? নারীবাদীরা মেয়েদের পোশাক খুলতে চায় !
? নারীবাদীরা মেয়েদের ঘর থেকে বের করতে চায় !
? নারীবাদীরা মেয়েদের মাদকাসক্ত করতে চায় !
? নারীবাদীরা মেয়েদের সস্তা পণ্য বানাতে চায় !
? নারীবাদী ছেলেরা মেয়েদের ভোগ করতে চায় !
••• এজন্যই তারা নারীবাদী…!!!!!!
.
.
.
.
না ভাই না… এগুলো হলো ‘ওয়েস্টার্ন ফেমিনিজম’ সম্পর্কে একেবারে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ! প্রলেতারিয়েত সেন্স !
যেহেতু আপনি একজন শিক্ষিত-সচেতন মানুষ… তাই আপনার উচিত এই ‘নারীবাদ’ সম্পর্কে কিছু তাত্ত্বিক জ্ঞান রাখা ! তাদের মূল এজেন্ডা গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা, তাদের মতাদর্শ ও ইসলামের দ্বন্দ্বের বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান রাখা, এবং তাদের সেগুলো বাস্তবায়নের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে কিছু না কিছু জানা ! তবেই না আপনি ‘নারীবাদ’ নামক এই ফিতনার জাল থেকে পরিপূর্ণরূপে বাঁচতে পারবেন… বাঁচাতে পারবেন নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন-, স্বামী-স্ত্রীকে !
তবে যদি এখানে একেবারে সংক্ষেপে কিছু বলি, তবে বলতে হয়, এই মুহূর্তে নারীবাদ বলতে যা বুঝায়, আমাদের সমাজে তার অন্যতম দুটি মূল লক্ষ্য হচ্ছে ‘বিভিন্ন ছোট ছোট লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে—
[১] আমাদের সমাজে ‘পরিবারব্যবস্থা’কে ভঙ্গুর করে তোলা, ও,
[২] আমাদের সমাজ থেকে ‘বিয়েপ্রথা’কে উৎখাত করা !
অর্থাৎ আমাদের মাঝে ধীরে ধীরে ‘পরিবারব্যবস্থা’ ও ‘বিয়েপ্রথা’র ধারণাকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা… যা সমাজের মানুষকে এগুলোর প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলবে ! বিশেষ করে মেয়েদের ‘পরিবার গঠন ও বিয়ে’ থেকে দূরে সরতে আগ্রহী করে তুলবে ! এগুলোর বন্ধন থেকে মুক্ত করবে !
অর্থাৎ—
• সমাজের মেয়েদের দেরিতে বিয়ে করতে উৎসাহিত করা,
• দেরিতে বাচ্চা নিতে উৎসাহিত করা,
• যথাসময়ে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করা,
• নিজের বাচ্চাকে নিজে প্রতিপালন না করে ডে-কেয়ার সেন্টার, গৃহকর্মী বা অন্যের মাধ্যমে প্রতিপালনে উৎসাহিত করা,
• ঘর বা পরিবারের অভ্যন্তরীণ কাজ সমূহকে ‘কাজ’ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে কেবল অর্থনৈতিক-বস্তুগত লেনদেন (অর্থ উপার্জন)’র সাথে জড়িত বহিরাগত চাকরি ও ব্যবসাকে কাজ হিসেবে দেখতে শেখানো… এবং এগুলোতে বেশি উৎসাহিত করা…
ইত্যাদি ইত্যাদি ছোট বিষয়কে প্রমোট করে, বা ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে মেয়েদের ‘পরিবার-ব্যবস্থাপনা’ থেকে পরোক্ষভাবে দূরে সরিয়ে দেওয়াই এদের টার্গেট ! অর্থাৎ যেভাবেই হোক, মেয়েদের বিয়ে পেছানো বা পরিবার গঠনকে বিলম্বিত করা !
[৩] তাছাড়া আরো আছে নারীদের সরাসরি কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘পুঁজিবাদের পুজি বৃদ্ধি’সহ… সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোগের চাহিদা বৃদ্ধি করে মাথাচিকন-পুজিওয়ালাদের জনমানুষের ‘মনস্তত্ত্ব ও ভোগ’ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশ্য !
এই পয়েন্টটি অল্প কথায় বোঝানো অসম্ভব, বিস্তারিত পড়ালেখা প্রয়োজন, তাই কিছু বলছি না। আর এটাই বাস্তবে সবচাইতে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ! তবে জেনে রাখুন, পরিবার ভাঙলে পুজিবাদের লাভ ! পুঁজিবাদের পুজি বৃদ্ধির পথে সবচাইতে বড় বাধাগুলোর একটা হচ্ছে পরিবারব্যবস্থা ! অন্যান্য পয়েন্টগুলো এই পয়েন্টের অনুষঙ্গ হিসেবেই আসে মূলত !
[৪] এছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বে গৃহীত বর্তমান সময়ের সবচাইতে বড় এজেন্ডাগুলোর একটা… অর্থাৎ ‘ডিপপুলেশন এজেন্ডা’ (NSSM-200) বা তথাকথিত সমস্ত থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি ও মুসলিম দেশগুলোতে জনসংখ্যা হ্রাসের এজেন্ডা বাস্তবায়নেও কাজ করছে এই নারীবাদ !
যে কারণে দেখবেন মুসলিম দেশগুলোর জনসংখ্যা কমাতে কর্মরত যেসব বিদেশি এনজিওগুলো গণমানুষের মাঝে ‘পরিবার পরিকল্পনা’র ধারণা প্রচারে কাজ করে… তারাই আবার কোনো না কোনোভাবে ‘নারীবাদ’ প্রচারে ব্যস্ত থাকা এনজিও গুলোর সাথে কোন না কোনভাবে জড়িত !
এই পয়েন্টটি বুঝতেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দরকার ! এটার বাস্তবায়নেও পয়েন্ট [১] ও [২]-কে কাজে লাগানো হয় ! যেহেতু খুব দেরি করে পরিবারগঠন, বিয়ে ও বাচ্চা উৎপাদনের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে একটি জনগোষ্ঠীর প্রজনন ক্ষমতাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে ! অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবেই একটি জনপদে সন্তান উৎপাদনের সংখ্যা কমে যায় !
অসংখ্য এনজিও, ব্লগ, ওয়েবপোর্টাল, সংগঠন, মিডিয়া, টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন নানাভাবে, নানা নামে, বিভিন্ন আঙ্গিকে নারীবাদের চাদরে উপরে দেখানো ‘•’ চিহ্নিত এজেন্ডা গুলোকে সাধারণ মানুষের মাঝে আলাদা আলাদাভাবে প্রমোট করে থাকে… যেটার সামগ্রিক ফলই হচ্ছে পয়েন্ট ১, ২, ৩, ৪ এর বাস্তবায়ন !
আর সব মিলিয়ে এই নারীবাদ তার নিজের আদর্শকে গণমানুষের মধ্যে প্রচার করে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীশিক্ষা, ক্ষমতায়ন, সমতায়ন, কনসেন্ট থিউরী, মুক্তকাম সংস্কৃতি, মুক্তযৌনতা— ইত্যাদি ইত্যাদি পশ্চিমা ভারী ভারী পরিভাষার মাধ্যমে !
বাস্তবে এগুলো মূলত পরিভাষা… কোনো নিরীহ শব্দ নয় ! একেকটি শব্দের পিছনে রয়েছে এক-একটি গোটা দর্শন ! বিশেষ কিছু একটার ধারণা ! বিশাল এজেন্ডার ধারা !
তাদের কথা গুলো শুনলে মনে হতে পারে তারা নির্যাতন-নিপীড়ন-শোষণ নারীদের রক্ষায়… নারীদের হারিয়ে যাওয়া অধিকার বাস্তবায়নে… নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যই এসব করছে… কিন্তু যারা এমনটা সত্যি সত্যি বিশ্বাস করে বসে আছে তাদের জন্য শুধুই ‘এক বালতি’ সমবেদনা !!!
বাইরে বাইরে তাদের কাজগুলো খুব সুন্দর মনে হতে পারে… মনে হতে পারে সত্যিই সমাজের নির্যাতিত-শোষিত নারী ও শিশুদের জন্য তারা কর্মরত… তবে তাদের মূল এজেন্ডা বুঝতে হলে তাদের এমন ছোট ছোট সুন্দর সুন্দর কাজ ও পদক্ষেপগুলোকে যোগ করে সেগুলোর ‘সামগ্রিক ফল’টাকে দেখতে হবে !!!
আর এগুলো সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানটুকু যদি না রাখেন, তাহলে খুব সহজেই এই নারীবাদের ফিতনায় জড়িয়ে পড়বেন… তাতে কোন সন্দেহ নেই ! একেকটি ধারণার পেছনে রয়েছে স্পষ্ট কুফর… নিজের অজান্তে যেগুলোকে সমর্থন করলেই হয়ে যেতে পারেন মুরতাদ !!! কাফির !!!
••• যেমন একদম সহজ একটি উদাহরণ দেই…।
পরিবারব্যবস্থা’ ও বিয়েপ্রথা’ ইসলামের জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ-তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, যার অনুপস্থিতিতে ইসলামের কোনো অস্তিত্বই নেই ! হ্যাঁ, ‘ইসলামের শেষ দুর্গ’ বলা হয় এই পরিবারকে, আর পরিবার গঠনের মাধ্যম হচ্ছে বিয়েপ্রথা ! যেখানে ‘বিয়ে বা পরিবার’ দুটোর একটা অনুপস্থিত, সেখানে ইসলাম বলতেও কিছু নেই !
এই দুইটি জিনিসের একটা যদি কোন সমাজে ভঙ্গুর হয়ে যায়… সেখানে ইসলাম অল্প সময়ের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহই নেই !
ইসলাম যদি একটি আস্ত দালান হয়, তবে সেই দালানের একেকটি ইট হচ্ছে এই পরিবার ! আর তাই যদি কিনা ‘বিয়েপ্রথা’ বা ‘পরিবারব্যবস্থা’র ওপর কোনো আক্রমণ আসে, তবে তা মূলত ইসলামের অস্তিত্বের উপরেই আক্রমণ !
আর এই মুহূর্তে নারীবাদ প্রচারের নামে এটাই হচ্ছে সারা বিশ্বে…। মুসলিম বিশ্বের উপর সশস্ত্র আক্রমণের চাইতে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আদর্শিক আক্রমনটাই আজ বেশি হচ্ছে !!!
• মেয়েদের গণহারে ঘর থেকে বের করে আসা,
• ইসলামী বা বাঙালি পোশাক সংস্কৃতিকে পশ্চিমা পোশাক সংস্কৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপন,
• মেয়েদের দেরিতে বিয়ে ও দেরিতে বাচ্চা নিতে আগ্রহী হওয়া,
• বুদ্ধিবৃত্তিক এজেন্ডাসমূহ বাস্তবায়নের ফলে জাগতিক ক্ষতি সত্ত্বেও জোরপূর্বক মেয়েদের গণহারে চাকরি ক্ষেত্রে উঠে আসা,
• নামে মুসলিম হলেও পৃথিবীটাকে ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী ‘জাগতিক-বস্তুবাদী’ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা,
• পর্দার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠা….. ইত্যাদি ইত্যাদি কেবল অনুষঙ্গ…!
বিরাট বিরাট এজেন্ডা বাস্তবায়নের সামান্য প্রতিফল মাত্র…!
মূল এজেন্ডার ধারের কাছেও এগুলো নেই… বড় বিপর্যয় সামনেই আসছে… তাই এগুলো দেখেই কাত হয়ে যাবেন না !!!
আর এই লড়াইটা ইসলাম ও নারীবাদের মধ্যে নয়, ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থার মধ্যে ! পুজিবাদ— বর্তমান সময়ে ইসলামী জীবনব্যবস্থার সবচাইতে বড় শত্রু ! আর নারীবাদের এক্সিলারেটর হচ্ছে এই পুজিবাদ, বস্তুবাদ ও ভোগবাদ ! নিজের স্বার্থ আদায়ে বিশ্বব্যাপী নারীবাদকে ছড়িয়ে দিচ্ছে এই পুজিবাদ ! তাই একই সাথে ‘নারীবাদী’ ও ‘মুসলিম দাবিদার’ হওয়ার কোনো সুযোগই নেই !
তবে কথা হচ্ছে সবকিছুতে মেয়েরাই কেন আসছে, পরিবার-বিয়ের সাথে ছেলেরাও তো জড়িত… খেয়াল করে দেখুন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের মা-বোন-স্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা যতটা সহজ… ছেলেদের ততটা নয় ! মাসিহাহ দাজ্জালের সবচেয়ে বেশী অনুসারী দলও হবে মেয়েদের…!!! বুঝতেই পারছেন সেই দলটিতে কারা থাকবে…!!!
▪ তাই অন্তত ঈমান রক্ষার্থে হলেও এবিষয়ে নূন্যতম কিছু পড়ালেখা থাকা দরকার…। নারীবাদ নামক এই বুদ্ধিবৃত্তিক-অদৃশ্য ফিতনাহ থেকে বাঁচতে তাই আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী-ছোটভাই হিসেবে কিছু বই সাজেস্ট করবো, সুযোগ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন !!!
▪ এই পশ্চিমা বিষাক্ত নারীবাদ সম্পর্কে জানতে যেসব বই পড়তে পারেনঃ
••• অবশ্যপাঠ্য পাঁচটি বই, প্রত্যেক শিক্ষিত মুসলিমের জন্য যেগুলো ফরজ-জ্ঞান করে পড়া উচিত !
[১] “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২” — ডাঃ শামসুল আরেফীন (সমর্পন)
[২] “নারী স্বাধীনতার স্বরূপ” — ডঃ ইয়াদ আল কুনাইবী (শব্দতরু)
[৩] “বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে বিবাহ ও নারীবাদ” — ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক (বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুকস)
[৪] “হিউমান বিয়িং : শতাব্দীর বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব” — ইফতেখার সিফাত (নাশাত)
[৫] “চিন্তাপরাধ” — আসিফ আদনান (ইলমহাউজ)
••• আরো কিছু বই, বিস্তারিত এবিষয়ে ও সমকালীন বিভিন্ন প্রসঙ্গ বিষয়ে জানতে অবশ্যই লাগবে !
[৬] নিশ্চিহ্ন হওয়ার হুমকির মুখে ইসলামী মূল্যবোধ — ইঞ্জিনিয়ার মোঃ এনামুল হক
[৭] মানসাঙ্ক — ডাঃ শামসুল আরেফীন (সমর্পণ)
[৮] ভ্রান্তিবিলাস — জাকারিয়া মাসুদ (সমর্পণ)
[৯] সমতাই কি জাস্টিস ? — ইয়াকুব আলী (রেইনফল)
[৮] লজ্জা — কামরুল আহমেদ (নবডাক)
[১০] বিজয়ীনি — জাফর বিপি (নিয়ন)
— সবগুলোই কেবল নারীবাদ বিষয়ক নয়… নারীবাদ ব্যতিরেকে সমকালীন প্রসঙ্গ নিয়ে লেখা বইও এখানে আছে… তবে প্রত্যেকটাই নারীবাদকে বুঝতে সহায়তা করবে ইনশাআল্লাহ !
— কোনটার পিডিএফ না থাকার জন্য অগ্রিম দুঃখিত ! তবে যেভাবেই হোক… একা বা কয়েকজনে মিলে… টাকা জমিয়ে… বা ধার করে… প্রথম পাঁচটি বই অবশ্যই পড়ার চেষ্টা করবেন ! প্রথম পাঁচটি বইয়ের জন্য মোট ১০০০ এর মতো লাগবে !
— তালিকাটি আপাতত সেভ করে রাখুন, বা স্ক্রিনশট নিয়ে রাখুন।
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক, চলমান ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শরীক হোন আপনিও !!!
জাযাকাল্লাহু খাইরান !!
© Adiat.