয়েছিল, একে কেন্দ্র করে পুরুষ-বিদ্বেষ উস্কে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় আসামি যখন ধরা পড়ে, দেখা গেলো তিনি একজন মহিলা। এতে তাদের হতাশ হতে হয়েছিলো। (রেফারেন্স-৫)
নারীবাদবিরোধী আরেকটা বড় প্রতিরোধ আসে কোরিয়ান নেটিজেনদের কাছ থেকে। কোরিয়াতে নারীবাদি আর সমকামীদের ব্যাপক সাইবার বুলিংয়ের মধ্যে পড়তে হয়। বড় উদাহরণ হিসেবে, কেপপ আইডল সুল্লির কথা বলা যেতে পারে। একই কারণে কোরিয়ান সমকামীদের অর্ধেকের বেশী আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
কোরিয়াতে নারীবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে ‘দাং দাং উই’ নামের একটি সংগঠন। একইসাথে এটি কোরিয়ার অন্যতম প্রধান পুরুষ অধিকার সংগঠন। ২০১৮ সালে এক রেস্টুরেন্ট মালিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ আনার পর এই সংগঠনটির জন্ম হয়। তখন থেকে তারা পুরুষ অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছেন। (রেফারেন্স-২৮)
সংগঠনটির প্রধান মুন সাং হো’র মতে, “নারীবাদ এখন আর মোটেও লিঙ্গসমতার ব্যাপার নয়। তারা পুরুষদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করতে চায় এবং এজন্য তারা ঘৃণা আর সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে।”
কোরিয়ান গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেইনমিটার এর এক গবেষণায় দেখা যায়, কোরিয়ার তরুণ প্রজন্মের ৭৬%ই নারীবাদের বিরোধীতা করেন। যা তাদের আগের প্রজন্মের চেয়ে ১০% বেশী। এছাড়া কোরিয়াতে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সকল পুরুষকে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে ২ বছর থাকতে হয়, যা কোরিয়ার মত প্রতিযোগীতামূলক চাকরীর বাজারে তাদের অনেক পিছনে ফেলে দেয়। তাদের এই জায়গা সমবয়সী মেয়েরা দখল করে নেয়, এজন্য ৬৫% তরুণ মনে করেন মেয়েদেরও সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামুলক করা উচিত। (রেফারেন্স-২৯)
এইসব কারণে দাং দাং উইয়ের অধিকাংশ সদস্যই তরুণ যারা কোরিয়াতে নারীবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
৯। কয়েকজন ব্যক্তিত্বঃ
আমার দেখা পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করছেন এরকম কয়েকজনঃ

  1. Paul Elam: মার্কিন লেখক তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি সারাবিশ্বের পুরুষ অধিকার আন্দোলনের সবচেয়ে সক্রিয় মুখ। ২০০৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “এ ভয়েস ফর মেন”- যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরুষ অধিকার সংগঠন। সংগঠনটির ব্লগ A voice for men অনলাইনে পুরুষ অধিকার আন্দোলনের অন্যতম বড় প্লাটফর্ম। একই নামে তাদের একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। ২০১৪ সালে সংগঠনটি ‘হোয়াইট রিবন ক্যাম্পেইন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করে যারা পুরুষের প্রতি সহিংসতা বন্ধে কাজ করে থাকে।
  2. Bill Burr: মার্কিন কমেডিয়ান। নারীবাদ নিয়ে তার কিছু চমৎকার বক্তব্য রয়েছে। তার ইকুয়াল পে নিয়ে একটা বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরছি-
    ” নারীবাদিরা সমানাধিকার চায়, কিন্তু একটা বুফের মত করে। মানে পুরুষ হবার যত সুবিধাজনক জিনিস আছে সেগুলোই নেবে। তারা সমান বেতন চায়। আমি বলছি কেন একই কাজ করে পুরুষ আপনার চেয়ে বেশি বেতন পায়। কর্মস্থলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে ‘নারী ও শিশুরা আগে’ বলে আপনাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে, কিন্তু আমাকে ওই বিপদের মধ্যে থাকতে হবে। আপনার ঘরে আগুন লাগলে নেভানোর জন্য কোনো ফেমিনিস্টকে পাবেন না, ‘আ’ম জাস্ট এ গার্ল’ বলে এড়িয়ে যাবে। আপনারা টাইটানিক সিনেমা দেখেছেন? আমি ফিল্মটাকে ঘৃণা করি কারণ এতে সমস্ত পুরুষ মারা গেছে। আমি বুঝিনা মেয়েরা কেন এটাকে রোমান্টিক মুভি বলে, এটা একটা হরর মুভি। আপনি যখন মুভিটা দেখছেন তখন নিজেকে বড় লাগেজ হাতে সেই মেয়েটাকে ভাবছেন যাকে বোটে করে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর আমি যখন দেখছি তখন নিজেকে ওই স্যুট পরা ভদ্রলোককে ভাবছি যে পাটাতন ভেঙ্গে পানিতে পড়ে মারা যাচ্ছে।”
    ১০। সংযুক্তিঃ
    আমার বেশ পুরোনো একটা লেখা, সঙ্গতিপূর্ণ মনে হওয়ায় এখানে যুক্ত করে দিলাম-
    ” একটা কথা আছে, পৃথিবীর ইতিহাস দুটো জিনিসে বোঝাই। একটা হচ্ছে যুদ্ধ, আরেকটা পুরুষ নারীর প্রেমে পড়ে কি কি করেছে সেটা। কিন্তু এখন নারীবাদীদের অভিযোগ, পুরুষ কেবল নারীদের সেক্স অবজেক্ট হিসেবে দেখে। ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখা যাক।
    একটা বিষয় খুব ভালো করে লক্ষ্য করুন। আমরা শিশুদেরকে কেন ভালোবাসি? কারণ তারা নিষ্পাপ আর তার চেয়েও বড় কারণ তারা অক্ষম।
    আবার দেখুন, একটা লাইনে একজন প্রতিবন্ধি এসেছে। সবাই তাকে সামনে এগিয়ে দিলো। কেউ কেউ ভালো দুয়েকটা কথা বলল। কেন? ওই অক্ষমতার কারণে।
    মহান আল্লাহ নারীদেরকে পুরুষের চেয়ে দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন।
    এরমানে কি তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে?
    না।
