ইসমাত(عصمة):
আল্লাহ নবীদেরকে নমুনাস্বরূপ পাঠিয়েছেন উম্মাহ যাতে তাদের আদর্শ নিজেদের জীবনে পূর্ণরুপে বাস্তবায়ন করতে পারে।এজন্যই আল্লাহ নবীদেরকে মা’সূম বানিয়েছেন।
‘ইসমাত’ এর সংজ্ঞা আলিমগণ এভাবে বর্ণনা করেছেন-
هي ملكة إلهية تمنع الإنسان من فعل المعصية و الميل إليها مع القدرة عليها
এটি আল্লাহপ্রদত্ত এমন যোগ্যতা যেটি ইনসানকে গুনাহের কর্ম এবং তার প্রতি ঝুকে যাওয়া থেকে বাধা দেয় যদিও এগুলোতে তার সক্ষমতা থাকে।
(উসূলুদ দ্বীন ইনদা আবি হানিফা-পৃষ্ঠা ১৪৮০)
মানুষ যে ভুলগুলো করে তা তিন প্রকার।
১.কবীরা (كبيرة)- বড় গুনাহ
২.সগীরা(صغيرة) – ছোট গুনাহ
৩.যাল্লাত(زلات) – ত্রুটি-বিচ্যুতি
নবীগণ এসমস্ত বিষয়ের কোনগুলো থেকে মা’সূম ছিল?
এব্যাপারে বাতিল ফিরকার সাথে মতবিরোধ তো আছেই।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মধ্যেও গবেষণাগত মতপার্থক্য আছে।
আল্লামা বাযদাভী(র) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মাসলাক এভাবে বর্ণনা করেছেন যেটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
قال أهل السنة و الجماعة : إن الٱنبياء و الرسل معصومون عن الكباءر من الذنوب و الصغاءر بطريق القصد ٱما الزلات فغير معصومين عنها و هو ما يقع من الذنوب منهم خطأ او نسيانا
‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ বলেন,
নিশ্চয়ই নবী এবং রাসূলগণ কবীরা গুনাহসমূহ থেকে মা’সূম এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সগীরা গুনাহ করা থেকেও মা’সূম।আর যাল্লাত(ত্রুটি-বিচ্যুতি) থেকে মা’সূম নন।আর তা হল যেসমস্ত গুনাহ ভুলে কিংবা ভুলে যাওয়ার কারণে তাদের থেকে সংগঠিত হয়েছে।’
(ইসমাতুল আম্বিয়া লির-রাযী পৃষ্ঠা ৬২)
নবীগণ থেকে বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতির কথা খোদ ক্বুরআন কারীমেই উল্লেখ হয়েছে যেমনঃ-
হযরত আদম আলাইহিস সালামের ব্যাপারে এসেছে-
عصى آدم ربه فغوى(সূরা ত্বহা-১২১)
হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের ব্যাপারে ক্বুরআন কারীমে বলা হয়েছে-
قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ إِلَىٰ نِعَاجِهِۦۖ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ ٱلْخُلَطَآءِ لَيَبْغِى بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَقَلِيلٌ مَّا هُمْۗ وَظَنَّ دَاوُۥدُ أَنَّمَا فَتَنَّٰهُ فَٱسْتَغْفَرَ رَبَّهُۥ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ۩ فَغَفَرْنَا لَهُۥ ذَٰلِكَۖ وَإِنَّ لَهُۥ عِندَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَـَٔابٍ (সূরা সদ-২৪,২৫)
হযরত ইউনূস আলাইহিস সালাম থেকে তার উম্মতের ব্যাপারে যে ইজতিহাদি বিচ্যুতি এসেছে তাও ক্বুরআন কারীম উল্লেখ করেছে এবং উনার তাওবা এবং স্বীকৃতির কথাও বর্ণনা করেছে।
وَذَا ٱلنُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَٰضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِى ٱلظُّلُمَٰتِ أَن لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبْحَٰنَكَ إِنِّى كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ (সূরা আম্বিয়া-৮৭)
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে ভুলে গিয়েছিলেন।তো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সেটির ব্যাপারেও তাম্বীহ(সতর্ক) করে দেওয়া হয়েছে।
وَلَا تَقُولَنَّ لِشَا۟ىْءٍ إِنِّى فَاعِلٌ ذَٰلِكَ غَدًا .إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُۚ وَٱذْكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَىٰٓ أَن يَهْدِيَنِ رَبِّى لِأَقْرَبَ مِنْ هَٰذَا رَشَدًا
(সূরা কাহাফ-২৪,২৫।এছাড়াও দেখুন আত-তাফসীরুল মুনীর ১৫/২১৫)
সগীরা গুনাহ সম্পাদনের ব্যাপারে আরেকটি বিষয় সুস্পষ্ট করে দেওয়া জরুরী যেটি ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ জুমহুরের দৃষ্টিকোণ থেকে পেশ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন-
و الجمهور اللذين يقولون بجواز الصغاءر عليهم يقولون : إنهم معصومون من الإقرار عليها
‘জুমহুর যারা নবীদের থেকে সগীরা গুনাহের সম্ভাব্যতার কথা বলেন তারা এটাও বলেন যে নবীগণ এটার উপর অটল থাকা থেকেও মা’সূম’
(মিনহাজুস সুন্নাতিন নববিয়াহ-২/৪০০)
অর্থাৎ নবীগণ থেকে যা কিছু ভুলচুক হয়ে যায় তারা সেটির উপর কায়েম থাকেন না।
~
মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানী।