জীবনের প্রয়োজনে কুরআন: ২৬
লাজনম্র বধূ!
–
মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে ভাবতে বসি, কী এমন গুণ দেখতে পেলেন, যার জন্যে নিজের জীবনের অতি মূল্যবাণ দশ দশটা বছর মজুর হিশেবে ‘ব্যয়’ করে দিলেন? চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খেতো!
.
সামান্য সময়ের পরিচয়। একটু আগে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে নামমাত্র। একটা কি দুইটা বাক্য বিনিময় হয়েছে এর বেশি কিছু নয়। পাত্রীকে ভাল করে দেখেছেন, এমন কোনও প্রমাণও নেই। শুধু হাঁটার ভঙ্গিটা হয়তো আবছা লক্ষ্য করে থাকবেন। ব্যস এটুকুই। তারপরও এমন অস্পষ্ট পাত্রীর মোহরানা বাবদ দশ বছর কাটিয়ে দেবেন? কী সেই মহার্ঘ্য ‘ডিসিসিভ পয়েন্ট’? সিদ্ধান্তসূচক দিক?
.
মাথার মধ্যে এমনিতেই সব সময় একটা না একটা আয়াত ঘুরপাক খেতেই থাকে। সেই সাথে প্রশ্নটাও মাথায় নিয়ে ঘুরঘুর করছিল। দীর্ঘদিন। কিছুদিন আগে মাযলুম ভাইদের খেদমতে টেকনাফ যাচ্ছিলাম। হাইছের পেছনে বসে আমি আর আরেক ভাই গল্প করছিলাম। নানা বিষয়ে। দীর্ঘ পথযাত্রায় দু’জনের গল্পের তরী নানা বাঁক পেরিয়ে শেষে এসে ভীড়ল ‘দাম্পত্যজীবনে’ তিনি কথাপ্রসঙ্গে বললেন,
-বিয়ের সময় আমার আহলিয়ার বয়েস ছিল চৌদ্দ, সে যে কী লাজুক ছিল বলে বোঝাতে পারব না! পুরো একবছরেরও বেশি সময় সে আমার সাথে ঠিক মত কথাই বলতে পারেনি। অতি লাজুক স্বভাবের কারনে। সব সময় চুপচাপ থাকত! মাথা নিচু করে থাকত! মুখে সারাক্ষণই লাজনম্র হাসি লেপ্টে থাকত। দেখে কী যে মায়া লাগত, আর বলার নয়!
-আপনার খারাপ লাগেনি? জীবনসঙ্গীর সাথে মনখুলে কথা বলতে পারছেন না, ভাব-ভালোবাসা বিনিময় করতে পারছেন না?
-নাহ। জানেন, ও কিছুদিন আগে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে!
-কেন?
-সে বলেছে, আমি প্রথম বছর আপনার অনেক হক নষ্ট করে ফেলেছি!
-কী হক নষ্ট করেছ?
-মানুষ বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে কত কথা বলে! কত ভাবের বিনিময় করে! আপনি সেসবের কিছুই পারেননি। এটা ভাবলে সত্যি সত্যি আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। আপনাকে ঠকিয়েছি বলে মনে হয়।
-আরে নাহ, তুমি ভুল বুঝছ! লজ্জাশীলতার কারণে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা শতগুণ বেড়ে গিয়েছিল!
.
ওই ভাইয়ের সাথে গল্প করার সময় কী একটা কথা মনে পড়ি পড়ি করেও পড়ছিল না। তাদের এই দাম্পত্য কড়চা আমার বেশ লেগেছিল। টেকনাফ থেকে বাড়ি ফিরে তাদের গল্প করলাম। গল্প শেষ করতেই মাথায় ঝিলিক দিয়ে উঠল, দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত এক প্রশ্নের উত্তর। ঠিক উত্তর নয়, মনের পর্দায় ভেসে উঠল একটা আয়াতাংশ
تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ
লাজুক ভঙ্গিমায় হেঁটে হেঁটে (কাসাস ২৫)।
.
দুই বোনের একবোন ব্রীড়াবনত ভঙ্গিতে এলেন। কৃতজ্ঞতাবশত। উপকারের প্রতিদান দেয়ার জন্যে। বৃদ্ধ বাবার পক্ষ হতে।
.
আহ, লাজনম্রতা এমন এক গুণ, তার সৌরভে একজন নবীও মুগ্ধ। রাব্বে কারীমের কাছেও গুণটা এতই পছন্দ হল, তিনি সেটাকে শেষ আসমানী কিতাবে বিশেষভাবে স্থান দিয়ে, চিরায়ত করে রাখলেন। আসলেই পুরুষের মধ্যে মুসা আ.-এর মতো মানবিকতাই যদি না থাকল, তো আর রইল কি? নারীর মধ্যে লজ্জাই যদি না থাকল, তো আর রইল কি?