    বরং এটাই তো সেই কারণ যে কারণে পুরুষ তাদের এত ভালোবাসে। যেমন বাস থামলে আমরা নারীদের আগে নামতে দিই, কারণ আমরা জানি তারা দুর্বল, এত ভিড়ে তারা ঠিকঠাক নামতে পারবে না। এটা নিয়ে কেউ অভি্যোগও করে না। একই কারণে কোথাও নারীকে পেটানো হয়েছে শুনলে আমাদের যত খারাপ লাগে, পুরুষের বেলায় অত লাগে না। কারণ ওইটাই।
    নারীবাদ শেখাচ্ছে নারী পুরুষ সমান, পুরুষের কোনো দরকার নেই, কেন পুরুষের অধীনে থাকবো।
    আপনি একটা পুরুষকে বললেন, তুমি মোটেও আমার চেয়ে বড় নও, তোমার কোনো সাহায্য আমার লাগবে না, তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো কেন? এরকম মেয়েকে কোনো পুরূষ ভালবাসবে?
    পুরুষটা তো আপনার সামনে পুরো দুনিয়া এনে দিতে প্রস্তুত ছিল, ইতিহাস বোঝাই হয়ে আছে এরকম ঘটনায়।
    কিন্তু তার আগে তো তার কছে নিজেকে সমর্পণ করার দরকার ছিল। আপনি নিজেই ঘাড়ত্যাড়ামো করে সব নস্ট করেছেন।
    আর ঠিক এটাই ঘটেছে ‘ফেমিনিস্ট’ পশ্চিমা সমাজে।”
    প্রসঙ্গ আমাদের দেশঃ
    আমাদের দেশে পুরুষ অধিকার রক্ষায় সবচেয়ে সক্রিয় সংগঠনটির নাম “বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন”। একইসাথে পুরুষদের স্বার্থরক্ষায় এটি দেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন, দেশের প্রত্যেক বিভাগে তাদের কমিটি রয়েছে এবং জেলা ও উপজেলা কমিটি প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের তিন ধরনের মেম্বারশীপ রয়েছে। যে কেউ চাইলে এই সংগঠনের সদস্য হতে পারেন।
    তবে সদস্য নয় এমন ব্যক্তিকেও তারা সাহায্য দিয়ে থাকেন। পারিবারিক, পরকিয়া, তালাক ও বিভিন্ন কারণে নির্যাতিত পুরুষদের তারা প্রতিদিনই সহায়তা করে থাকেন। এছাড়া পুরুষ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুতে তাদের সামাজিক কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়। পুরুষদের জন্য বিদ্যমান নানা সমস্যার কার্যকর সমাধানের লক্ষে তাদের ২১ দফা দাবী রয়েছে।
    সংগঠনটির মতে, অপরাধীর লিংগ বিবেচনযোগ্য নয়। একজন পুরুষ যেমন অপরাধী হতে পারেন, নারীও তেমনি। একজন নারী নির্যাতিতা হলে তার একটা সামাজিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু একজন পুরুষ নির্যাতিত হলে সামাজিক সমর্থন দুরের কথা, একজন পুরুষও যে ভিক্টিম হতে পারে সমাজ এটাই মানতে চায় না।
    তবে পুরুষ অধিকার আন্দোলনের পাশাপাশি বাংলাদেশে কাউন্টার ফেমিনিজমের বড় কাজটা করে দিচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি। হাজার হাজার এনজিও, শত কোটি টাকা বিনিয়োগ আর গত কয়েক যুগ টানা পরিশ্রমের পরও নারীবাদ এদেশে সার্বজনীন সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র গলাবাজির জোরে নারীবাদ কেবল স্মার্টফোনধারী নারীদের একটা অংশের কাছে পৌছতে পেরেছে, বিরাট অংশ যেই প্রান্তিক নারীরা, তাদের কাছে বিন্দুমাত্র গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ধর্ষণকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলেও তাদের কখনো ধর্ষিতার চিকিৎসা, পুনর্বাসন ইত্যাদি কল্যাণকর ইস্যুতে দেখা যায় নি।
