“আলিমগনের সঠিক কথা গ্রহন করুণ, আর ভুলটি বর্জন করুণ” – বক্তব্যটির বাস্তবতার সন্ধানে।

“আলিমগনের সঠিক কথা গ্রহন করুণ, আর ভুলটি বর্জন করুণ” – বক্তব্যটির বাস্তবতার সন্ধানে।
.
প্রথমত (বর্তমান যুগের) আলিমগন দুই প্রকার, ক. হক্বপন্থী আহলুস সুন্নাহ আলিমগন, খ. বিভ্রান্ত আলিমগন।

আহলুস সুন্নাহ আলিমগন আবার দুই প্রকার, ক. মারাত্মক ভুল-ত্রুটি মুক্ত আলিমগন (সামান্য ভুল বা মতভিন্নতা থাকতেই পারে), খ. হক্বপন্থী বা আহলুস সুন্নাহ হওয়ার পাশাপাশি কিছু মারাত্মক ভুল করেছেন।
.
“আলিমগনের সঠিক কথা গ্রহন করুণ, আর ভুলটি বর্জন করুণ” – এই নীতি কি আওয়াম মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য? যে ব্যক্তি কুর’আন-সুন্নাহের বা শারী’আতের যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না, তিনি কী আদৌ কোনো আলিমের “ভুল” ধরতে ও তা পরিত্যাগ করে সঠিক বিষয়গুলো অনুসরন করতে সক্ষম? — কখনোই না।
.
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যে ব্যক্তি নিউটনের সূত্রগুলো জানেন না, তার সামনে কেউ সেই সূত্রগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করলে তিনি কী ভুলটি ধরতে পারবেন? – কখনোই না। তাহলে যে ব্যক্তির শারী’আতের যথেষ্ট জ্ঞান নেই, সে ব্যক্তি কোনো আলিমের বিকৃতি বা ভ্রান্তি কীভাবে ধরতে সক্ষম হবেন?
.
শুরুর দিকে বলেছিলাম আলিমগন দুই প্রকার, যার একটি প্রকার “বিভ্রান্ত আলিমগন”, এদের সম্পর্কে আওয়ামদের সতর্ক করা জরুরী। এদের ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই [আলিমগনের সঠিক কথা গ্রহন করুণ, আর ভুলটি বর্জন করুণ] – এই নীতি গ্রহণযোগ্য না। আমরা বলতে পারিনা যে,
দেওয়ানবাগীর ভালোটা গ্রহন করুণ আর ভুলটা বর্জন করুণ,
মাইজভান্ডারের ভালোটা গ্রহন করুণ আর খারাপটা বর্জন করুণ,
তাহেরীর ভালোটা গ্রহন করুণ আর খারাপটা বর্জন করুণ! – আমরা বিভ্রান্তদের ক্ষেত্রে এমনটি মোটেও বলতে পারিনা।
.
আমি জানি, যারা এই নীতির প্রচার করেন, তারাও এসব ভ্রান্তদের ক্ষেত্রে এই নীতি অবলম্বন করেন না, বরং অন্য কিছু ভ্রান্ত বক্তাদের ক্ষেত্রে এই নীতি অবলম্বন করেন! এই ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের’ কারন আমি জানিনা। তবে আমি উভয় ভ্রান্তদের মাঝে কেবল দুটি পার্থক্য দেখি, এক. এরা মূর্খ ভ্রান্ত আর ঐসকল বক্তা শিক্ষিত ভ্রান্ত, দুই. এরা কথাবার্তায় স্মার্ট নয় আর তারা কথাবার্তায় বেশ স্মার্ট। – বাকি সকলেই নিজ নিজ মর্জি মতো শারী’আতের ব্যাখ্যা করে, বিকৃতি করে; তবে হ্যাঁ, কেউ হাই ডোজে আর কেউ লো ডোজে!
.
বাকি রইলো “হক্বপন্থী বা আহলুস সুন্নাহ হওয়ার পাশাপাশি কিছু মারাত্মক ভুল করেছেন” – এমন আলিমগন। এমন আলিমগনকে পরিত্যাগ করা হবে না, বরং তাদের ক্ষেত্রে ত্বলীবুল ইলমগন ভালোটা গ্রহন করবেন, ভুলগুলো বর্জন করবেন।
.
আওয়াম বা সাধারন মুসলিমগন এসকল আলিমগনের ক্ষেত্রে কী করবেন? – এক্ষেত্রে তারা অন্যান্য আলিম বা ত্বলীবুল ইলম থেকে জেনে নিবেন যে এই আলিম কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছেন, যদি এভাবে জেনে নিতে পারেন, তাহলে তিনি এই আলিমের ভুলগুলো পরিত্যাগ করবেন আর বাকি গ্রহন করবেন।
.
অর্থাৎ, যেসকল আলিম হক্বপন্থী বা আহলুস সুন্নাহ নন বরং বিভ্রান্ত, তাদেরকে ঢালাউভাবে পরিত্যাগ করা হবে। এটাই সালাফগনের মানহাজ। আমরা যদি সালাফদের যুগের ইমামগনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখবো তারা আওয়াম ও ত্বলীবদের বিভ্রান্ত আলিমগন হতে সতর্ক ও সাবধান করতেন। এমনকি বিভ্রান্ত আলিম বা বক্তাদের কাছে যাওয়া বা তাদের সাথে কথা বলা বা বসতেও তারা নিষেধ করতেন, তারা বিভ্রান্ত আলিম বা দাঈদের পরিপূর্নভাবে বর্জন করার নির্দেশ দিতেন। এমন সালাফ ইমামগনের মধ্যে ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহিমাহুল্লাহ অন্যতম।
.
আর যেসকল আলিমগন হক্বপন্থী বা আহলুস সুন্নাহ হওয়ার পাশাপাশি কিছু স্থানে মারাত্মক ভুল করেছেন, আমরা তাদের বর্জন করবো না। আওয়ামরা অন্যান্য হক্বপন্থী আলিম বা ত্বলীব থেকে এসকল আলিমগনের ভুলগুলো জানবেন ও তা পরিত্যাগ করবেন। এক্ষেত্রে আওয়ামরা যাচাই-বাছাই করার সময় সালাফ ইমামগন ও পূর্ববর্তী ইমামগনের বক্তব্য বা অভিমত জানতে চাইতে পারেন, যাতে সালাফদের বা পূর্ববর্তীগনের আলোকেই ফিল্টার হয়।
.
বর্তমান বিশ্বে অগনিত ভ্রান্ত আলিম বা দাঈ বিদ্যমান, যাদের ঝুলিতে “মুফতী”, “মুহাদ্দীস”, “মুফাসসির” টাইটেল আছে, আছে “মাস্টার্স” ও “পিএইচডি” এর মতো ডিগ্রীও!

