কিছু সন্দেহ ও সংশয় দূর হোক।
.
❖ সুবহান আল্লাহ্ নাকি সুবহানাল্লাহ?
.
দুটোই সঠিক। চাইলে যেকোনোটি পড়তে পারেন। তবে, অযথা বিভিন্ন শব্দকে ভাঙা ভালো নয়, তাই ‘সুবহানাল্লাহ্’ পড়বেন ও লিখবেন। এর অর্থ: আল্লাহ্ পবিত্র।
.
❖ জাযাকাল্লাহ নাকি জাযাক আল্লাহ?
.
আরবি ব্যাকরণের নিয়মানুসারে ‘জাযাকাল্লাহ’ লেখা ও পড়াটাই সঠিক। বিস্তারিত কমেন্টে পাবেন।
.
❖ ইনশাআল্লাহ নাকি ইংশাআল্লাহ?
.
প্রথমত বলি: ‘ইংশাআল্লাহ’ উচ্চারণটিই ভুল। তাজবিদের ‘ইখফা’র নিয়মানুসারে অনেকেই নূন-সাকিন ও তানবিনকে অনুস্বার (ং) দিয়ে ইং/আং/উং এভাবে পড়েন। এটি সঠিক নয়। ইখফার গুন্নাহ্ উচ্চারণে সরাসরি অনুস্বার হয় না, বরং কিছুটা হালকা ও গোপনীয়তার সাথে হয়। যেমন: ইনশাআল্লাহ্ উচ্চারণটি আমরা ইখফা হিসেবে পড়লে ‘ইংশাআল্লাহ, ইঁ-শাআল্লাহ ও ইনশাআল্লাহ’ এ তিনটির মাঝামাঝি উচ্চারণ হবে। চাইলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ কারীদের তিলাওয়াত শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন। এখানে লিখা সম্ভব নয়।
.
এরপর কথা হলো: কুরআনের বাইরে সব জায়গায় সাধারণভাবে ‘ইনশাআল্লাহ্’ বলাটাই অধিকতর সঠিক। তাই, সকল হাদিস, দু‘আ ও যিকরে ‘ইনশাআল্লাহ্’ পড়বেন ও লিখবেন।
.
আলিমগণ গুন্নাহ ও তাজবিদের অন্যান্য নিয়মগুলোকে শুধু কুরআনের জন্য জরুরি বলেছেন। কুরআনের বাইরে বিভিন্ন গুন্নাহ এবং তাজবিদের নিয়মাবলী ব্যবহার না করাই উত্তম। তবে, এটি নাজায়েয নয়।
.
সুতরাং ‘ইংশাআল্লাহ’ নয়, ‘ইনশাআল্লাহ’ পড়ুন ও লিখুন। অর্থ: যদি আল্লাহ্ চান।
.
❖ বারাকাল্লাহ নাকি বারাকাল্লহ?
.
আল্লাহ্ শব্দের লাম মোটা করে পড়তে হয়। তাই, অনেকে ‘বারাকাল্লহ’ লিখেন। আসলে, এটি দিয়েও শতভাগ সঠিক লেখা হয় না। কারণ ল+আ = লা। তাই, সহজভাবে ‘বারাকাল্লাহ্’ লিখুন, এটিই তুলনামূলক সঠিকের কাছাকাছি। তবে, বলার সময় সঠিকটি বলুন। তেমনি বলুন ও লিখুন: জাযাকাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, ফাক্কাল্লাহ, ইল্লাল্লাহ।
.
❖ তেমনি, ‘খইরন’ না বলে সহজভাবে ‘খাইরান বা খায়রান’ বলুন ও লিখুন।
.
❖ রব্বানা নাকি রাব্বানা?
.
আরবি (ر) হরফটির মধ্যেও পুর-বারিক তথা মোটা ও চিকন করে পড়ার নিয়ম আছে। সেই হিসেবে এখানেও অনেকে অধিকতর সঠিক উচ্চারণের জন্য ‘রব্বানা’ লিখেন। আসলে, এভাবে লিখলেও শতভাগ সঠিক উচ্চারণ হয় না। কারণ: র+আ = রা হয়। অতএব, সহজ করে ‘রাব্বানা’ লিখুন। এটি সঠিকের দিক থেকে অধিক কাছাকাছি। তবে, বলার সময় সঠিকটি লিখুন। তেমনি এভাবে পড়ুন ও লিখুন: রাহমান, রাদিয়াল্লাহু, রাব্বি, রাজিম, রাহিম, রাহমাতুল্লাহ।
.
✪ রাসূলুল্লাহ/রাসূলাল্লাহ সঠিক কোনটি?
.
দুটোই সঠিক। তবে এদের প্রয়োগ ভিন্ন। স্বাভাবিক হলো, ‘রাসূলুল্লাহ্’, তবে এর পূর্বে যখন ‘ইয়া’ যুক্ত হয়, তখন হয়ে যায়—‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’। এটি আরবি ব্যাকরণের একটি নিয়ম। এরকম আরো কিছু শব্দ আছে, আরো কিছু নিয়ম আছে।
.
✪ আস্তাগফিরুল্লাহ/নাস্তাগফিরুল্লাহ সঠিক কোনটি?
.
প্রয়োগভেদে দুটোই সঠিক।
► আস্তাগফিরুল্লাহ—আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।
► নাস্তাগফিরুল্লাহ—আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।
.
অর্থাৎ, এদের পার্থক্যটা বচনের। একটি একবচন, অপরটি বহুবচন।
.
এরকম আরো কয়েকটি উদাহরণ:
.
► আসআলুকা—আমি আপনার নিকট চাই।
► নাসআলুকা—আমরা আপনার নিকট চাই।
.
► আ‘উযুবিল্লাহ—আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
► না‘উযুবিল্লাহ—আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
.
► রাব্বি—আমার রব!
► রাব্বানা—আমাদের রব!
.
► হাসবিয়াল্লাহ—আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
► হাসবুনাল্লাহ—আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
.
✪ ‘যুল জালালি ওয়াল ইকরাম’ হবে নাকি ‘যাল জালালি ওয়াল ইকরাম?’
.
প্রয়োগভেদে দুটোই সঠিক। মূলত এটি—
► যুল জালালি ওয়াল ইকরাম
(রাজকীয়তা ও মহানুভবতার অধিকারী)।
এই শব্দগুচ্ছের পূর্বে যখন ‘ইয়া’ যুক্ত হবে, তখন হয়ে যাবে—
► ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম
► (হে রাজকীয়তা ও মহানুভবতার অধিকারী!)
.
এটি মূলত আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। দু‘আর মধ্যে এই নামটি বারবার বলার কথা হাদিসে বলা হয়েছে। [বুখারি, আল আদাবুল মুফরাদ: ৩/২৮০; বর্ণনাটি সহিহ]
.
অতএব, দু‘আর মধ্যে কিছু সময় পরপর অর্থের দিকে লক্ষ রেখে আবেগ ও আন্তরিকতা দিয়ে বলবেন, ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম!’ এতে দু‘আ কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে। [ইবনু রজব, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম]
.
[অন্য কোনো পোস্টে এরকম আরো কিছু সন্দেহ নিরসনের চেষ্টা করা হবে, ইনশাআল্লাহ্]
.