    নারী অধিকার বিক্রি করে খাওয়া এদেশীয় নারীবাদিদের নারীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বাস্তব ইস্যুগুলোতে আশ্চর্য রকমের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি ব্যাপারটা নিয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্ট পর্যন্ত হতাশা প্রকাশ করে। (রেফারেন্স- ২০)
    এর পাশাপাশি রয়েছে উদ্ভট নেতৃত্ব। আমাদের দেশের নারীনেত্রীরা বাহ্যিক পরিচ্ছদ আর কলুষিত ব্যাক্তিজীবনের কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। আর এই কারণে তাদের টার্গেট করা কার্যকর জনশক্তির কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা শূণ্যের কোঠায়।
    স্বামী-সন্তান-সংসার নিয়ে নির্ঝঞ্জাট পারিবারিক জীবনযাপন করা একজন নারীকে স্বামী পরিত্যাক্তা-বিকটদর্শন একজন নারীবাদি অস্তিত্বহীন-বায়বীয় পুরুষতান্ত্রিক শিকলের কথা বোঝাতে ব্যর্থ হবেন এটাই স্বাভাবিক, হয়েছেও তাই।
    এদেশীয় নারীবাদিরা তাই এখন ইসলামের ফ্লেভার মিশিয়ে ‘সুইট’ নারীবাদ প্রচার করতে শুরু করেছে। অথচ এই মাটিতে নারীবাদের জন্মই ইসলামের বিরোধীতা করে। এত হিপোক্রসি আর কোথাও দেখতে পাবেন না। নারীবাদি ওয়েবসাইটগুলোতে গেলে আপনি একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করবেন- এক পোস্টে লেখা ইসলাম নারীকে ঘরবন্দী করেছে, নারীর অধিকার ফিরিয়ে দেবার ‘অপরাধে’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অরুচিকর ভাষায় আক্রমণ, পরের পোস্টেই আছে ইসলামে নারীর অধিকার, সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদির পাশাপাশি নানান মনগড়া ব্যখ্যা ইসলামের নামে চালিয়ে ইসলামকে একটি নারীবাদি ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা, নারীবাদ ধর্মবিরোধি হওয়ায় মেয়েরা খাচ্ছিল না-তাই।
    ধর্মবিরোধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অস্তিত্বহীন হবার আশঙ্কায় এখন সেই ধর্মের আবডালে এসেই আশ্রয় নেওয়া। আর ঠিক এভাবেই এদেশে নারীবাদিদের শোচনীয় নৈতিক পরাজয় ঘটেছে।
    কিছু কমেন্টস
    এগুলো সব র‍্যান্ডম ইউটিউব কমেন্টের বাংলা অনুবাদ, যা মোটেও আমার ব্যক্তিগত মতামত নয়।
    ১) “আমার মা বলেছিলেন, বাবা, কোনোদিন কোনো নারীর গায়ে হাত তুলো না। তবে কোনো নারী যদি তোমার গায়ে হাত তোলে, তাহলে সে নারী নয়।”
    ২) “নারীবাদিরা সমান অধিকার চায়। আর তাই কোনো পুরুষকে অন্যায় আঘাত করলে পুরুষও যদি পাল্টা আঘাত করে তাহলে তার মোটেও আশ্চর্য হওয়া উচিত নয়।
    ৩) “হাস্যকর ব্যাপার হলো, নারীবাদিরা পুরুষকে ঘৃণা করে, সারাক্ষণ তাদের দোষ খোঁজায় ব্যস্ত থাকে, পুরুষের সবকিছুকেই বিষাক্ত বলে। আবার সবকিছুতে পুরুষের মত হওয়াকে স্বাধীনতা মনে করে।”
    এতদূর পর্যন্ত পড়েছেন, অনেক ধন্যবাদ। মা’আসসালাম।