এমন ভ্রান্তদের একজন ‘মুরতাদের বিধান’ অস্বীকার করেছে, অস্বীকার করেছে ‘শাতিমের বিধান’, অস্বীকার করেছে ‘রজমের বিধান’, অস্বীকার করেছে ‘নারীদের পর্দার বিধান’, বিকৃত করেছে জি [হা] দের বিধান, আরও বহু বিধান অস্বীকার ও বিকৃত করেছে, এসব সে হাওয়ার উপর করেনি! সে তার এসবের পক্ষে “কুর’আন ও হাদীসের” দলীলও দিয়েছে!!
.
আওয়াম বা সাধারন মুসলিমগন কীভাবে বুঝবেন যে, তিনি প্রেক্ষাপট ছাড়া নিজের মতো করে আয়াত বা হাদীস পেশ করছে?
আওয়ামরা কীভাবে বুঝবেন, তিনি একেবারেই পরিত্যক্ত পর্যায়ের সনদের হাদীস পেশ করছে?
আওয়ামরা কীভাবে বুঝবেন, তিনি সকল সাহাবীগনের বিপরীতে কোনো একক সাহাবীর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা বা মতকে উল্লেখ করছে?
আওয়ামরা কীভাবে বুঝবেন, তিনি কোনো বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বের ঘটনা বা হাদীসকে উক্ত বিধান নাযিল হওয়ার পরের অবস্থার সাথে গুলিয়ে ফেলেছে?
.
এরকম বহু বিষয় আছে, যা আওয়ামরা বুঝবেন না, ধরতে পারবেন না। তাহলে আওয়ামদের আমরা কীভাবে এসকল আলিমগনের “ভালোটা গ্রহন আর খারাপটা বর্জন” করার নীতি শেখাতে পারি, যেখানে আমাওয়ামদের পক্ষে তাদের ভুল ও ভ্রান্তি নিজ থেকে বুঝা বা ধরা একেবারেই অসম্ভব?!

মাইনুউদ্দিন হাফি.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *