বাংলা মিডিয়ামে ফেইসবুক পেইজ/গ্রুপ/ইউটিউব সহ কতো কিছু তালাশ করলাম। কিন্তু, উসূলুল ফিকহ তথা ফিকহের মূলনীতি নিয়ে কোন ক্লু পেলাম না । কোন গ্রুপ, পেইজে বা ব্লগে এসব বিষয়ে লেখালেখি পেলাম না৷
অথচ, অধিকাংশ ফেইসবুকবাসী মুফতি !
আচ্ছা, উসূলুল ফিকহ বা ফিকহের মূলনীতি জানা ছাড়া মানুষ এতো সহজে মুফতি হয়ে যায় কি করে ?
যাইহোক ,
একটা ঘটনা বলে বলি।
একদিন একজন জেনারেল শিক্ষিত স্যার জানতে চাইলেন যে, শারীয়া অনুসরণ করতে গিয়ে কোরান ও হাদীস ছাড়া তৃতীয় কোন বিষয়ের প্রয়োজন আছে কি না ?
আমি বিনয়ের সাথে বললাম – পূর্ণাঙ্গ শারীয়া অনুসরণ করতে হলে আগে শারীয়া জানতে হবে। আর শারীয়া পূর্ণাঙ্গ জানতে হলে কোরান ও হাদীসের পাশাপাশি ফিকহী ও উসূলী কিতাবাদি পড়তে হবে। নতুবা লেইকিং থেকে যাবে।
তিনি খানিকটা রেগে গিয়ে বললেন – এসব কি বলেন ? রাসূল সাঃ কি কখনো কোরান-হাদিসের বাহিরা ফিকাহ কিংবা উসূল মানতে বলেছেন ? যা বলেন নাই ; তা আমরা অনুসরণ করবো কেন ?
আমি অবস্থা বেগতিক দেখে মুচকি হেসে বললাম – ঠিক বলেছেন, স্যার ! শারীয়া অনুসরণ করার জন্য কোরান-হাদিস যথেষ্ট । ফিকাহ আর উসূলের নূন্যতম প্রয়োজন নাই। আর এগুলা পড়ার/জানার জন্য রাসূল সাঃ বলেও যান নি৷ আপনিই ঠিক !
হালকা-পাতলা, স্যারের, মন-দিল খুশ করে চেহারায় একটা মৃদু হাসি রেখে কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলাম –
আচ্ছা স্যার, শারীয়া অনুসরণ এর জন্য নিচের কয়েকটা পয়েন্ট জরুরি কি না, একটু কাইন্ডলি জানাবেন –
→ ফারজ
→ ওয়াজীব
→ সুন্নাহ
→ নাফল
→ মুস্তাহাব
→ মাকরুহ
→ হালাল
→ হারাম
→ সহীহ
→ বাতিল
আরেকটু ক্লিয়ারিফাই করে জিজ্ঞেস করলাম যে, এই মাত্র যেসব বিষয় উল্লেখ করলাম, তা কি শারীয়া মানার জন্য জরুরি মনে করেন আপনি ?
উচ্চশিক্ষিত স্যার মাথা নেড়ে বললেন – এসব তো শারীয়া অনুসরণে অপরিহার্য বিষয়৷ আপনি হালাল/হারাম, ফারজ/ওয়াজীব, সুন্নাত/নাফল ইত্যাদি না জানলে শারীয়াকে পূর্ণাঙ্গরুপে অনুসরণ করবেন কিভাবে ?
তিনি উল্টো আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন । আমিও হালকা মাথানাড়া দিয়ে বললাম – হুজুররা বলতে শুনেছি যে, এগুলা জানা জরুরি, যেমনটি আপনি বলতাছেন।
কিন্তু, স্যার,,,
তিনি বললেন – কিন্তু, আবার কী ? খানিকটা চোখ বাকিয়ে আমার দিকে মুখ ব্যাদন করে বললেন – বলেন, কি বলতে চাচ্ছেন ?
আমি বললাম – উপরের বিষয়গুলো শারীয়া মানার জন্য জরুরি ঠিক। তবে, কোরান-হাদিসে তো প্রতিটা মাসাইলের এভাবে বর্ণনা চিরুনি অভিযান চালিয়েও আমি খুঁজে পাই নাই। আল্লাহ তা’লার পবিত্র কোরানে ও রাসূল সাঃ এর পবিত্র শুধু বিষয়াবলির বর্ণনা আছে৷
তবে কোনটা ফারজ আর কোনটা ওয়াজীব, তা তো পরিস্কার কিছু বলা নাই। তাহলে এবার কি কোরান-হাদিসের বাহিরে গিয়ে উপরোক্ত বিষয়াবলী তথা –
→ ফারজ
→ ওয়াজীব
→ হালাল
→ হারাম
→ সুন্নাত
→ নাফল
ইত্যাদি বর্ণিত বিষয়াবলি মানব ?
স্যারের, এবারের মতো, চোখ কপালে কিছুটা চলে গেলো। মনে হচ্ছিল যে, দীর্ঘদিন পরে ঘুম ভাঙ্গল। খানিকটা বিস্ময় হয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
বুঝলাম, এসব কোরান-হাদিসে পুঙখানুপুঙখ নাই ; তবে এসব কোথায় থেকে এলো ? কে আবিস্কার করলো ?
আমি বললাম – বলব কী ? বললে তো আবার আপনি রাগ করবেন না ?
তিনি মাথা নাড়া দিয়ে বললেন – মোটেও না !
আমি বললাম – এগুলা তো উসূলুল ফিকহের পরিভাষা, যা ফোকাহায়ে কেরাম কোরান-হাদিস থেকে গবেষণা করে আবিস্কার করেছেন।
আরো বললাম – যারা এসব আবিস্কার করেছেন, তাদেরকে বলা হয় মাজহাবের ইমাম। আর আমরা যারা এসব মান্য করি, আমাদেরকে বলে মাজহাবের অনুসারী৷ আপনিও যদি এসব ফারজ/ওয়াজীব, হালাল/হারাম, সুন্নাত/নাফল ইত্যাদি পরিভাষা ফলো করে থাকেন, তাহলে আপনিও মাজহাবের অনুসারী৷
পরবর্তী রিপ্লাইয়ে উনার যা মন্তব্য ছিলো, তা বলার আর প্রয়োজনবোধ করছি না।
আলহামদুলিল্লাহ, তিনি সত্যটা জানতে পেরেছিলেন। আসলে কৌশলে ধোকায় পরে তারা ফিকাহ/উসুলকে কোরান-হাদিসের বাহিরা কিছু মনে করতো। তাই যত্তসব বিভ্রান্তি আর ফাসাদী। দিকভ্রান্ত মানুষকে খুব কৌশলে সত্যটা জানিয়ে দিতে হবে। ফিকাহ ও উসূলুল ফিকার এর প্রয়োজনীয়তা খুব অনুভব করছি।
বিশেষত, উসূলুল ফিকহ নিয়ে সাধারণ শিক্ষিত দ্বীনি ভাই/বোনদের মাঝে আলোচনা করা একান্ত জরুরি মনে করছি। যদিও বিষয়টা কঠিন। তথাপি, খোলামেলা আলোচনা না করলে এসবের প্রয়োজনীয়তা কারো অনুভব হবে না।
আব্দুল কারীম আল-মাদানী
শারীয়া বিভাগ ( ফিকাহ) , মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়