আল্লাহ আমাদেরকে তার শত্রু ইবলিস শয়তানের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন। যখন আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে কেন সে আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তখন ইবলিশ এই যুক্তি দিয়ে তর্ক করলো যে সে আদমের থেকে উত্তম। আর সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো তাকে অবকাশ দেওয়ার জন্য, আল্লাহ তাকে অবকাশ দিলেন। এরপর আল্লাহর শত্রু ইবলিস বললো,
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿١٦﴾
ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ ﴿١٧﴾
“যেহেতু আপনি আমাকে বিপথে চালিত করেছেন (নোটঃ ইবলিস নিজের অহংকারের কারনে পথভ্রষ্ট হওয়ার পরও নম্রতা অবলম্বন না করে সে উল্টো আল্লাহ’র উপর এভাবে দোষ চাপিয়ে দিলো), আমি তাদেরকে আক্রমনের জন্য আপনার প্রদর্শিত পথে (সিরাতুল মুস্তাকিম) নিজেকে নীরবভাবে গোপন রেখে প্রস্তুত থাকবো।
এরপর আমি তাদেরকে হঠাৎ আক্রমণ করবো তাদের সামনে থেকে, পিছন থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে, এবং আপনি তাদের অধিকাংশকেই শোকরকারী হিসেবে পাবেন না।” (সূরা আল আ’রাফ, ৭ :১৬-১৭)
কুরআনের অধিকাংশ মুফাসসীরগণ এই তাফসীর করেছেন যে, শয়তানের জবাবটি ছিল একটি নির্দিষ্ট ব্যাপারে – আল্লাহ’র বিশ্বাসী বান্দাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার ব্যাপারে তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রদর্শনের জন্য।
ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, “সিরাতুল মুস্তাকিম হল আল্লাহর দ্বীন (ইসলাম)।” ইবন মাসউদ (রাঃ) বলেন, “এর অর্থ হল আল্লাহ’র কিতাব (আল-কুরআন)।” জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, “এটি হল ইসলাম।” আর মুজাহিদ (রহ.) বলেন, “এটি হল সত্য।”
এগুলো সবই একটি অর্থই প্রকাশ করে, সেটা হল -আল্লাহ’র প্রদর্শিত পথ।
সাবরাহ বিন আল-ফাকাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “শয়তান তার সকল ভ্রান্তিময় প্রতারণাপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহার করে আদম সন্তানকে আক্রমনের জন্য গোপনে প্রস্তুত থাকে।” (মুসনাদ আহমাদ, সুনান আন-নাসাঈ, ইবন হিব্বান)
ইবন আতিয়্যাহ থেকে বর্ণিত আছে যে ইবন আব্বাস (রাঃ) “এরপর আমি তাদেরকে অতর্কিত আক্রমণ করবো তাদের সামনে থেকে” -এর ব্যাপারে বলেন যে, শয়তান ‘পার্থিব ব্যাপারগুলোতে’ আদম সন্তানদের উপর তার কতৃত্বের চেষ্টা চালাবে। আলি বিন আবি তালহাহ থেকে বর্ণিত আছে যে এই আয়াতাংশ দিয়ে বুঝানো হয়েছে – “আমি তাদেরকে পরকালের ব্যাপারে সন্দেহ করিয়ে দিবো।” এই বর্ণনাটি আল-হাসান (রাঃ) এর সেই বর্ণনার সাথে মিলে যায় যেখানে বলা হয়েছে যে এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে শয়তানের সেই চেষ্টাকে, যা সে করে থাকে বিশ্বাসী বান্দাদের ক্ষেত্রে যেন তারা পুনরুত্থান, জান্নাত ও দোজখের ব্যাপারে অস্বীকার করে। মুজাহিদ (রহ.) এই আয়াতাংশের ব্যাপারে বলেন, “এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে, তারা যে স্থান থেকে তার শয়তানসুলভ কুকর্মের প্ররোচনা দেখতে সক্ষম হবে।”
“আর তাদের পিছন থেকে” – ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, “এর অর্থ হলঃ আমি দুনিয়াবী মায়াকে তাদের জন্য প্রবলভাবে আকাঙ্ক্ষিত করে দিবো।” আল-হাসান (রাঃ) বলেন, “আমি তাদের দুনিয়াবী ব্যাপারে তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করবো আর সেটাকে আমি তাদের জন্য আকর্ষণীয় করে প্রদর্শন করবো।” আবু সালিহ বলেন, “এর অর্থ হলঃ আমি তাদেরকে পরকাল অস্বীকার করাবো আর এর থেকে তাদেরকে দূরে রাখবো।” ইবন আব্বাস (রাঃ) এটাও বলেন যে এর অর্থ হলঃ “আমি তাদেরকে দ্বীন ইসলাম ও সৎ কর্মের গুরুত্বের ব্যাপারে সন্দেহ করিয়ে দিবো।” আল-হাসান (রাঃ) এর অর্থ হিসেবে এটাও বলেন, “আমি তাদেরকে সৎ কর্ম করা থেকে বিরত রাখবো।”
“আর তাদের বাম দিক থেকে” – আল-হাসান (রাঃ) বলেন, “এর অর্থ হলঃ আমি তাদেরকে মন্দ কাজ করতে আদেশ করবো, যেগুলোকে আমি তাদের চোখের সামনে খুবই আকর্ষণীয় করে তুলবো।”
ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে নির্ভরযোগ্যভাবে বর্ণিত হয়েছে, “শয়তান এটা বলেনি যে সে তাদের উপর থেকে আক্রমণ করবে কারন যে জানতো যে তাদের উপর আল্লাহ রয়েছেন।” আশ-শা’বি বলেন, “আল্লাহ তাদের উপর থেকে তাদের প্রতি তার রহমত প্রদান করেন।” কাতাদাহ বলেন, “হে আদম সন্তান, শয়তান তোমাদের কাছে উপর দিক ছাড়া সব দিক থেকে আসে। তাই আল্লাহ’র রহমত অর্জনের ক্ষেত্রে সে কখনোই তোমাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।”
আল-ওয়াহিদি বলেন, “কিছু ব্যক্তি বলেনঃ ‘ডান দিক দ্বারা উদ্দেশ্য হল সৎ কর্ম, বাম দিক দ্বারা উদ্দেশ্য হল অসৎ কর্ম,’ যেহেতু আরবেরা বলেনঃ ‘আমাকে তোমার ডান দিকে রেখো, বামে রেখো না।’ যার অর্থ হলঃ ‘আমাকে তোমার নিকটস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে রেখো, দূরবর্তীদের মধ্যে নয়।’ ”
কয়েকজন আলিমের নাম উল্লেখ করে আল-আযহারি বর্ণনা করেন যে শয়তান আল্লাহ’র সম্মান-মর্যাদার কসম করে একটি শপথ করেছিলো –
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ ﴿٨٢﴾ إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ ﴿٨٣﴾
“সে বললোঃ আপনার ‘ইজ্জাত (‘ইজ্জাহ এর অর্থ হলঃ গৌরব, ক্ষমতা, শক্তি, সম্মান, মর্যাদা, আত্মমর্যাদা, খ্যাতি, অহংকার, গর্ব) এর শপথ, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথে পরিচালিত করবো তাদের মধ্য থেকে আপনার সে সকল গোলাম ছাড়া – যারা মুখলিস।” (সূরা সোয়াদ, ৩৮ :৮২-৮৩)
সে শপথ করেছিলো তাদের সবাইকে সে বিপথে পরিচালিত করবে, যেন তারা পূর্ববর্তী মানবসভ্যতার পরিণতি সম্পর্কে সকল বর্ণনা ও পুনরুত্থানের বিষয় অস্বীকার করে, আর লোকেরা যেন তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপে কিংকর্তব্যবিমুঢ়ও হয়ে পড়ে।
অন্যান্য আলিমগণ, যেমন – আবু ইস’হাক ও আয-যামাখশারি (এই কথাগুলো আবু ইস’হাকের) বলেন, “এই দিকগুলোর উল্লেখ করা হয়েছিলো তুলনামুলকভাবে বিশাল অর্থপূর্ণতার জন্য, অর্থাৎ এই অর্থ প্রকাশ করে – ‘আমি তাদেরকে সব দিক থেকে হঠাৎ আক্রমণ করবো।’ এটা এই অর্থও প্রকাশ করতে পারে – ‘আমি নিশ্চিত করবো যে তারা সব দিক থেকেই বিপথগামী।’; আর আল্লাহ’ই তো সবচেয়ে ভালো জানেন।”
আয-যামাখশারি বলেন, “আমি তাদেরকে চার দিক থেকেই আক্রমণ করবো, যে দিকগুলো দিয়ে শত্রুরা সাধারণত আক্রমণ করে থাকে।”
এটি হল শয়তানের ওয়াসওয়াসা এবং আদম সন্তানদের উপর তার প্রভাব বিস্তারের পরিসীমার একটি উদাহারন। আল্লাহ অপর এক আয়াতে শয়তানকে বলেন,
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُم بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِم بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ وَعِدْهُمْ ۚ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا ﴿٦٤﴾
“আর তাদের মধ্যে যাকে সক্ষম হোস তাকে তোর আওয়াজ দিয়ে (পাপ কাজে) প্ররোচিত কর, এবং তোর অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে সমবেত হওয়ার আদেশ কর, আর তাদের সম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে অংশীদার হ (অবৈধভাবে সম্পদ ও সন্তান পেতে প্ররোচনা করার মাধ্যমে) এবং তাদের কাছে ওয়াদা কর, আর শয়তান তো তাদের প্রতারণা ছাড়া কোন ওয়াদাই করে না।” (সূরা বানী ইস্রাঈল, ১৭ :৬৪)
শাকিক বলেন, “প্রতিটি সকালেই শয়তান আমাকে চতুর্দিক থেকে – আমার সামনে থেকে, পিছন থেকে, ডান দিক ও বাম দিক থেকে আক্রমনের জন্য ওঁৎ পেতে থাকে, আর বলেঃ ‘ভয় পেয়ো না, কারন আল্লাহ তো পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ তখন আমি তিলাওয়াত করি –
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ ﴿٨٢﴾
‘কিন্তু নিশ্চয়ই আমি সেসব ব্যক্তির জন্য ক্ষমাশীল যারা অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসে এবং ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে, এরপর হিদায়াতের পথে চলতে থাকে।’ (সূরা তোয়া হা, ২০ :৮২)
শয়তান যখন আমার পিছন থেকে আসে, সে আমাকে আমি যে ব্যক্তিদেরকে মৃত্যুর পর ছেড়ে চলে যাবো তাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন করতে চায়, তখন আমি তিলাওয়াত করি –
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّـهِ رِزْقُهَا
‘আর ভুপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযক আল্লাহ’র জিম্মায় নেই’ (সূরা হুদ, ১১ :৬)
যখন শয়তান আমার ডান দিক থেকে আসে, সে নারীদের প্রতি আমার প্রবৃত্তিকে উত্তেজিত করার জন্য আসে, তখন আমি তিলাওয়াত করি –
وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ ﴿١٢٨﴾
‘আর মুত্তাকীদের জন্য শুভ পরিনাম।’ (সূরা আল আ’রাফ, ৭ :১২৮)
আর সে যখন আমার বাম দিক থেকে আসে, সে আমার সকল কামনা-বাসনা উত্তেজিত করতে আসে, তখন আমি তিলাওয়াত করি –
وَحِيلَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُونَ
‘এবং তাদের ও তাদের বাসনার মধ্যে অন্তরায় স্থির করে দেওয়া হবে’ (সূরা সাবা, ৩৪ :৫৪)
আমি (ইবনুল কায়্যিম) বলিঃ মানুষ চারটি পথের একটি পথে চলে, অন্য কোন পথে নয়; সে তার ডান, বাম, সামনের বা পিছনের পথে চলে। সে প্রত্যেক পথেই শয়তানকে তার জন্য অতর্কিতে আক্রমণকারী হিসেবে পায়। কেউ আল্লাহ’র আদেশ মেনে চলতে গিয়ে যদি এই পথগুলোর কোন একটি পথে চলে, তবে সে দেখতে পাবে শয়তান তাকে আল্লাহ’র প্রতি অনুগত হওয়া থেকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি পাপকাজের জন্য এই পথগুলোর কোন একটি পথে চলে তবে শয়তান তাকে উৎসাহিত করবে আর তার যা প্রয়োজন হয় সবই সরবরাহ করে দিবে।
আমাদের মুত্তাকী আলিমদের এ মন্তব্যকে সমর্থন করে এ আয়াতটি –
وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَاءَ فَزَيَّنُوا لَهُم مَّا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ
“এবং আমরা তাদের জন্য নির্ধারিত করে দিলাম ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের আর তারা (সেই সহকর্মীরা) তাদের জন্য তাদের সামনে ও পিছনে যা ছিল তা সুসজ্জিত করে দিলো।” (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ :২৫)
এ আয়াতের ব্যাপারে আল-কালবি বলেন, “আমরা শয়তানদের মধ্য থেকে কিছু সাথী দিয়ে তাদেরকে সীমাবদ্ধ করে দিবো।” মুকাতিল বলেন, “আমরা তাদের জন্য শয়তানদের মধ্য থেকে কিছু সাথী প্রস্তুত করে দিবো।”
ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, “তাদের সামনে রয়েছে পার্থিব ব্যাপারগুলো, আর তাদের পিছে রয়েছে পরকালের চিরস্থায়ী বিষয়গুলো।”
এর অর্থ হলঃ সেই সাথীরা এই দুনিয়াকে তাদের কাছে সুসজ্জিত করে দিয়েছে যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা এটা আখিরাতের জীবন থেকে পছন্দ করে এবং এমনকি তাদেরকে এটা পুরোপুরি অস্বীকার করতে আহবান করে।
আল-কালবি বলেন, “তারা (সেই সাথীরা) তাদের সম্মুখে যেটা সুসজ্জিত করে তা হল পরকালের বিষয়গুলো – জান্নাত, জাহান্নাম বা পুনরুত্থান বলে কিছু নেই। আর তাদের পিছন থেকে সুসজ্জিত করে এই দুনিয়ার বিষয়গুলো -এই দুনিয়ার জীবনে তাদের পথভ্রষ্টতা।”
ইবন যাইদ বলেন, “তারা (সেই সাথীরা) তাদের অতীতের পাপ আর ভবিষ্যতে করবে এমন পাপগুলোকে তাদের কাছে সুসজ্জিত করে তোলে।” (অর্থাৎ, তারা যা করছে শয়তান তাদের কাছে সেগুলোকে আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করে, যাতে করে তারা সেটার জন্য তাওবা না করে এবং তারা যেসব পাপ কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছে সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য কখনোই নিয়্যত না করে।)
যখন আল্লাহ’র শত্রু শয়তান বলল, “এরপর আমি তাদেরকে হঠাৎ আক্রমণ করবো তাদের সামনে থেকে, পিছন থেকে”, সে এর দ্বারা এই দুনিয়া ও আখিরাতকে বুঝিয়েছে। আর যখন সে বলল, “ডান থেকে, বাম থেকে”, সে এর দ্বারা বুঝিয়েছে যে, আদম সন্তানের ডান দিকে থাকা সৎ কর্ম লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা যিনি সেই আদম সন্তানকে শুধুমাত্র সৎ কর্ম করার তাড়না দেন, তাই আদম সন্তানকে সৎ কর্মে তাকে বাধা দেওয়ার জন্য সেদিক থেকে শয়তান তার কাছে পৌঁছতে চাবে। আর বাম দিকে থাকা অসৎ কর্ম লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা অসৎ কর্ম করতে আদম সন্তানকে নিষেধ করেন, তাই শয়তান সেই দিক থেকে আদম সন্তানের কাছে পৌঁছে অসৎ কর্মগুলো করার জন্য তাকে উৎসাহিত করবে। এর সবকিছুই এ আয়াতগুলোতে সংক্ষেপে বলা হয়েছে –
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ ﴿٨٢﴾
“সে বললোঃ আপনার ‘ইজ্জাত এর শপথ, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথে পরিচালিত করবো …” (সূরা সোয়াদ, ৩৮ :৮২)
إِن يَدْعُونَ مِن دُونِهِ إِلَّا إِنَاثًا وَإِن يَدْعُونَ إِلَّا شَيْطَانًا مَّرِيدًا ﴿١١٧﴾ لَّعَنَهُ اللَّـهُ ۘ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا ﴿١١٨﴾
وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّـهِ ۚ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللَّـهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا ﴿١١٩﴾
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ ۖ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا ﴿١٢٠﴾
“তারা তাকে (আল্লাহ্কে) পরিত্যাগ করে তার পরিবর্তে নারীদের (সে সকল মূর্তিগুলোকে, যেগুলোকে তারা নারীবাচক নাম দিত, যেমনঃ আল-লাত, আল-‘উযযা ইত্যাদি, আর ফেরেশতাদের আল্লাহ’র মেয়ে বলে বিশ্বাস করে তাদের ছবির ইবাদাত করতো) আহবান করে, আর তারা তো বিদ্রোহী শয়তান ছাড়া আর কাউকেই আহবান করে না।
আল্লাহ তাকে অভিশাপ দিয়েছেন, আর সে বললঃ ‘আমি নিশ্চয়ই আপনার গোলামদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অংশকে গ্রহণ করবো।
এবং আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে ভুল পথে চালিত করবো আর তাদের মধ্যে নিরর্থক আশা (যেমন – পুনরুত্থান, আল্লাহ’র কাছে জবাব দেওয়া, পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি বলে কিছুই নেই) জাগিয়ে দেবো আর তাদের আদেশ করবো যেন তারা গবাদি পশুর কান কেটে দেয়, আর আমি তাদের আদেশ করবো যেন তারা বাস্তবে আল্লাহ’র সৃষ্টির পরিবর্তন করে (আল্লাহ’র সৃষ্টির পরিবর্তন করার অর্থ হলঃ গাঠনিকভাবে পরিবর্তন, যেমন – মানুষের বা অন্যান্য প্রাণীর জননশক্তি নষ্ট করে দেওয়া; এবং, আল্লাহ’র মনোনীত দ্বীন ইসলামকে পরিবর্তন করে দেওয়া – বিদআত করার মাধ্যমে আর দ্বীন থেকে কিছু বর্জন করা ও কোন বিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে)। আর যে-ই আল্লাহ’র পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করে, সে প্রকৃতপক্ষে এক সুস্পষ্ট ক্ষতিতে পতিত হয়।
সে তাদের কাছে ওয়াদা করে আর তাদের অনুপ্রাণিত করে নিরর্থক আশার মাধ্যমে; কিন্তু শয়তানের ওয়াদা তো প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।” (সূরা আন-নিসা, ৪ :১১৭-১২০)
এর অর্থ সম্পর্কে আদ-দাহহাক বলেন, “তার গৃহীত অংশটি হল আল্লাহ’র গোলামদের মধ্যে একটি অধিগত অংশ।” আয-যাজ্জাজ বলেন, “একটি অংশ যা শয়তান তার জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে।” আল-ফিরা’ বলেন, “যেসব লোকদের উপর শয়তান তার কতৃত্ব করতে পারবে, সেটাই হল তার অধিকৃত অংশের অনুরূপ।”
আমি (ইবনুল কায়্যিম) বলি, “শয়তানের একটি নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণের বাস্তবতা হল এই যে, এটি হল তার একটি অনুমান, যার অর্থ হল, যে ব্যক্তিই তাকে অনুসরণ করবে ও তাকে মান্য করবে, সে-ই শয়তানের নিযুক্ত ব্যক্তিতে পরিণত হবে, যে কিনা তার অংশে পরিণত হবে। কারন মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত – শয়তানের অনুসারী এবং আল্লাহ’র হিদায়াতের অনুসারী।”
“এবং আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে ভুল পথে চালিত করবো …” ; অর্থাৎ, শয়তান সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে এটা করবে।
“আর তাদের মধ্যে নিরর্থক আশা জাগিয়ে দেবো …” – এ ব্যাপারে ইবন আব্বাস বলেন, “শয়তান তাওবা করার পথে বাধা দেওয়ার জন্য সংকল্প করে।” আল-কালবি বলেন, “শয়তান তাদের মধ্যে নিরর্থক আশা ও নিশ্চয়তা (জান্নাত, জাহান্নাম বা পরকাল বলে কিছুই নেই এ বিশ্বাস) জাগিয়ে দিবে।” আল-যাজ্জাজ বলেন, “শয়তান তাদের মধ্যে এই নিরর্থক আশা জাগিয়ে দেয় যে, পরকালে তাদের কোন ভাগ্য নেই, এটা করার মাধ্যমে সে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে একত্রিত করবে।”
এটা এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায় – “আমি তাদের উত্তেজিত করবো পাপের ইচ্ছা ও দ্বীনের মধ্যে বিদআতের অনুসরনের জন্য তাড়না দিয়ে।” আর এটাকে এভাবেও ব্যাখ্যা করা হয় – “আমি তাদেরকে উত্তেজিত করবো এই দুনিয়ার মনোরমতায় আটকে থাকার জন্য যতক্ষণ না তারা এটা পরকালের তুলনায় পছন্দ করবে।”
“আর তাদের আদেশ করবো যেন তারা গবাদি পশুর কান কেটে দেয় …” – অধিকাংশ মুফাসসীরদের মতে এটা দিয়ে আল-বাহিরাহ এর কান কাটাকে বুঝানো হয়েছে। আলিমরা বলেন যে এই আয়াতটি শিশুর কান ছিদ্র করার ব্যাপারে একটি রেফারেন্স, আর তাদের মধ্যে কিছু আলিম কেবল কন্যা শিশুদের অলংকারের জন্য এর অনুমতি দিয়েছেন, যার সমর্থন পাওয়া যায় আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত উম্ম যার’ এর হাদিসে, যেখানে উম্ম যার’ তার স্বামী আবু যার’ সম্পর্কে বলেন, “তিনি আমাকে অনেক গহনা দিলেন আর আমার কান সেগুলোর কারনে খুবই ভারী হয়ে গেলো।” রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) আইশাহ (রাঃ) কে বললেন, “আবু যার’ উম্ম যার’ এর নিকট যেমন, আমিও তোমার নিকট তেমন।” (বুখারী) ইমাম আহমাদ বলেছেন যে এটা ছেলে শিশুর জন্য নয় বরং কন্যা শিশুর জন্য অনুমোদিত।
“আর আমি তাদের আদেশ করবো যেন তারা বাস্তবে আল্লাহ’র সৃষ্টির পরিবর্তন করে”- ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, “শয়তান এর দ্বারা আল্লাহ’র দ্বীন ইসলামকে বুঝিয়েছে।” আর এটি হল ইব্রাহীম, মুজাহিদ, আল-হাসান, আদ-দাহহাক, কাতাদাহ, আস-সুদদাঈ, সা’ইদ বিন আল-মুসাইইব ও সা’ইদ বিন জুবাইর এর মতামত। এর অর্থ হল, আল্লাহ তার গোলামদের একটি সুস্থ প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর এটা হল ইসলাম। আল্লাহ বলেন,
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا ۚ فِطْرَتَ اللَّـهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّـهِ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿٣٠﴾
مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ﴿٣١﴾
مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا ۖ كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ﴿٣٢﴾
“সুতরাং আপনি হানিফ (হানিফবলতে বুঝায় এমন কোন ব্যক্তিকে, যিনি মিথ্যা ধর্ম ত্যাগ করেন ও সত্য দ্বীন অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করেন, এভাবে তিনি একজন সত্যিকারের আন্তরিক ও খাঁটি তাওহীদপন্থী মুসলিম হোন) এর ন্যায় নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন – যে ফিতরাহ (প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য) এর উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ’র সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। এটিই হল দ্বীনুল কায়্যিম (সঠিক, সরল, বহুমূল্যবান ও চমৎকার দ্বীন), কিন্তু অধিকাংশ লোকেরা এটা জানে না।
তাওবা করে তার দিকে ফিরে আসো আর তার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করো ও সালাত কায়েম করো এবং কখনোই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না –
-যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করলো (দ্বীনের মত বাদ দিয়ে ভিন্ন মতের অনুসরণ ও দ্বীনের পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে) এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ে পরিণত হল, প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত।” (সূরা রুম, ৩০ :৩০-৩২)
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “প্রত্যেক শিশুই ফিতরাত (ইসলাম) এর উপর জন্মগ্রহন করে, আর এরপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান বা জরোস্ট্রিয়ানে পরিণত করে। যখন একটি পশু একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু পশুর জন্ম দেয় তখন কি তোমরা এর শরীরের কোন অংশ কাটা দেখো ?” এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেন – “যে ফিতরাহ (প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য) এর উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন।” (বুখারি ও মুসলিম)
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ইস্যু যুক্ত করলেন – ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান ইত্যাদিতে পরিণত করার মাধ্যমে কারো ফিতরাহ পরিবর্তন করা, এবং কোন অঙ্গ কেটে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ’র সৃষ্টির পরিবর্তন করা। এই দুটো ব্যাপার হল সেটাই, যেটার ব্যাপারে ইবলিস (শয়তান) বলেছিল যে সে তা করবে; সুতরাং সে আল্লাহ’র দেওয়া ফিতরাহ পরিবর্তন করলো শিরক করানোর মাধ্যমে ও আল্লাহ’র সৃষ্টির স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট রূপ যা আল্লাহ কতৃক নির্দিষ্ট, তাকে পরিবর্তন করে দেওয়ার মাধ্যমে।
“সে তাদের কাছে ওয়াদা করে আর তাদের অনুপ্রাণিত করে নিরর্থক আশার মাধ্যমে” – তার ওয়াদা সেগুলোই, যেগুলো কিনা কোন ব্যক্তির অন্তরে পৌঁছে; যেমন – “তুমি আরও অনেক সময় ধরে বেঁচে থাকবে যেন তুমি এই জীবনে তোমার সব কামনা-বাসনা অর্জন করে নিতে পারো। তুমি তোমার নিজের লোকদের ও শত্রুদের ঊর্ধ্বে থেকে উঁচু অবস্থায় পৌছতে পারবে।” এক্ষেত্রে শয়তান একজনের আশা বাড়িয়ে দেয়, মিথ্যা ওয়াদা করে এবং ব্যক্তির মধ্যে মিথ্যা ও বিভিন্ন রকম কামনা-বাসনা জাগিয়ে তোলে। সে যা কিছু ওয়াদা করে তা হল প্রতারণাপূর্ণ মিথ্যা ওয়াদা, এবং আর যা কিছু জাগিয়ে তোলে তা হল সাধ্যাতীত আশা আকাংখা। নোংরা ও বিকৃত আত্মা সবসময় শয়তান থেকে আগত মিথ্যা আশা-আকাংখা দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, আর এটি মিথ্যা আশাতেই বেঁচে থাকাটা উপভোগ করে।
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاءِ ۖ وَاللَّـهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا ۗ وَاللَّـهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿٢٦٨﴾
“শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রতার ওয়াদা করে আর ফাহশা (মন্দ কাজ) এর আদেশ দেয়, আর আল্লাহ তোমাদের ওয়াদা করেন তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের, এবং আল্লাহ হলেন ওয়াসি’উন ‘আলিম (ওয়াসি’ এর সংক্ষিপ্ত অর্থ হল – অসীম, আল-‘আলিম অর্থ সর্বজ্ঞানী)।” (সূরা আল বাকারাহ, ২ :২৬৮)
বলা হয়েছেঃ “শয়তান তোমাদের ‘ফাহশা’ করার জন্য আদেশ দেয়,” (অর্থাৎ, নীচ ও কৃপণ হওয়ার জন্য আদেশ দেয়, যেমনটি এই আয়াতটিতে বলা হয়েছে)। মুকাতিল ও আল-কুলাবি বলেন, “কুরআনে ‘ফাহশা’ শব্দটি দিয়ে অবৈধ যৌনমিলনকে বুঝানো হয়েছে, তবে এই আয়াতে এটা দিয়ে কৃপণতা বুঝানো হয়েছে।”
সঠিক মত হল এই যে, ‘ফাহশা’ শব্দটি এখানে সাধারণ অর্থেই রয়েছে, এটি প্রত্যেক প্রকারের ‘ফাহিশা’ (মন্দ কাজ) কে নির্দেশ করে। এটি এমন এক কাজের ব্যাপারে নির্দেশ করে যার উল্লেখ করা হয় নি, তাই এই বৈশিষ্ট্যটি এই শব্দের সাধারণ ব্যাপক অর্থ বহন করে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে শয়তান মানবজাতিকে মন্দ কাজ ও কৃপণতার আদেশ করে। আল্লাহ উল্লেখিত আয়াতে শয়তানের ওয়াদা ও তার আদেশের উল্লেখ করেছেন। সে মানুষকে মন্দ কাজের আদেশ করে আর মানুষকে মন্দ পরিনামের ভয় দেখায় (যদি তারা সৎ কর্ম করে)।
শয়তান মানুষ থেকে দুটো ব্যাপারে আকাংখা করে – সে তাদের সৎ কর্ম না করার জন্য সতর্ক করে, তাই তারা সে কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকে; এবং সে তাদের মন্দ কাজের আদেশ দেয় যেগুলোকে সে তাদের কাছে সুশোভিত করে তোলে, তাই তারা সহজেই সেগুলো চরিতার্থ করে।
এরপর আল্লাহ তার ওয়াদার উল্লেখ করেন, তাকেই আমাদের মেনে চলা উচিত, তিনি ওয়াদা করেন যে যারা আল্লাহ’র আদেশের অনুসরণ করবে আর তার নিষেধগুলো পরিহার করবে তাদের জন্য রয়েছে তার ক্ষমা ও অনুগ্রহ। তার ক্ষমা হল মন্দ থেকে রক্ষা পাওয়া আর তার অনুগ্রহ হল কল্যাণের উপহার।
আবদুল্লাহ বিন মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আদম সন্তানের উপর শয়তান তার প্রভাবের প্রয়োগ করে যেমনটা করে থাকে ফেরেশতারা। শয়তানের প্রভাব হল, সে মন্দের ওয়াদা আর সত্যের বর্জন আঁকড়িয়ে ধরে রাখে; এবং ফেরেশতাদের প্রভাব হল, তারা কল্যাণের ওয়াদা ও সত্যের সমর্থন আঁকড়িয়ে ধরে রাখেন। যে ব্যক্তি কল্যাণের ওয়াদা উপলব্ধি করেন তার উচিত আল্লাহ’র প্রশংসা করা, আর যে ব্যক্তি এর বিপরীত উপলব্ধি করেন, তার উচিত হল অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহ’র নিকট আশ্রয় চাওয়া। এরপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন –‘শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রতার ওয়াদা করে আর ফাহশা (মন্দ কাজ) এর আদেশ দেয়’ ” (তিরমিযি)
ফেরেশতা ও শয়তান কোন ব্যক্তির অন্তরের পরিবর্তন করে যেমন করে রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটে থাকে।
সূত্রঃ শারহে যাম আল-মুওাসওিসিন ওয়াত-তাহযির মিনাল ওয়াসওয়াসাহ (ইমাম ইবন কায়্যিম) TGS Brothers