রেফারেন্স

১। https://www.youtube.com/watch?v=QarOjjKfseo

২। https://www.bbc.com/news/world-asia-41652487

৩। https://www.catalyst.org/…/women-in-the-workforce-china/

৪। https://www.youtube.com/watch?v=6mX_qSi3Ei0

৫। https://www.nst.com.my/…/female-co-founder-south-korean…

৬। https://www.youtube.com/watch?v=fKSqmwDzFxA

৭। https://www.youtube.com/watch?v=MdZ23P7B_DQ

৮। https://tinyurl.com/y879he9x

৯। https://tinyurl.com/

। https://tinyurl.com/y3e9ks4q

১১। https://www.sbs.com.au/…/80-per-cent-of-all-dowry-cases…

১২। https://www.dnaindia.com/…/report-one-married-man…

১৩। https://tinyurl.com/y4vds5z5

১৪। https://www.globalcitizen.org/…/half-of-young-men…/

১৫। https://j4mb.org.uk/

১৬। https://www.shoutoutuk.org/…/misogyny-and-the-election…/

১৭। https://www.aljazeera.com/…/anti-feminist-anti-migrant…

১৮। https://www.theatlantic.com/…/spain-vox-feminism/587824/

১৯। https://www.youtube.com/watch?v=Wzjf9QchnAo

২০। https://www.jagonews24.com/law-courts/news/615270

২১। https://www.eurogamer.net/…/2020-01-08-pc-specialist-ad…

২২। https://www.youtube.com/watch?v=QvVsJPMREL4

২৩। https://www.youtube.com/watch?v=zRQI2DEtu2I

২৪। https://www.debate.org/…/should-it-be-socially…

২৫। https://www.telegraph.co.uk/…/Women-hitting-your-man-is…

২৬। https://www.youtube.com/watch?v=qUUT2TCxU-o

২৭। https://exposingfeminism.wordpress.com/mgtow-manifesto/

২৮। https://edition.cnn.com/…/korea-angry-young…/index.html

২৯। https://tinyurl.com/y5bbaal4

৩০। https://www.youtube.com/watch?v=pRPtPbAPNgU

৩১। https://www.usatoday.com/…/esther-salas…/5470802002/

৩২। https://www.npr.org/…/a-feminist-is-murdered-in-mexico…

৩৩। https://www.youtube.com/watch?v=-OE45-LgcWI

৩৪। https://www.youtube.com/watch?v=NyYuaCQYHqI

৩৫। https://www.youtube.com/watch?v=MPYAM9AfRHo…

৩৬। https://www.vice.com/…/red-dead-redemption-2-players…

Related Post

One Reply to “পর্ব ৮- যখন পুরুষ পাল্টা আঘাত করে”

  1. আফিয়া আফসানা
    আজকের নারীবাদীরা আমাদের কি শেখাচ্ছে,,,? শেখাচ্ছে যেন আমরা আমাদের কাজকে ছোট করে দেখি।এসব ভন্ড মানুষগুলোই আবার বলে কোন কাজ ছোট নয়,,,,,,,এই ভন্ডদের কিছু ভন্ডামি তুলে ধরলাম,,
    ? বিবাহিত কথাতেই নাকি তাচ্ছিল্য করার ব‍্যপার থাকে
    ? রান্না করা তুচ্ছ কাজ
    ? সন্তান লালন,পালন তুচ্ছ কাজ
    ? ঘরের দেখাশোনা তুচ্ছ কাজ
    একটু ভেবে বলুন তো এই কাজগুলো কি সত্যিই তুচ্ছ করার মত। ভন্ডরা শুধু বলে টাকা উপার্জন, আর টাকা উপার্জন। মানে তারা নারীকে টাকা দিয়ে মাপতে চায়,,,যে যত টাকার মালিক সে তত সম্মানিত।
    আমি বলছিনা যে নারীরা টাকা উপার্জন করতে পারবে না,,অবশ্যই পারবে,,,,কিন্তু আমি এটা বলছি টাকা উপার্জনের জন্য এই কাজগুলোকে অবহেলা করার কোন সুযোগ আছে কি???
    পৃথিবীতে ভালো খারাপ দুধরনের মানুষ ই রয়েছে,,, কিন্তু ভন্ড নারীবাদীরা আপনার বাবার ,ভাইয়ের, স্বামীর এবং ছেলে সন্তানের সাথে আপনাকে যুদ্ধে নামিয়ে দিবে। যেন তামাম পুরুষের সাথে যুদ্ধ করাই নারীর একমাত্র লক্ষ্য। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন এসব নারীরা নিজেদের সঙসারে সুখি নয়,,,তাই তারা চায় অন‍্য নারীরাও যেন সুখি হতে না পারে,,,
    আরে সঙসারে ঢুকলে প্রতিটা মানুষকেই কম বেশি মানিয়ে নিতে হয়। কেন একজন পুরুষ কি মানিয়ে নেয় না? কিন্তু ভন্ড নারীবাদীরা শুধু নারীদের মানিয়ে নেয়াকে পুজি করে ব‍্যবসা করে,,,,
    আর ইসলামের নাম শুনলে তো চুলকানির শেষ নেই,,,অধিকার অধিকার বলে মুখে ফেনা তোলা এসব ভন্ডরা তো জানেই না অধিকার এর মানে কি,,,,
    তাই বলছি নারীদের ঘরের কাজকে ছোট করে কোন কথা বলবেন না,,,,যে যার মত উপার্জন করে করুক,,,কিন্তু নারীদের সঙসারের কাজকে টাকা উপার্জনের মুখোমুখি করবেন না,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *