ঘর না মসজিদ,কোনটা নারীদের নামাজের উত্তম স্থান
একটি তাত্বিক বিশ্লেষণ
মুফতি আব্দুল্লাহ আল কাফি,
ফারেগুত্তাখাসসুস: জামেয়া দারুল উলুম,মসজিদে আকবর কম্লেক্স,ঢাকা
মহিলাদের জন্য মসজিদে এসে নামাজ পড়া সুন্নাত নয়। বরং বর্তমান ফেতনাপূর্ণ যামানার প্রেক্ষাপটে ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত হলো মহিলাদের জন্য মসজিদে গমন করা মাকরুহে তাহরিমী।
রাসুলুল্লাহ (সা) কখনো মহিলাদেরকে মসজিদে এসে নামাজ পড়তে উদ্বুদ্ধ করেননি। বরং এর বিপরীতে বলেছেন,ঘড়ের ভিতরে কুঠুরিতে নামাজ পড়লে তাদের সওয়াব বেশি হবে।
হযরত উম্মে হুমাইদ নামক এক মহিলা সাহাবী রা,রাসুল (সা) এর দরবারে এসে বললেন,ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার সাথে জামাতে নামাজ পড়া পছন্দ করি। রাসুল (সা) এরশাদ করলেন,‘আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে জামাতে নামাজ পড়া পছন্দ কর। তবে শুনে রাখো,তোমার কামড়ায় নামাজ পড়া তোমার ঘরে নামাজ পড়া হতে উত্তম। তোমার ঘরে নামাজ পড়া তোমার বাড়ীতে নামাজ পড়া হতে উত্তম। তোমার বাড়ীতে নামাজ পড়া তোমার মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়া হতে উত্তম। তোমার মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়া আমার মসজিদ (মসজিদে নববীতে) জামাতে নামাজ পড়া হতে উত্তম।’
রাবী (বর্ণনাকারী) বলেন,এরপর হযরত উম্মে হুমাইদ রা, কামড়ার এক কোণে নামায পড়ার স্থান বানানোর নির্দেশ দিলেন। অতপর তা তৈরী করা হল। এবং মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেই স্থানে নামাজ আদায় করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ,খ:১৮,পৃ:৪২৪। হাফেজ আল্লামা হাইসামী রহ.বলেন,এ বর্ণনার বর্ণনাকারীগণ সবাই সহী বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনাকারী;আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আনসারী ব্যতীত। তবে ইবনে হিব্বান তাকে ছিকাহ বলেছেন। সহী ইবনে খুযাইমা,খ:২,পৃ:৮১৪)
অপর এক হাদীসে রাসুলে আকরাম (সা) এরশাদ করেছেন, মহিলাদের অন্দরমহলের নামায বাহির ঘরের নামায থেকে উত্তম। এবং অন্দর মহলের ভেতরের গোপন বা নির্জন কক্ষের নামায অন্দর মহলের নাময থেকে উত্তম। (সূত্র:আবু দাউদ,খ:২,পৃ:৮৪,হাদীস নং:৫৭০)
উপরোক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা দুটি বিষয় প্রতীয়মান হয়-
১) মসজিদে নববীতে এক ওয়াক্ত নামাযের সওয়াব অন্য মসজিদে পঞ্চাশ হাজার ওয়াক্তের সমতুল্য। অথচ আল্লাহর রাসুল (সা) মহিলাদের জন্য এই মসজিদে নামাজ পড়া হতে ঘড়ে নামাজ পড়াকে উত্তম বলেছেন। সুতরাং দিবালোকের মত স্পষ্ট যে,রাসুলে আকরাম(সা) মহিলাদেরকে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে নিরুতসাহিত করেছেন। আর মসজিদে নববীর ক্ষেত্রেই যদি হুকুম বা নির্দেশনা আল্লাহর রাসুলের পক্ষ হতে এরূপ হয় তাহলে অন্যান্য মসজিদের কি হুকুম হবে তা সহজেই অনুমেয়।
২) মহিলাদের জন্য বাড়ীতে নামাজ পড়া মসজিদে নামাজ পড়া হতে উত্তম। যার কারণে উম্মে হুমাইদ রা, সারা জীবন নিজের কামড়াতেই নামাজ আদায় করেছেন।
সুতরাং মহিলাদের জন্য উচিত হল,মসজিদে না এসে রাসুল (সা) এর হুকুম পালনার্থে আপন ঘরের নির্জন স্থানে নামাজ আদায় করা।
অপর আরেকটি হাদীসে জামাতের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা) এরশাদ করেন, ঐ মহান সত্ত্বার কসম,যার হাতে আমার জীবন। আমার ইচ্ছা হয় কিছু জ¦ালানী কাঠ সংগ্রহ করার আদেশ দেই। অতপর নামায কায়েমের নির্দেশ দেই। এরপর আযান দেয়া হবে এবং এক ব্যক্তিকে ইমামতির নির্দেশ দিয়ে সমস্ত পুরুষদের কাছে যাই যারা বিনা ওযরে নামাজে হাজির হয় নি। আর তাদের ঘরবাড়িগুলো আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দেই। খোদার কসম তারা যদি জানত যে একটি গোশতহীন মোটা হাড় বা ছাগলের ভাল দুটি পা পাবে তাহলে এশার জামাতেও উপস্থিত হত। (বুখারী,খ:১,পৃ:৩৩২,হাদীস নং-১৭৭৯)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ, বলেন, উক্ত হাদীসে ‘রিজাল’ তথা পুরুষ শব্দ দ্বারা বোঝা যায় যে, মহিলা ও শিশুরা উক্ত হুকুমের অন্তর্ভূক্ত নয়।(ফাতহুল বারি,খ:২,পৃ:১৬৯)
অন্য আরেকটি হাদীসে রয়েছে,হযরত আবু হুরাইরা রা,থেকে বর্ণিত,রাসুলে আকরাম (সা) এরশাদ করেছেন,যদি ঘরসমূহে মহিলারা ও বাচ্চারা না থাাকত,তাহলে আমি এশার নামাজের জামাত কায়েম করতাম। এবং যুবকদেরকে আদেশ করতাম যেন তারা (যারা জামাতে শামিল হয় নি তাদের) ঘর সমূহে যা কিছু আছে সব সহ আগুন লাগিয়ে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ,খ:৮,পৃ:৪২২,হাদীস নং-৮৭৬২)
উল্লেখিত হাদীস দ¦ারা সকলেই ভালোভাবে বুঝতে পারে যে রাসুলে আকরাম (সা) জামাতে শরিক না হওয়ার কারণে ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন শুধুমাত্র ঐ সকল পুরুষদের জন্যই যারা এশার জামাতে উপস্থিত হত না। কিন্তু মহিলা ও বাচ্চারা ঘরে থাকার কারণে তা বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত থেকেছেন। হাদীসটিতে মহিলাদের বিষয় উল্লেখ থাকার দ্বারা এ বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায় যে,মহিলারা জামাতে হাজির হওয়ার ব্যাপারে মুকাল্লাফ বা আদিষ্ট নয়। তা না হলে তারাও এ অপরাধে অপরাধী হত। এবং শাস্তির উপযোগী হত। অপরদিকে তাদের ঘরে থাকাটা পুরুষদের শাস্তির জন্য প্রতিবন্ধক হত না। যেহেতু তাদের অনুপস্থিতি শরীআতের দৃষ্টিতে অপরাধ ছিল না। তাই তাদের জ্বলে যাওয়ার আশংকাই পুরুষদেরর শাস্তির জন্য প্রতিবন্ধক হয়েছে।
তবে কিছু কিছু হাদীস দ্বারা এটাও বুঝে আসে যে,রাসুলে কারিম (সা) মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধও করেননি।
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,মহিলাগণ অনুমতি চাইলে তাদেরকে তাদের মসজিদের অংশ থেকে নিষেধ করো না। (মুসলিম,খ:১,পৃ:১৮৩,হাদীস নং-৯৮৮)
হাদীসের গ্রন্থসমূহে একই অর্থে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। অর্থাত ঘরের কর্তৃত্বাধিকারীকে মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর দ্বারা কোনভাবেই এটা প্রমাণিত হয় না যে,মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়া সুন্নাত বা মুস্তাহাব। তাছাড়া মহিলাদেরকে রাসুলের যামানায় মসজিদে যেতে অনুমতি প্রদানের কতিপয় কারণ বা কল্যাণ (হিকমাত) ছিল।
প্রথমত: তখন তারা মসজিদে এসে রাসুল (সা) এর দরবার থেকে শরীয়তের বিভিন্ন মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা গ্রহণ করত। যার কারণে তখন তাদের মসজিদে আসার অনুমতি ছিল।
দ্বিতীয়ত:রাসুল (সা) এর পবিত্র যামানা ফিতনা ফাসাদ হতে নিরাপদ ছিল। তাই তখন পুরুষরা মহিলাদেরকে বাধা দেয়াটা ফিতনার ভয়ে ছিল না। আর এ কারণেই রাসুল (সা) বলে দিয়েছেন যে মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করো না।
কিন্তু যখন মহিলাদের মাঝে খারাপ নিয়ত ও ফিতনা ফাসাদের সূচনা হয়ে গেল তখন তাদের কার মনে বদ নিয়ত আছে ও কে ফিতনা সৃষ্টিকারী তা অনুসন্ধান করা বড় কঠিন হয়ে দাড়াল বরং তা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেল। এমতাবস্থায় যদি কারো কারো জন্য অনুমতি বাকি থাকে তবে সকল মহিলারা এ বাহানায় মসজিদে চলে আসবে যে আমাদের অন্তরে কোন খারাপ নিয়ত নেই। এমনকি যদি মসজিদগুলোর দরজায় কোন চৌকান্না ব্যক্তি লাঠি হাতে দাড়িয়েও থাকে তবুও সে ভালো মনোভাব ও কুমনোভাব সম্পন্ন মহিলার মাঝে পার্থক্য করতে পারেবে না। ফলে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র খারাপ মন মানসিকতার মহিলাদেরকে বাধা দেয়ার কোন উপায় থাকবে না। এজন্য সমস্ত মহিলাদেরকেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে অভিন্ন বিধান আরোপ করা হয়েছে। অর্থাত কারো জন্যই মসজিদের জামাতে আসা উচিত নয়। যাতে ফিতনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
মহিলাদের জন্য মসজিদে এসে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরাম নাজায়েজের মত দিয়েছেন। এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হল ফিতনা। নারী-পুরুষ একসাথে একত্রিত হওয়ার কারণে মারাত্মক ধরণের ফাসাদ হওয়ার আশংকা রয়েছে। আর ইসলামী শরীয়তে ফিতনা ফাসাদকে হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ বলা হয়েছে। এজন্য শুধু বর্তমান সময়ের ফুকাহায়ে কেরামগণ নন এ ব্যাপারে মহান খলিফা হযরত ওমরে ফারুক রা, বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ফকিহা সাহাবি আম্মাজান হযরত আয়েশা রা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা, সহ অনেক সাহাবায়ে কেরাম ফেতনা সংঘটিত হওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে মসজিদে এসে নামাজ পড়তে নিষেধ করতেন। ফুকাহায়ে কেরামগণ তো শুধু সে সকল মহান সাহাবায়ে েেকরামের মতামতই বর্ণনা করেছেন।
আম্মাজান হযরত আয়েশা রা, বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) যদি মহিলাদের এ অশোভনীয় পরিবর্তন দেখতে পেতেন যা তারা শুরু করেছে তবে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন। যেমন বনি ইসরাইলের মহিলাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। (বুখারী,খ:১,পৃ:১২০/ মুসলিম,খ:১,পৃ:১৮৩)
উক্ত হাদীস দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, রাসুল (সা) এর জীবদ্দশায় মহিলাদের এহেন অশোভনীয় পরিস্থিতির অস্তিত্ব ছিল না। বরং এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে হুযুরের ইন্তেকালের পর। বিধায় হযরত আয়েশা রা,এর কথার উদ্দেশ্য এ দাঁড়ায় যে,এ সকল পরিবর্তনের অস্তিত্বই নিশেধজ্ঞার বিধানকে আবশ্যক করে। আর এই আবশ্যকাতার তাকীদ বুঝাতে গিয়েই তিনি তাকিদযুক্ত অব্যয় ‘লাম’ যুক্ত করে এরশাদ করেছেন যে, হুযুর (সা) অবশ্যই তাদেরকে নিষেধ করতেন।
সুতরাং হযরত আয়েশা রা,এর উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা অশোভনীয় চালচলনের অস্তিত্ব এবং নিষেধাজ্ঞার বিধানের মধ্যে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়ে গেল। আর উক্ত বর্ণনা দ্বারা একথাও প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ফিতনার অস্তিত্ব রাসুলের (সা) পবিত্র যামানার পরে হয়েছে। অনুরূপ ভাবে অপরাপর সাহাবায়ে কেরাম রা,ও ফিতনার বিষয়টার প্রতি লক্ষ করে মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন।
যেমন: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা, থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন বনি ইসরাঈলের মহিলা পুরুষ এক সাথে নামাজ আদায় করত। কোন মহিলার কোন বন্ধু বা প্রেমিক থাকলে সে কাঠের তৈরী উঁচু জুতা পরিধান করে আসত। যাতে উঁচু হয়ে প্রেমিককে ভালভাবে দেখতে পায়। তখন আল্লাহ তাআলা ঐ মহিলাদের উপর মাসিক চাপিয়ে দিলেন।
বর্ণনাকারী বলেন,অতপর ইবনে মাসউদ রা,বলতে লাগলেন মহিলাদের মসজিদ থেকে বের করো। যেভাবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বের করেছেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ,খ:২,পৃ:১৫৭, হাফেজ হাইসামী রহ,বলেন,এই হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সহী বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনাকারী)
আবু বকর শায়বানি রহ,বর্ণনা করেন যে, আমি হযরত আব্দল্লাহ বিন মাসউদ রা,কে দেখেছি তিনি জুমআর দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছেন এবং বলছেন,বের হও। নিজ ঘরে চলে যাও । সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম (নামাজের স্থান)। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ,খ:২,পৃ:১৫৭, হাফেজ হায়সামি র, বলেন এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)
উপরোক্ত বর্ণনাদ্বয় দ্বারা যে দুটি বিষয় স্পষ্টত বুঝে আসে–
ক) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা,জুমআর জামাতের সময় মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। এবং অন্যদেরও বলতেন, মহিলাদের মসজিদ থেকে বের করে দাও।
খ) তিনি বনি ইসরাঈলের মহিলাদের ঘটনা বর্ণনা করে বলতেন যে, তাদের কুমনোভাব ও ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণে তাদেরকে মসজিদসমূহ থেকে বের করা হযেছে। তাই তিনি মুসলমানদেরকেও উক্ত হুকুম প্রদান করতেন এবং একে আল্লাহর হুকুম বলে ঘোষণা করতেন।
এভাবে এ ফিতনার বিষয়টি উপলব্ধি করে অনেক সম্মানিত বুযুর্গ ওলামায়ে কেরামও মহিলাদের জামাতে উপস্থিত হওয়াকে মাকরুহ মনে করতেন। যেমন ইমাম তিরমিযী রহ,সুফিয়ান ছাওরি ও আব্দুল্লাহ বিন মুবারক থেকে এবং ইবনে কুদামা রহ,ইব্রাহিম নাখাঈ ও ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-আনসারি থেকে বর্ণনা করেন যে,তারা মহিলাদের দুই ঈদে যাওয়াকে মাকরুহ মনে করতেন।
উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা পাঠকবৃন্দ ভালভাবেই বুঝতে পারবেন যে,মহিলাদের মসজিদ এবং দুই ঈদে নিয়ে যাওয়া থেকে বাধা প্রদান স্বয়ং সাহাবায়ে কেরামের যামানা থেকেই শুরু হয়েছে। এবং নিষেধাজ্ঞার সূচনা আল্লাহ তাআলার ঐ বিধান থেকেই প্রমাণিত যা বনি ইসরাইলের মহিলাদের ফিতনা ফাসাদের সময় নাযিল হয়েছিল। এ জন্যই সাহাবায়ে কেরামের যামানা থেকে আজ পর্যন্ত মুহাদ্দিসীন এবং ফুকাহায়ে কেরামের মহান এক জামাত এ ব্যাপারে নিষেধ করে আসছেন। কারণ হুযুর (সা) এর যামানায় যদিও অনুমতি ছিল কিন্তু হুযুর(সা) স্বয়ং ফিতনার বিষয়টি আমলে নিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে আল্লাহর মসজিদসমূহে যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা সুগন্ধি ব্যবহার করে (মসজিদে) যাবে না। বরং এমন অবস্থায় যাবে যে তাদের শরীর থেকে দূর্গন্ধ বের হয়। (মুসলিম,খ:৮,পৃ:১৮৩,হাদীস নং-৯৮৯)
উল্লিখিত হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা) এর যামানায় মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি ব্যাপকভাবে ছিল না। বরং কিছু বাধ্যবাধকতা ও শর্ত সাপেক্ষে ছিল। সুতরাং এসকল শর্তের উপর আমল না হলে তাদের অনুমতি প্রদান করাটা আল্লাহর রাসুলের হুকুমের খেলাফ এবং বিপরীত হবে।
অথচ বর্তমানে প্রায় সবখানেই মসজিদে নামাজ আদায়কারিনী মহিলাদের মাঝে আল্লাহর রাসুলের আরোপিত শর্ত লঙ্ঘন করতে দেখা যায়। কেননা আজকাল যে সমস্ত মহিলারা মসজিদে ও দুই ঈদের নামাজে উপস্থিত হয় তারা কি এসকল শর্তের উপর আমল করে? তারা কি উতকৃষ্ট কাপড় পরিধান করে বের হয় না? বাজনা বিশিষ্ট অলংকার ব্যবহার করে না? তারা কি আদৌ অপরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধানের উপর আমল করে?
মধ্যম পন্থা অবলম্বনকারী ব্যক্তিবর্গ অর্থাত যারা একগুয়েমি পছন্দ করেন না তারা উল্লিখিত শর্ত সমূহের খেলাফ দেখে এবং আহকামে নববীর বিরোধিতা পরিলক্ষণ করে সহজেই বুঝে নিবেন যে,আজকাল মহিলাদের অনুমতি একারণেই বাকি নেই যে, তারা অনুমতির শর্তসমূহের উপর মোটেও আমল করে না। এবং তাদের জন্য আমল করা দুষ্করও বটে।
তাছাড়া আল্লাহর রাসুল (সা) কখনো মহিলাদেরকে জামাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য উতসাহিত করেননি। বরং এর বিপরীতে তিনি বলেছেন, মহিলাদের জন্য ঘরের কুঠুরিতে নামাজ আদায় করাই উত্তম। তাহলে এ ধরণের একটি জায়েজ (সুন্নাত-মুস্তাহাব নয়) আমল নিয়ে এই ফিতনার যামানায় বাড়াবাড়ি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, যাদের অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে তারা সহজেই বুঝতে পারবেন। এজন্য এই ফিতনার যামানায় হকপন্থী ওলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত হল মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমআ এবং দুই ঈদের জামাতে উপস্থিত হওয়া মাকরুহে তাহরিমী, যা হুকুমের ক্ষেত্রে হারামের কাছাকাছি।
বরং তারা মসজিদে না গিয়ে নিজ ঘরে নামাজ পড়লে অধিক নিরাপত্তার পাশাপাশি বেশি সওয়াবও লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক মাসআলা বোঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।