ইবাদতের অহংকার

দ্বীনের বুঝ পাওয়ার পর বেশিরভাগ প্র্যাকটিসিং মুসলিম ছেলে-মেয়েরা যে ভুলটা করে তা হচ্ছে ইবাদতের অহংকার। শয়তান তখন ভাবে আরে একে তো দেখা যাচ্ছে আর অন্যকিছু দিয়ে বশ করা যাচ্ছে না ,এক কাজ করি অন্তরে ইবাদাতের অহমিকার বিষ ঢেলে দেই। অতঃপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শয়তান সাকসেসফুল হয়।

কিছুদিন আগেও যার সাথে দেখা হলে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করা হতো আজ তার সাথে কথা বলতেও অনেকটা লেভেল মেপে কথা বলতে হয়। মনের মধ্যে এক ধরনের অহমিকাবোধ কড়া নাড়ে। মনে আসে “আরে ও তো জাহেলিয়াতে ডুবে আছে, পর্দা করে না, নামাজ পড়ে না। অথচ আমি রোযা রাখি, পর্দা করি, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করি।”

আমরা ভুলে যাই এক সময় আমি ও তো এই আঁধারে নিপতিত ছিলাম। রাব্বুল আলামীন রহম না করলে কি আলোর দিশা পেতাম? তাহলে এই অহংকারবোধ কেনো?

ভালো কাজ করতে করতে কখনো সন্তুষ্ট হয়ে নিজের ওপর নিশ্চিত হয়ে যেতে নেই। কখনো নিজের ভালোমানুষিতে মুগ্ধ হতে নেই। ইবাদাত যদি অহংকারের জন্ম দেয় যা আমাদের উদ্ধত করতে করতে সবাইকে ছোট ভাবতে শেখায়, তবে সেই ইবাদাত আসলে আল্লাহর জন্য নয়, নিজের প্রবৃত্তির জন্য।

আপনি আজকে যাকে গুনাহগার বলে ধিক্কার দিচ্ছেন, এমনো হতে পারে সে তাঁর গুনাহের জন্য রাব্বুল আলামীনের কাছে লজ্জিত হয়ে নাজাত পেয়ে যাচ্ছে আর আপনি ইবাদতের অহংকারে নিজেকে তলিয়ে নিয়ে হয়ে গেলেন জাহান্নামী।

ইবলিশের কথা এ চিন্তা করি। ইবলিশ নিজেকে এতোটাই উত্তম মনে করেছে যে যার কারণে অহমিকাবোধে গা এলিয়ে আদমকে সেজদা করতে নিজেকে বিরত রেখেছিলো। পরবর্তীতে এই অহংকারের জন্য অনুশোচনা পর্যন্ত করেনি।
অবশেষে আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা করলেন।

নিজের কাজের উপর আত্মতুষ্টিতে ভুগে অন্যকে ছোটো করে নেক আমলের পাল্লা শুণ্যে না নামাই।

হাদীসে আছে “গোনাহগারের কান্না আল্লাহর কাছে তাজবিহ পাঠকারীর তাজবিহ পাঠের চেয়ে ও বেশি প্রিয়।”
(মাদারিজুস সালিকিন:১৭৭-১৭৮)

আপনার এমন হাসিমুখে স্বাভাবিক চিত্তে পালনকৃত ইবাদত থেকে একটি পাপে জর্জরিত অন্তর আর ভেজা চোখের আকুতি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।

তাই নিজের অবস্থান সম্পর্কে একদম নিশ্চয়তায় আটকে থাকা বোকামি। সম্পূর্ণ অংক শেষ হওয়ার পর আবার প্রথম থেকে রিভিশন দিতে গিয়ে যখন দেখবেন আপনার সব হিসেব ঠিক আছে কিন্তু এক জায়গায় ৮ এর পরিবর্তে ৯ লেখায় পুরো হিসেবটাই ভুল হয়ে গেলো,তখন আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।

কিন্তু শেষ বিচারের দিন যখন দেখবেন আপনি এতো এতো আমল করার পরেও শুধু ইবাদতের অহংকারের জন্য আমলের পাল্লা ফাঁকা, তখন চাইলে ও আর সুযোগ থাকবে না প্রথম থেকে শুরু করার।

এমন অনেক দ্বীনি ভাই-বোন আছে যারা দ্বীনের বুঝ পাওয়ার পর কোনো দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া ছাড়াই বন্ধুমহল ত্যাগ করেন এই ভেবে যে “আমি তো এখন পরহেজগার হয়ে গেছি, সুতরাং ওদের সাথে চলাফেরা করা উচিৎ না।” অথচ একজন মুসলিম হিশেবে কি আপনার উচিৎ নয় তাদের দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া?
দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার পরেও যদি তারা নিজেদের পরিবর্তন না করে এবং তাদের দ্বারা আবারো নিজের পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে দূরত্ব বজায় রাখা বা সঙ্গ ত্যাগ করা। তার মানে এই নয় যে নিজের পরহেজগারীতা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবা।

নিঃসন্দেহে আল্লাহর সামনে ঐ (পাপীর) গুনাহই বেশি উত্তম, ঐ গুনাহই নাজাতের উসীলা হয় সে ব্যক্তির ভালো কাজের চেয়ে— যে নিজের প্রশংসা করে, মানুষকে ছোট করে দেখে আর ভাবে যে সে আল্লাহর অনেক বড়ো খেদমত করে ফেলেছে। যদিও তার কথায় এমন কিছু প্রকাশ পায় না। কিন্তু আল্লাহ জানেন তার অন্তরে কী আছে।
এ ধরনের ব্যক্তি সেসব মানুষের ব্যাপারে বিদ্বেষ পুষে রাখে যারা তাকে অনেক সম্মান দেয় না আর তার সামনে হুজুর হুজুর করে না। সে যদি নিজেকে মন থেকে পরখ করে, তবে (এ কথার সত্যতা) স্পষ্ট দেখতে পাবে।” (মাদারিজুস সালেকীন, ১/৩০৭-০৮)

সবসময় মনে এটা গেঁথে রাখতে হবে যে “আমার এই ইবাদত আর পরহেজগারীতা শুধু আমার ‌রবের জন্য, নাকি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য।”

||ইবাদতের অহংকার||
||LUTFUN NAHAR TITHI||

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *