ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কেন তার অধীনস্থদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য?
.
কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
.
أَلَا كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالْأَمِيرُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ، وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ، وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ، وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَالْعَبْدُ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلَا فَكُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
..
“অবশ্যই তোমরা প্রত্যেকেই তত্ত্বাবধায়ক। প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কাজেই শাসক তার অধিনস্থ মানুষের তত্ত্বাবধায়ক, সে তার প্রজাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার বাড়ির লোকদের তত্ত্বাবধায়ক সে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন নারী তার স্বামীর বাড়ির ও সন্তানদের তত্ত্বাবধায়ক সে এগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন দাস তার মালিকের সম্পদের রক্ষক, সে এগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। কাজেই তোমরা সবাই তত্ত্বাবধায়ক, আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজেদের অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে”[১]
.
এই পুরো হাদিসের কথা এক বাক্যে বলা যায়-: أن كل أحد مسؤول عَمَّنْ تَحتَ يده من آدمي وغيره.
.
“প্রত্যেকেই তার অধীনস্থ মানুষ ও অন্যান্য জিনিসের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে”[২]
.
এই হাদিসের দুটো দিক রয়েছে-
১) প্রত্যেকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তার অধীনস্থদের কীভাবে দেখভাল করেছে সে হিসেবে জিজ্ঞাসিত হবে,
২) তার অধীস্থ লোকরা তার ভুলে কোনো ত্রুটি করেছে কি না সেজন্যও জিজ্ঞাসিত হবে।
.
যেমন ধরা যাক আপনি একটা প্রোডাক্ট অর্ডার দিলেন, প্রোডাক্ট এলে দেখা গেল সেটায় সমস্যা আছে। এখন এটায় আগে হয়তো সমস্যা ছিল না কর্মচারীর ভুলের কারণে হয়েছে, de facto rule বলে যে এটার এক্সচেঞ্জে ভালো প্রোডাক্ট দেবার দায়ভার মালিকের, সে নিজের গাটের পয়সা খরচ করে এটার রিফান্ড করবে, এবং এক্ষেত্রে ইসলামী আইনও কোনো ভিন্নমত পোষণ করে বলে আমার জানা নাই।
.
এখন কর্মচারীর ত্রুটির জন্য সাজা না জরিমানা কী করবে এটা মালিকের বিষয়, গ্রাহকের না। গ্রাহক মালিককেই দায়ী করবে। কেননা মালিকের দোষ হচ্ছে অযোগ্য তত্ত্বাবধায়ন, এই ত্রুটির কারণে সে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রাহককেও করেছে।
.
এটা সিম্পল ইস্যু ভাই, প্যাচানোর কিছু নাই। আয়মান সাদিক একটা প্রতিষ্ঠান চালায়, এখানে তারা প্রোডাক্ট হিসেবে শিক্ষাকে বিক্রয় করে, সেটার অর্থ তারা যেভাবেই ওঠাক সেটা ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু তার অধীনস্থরা বাজে প্রোডাক্ট দিয়েছে এখন তার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই প্রোডাক্ট চেইঞ্জ করতে হবে, এবং কর্মচারীদের কোনো না কোনো সাজা দিতে হবে।
.
এখানে আরেকটা মিসাল দেয়া যায়, আমরা দেখলাম মালিকের যোগসাজশে জেকেজি নামক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা করোনা টেস্টের ভাঁওতাবাজি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, এখন পুলিশ কেবল কর্মীদের না মালিককেও গ্রেফতার করেছে কেননা মালিক হিসেবে সে দায় এড়াতে পারেনা। এটা বাস্তবিক, আজকে যদি 10 minute school এর ভিডিও কনটেন্ট নিয়ে ফৌজদারি মামলা হত তাহলে দেখতেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর থেকে নিয়ে আইমান সাদিক সবগুলো আদালতে যেতে বাধ্য হত। এগুলো de facto rule, যদি আলাদা আইনও না থাকতো এ ধরণের উরফের ব্যাপারে ইসলাম অসম্মতি দেয় না।
.
যাই হোক, এরপরও কারও কারও আকল হাল ছেড়ে দিয়েছে। এরা কেউ কেউ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى এই আয়াতাংশ প্রয়োগ করে দেখাচ্ছেন আয়মানের দোষ নাই! থাকবে না কেন? এই আয়াত অনুযায়ীই তো সে দোষী, সে একটা এজুকেইশনাল প্লাটফর্মের প্রধান, এর কনটেন্ট ফিল্টারের ও নজরদারির দায়িত্ব তার, এই দায়িত্বে অবহেলার জন্যই তো সে দোষী। কাজেই এসব বিষয় কখনোই অবলেহায় ফেলে দেবার মত না, অনেক ভাই বিকল্প দাঁড় করাতে চেষ্টা করছেন সবার জন্য দু’আ করি, কামিয়াবির। তবে উত্তম হবে সবাই মিলে একটা লার্জ প্লাটিফর্ম বানালে।
.
.
[১) ইমাম মুসলিম(রাহ), আস সহিহ, হা: ১৮২৯(২০)
২) শাইখ ফায়সাল বিন আব্দুল আযিয আন নাজদী(রাহ), তাতরিযু রিয়াদ্বিস সলিহীন, পৃ: ২১৫]
উস্তাদ মানজারুল কারীম