জান্নাতের অধিবাসীগণ কখনাে মরবে না। জান্নাতের আবাসস্থল কখনাে নষ্ট হবে না। জান্নাতে সবাই যুবক থাকবে, কখনাে বুড়িয়ে যাবে না। এর সৌন্দর্য ও কল্যাণ কখনও পরিবর্তিত হবে না।
.
জান্নাতের বাতাস মৃদু তাজা বাতাস। সেখানের পানীয়’র মিশ্রণ হবে তাসনীমের। জান্নাতবাসীগণ মহান দয়াময়ের রহমতের ছায়ায় বসবাস করবেন। প্রতিটি সময় তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করে স্বাদ উপভােগ করবেন। সেখানে তাদের বাক্য হবে, হে আল্লাহ! তুমি মহান, পবিত্র! অভিবাদন হবে সালাম (আসসালামু আলাইকুম), আর তাদের দুআর শেষ বাক্য হবে আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য)।
.
জান্নাতে এমন নেয়ামত রয়েছে, কোনাে চোখ যা অবলােকনের সুযােগ পায়নি। কোনাে কান যা শুনতে পায়নি। কোনাে মানব হৃদয়ে যার ভাবও উদয় হয়নি।
.
আল্লাহ তাআলা এ জান্নাতকে তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন। যারা স্বর্ণখচিত আসনে হেলান দেবে। তাদেরক পান করানাে হবে অমিয় সুধা। আপনি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবেন।
.
- তারা কী পান করবে?
তারা পানি, মদ (শরাব), দুধ ও মধু পান করবে।
এ মদ দুনিয়ার মদের মতাে নয়। শুভ্র উজ্জ্বল, যা হবে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।
. - তাদের আশপাশে কারা থাকবে?
তারা থাকবে চিরশিশু ও বালকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত।
. - কারা হবেন তাদের স্ত্রী?
হূরুল ঈন। আয়তলােচনা হূর। প্রবাল ও পদ্মরাগসদৃশ রমণীগণ। যাদেরকে কোনাে মানুষ স্পর্শ করেনি, আর জিনও নয়। তারা বার্ধক্য থেকে নিরাপদ। তাঁবুর ভেতরের অন্তঃপুরবাসিনী।
. - কারা আসবেন তাদের কাছে?
ফেরেশতাগণ। তাদের কাছে উত্তমরূপে প্রবেশ করবেন প্রত্যেক দরজা দিয়ে। তাদেরকে সালাম দেবেন।
.
এমন বাড়ির বর্ণনা দেওয়া কীভাবে সম্ভব! কীভাবে পরিমাণ করা যাবে তার সুযােগ-সুবিধা, যে বাড়ি আল্লাহ নিজ হাতে তৈরি করেছেন। যাকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য আবাসস্থল বানিয়েছেন। রহমত ও মহত্ত্ব দ্বারা যাকে পূর্ণ করেছেন। এর নেয়ামতসমূহের বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় বলেছেন, ফাওজে আযীম তথা মহাসাফল্য।
এর অধিবাসী হওয়া সবচেয়ে বড় মালিকানা। একে তিনি পবিত্র করেছেন প্রত্যেক দোষ থেকে। কীভাবে সম্ভব এর বর্ণনা দেওয়া!?
.
যদি প্রশ্ন কর, সেখানকার মাটি কেমন? তার মাটি মিশক ও জাফরানের। যদি প্রশ্ন কর, তার ছাদ কীসের? তার ছাদ রহমানের আরশ। যদি জিজ্ঞেস কর, তার নুড়িগুলাে কীসের? তার নুড়ি-কংকরগুলাে মণি-মুক্তা ও হিরা-জহরতের। যদি জানতে চাও, তার দালানগুলাে কী রকম? তার দালানগুলাে রূপা ও স্বর্ণের ইটের
তৈরি। যদি জানতে চাও, তার গাছপালার ধরন কেমন? এখানকার প্রতিটি গাছের গুড়ি স্বর্ণের। যদি বলা হয় এর ফল কেমন? এর ফল মাখনের চাইতেও অধিক নরম, মধু থেকেও অধিক মিষ্টি। এমনিভাবে তার নদী কখনাে আপন গুণ থেকে পরিবর্তিত হবে না, যার প্রবাহিত পানি পবিত্র।
.
আল্লাহ জান্নাবাসীদেরকে শারীরিক ও আত্মিক দুরকম নেয়ামতই দান করবেন। তাই তাদের প্রাণ যেরকম নেয়ামত প্রাপ্ত হবে। তেমনি তাদের শরীরও নেয়ামতপ্রাপ্ত হবে। তারা এ চিরস্থায়ী নেয়ামতের মাঝে জীবনযাপন করবে। তারা বয়স্ক হবে না। বৃদ্ধও হবে না।
.
জান্নাতের নেয়ামতের কথা চিন্তা করার দ্বারা গাফিলতি বিদূরিত হবে।
.
তেমনি জাহান্নামিদের জন্য প্রস্তুতকৃত আল্লাহর আযাব ও শাস্তি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার দ্বারা গাফিলতি অপসারিত হবে।
.
জাহান্নামের কিনারা থেকে একটি বড় পাথর ছেড়ে দিলে তা ৭০ বছরেও তার তলা খুঁজে পাবে না।
.
বান্দা যেন জাহান্নামিদের অবস্থার কথা চিন্তা করে। যাদের পাগুলােকে কপালের দিকে বাঁধা হবে। তাদের চেহারাগুলাে গুনাহের অন্ধকারের কারণে কালাে হয়ে যাবে। তারা জাহান্নামের মাঝ থেকে, তার প্রান্ত থেকে চিৎকার করে করে বলবে। হে মালিক! আপনার শাস্তি আমাদের ওপরে সত্যরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে। হে মালিক! আমাদের চামড়া পুড়ে পেকে গেছে। হে মালিক! আমাদেরকে এখান থেকে বের করুন। আমরা আর অবাধ্যতায় ফিরে যাব না।
.
তাদরকে বলা হবে, অসম্ভব! অসম্ভব! লাঞ্জনার এ আবাস থেকে বের হবার কোনাে পথ নেই। তােমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোনাে কথা বলাে না।
.
সে সময় তারা হতাশ হয়ে পড়বে। আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হওয়ার কারাণে তারা আফসােস করতে থাকবে। কিন্তু তাদের এ আফসােস-লজ্জা তাদেরকে মুক্তি দেবে না। তাদের এ আফসােস তাদের কোনােই কাজে আসবে না। বরং তাদেরকে জাহান্নামের ওপরে উপুড় করে ফেলা হবে। তারা বিলাপ ও আফসােস করতে থাকবে উচ্চ স্বরে। তারা যতই কষ্টের অভিযােগ করুক না কেন, তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। যা দ্বারা তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লৌহ-হাতুড়ি।
.
তৃষ্ণায় তাদের কলিজা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। চোখ গাল দিয়ে বের হবে। গালের গােশত খসে পড়বে। তারা মৃত্যু কামনা করবে। কিন্তু তাদের মৃত্যু হবে না।
.
প্রাসাদতুল্য আগুনের স্ফুলিঙ্গ উৎক্ষেপণ করা হবে। আগুনের ফুলকির আকৃতি হবে বড় অট্টালিকার সমান। এ আগুনের স্পর্শ কেমন হবে?! কেমন হবে এ আগুন?!
.
এ আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়েও সত্তর গুণ বেশি গরম। সে অতি কষ্টে জাহান্নামের পানি গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সবদিক থেকে তার নিকট আসবে মৃত্যুযন্ত্রণা, কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং সে কঠোর শাস্তি ভােগ করতেই থাকবে। তাদের পােশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল। তাদের জন্য থাকবে তাদের উধ্বাদিকে আগুনের আচ্ছাদন এবং নিম্নদিকেও থাকবে আচ্ছাদন।
.
এছাড়াও বিভিন্ন রকমের শারীরিক শাস্তি। আরও থাকবে মানসিক শাস্তি। যখন কোনাে দল তাতে প্রবেশ করবে, তখনই অপর দলকে তারা অভিসম্পাত করবে।
.
দুনিয়ার জীবনে তাদের শিথিলতা ও কমতির কারণে ফেরেশতাগণ তাদেরকে তিরস্কার করবেন।